শান্তির অনুধাবন করুন
“যে যে বিষয় শান্তিজনক, . . . আমরা সেই সকলের অনুধাবন করি।”—রোমীয় ১৪:১৯.
১, ২. কেন যিহোবার সাক্ষিরা নিজেদের মধ্যে শান্তি উপভোগ করে থাকে?
বর্তমান জগতে শান্তি বলতে গেলে দেখাই যায় না। এমনকী একই জাতির ও একই ভাষার হয়েও লোকেরা প্রায়ই ধর্মীয়ভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং সামাজিকভাবে বিভক্ত থাকে। অন্যদিকে, যিহোবার লোকেরা একতাবদ্ধ, যদিও তারা “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” মধ্য থেকে বের হয়ে এসেছে।—প্রকা. ৭:৯.
২ আমাদের মধ্যে সাধারণত যে-শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিদ্যমান, সেটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো বিষয় নয়। এর প্রধান কারণ হল আমরা তাঁর পুত্রের প্রতি আমাদের বিশ্বাসের দ্বারা “ঈশ্বরের উদ্দেশে সন্ধি” বা শান্তি “লাভ করিয়াছি,” যাঁর পাতিত রক্ত আমাদের পাপকে আচ্ছাদন করে। (রোমীয় ৫:১; ইফি. ১:৭) অধিকন্তু, সত্য ঈশ্বর তাঁর অনুগত দাসদের পবিত্র আত্মা দেন আর সেই আত্মার ফলের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে শান্তি। (গালা. ৫:২২, ২৩) আমাদের শান্তিপূর্ণ একতার আরেকটা কারণ হল, আমরা ‘জগতের নই।’ (যোহন ১৫:১৯) রাজনৈতিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ নেওয়ার পরিবর্তে আমরা বরং নিরপেক্ষতা বজায় রাখি। ‘আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িয়াছি’ বলে আমরা কোনো গৃহযুদ্ধ অথবা আন্তর্জাতিক যুদ্ধে জড়িত হই না।—যিশা. ২:৪.
৩. আমরা যে-শান্তি উপভোগ করি, তা কী সম্ভবপর করেছে আর এই প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?
৩ একে অন্যের সঙ্গে শান্তি উপভোগ করা বলতে কেবল আমাদের ভাইবোনদের কোনো ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকাকে বোঝায় না। আমরা যিহোবার সাক্ষিদের যে-মণ্ডলীর সদস্য, সেটা যদিও বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক দল ও সংস্কৃতির লোকেদের নিয়ে গঠিত হতে পারে, কিন্তু আমরা ‘পরস্পরকে প্রেম করি।’ (যোহন ১৫:১৭) আমাদের শান্তি আমাদেরকে “সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাসবাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম” করার সুযোগ দেয়। (গালা. ৬:১০) আমাদের শান্তিপূর্ণ আধ্যাত্মিক পরমদেশ হল এমন একটা বিষয়, যেটাকে মূল্যবান বলে গণ্য করা ও সুরক্ষা করা প্রয়োজন। তাই, আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, কীভাবে আমরা মণ্ডলীর মধ্যে শান্তির অনুধাবন করতে পারি।
যখন আমরা উছোট খাই
৪. আমরা যখন কাউকে অসন্তুষ্ট করি, তখন শান্তির অনুধাবন করার জন্য আমরা কী করতে পারি?
৪ “আমরা সকলে অনেক প্রকারে উছোট খাই,” শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন। “যদি কেহ বাক্যে উছোট না খায়, তবে সে সিদ্ধ পুরুষ।” (যাকোব ৩:২) তাই, সহবিশ্বাসীদের মধ্যে মতভেদ ও ভুল বোঝাবুঝি দেখা দেবেই। (ফিলি. ৪:২, ৩) কিন্তু, মণ্ডলীর শান্তি বিঘ্নিত না করেও ব্যক্তি-বিশেষদের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধান করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি বুঝতে পারি যে, আমরা হয়তো কাউকে অসন্তুষ্ট করেছি, তাহলে আমাদের যে-পরামর্শ কাজে লাগানো উচিত, তা বিবেচনা করুন।—পড়ুন, মথি ৫:২৩, ২৪.
৫. আমরা নিজেরাই যখন কোনো অন্যায়ের শিকার হই, তখন আমরা হয়তো কীভাবে শান্তির অনুধাবন করতে পারি?
৫ কিন্তু, আমরা নিজেরাই যদি কোনো অন্যায়ের শিকার হই, তাহলে? আমাদের কি এইরকমটা আশা করা উচিত যে, দোষী ব্যক্তি আমাদের কাছে আসবেন এবং দোষস্বীকার করে ক্ষমা চাইবেন? “[প্রেম] অপকার গণনা করে না,” ১ করিন্থীয় ১৩:৫ পদ বলে। আমরা যখন অসন্তুষ্ট হই, তখন আমরা ক্ষমা করার ও ভুলে যাওয়ার মাধ্যমে অর্থাৎ ‘অপকার গণনা না করার’ মাধ্যমে শান্তির অনুধাবন করি। (পড়ুন, কলসীয় ৩:১৩.) এভাবেই রোজকার জীবনের ছোটোখাটো ভুলত্রুটিকে সর্বোত্তম উপায়ে মীমাংসা করা যায় কারণ সেটা সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে এক শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখে এবং আমাদের মনের শান্তি প্রদান করে। বিজ্ঞতাপূর্ণ এক প্রবাদবাক্য বলে: “দোষ ছাড়িয়া দেওয়া . . . শোভা।”—হিতো. ১৯:১১.
৬. আমাদের বিরুদ্ধে করা কোনো ভুলকে উপেক্ষা করা যদি নিতান্তই কঠিন বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের কী করা উচিত?
৬ যদি সেই নির্দিষ্ট ভুলটাকে আমাদের কাছে উপেক্ষা করা কঠিন বলে মনে হয়, তাহলে? এইরকম বিষয় শুনতে পছন্দ করে এমন সবাইকে তা বলে বেড়ানোটা বিজ্ঞতার কাজ হবে না। এই ধরনের গুজব কেবল মণ্ডলীর শান্তি নষ্ট করে। বিষয়টাকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার জন্য কী করা যেতে পারে? মথি ১৮:১৫ পদ বলে: “যদি তোমার ভ্রাতা তোমার নিকটে কোন অপরাধ করে, তবে যাও, যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও। যদি সে তোমার কথা শুনে, তুমি আপন ভ্রাতাকে লাভ করিলে।” মথি ১৮:১৫-১৭ পদ যদিও গুরুতর পাপের প্রতি প্রযোজ্য কিন্তু ১৫ পদে বর্ণিত নীতিটা কাজে লাগিয়ে আমাদের সদয়ভাবে দোষী ব্যক্তি একান্তে থাকাকালীন তার কাছে যাওয়া উচিত এবং তার সঙ্গে এক শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করা উচিত।a
৭. কেন আমাদের দ্রুত সমস্যা মিটমাট করা উচিত?
৭ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ক্রুদ্ধ হইলে পাপ করিও না; সূর্য্য অস্ত না যাইতে যাইতে তোমাদের কোপাবেশ শান্ত হউক; আর দিয়াবলকে স্থান দিও না।” (ইফি. ৪:২৬, ২৭) “তুমি যখন বিপক্ষের সঙ্গে পথে থাক, তখন তাহার সহিত শীঘ্র মিলন করিও,” যিশু বলেছিলেন। (মথি ৫:২৫) তাই, শান্তির অনুধাবন করার জন্য শীঘ্র মিলন করা বা সমস্যা মিটমাট করা প্রয়োজন। কেন? আমরা যদি তা না করি, তাহলে সমস্যাগুলো বড়ো ও গুরুতর হয়ে যাবে, ঠিক যেমন কোনো ক্ষতকে দ্রুত চিকিৎসা করা না হলে, সেটা সংক্রামিত হয়ে যায়। অহংকার, ঈর্ষা অথবা বস্তুগত বিষয়ের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত হওয়া, যেন আমাদেরকে বিভিন্ন বিভেদ দেখা দেওয়ার সঙ্গেসঙ্গে সেগুলোর মীমাংসা করা থেকে বিরত না করে।—যাকোব ৪:১-৬.
যখন কোনো বিরোধে অনেকে জড়িত থাকে
৮, ৯. (ক) প্রথম শতাব্দীতে রোমের মণ্ডলীতে কোন ধরনের মতভেদ বিদ্যমান ছিল? (খ) সেই মতভেদ সম্বন্ধে রোমের খ্রিস্টানদের পৌল কী পরামর্শ দিয়েছিলেন?
৮ মাঝে মাঝে, কোনো মতভেদের সঙ্গে মণ্ডলীর কেবল দুজন ব্যক্তি নয় বরং অনেকে জড়িত থাকে। রোমের খ্রিস্টানদের মধ্যে সেটাই দেখা গিয়েছিল, যাদের কাছে প্রেরিত পৌল তার অনুপ্রাণিত চিঠি লিখেছিলেন। যিহুদি ও পরজাতীয় খ্রিস্টানদের মধ্যে একটা মতভেদ দেখা দিয়েছিল। সেই মণ্ডলীর কিছু ব্যক্তি স্পষ্টতই এমন ব্যক্তিদের অবজ্ঞা করতে শুরু করেছিল, যাদের বিবেক দুর্বল অথবা অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণপ্রবণ। এই ব্যক্তিরা ভুলভাবে অন্যদের এমন বিষয়গুলোর বিচার করছিল, যেগুলো একান্তই তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। পৌল সেই মণ্ডলীকে কী উপদেশ দিয়েছিলেন?—রোমীয় ১৪:১-৬.
৯ পৌল সেই মতভেদের সঙ্গে জড়িত উভয় পক্ষের ব্যক্তিদেরই পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যারা বুঝতে পারে যে, তারা আর মোশির ব্যবস্থার অধীন নয়, তারা যেন তাদের ভাইদের অবজ্ঞা না করে। (রোমীয় ১৪:২, ১০) কারণ এই ধরনের মনোভাব সেইসমস্ত বিশ্বাসীর জন্য বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারত, যারা তখনও পর্যন্ত মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যকে অশুচি হিসেবে বিবেচনা করত। “খাদ্যের নিমিত্ত ঈশ্বরের কর্ম্ম ভাঙ্গিয়া ফেলিও না,” পৌল তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। “মাংস ভক্ষণ বা দ্রাক্ষারস পান, অথবা যে কিছুতে তোমার ভ্রাতা ব্যাঘাত কি বিঘ্ন পায়, কি দুর্ব্বল হয়, এমন কিছুই না করা ভাল।” (রোমীয় ১৪:১৪, ১৫, ২০, ২১) অন্যদিকে, আরও নিয়ন্ত্রণপ্রবণ বিবেক রয়েছে এমন খ্রিস্টানদেরকে পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন তারা সেইসমস্ত ব্যক্তিকে অবিশ্বাসীর মতো বিচার না করে, যাদের আরও প্রশস্ত দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। (রোমীয় ১৪:১৩) তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক জন, আপনার বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, তদপেক্ষা বড় বোধ না করুক।’ (রোমীয় ১২:৩) এই মতভেদের সঙ্গে জড়িত উভয় পক্ষকে পরামর্শ দেওয়ার পর পৌল লিখেছিলেন: “অতএব যে যে বিষয় শান্তিজনক, ও যে যে বিষয়ের দ্বারা পরস্পরকে গাঁথিয়া তুলিতে পারি, আমরা সেই সকলের অনুধাবন করি।”—রোমীয় ১৪:১৯.
১০. প্রথম শতাব্দীতে রোমের মণ্ডলীর মতো বর্তমানেও মতভেদগুলো সমাধান করার জন্য কী করা প্রয়োজন?
১০ আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি যে, রোমের মণ্ডলী পৌলের পরামর্শের প্রতি উত্তমভাবে সাড়া দিয়েছিল এবং প্রয়োজনীয় রদবদল করেছিল। বর্তমানেও যখন সহখ্রিস্টানদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়, তখন আমাদেরও কি একইভাবে নম্র হয়ে শাস্ত্রীয় পরামর্শ খোঁজার ও প্রয়োগ করার মাধ্যমে সদয়ভাবে বিরোধের মীমাংসা করা উচিত নয়? রোমের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল, বর্তমানেও কোনো মতভেদের সঙ্গে জড়িত উভয় পক্ষকেই হয়তো ‘পরস্পর শান্তিতে থাকিবার’ জন্য রদবদল করতে হবে।—মার্ক ৯:৫০.
যখন যখন সাহায্য চাওয়া হয়
১১. একজন খ্রিস্টান যদি সহবিশ্বাসীর সঙ্গে কোনো সমস্যার বিষয়ে একজন প্রাচীনের সঙ্গে কথা বলতে চান, তাহলে সেই প্রাচীনের কী করা উচিত?
১১ একজন খ্রিস্টান যদি তার কোনো আত্মীয় অথবা সহবিশ্বাসীর সঙ্গে কোনো সমস্যার ব্যাপারে একজন প্রাচীনের সঙ্গে কথা বলতে চান, তাহলে? হিতোপদেশ ২১:১৩ পদ বলে: “যে দরিদ্রের ক্রন্দনে কর্ণ রোধ করে, সে আপনি ডাকিবে, কিন্তু উত্তর পাইবে না।” নিশ্চিতভাবেই, একজন প্রাচীন “কর্ণ রোধ” করবেন না। কিন্তু, আরেকটি প্রবাদ এই সাবধানবাণী দেয়: “মকদ্দমার সময়ে যে প্রথমে নিজের পক্ষে কথা বলে তার কথা সত্যি মনে হয়, যতক্ষণ না আর একজন এসে তাকে জেরা করে।” (হিতো. ১৮:১৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) যদিও একজন প্রাচীনের সদয়ভাবে শোনা উচিত কিন্তু একইসঙ্গে তাকে সেই ব্যক্তির পক্ষ না নেওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে, যিনি সমস্যার বিষয়টা জানিয়েছেন। বিষয়টা শোনার পর তিনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, যে-পক্ষ অসন্তুষ্ট হয়েছে, তিনি সেই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, যিনি সমস্যা সৃষ্টি করেছেন। এ ছাড়া, সেই প্রাচীন হয়তো এমন শাস্ত্রীয় পদক্ষেপগুলো সম্বন্ধে পুনরালোচনা করতে পারেন, যেগুলো অসন্তুষ্ট ব্যক্তি শান্তির অনুধাবন করার জন্য নিতে পারেন।
১২. কয়েকটা উদাহরণ সম্বন্ধে বলুন, যেগুলো কোনো অভিযোগ শোনার সঙ্গেসঙ্গেই পদক্ষেপ নেওয়ার বিপদ সম্বন্ধে তুলে ধরে।
১২ বাইবেলের তিনটে উদাহরণ, কোনো বিরোধের সঙ্গে জড়িত কেবল এক পক্ষের কথা শোনার পর তাড়াহুড়ো করে পদক্ষেপ নেওয়ার বিপদ সম্বন্ধে তুলে ধরে। পোটীফর তার স্ত্রীর এই বানানো কথায় বিশ্বাস করেছিল যে, যোষেফ তাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। অন্যায্য ক্রোধের বশবর্তী হয়ে পোটীফর যোষেফকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিলেন। (আদি. ৩৯:১৯, ২০) রাজা দায়ূদ সীবঃর কথা বিশ্বাস করেছিলেন, যিনি বলেছিলেন যে, তার প্রভু মফীবোশৎ দায়ূদের শত্রুদের পক্ষ নিয়েছে। দায়ূদ সঙ্গেসঙ্গেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলেছিলেন, “দেখ, মফীবোশতের সর্ব্বস্ব তোমার।” (২ শমূ. ১৬:৪; ১৯:২৫-২৭) রাজা অর্তক্ষস্তকে জানানো হয়েছিল যে, যিহুদিরা যিরূশালেমের প্রাচীর পুনর্নির্মাণ করছে এবং পারস্য রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে যাচ্ছে। রাজা সেই মিথ্যা সংবাদে বিশ্বাস করেছিলেন এবং যিরূশালেমের পুনর্নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার আদেশ দিয়েছিলেন। ফল স্বরূপ, যিহুদিদের ঈশ্বরের মন্দিরের কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। (ইষ্রা ৪:১১-১৩, ২৩, ২৪) খ্রিস্টান প্রাচীনরা বিজ্ঞতার সঙ্গে পৌলের পরামর্শ অনুসরণ করে, যিনি তীমথিয়কে কোনো কিছু বিবেচনা না করেই বিচার করার বিষয়টা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন।—পড়ুন, ১ তীমথিয় ৫:২১.
১৩, ১৪. (ক) অন্যদের বিরোধ সম্বন্ধে আমাদের সকলেরই কোন সীমাবদ্ধতা রয়েছে? (খ) সহবিশ্বাসীদের সঠিক বিচার করার জন্য কী প্রাচীনদেরকে সাহায্য করতে পারে?
১৩ এমনকী যখন কোনো বিরোধের সঙ্গে জড়িত দু-পক্ষের বক্তব্যই শোনা হয়েছে বলে মনে হয়, তখনও এই বিষয়টা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে, “যদি কেহ মনে করে, সে কিছু জানে, তবে যেরূপ জানিতে হয়, তদ্রূপ এখনও জানে না।” (১ করি. ৮:২) আমরা কি আসলেই এমন খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয় জানি, যেগুলো সেই বিরোধের দিকে পরিচালিত করেছে? আমরা কি বিষয়টার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পটভূমি পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারি? তাই এটা কতই না গুরুত্বপূর্ণ যে, যখন কোনো বিচার করার জন্য ডাকা হয়, তখন প্রাচীনরা যেন মিথ্যা, ছলচাতুরী অথবা গুজবের দ্বারা প্রতারিত না হয়! ঈশ্বরের নিযুক্ত বিচারকর্তা যিশু খ্রিস্ট ন্যায্য বিচার করেন। তিনি ‘চক্ষুর দৃষ্টি অনুসারে বিচার, কর্ণের শ্রবণানুসারে নিষ্পত্তি’ করেন না। (যিশা. ১১:৩, ৪) এর পরিবর্তে, যিশু যিহোবার আত্মার দ্বারা পরিচালিত হন। একইভাবে খ্রিস্টান প্রাচীনরাও ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হলে উপকৃত হবে।
১৪ সহবিশ্বাসীদের বিচার করার আগে প্রাচীনদের যিহোবার আত্মার সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করতে হবে এবং ঈশ্বরের বাক্য আর বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর দ্বারা প্রকাশিত প্রকাশনাদি থেকে পরামর্শ খোঁজার মাধ্যমে এই আত্মার পরিচালনার ওপর নির্ভর করতে হবে।—মথি ২৪:৪৫.
যেকোনো মূল্যেই কি শান্তিরক্ষা করতে হবে?
১৫. একজন খ্রিস্টান যদি কোনো গুরুতর পাপ সম্বন্ধে জেনে থাকেন, তাহলে কখন তার সেই বিষয়ে প্রাচীনদের জানানো উচিত?
১৫ খ্রিস্টান হিসেবে আমাদেরকে শান্তির অনুধাবন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, বাইবেল এও বলে: “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়।” (যাকোব ৩:১৭) তাই, প্রথমে আসে শুচিতা অর্থাৎ ঈশ্বরের শুদ্ধ নৈতিক মানকে সমর্থন করা ও তাঁর ধার্মিক চাহিদাগুলো পরিপূর্ণ করার বিষয়টা আর এরপর আসে শান্তিপ্রবণ হওয়ার বিষয়টা। একজন খ্রিস্টান যদি কোনো সহবিশ্বাসীর গুরুতর পাপ সম্বন্ধে জেনে থাকেন, তাহলে তার সেই ব্যক্তিকে প্রাচীনদের কাছে নিজের পাপ স্বীকার করার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। (১ করি. ৬:৯, ১০; যাকোব ৫:১৪-১৬) যদি অন্যায়কারী সেটা না করে, তাহলে যে-খ্রিস্টান সেই পাপ সম্বন্ধে জানেন, তার সেই বিষয়ে জানানো উচিত। সেটা না করা হলে, পাপী ব্যক্তির সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার এই ভুল প্রচেষ্টা তাকেও সেই অন্যায়ের ভাগী করে তোলে।—লেবীয়. ৫:১; পড়ুন, হিতোপদেশ ২৯:২৪.
১৬. রাজা যোরামের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর যেহূ যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৬ যেহূর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটা বিবরণ দেখায় যে, ঈশ্বরের ধার্মিকতাকে শান্তিপ্রবণ মনোভাবের চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ঈশ্বর রাজা আহাবের কূলের ওপর তাঁর বিচার কার্যকর করার জন্য যেহূকে পাঠিয়েছিলেন। আহাব ও ঈষেবলের ছেলে দুষ্ট রাজা যোরাম তার রথে চড়ে যেহূর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বলেছিলেন: “যেহূ, মঙ্গল ত?” যেহূ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “যে পর্য্যন্ত তোমার মাতা ঈষেবলের এত ব্যভিচার ও মায়াবিত্ব থাকে, সে পর্য্যন্ত মঙ্গল কোথায়?” (২ রাজা. ৯:২২) এরপর, যেহূ তার ধনুক নিয়ে যোরামের হৃৎপিণ্ডে বাণাঘাত করেছিলেন। যেহূ যেমন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তেমনই প্রাচীনরাও মঙ্গল বা শান্তিরক্ষার জন্য স্বেচ্ছাচারী, অননুতপ্ত পাপীদের সঙ্গে আপোশ করবে না। তারা অননুতপ্ত পাপীদের বের করে দেয়, যাতে মণ্ডলী ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তি উপভোগ করে চলতে পারে।—১ করি. ৫:১, ২, ১১-১৩.
১৭. শান্তি অনুধাবন করার ক্ষেত্রে সমস্ত খ্রিস্টানই কোন ভূমিকা পালন করে?
১৭ ভাইবোনদের মধ্যে সংঘটিত অধিকাংশ বিরোধের সঙ্গে এমন গুরুতর কোনো অন্যায় জড়িত থাকে না, যেটার জন্য বিচার সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাই, অন্যদের ভুলত্রুটি প্রেমের দ্বারা আচ্ছাদন করা কত উত্তম। “যে অধর্ম্ম আচ্ছাদন করে, সে প্রেমের অন্বেষণ করে,” ঈশ্বরের বাক্য বলে, “কিন্তু যে পুনঃ পুনঃ এক কথা বলে, সে মিত্রভেদ জন্মায়।” (হিতো. ১৭:৯) এই বাক্যগুলো মেনে চলা আমাদের সকলকে মণ্ডলীর মধ্যে শান্তিরক্ষা করতে ও যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করবে।—মথি ৬:১৪, ১৫.
শান্তির অনুধাবন করা আশীর্বাদ নিয়ে আসে
১৮, ১৯. শান্তির অনুধাবন করার ফলে কোন উপকারগুলো লাভ করা যায়?
১৮ আমরা যদি “যে যে বিষয় শান্তিজনক,” সেগুলোর অনুধাবন করি, তাহলে তা প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে আসবে। আমরা যখন যিহোবার পথ অনুধাবন করি, তখন তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করি এবং আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশের শান্তিপূর্ণ একতা বজায় রাখায় অবদান রাখি। এ ছাড়া, মণ্ডলীর মধ্যে শান্তির অনুধাবন করা আমাদের এমন উপায়গুলো খুঁজে পেতে সাহায্য করে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে শান্তির অনুধাবন করতে পারি, যাদের কাছে আমরা ‘শান্তির সুসমাচার’ প্রচার করি। (ইফি. ৬:১৫) আর এভাবে আমরা ‘সকলের প্রতি কোমল, সহনশীল হইতে’ সদাপ্রস্তুত থাকতে পারি।—২ তীম. ২:২৪.
১৯ এ ছাড়া, এও মনে রাখবেন যে, “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) যখন সেই আশা এই পৃথিবীতে বাস্তবে পরিণত হবে, তখন বিভিন্ন পটভূমির, স্বভাবের ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি জীবন ফিরে পাবে—যাদের মধ্যে “জগতের পত্তনাবধি” বা জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে যে-লোকেরা ছিল, তারাও থাকবে! (লূক ১১:৫০, ৫১) পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের শান্তির পথ সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়াটা সত্যিই এক বিশেষ সুযোগ হবে। শান্তিস্থাপনকারী হওয়ার বিষয়ে আমরা এখন যে-প্রশিক্ষণ লাভ করছি, সেই সময় তা কত বিরাট এক সহায়কই না হবে!
[পাদটীকা], [পাদটীকাগুলো]
a অপবাদ ও প্রতারণার মতো গুরুতর পাপ মীমাংসা করার ক্ষেত্রে শাস্ত্রীয় নির্দেশনার জন্য ১৯৯৯ সালের ১৫ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৭-২২ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কী শিখেছেন?
• আমরা যদি কাউকে অসন্তুষ্ট করে থাকি, তাহলে কীভাবে আমরা শান্তির অনুধাবন করতে পারি?
• আমরা নিজেরাই যদি কোনো অন্যায়ের শিকার হই, তাহলে শান্তির অনুধাবন করার জন্য কী করা উচিত?
• অন্যদের বিরোধে কোনো পক্ষ নেওয়া কেন বিজ্ঞতার কাজ নয়?
• ব্যাখ্যা করুন যে, কেন যেকোনো মূল্যেই শান্তিরক্ষা করা উচিত নয়।
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবা সেই ব্যক্তিদের ভালোবাসেন, যারা অন্যদের ক্ষমা করে