যিহোবার “বাক্য” আপনাকে রক্ষা করুক
সাধারণ কাল পূর্ব ৪৯০ সালে ঐতিহাসিক ম্যারাথন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রায় ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার এথেন্সবাসী ১ লক্ষ পারসীক সৈন্যের মুখোমুখি হয়েছিল। গ্রিক কৌশলগুলোর মূল চাবিকাঠি ছিল ফেলাঙ্কস্—ঢাল ও বর্শায় সজ্জিত সৈন্যদের এক দল, একজনের পিছনে আরেকজনের সারিবদ্ধভাবে ঘনবিন্যস্ত হয়ে এগিয়ে যাওয়া। তাদের ঢালগুলো প্রায় শক্ত এক দেওয়ালের মতো ছিল, একেকটা দেওয়াল বর্শা নিয়ে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফেলাঙ্কস্, এথেন্সবাসীদের হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ পারসীক শক্তির বিরুদ্ধে এক বিখ্যাত বিজয় এনে দিয়েছিল।
সত্য খ্রিস্টানরা আধ্যাত্মিক যুদ্ধে রত। তারা শক্তিশালী শত্রুর সঙ্গে লড়াই করে—বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার অদৃশ্য শাসকরা, যাদেরকে বাইবেলে ‘অন্ধকারের জগৎপতি ও স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণ’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। (ইফিষীয় ৬:১২; ১ যোহন ৫:১৯) ঈশ্বরের লোকেরা বিজয়ী হয়ে চলেছে—কিন্তু তাদের নিজেদের শক্তিতে নয়। সকল কৃতিত্ব যিহোবার যিনি তাদেরকে সুরক্ষা ও নির্দেশনা দেন, যেমন গীতসংহিতা ১৮:৩০ পদে বর্ণনা করা হয়েছে: “সদাপ্রভুর বাক্য পরীক্ষাসিদ্ধ; তিনি নিজ শরণাগত সকলের ঢাল।”
হ্যাঁ, পবিত্র শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ তাঁর বিশুদ্ধ ‘বাক্যের’ মাধ্যমে যিহোবা আধ্যাত্মিক ক্ষতি থেকে তাঁর অনুগত দাসদের রক্ষা করেন। (গীতসংহিতা ১৯:৭-১১; ১১৯:৯৩) ঈশ্বরের বাক্যে প্রকাশিত প্রজ্ঞা সম্বন্ধে শলোমন লিখেছিলেন: “প্রজ্ঞাকে ছাড়িও না, সে তোমাকে রক্ষা করিবে; তাহাকে প্রেম কর, সে তোমাকে সংরক্ষণ করিবে।” (হিতোপদেশ ৪:৬; উপদেশক ৭:১২) কীভাবে ঐশিক প্রজ্ঞা আমাদের ক্ষতিকর বিষয় থেকে সংরক্ষণ বা রক্ষা করে? প্রাচীন ইস্রায়েলের উদাহরণ বিবেচনা করুন।
ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা দ্বারা সুরক্ষিত এক জাতি
যিহোবার ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে সুরক্ষিত করেছিল ও নির্দেশনা দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য সংক্রান্ত বিধিনিষেধ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রোগ প্রতিরোধার্থে কিছু সময়ের জন্য পৃথক থাকার বিধিনিষেধ তাদেরকে বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করেছিল, যেগুলো অন্যান্য জাতির মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। কেবলমাত্র উনবিংশ শতাব্দীতে ব্যাকটিরিয়া আবিষ্কারের পরই বিজ্ঞান ঈশ্বরের ব্যবস্থার মতো একই মানে পৌঁছাতে পেরেছে। ভূমি মালিকানা, মুক্ত করার অধিকার, ঋণ থেকে মুক্তি ও সুদ সংক্রান্ত আইনগুলো এক সুস্থির সমাজ ও এক ন্যায্য অর্থনীতি উন্নীত করার মাধ্যমে ইস্রায়েলে বিভিন্ন সামাজিক উপকার নিয়ে এসেছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:১২, ১৫; ১৫:৪, ৫) যিহোবার ব্যবস্থা এমনকি ভূমির উর্বরতা সংরক্ষণেও সহায়তা করেছিল! (যাত্রাপুস্তক ২৩:১০, ১১) মিথ্যা উপাসনার বিরুদ্ধে আজ্ঞাগুলো, লোকেদের নির্জীব প্রতিমাগুলোর সামনে নত হওয়ার মতো হীনকর কাজ ছাড়াও মন্দ দূতেদের চাপ, শিশুবলি ও অন্যান্য অনেক মন্দ বিষয় থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সুরক্ষিত রেখেছিল।—যাত্রাপুস্তক ২০:৩-৫; গীতসংহিতা ১১৫:৪-৮.
স্পষ্টতই, যিহোবার “বাক্য” ইস্রায়েলের জন্য “নিরর্থক বাক্য” বলে প্রমাণিত হয়নি বরং যারা এতে মনোযোগ দিয়েছিল, তাদের জন্য এর অর্থ ছিল জীবন ও দীর্ঘায়ু। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪৭) আজকে তাদের জন্যও এটা সত্য যারা যিহোবার প্রজ্ঞার বাক্য মেনে চলে, যদিও খ্রিস্টানরা এখন আর ব্যবস্থা চুক্তির বা নিয়মের অধীন নয়। (গালাতীয় ৩:২৪, ২৫; ইব্রীয় ৮:৮) প্রকৃতপক্ষে, এক আইনবিধির পরিবর্তে খ্রিস্টানদের বাইবেলের নীতিগুলোর এক ব্যাপক পরিধি রয়েছে, যা তাদেরকে নির্দেশনা ও সুরক্ষা প্রদান করে।
নীতিগুলোর দ্বারা সুরক্ষিত এক জাতি
আইনগুলোর হয়তো এক সীমিত প্রয়োগ থাকতে পারে আর সেগুলো কেবল ক্ষণস্থায়ী হতে পারে। কিন্তু, বাইবেলের নীতিগুলো মৌলিক সত্য হওয়ার কারণে সাধারণত এগুলোর এক ব্যাপক ও স্থায়ী প্রয়োগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যাকোব ৩:১৭ পদে বর্ণিত নীতিটি বিবেচনা করুন, যার কিছু অংশ এভাবে বলে: “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়।” আজকে কীভাবে সেই মৌলিক সত্য ঈশ্বরের দাসদের জন্য এক সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে?
শুচি হওয়ার অর্থ হল, নৈতিকভাবে শুদ্ধ থাকা। তাই, যারা শুচি গুণটিকে মূল্যবান বলে মনে করে, তারা কেবল অনৈতিকতাকেই নয় কিন্তু এমনকি যে-বিষয়গুলো এর দিকে পরিচালিত করে, যার অন্তর্ভুক্ত যৌন বিষয় নিয়ে কল্পনা করা ও অশ্লীল চিত্র, সেগুলো এড়িয়ে চলার জন্য প্রচেষ্টা করে। (মথি ৫:২৮) একইভাবে, বিয়ের উদ্দেশ্যে মেলামেশা করছে এমন যে-যুগলরা যাকোব ৩:১৭ পদের নীতিটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে, তারা ততখানি অন্তরঙ্গতা এড়িয়ে চলে, যা হয়তো তাদের ইন্দ্রিয়দমন হারিয়ে ফেলার দিকে পরিচালিত করতে পারে। নীতির দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কারণে তারা শুচি অবস্থা থেকে সরে যাওয়ার ফাঁদে পা দেয় না, সম্ভবত এইরকম চিন্তা করে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থা লঙ্ঘন না করে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের আচরণে যিহোবার অনুমোদন রয়েছে। তারা জানে যে, যিহোবা “অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন” এবং সেইমতো সাড়া দেন। (১ শমূয়েল ১৬:৭; ২ বংশাবলি ১৬:৯) এই ধরনের বিজ্ঞ ব্যক্তিরা, আজকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এমন যৌনবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে নিজেদের সুরক্ষা করতে পারে এবং সেইসঙ্গে তাদের মানসিক ও আবেগগত মঙ্গল বজায় রাখে।
এ ছাড়া, ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা “শান্তিপ্রিয়,” যাকোব ৩:১৭ পদ বলে। আমরা জানি যে, শয়তান আমাদের হৃদয়ে দৌরাত্ম্যের মনোভাব বপন করার মাধ্যমে আমাদেরকে যিহোবার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে চায়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপত্তিকর পত্রপত্রিকা, চলচ্চিত্র, গানবাজনা ও কম্পিউটার গেইমসের মাধ্যমে—যেগুলোর মধ্যে কয়েকটা খেলোয়াড়দের মধ্যে অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা ও হত্যা করার মনোভাব জাগিয়ে তোলে! (গীতসংহিতা ১১:৫) শয়তান যে কৃতকার্য হচ্ছে, তা দৌরাত্ম্যমূলক অপরাধের দ্রুত বৃদ্ধির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্র দ্যা সিডনি মর্নিং হেরাল্ড এই ধরনের অপরাধ সম্বন্ধে, “ধারাবাহিক খুনি” শব্দটির উদ্ভাবক রবার্ট রেসলারের কথা উদ্ধৃত করেছিল। রেসলার বলেছিলেন যে, তিনি ১৯৭০ এর দশকে যেসব খুনিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তারা হালকা ধরনের অশ্লীল বিষয়ের দ্বারা উত্তেজিত হয়েছিল, যেগুলো “আজকের অশ্লীল বিষয়গুলোর কাছে একেবারেই ম্লান।” তাই রেসলার, “এক হতাশাজনক ভবিষ্যতের—এক নতুন শতাব্দী যেখানে একাধিক খুন করে এমন খুনিদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে, সেটার” সম্বন্ধে বলেছিলেন।
বস্তুত, সেই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার মাত্র কয়েক মাস পরেই, স্কটল্যান্ডের ডানব্লানের একটি কিন্ডারগার্টেনে, একজন বন্দুকধারী ব্যক্তি আত্মহত্যা করার আগে ১৬ জন শিশু ও তাদের শিক্ষিকাকে খুন করেছিল। পরের মাসে আরেক উন্মত্ত বন্দুকধারী ব্যক্তি, অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত তাসমানিয়ার নিরিবিলি শহর পোর্ট আর্থারে ৩২ জন ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, কয়েকটা স্কুলে নৃশংস হত্যার ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রচণ্ডভাবে কাঁপিয়ে দিয়েছে আর আমেরিকাবাসীদের মনে এই প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছে, কেন? ২০০১ সালের জুন মাসে, জাপানে যখন একজন বিকৃতমস্তিষ্কের ব্যক্তি একটা স্কুলে ঢুকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ৮ জন ছেলেমেয়েকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছিল এবং আরও ১৫ জন ব্যক্তিকে এলোপাথাড়িভাবে আঘাত করেছিল, তখন সেটা বিশ্বের সব জায়গায় সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল। এটা নিশ্চিত যে, এই ধরনের মন্দ কাজগুলোর পিছনে কারণগুলো বেশ জটিল কিন্তু প্রচারমাধ্যমগুলোর দৌরাত্ম্যকে ক্রমবর্ধিষ্ণুভাবে এক আংশিক কারণ বলে দেখা হয়। “৬০ সেকেন্ডের একটা বিজ্ঞাপন যদি বিক্রিকে হাজার গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে,” অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রের একজন কলমলেখক ফিলিপ আ্যডামস্ লিখেছিলেন, “তা হলে, বিপুল অর্থ ব্যয় করে নির্মিত দুই ঘন্টার একটা সিনেমা আচরণের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না, এই কথা আমাকে বলবেন না।” আগ্রহের বিষয় হচ্ছে যে, পোর্ট আর্থারের বন্দুকধারী ব্যক্তির ঘর থেকে পুলিশ ২০০০টা দৌরাত্ম্যপূর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও ক্যাসেট বাজেয়াপ্ত করেছিল।
যারা বাইবেলের নীতিগুলো দৃঢ়ভাবে মেনে চলে তারা তাদের মন ও হৃদয়কে সমস্ত ধরনের আমোদপ্রমোদ থেকে রক্ষা করে, যেগুলো দৌরাত্ম্যমূলক কাজ করার জন্য তাদের কামনাকে বাড়িয়ে তোলে। তাই, ‘জগতের আত্মা’ তাদের চিন্তাভাবনা ও আকাঙ্ক্ষাগুলোর মধ্যে ঢুকতে পারে না। এর পরিবর্তে, তারা ‘[ঈশ্বরের] আত্মার দ্বারা শিক্ষিত’ আর তারা শান্তিসহ এর ফলগুলোর প্রতি ভালবাসা গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা করে। (১ করিন্থীয় ২:১২, ১৩; গালাতীয় ৫:২২, ২৩) নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন, প্রার্থনা ও গঠনমূলক ধ্যানের মাধ্যমে তারা তা করে থাকে। এ ছাড়া দৌরাত্ম্যপ্রবণ ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করার পরিবর্তে, তারা সেই সমস্ত ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করা বেছে নেয়, যারা তাদের মতোই যিহোবার শান্তিপূর্ণ নতুন জগতের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করে। (গীতসংহিতা ১:১-৩; হিতোপদেশ ১৬:২৯) হ্যাঁ, ঐশিক প্রজ্ঞা কতই না সুরক্ষা প্রদান করে!
যিহোবার “বাক্য” আপনার হৃদয়কে রক্ষা করুক
যিশু যখন প্রান্তরে পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন ঈশ্বরের বাক্য থেকে যথার্থভাবে উদ্ধৃতি করার মাধ্যমে তিনি শয়তানকে মিথ্যা প্রমাণ করেছিলেন। (লূক ৪:১-১৩) কিন্তু, তিনি শয়তানকে নিছক এক শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে রত করেননি। আত্মপক্ষ সমর্থনের ভিত্তি হিসেবে শাস্ত্রকে ব্যবহার করে যিশু হৃদয় থেকে কথা বলেছিলেন আর সেই কারণেই দিয়াবলের কলাকৌশল, যেটা এদনে অত্যন্ত কার্যকর হয়েছিল, সেটা যিশুর ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছিল। আমরা যদি যিহোবার বাক্য দ্বারা আমাদের হৃদয় পূর্ণ করি, তা হলে আমাদের ক্ষেত্রেও শয়তানের চাতুরীগুলো ব্যর্থ হবে। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই হতে পারে না, কারণ “[হৃদয়] হইতে জীবনের উদ্গম হয়।”—হিতোপদেশ ৪:২৩.
এ ছাড়া, না থেমে আমাদের ক্রমাগত হৃদয়কে রক্ষা করে যেতে হবে। শয়তান প্রান্তরে ব্যর্থ হয়ে যিশুকে পরীক্ষা করা বন্ধ করেনি। (লূক ৪:১৩) সে আমাদের কাছেও বার বার আসবে এবং বিভিন্ন কৌশলে আমাদের নীতিনিষ্ঠা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করবে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) তাই, আসুন আমরা ঈশ্বরের বাক্যের জন্য গভীর ভালবাসা গড়ে তোলার আর সেইসঙ্গে পবিত্র আত্মা ও প্রজ্ঞার জন্য অবিরত প্রার্থনা করার মাধ্যমে যিশুকে অনুকরণ করি। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৭; ইব্রীয় ৫:৭) আর তা করলে, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন যে, যারা তাঁর কাছে আশ্রয় নেয় তাদের কোনো আধ্যাত্মিক ক্ষতি হবে না।—গীতসংহিতা ৯১:১-১০; হিতোপদেশ ১:৩৩.
ঈশ্বরের বাক্য মণ্ডলীকে সুরক্ষা করে
শয়তান ভবিষ্যদ্বাণীকৃত ‘বিস্তর লোকের’ মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাওয়া প্রতিরোধ করতে পারবে না। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) তা সত্ত্বেও, সে এখনও খ্রিস্টানদের কলুষিত করার জন্য প্রবলভাবে চেষ্টা করে, যাতে অন্তত কিছু ব্যক্তি যিহোবার অনুগ্রহ হারিয়ে ফেলে। প্রাচীন ইস্রায়েলে সেই কৌশল সফল হয়েছিল আর প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার মাত্র কয়েকদিন আগে ২৪,০০০ জন ব্যক্তিকে মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছিল। (গণনাপুস্তক ২৫:১-৯) অবশ্যই, যে-খ্রিস্টানরা ভুল করে প্রকৃত অনুতপ্ত হয়, তারা আধ্যাত্মিকভাবে পুনরুদ্ধারপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য প্রেমময় সাহায্য লাভ করে। কিন্তু প্রাচীনকালের সিম্রির মতো অনুতাপহীন পাপীরা, অন্যদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মঙ্গল বিপদজনক করে তোলে। (গণনাপুস্তক ২৫:১৪) একটা ফেলাঙ্কসের যে-সৈন্যরা তাদের ঢালগুলো ফেলে দিয়েছে, তাদের মতো তারা কেবল নিজেদের ক্ষতি করে না কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের সঙ্গীদেরও বিপদের মুখোমুখি করে থাকে।
তাই বাইবেল আদেশ দেয়: “ভ্রাতা নামে আখ্যাত কোন ব্যক্তি যদি ব্যভিচারী কি লোভী কি প্রতিমাপূজক কি কটুভাষী কি মাতাল কি পরধনগ্রাহী হয়, তবে তাহার সংসর্গে থাকিতে নাই, এমন ব্যক্তির সহিত আহার করিতেও নাই। . . . তোমরা আপনাদের মধ্য হইতে সেই দুষ্টকে বাহির করিয়া দেও।” (১ করিন্থীয় ৫:১১, ১৩) আপনি কি একমত নন যে, এই প্রজ্ঞার “বাক্য” মণ্ডলীর নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধতা রক্ষা করতে সাহায্য করবে?
এর সম্পূর্ণ বৈসাদৃশ্যে, খ্রিস্টীয় জগতের অনেক গির্জা ও সেইসঙ্গে ধর্মভ্রষ্টরা, বাইবেলের যে-অংশগুলো নৈতিকতা সম্বন্ধে আধুনিক ও স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর সঙ্গে মিল রাখে না, সেগুলোকে সেকেলে বলে মনে করে। তাই, তারা এমনকি পাদরিশ্রেণীর মধ্যেও সব ধরনের গুরুতর পাপকে প্রশ্রয় দেয়। (২ তীমথিয় ৪:৩, ৪) কিন্তু লক্ষ করুন যে, হিতোপদেশ ৩০:৫ পদ যা যিহোবার ঢালস্বরূপ ‘বাক্যের’ বিষয়েও উল্লেখ করে, তা পরে ৬ পদে আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে: “[ঈশ্বরের] বাক্যকলাপে কিছু যোগ করিও না; পাছে তিনি তোমার দোষ ব্যক্ত করেন, আর তুমি মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন হও।” হ্যাঁ, যারা বাইবেল পরিবর্তন করার চেষ্টা করে তারা প্রকৃতপক্ষে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে মিথ্যাবাদী—সকল মিথ্যাবাদীর মধ্যে সবচেয়ে নিন্দনীয়! (মথি ১৫:৬-৯) তাই, আসুন ঈশ্বরের বাক্যকে গভীরভাবে সম্মান করে এমন একটা সংগঠনের অংশ হতে পেরে আমরা প্রকৃত কৃতজ্ঞ হই।
‘সুগন্ধের’ দ্বারা রক্ষিত
যেহেতু ঈশ্বরের লোকেরা বাইবেলের প্রতি আসক্ত এবং এর সান্ত্বনাদায়ক বার্তা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়, তাই তারা ধূপের মতো জীবনের ‘সুগন্ধ’ ছড়িয়ে দেয়, যা যিহোবাকে আনন্দিত করে। কিন্তু, বাংলা পবিত্র বাইবেল অনুসারে, অবিশ্বাসী ব্যক্তিদের কাছে সেই বার্তা বহনকারীরা হল, “মৃত্যুজনক গন্ধ।” হ্যাঁ, রূপক অর্থে দুষ্টদের ঘ্রাণশক্তি শয়তানের বিধিব্যবস্থার দ্বারা এতটাই বিকৃত হয়ে গিয়েছে যে, যারা ‘খ্রীষ্টের সুগন্ধ’ ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের উপস্থিতিতে তারা অস্বস্তি বোধ করে আর এমনকি তাদের শত্রু মনে করে। অন্যদিকে, যারা উদ্যোগের সঙ্গে সুসমাচার ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা, ‘যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছে তাহাদের কাছে খ্রীষ্টের সুগন্ধস্বরূপ’ হয়ে ওঠে। (২ করিন্থীয় ২:১৪-১৬) এই ধরনের সৎহৃদয়ের ব্যক্তিরা মিথ্যা ধর্মের কপটতা ও মিথ্যা শিক্ষাগুলোর দ্বারা অত্যন্ত বিরক্ত হয়। তাই, আমরা যখন তাদের সামনে বাইবেল খুলি ও রাজ্যের বার্তা বলি, তখন তারা খ্রিস্টের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং আরও জানতে চায়।—যোহন ৬:৪৪.
তাই, রাজ্যের বার্তার প্রতি কেউ কেউ যখন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়, তখন নিরুৎসাহিত হবেন না। বরং, ‘খ্রিস্টের সুগন্ধকে’ এক আধ্যাত্মিক সুরক্ষা হিসেবে দেখুন, যা ঈশ্বরের লোকেদের দ্বারা পরিপূর্ণ আধ্যাত্মিক রাজ্য থেকে সম্ভাব্য অনেক ক্ষতিকর ব্যক্তিদের বের করে দেয় ও সেইসঙ্গে সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের আকর্ষণ করে।—যিশাইয় ৩৫:৮, ৯.
ম্যারাথনে গ্রিক সৈন্যরা যেহেতু একজনের পিছনে আরেকজন সারিবদ্ধভাবে ঘনবিন্যস্ত হয়ে এগিয়ে গিয়েছিল ও সমস্ত শক্তি দিয়ে তাদের ঢালগুলো ধরে রেখেছিল, তাই প্রচণ্ড প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জয়ী হয়েছিল। একইভাবে, যিহোবার অনুগত সাক্ষিরাও তাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধে সম্পূর্ণ বিজয় সম্বন্ধে আশ্বাস পেতে পারে কারণ সেটা তাদের “অধিকার।” (যিশাইয় ৫৪:১৭) তাই, আসুন আমরা প্রত্যেকে “জীবনের বাক্য” ধরে রাখার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে যিহোবার কাছে আশ্রয় নিই।—ফিলিপীয় ২:১৫.
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
‘যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়’