মদ্যজাতীয় পানীয়—সম্পর্কে কি আপনার ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি আছে?
প্রায় ২০ বছর আগে, ইরাণের আরমিয়া শহরের কাছে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা খনন করে একটি পুরনো মাটির ইঁটে তৈরি অট্টালিকা উন্মোচিত করেছিলেন। তারা সেখানে একটি চিনা-মাটির পাত্র দেখতে পেয়েছিলেন, বৈজ্ঞানিকদের মতানুসারে যেটি হাজার হাজার বছর পুরনো, সেই সময়ের যখন অতি প্রাচীন মানব বসতি স্থাপিত হয়েছিল। সম্প্রতিকালে, সেই পাত্রটি বিশ্লেষণ করার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। বৈজ্ঞানিকেরা এর ভিতরে সুরা তৈরির প্রাচীন রাসায়নিক প্রমাণ দেখতে পেয়ে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন।
বাইবেলও স্পষ্টভাবে এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করে যে প্রাচীন কাল থেকে সুরা, বিয়ার এবং মদ্যজাতীয় পানীয় ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। (আদিপুস্তক ২৭:২৫; উপদেশক ৯:৭; নহূম ১:১০) অন্যান্য খাদ্যের সাথে যিহোবা আমাদের প্রত্যেকের জন্য ব্যক্তিগতভাবে এক নির্বাচনের বিষয় রেখেছেন—মদ্যজাতীয় পানীয় পান করা অথবা না করা। যীশু প্রায়ই তাঁর খাদ্যের সাথে মদ্য পান করতেন। যোহন বাপ্তাইজক মদ্য পরিহার করে চলেছিলেন।—মথি ১১:১৮, ১৯.
বাইবেল অত্যধিক অসংযমপূর্ণভাবে পান করাকে নিষিদ্ধ করে। মাতলামি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে একটি পাপ। (১ করিন্থীয় ৬:৯-১১) এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে, যিহোবার সাক্ষীরা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে কোন অনুতাপহীন মদ্যপকে থাকতে অনুমোদন করে না। মণ্ডলীতে যারা মদ্যজাতীয় পানীয় পান করাকে নির্বাচন করে অবশ্যই তাদের পরিমিতি রেখে তা করা দরকার।—তীত ২:২, ৩.
এক ঈশ্বরবিহীন দৃষ্টিভঙ্গি
মদ্যজাতীয় পানীয় সম্পর্কে আজকে অনেক লোকেদেরই ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি নেই। এটি দেখা সহজ যে শয়তান এই প্রাচীন বস্তুটির অপব্যবহার বৃদ্ধি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু দ্বীপে পুরুষদের জন্য গৃহে নির্মিত এক বৃহৎ পরিমাণ গেঁজে ওঠা পানীয় পান করার জন্য একত্রিত হওয়া একটি প্রথাস্বরূপ। এর সময়কাল হয়ত বেশ কিছু ঘন্টাব্যাপী স্থায়ী হয় আর তা প্রায়ই ঘটে থাকে—অনেক পুরুষেরা এই অভ্যাস প্রতিদিনই চরিতার্থ করে থাকে। কিছুজন এটিকে সংস্কৃতির একটি অংশ হিসাবে বিবেচনা করে থাকে। কখনও কখনও বিয়ার এবং স্পিরিট স্থানীয় গৃহে নির্মিত পানীয়ের—পরিবর্তে—অথবা তার সাথে অতিরিক্তভাবে ব্যবহৃত হত। প্রায়ই এর পরিণতি হত মাতলামি।
অন্য একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশে, লোকেদের দ্বারা মদের পরিমিত ব্যবহার প্রায় অশ্রুত ছিল। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, যখন তারা পান করত তখন মাতাল হওয়ার জন্যই পান করত। বৈশিষ্ট্যমূলকভাবে, বেতনের দিনে একদল লোক একত্রে জড়ো হবে আর বেশ কিছু বিয়ারের বাক্স কিনবে যার একটিতে ২৪টি বোতল থাকে। তারা পান করা কেবলমাত্র তখনই বন্ধ করে যখন তাদের বিয়ার শেষ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, জনসাধারণে মাতলামি খুবই সাধারণ বিষয়।
গেঁজে ওঠা পানীয় যেমন তালের রসের মদ ও অন্যান্য স্থানীয় পানীয় আফ্রিকার দেশগুলিতে পরম্পরাগতভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিছু সম্প্রদায়ের পরম্পরা নির্দেশ দেয় যে অতিথিদের আপ্যায়িত করার সময় অবশ্যই মদ পরিবেশন করা হবে। অতিথি-সেবক গৃহকর্তা প্রথাসিদ্ধভাবে তার অতিথিরা যতখানি ব্যবহার করতে পারবে তার চেয়ে বেশি সরবরাহ করে থাকে। একটি এলাকার প্রথা হচ্ছে প্রত্যেক অতিথির সামনে ১২ বোতল বিয়ার দেওয়া।
অনেক জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের কর্মচারীদের জন্য বাস যাত্রার ব্যবস্থা করে থাকে। বৃহৎ পরিমাণ মদ্যজাতীয় পানীয় সাথে করে নিয়ে যাওয়া হত আর মাতলামিকে প্রশ্রয় দেওয়া হত। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের এই যাত্রা দুই অথবা তিন দিন স্থায়ী হত। এশিয়াউইক পত্রিকা অনুযায়ী জাপানে, “ধান উৎপাদনকারী কৃষক থেকে ধনী রাজনীতিবিদ্ পর্যন্ত, পরম্পরাগতভাবে একজনের পৌরুষ কতখানি সে পান করতে পারে, পানীয়ের সেই মাত্রা দ্বারা পরিমাপ করা হত।” একই প্রবণতা এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলিতেও লক্ষ্য করা গেছে। এশিয়াউইক উল্লেখ করে যে “দক্ষিণ কোরিয়াবাসীরা এখন প্রত্যেক ব্যক্তি মাথাপিছু জগতের অন্য যে কোন স্থানের লোকেদের চেয়ে বেশি মদ্যজাতীয় পানীয় পান করে থাকে।”
প্রাণ ভরে পান করা এখন যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ সংলগ্ন ক্ষেত্রগুলিতে এক বহুবিস্তৃত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমেরিকার চিকিৎসা সংস্থার পত্রিকা (ইংরাজি), অনুসারে, “অধিকাংশ প্রাণ ভরে পানকারীরা নিজেদেরকে সমস্যাজনক মদ্যপায়ী হিসাবে বিবেচনা করে না।”a এই বিষয়টি আশ্চর্যের হওয়া উচিত নয় কারণ অনেক দেশে প্রচার-মাধ্যম পান করাকে এক রোমাঞ্চক, প্রচলিত রীতির অনুরূপ এবং বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন কাজ হিসাবে উন্নত করে। প্রায়ই এই প্রচার বিশেষভাবে যুবকদের লক্ষ্যবস্তু করে।
ব্রিটেনে, বিয়ার পান করা ২০ বছর বয়স্কদের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে আর কঠিন পানীয়ের ব্যবহার তিন গুণ হয়ে গিয়েছে। মদ্যপায়ীরা ছোট বয়স থেকে শুরু করছে আর আরও অধিক সংখ্যায় মহিলারা মদ্যপান করছে। অনুরূপ প্রবণতা পূর্ব ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলিতে লক্ষ্য করা যায়। এটি মদ্যপান এবং মদ-সম্পর্কীত যানবাহনের দুর্ঘটনার সমানভাবে বৃদ্ধির হার দ্বারা তুলে ধরা হয়েছে। স্পষ্টতই, জগদ্ব্যাপী মদের অপব্যবহার অভ্রান্তভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কতখানি অতিরিক্ত
মদ্যজাতীয় পানীয় সম্পর্কে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি ভারসাম্যপূর্ণ। একদিকে, শাস্ত্র বলে যে সুরা যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে উপহারস্বরূপ যা “মর্ত্ত্যের চিত্তানন্দ-জনক।” (গীতসংহিতা ১০৪:১, ১৫) অপরদিকে অত্যধিক অসংযমকে নিন্দা করে বাইবেল এই অভিব্যক্তিগুলি ব্যবহার করে ‘মত্ততা,’ “মদ্যপান, রঙ্গরস পানার্থক সভা,” “বহু মদ্যপানে আসক্ত” এবং ‘বহুমদ্যের দাস।’ (লূক ২১:৩৪; ১ পিতর ৪:৩; ১ তীমথিয় ৩:৮; তীত ২:৩) কিন্তু কতখানিকে ‘বহুমদ্য’ বলা যায়? কিভাবে একজন খ্রীষ্টান নির্ধারণ করতে পারেন যে মদ্যপান সম্পর্কে ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি কী অন্তর্ভুক্ত করে?
মাতলামিকে শনাক্ত করা কঠিন নয়। এর পরিণতি বাইবেলে এই বাক্যগুলির দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে: “কে হায় হায় বলে? কে হাহাকার করে? কে বিবাদ করে? কে বিলাপ করে? কে অকারণ আঘাত পায়? কাহার চক্ষু লাল হয়? যাহারা দ্রাক্ষারসের নিকটে বহুকাল থাকে, যাহারা সুরার সন্ধানে যায়। . . . তোমার চক্ষু পরকীয়া স্ত্রীদিগকে দেখিবে, তোমার চিত্ত কুটিল কথা কহিবে।”—হিতোপদেশ ২৩:২৯-৩৩.
অতিরিক্ত মদ দ্বিধা, ভ্রম, অচেতনতা এবং মন ও শরীরের অন্যান্য বিকৃতিরও কারণস্বরূপ হতে পারে। মদের প্রভাবে এক ব্যক্তি তার ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে, নিজের অথবা অন্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। মদ্যপেরা উপহাসকর, ক্ষতিকর অথবা অনৈতিক আচরণের সাথে জড়িত থাকার জন্য পরিচিত।
এর উপরে উল্লেখিত পরিণতিসহ, মাতাল হওয়ার পর্যায় পর্যন্ত পান করা নিশ্চিতভাবেই অতিরিক্ত মদ্যপান। কিন্তু, এক ব্যক্তি পরিমিতির অভাব দেখাতে পারে মাতলামির সমস্তরকম আদর্শ চিহ্নগুলিকে প্রদর্শন না করেই। সুতরাং, কেউ অতিরিক্ত মদ্যপান করেছে কি না এই প্রশ্নটি প্রায়ই এক বিতর্ক উত্থাপন করে। পরিমিত ও অত্যধিক অসংযমের মধ্যবর্তী রেখাটি কোথায়?
আপনার চিন্তন ক্ষমতাকে সুরক্ষিত করুন
বাইবেল রক্ত-মদ কেন্দ্রীভবনকে কিছু শতকরা হিসাব প্রদান করে অথবা অন্য কিছু পরিমাণ নির্দিষ্ট করার দ্বারা সীমা স্থাপন করে না। মদের সহ্যশক্তি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন। তবুও, বাইবেলের নীতি সমস্ত খ্রীষ্টানদের জন্য প্রয়োগযোগ্য এবং তা মদ্যজাতীয় পানীয় সম্পর্কে আমাদের এক ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।
যীশু বলেছিলেন, প্রথম আজ্ঞাটি হল “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম” করা (মথি ২২:৩৭, ৩৮) মনের উপর মদের এক সরাসরি প্রতিক্রিয়া আছে আর অত্যধিক অসংযম সমস্ত আজ্ঞার মধ্যে এই সর্বশ্রেষ্ঠ আজ্ঞাটির প্রতি বাধ্য হওয়ার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করবে। এটি উত্তম বিচার, সমস্যা সমাধান করার সক্ষমতা, আত্ম-সংযম অভ্যাস করা এবং মনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির প্রতি গুরুতরভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে। শাস্ত্র আমাদের পরামর্শ দেয়: “তুমি সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও পরিণামদর্শিতা রক্ষা কর। তাহাতে সে সকল তোমার প্রাণের জীবনস্বরূপ হইবে, তোমার কণ্ঠের শোভাস্বরূপ হইবে।”—হিতোপদেশ ৩:২১, ২২.
প্রেরিত পৌল খ্রীষ্টানদের বিনতি করেছিলেন: “তোমরা নিজ নিজ দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য, তোমাদের যুক্তি করার ক্ষমতা সহ এক শুচি আরাধনাস্বরূপ বলিরূপে উৎসর্গ কর।” (রোমীয় ১২:১, NW) একজন খ্রীষ্টান কি “ঈশ্বরের প্রীতিজনক” হতে পারেন যদি তিনি “যুক্তি করার ক্ষমতা” হারিয়ে ফেলার পর্যায় পর্যন্ত মদ্যপান করেন? সাধারণতঃ, এক অপরিমিত মদ্যপায়ী ক্রমশ মদের প্রতি তার সহ্যশক্তি গড়ে তোলে। সে হয়ত মনে করতে পারে যে তার অতিরিক্ত মদ্যপান—তার ক্ষেত্রে—মাতলামি পর্যায়ের নিচে। তবুও, হয়ত সে মদের উপর এক অস্বাস্থ্যকর নির্ভরতা গড়ে তুলবে। এইধরনের এক ব্যক্তি কি তার দেহকে “জীবিত, পবিত্র . . . বলিরূপে উৎসর্গ” করতে পারে?
যে কোন পরিমাণ মদ যা এক খ্রীষ্টান হিসাবে আপনার ‘সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও পরিণামদর্শিতার’ ক্ষতি করে তা আপনার জন্য অতিরিক্ত মদ।
মদ সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে কোন্ বিষয়টি আকার প্রদান করে?
এক খ্রীষ্টানের এটি নির্ধারণ করা প্রয়োজন যে পান করার প্রতি তার মনোভাব বর্তমান প্রবণতা অথবা পরম্পরার দ্বারা প্রভাবিত কি না। যখন মদ্যজাতীয় পানীয়ের বিষয়টি আসে, নিশ্চিতভাবেই আপনি সাংস্কৃতিক প্রবণতা অথবা মাধ্যমগুলির প্রচারের উপর ভিত্তি করে আপনার নির্বাচন করতে চাইবেন না। আপনার নিজস্ব মনোভাবকে নির্ধারণ করার সময় নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন ‘সমাজের দ্বারা যা অনুমোদনপ্রাপ্ত তার দ্বারা কি এটি প্রভাবিত হয়েছে? অথবা আমার পান করা কি বাইবেলের নীতিগুলির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত?’
যদিও যিহোবার সাক্ষীরা সংস্কৃতিবিরোধী নয়, তারা উপলব্ধি করেন যে আজকে ব্যাপকভাবে গৃহীত অনেক অভ্যাসকে যিহোবা ঘৃণা করেন। কিছু সম্প্রদায় গর্ভপাত, রক্ত গ্রহণ, সমকামিতা অথবা বহুবিবাহকে অনুমোদন করে। কিন্তু, খ্রীষ্টানেরা এই বিষয়গুলির প্রতি ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে কাজ করে। হ্যাঁ, ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি এক খ্রীষ্টানকে অনুপ্রাণিত করবে এই অভ্যাসগুলিকে ঘৃণা করতে তা সেগুলি সাংস্কৃতিকভাবে স্বীকৃত হোক বা নাই হোক।—গীতসংহিতা ৯৭:১০.
বাইবেল “পরজাতীয়দের বাসনা” সম্বন্ধে বলে যা “মদ্যপান” ও “পানার্থক সভা”-কে অন্তর্ভুক্ত করে। “পানার্থক সভা” এই অভিব্যক্তিটি একসাথে একত্রিত হওয়া যা বৃহৎ পরিমাণ মদ ব্যবহারের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ব্যবস্থা করার ধারণাটিকে প্রকাশ করে। এটি মনে হয় যে বাইবেলের সময়ে কিছু লোকেরা যারা তাদের পানীয় গ্রহণের তথা-কথিত ক্ষমতার জন্য গর্বিত ছিল, পান করায় অন্যদের অতিক্রম করার চেষ্টা করত অথবা এটি দেখবার চেষ্টা করত যে কে বেশি পান করতে পারে। প্রেরিত পিতর এইধরনের আচরণকে ‘নষ্টামীর পঙ্ক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন, যাতে অনুতপ্ত খ্রীষ্টানেরা আর অংশ নেয় না।—১ পিতর ৪:৩, ৪.
একজন খ্রীষ্টানের জন্য এইধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা কি যুক্তিসংগত যে যতক্ষণ না সে মাতাল হচ্ছে এটি কোন বিষয় নয় যে কোথায়, কখন অথবা কতখানি মদ পান করছে? আমরা জিজ্ঞাসা করতে পারি, এটি কি ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি? বাইবেল বলে: “তোমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।” (১ করিন্থীয় ১০:৩১) জনসাধারণ্যে বৃহৎ পরিমাণ মদ পান করার জন্য একত্রিত হওয়া একদল লোকেদের সকলেই হয়ত মাতাল হয় না, কিন্তু তাদের আচরণ কি যিহোবার প্রতি গৌরব নিয়ে আসবে? বাইবেল পরামর্শ দেয়: “এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।”—রোমীয় ১২:২.
অন্যদের বিঘ্নজনক হওয়া এড়িয়ে চলুন
আগ্রহজনকভাবে, প্রায়ই সেই সংস্কৃতি যা অত্যধিক অসংযমকে সহ্য করে এই বিষয়টিকে অসমর্থন করে থাকে, যখন একজন অতিরিক্ত মদ্যপায়ী ঈশ্বরের লোক হওয়ার দাবি করে। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের একটি ছোট সম্প্রদায়ের একজন পরিদর্শক বলেছিলেন: “আমি আপনাদের শ্রদ্ধা করি। আপনারা সত্য প্রচার করেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা দেখি যে আপনাদের লোকেরা অতিরিক্ত মদ্য পান করে।” বিবৃতিমূলকভাবে, এই ব্যক্তিরা মাতাল হয়নি, তবুও সেই সম্প্রদায়ের সকলের জন্য এই তথ্য এতখানি স্পষ্ট ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীরা সহজেই এই উপসংহারে আসতে পেরেছিলেন যে যারা দীর্ঘ পানের আসরে থাকে এমন অন্যান্য আরও লোকেদের মত সাক্ষীরাও মাতাল হয়। একজন খ্রীষ্টীয় পরিচারক যে দীর্ঘ পানের আসরে থাকে, সে কি এক উত্তম সুনাম বজায় রাখতে এবং জনসাধারণ্যে সাহসপূর্বক তার পরিচর্যা করতে পারেন?—প্রেরিত ২৮:৩১.
একটি ইউরোপীয় দেশ থেকে এক বিবৃতি ইঙ্গিত করে যে কখনও কখনও কিছু ভাই ও বোনেরা তাদের নিশ্বাসে মদের গন্ধ নিয়ে কিংডম হলে আসে। এটি অন্যদের সংবেদকে উদ্বিগ্ন করেছে। বাইবেল পরামর্শ দেয়: “মাংস ভক্ষণ বা দ্রাক্ষারস পান, অথবা যে কিছুতে তোমার ভ্রাতা ব্যাঘাত কি বিঘ্ন পায়, কি দুর্ব্বল হয়, এমন কিছুই না করা ভাল।” (রোমীয় ১৪:২১) মদ্যজাতীয় পানীয় সম্পর্কে ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি এক পরিপক্ব খ্রীষ্টানকে অন্যদের সংবেদের প্রতি সংবেদনশীল হতে অনুপ্রাণিত করবে, এমনকি যদি এটির অর্থ কিছু পরিস্থিতিতে মদ পরিহার করাও বোঝায়।
খ্রীষ্টানেরা অভ্রান্তভাবে ভিন্ন
দুঃখজনকভাবে, যে সমস্ত উত্তম বস্তু মানবজাতিকে তিনি দিয়েছেন যার অন্তর্ভুক্ত মদ্যজাতীয় পানীয়, তার অপব্যবহার করে এই জগৎ যিহোবাকে অনেকভাবে অসন্তুষ্ট করেছে। প্রত্যেক উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টানের প্রচলিত ঈশ্বরবিহীন দৃষ্টিভঙ্গিগুলিকে এড়ানোর জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। এইভাবে লোকেরা “ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ” দেখতে সক্ষম হবে।—মালাখি ৩:১৮.
যখন মদ্যজাতীয় পানীয়ের প্রসঙ্গটি আসে, তখন যিহোবার সাক্ষীদের ও জগতের মধ্যে “প্রভেদ” অভ্রান্ত হওয়া প্রয়োজন। অকৃত্রিম খ্রীষ্টানদের জন্য মদ্যজাতীয় পানীয় পান করাই জীবনের কেন্দ্র নয়। বিপদজনকভাবে মাতলামির কাছে এসে তারা তাদের মদ্যপানের সহ্যশক্তির সীমা নিয়ে পরীক্ষা করবে না; অথবা তারা তাদের সম্পূর্ণ হৃদয় ও এক পরিচ্ছন্ন মন নিয়ে ঈশ্বরের সেবাকে, মদ্যজাতীয় পানীয়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে অথবা কোনভাবে হস্তক্ষেপ করতে অনুমতি দেবে না।
একটি দল হিসাবে, যিহোবার সাক্ষীদের মদ্যজাতীয় পানীয় সম্পর্কে ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আপনার সম্বন্ধে কী? আমরা প্রত্যেকে যিহোবার আশীর্বাদ সকল আশা করতে পারি, যদি আমরা বাইবেলের এই নির্দেশ অনুসরণ করি “আমরা ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন করি।”—তীত ২:১২.
[পাদটীকাগুলো]
a “প্রাণ ভরে পানকারীদের, পুরুষদের জন্য একের পর এক পাঁচ অথবা তারও বেশি পানীয় এবং মহিলাদের জন্য একের পর এক চার অথবা তার চেয়েও বেশি পান করার অর্থে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল।”—আমেরিকার চিকিৎসা সংস্থার পত্রিকা।
[২৮ পৃষ্ঠার বাক্স//চিত্র]
আপনার প্রিয়জনদের কথা শুনুন
এক অপরিমিত মদ্যপায়ী প্রায়ই এটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয় যে তার এক সমস্যা আছে। আত্মীয়, বন্ধু এবং খ্রীষ্টীয় প্রাচীনেরা সেই প্রিয়জন যাদের পরিমিতির অভাব রয়েছে, সাহায্য প্রদান করতে ইতস্তত করবেন না। অপরদিকে, যদি কোন প্রিয়জন আপনার মদ্যপানের অভ্যাসে অস্বাচ্ছন্দ্য প্রকাশ করে, তাহলে তাদের সম্ভবত এর জন্য উত্তম কারণ আছে। তারা যা বলে সেটি বিবেচনা করুন।—হিতোপদেশ ১৯:২০; ২৭:৬.