আনন্দিত “বাক্যের কার্য্যকারী”
“মৃদুভাবে সেই রোপিত বাক্য গ্রহণ কর, যাহা তোমাদের প্রাণের পরিত্রাণ সাধন করিতে পারে। আর বাক্যের কার্য্যকারী হও, আপনাদিগকে ভুলাইয়া শ্রোতামাত্র হইও না।”—যাকোব ১:২১, ২২.
১. কিভাবে আমাদের ১৯৯৬ সালের বাৎসরিক শাস্ত্রপদ বিবেচিত হবে?
“বাক্যের কার্য্যকারী হও।” এই সাধারণ উক্তিটি একটি শক্তিশালী সংবাদ বহন করে। এটি বাইবেলের “যাকোবের পত্র” থেকে নেওয়া হয়েছে এবং এটি ১৯৯৬ সাল ব্যাপী যিহোবার সাক্ষীদের কিংডম হলে বাৎসরিক শাস্ত্রপদ হিসাবে প্রদর্শিত হবে।
২, ৩. কেন এটি উপযুক্ত যে যাকোবের পত্র তার নাম বহন করে?
২ যাকোব, প্রভু যীশুর অর্ধভ্রাতা, প্রাথমিক খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে সুপরিচিত ছিলেন। যীশুর পুনরুত্থানের পরে, একটি পরিস্থিতিতে আমাদের প্রভু ব্যক্তিগতভাবে প্রথমে যাকোবের কাছে ও তারপর সমস্ত প্রেরিতদের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন। (১ করিন্থীয় ১৫:৭) পরবর্তীকালে, যখন প্রেরিত পিতর অলৌকিকভাবে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছিলেন, তিনি এক সম্মিলিত খ্রীষ্টীয় দলকে বলেছিলেন: “যাকোবকে ও ভ্রাতৃগণকে এই সমাচার দিও।” (প্রেরিত ১২:১৭) এটি দেখায় যে, যদিও যাকোব নিজে একজন প্রেরিত ছিলেন না, কিন্তু যিরূশালেমে যখন প্রেরিতগণ ও প্রাচীনবর্গ ধর্মান্তরিত পরজাতীয়দের ছিন্নত্বক্ হওয়ার প্রয়োজন নেই, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তখন যাকোব পরিচালক গোষ্ঠীর সেই সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন। যাকোব বিষয়টি পর্যালোচনা করেছিলেন এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা স্থিরীকৃত সিদ্ধান্ত সমস্ত মণ্ডলীগুলিতে প্রেরণ করা হয়েছিল।—প্রেরিত ১৫:১-২৯.
৩ এটি স্পষ্টই প্রতীয়মান যে, যাকোবের পরিপক্ব যুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যাইহোক, তিনি নিজে নম্রভাবে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি কেবলমাত্র “ঈশ্বরের ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দাস” ছিলেন। (যাকোব ১:১) তার অনুপ্রাণিত পত্র আজকের খ্রীষ্টানদের জন্য প্রচুর মূল্যবান পরামর্শ ও উৎসাহে পরিপূর্ণ। এটি সমাপ্ত হয়েছিল সেনাপতি সেসটিয়াস গ্যালাস দ্বারা যিরূশালেমের উপর প্রাথমিক রোমীয় আক্রমণের চার বছর আগে, “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে” বিস্তারিতভাবে সুসমাচার প্রচার সম্পন্ন হওয়ার পর। (কলসীয় ১:২৩) তারা সংকটপূর্ণ সময়ে ছিল এবং যিহোবার দাসেরা যিহূদী জাতির প্রতি তাঁর বিচার কার্যকর করার বিষয়ে পূর্ণমাত্রায় সচেতন ছিল।
৪. কী ইঙ্গিত করে যে প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি দৃঢ় আস্থা ছিল?
৪ ওই খ্রীষ্টানদের কাছে ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ ইব্রীয় শাস্ত্র এবং গ্রীক শাস্ত্রের অনেকটা অংশ ছিল। প্রাথমিক লেখাগুলিতে তাদের অসংখ্য উদাহরণ যেমন ইঙ্গিত করে, খ্রীষ্টীয় বাইবেল লেখকদের স্পষ্টতই ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি গভীর আস্থা ছিল। অনুরূপভাবে, আজকের দিনে আমাদেরও ঈশ্বরের বাক্য একাগ্রভাবে অধ্যয়ন ও জীবনে তা প্রয়োগ করার প্রয়োজন আছে। সহ্য করার জন্য আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তি ও সাহসের প্রয়োজন আছে যা পবিত্র আত্মা প্রদান করে থাকে।—গীতসংহিতা ১১৯:৯৭; ১ তীমথিয় ৪:১৩.
৫. কেন আজকের দিনে আমাদের বিশেষ পরিচালনার প্রয়োজন এবং কোথায় আমরা এটি খুঁজে পাব?
৫ আজকে মানবজাতি “এরূপ ‘মহাক্লেশ . . . যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না,’ এর প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। (মথি ২৪:২১) আমাদের পরিত্রাণ নির্ভর করছে ঐশিক পরিচালনা গ্রহণ করার উপর। কিভাবে আমরা তা পেতে পারি? ঈশ্বরের আত্মায়-অনুপ্রাণিত বাক্যের যে শিক্ষা তার প্রতি আমাদের হৃদয়কে উন্মুক্ত রাখার দ্বারা। এটি আমাদের যিহোবার প্রাচীন কালের বিশ্বস্ত দাসেদের মত “বাক্যের কার্য্যকারী হও” এই নির্দেশ দ্বারা পরিচালিত হতে সাহায্য করবে। আমাদের ঈশ্বরের বাক্য পড়া ও অধ্যয়ন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অধ্যবসায়ী হতে হবে ও যিহোবার প্রশংসায় তা ব্যবহার করতে হবে।—২ তীমথিয় ২:১৫; ৩:১৬, ১৭.
আনন্দের সাথে সহ্য করা
৬. পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েও কেন আমদের আনন্দ খুঁজে পাওয়া উচিত?
৬ তার পত্রের শুরুতেই যাকোব ঈশ্বরের আত্মার দ্বিতীয় ফল হিসাবে আনন্দের বিষয় উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন: “হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্ব্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও; জানিও, তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা ধৈর্য্য সাধন করে। আর সেই ধৈর্য্য সিদ্ধ কার্য্যবিশিষ্ট হউক, যেন তোমরা সিদ্ধ ও সম্পূর্ণ হও, কোন বিষয়ে তোমাদের অভাব না থাকে।” (যাকোব ১:২-৪; গালাতীয় ৫:২২, ২৩) কিভাবে এটি বলা যায় যে নানাবিধ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েও “সর্ব্বতোভাবে আনন্দ” করা? হ্যাঁ, এমনকি যীশু তাঁর পর্বতে দত্ত উপদেশে বলেছিলেন: “ধন্য [“সুখী,” NW] তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে। আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর।” (মথি ৫:১১, ১২) যতই আমরা অনন্ত জীবনের লক্ষ্যের প্রতি সক্রিয়ভাবে প্রয়াসী হই, ততই আমাদের প্রচেষ্টার উপর যিহোবার আশীর্বাদ পাওয়া কতই আনন্দপূর্ণ পরিতৃপ্তির এক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।—যোহন ১৭:৩; ২ তীমথিয় ৪:৭, ৮; ইব্রীয় ১১:৮-১০, ২৬, ৩৫.
৭. (ক) সহ্য করার জন্য আমরা কিভাবে সাহায্য পেতে পারি? (খ) ইয়োবের মত কিভাবে আমরা পুরস্কৃত হতে পারি?
৭ যীশু নিজে “আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত” সহ্য করেছিলেন। (ইব্রীয় ১২:১, ২) যীশুর সাহসিকতাপূর্ণ উদাহরণের প্রতি একাগ্রভাবে দৃষ্টি রাখার দ্বারা আমরাও সহ্য করতে পারি! যেমন যাকোব তার পত্রের শেষের দিকে উল্লেখ করেন, যিহোবা বিশ্বস্ততা রক্ষাকারীদের প্রচুররূপে পুরস্কৃত করেন। “যারা সহ্য করেছে তাদের আমরা সুখী বলি,” যাকোব বলেন। “তোমরা ইয়োবের সহ্যশক্তির কথা শুনেছ, যিহোবার পরিণামও দেখেছ, ফলতঃ যিহোবা অনুভূতিতে অতিশয় স্নেহপূর্ণ ও দয়াময়।” (যাকোব ৫:১১, NW) স্মরণ করুন ইয়োবের বিশ্বস্ততা কিভাবে পুরস্কৃত হয়েছিল যখন তিনি সুস্বাস্থ্য ও প্রিয়জনদের সাথে এক পূর্ণ, সুখী জীবনের আনন্দ ফিরে পেয়েছিলেন। এখন যিহোবাকে সেবা করার চূড়ান্ত পরিণতিস্বরূপ বিশ্বস্ততার সাথে ধৈর্য আপনাকে ঈশ্বরের নতুন জগতের প্রতিজ্ঞাত পরমদেশে অনুরূপ আনন্দ এনে দিতে পারে।
প্রজ্ঞার অনুসন্ধান করা
৮. কিভাবে আমরা প্রকৃত ও বাস্তবধর্মী প্রজ্ঞা খুঁজে পেতে পারি এবং এই ক্ষেত্রে প্রার্থনা কী ভূমিকা পালন করে থাকে?
৮ আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের পরিশ্রমী অধ্যয়ন ও তার সাথে এর বাস্তবধর্মী প্রয়োগের ফলস্বরূপ, ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা শয়তানের মৃতপ্রায় কলুষিত ব্যবস্থার মাঝে আমাদের পরীক্ষা সহ্য করতে সাহায্য করে। কিভাবে আমরা এইধরনের প্রজ্ঞা খুঁজে পাওয়ার নিশ্চয়তা পাব? যাকোব আমাদের বলেন: “যদি তোমাদের কাহারও জ্ঞানের অভাব হয়, তবে সে ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করুক; তিনি সকলকে অকাতরে দিয়া থাকেন, তিরস্কার করেন না; তাহাকে দত্ত হইবে। কিন্তু সে বিশ্বাসপূর্ব্বক যাচ্ঞা করুক কিছু সন্দেহ না করুক; কেননা যে সন্দেহ করে, সে বায়ুতাড়িত বিলোড়িত সমুদ্র-তরঙ্গের তুল্য।” (যাকোব ১:৫, ৬) আমাদের একান্তভাবে প্রার্থনা করার প্রয়োজন আছে, দ্বিধাহীন নিশ্চয়তা নিয়ে যে যিহোবা আমাদের অনুরোধ শুনবেন এবং তাঁর নিরূপিত সময় ও পদ্ধতি অনুযায়ী তিনি সেগুলির অবশ্যই উত্তর দেবেন।
৯. ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা ও এর ব্যবহার সম্পর্কে যাকোব কিভাবে বর্ণনা করেছিলেন?
৯ ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া এক উপহারস্বরূপ। এই উপহারের বর্ণনা দিতে গিয়ে যাকোব বলেন: “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে, জ্যোতির্গণের সেই পিতা হইতে নামিয়া আইসে, যাঁহাতে অবস্থান্তর কিম্বা পরিবর্ত্তনজনিত ছায়া হইতে পারে না।” তার পত্রের পরবর্তী অংশে প্রকৃত প্রজ্ঞা অর্জন করার ফলশ্রুতি সম্পর্কে যাকোব ব্যাখ্যা করেন যখন তিনি বলেন: “তোমাদের মধ্যে জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমান্ কে? সে সদাচরণ দ্বারা জ্ঞানের মৃদুতায় নিজ ক্রিয়া দেখাইয়া দিউক। . . . যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি পরে শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত [“যুক্তিযুক্ত,” NW] সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ, ভেদাভেদবিহীন ও নিষ্কপট।”—যাকোব ১:১৭; ৩:১৩-১৭.
১০. কিভাবে সত্যের সাথে মিথ্যা ধর্মের পার্থক্য করা যায়?
১০ মিথ্যা ধর্মের বিশ্বসাম্রাজ্য, তা খ্রীষ্টীয় জগতেই হোক বা অন্য দেশে, প্রায়ই তাদের উপাসনার পদ্ধতি হল কিছু স্তোত্র গান করা, পুনরাবৃত্ত প্রার্থনা শোনা এবং কখনও বা একটি বক্তৃতা শোনা। আশার সংবাদ ঘোষণা করার জন্য কোন উৎসাহ দেওয়া হয় না, যেহেতু অধিকাংশ ধর্মগুলির ভবিষ্যতের জন্য কোন উজ্জ্বল প্রত্যাশা নেই। ঈশ্বরের মশীহ রাজ্যের গৌরবান্বিত আশাকে হয় কখনও উল্লেখ করা হয়নি অথবা সম্পূর্ণভাবে ভুল বোঝা হয়েছে। যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণীমূলকরূপে খ্রীষ্টীয়জগতের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন: “আমার প্রজাবৃন্দ দুই দোষ করিয়াছে; জীবন্ত জলের উনুই যে আমি, আমাকে তাহারা ত্যাগ করিয়াছে; আর আপনাদের জন্য কূপ খুদিয়াছে, সেগুলি ভগ্ন কূপ জলাধার হইতে পারে না।” (যিরমিয় ২:১৩) তাদের কাছে সত্যের জল নেই। স্বর্গীয় প্রজ্ঞারও অভাব আছে।
১১, ১২. (ক) ঐশিক প্রজ্ঞা কিভাবে আমাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে? (খ) কোন্ বিষয়ে ঐশিক প্রজ্ঞা আমাদের সতর্ক করে?
১১ আজকে যিহোবার সাক্ষীদের ক্ষেত্রে এটি কতই না পৃথক! ঈশ্বর-দত্ত উত্তরোত্তর নতুন শক্তির দ্বারা তারা তাঁর আগত রাজ্য সম্বন্ধীয় সুসমাচারে পৃথিবীকে সম্পূর্ণ ছেয়ে ফেলেছে। যে প্রজ্ঞা সম্বন্ধে তারা কথা বলে তা দৃঢ়ভাবে ঈশ্বরের বাক্য ভিত্তিক। (তুলনা করুন হিতোপদেশ ১:২০; যিশাইয় ৪০:২৯-৩১.) সত্যই, তারা প্রকৃত প্রজ্ঞা ও বুদ্ধির বাস্তব ব্যবহার করে আমাদের ঈশ্বর এবং সৃষ্টিকর্তার মহান উদ্দেশ্যসকল ঘোষণা করে। এটি আমাদের ইচ্ছা হওয়া উচিত যে সমস্ত মণ্ডলী “আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে তাঁহার [ঈশ্বরের] ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞানে পূর্ণ” হোক। (কলসীয় ১:৯) এই ভিত্তি থাকার দরুন, যুবক ও বৃদ্ধ সকলেই “বাক্যের কার্য্যকারী হও” সর্বদা এই নির্দেশের দ্বারা অনুপ্রাণিত হবে।
১২ “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে” তা আমাদের পাপ সম্বন্ধে সতর্ক করে যা ঐশিক অননুমোদনের কারণ হতে পারে। “আমার প্রিয় ভ্রাতৃগণ, তোমরা ইহা জ্ঞাত আছ,” যাকোব বলেন। “তোমাদের প্রত্যেক জন শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর, ক্রোধে ধীর হউক, কারণ মনুষ্যের ক্রোধ ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করে না।” হ্যাঁ, আমাদের অবশ্যই ঐশিক উপদেশ শ্রবণে সত্বর, উৎসুক হতে হবে ও তা প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু, আমাদের “ক্ষুদ্র অঙ্গ” জিহ্বার অপব্যবহারকে প্রতিরোধ করতে হবে। দম্ভ, অবিবেচনাপূর্ণ সমালোচনা অথবা অযৌক্তিকভাবে নিজস্ব মত পোষণ করা ইত্যাদির মাধ্যমে জিহ্বা প্রকৃতই রূপকভাবে “বৃহৎ বন” প্রজ্বলিত করতে পারে। সুতরাং আমাদের সমস্ত মেলামেশার ক্ষেত্রে মধুর আচরণ ও আত্মসংযম গড়ে তুলতে হবে।—যাকোব ১:১৯, ২০; ৩:৫.
১৩. কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা “রোপিত বাক্য” গ্রহণ করি?
১৩ “অতএব,” যাকোব লেখেন, “তোমরা সকল অশুচিতা এবং দুষ্টতার উচ্ছাস ফেলিয়া দিয়া, মৃদুভাবে সেই রোপিত বাক্য গ্রহণ কর, যাহা তোমাদের প্রাণের পরিত্রাণ সাধন করিতে পারে।” (যাকোব ১:২১) এই লোভী জগৎ ও এর আকর্ষণীয়তা, বস্তুবাদিতা, আমিত্ব-প্রিয় জীবন-ধারা এবং অধঃপতিত নৈতিক মানের অবসান হতে চলেছে। “কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৫-১৭) তাই, এটি কত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা “রোপিত বাক্য” গ্রহণ করি! ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা সরবরাহকৃত প্রজ্ঞা এই মৃতপ্রায় জগতের মন্দতা থেকে স্পষ্ট পার্থক্য প্রকাশ করে। আমরা ওই মন্দতার কিছুই চাই না। (১ পিতর ২:১, ২) আমাদের সত্যের প্রতি ভালবাসা ও দৃঢ় বিশ্বাস হৃদয়ে রোপণ করা প্রয়োজন আছে, যাতে করে আমরা স্থিরসঙ্কল্প হই যে যিহোবার ধার্মিক পথ থেকে আমরা কখনও বিচ্যুত হব না। কিন্তু কেবলমাত্র ঈশ্বরের বাক্য শোনা এটিই কি যথেষ্ট?
“বাক্যের কার্য্যকারী” হওয়া
১৪. কিভাবে আমরা বাক্যের “শ্রোতা” ও “কার্য্যকারী” উভয়ই হতে পারি?
১৪ যাকোব ১:২২ পদে আমরা পড়ি: “বাক্যের কার্য্যকারী হও, আপনাদিগকে ভুলাইয়া শ্রোতামাত্র হইও না।” “বাক্যের কার্য্যকারী হও”! এই বিষয়টি নিশ্চিতভাবে যাকোবের পত্রে তুলে ধরা হয়েছে। তাই আমাদের অবশ্যই, “সেইরূপ কর” এই নির্দেশ শুনতে হবে! (আদিপুস্তক ৬:২২) আজকে অনেক লোকেরা দাবি করে যে কিছু উপদেশ শোনা অথবা কখনও কখনও আচার-সর্বস্ব উপাসনা করাটাই যথেষ্ট, আর তারা এর বেশি কিছু করেও না। তারা হয়ত মনে করে তাদের নিজস্ব মান অনুযায়ী যতক্ষণ তারা একটি “ভালো জীবন” যাপন করছে, সেটাই যথেষ্ট। তবুও যীশু খ্রীষ্ট উল্লেখ করেছিলেন: “কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদ্গামী হউক।” (মথি ১৬:২৪) ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনের ক্ষেত্রে যীশুর উদাহরণ অনুকরণ করে আত্মোৎসর্গমূলক কাজ ও সহ্য করা স্পষ্টভাবে সত্য খ্রীষ্টানদের কাছ থেকে দাবি করা হয়। আজকের দিনে তাদের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা সমান অর্থ রাখে যেমন এটি প্রথম শতাব্দীতে ছিল, যখন পুনরুত্থিত যীশু আদেশ করেছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।” (মথি ২৮:১৯) এই ক্ষেত্রে আপনি কতটা করছেন?
১৫. (ক) কিভাবে আমরা “বাক্যের কার্য্যকারী” হিসাবে সুখী হতে পারি তা দেখাতে যাকোব কোন্ উদাহরণ দিয়েছিলেন? (খ) কোন কেবলমাত্র লোক-দেখানো উপাসনা যথেষ্ট নয়?
১৫ যদি আমরা ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি হেঁট হয়ে দৃষ্টিপাত করি, এটি একটি আয়নার মত হতে পারে যা আমরা কিধরনের ব্যক্তি তা প্রতিফলিত করবে। যাকোব বলেন: “যে কেহ হেঁট হইয়া স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত করে, ও তাহাতে নিবিষ্ট থাকে, ভুলিয়া যাইবার শ্রোতা না হইয়া কার্য্যকারী হয়, সেই আপন কার্য্যে ধন্য হইবে।” (যাকোব ১:২৩-২৫) হ্যাঁ, সে একজন সুখী “বাক্যের কার্য্যকারী” হবে। এছাড়াও, আমাদের খ্রীষ্টীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন “কার্য্যকারী” হওয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কখনও নিজেদের প্রতারিত করব না এই চিন্তা করে যে কেবলমাত্র লোক-দেখান উপাসনাই যথেষ্ট। যাকোব আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন সত্য উপাসনার কিছু দিক সম্পর্কে লক্ষ্য করতে যা এমনকি অনেকক্ষেত্রে উদ্যোমী খ্রীষ্টানেরাও অবহেলা করে থাকে। তিনি লেখেন: “ক্লেশাপন্ন পিতৃমাতৃহীনদের ও বিধবাদের তত্ত্বাবধান করা, এবং সংসার হইতে আপনাকে নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা করাই পিতা ঈশ্বরের কাছে শুচি ও বিমল ধর্ম্ম।”—যাকোব ১:২৭.
১৬. কিভাবে অব্রাহাম “ঈশ্বরের বন্ধু” হয়েছিলেন এবং কিভাবে আমরা তাঁর বন্ধুত্ব অর্জন করতে পারি?
১৬ ‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি’ কেবলমাত্র এটি বলাই যথেষ্ট নয়। যেমন যাকোব ২:১৯ পদ উল্লেখ করে: “তুমি বিশ্বাস করিতেছ যে, ঈশ্বর এক, ভালই করিতেছ; ভূতেরাও [“মন্দ দূতেরাও,” NW] তাহা বিশ্বাস করে, এবং ভয়ে কাঁপে।” যাকোব জোরালোভাবে প্রকাশ করেন যে “বিশ্বাসও কর্ম্মবিহীন হইলে আপনি একা বলিয়া তাহা মৃত,” এবং অব্রাহামের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন: “বিশ্বাস তাঁহার ক্রিয়ার সহকারী ছিল, এবং কর্ম্মহেতু বিশ্বাস সিদ্ধ হইল।” (যাকোব ২:১৭, ২০-২২) অব্রাহামের কার্য তার জ্ঞাতিবর্গের জন্য সুরক্ষা যুগিয়েছিল, আতিথেয়তা দেখিয়েছিল, ইসহাককে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত করেছিল এবং ‘ভিত্তিমূলস্বরূপ সেই নগর’ ভবিষ্যৎ মশীহ রাজ্য সম্বন্ধে যিহোবার প্রতিজ্ঞার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে ‘জনসাধারণ্যে ঘোষণা’ করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। (আদিপুস্তক ১৪:১৬; ১৮:১-৫; ২২:১-১৮; ইব্রীয় ১১:৮-১০, ১৩ ১৪; ১৩:২) উপযুক্তভাবেই, অব্রাহাম “‘ঈশ্বরের বন্ধু’ এই নাম পাইলেন।” (যাকোব ২:২৩) আমরাও ‘ঈশ্বরের বন্ধু’ হিসাবে পরিগণিত হতে পারি, যদি আমরা তাঁর আগত ধার্মিক রাজ্যের বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস ও আশা সক্রিয়ভাবে ঘোষণা করি।
১৭. (ক) কেন রাহব “ধার্ম্মিক গণিত” হয়েছিলেন, এবং কিভাবে তিনি পুরস্কৃত হন? (খ) যারা ‘বাক্যের কার্য্যকারী’ হয়েছিলেন তাদের কোন্ দীর্ঘ তালিকা বাইবেল প্রদান করে? (গ) কিভাবে ইয়োব পুরস্কৃত হয়েছিলেন এবং কেন?
১৭ যারা ‘বাক্যের কার্য্যকারী হবে’ তারা অবশ্যই ‘কর্ম্মহেতু ধর্ম্মিক গণিত হবে, শুধু বিশ্বাসহেতু নয়।’ (যাকোব ২:২৪) রাহব ছিলেন এমনই একজন যিনি তার ‘বাক্যের’ বিশ্বাসে কর্ম যুক্ত করেছিলেন, যেহেতু তিনি যিহোবার পরাক্রম কার্য সম্বন্ধে শুনেছিলেন। তিনি ইস্রায়েলীয় গুপ্তচরদের লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং তাদের পালাতে সাহায্য করেছিলেন এবং তারপর সংরক্ষণ পাওয়ার জন্য তিনি তার পিতৃকুলের পরিজনদের একত্রিত করেছিলেন। পুনরুত্থানে, এটি জেনে তিনি কতই না আনন্দিত হবেন যে তার বিশ্বাস কাজ দ্বারা সমর্থিত ছিল যা তাকে মশীহের পূর্বপুরুষ করে তুলেছিল! (যিহোশূয়ের পুস্তক ২:১১; ৬:২৫; মথি ১:৫) ইব্রীয় ১১ অধ্যায় অন্যান্য ব্যক্তিদের একটি দীর্ঘ তালিকা প্রদান করে যারা তাদের বিশ্বাস প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে ‘কার্যকারী হয়েছিলেন,’ আর তারা প্রচুররূপে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবেন। ইয়োবের বিষয় আমরা অবশ্যই ভুলব না যিনি, কঠোর পরীক্ষার মধ্যেও বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর নাম ধন্য হউক।” যেমন আমরা ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করেছি, তার বিশ্বাস ও কাজ ফলস্বরূপ এক মহান পুরস্কার নিয়ে এসেছিল। (ইয়োব ১:২১; ৩১:৬; ৪২:১০; যাকোব ৫:১১) অনুরূপভাবে, আজকে “বাক্যের কার্য্যকারী” হিসাবে আমাদের ধৈর্য্যও যিহোবার অনুমোদন নিয়ে আসবে।
১৮, ১৯. কিভাবে দীর্ঘ সময় ধরে অত্যাচারিত ভাইয়েরা ‘বাক্যের কার্য্যকারী হয়’? এবং তাদের কাজ কোন্ আশীর্বাদ নিয়ে আসে?
১৮ বেশ কিছু বছর ধরে যারা সহ্য করছেন তাদের মধ্যে আমাদের পূর্ব ইউরোপের ভাইয়েরা অন্তর্ভুক্ত। এখন অনেক বাধানিষেধ অপসারণ করা হয়েছে, আর তা সত্যই তাদের নতুন পরিস্থিতিতে “বাক্যের কার্য্যকারী” করে তুলেছে। প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে মিশনারী ও অগ্রগামীরা শিক্ষাদান ও সাংগঠনিক কাজে সাহায্য করার জন্য এসেছেন। ওয়াচ টাওয়ার সমিতির ফিনল্যান্ড ও নিকটস্থ শাখাগুলি থেকে নির্মাণ কাজে দক্ষ ভাইয়েদের পাঠানো হয়েছে এবং জগদ্ব্যাপী উদার ভ্রাতৃসমাজ নতুন শাখা অফিস ও কিংডম হলগুলির নির্মাণ কাজের জন্য আর্থিক সংস্থান যুগিয়েছে।—তুলনা করুন ২ করিন্থীয় ৮:১৪, ১৫.
১৯ কত উদ্যমের সাথে এই দীর্ঘ সময় ধরে অত্যাচারিত ভাইয়েরা ক্ষেত্রে সাড়া দিয়েছে! তারা ক্ষতিপূরণস্বরূপ নিজেরা ‘পরিশ্রম এবং প্রাণপণ করিতেছে’ যেহেতু “অসময়ে” কোন সুযোগ পাওয়া যায়নি বলে। (১ তীমথিয় ৪:১০; ২ তীমথিয় ৪:২) উদাহরণস্বরূপ, গত এপ্রিল মাসে আলবেনিয়ায়, যেখানে খুব নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল সেখানে রাজ্য সংবাদ যার শিরোনাম ছিল “জীবন কেন এত সমস্যাপূর্ণ” এর সম্পূর্ণ সরবরাহ মাত্র তিন দিনে বিতরণ করা হয়েছিল। যীশুর মৃত্যুর স্মরণার্থক সভার এক উত্তম সমর্থন ছিল যেখানে ৩,৪৯১ জনের উপস্থিতি হল তাদের সাথে পুনরায় দেখা করার এক উত্তম ফল।—যা তাদের ৫৩৮ জন সক্রিয় প্রকাশকের থেকে কত বেশি।
২০ সাম্প্রতিক স্মরণার্থক সভার উপস্থিতি কী ইঙ্গিত করে এবং কিভাবে অনেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছে?
২০ অন্যান্য দেশগুলিতেও স্মরণার্থক সভার উপস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান দেখা গেছে যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বৃদ্ধি পেয়ে ১,০০,০০,০০০ এর বেশিতে দাঁড়িয়েছে। অনেক জায়গায় নতুনেরা, তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করেছে “বাক্যের কার্য্যকারী হয়ে” স্মরণার্থক সভায় উপস্থিত থেকে ও উদ্যাপন করে। আমরা কি নতুন সঙ্গীদের ওই সুযোগের যোগ্য করে তুলতে আরও উৎসাহিত করতে পারি?
২১. আমাদের বাৎসরিক শাস্ত্রপদের সাথে সংগতি রেখে কী বিষয় আমরা অনুধাবন করব এবং কোন্ লক্ষ্যের প্রতি দৃষ্টি রেখে?
২১ প্রথম শতাব্দীর উদ্যোগী খ্রীষ্টান ও তারপর থেকে আরও অন্যান্যদের মত আসুন স্থিরসংকল্প হই অনন্ত জীবনের “লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতে” নিজেরা প্রাণপণ করি, তা স্বর্গীয় রাজ্য অথবা এই পার্থিব অঞ্চলে যাই হোক না কেন। (ফিলিপীয় ৩:১২-১৪) সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের সমস্ত রকম প্রচেষ্টা করা যথার্থ। এখন কেবলমাত্র শ্রোতা হওয়ার সময় নয়, কিন্তু সমস্ত সময়ের মধ্যে সেই উপযুক্ত সময় যখন ‘বলবান হওয়ার ও কার্য্য করার’ প্রয়োজন। (হগয় ২:৪; ইব্রীয় ৬:১১, ১২) সেই ‘রোপিত বাক্য গ্রহণ করে’ আমরা যেন এখন এবং আগত অনন্তকালের জন্য ‘বাক্যের আনন্দিত কার্য্যকারী হই।’
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ কিভাবে আমরা আনন্দের সাথে সহ্য করতে পারি?
◻ “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে” তা কী? এবং কিভাবে আমরা এটি অনুধাবন করতে পারি?
◻ কেন আমরা ‘বাক্যের কার্য্যকারী হব, শ্রোতামাত্র নয়’?
◻ “বাক্যের কার্য্যকারী” হতে কোন্ রিপোর্ট আমাদের উদ্দীপিত করে?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরাও যেন ঐশিক শিক্ষার প্রতি আমাদের হৃদয় উন্মুক্ত রাখি
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইয়োবের বিশ্বস্ততা পুরস্কৃত হয়েছিল প্রিয়জনদের সাথে এক পূর্ণ সুখী জীবন ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে