অধ্যায় বারো
আপনার বাপ্তিস্মের অর্থ
১. কেন জলে বাপ্তিস্ম নেওয়া আমাদের প্রত্যেকের আগ্রহের বিষয় হওয়া উচিত?
সাধারণ কাল ২৯ সালে, যোহন বাপ্তাইজকের মাধ্যমে জর্দন নদীতে নিমজ্জিত হয়ে যীশু বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। যিহোবা নিজে তা দেখছিলেন এবং তাঁর অনুমোদন প্রকাশ করেছিলেন। (মথি ৩:১৬, ১৭) এভাবে যীশু একটা নমুনা স্থাপন করেছিলেন, যা তাঁর সমস্ত শিষ্যদের অনুসরণ করতে হবে। সাড়ে তিন বছর পর, যীশু তাঁর শিষ্যদের এই নির্দেশ দিয়েছিলেন: “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্ত্তৃত্ব আমাকে দত্ত হইয়াছে। অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর।” (মথি ২৮:১৮, ১৯) যীশু যে-আজ্ঞা দিয়েছিলেন সেটার সঙ্গে মিল রেখে কি আপনি বাপ্তিস্ম নিয়েছেন? যদি না নিয়ে থাকেন, তা হলে কি নেওয়ার জন্য আপনি তৈরি হচ্ছেন?
২. বাপ্তিস্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া দরকার?
২ উভয় ক্ষেত্রেই, যারা যিহোবাকে সেবা করতে এবং তাঁর ধার্মিক নতুন জগতে বেঁচে থাকতে চায় তাদের প্রত্যেকের বাপ্তিস্ম কী, তা স্পষ্টভাবে বোঝা দরকার। যে-প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া উপযুক্ত সেগুলো হল: আজকে খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্মের কি যীশুর বাপ্তিস্মের মতো একই মানে রয়েছে? “পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী? জলে খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্মের যে-তাৎপর্য, সেটার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার সঙ্গে কী জড়িত?
যোহনের দেওয়া বাপ্তিস্ম
৩. যোহনের বাপ্তিস্ম শুধু কাদের জন্য ছিল?
৩ যীশু বাপ্তিস্ম নেওয়ার প্রায় ছয় মাস আগে, যোহন বাপ্তাইজক যিহূদিয়ার প্রান্তরে এই বলে প্রচার করছিলেন: “মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল।” (মথি ৩:১, ২) লোকেরা যোহনের কথা শুনেছিল ও সেই পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছিল। তারা সকলের সামনে তাদের পাপ স্বীকার করেছিল, অনুতপ্ত হয়েছিল আর পরে জর্দন নদীতে বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য যোহনের কাছে এসেছিল। সেই বাপ্তিস্ম শুধু যিহুদিদের জন্য ছিল।—লূক ১:১৩-১৬; প্রেরিত ১৩:২৩, ২৪.
৪. প্রথম শতাব্দীর যিহুদিদের কেন জরুরি ভিত্তিতে অনুতপ্ত হওয়া দরকার ছিল?
৪ ওই যিহুদিদের জরুরি ভিত্তিতে অনুতপ্ত হওয়ার দরকার ছিল। সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে সীনয় পর্বতে, তাদের পূর্বপুরুষরা যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে জাতি হিসেবে এক চুক্তি—এক আনুষ্ঠানিক, গুরুগম্ভীর চুক্তি—করেছিল। কিন্তু ক্ষমার অযোগ্য পাপের কারণে, তারা সেই চুক্তির অধীনে তাদের দায়িত্বগুলো পালন করতে পারেনি আর তাই সেটা তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল। যীশুর দিনে তাদের অবস্থা চরম সংকটপূর্ণ ছিল। মালাখির বলা “সদাপ্রভুর সেই মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিন” কাছেই ছিল। সা.কা. ৭০ সালে সেই “দিন” এসেছিল যখন রোমীয় সেনাবাহিনী যিরূশালেম, এর মন্দির ও দশ লক্ষেরও বেশি যিহুদিদের ধ্বংস করে দিয়েছিল। সত্য উপাসনার প্রতি উদ্যোগী যোহন বাপ্তাইজককে ওই ধ্বংসের আগে “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নিমিত্ত সুসজ্জিত এক প্রজামণ্ডলী প্রস্তুত করিতে” পাঠানো হয়েছিল। মোশির নিয়মচুক্তির বিরুদ্ধে করা পাপের জন্য তাদের অনুতপ্ত হওয়ার এবং ঈশ্বরের পুত্র যীশু, যাঁকে যিহোবা তাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন, তাঁকে গ্রহণ করার জন্য তৈরি হওয়ার দরকার ছিল।—মালাখি ৪:৪-৬; লূক ১:১৭; প্রেরিত ১৯:৪.
৫. (ক) যীশু যখন বাপ্তিস্ম নিতে এসেছিলেন, তখন যোহন কেন প্রশ্ন তুলেছিলেন? (খ) যীশুর বাপ্তিস্ম কী চিত্রিত করেছিল?
৫ যারা যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম নিতে এসেছিল তাদের মধ্যে যীশুও ছিলেন। কিন্তু কেন? স্বীকার করার মতো কোনো পাপ যীশুর ছিল না জেনে যোহন বলেছিলেন: “আপনার দ্বারা আমারই বাপ্তাইজিত হওয়া আবশ্যক, আর আপনি আমার কাছে আসিতেছেন?” কিন্তু যীশুর বাপ্তিস্ম অন্য কিছুকে চিত্রিত করেছিল। তাই যীশু উত্তর দিয়েছিলেন: “এখন সম্মত হও, কেননা এইরূপে সমস্ত ধার্ম্মিকতা সাধন করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত।” (মথি ৩:১৩-১৫) যেহেতু যীশুর কোনো পাপ ছিল না, তাই তাঁর বাপ্তিস্ম পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়াকে চিত্রিত করেনি; বা তাঁর নিজেকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করার দরকার ছিল না কারণ তিনি এমন এক জাতির লোক ছিলেন, যে-জাতি ইতিমধ্যেই যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত ছিল। বরং, ৩০ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নেওয়া তাঁর ক্ষেত্রে কিছুটা স্বতন্ত্র ছিল আর তা চিত্রিত করেছিল যে, তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতার ইচ্ছা পালন করার জন্য তাঁর কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন।
৬. যীশু ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করাকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন?
৬ খ্রীষ্ট যীশুর জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছার মধ্যে রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজ ছিল। (লূক ৮:১) এ ছাড়া, এর সঙ্গে মুক্তির মূল্য এবং একটা নতুন চুক্তির ভিত্তি হিসেবে তাঁর সিদ্ধ মানব জীবন বলি দেওয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। (মথি ২০:২৮; ২৬:২৬-২৮; ইব্রীয় ১০:৫-১০) যীশুর জলে বাপ্তিস্ম যা চিত্রিত করেছিল, সেটাকে তিনি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর মনোযোগকে অন্য বিষয়গুলোর দিকে চলে যেতে দেননি। তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেছিলেন, ঈশ্বরের রাজ্যের প্রচারকে তাঁর জীবনের প্রধান কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।—যোহন ৪:৩৪.
খ্রীষ্টান শিষ্যদের জলে বাপ্তিস্ম
৭. সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে খ্রীষ্টানদের বাপ্তিস্মের বিষয়ে কী করতে বলা হয়েছিল?
৭ যীশুর প্রথম শিষ্যরা যোহনের কাছে জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল এবং পরে স্বর্গীয় রাজ্যের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে তাদের যীশুর কাছে যেতে বলা হয়েছিল। (যোহন ৩:২৫-৩০) যীশুর নির্দেশ অনুযায়ী এই শিষ্যরাও বাপ্তিস্ম দিয়েছিল, যেটার যোহনের বাপ্তিস্মের মতো একই তাৎপর্য ছিল। (যোহন ৪:১, ২) কিন্তু সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে তারা “পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তিস্ম দেওয়ার দায়িত্বকে পরিপূর্ণ করতে শুরু করেছিল। (মথি ২৮:১৯) এর মানে কী, তা পুনরায় বিবেচনা করা আপনার কাছে উপকারী বলে মনে হবে।
৮. “পিতার . . . নামে” বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী?
৮ “পিতার . . . নামে” বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী? এর মানে হল তাঁর নাম, পদমর্যাদা, কর্তৃত্ব, উদ্দেশ্য ও আইনগুলোকে মেনে নেওয়া। এর সঙ্গে কী জড়িত তা ভেবে দেখুন। (১) তাঁর নাম সম্বন্ধে যাত্রাপুস্তক ৩:১৫ পদ বলে: “যিহোবা [সদাপ্রভু], তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর।” (২) তাঁর পদমর্যাদা সম্বন্ধে ২ রাজাবলি ১৯:১৫ পদ বলে: “হে সদাপ্রভু . . . তুমি, কেবলমাত্র তুমিই . . . [“সত্য,” NW] ঈশ্বর।” (৩) তাঁর কর্তৃত্ব সম্বন্ধে প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদ আমাদের বলে: “হে আমাদের প্রভু [“যিহোবা,” NW] ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।” (৪) এ ছাড়া, আমাদের এও স্বীকার করতে হবে যে যিহোবা হলেন জীবনদাতা, যাঁর উদ্দেশ্য হল পাপ ও মৃত্যু থেকে আমাদের রক্ষা করা: “পরিত্রাণ সদাপ্রভুরই [“যিহোবারই,” NW] কাছে।” (গীতসংহিতা ৩:৮; ৩৬:৯) (৫) আমাদের মেনে নেওয়া দরকার যে, যিহোবা হলেন সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপক: “সদাপ্রভু আমাদের বিচারকর্ত্তা, সদাপ্রভু আমাদের ব্যবস্থাপক, সদাপ্রভু আমাদের রাজা।” (যিশাইয় ৩৩:২২) তিনি যেহেতু ওই সমস্ত পদমর্যাদার অধিকারী, তাই আমাদের বলা হয়েছে: “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে [“যিহোবাকে,” NW] প্রেম করিবে।”—মথি ২২:৩৭.
৯. “পুত্ত্রের . . . নামে” বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী?
৯ “পুত্ত্রের . . . নামে” বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী? এর মানে যীশু খ্রীষ্টের নাম, পদমর্যাদা এবং কর্তৃত্বকে স্বীকার করা। তাঁর নাম যীশু মানে “যিহোবা হলেন পরিত্রাণ।” তিনি ঈশ্বরের একজাত পুত্র ও ঈশ্বরের প্রথম সৃষ্টি বলেই তাঁর পদমর্যাদা লাভ করেন। (মথি ১৬:১৬; কলসীয় ১:১৫, ১৬) এই পুত্র সম্বন্ধে যোহন ৩:১৬ পদ আমাদের বলে: “ঈশ্বর [উদ্ধারযোগ্য মানবজাতির] জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” যেহেতু যীশু বিশ্বস্তভাবে মারা গিয়েছিলেন, তাই ঈশ্বর তাঁকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করেছিলেন এবং তাঁকে নতুন কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, ঈশ্বর নিখিলবিশ্বে “[যীশুকে] উচ্চপদান্বিতও করিলেন” অর্থাৎ যিহোবার পরের স্থান তাঁকে দিয়েছিলেন। এইজন্য “যীশুর নামে . . . সমুদয় জানু পাতিত হয়, এবং সমুদয় জিহ্বা যেন স্বীকার করে যে, যীশু খ্রীষ্টই প্রভু এইরূপে পিতা ঈশ্বর যেন মহিমান্বিত হন।” (ফিলিপীয় ২:৯-১১) এর মানে হল যীশুর আজ্ঞাগুলো পালন করা, যা যিহোবার কাছ থেকেই আসে।—যোহন ১৫:১০.
১০. “পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী?
১০ “পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী? এর মানে হল পবিত্র আত্মার ভূমিকা ও কাজ স্বীকার করা। আর পবিত্র আত্মা কী? এটা হল যিহোবার সক্রিয় শক্তি, যা দিয়ে তিনি তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্পাদন করেন। যীশু তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “আমি পিতার নিকটে নিবেদন করিব, এবং তিনি আর এক সহায় তোমাদিগকে দিবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন; তিনি সত্যের আত্মা।” (যোহন ১৪:১৬, ১৭) এটা তাদের কী করতে সাহায্য করবে? যীশু তাদের আরও বলেছিলেন: “পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” (প্রেরিত ১:৮) পবিত্র আত্মার মাধ্যমে, যিহোবা বাইবেল লিখতেও অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন: “ভাববাণী কখনও মনুষ্যের ইচ্ছাক্রমে উপনীত হয় নাই, কিন্তু মনুষ্যেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়া ঈশ্বর হইতে যাহা পাইয়াছেন, তাহাই বলিয়াছেন।” (২ পিতর ১:২১) তাই, আমরা যখন বাইবেল অধ্যয়ন করি, তখন পবিত্র আত্মার ভূমিকা স্বীকার করি। আরেকটা উপায়ে আমরা পবিত্র আত্মাকে স্বীকার করি আর তা হল আমাদের মধ্যে “আত্মার ফল প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন” উৎপন্ন করার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.
১১. (ক) আমাদের দিনে বাপ্তিস্মের প্রকৃত তাৎপর্য কী? (খ) বাপ্তিস্ম কীভাবে মারা যাওয়া ও আবার জীবন পাওয়ার মতো?
১১ যীশুর নির্দেশনাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে প্রথমে যিহুদি ও যিহুদি ধর্মান্তরিতদের বাপ্তাইজিত হওয়ার দরকার ছিল, যা সা.কা. ৩৩ সালে শুরু হয়েছিল। এর কিছুদিন পরে, খ্রীষ্টান শিষ্য হওয়ার বিশেষ সুযোগ শমরীয়দেরও দেওয়া হয়েছিল। এরপর, সা.কা. ৩৬ সালে অছিন্নত্বক পরজাতীয়দেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে, শমরীয় ও পরজাতীয়দের যিহোবার পুত্রের শিষ্য হিসেবে তাঁকে সেবা করার জন্য তাঁর কাছে নিজেদের উৎসর্গ করতে হতো। এটা আমাদের দিন পর্যন্ত খ্রীষ্টীয় জলে বাপ্তিস্মের এক তাৎপর্য হয়ে এসেছে। সম্পূর্ণভাবে জলে ডুব দেওয়া এই ব্যক্তিগত উৎসর্গীকরণের উপযুক্ত প্রতীক কারণ বাপ্তিস্ম হল রূপক সমাধি। বাপ্তিস্মের সময় জলের নিচে যাওয়া মানে, আপনি আপনার আগেকার জীবনধারার কাছে মারা যাচ্ছেন। জলের নিচ থেকে উঠে আসা চিত্রিত করে যে, ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য আপনি জীবিত হয়েছেন। যারা সত্য খ্রীষ্টান হন, তাদের সকলের জন্য এই ‘এক বাপ্তিস্ম’ প্রযোজ্য। বাপ্তিস্মের সময়ে তারা যিহোবার খ্রীষ্টান সাক্ষি, ঈশ্বরের নিযুক্ত পরিচারক হন।—ইফিষীয় ৪:৫; ২ করিন্থীয় ৬:৩, ৪.
১২. খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্ম কীসের প্রতিরূপ এবং কীভাবে?
১২ ঈশ্বরের চোখে এইরকম বাপ্তিস্ম রক্ষা করার মতো মহামূল্যবান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নোহের জাহাজ নির্মাণের কথা বলার পর, যেটাতে তিনি ও তার পরিবার জলপ্লাবনের সময় রক্ষা পেয়েছিলেন, প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “আর এখন উহার প্রতিরূপ বাপ্তিস্ম—অর্থাৎ মাংসের মালিন্যত্যাগ নয়, কিন্তু ঈশ্বরের নিকটে সৎসংবেদের নিবেদন—তাহাই যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা তোমাদিগকে পরিত্রাণ করে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ পিতর ৩:২১) জাহাজই ছিল বাস্তব প্রমাণ যে, ঈশ্বরের দেওয়া কাজ নোহ বিশ্বস্তভাবে করেছিলেন। জাহাজ বানানোর কাজ শেষ হওয়ার পরে “তখনকার জগৎ জলে আপ্লাবিত হইয়া নষ্ট হইয়াছিল।” (২ পিতর ৩:৬) কিন্তু নোহ ও তার পরিবার, “আটটী প্রাণ, জল দ্বারা রক্ষা পাইয়াছিল।”—১ পিতর ৩:২০.
১৩. জলে বাপ্তিস্মের মাধ্যমে একজন খ্রীষ্টান কীসের থেকে রক্ষা পান?
১৩ আজকে, যারা পুনরুত্থিত খ্রীষ্টের ওপর বিশ্বাসের ভিত্তিতে যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করে, তারা ওই উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে বাপ্তিস্ম নেয়। তারা আমাদের দিনের জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে এগিয়ে চলে এবং বর্তমান দুষ্ট জগৎ থেকে রক্ষা পায়। (গালাতীয় ১:৩, ৪) তারা আর বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার সঙ্গে ধ্বংসের জন্য নির্ধারিত নয়। তারা এর থেকে রক্ষা পায় আর ঈশ্বরের কাছ থেকে এক সৎ বিবেক লাভ করে। প্রেরিত যোহন ঈশ্বরের দাসদের আশ্বাস দেন: “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৭.
আমাদের দায়িত্ব অনুসারে চলা
১৪. কেন শুধু বাপ্তিস্ম নিলেই পরিত্রাণের নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না?
১৪ এটা ভাবা ভুল হবে যে, শুধু বাপ্তিস্ম নিলেই পরিত্রাণের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। এর মূল্য তখনই থাকে, যখন একজন ব্যক্তি যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে যিহোবার কাছে সত্যিই নিজেকে উৎসর্গ করেন আর তারপর ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেন ও শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকেন। “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।”—মথি ২৪:১৩.
১৫. (ক) বাপ্তাইজিত খ্রীষ্টানদের জন্য আজকে ঈশ্বরের ইচ্ছা কী? (খ) আমাদের জীবনে খ্রীষ্টান শিষ্য হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত?
১৫ যীশুর জন্য ঈশ্বরের যে-ইচ্ছা ছিল, তাতে তিনি যেভাবে তাঁর জীবনকে ব্যবহার করেছিলেন, সেটাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাঁর জীবনকে বলি হিসেবে দেওয়ার জন্য মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। আমাদের বেলায়, আমাদের দেহকে ঈশ্বরের কাছে অর্পণ করতে হবে আর ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে আত্মত্যাগমূলক জীবনযাপন করতে হবে। (রোমীয় ১২:১, ২) এমনকি মাঝে মাঝে আমরা যদি ইচ্ছা করে জগতের মতো চলি অথবা স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষাগুলোকে ঘিরে আমাদের জীবন গড়ে তুলি, তা হলে আমরা আসলে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করি না বরং নামেমাত্র ঈশ্বরের সেবা করি। (১ পিতর ৪:১-৩; ১ যোহন ২:১৫, ১৬) একজন যিহুদি যখন জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য তাকে কী করতে হবে, তখন যীশু নৈতিকভাবে শুদ্ধ জীবনযাপন করার গুরুত্ব স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু এরপর তিনি আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন: একজন খ্রীষ্টান শিষ্য অর্থাৎ যীশুর একজন অনুসারী হওয়া দরকার। সেটাই জীবনের মূল বিষয় হতে হবে। এটা বস্তুগত বিষয়গুলোর পরে দ্বিতীয় স্থানে থাকতে পারে না।—মথি ১৯:১৬-২১.
১৬. (ক) সমস্ত খ্রীষ্টানদের রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন দায়িত্ব রয়েছে? (খ) ১১৬ ও ১১৭ পৃষ্ঠায় যেমন বলা হয়েছে, কিছু কার্যকর উপায় কী যেগুলোর মাধ্যমে রাজ্যের কাজ করা যায়? (গ) মনপ্রাণ দিয়ে আমাদের সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে অংশ নেওয়া কীসের প্রমাণ দেয়?
১৬ এই বিষয়টার ওপর আবারও জোর দেওয়া উচিত যে, যীশুর জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছার মধ্যে ঈশ্বরের রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। যীশু রাজা হওয়ার জন্য অভিষিক্ত ছিলেন। কিন্তু পৃথিবীতে থাকাকালে, তিনি নিজে রাজ্য সম্বন্ধে উদ্যোগের সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। আমাদেরও একই সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ রয়েছে আর এই কাজ মনপ্রাণ দিয়ে করার উপযুক্ত কারণ আমাদের রয়েছে। তা করে, আমরা যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা ও সেইসঙ্গে সহ মানবদের প্রতি আমাদের প্রেম দেখাই। (মথি ২২:৩৬-৪০) আমরা এও দেখাই যে, সারা পৃথিবীতে আমাদের সহ উপাসকদের সঙ্গে আমরা একতাবদ্ধ আর তারা সকলে রাজ্যের ঘোষণাকারী। পৃথিবীব্যাপী একতাবদ্ধভাবে আমরা সেই রাজ্যের পার্থিব অংশে অনন্ত জীবনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলি।
পুনরালোচনা
• যীশুর বাপ্তিস্ম ও আজকের জলে বাপ্তিস্মের মধ্যে কোন কোন মিল ও পার্থক্য রয়েছে?
• “পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তাইজিত হওয়ার মানে কী?
• জলে খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্মের দায়িত্বগুলো পালন করার সঙ্গে কী জড়িত?
[১১৬, ১১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করার কিছু উপায়
স্কুলের সাথিদের কাছে
আত্মীয়দের কাছে
সহকর্মীদের কাছে
রাস্তায়
দরজায় দরজায়
আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছে ফিরে গিয়ে
গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করিয়ে