পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল
১ পিতর ২:৯, “কিং জেমস ভারসন” অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের “মনোনীত বংশ” বলে। এটা কি মথি ২৪:৩৪ পদে লিপিবদ্ধ, যীশুর “বংশ” (NW) কথাটি ব্যবহারের ফলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর কোন প্রভাব ফেলে?
কয়েকটি অনুবাদে “বংশ” শব্দটি দুটি ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছে। কিং জেমস ভারসন অনুসারে, প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “কিন্তু তোমরা ‘মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ, যেন তাঁহারই গুণকীর্ত্তন কর,’ যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন।” আর যীশু ভাববাণী করেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এই কালের [“বংশ,”NW] লোকদের লোপ হইবে না, যে পর্য্যন্ত না এ সমস্ত সিদ্ধ হয়।”—১ পিতর ২:৯; মথি ২৪:৩৪.
প্রথম পদটিতে প্রেরিত পিতর এখানে যে গ্রীক শব্দটি ব্যবহার করেন তা হল জিনস, কিন্তু যীশুর কথিত বাক্যে আমরা জিনিয়া কথাটি দেখতে পাই। যদিও এই দুটি গ্রীক একই রকম শুনতে লাগে আর এদের উৎসও একই সম্পর্কযুক্ত; তবুও, এই দুটি হল আলাদা শব্দ আর এদের অর্থও হল ভিন্ন। পবিত্র শাস্ত্রে নতুন জগৎ অনুবাদ—পসঙ্গসহ ১ পিতর ২:৯ পদের পাদটীকায় জানায় যে ‘জাতি।’ গ্রীক, জিনস; জিনিয়া অর্থাৎ ‘বংশ’ থেকে আলাদা যা মথি ২৪:৩৪ পদে আছে।” একই পাদটীকা পাওয়া যায় মথি ২৪:৩৪ পদেও।
এই পাদটীকা অনুসারে জিনস এর সঠিক ইংরাজি শব্দ হল ‘জাতি’ যা সাধারণত ইংরাজি সংস্করণে পাওয়া যায়। ১পিতর ২:৯, পদে, পিতর এখানে যিশাইয় ৬১:৬ পদের ভবিষ্যদ্বাণী অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের ওপর প্রয়োগ করেছেন যাদের স্বর্গীয় আশা রয়েছে। তাদের, সমস্ত জাতি ও সম্প্রদায় থেকে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের সাধারণ পটভূমিকা আর কোন অর্থ রাখে না যখন তারা আত্মিক ইস্রায়েল জাতির অংশ হয়ে দাঁড়ায়। (রোমীয় ১০:১২; গালাতীয় ৩:২৮, ২৯; ৬:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০) পিতর এদের শনাক্ত করেন আত্মিক অর্থে এক নির্দিষ্ট দল হিসাবে—“‘মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ।”
কিন্তু মথি ২৪:৩৪ পদে যীশুর উদ্ধৃত গ্রীক সংস্করণে আমরা জিনিয়া শব্দটি পাই। এটা ব্যাপকভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত যে যীশু এখানে কোন “জাতি”-র লোকেদের কথা বলছিলেন না, বরঞ্চ তিনি সেই সব লোকেদের বিষয় বলছিলেন যারা একটি বিশেষ সময়ে জীবিত ছিল।
প্রায় একশো বছর আগে, ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির প্রথম সভাপতি, চার্লস. টি. রাসেল, এই বিষয়টি স্পষ্ট করে লিখেছিলেন: “যদিও ‘বংশ’ ও ‘জাতি’ এই শব্দ দুটি একটি সূত্র বা মূল থেকে এসেছে তবুও এই দুটি শব্দ এক নয়; এবং শাস্ত্রীয় ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই দুটি শব্দ খুবই ভিন্ন।. . . ভবিষ্যদ্বাণীর তিনটি রেকর্ডে আমাদের প্রভু সম্পূর্ণ আলাদা একটি গ্রীক শব্দ (জিনিয়া) ব্যবহার করেছিলেন, যার অর্থ জাতি নয়, কিন্তু এটা আমাদের ইংরাজি শব্দ বংশের মতোই সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। গ্রীক শব্দ (জিনিয়া)-র অন্যান্য ব্যবহারও প্রমাণ করে যে এটি জাতির তাৎপর্যপূর্ণতাকে বোঝাচ্ছে না, বরঞ্চ একই সময় জীবিত কিছু লোকের কথা বোঝাচ্ছে।”—প্রতিশোধের দিন (ইংরাজি), পৃষ্ঠা ৬০২-৩.
আরও সম্প্রতিকালে, বাইবেল অনুবাদকদের জন্য প্রস্তুত করা বই এ হ্যান্ডবুক অন দ্যা গস্পেল অফ ম্যাথিউ (১৯৮৮) জানায়: “[নতুন আন্তর্জাতিক সংস্করণ, (ইংরাজি)] এই বংশ শব্দটিকে আক্ষরিকভাবে অনুবাদ করে, কিন্তু এর পাদটীকায় জানায়, ‘অথবা জাতি।’ আর একজন নতুন নিয়মের পন্ডিত বিশ্বাস করেন যে, মথি এখানে কেবলমাত্র যীশুর পরবর্তী প্রথম বংশেরই কথা বলছেন না, বরঞ্চ সমস্ত যিহূদী বংশের কথা বলছেন যারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।’ কিন্তু, এইধরনের কোন উপসংহারে আসার ক্ষেত্রে কোন ভাষাগত প্রমাণ পাওয়া যায় না এবং এগুলিকে সাধারণ অর্থে উপেক্ষা করার এক নিছক প্রয়াস হিসাবে উপেক্ষা করা উচিত। এর আদি অর্থ হল সম্পূর্ণরূপে যীশুর সমকালীন লোকেদের প্রতি।”
১০ থেকে ১৫ পৃষ্ঠায় যেমন আমরা আলোচনা করেছিলাম যে যীশু তাঁর সময়কার যিহূদা বংশকে, তাঁর সমকালীন লোকেদের, যারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তাদের নিন্দা করেছিলেন। (লূক ৯:৪১; ১১:৩২; ১৭:২৫) তিনি প্রায়ই “দুষ্ট ও ব্যভিচারী,” “অবিশ্বাসী ও বিপথগামী” এবং “ব্যভিচারী ও পাপিষ্ঠ” এই বিশেষণগুলি ব্যবহার করেন, সেই বংশকে বর্ণনা করতে। (মথি ১২:৩৯; ১৭:১৭; মার্ক ৮:৩৮) শেষ বারের মতো যখন যীশু “বংশ” শব্দটি ব্যবহার করেন তখন তিনি জৈতুন পর্বতে তাঁর চারজন প্রেরিতের সাথে ছিলেন। (মার্ক ১৩:৩) সেই ব্যক্তিরা, যারা তখনও আত্মায় অভিষিক্ত অথবা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর অংশ হননি, তারা কোন “বংশ” অথবা জাতির লোক হতে পারেন না। অথচ তারা জানতেন যে যীশু যখন এই “বংশ” শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন তখন তিনি তা তাঁর সমকালীন লোকদের উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করেছিলেন। অতএব শেষবারের মতো “এই বংশ” শব্দটি ব্যবহার করার সময় তাঁর মনে কী ছিল তা তারা জানতেন।a প্রেরিত পিতর, যিনি সেই সময় উপস্থিত ছিলেন, পরে তিনি যিহূদীদের উৎসাহ দেন: “এই কালের কুটিল লোকদের হইতে আপনাদিগকে রক্ষা কর।”—প্রেরিত ২:৪০.
আমরা প্রায়ই সেই সব প্রমাণগুলিকে প্রকাশ করেছি যে, যীশু যখন সেই একই বক্তৃতায় সেই সব বিষয় সম্বন্ধে ভাববাণী করেছিলেন (যেমন যুদ্ধবিগ্রহ, ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষ) সেগুলি তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী করার থেকে আরম্ভ করে সা.শ. ৭০ সালে যিরূশালেম ধ্বংসের মধ্যবর্তী সময় পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। অনেকগুলি কিন্তু সবকিছু পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। উদাহরণস্বরূপ, কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না যে রোমীয়রা যিরূশালেম আক্রমণ [সা.শ. ৬৬-৭০ সাল] করার পর “মনুষ্যপুত্ত্রের চিহ্ন” উপস্থিত হয়েছিল, যার ফলে “পৃথিবীর সমুদয় গোষ্ঠী” বিলাপ করেছিল। (মথি ২৪:৩০) অতএব সা.শ. ৩৩ ও সা.শ. ৭০ সালের মধ্যে যে পরিপূর্ণতাগুলি ছিল তা নিশ্চয়ই প্রাথমিক ছিল, অবশ্যই কোন বৃহৎ আকারের পরিপূর্ণতা ছিল না যার উল্লেখও যীশু করেছিলেন।
যোসিফাসের বই যিহূদীদের যুদ্ধ, (ইংরাজি) এটি অনুবাদের ভূমিকায়, জি. এ. উইলিয়ামসান লেখেন: “শিষ্যেরা, মথি আমাদের জানান, [যীশুকে] দ্বৈত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিল—মন্দিরের ধ্বংস সম্বন্ধে, আর তাঁর শেষ আগমন সম্বন্ধে—এবং তিনি তাদের দ্বৈত উত্তর দিয়েছিলেন, যার প্রথম অংশ বিশদভাবে অবশ্যম্ভাবী ঘটনাগুলি ঘটার সম্বন্ধে ভাববাণী করে যা যোসিফাস পূর্ণভাবে বর্ণনা করেন।”
হ্যাঁ, এর প্রাথমিক পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে ‘এই বংশ’ শব্দটি একই অর্থ বহন করে যা অন্য সময়ও করে থাকে—সেই সময়কার অবিশ্বাসী যিহূদীদের বংশ। সেই ‘বংশ’ পার হয়ে যাবে না যতক্ষণ না তারা যীশুর ভাববাণীগুলির অভিজ্ঞতা করে। উইলিয়ামসান যেমন মন্তব্য করেছিলেন, এটা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল সেই দশকগুলির মধ্যে যা পরিশেষে যিরূশালেমের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, যা প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে ইতিহাসবেত্তা যোসিফাস বর্ণনা দেন।
এর দ্বিতীয় বা বৃহৎ পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে “এই বংশ” এর অন্তর্ভুক্ত হবে যুক্তিযুক্তভাবে একই সময়ের লোকেরা। ১৬ পৃষ্ঠার শুরুতে যে প্রবন্ধটিতে আলোচনা করা হয়েছে যে আমাদের এই উপসংহারে আসার কোন দরকার নেই যে, যীশু কোন নির্দিষ্ট বছরের কথা বলছেন যাদের নিয়ে এই “বংশ” গঠিত।
বিপরীতে, এই “বংশ” এর যে কোন সময় সম্বন্ধে মুখ্য দুটি বিষয় বলা যেতে পারে। (১) একটি বংশের লোককে কোন নির্দিষ্ট সময় বা বছরের দ্বারা দেখা যেতে পারে না যেমন কোন নির্ধারিত বছর (দশক অথবা শতাব্দী) (২) একটি বংশের লোকেরা অপেক্ষাকৃতভাবে কম সময় ধরে জীবিত থাকে, অনেক বছর ধরে নয়।
অতএব প্রেরিতরা যখন যীশুকে ‘এই বংশ’ সম্বন্ধে বলতে শুনেছিলেন তখন তারা কী ভেবেছিলেন? আমরা যেমন জানতে পেরেছি যে “মহাক্লেশ”-এ যিরূশালেমের ধ্বংস এসেছিল ৩৭ বছর পর, কিন্তু প্রেরিতেরা যারা যীশুর কথা শুনেছিলেন তারা তা জানতে পারেননি। বরঞ্চ, তিনি যখন ‘বংশ’ শব্দটির উল্লেখ করেন, তখন তাদের কাছে এটা এই অর্থই বহন করেছিল যে, এই অভিব্যক্তিটি কোন দীর্ঘ সময়কালের কথা বুঝাচ্ছিল না বরঞ্চ সেই সব লোকদের কথা বুঝাচ্ছিল যারা অপেক্ষাকৃতরূপে সীমিত কালের মধ্যে জীবিত ছিল। আমাদের ক্ষেত্রেও ঠিক একই জিনিস প্রযোজ্য। অতএব, যীশুর পরবর্তী বাক্যগুলি কতই না যথার্থ: “কিন্তু সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না, স্বর্গের দূতগণও জানেন না, পুত্ত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন। . . . এই জন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।”—মথি ২৪:৩৬, ৪৪.
[পাদটীকাগুলো]
a “এই বংশ” অভিব্যক্তিটি হল বর্ণনামূলক সর্বনাম হোউটস এর সমরূপ যার ইংরাজি শব্দ হল “এই।” এর অর্থ হতে পারে বক্তার বর্তমান বা অতীতের কোন বিষয়। কিন্তু এর আরও অনেক অর্থ আছে। একসিজিটিক্যাল ডিকসনারি অফ দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট (১৯৯১) মন্তব্য করে: “[হোউটস] শব্দটি সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতি প্রযোজ্য। অতএব [আইয়ন হোউটস] হল ‘বর্তমানের অস্তিত্বপ্রাপ্ত জগৎ’ . . . এবং [জিনিয়া হয়টে] হল ‘যে বংশ এখন বেঁচে আছে’ (উদাহরণস্বরূপ, মথি ১২:৪১ এবং ৪৫; ২৪:৩৪)।” ডা: জর্জ বি. ওয়াইনার লেখেন: “এই সর্বনামটি [হোউটস] অনেক সময় কাছের কোন বিশেষ্যকে বোঝায় না, বরঞ্চ দূরের কোন বস্তুকে বোঝায়, যা প্রধান বিষয় হিসাবে, মানসিকভাবে লেখকের মনের সবচাইতে কাছের বা বর্তমান চিন্তাধারা।”—এ গ্রামার অফ দি ইডিয়ম অফ দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট, ৭ম সংস্করণ, ১৮৯৭.