কোনো সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, তখন সুস্থির থাকা
এক খ্রিস্টান মহিলা, যাকে আমরা জয় বলে ডাকছি, তিনি তার ছেলেকে এমনভাবে বড় করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন, যাতে সে যিহোবা ঈশ্বরকে ভালবাসে। কিন্তু, সেই ছেলে যখন কৈশোরের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছায়, তখন সে বিদ্রোহ করে এবং বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। “সেটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টদায়ক ঘটনা,” জয় বলেন। “আমার নিজেকে প্রতারিত, হতাশ ও ব্যর্থ বলে মনে হয়েছিল। আমি নেতিবাচক চিন্তাভাবনার দ্বারা জর্জরিত হয়ে পড়েছিলাম।”
সম্ভবত আপনিও আপনার সন্তানদের ঈশ্বরকে ভালবাসার ও তাঁকে সেবা করার জন্য বড় করে তোলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু পরে দেখেছেন যে, তাদের মধ্যে এক বা একাধিক জন ঈশ্বরের কাছ থেকে সরে গিয়েছে। এই ধরনের চরম হতাশার সঙ্গে আপনি কীভাবে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারেন? কী আপনাকে যিহোবার সেবায় সুস্থির থাকতে সাহায্য করবে?
যিহোবার পুত্ররা যখন বিদ্রোহ করেছিল
প্রথম পদক্ষেপটা হচ্ছে এই বিষয়টা উপলব্ধি করা যে, আপনি ঠিক কেমন অনুভব করেন, তা যিহোবা জানেন। যিশাইয় ৪৯:১৫ পদে আমরা পড়ি: “স্ত্রীলোক কি আপন স্তন্যপায়ী শিশুকে ভুলিয়া যাইতে পারে? আপন গর্ব্ভজাত বালকের প্রতি কি স্নেহ করিবে না? বরং তাহারা ভুলিয়া যাইতে পারে, তথাপি আমি তোমাকে ভুলিয়া যাইব না।” হ্যাঁ, যিহোবারও বাবামাদের মতো একইরকম অনুভূতি রয়েছে। তাই, কল্পনা করুন যে তাঁর সমস্ত দূত পুত্ররা যখন তাঁর প্রশংসা করছিল ও তাঁকে সেবা করছিল, তখন তিনি কেমন আনন্দ অনুভব করেছিলেন। কুলপতি ইয়োবকে “ঘূর্ণবায়ুর মধ্য হইতে” উত্তর দেওয়ার সময় যিহোবা তাঁর ঐক্যবদ্ধ আত্মিক পরিবারের সঙ্গে আনন্দময় সময়ের কথা স্মরণ করে বলেছিলেন: “যখন আমি পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি, তখন তুমি কোথায় ছিলে? . . . তৎকালে প্রভাতীয় নক্ষত্রগণ একসঙ্গে আনন্দরব করিল, ঈশ্বরের পুত্ত্রগণ সকলে জয়ধ্বনি করিল।”—ইয়োব ৩৮:১, ৪, ৭.
পরবর্তী সময়ে সত্য ঈশ্বর দেখেছিলেন যে, একজন সিদ্ধ দূত পুত্র তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং শয়তানে পরিণত হয়, যার অর্থ হচ্ছে “বিপক্ষ।” এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর প্রথম মানব পুত্র আদম ও তার সিদ্ধ স্ত্রী হবাকেও সেই বিদ্রোহে যোগ দিতে দেখেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩:১-৬; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) পরে অন্য দূত পুত্ররা “নিজ বাসস্থান ত্যাগ করিয়াছিল” এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।—যিহূদা ৬.
শাস্ত্র আমাদের বলে না যে, তাঁর কিছু সিদ্ধ পুত্র যখন বিদ্রোহের পথ অনুসরণ করেছিল, তখন যিহোবা কেমন বোধ করেছিলেন। কিন্তু, বাইবেল সুস্পষ্টভাবে বলে: “সদাপ্রভু দেখিলেন, পৃথিবীতে মনুষ্যের দুষ্টতা বড়, এবং তাহার অন্তঃকরণের চিন্তার সমস্ত কল্পনা নিরন্তর কেবল মন্দ। তাই সদাপ্রভু পৃথিবীতে মনুষ্যের নির্ম্মাণ প্রযুক্ত অনুশোচনা করিলেন, ও মনঃপীড়া পাইলেন।” (আদিপুস্তক ৬:৫, ৬) যিহোবার মনোনীত জাতি ইস্রায়েলের বিদ্রোহও তাঁকে “মনঃপীড়া” বা কষ্ট দিয়েছিল ও তাঁকে “অসন্তুষ্ট” বা দুঃখিত করেছিল।—গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১.
এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না যে, সেই বাবামাদের প্রতি যিহোবার সহমর্মিতা রয়েছে, যারা তাদের বিদ্রোহী সন্তানদের আচরণের কারণে দুঃখ ও কষ্ট বোধ করে। তিনি এই ধরনের বাবামাকে তাদের পরিস্থিতির সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করার জন্য তাঁর বাক্য বাইবেলে নির্ভরযোগ্য উপদেশ ও উৎসাহ জুগিয়েছেন। ঈশ্বর তাদেরকে তাদের ভাবনা বা উদ্বেগ তাঁর ওপর ফেলে দিতে বা অর্পণ করতে, নম্র হতে এবং শয়তান দিয়াবলকে প্রতিরোধ করতে পরামর্শ দেন। আসুন আমরা দেখি যে, আপনার সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, তখন কীভাবে এই পরামর্শ অনুসরণ করা আপনাকে সুস্থির থাকতে সাহায্য করে।
আপনার উদ্বেগ যিহোবার ওপর অর্পণ করুন
সন্তানরা নিজেদের ক্ষতি করার বা অন্যদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, এই বিষয়টার চেয়ে অন্য আর খুব কম বিষয়ই বাবামাদের ততটা ভারগ্রস্ত বা উদ্বিগ্ন করে থাকে আর এই বিষয়টা যিহোবা জানেন। প্রেরিত পিতর এটা ও অন্যান্য চিন্তার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার একটা উপায় শনাক্ত করেন। তিনি লেখেন: “তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার [ঈশ্বরের] উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” (১ পিতর ৫:৭) এই আমন্ত্রণ ও আশ্বাস কেন বিশেষভাবে এক বিদ্রোহী সন্তানের বাবামার প্রতি প্রযোজ্য?
আপনার সন্তান যখন ছোট ছিল, তখন আপনি তাকে বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন আর সে সম্ভবত আপনার প্রেমপূর্ণ নির্দেশনার প্রতি সাড়া দিত। কিন্তু, সে যখন বড় হয়, তখন তার ওপর আপনার প্রভাব হয়তো কমে গিয়েছে অথচ তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করার বিষয়ে আপনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পায়নি। বস্তুতপক্ষে, এই আকাঙ্ক্ষা হয়তো আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফলে, আপনার সন্তান যখন বিদ্রোহ করে ও আধ্যাত্মিক, আবেগগত বা শারীরিক ক্ষতি ভোগ করে, তখন এর জন্য আপনি হয়তো নিজেকে দোষী মনে করতে পারেন। আগে উল্লেখিত জয়, ঠিক এইরকমই বোধ করেছিলেন। তিনি বলেন: “প্রতিদিন ব্যর্থতার অনুভূতির দ্বারা বিধ্বস্ত হয়ে আমি শুধুমাত্র অতীতের বিষয়গুলো নিয়েই চিন্তা করতাম।” বিশেষ করে এইরকম সময়েই যিহোবা চান যেন আপনি ‘সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেন।’ যদি আপনি তা করেন, তা হলে তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর,” গীতরচক বলেছিলেন, “তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন, কখনও ধার্ম্মিককে বিচলিত হইতে দিবেন না।” (গীতসংহিতা ৫৫:২২) জয় এই ধরনের স্বস্তিই লাভ করেছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমার মনের সমস্ত কথা আমি অত্যন্ত অন্তরঙ্গভাবে যিহোবাকে বলেছিলাম। আমি হৃদয় উজাড় করে আমার অনুভূতি জানিয়েছিলাম আর প্রচুর স্বস্তি লাভ করেছিলাম।”
একজন অসিদ্ধ বাবা অথবা মা হিসেবে, আপনি হয়তো সন্তান প্রতিপালন করতে গিয়ে ভুলভ্রান্তি করেছেন। কিন্তু, তাই বলে কেন আপনি শুধু এই বিষয়গুলো নিয়েই অতিরিক্ত চিন্তা করবেন? এটা স্পষ্ট যে, যিহোবা তা করেন না কারণ গীতরচক অনুপ্রাণিত হয়ে গেয়েছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে?” (গীতসংহিতা ১৩০:৩) এমনকি আপনি যদি ত্রুটিহীন একজন বাবা অথবা মা হয়ে থাকেন, তারপরও আপনার সন্তান বিদ্রোহ করতে পারে। তাই, প্রার্থনায় যিহোবার কাছে আপনার অনুভূতি জানান আর তিনি আপনাকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবেন। কিন্তু, যদি আপনি নিজে যিহোবার সেবায় সুস্থির থাকতে চান এবং শয়তানের শিকারে পরিণত হওয়া এড়াতে চান, তা হলে আপনাকে আরও বেশি কিছু করতে হবে।
নম্র হোন
পিতর লিখেছিলেন, “তোমরা ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে নত” বা নম্র “হও, যেন তিনি উপযুক্ত সময়ে তোমাদিগকে উন্নত করেন।” (১ পিতর ৫:৬) আপনার সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, তখন কেন নম্রতা প্রয়োজন? আপনাকে দোষী বোধ করানো ও কষ্ট দেওয়া ছাড়াও একজন বিদ্রোহী সন্তান থাকা হয়তো আপনাকে কিছুটা অস্বস্তিতেও ফেলতে পারে। আপনি হয়তো এই বিষয়ে চিন্তিত হতে পারেন যে, আপনার সন্তানের কাজগুলো আপনার পরিবারের সুনামকে নষ্ট করে দিয়েছে, বিশেষ করে যদি তাকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হয়। আত্মগ্লানি ও অপমানবোধের অনুভূতি একসঙ্গে হয়তো আপনাকে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
এই ধরনের এক পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে গিয়ে আপনার বুদ্ধিকৌশল বা ব্যবহারিক প্রজ্ঞা দেখানো প্রয়োজন। হিতোপদেশ ১৮:১ পদ সাবধান করে: “যে পৃথক্ হয় সে নিজ অভীষ্ট চেষ্টা করে, এবং সমস্ত বুদ্ধিকৌশলের বিরুদ্ধে উচ্চণ্ড হয়।” আপনার দুঃখ সত্ত্বেও, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে নিয়মিত যোগ দিয়ে আপনি নির্দেশনা ও উৎসাহের এক অতি মূল্যবান উৎস লাভ করতে পারবেন। “প্রথম প্রথম আমি কারো মুখোমুখিই হতে চাইনি,” জয় স্বীকার করেন। “কিন্তু আমি নিজেকে আমার আধ্যাত্মিক রুটিনের গুরুত্বের বিষয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম। তা ছাড়া, আমি যদি ঘরে থাকতাম, তা হলে আমি সারাক্ষণ কেবল আমার সমস্যাগুলো নিয়েই ভাবতাম। কিন্তু সভাগুলো আমাকে গঠনমূলক আধ্যাত্মিক বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করেছিল। আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে, আমি নিজেকে পৃথক করিনি এবং আমার ভাইবোনদের প্রেমময় সমর্থন থেকে বঞ্চিত হইনি।”—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
এটাও মনে রাখবেন যে, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে খ্রিস্টীয় দায়িত্বের “নিজ নিজ ভার বহন” করতে হবে। (গালাতীয় ৬:৫) যিহোবা চান যেন বাবামারা তাদের সন্তানদের ভালবাসে ও শাসন করে। এ ছাড়া, তিনি চান যেন সন্তানরাও তাদের বাবামার বাধ্য হয় ও তাদেরকে সম্মান করে। যদি বাবামারা তাদের সন্তানদের “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে” বড় করে তুলতে তাদের যথাসাধ্য করে, তা হলে ঈশ্বরের সামনে বাবামাদের এক সুনাম থাকবে। (ইফিষীয় ৬:১-৪) একজন সন্তান যদি বাবামার প্রেমময় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তা হলে সন্তানের সুনামই নষ্ট হবে। “বালকও কার্য্য দ্বারা আপন পরিচয় দেয়, তাহার কর্ম্ম বিশুদ্ধ ও সরল কি না, জানায়,” হিতোপদেশ ২০:১১ পদ বলে। নিশ্চিতভাবেই শয়তানের বিদ্রোহ সেই ব্যক্তিদের মধ্যে যিহোবার সুনামকে নষ্ট করে দেয়নি, যারা মূল বিষয় সম্বন্ধে অবগত রয়েছে।
দিয়াবলের প্রতিরোধ করুন
“তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক,” পিতর সাবধান করেন। “তোমাদের বিপক্ষ দিয়াবল, গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।” (১ পিতর ৫:৮) একটা সিংহের মতো, দিয়াবল প্রায়ই অল্পবয়সি ও অনভিজ্ঞদের লক্ষ্যবস্তু করে থাকে। প্রাচীনকালে ইস্রায়েলে সিংহ ঘুরে বেড়াত আর গৃহপালিত পশুপাখিদের জন্য সেগুলো বিপদজনক ছিল। একটা মেষশাবক যদি পাল থেকে আলাদা হয়ে যেত, তা হলে এটা সহজ শিকারে পরিণত হতো। মা মেষ হয়তো তার বাচ্চাকে রক্ষা করার জন্য সহজাতভাবেই তার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারে। কিন্তু, এমনকি একটা পূর্ণবয়স্ক মেষও একটা সিংহকে প্রতিরোধ করতে পারত না। তাই, পালকে রক্ষা করার জন্য সাহসী মেষপালকদের প্রয়োজন হতো।—১ শমূয়েল ১৭:৩৪, ৩৫.
“গর্জ্জনকারী সিংহের” কাছ থেকে তাঁর রূপক মেষদের রক্ষা করতে যিহোবা “প্রধান পালক” যিশু খ্রিস্টের অধীনে পালের যত্ন নিতে আধ্যাত্মিক পালকদের ব্যবস্থা করেছেন। (১ পিতর ৫:৪) পিতর এই ধরনের নিযুক্ত ব্যক্তিদের এই পরামর্শ দেন: “তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন কর; অধ্যক্ষের কার্য্য কর, আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্ব্বক, ঈশ্বরের অভিমতে, কুৎসিত লাভার্থে নয়, কিন্তু উৎসুকভাবে কর।” (১ পিতর ৫:১, ২) বাবামা হিসেবে আপনাদের সহযোগিতার দ্বারা এই পালকরা হয়তো একজন কিশোর বা কিশোরীকে তার পথ আধ্যাত্মিকভাবে সংশোধন করতে সাহায্য করতে পারবে।
খ্রিস্টান পালকদের যখন আপনার বিদ্রোহী সন্তানকে পরামর্শ দিতে হয়, তখন আপনি হয়তো তাকে শাস্তি পাওয়া থেকে রক্ষা করার তাড়া বোধ করতে পারেন। কিন্তু, এই ধরনের পথ অনুধাবন করা এক গুরুতর ভুল হবে। পিতর বলেন: “[দিয়াবলের] প্রতিরোধ কর”—আধ্যাত্মিক পালকদের নয়।—১ পিতর ৫:৯.
শাসন যখন চরম হয়
আপনার সন্তান যদি একজন অনুতাপহীন বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান হয়, তা হলে সে হয়তো চরম ধরনের শাসন লাভ করতে পারে—তাকে মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হতে পারে। তা হলে আপনি তার সঙ্গে কতখানি যোগাযোগ রাখবেন, সেটা তার বয়স ও অন্যান্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
সন্তান যদি নাবালক হয় এবং ঘরেই থাকে, তা হলে স্বাভাবিকভাবেই আপনি তার দৈহিক প্রয়োজনগুলোর যত্ন নিয়ে যাবেন। এ ছাড়া, তার নৈতিক প্রশিক্ষণ ও শাসনের প্রয়োজন আর তা জোগানোর দায়িত্ব আপনার। (হিতোপদেশ ১:৮-১৮; ৬:২০-২২; ২৯:১৭) আপনি হয়তো তার সরাসরি অংশগ্রহণসহ তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে চাইবেন। আপনি বিভিন্ন শাস্ত্রপদের প্রতি এবং ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ দ্বারা জোগানো প্রকাশনাগুলোর প্রতি তার মনোযোগ আকর্ষণ করাতে পারেন। (মথি ২৪:৪৫) এ ছাড়া, আপনি সন্তানকে আপনার সঙ্গে সভাগুলোতে নিয়ে যেতে পারেন ও তাকে আপনার সঙ্গে বসাতে পারেন। এই সমস্তকিছুই এই আশায় করা যেতে পারে যে, সে শাস্ত্রীয় পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দেবে।
সমাজচ্যুত সন্তান যদি নাবালক না হয় এবং আপনার সঙ্গে একই ঘরে না থেকে বাইরে কোথাও থাকে, তা হলে পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রেরিত পৌল প্রাচীন করিন্থের খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “ভ্রাতা নামে আখ্যাত কোন ব্যক্তি যদি ব্যভিচারী কি লোভী কি প্রতিমাপূজক কি কটুভাষী কি মাতাল কি পরধনগ্রাহী হয়, তবে তাহার সংসর্গে থাকিতে নাই, এমন ব্যক্তির সহিত আহার করিতেও নাই।” (১ করিন্থীয় ৫:১১) প্রয়োজনীয় পারিবারিক বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়ার সময় হয়তো সমাজচ্যুত ব্যক্তির সঙ্গে কিছুটা যোগাযোগ রাখার প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু একজন খ্রিস্টান বাবা অথবা মার অপ্রয়োজনীয় সংসর্গ এড়িয়ে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত।
ভুল করেছে এমন কোনো সন্তানকে যদি খ্রিস্টীয় পালকরা শাসন করে আর আপনি যদি তাদের বাইবেলভিত্তিক পদক্ষেপকে উপেক্ষা করেন বা হালকা করে দেখার চেষ্টা করেন, তা হলে তা বিজ্ঞতার কাজ হবে না। আপনার বিদ্রোহী সন্তানের পক্ষ নেওয়া দিয়াবলের কাছ থেকে কোনোরকম প্রকৃত সুরক্ষা জোগাবে না। আসলে, আপনি নিজের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলছেন। অন্যদিকে, পালকদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে আপনি “বিশ্বাসে অটল” থাকবেন এবং আপনার সন্তানের জন্য সর্বোত্তম সাহায্য জোগাবেন।—১ পিতর ৫:৯.
যিহোবা আপনাকে ধরে রাখবেন
আপনার সন্তান যদি বিদ্রোহ করে, তা হলে মনে রাখবেন যে, আপনি একা নন। অন্যান্য খ্রিস্টান বাবামারও একইরকম অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা যেধরনের পরীক্ষারই মুখোমুখি হই না কেন, যিহোবা আমাদের ধরে রাখতে পারেন।—গীতসংহিতা ৬৮:১৯.
প্রার্থনায় যিহোবার ওপর নির্ভর করুন। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে নিয়মিতভাবে মেলামেশা করুন। নিযুক্ত পালকদের শাসনকে সমর্থন করুন। তা করার দ্বারা আপনি সুস্থির থাকতে পারবেন। আর আপনার উত্তম উদাহরণ হয়তো আপনার সন্তানকে যিহোবার প্রতি ফিরে আসার জন্য তাঁর আমন্ত্রণে সাড়া দিতে সাহায্য করতে পারে।—মালাখি ৩:৬, ৭.
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
প্রার্থনা ও খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কাছ থেকে শক্তি গ্রহণ করুন