ঈর্ষা সম্বন্ধে আপনার কী জানা উচিত
ঈর্ষা কী? এটি একটি প্রগাঢ় আবেগ যা এক ব্যক্তিকে উদ্বিগ্ন, দুঃখিত অথবা ক্রোধান্বিত করতে পারে। যখন এক ব্যক্তি আমাদের চাইতে বেশি সাফল্য লাভ করছে বলে মনে হয়, তখন তা দেখে আমরা হয়ত ঈর্ষাবোধ করতে পারি। অথবা যখন আমাদের বন্ধু আমাদের চাইতে বেশি প্রশংসা পায়, আমরা হয়ত ঈর্ষান্বিত হতে পারি। কিন্তু সবসময় ঈর্ষান্বিত হওয়া কি ভুল?
লোকেরা ঈর্ষার দরুন সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে সন্দেহ করতে থাকে। প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শৌল ছিলেন এর একটি উদাহরণ। প্রথমে, তিনি তার অস্ত্রবাহক, দায়ূদকে ভালবাসতেন, এমনকি তাকে সৈন্যদলের নেতা পদে নিযুক্ত করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৬:২১; ১৮:৫) তারপর একদিন রাজা শৌল শুনতে পান স্ত্রীলোকেরা এই বলে দায়ূদের প্রশংসা করছে: “শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র, আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত।” (১ শমূয়েল ১৮:৭) দায়ূদের সাথে তার যে উত্তম সম্পর্ক ছিল সেটিকে শৌলের এর দ্বারা প্রভাবিত হতে দেওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু, তিনি ক্ষুব্ধ হন। “সেই দিন অবধি শৌল দায়ূদের উপরে দৃষ্টি রাখিলেন।”—১ শমূয়েল ১৮:৯.
এক ঈর্ষান্বিত ব্যক্তি হয়ত অপরকে ক্ষতি করতে চায় না। সে হয়ত তার সঙ্গীর সফলতা দেখে ক্ষুব্ধ হতে পারে এবং একই গুণাবলি অথবা পরিস্থিতি আকাঙ্ক্ষা করতে পারে। অপরপক্ষে, হিংসা হল বিশেষকরে ঈর্ষার নেতিবাচক রূপ। এক হিংসাপরায়ণ ব্যক্তি, যে তার ঈর্ষাকে জাগিয়ে তোলে তার প্রতি ভাল হওয়া হয়ত গোপনে চেপে রাখতে পারে অথবা সেই ব্যক্তির কোন ক্ষতি হোক তা চাইতে পারে। কয়েকসময়, হিংসাপরায়ণ ব্যক্তি তার অনুভূতিগুলিকে চেপে রাখতে পারে না। এমন পর্যায় আসতে পারে যে সে হয়ত প্রত্যক্ষভাবে অন্যের ক্ষতি করতে পরিচালিত হতে পারে, ঠিক যেমন রাজা শৌল দায়ূদকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। একাধিকবার, শৌল বড়শা ছুঁড়ে “দায়ূদকে ভিত্তির সঙ্গে গাঁথিতে” চেষ্টা করেছিলেন।—১ শমূয়েল ১৮:১১; ১৯:১০.
আপনি হয়ত বলতে পারেন যে, ‘আমি একজন ঈর্ষান্বিত ব্যক্তি নই।’ সত্যই, ঈর্ষা আপনার জীবনকে হয়ত নিয়ন্ত্রণ করে না। কিন্তু, কিছু পর্যায়ে, আমরা সকলে ঈর্ষার দ্বারা প্রভাবিত—আমাদের নিজেদের ঈর্ষার অনুভূতিগুলি এবং অন্যদের। যদিও আমরা অন্যদের মধ্যে ঈর্ষা দেখতে তৎপর হতে পারি, কিন্তু আমাদের মধ্যে তা দেখতে অতটা তৎপর নাও হতে পারি।
“হিংসা করার প্রবণতা”
পাপপূর্ণ মানবীয় রূপের বিবরণ যা ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেলে প্রকাশ করা হয়েছে তা প্রায়ই হিংসার পাপকে তুলে ধরে। আপনার কি কয়িন এবং হেবলের বিবরণ মনে আছে? আদম ও হবার এই পুত্রেরা উভয়েই ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বলি উৎসর্গ করেছিলেন। হেবল তা করেছিলেন কারণ তিনি একজন বিশ্বাসী পুরুষ ছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৪) পৃথিবী সম্বন্ধে তাঁর যে মহান উদ্দেশ্য তা পরিপূর্ণ করার ঈশ্বরের যে সামর্থ্য আছে, তার উপর তার বিশ্বাস ছিল। (আদিপুস্তক ১:২৮; ৩:১৫; ইব্রীয় ১১:১) হেবল এও বিশ্বাস করছিলেন যে ঈশ্বর বিশ্বস্ত মানুষদের আসন্ন পার্থিব পরমদেশে জীবন দিয়ে পুরস্কৃত করবেন। (ইব্রীয় ১১:৬) ফলত, ঈশ্বর হেবলের বলিদানে তুষ্টি দেখিয়েছিলেন। যদি কয়িন সত্যই তার ভাইকে ভালবাসত তাহলে ঈশ্বর যে হেবলকে আশীর্বাদ করেছেন তাতে সে খুশি হত। পরিবর্তে, কয়িন, “অতিশয় ক্রুদ্ধ হইল।”—আদিপুস্তক ৪:৫.
সেও যাতে আশীর্বাদ পেতে পারে তার জন্য ঈশ্বর কয়িনকে সদাচরণ করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তারপর ঈশ্বর সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “আর যদি সদাচরণ না কর, তবে পাপ দ্বারে গুঁড়ি মারিয়া রহিয়াছে। তোমার প্রতি তাহার বাসনা থাকিবে, এবং তুমি তাহার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে।” (আদিপুস্তক ৪:৭) দুঃখের বিষয় এই যে, কয়িন তার ঈর্ষান্বিত ক্রোধকে বশে রাখতে পারেনি। এটি তার ধার্মিক ভাইকে হত্যা করতে পরিচালিত করেছিল। (১ যোহন ৩:১২) সেই সময় থেকে, লড়াই এবং যুদ্ধ কোটি কোটি লোকের জীবন নিয়েছে। দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া ব্যাখ্যা করে, “যুদ্ধ করার কয়েকটি মৌলিক কারণ হতে পারে আরও জমি পাওয়ার ইচ্ছা, ধন লাভের ইচ্ছা, ক্ষমতা লাভের ইচ্ছা অথবা সুরক্ষা পাওয়ার ইচ্ছা।”
সত্য খ্রীষ্টানেরা এই জগতের যুদ্ধগুলিতে অংশ নেয় না। (যোহন ১৭:১৬) কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিবিশেষেরা কয়েকসময় মৌখিক লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। যদি মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যেরা পক্ষ নিতে শুরু করে, তাহলে তা ক্ষতিকারক মৌখিক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে। “তোমাদের মধ্যে কোথা হইতে যুদ্ধ ও কোথা হইতে বিবাদ উৎপন্ন হয়?” বাইবেল লেখক যাকোব সহবিশ্বাসীদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন। (যাকোব ৪:১) তিনি সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন তাদের বস্তুবাদিতামূলক লোভকে প্রকাশ করে এবং আরও বলেছিলেন, “তোমরা লোভ করিতেছ” অথবা “ঈর্ষান্বিত” হচ্ছো। (যাকোব ৪:২, NW, ফুটনোট) হ্যাঁ, বস্তুবাদিতা লোভের পথে পরিচালিত করতে এবং যাদের পরিস্থিতি আপাতদৃষ্টিতে ভাল তাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হতে পারে। এই কারণে, যাকোব মানুষের “হিংসা করার প্রবণতা”-র বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।—যাকোব ৪:৫, NW.
ঈর্ষার কারণগুলি বিশ্লেষণ করায় কী উপকার আছে? তা আমাদের সৎ হতে এবং অন্যদের সাথে আরও ভাল সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করতে পারে। এটি আমাদের আরও বোধগম্যশীল, সহনীয় এবং ক্ষমাপরায়ণ হতেও সাহায্য করতে পারে। সর্বোপরি, পরিত্রাণ এবং পাপপূর্ণ মানব প্রবণতাগুলির প্রতি ঈশ্বরের প্রেমপূর্ণ ব্যবস্থা যা মানুষের অতিপ্রয়োজন এটি তা তুলে ধরে।—রোমীয় ৭:২৪, ২৫.
পাপপূর্ণ ঈর্ষাবিহীন এক জগৎ
মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতে গেলে পাপপূর্ণ ঈর্ষাবিহীন এক জগৎ হয়ত অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। লেখক রম লাডাও স্বীকার করেন: “বহু বছর ধরে সংগ্রহ করা প্রজ্ঞা, যা দার্শনিকবিদেরা . . . এবং মনস্তত্ত্ববিদেরা এই বিষয়ে যা বলেছেন, তা এক ব্যক্তিকে যে ঈর্ষার দ্বারা পীড়িত তাকে কোন পথনির্দেশ দেয় না। . . . কোন ডাক্তার কি ঈর্ষা করে এমন ব্যক্তিকে কখনও সুস্থ করেছেন?”
কিন্তু এক নতুন জগতে যেখানে কোন ব্যক্তি অধার্মিক ঈর্ষা অথবা হিংসা দ্বারা আর কখনও পীড়িত হবে না এমন এক সিদ্ধ মানব জীবনের আশা ঈশ্বরের বাক্য তুলে ধরে। এছাড়াও, সেই নতুন জগতের শান্তি সেই ব্যক্তি যে এইধরনের দুষ্ট বৈশিষ্ট্য সকল দেখায় তার দ্বারা ভঙ্গ হবে না।—গালাতীয় ৫:১৯-২১; ২ পিতর ৩:১৩.
কিন্তু, সবরকমের ঈর্ষা যে অনুচিত তা নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাইবেল বলে যে যিহোবা হলেন “ঈর্ষাপরায়ণ ঈশ্বর।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:১৪, NW) তার অর্থ কী? আর বাইবেল সঠিক ঈর্ষা সম্বন্ধে কী বলে? একই সাথে, একজন ব্যক্তি অনুচিত ঈর্ষার উপর কিভাবে কর্তৃত্ব করতে পারে? পরের প্রবন্ধগুলি দেখুন।