“যিহোবার মহাদিন নিকটবর্তী”
“যিহোবার মহাদিন নিকটবর্তী, তা নিকটবর্তী, অতি শীঘ্রই আসছে।”—সফনিয় ১:১৪, NW.
১, ২. (ক) কোন বিশেষ দিনের জন্য খ্রিস্টানরা অপেক্ষা করে আছে? (খ) আমাদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন এবং কেন?
আনন্দে উদ্ভাসিত এক যুবতী তার বিয়ের দিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। সন্তানসম্ভবা এক মা তার বাচ্চার জন্মের জন্য প্রেমের সঙ্গে প্রতীক্ষা করে আছেন। একজন পরিশ্রান্ত কর্মী তার দীর্ঘপ্রতীক্ষিত ছুটির জন্য গভীরভাবে আকাঙ্ক্ষা করে রয়েছেন। তাদের সকলের মধ্যে কোন বিষয়ে মিল রয়েছে? তারা সকলে এক বিশেষ দিনের—তাদের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলবে এমন এক দিনের—জন্য অপেক্ষা করে আছে। তাদের প্রত্যেকের অনুভূতি অত্যন্ত গভীর কিন্তু একেবারে ভিন্ন। তারা যে-দিনের জন্য অপেক্ষা করে আছে, তা একসময় আসবে এবং যখন আসবে, তখন তারা এর জন্য প্রস্তুত থাকবে বলে আশা করে।
২ একইভাবে, সত্য খ্রিস্টানরাও আজকে এক বিশেষ দিনের আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। এটা হল, “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW]” মহা “দিন।” (যিশাইয় ১৩:৯; যোয়েল ২:১; ২ পিতর ৩:১২) এই আসন্ন “যিহোবার দিন” কী আর এর আগমন মানবজাতিকে কীভাবে প্রভাবিত করবে? অধিকন্তু, কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমরা সেই দিনের আগমনের জন্য প্রস্তুত? আমাদের জন্য এখনই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা আবশ্যক, কারণ সাক্ষ্যপ্রমাণ বাইবেলের এই কথাগুলোর সত্যতাকে ইঙ্গিত করে: “যিহোবার মহাদিন নিকটবর্তী, তা নিকটবর্তী, অতি শীঘ্রই আসছে।”—সফনিয় ১:১৪.
“যিহোবার মহাদিন”
৩. “যিহোবার মহাদিন” কী?
৩ “যিহোবার মহাদিন” কী? শাস্ত্র জুড়ে “যিহোবার দিন” অভিব্যক্তিটি এক বিশেষ সময়কে নির্দেশ করে, যখন যিহোবা তাঁর শত্রুদের ওপর বিচার নিয়ে এসেছিলেন এবং তাঁর মহান নামকে মহিমান্বিত করেছিলেন। যিহূদা এবং যিরূশালেমের অবিশ্বস্ত লোকেরা ও সেইসঙ্গে বাবিল এবং মিশরের অত্যাচারী অধিবাসীরা সকলে ‘যিহোবার দিনের’ সম্মুখীন হয়েছিল, যখন তারা যিহোবার বিচার ভোগ করেছিল। (যিশাইয় ২:১, ১০-১২; ১৩:১-৬; যিরমিয় ৪৬:৭-১০) কিন্তু, “যিহোবার” সর্বমহান “দিন” এখনও সামনে রয়েছে। এটা হল এমন “দিন,” যখন সেইসমস্ত ব্যক্তির ওপর যিহোবার বিচার নিয়ে আসা হবে, যারা যিহোবার নামকে কলঙ্কিত করেছে। এটা মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য ‘মহতী বাবিলের’ ধ্বংসের মাধ্যমে শুরু হবে এবং হর্মাগিদোন যুদ্ধে দুষ্ট বিধিব্যবস্থার বাকি অংশের চির ধ্বংসের মাধ্যমে শেষ হবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬; ১৭:৫, ১৫-১৭; ১৯:১১-২১.
৪. কেন অধিকাংশ মানবজাতির অতি দ্রুত আসন্ন যিহোবার দিনকে ভয় পাওয়া উচিত?
৪ তারা বুঝুক বা না-ই বুঝুক, অধিকাংশ মানবজাতির অতি দ্রুত আসন্ন এই দিনকে ভয় পাওয়া উচিত। কেন? ভাববাদী সফনিয়ের মাধ্যমে যিহোবা উত্তর দেন: “সেই দিন ক্রোধের দিন, সঙ্কটের ও সঙ্কোচের দিন, নাশের ও সর্ব্বনাশের দিন, অন্ধকারের ও তিমিরের দিন, মেঘের ও গাঢ় তিমিরের দিন।” ভয়ংকরই বটে! অধিকন্তু, ভাববাদী বলেন: “আমি মনুষ্যদিগকে দুঃখ দিব; . . . কারণ তাহারা সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছে।”—সফনিয় ১:১৫-১৭.
৫. যিহোবার দিন সম্বন্ধে লক্ষ লক্ষ লোকের কোন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং কেন?
৫ কিন্তু, অন্যান্য লক্ষ লক্ষ লোক যিহোবার দিনের আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে প্রত্যাশা করে আছে। কেন? তারা জানে যে, এটা হল ধার্মিক লোকেদের পরিত্রাণ ও উদ্ধারের সময়, যে-দিনে যিহোবা স্বয়ং উচ্চীকৃত হবেন এবং তাঁর গৌরবান্বিত নাম পবিত্রীকৃত হবে। (যোয়েল ৩:১৬, ১৭; সফনিয় ৩:১২-১৭) সেই দিন আতঙ্কের নাকি অধীর আগ্রহের সঙ্গে প্রত্যাশিত দিন হবে, তা অনেকটা নির্ভর করে এখন লোকেরা যেভাবে জীবনযাপন করছে, সেটার ওপর। সেই দিন যে নিকটবর্তী হচ্ছে, সেটাকে আপনি কীভাবে দেখেন? আপনি কি এর জন্য প্রস্তুত? যিহোবার দিন যে নিকটবর্তী, এই বিষয়টা কি ঠিক এখনই আপনার রোজকার জীবনে প্রভাব ফেলে?
“উপহাসের সহিত উপহাসকেরা উপস্থিত হইবে”
৬. অধিকাংশ লোক ‘যিহোবার দিনকে’ কোন দৃষ্টিতে দেখে আর সত্য খ্রিস্টানরা এতে অবাক হয় না কেন?
৬ পরিস্থিতির গুরুত্ব সত্ত্বেও, পৃথিবীর অধিকাংশ অধিবাসী “যিহোবার” আসন্ন “দিন” সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন নয়। তারা সেই লোকেদের বিদ্রূপ এবং উপহাস করে, যারা তাদেরকে এর আসন্ন আগমন সম্বন্ধে সাবধান করে। সত্য খ্রিস্টানরা এতে অবাক হয় না। তারা প্রেরিত পিতরের দ্বারা লিপিবদ্ধ এই সতর্কবাণী মনে রাখে: “প্রথমে ইহা জ্ঞাত হও যে, শেষকালে উপহাসের সহিত উপহাসকেরা উপস্থিত হইবে; তাহারা আপন আপন অভিলাষ অনুসারে চলিবে, এবং বলিবে, তাঁহার আগমনের প্রতিজ্ঞা কোথায়? কেননা যে অবধি পিতৃলোকেরা নিদ্রাগত হইয়াছেন, সেই অবধি সমস্তই সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন, তেমনই রহিয়াছে।”—২ পিতর ৩:৩, ৪.
৭. কী আমাদের তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করবে?
৭ কী আমাদের এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনাকে প্রতিরোধ করতে আর এভাবে তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করবে? পিতর আমাদের বলেন: “আমি . . . তোমাদিগকে স্মরণ করাইয়া দিয়া তোমাদের সরল চিত্তকে জাগ্রত করিতেছি, যেন তোমরা পবিত্র ভাববাদিগণ কর্ত্তৃক পূর্ব্বকথিত বাক্য সকল, এবং তোমাদের প্রেরিতগণের দ্বারা দত্ত ত্রাণকর্ত্তা প্রভুর আজ্ঞা স্মরণ কর।” (২ পিতর ৩:১, ২) ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সতর্কবাণীতে আমাদের মনোযোগ দেওয়া ‘আমাদের সরল চিত্তকে জাগ্রত’ করতে সাহায্য করবে। আমরা হয়তো এই অনুস্মারকগুলো বার বার শুনেছি কিন্তু এই সতর্কবাণীগুলোতে ক্রমাগত মনোযোগ দেওয়া আগের চেয়ে বরং এখন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।—যিশাইয় ৩৪:১-৪; লূক ২১:৩৪-৩৬.
৮. কেন অনেকে বাইবেলের অনুস্মারকগুলো উপেক্ষা করে?
৮ কেন কেউ কেউ এই অনুস্মারকগুলো উপেক্ষা করে? পিতর বলে চলেন: “সেই লোকেরা ইচ্ছাপূর্ব্বক ইহা ভুলিয়া যায় যে, আকাশমণ্ডল, এবং জল হইতে ও জল দ্বারা স্থিতিপ্রাপ্ত পৃথিবী ঈশ্বরের বাক্যের গুণে প্রাক্কালে ছিল; তদ্দ্বারা তখনকার জগৎ জলে আপ্লাবিত হইয়া নষ্ট হইয়াছিল।” (২ পিতর ৩:৫, ৬) হ্যাঁ, এমন ব্যক্তিরা রয়েছে, যারা চায় না যে যিহোবার দিন আসুক। তারা চায় না যে, কোনোকিছু তাদের জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটাক। তারা চায় না যে, তাদের স্বার্থপর জীবনধারার জন্য যিহোবার কাছে তাদের নিকাশ দিতে হোক! পিতর যেমন বলেছেন যে, তারা “আপন আপন অভিলাষ অনুসারে” জীবনযাপন করে।
৯. নোহ এবং লোটের সময়ের লোকেরা কোন ধরনের মনোভাব প্রদর্শন করেছিল?
৯ এই উপহাসকেরা ‘ইচ্ছা’ করে এটা উপেক্ষা করতে চায় যে, অতীতে যিহোবা মানবজাতির বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করেছেন। যিশু খ্রিস্ট এবং প্রেরিত পিতর দুজনেই এই ধরনের দুটো ঘটনা—‘নোহের সময়’ এবং ‘লোটের সময়’—সম্বন্ধে উল্লেখ করে। (লূক ১৭:২৬-৩০; ২ পিতর ২:৫-৯) জলপ্লাবনের আগে লোকেরা নোহের দেওয়া সতর্কবাণীতে কোনো মনোযোগ দেয়নি। একইভাবে, সদোম ও ঘমোরার ধ্বংসের আগে তার জামাতারা লোটকে “উপহাসকারী বলিয়া জ্ঞান করিল।”—আদিপুস্তক ১৯:১৪.
১০. যারা কোনো মনোযোগ দেয় না, তাদের প্রতি যিহোবার প্রতিক্রিয়া কী?
১০ আজকেও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু, যারা কোনো মনোযোগ দেয় না, তাদের প্রতি যিহোবার প্রতিক্রিয়া লক্ষ করুন: “যে লোকেরা নির্ব্বিঘ্নে আপন আপন গাদের উপরে সুস্থির আছে, যাহারা মনে মনে বলে, সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] মঙ্গলও করিবেন না, অমঙ্গলও করিবেন না, তাহাদিগকে দণ্ড দিব। তাহাদের সম্পদ লুট হইবে, ও তাহাদের গৃহ সকল ধ্বংসস্থান হইবে; তাহারা বাটী নির্ম্মাণ করিবে, কিন্তু তাহাতে বাস করিতে পাইবে না; দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিবে, কিন্তু তাহার দ্রাক্ষারস পান করিতে পাইবে না।” (সফনিয় ১:১২, ১৩) লোকেরা হয়তো ক্রমাগত তাদের রোজকার “স্বাভাবিক” কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তারা তাদের কঠোর পরিশ্রম থেকে কোনো স্থায়ী উপকার লাভ করবে না। কেন? কারণ যিহোবার দিন হঠাৎ করে আসবে এবং তারা যে-বস্তুগত সম্পদই সঞ্চয় করে থাকুক না কেন, তা তাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না।—সফনিয় ১:১৮.
“তাহার অপেক্ষা কর”
১১. আমাদের কোন উপদেশ মনে রাখা উচিত?
১১ আমাদের চারপাশের দুষ্ট জগতের বিপরীতে, আমাদেরকে ভাববাদী হবক্কূকের দ্বারা লিপিবদ্ধ এই উপদেশ মনে রাখতে হবে: “এই দর্শন এখনও নিরূপিত কালের নিমিত্ত, ও তাহা পরিনামের আকাঙ্ক্ষা করিতেছে, আর মিথ্যা হইবে না; তাহার বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (হবক্কূক ২:৩) যদিও আমাদের অসিদ্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে সেই দিন বিলম্বে আসছে বলে মনে হতে পারে কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, যিহোবা ধীর নন। তাঁর দিন একেবারে যথাসময়ে আসবে, এমন সময়ে আসবে যখন মানুষ আশা করবে না।—মার্ক ১৩:৩৩; ২ পিতর ৩:৯, ১০.
১২. কোন বিষয় সম্বন্ধে যিশু সতর্ক করেছিলেন আর তা কীভাবে যিশুর বিশ্বস্ত অনুসারীদের কাজগুলোর বিপরীত?
১২ যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে যিশু সতর্ক করেছিলেন যে, এমনকি তাঁর কিছু অনুসারী তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলবে। তিনি তাদের সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: ‘সেই দুষ্ট দাস যদি মনে মনে বলে, “আমার প্রভুর আসিবার বিলম্ব আছে,” আর যদি আপন সহদাসদিগকে মারিতে, এবং মত্ত লোকদের সঙ্গে ভোজন ও পান করিতে, আরম্ভ করে, তবে যে দিন সে অপেক্ষা না করিবে, এবং যে দণ্ড সে না জানিবে, সেই দিন সেই দণ্ডে সেই দাসের প্রভু আসিবেন; আর তাহাকে দ্বিখণ্ড করিবেন।’ (মথি ২৪:৪৮-৫১) এর বিপরীতে, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণী অনুগতভাবে তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখে। দাস শ্রেণী জেগে রয়েছে এবং প্রস্তুত রয়েছে। যিহোবা তাকে এই পৃথিবীতে “আপন সর্ব্বস্বের” অধ্যক্ষ করেছেন।—মথি ২৪:৪২-৪৭.
তৎপরতার প্রয়োজনীয়তা
১৩. কীভাবে যিশু তৎপরতার মনোভাবের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন?
১৩ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের তাদের তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখা আবশ্যক ছিল। তাদের যিরূশালেম থেকে পালানোর জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল, যখন তারা সেই শহরকে “সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত” দেখেছিল। (লূক ২১:২০, ২১) এটা ঘটেছিল সা.কা. ৬৬ সালে। সেই সময় খ্রিস্টানদের যে-তৎপরতার প্রয়োজন ছিল, সেই সম্বন্ধে যিশু কীভাবে তুলে ধরেছিলেন, তা লক্ষ করুন: “যে কেহ ছাদের উপরে থাকে, সে গৃহ হইতে জিনিষপত্র লইবার জন্য নীচে না নামুক; আর যে কেহ ক্ষেত্রে থাকে, সে আপন বস্ত্র লইবার নিমিত্ত পশ্চাতে ফিরিয়া না আসুক।” (মথি ২৪:১৭, ১৮) ইতিহাস যেমন দেখায় যে, যিরূশালেম আরও চার বছরের জন্য রক্ষা পেয়েছিল, তা হলে সা.কা. ৬৬ সালে কেন খ্রিস্টানদের যিশুর কথাগুলোতে এত গুরুত্বের সঙ্গে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল?
১৪, ১৫. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত হতে দেখেই কেন বিলম্ব না করে পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক ছিল?
১৪ যদিও এটা সত্য যে, রোমীয় সেনাবাহিনী সা.কা. ৭০ সালের আগে পর্যন্ত যিরূশালেম ধ্বংস করেনি কিন্তু সেই মধ্যবর্তী সময়টুকু সমস্যামুক্ত ছিল না। বরং এর উলটোটাই ছিল! সেই বছরগুলো দৌরাত্ম্য ও রক্তপাতে পরিপূর্ণ ছিল। একজন ইতিহাসবেত্তা সেই সময়ে যিরূশালেমের পরিস্থিতিকে “ভয়াবহ নিষ্ঠুর কাজকর্মে পূর্ণ ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের” সময় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থাকে জোরদার করার, অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার এবং সেনাবাহিনীতে সেবা করার জন্য যুবকদের সেনাবাহিনীতে ভর্তি করা হয়েছিল। তারা প্রতিদিন কুচকাওয়াজ করত। যারা সেই চরম আচরণকে সমর্থন করত না, তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দেখা হতো। খ্রিস্টানরা যদি সেই নগরে দীর্ঘসময় থাকত, তা হলে তাদেরকে অত্যন্ত বিপদজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হতো।—মথি ২৬:৫২; মার্ক ১২:১৭.
১৫ এটা লক্ষণীয় যে যিশু বলেছিলেন, শুধু যিরূশালেমের অধিবাসীরাই নয় কিন্তু “যাহারা যিহূদিয়াতে থাকে,” তাদেরও পালিয়ে যাওয়া শুরু করতে হতো। এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ যিরূশালেম থেকে তাদের প্রত্যাহার তুলে নেওয়ার অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই রোমীয় সেনাবাহিনী আবার যুদ্ধ শুরু করেছিল। প্রথমে, সা.কা. ৬৭ সালে গালীলকে পরাভূত করা হয়েছিল আর এরপর পরের বছর যথাক্রমে যিহূদাকে পরাজিত করা হয়েছিল। এর ফলে গ্রামাঞ্চলগুলোতে চরম দুর্দশা দেখা দিয়েছিল। এ ছাড়া, যেকোনো যিহুদির পক্ষে যিরূশালেম থেকেই পালানো ক্রমান্বয়ে কঠিন হয়ে পড়েছিল। নগরদ্বারগুলোতে কড়া পাহারা ছিল এবং যেকেউ পালানোর চেষ্টা করত, সে রোমীয়দের পক্ষ নিতে তাদের কাছে পালিয়ে যাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হতো।
১৬. সেই চরম দুর্দশার সময় রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কোন মনোভাব রাখার প্রয়োজন হয়েছিল?
১৬ এই সমস্ত বিষয় মনে রেখে আমরা বুঝতে পারি যে, কেন যিশু পরিস্থিতির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন। খ্রিস্টানদের ত্যাগস্বীকার করতে ইচ্ছুক হওয়ার প্রয়োজন ছিল, নিজেদেরকে বস্তুগত সম্পদের দ্বারা বিক্ষিপ্ত হতে দেওয়া উচিত ছিল না। যিশুর সতর্কবাণীর বাধ্য হতে “[তাহাদের] সর্ব্বস্ব ত্যাগ” করার জন্য ইচ্ছুক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। (লূক ১৪:৩৩) যারা অবিলম্বে বাধ্য হয়েছিল এবং যর্দনের অপর পারে পালিয়ে গিয়েছিল, তারা রক্ষা পেয়েছিল।
আমাদের তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখা
১৭. কেন আমাদের তৎপরতার মনোভাবকে শক্তিশালী করা উচিত?
১৭ বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে যে, আমরা শেষ সময়ের একেবারে দোরগোড়ায় বাস করছি। যেকোনো সময়ের চেয়ে আমাদের তৎপরতার মনোভাব আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। যখন যুদ্ধ থাকে না, তখন একজন সৈন্য যুদ্ধের চাপ এবং শঙ্কা বোধ করেন না। কিন্তু, তাই বলে তিনি যদি সতর্ক থাকার কোনো তৎপরতাই বোধ না করেন এবং হঠাৎ করেই তাকে যুদ্ধে ডাকা হয়, তা হলে তিনি হয়তো অপ্রস্তুত হয়ে যেতে পারেন, যার ফল হয় মারাত্মক। আধ্যাত্মিকভাবেও একই বিষয় সত্য। আমরা যদি আমাদের তৎপরতার মনোভাবকে ম্লান হয়ে যেতে দিই, তা হলে আমরা হয়তো আমাদের পথে যে-আক্রমণগুলো আসে, সেগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য অপ্রস্তুত হতে এবং পরিশেষে যখন যিহোবার দিন আসে, তখন অসতর্ক থাকতে পারি। (লূক ২১:৩৬; ১ থিষলনীকীয় ৫:৪) কেউ যদি “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] অনুগমন হইতে পরাঙ্মুখ” হয়ে থাকে, তা হলে তাদের জন্য তাঁকে পুনরায় অন্বেষণ করার এখনই সময়।—সফনিয় ১:৩-৬; ২ থিষলনীকীয় ১:৮, ৯.
১৮, ১৯. কী আমাদেরকে “ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের” আকাঙ্ক্ষা করতে সাহায্য করবে?
১৮ এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, প্রেরিত পিতর আমাদেরকে “ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের” আকাঙ্ক্ষা করতে উপদেশ দিয়েছেন! কীভাবে আমরা তা করতে পারি? একটা উপায় হল, ‘পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তির’ কাজগুলোতে জড়িত হওয়া। (২ পিতর ৩:১১, ১২) এই ধরনের কাজগুলোতে ব্যস্ত থাকা আমাদেরকে ‘যিহোবার দিনের’ আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে প্রত্যাশা করতে সাহায্য করবে। যে-গ্রিক শব্দকে ‘আকাঙ্ক্ষা করা’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘ত্বরান্বিত করা।’ আমরা আসলে যিহোবার দিনের আগমন পর্যন্ত যে-সময়টুকু রয়েছে, সেটাকে ত্বরান্বিত করতে পারি না। কিন্তু সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করার সময় আমরা যদি ঈশ্বরের সেবায় ব্যস্ত থাকি, তা হলে সময় অত্যন্ত দ্রুত কেটে যাচ্ছে বলে মনে হবে।—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.
১৯ ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ধ্যান করা এবং এতে প্রাপ্ত অনুস্মারকগুলো মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করা আমাদের এটা করতে সমর্থ করবে—সেই দিনের জন্য ‘আগ্রহের সংগে অপেক্ষায় থাকতে,’ হ্যাঁ, এর জন্য “প্রতীক্ষা” করতে সমর্থ করে। (২ পিতর ৩:১২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন; বাংলা জুবিলী বাইবেল) এই অনুস্মারকগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল সেই অসংখ্য ভবিষ্যদ্বাণী, যেগুলো কেবল যিহোবার দিন সম্বন্ধেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সেই প্রচুর আশীর্বাদ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে, যে-আশীর্বাদগুলো যারা ‘সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] অপেক্ষায় থাকে,’ তাদের ওপর বর্ষণ করা হবে।—সফনিয় ৩:৮.
২০. কোন পরামর্শে আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত?
২০ আসলে এখনই আমাদের সকলের জন্য ভাববাদী সফনিয়ের মাধ্যমে দেওয়া এই পরামর্শে মনোযোগ দেওয়ার সময়: “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] ক্রোধাগ্নি তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িল, সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] ক্রোধের দিন তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িল। হে দেশস্থ সমস্ত নম্র লোক, তাঁহার শাসন পালন করিয়াছ যে তোমরা, তোমরা সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] অন্বেষণ কর, ধর্ম্মের অনুশীলন কর, নম্রতার অনুশীলন কর; হয় ত সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] ক্রোধের দিনে তোমরা গুপ্তস্থানে রক্ষা পাইবে।”—সফনিয় ২:২, ৩.
২১. দুহাজার সাত সালে ঈশ্বরের লোকেদের দৃঢ়সংকল্প কী হবে?
২১ তাই, এই শাস্ত্রপদ কতই না উপযুক্ত, যা ২০০৭ সালের জন্য বাছাই করা হয়েছে: “যিহোবার মহাদিন নিকটবর্তী।” ঈশ্বরের লোকেরা এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, “তা নিকটবর্তী, অতি শীঘ্রই আসছে।” (সফনিয় ১:১৪) ‘তাহা বিলম্ব করিবে না।’ (হবক্কূক ২:৩) তাই, এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা যে একেবারে কাছেই, তা উপলব্ধি করে সেই দিনের অপেক্ষা করার সময় আমরা যেন যে-সময়ে বাস করছি, সেই সময়ে সর্বদা সতর্ক থাকি!
আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?
• “যিহোবার মহাদিন” কী?
• কেন অনেকে সময়ের গুরুত্বকে উপেক্ষা করে?
• কেন প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের তৎপরতার মনোভাব সহকারে কাজ করতে হয়েছিল?
• কীভাবে আমরা তৎপরতার মনোভাবকে বাড়াতে পারি?
[১৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
২০০৭ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হবে: “যিহোবার মহাদিন নিকটবর্তী।” —সফনিয় ১:১৪, NW.
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবা যখন পদক্ষেপ নেবেন, তখন নোহের দিনের মতোই উপহাসকেরা অবাক হবে
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রিস্টানরা যখন যিরূশালেমকে “সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত” দেখেছিল, তখন বিলম্ব না করেই তাদের পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল