“কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত!”
“এইরূপে যখন এই সমস্তই বিলীন হইবে, তখন পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে [‘ঈশ্বরের সেবার্থে কাজে,’ বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত!”—২ পিতর ৩:১১.
১. কেন পিতরের দ্বিতীয় চিঠিটি তার দিনের খ্রিস্টানদের জন্য এক সময়োপযোগী পরামর্শ ছিল?
প্রেরিত পিতর যখন তার দ্বিতীয় অনুপ্রাণিত চিঠিটি লিখেছিলেন, তখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলী ইতিমধ্যেই প্রচণ্ড তাড়না সহ্য করেছিল কিন্তু তাই বলে এটা মণ্ডলীর উদ্যোগকে হ্রাস কিংবা বৃদ্ধিকে ধীরগতি করে দেয়নি। সেই কারণে দিয়াবল আরেকটা পন্থা প্রয়োগ করেছিল, যেটা এর আগেও অনেক বার সফল হয়েছিল। পিতর যেমন প্রকাশ করেছেন, শয়তান ঈশ্বরের লোকেদেরকে সেইসমস্ত ভাক্ত গুরুদের দ্বারা কলুষিত করার চেষ্টা করেছে, যাদের “চক্ষু ব্যভিচারে পরিপূর্ণ” এবং “হৃদয় অর্থলালসায় অভ্যস্ত।” (২ পিতর ২:১-৩, ১৪; যিহূদা ৪) তাই, পিতরের দ্বিতীয় চিঠিটি হল, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার জন্য এক আন্তরিক পরামর্শ।
২. দ্বিতীয় পিতর ৩ অধ্যায় কোন বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে এবং আমাদের নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?
২ পিতর লিখেছিলেন: “আমি যত দিন এই তাম্বুতে থাকি, তত দিন তোমাদিগকে স্মরণ করাইয়া দিয়া জাগ্রৎ রাখা বিহিত জ্ঞান করি। কারণ আমি জানি, আমার এই তাম্বু পরিত্যাগ শীঘ্রই ঘটিবে, . . . আর তোমরা যাহাতে আমার যাত্রার পরে সর্ব্বদা এই সকল স্মরণ করিতে পার, এমন যত্নও করিব।” (২ পিতর ১:১৩-১৫) হ্যাঁ, পিতর জানতেন যে, তার মৃত্যু সন্নিকট ছিল কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন যেন তার দেওয়া সময়োপযোগী অনুস্মারকগুলো সবসময় স্মরণে রাখা হয়। আর বাস্তবিকই সেগুলো বাইবেলের অংশ হয়ে উঠেছে এবং বর্তমানে আমরা সকলে তা পড়তে পারছি। পিতরের দ্বিতীয় চিঠির ৩ অধ্যায় বিশেষভাবে আমাদের জন্য আগ্রহের বিষয় কারণ এটি বর্তমান বিধিব্যবস্থার ‘শেষকালের’ ওপর ও সেইসঙ্গে রূপক আকাশমণ্ডল এবং পৃথিবীর ধ্বংসের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। (২ পিতর ৩:৩, ৭, ১০) পিতর আমাদেরকে কোন পরামর্শ দিয়েছেন? তার পরামর্শ কাজে লাগানো কীভাবে আমাদেরকে যিহোবার অনুমোদন লাভ করতে সাহায্য করবে?
৩, ৪. (ক) পিতর কোন বিস্ময়সূচক উক্তি করেছিলেন আর তিনি কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন? (খ) আমরা কোন তিনটে বিষয় বিবেচনা করব?
৩ শয়তানের জগতের বিলীন হয়ে যাওয়া সম্বন্ধে উল্লেখ করার পর পিতর বলেছিলেন: “পবিত্র আচার ব্যবহার ও ঈশ্বরের সেবার্থে কাজে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত!” (২ পিতর ৩:১১, ১২) স্পষ্টতই, তিনি কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলেন না বরং এক বিবৃতি, এক বিস্ময়সূচক উক্তি উত্থাপন করেছিলেন। পিতর জানতেন যে, একমাত্র যারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করে এবং ঈশ্বরীয় গুণাবলি প্রদর্শন করে, তারা আসন্ন ‘প্রতিশোধের দিনে’ রক্ষা পাবে। (যিশা. ৬১:২) তাই, প্রেরিত আরও বলেছিলেন: “অতএব, প্রিয়তমেরা, তোমরা এ সকল অগ্রে জানিয়া সাবধান থাক, পাছে [ভাক্ত গুরুদের সঙ্গে] ধর্ম্মহীনদের ভ্রান্তিতে আকর্ষিত হইয়া নিজ স্থিরতা হইতে ভ্রষ্ট হও।”—২ পিতর ৩:১৭.
৪ যারা ‘অগ্রে জানিয়াছিল,’ তাদের মধ্যে একজন হওয়ায় পিতর জানতেন যে, শেষকালে খ্রিস্টানদেরকে তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য বিশেষভাবে সাবধান থাকতে হবে। কেন সাবধান থাকতে হবে, তা পরে প্রেরিত যোহন স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি স্বর্গ থেকে শয়তানের বহিষ্কার এবং সেই ব্যক্তিদের প্রতি তার ‘অতিশয় রাগ’ সম্বন্ধে দর্শন লাভ করেছিলেন, “যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে।” (প্রকা. ১২:৯, ১২, ১৭) ঈশ্বরের অনুগত অভিষিক্ত দাসেরা ও সেইসঙ্গে বিশ্বস্ত “আরও মেষ” সহযোগীরা জয়ী হবেই। (যোহন ১০:১৬) কিন্তু, আলাদা আলাদা ব্যক্তি হিসেবে আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা কি আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখব? এক্ষেত্রে আমরা সাহায্য লাভ করব, যদি আমরা (১) ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তোলার, (২) নৈতিকভাবে এবং আধ্যাত্মিকভাবে নিষ্কলঙ্ক ও নির্দোষ থাকার এবং (৩) পরীক্ষাগুলো সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা করি। আসুন আমরা এই তিনটে বিষয় বিবেচনা করে দেখি।
ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করুন
৫, ৬. আমাদের কোন গুণাবলি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত আর কেন এর জন্য “যত্ন” বা আন্তরিক প্রচেষ্টা করা প্রয়োজন?
৫ পিতর তার দ্বিতীয় চিঠির শুরুর দিকে লিখেছিলেন: “তোমরা সম্পূর্ণ যত্ন প্রয়োগ করিয়া আপনাদের বিশ্বাসে সদ্গুণ, ও সদ্গুণে জ্ঞান, ও জ্ঞানে জিতেন্দ্রিয়তা, ও জিতেন্দ্রিয়তায় ধৈর্য্য, ও ধৈর্য্যে ভক্তি, ও ভক্তিতে ভ্রাতৃস্নেহ, ও ভ্রাতৃস্নেহে প্রেম যোগাও। কেননা এই সমস্ত যদি তোমাদিগেতে থাকে ও উপচিয়া পড়ে, তবে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের তত্ত্বজ্ঞান সম্বন্ধে তোমাদিগকে অলস কি ফলহীন থাকিতে দিবে না।”—২ পিতর ১:৫-৮.
৬ এটা ঠিক যে, এমন কাজগুলোতে অংশ নেওয়ার জন্য “যত্ন” বা আন্তরিক প্রচেষ্টা করা প্রয়োজন, যেগুলো আমাদের ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, সমস্ত খ্রিস্টীয় সভায় যোগদান করার, প্রতিদিন বাইবেল পড়ার এবং এক উত্তম ব্যক্তিগত অধ্যয়ন কার্যক্রম বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন। আর এক নিয়মিত, উপভোগ্য এবং অর্থপূর্ণ পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা ও সেইসঙ্গে উত্তম পরিকল্পনা প্রয়োজন। কিন্তু, একবার যখন আমরা এক উত্তম তালিকার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাই, তখন গঠনমূলক অভ্যাসগুলো আরও সহজ হয়ে ওঠে—বিশেষভাবে যখন আমরা এর উপকারগুলো লাভ করি।
৭, ৮. (ক) পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা সম্বন্ধে কেউ কেউ কী মন্তব্য করেছে? (খ) আপনার পারিবারিক উপাসনা থেকে আপনি কীভাবে উপকৃত হচ্ছেন?
৭ পারিবারিক উপাসনার ব্যবস্থা সম্বন্ধে একজন বোন লেখেন: “এর মাধ্যমে আমরা অনেক বিষয় সম্বন্ধে শিখতে পারি।” আরেকজন বলেন: “সত্যি বলতে কী, আমি চাইনি যেন বই অধ্যয়ন বন্ধ হয়ে যাক। এটা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় সভা। কিন্তু, এখন অর্থাৎ পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যা শুরু করার পর আমি বুঝতে পারছি যে, যিহোবা জানেন, আমাদের কী প্রয়োজন এবং কখন প্রয়োজন।” পরিবারের একজন মস্তক বলেন: “পারিবারিক উপাসনা আমাদের প্রচুর সাহায্য করে। এক দম্পতি হিসেবে, আমাদের নির্দিষ্ট প্রয়োজনগুলোর উপযোগী এক সভা থাকা সত্যিই দারুণ! আমরা দুজনেই মনে করি যে, পবিত্র আত্মার ফল প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে আমরা উন্নতি করছি আর আমরা আমাদের পরিচর্যায় আগের চেয়ে আরও বেশি আনন্দ পাচ্ছি।” আরেকটা পরিবারের মস্তক বলেন: “ছেলে-মেয়েরা গবেষণা করছে এবং অনেক কিছু শিখছে—আর তারা তা উপভোগ করে। এই ব্যবস্থা আমাদেরকে এই বিষয়ে আরও বেশি আস্থাশীল করে তুলেছে যে, যিহোবা আমাদের উদ্বিগ্নতা সম্বন্ধে জানেন এবং আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন।” এই মন্তব্যগুলো কি এই অপূর্ব আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা সম্বন্ধে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে?
৮ ছোটোখাটো বিষয়গুলোকে আপনার পারিবারিক উপাসনায় বাধা সৃষ্টি করতে দেবেন না। বিবাহিত এক দম্পতি বলেছিলেন: “গত চার সপ্তাহ ধরে প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমাদের পরিবারে এমন কিছু না কিছু ঘটেছে, যা আমাদের অধ্যয়ন করাকে প্রায় বন্ধ করে দিতে যাচ্ছিল কিন্তু আমরা সেগুলোকে বাধা হতে দিইনি।” অবশ্য, কখনো কখনো আপনার তালিকাকে হয়তো সমন্বয় করতে হবে। তা সত্ত্বেও, আপনার পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যাকে—এমনকী এক সপ্তাহের জন্যও—বাদ না দেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন!
৯. কীভাবে যিহোবা যিরমিয়কে টিকিয়ে রেখেছিলেন এবং তার উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৯ ভাববাদী যিরমিয় আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন। যিহোবার কাছ থেকে তিনি যে-আধ্যাত্মিক খাদ্য লাভ করেছিলেন, তার সেটার প্রয়োজন ছিল এবং তিনি সেটার প্রতি গভীর উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন। সেই পুষ্টি তাকে অসংবেদনশীল লোকেদের কাছে ধৈর্য ধরে প্রচার করতে সমর্থ করেছিল। “সদাপ্রভুর বাক্য . . . যেন দাহকারী অগ্নি অস্থিমধ্যে রুদ্ধ হয়,” তিনি বলেছিলেন। (যির. ২০:৮, ৯) এ ছাড়া, এটা তাকে সেই কঠিন সময়গুলো সহ্য করতেও সাহায্য করেছিল, যা যিরূশালেমের ধ্বংসের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। বর্তমানে, আমাদের কাছে ঈশ্বরের সম্পূর্ণ লিখিত বাক্য রয়েছে। আমরা যখন সেটি অধ্যবসায়ের সঙ্গে অধ্যয়ন করি এবং বিভিন্ন বিষয়ে ঈশ্বরের মতো দৃষ্টিভঙ্গি রাখি, তখন যিরমিয়ের মতো আমরাও আনন্দের সঙ্গে পরিচর্যা চালিয়ে যেতে, পরীক্ষার মধ্যেও বিশ্বস্ত থাকতে এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে শুচি থাকতে সমর্থ হব।—যাকোব ৫:১০.
“নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ” থাকুন
১০, ১১. “নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ” থাকার জন্য কেন আমাদের যথাসাধ্য করতে হবে এবং এর জন্য আমাদের কী করা প্রয়োজন?
১০ খ্রিস্টান হিসেবে আমরা জানি যে, আমরা শেষকালে বাস করছি। তাই, জগৎ যে ঘৃণা, যৌন অনৈতিকতা এবং দৌরাত্ম্যের মতো বিষয়গুলোর দ্বারা ছেয়ে গিয়েছে—যেগুলো ঈশ্বর অত্যন্ত ঘৃণা করেন—তাতে আমরা অবাক হই না। শয়তানের কৌশল সম্বন্ধে এভাবে উপসংহার করা যেতে পারে: ‘ঈশ্বরের দাসদের ভয় দেখানো না গেলেও সম্ভবত তাদেরকে কলুষিত করা যেতে পারে।’ (প্রকা. ২:১৩, ১৪) তাই, পিতরের এই প্রেমময় উপদেশের প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে হবে: “যত্ন কর, যেন [ঈশ্বরের] কাছে তোমাদিগকে নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়!”—২ পিতর ৩:১৪.
১১ এখানে পিতর “যত্ন কর” বা যথাসাধ্য করতে বলার দ্বারা তার আগের পরামর্শের পুনরাবৃত্তি করেছেন। স্পষ্টতই, যিহোবা—যিনি পিতরকে এই কথাগুলো লিখতে অনুপ্রাণিত করেছেন—জানেন যে, “নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ” অর্থাৎ শয়তানের জগতের নোংরা বিষয়গুলো থেকে অকলুষিত থাকার জন্য আমাদের প্রাণপণ করতে হবে। প্রাণপণ করার অন্তর্ভুক্ত, মন্দ কামনাগুলোর কাছে নতিস্বীকার করা থেকে আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করা। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৪:২৩; যাকোব ১:১৪, ১৫.) এ ছাড়া, এর অন্তর্ভুক্ত সেই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও দৃঢ় থাকা, যারা আমাদের খ্রিস্টীয় জীবনযাপন দেখে আশ্চর্য হয় এবং যারা “[আমাদিগকে] নিন্দা করে।”—১ পিতর ৪:৪.
১২. লূক ১১:১৩ পদে আমরা কোন আশ্বাস পাই?
১২ আমাদের অসিদ্ধতার কারণে, যা সঠিক তা করা কঠিন। (রোমীয় ৭:২১-২৫) একমাত্র তখনই আমরা সফল হওয়ার আশা রাখতে পারি, যদি আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করি, যিনি উদারভাবে সেই ব্যক্তিদের পবিত্র আত্মা দান করেন, যারা আন্তরিকভাবে তাঁর কাছে যাচ্ঞা করে। (লূক ১১:১৩) ফলে, এই আত্মা আমাদের মধ্যে সেই গুণাবলি গড়ে তোলে, যেগুলো ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার জন্য প্রয়োজন আর এই গুণাবলি আমাদেরকে শুধু জীবনের প্রলোভনগুলোর সঙ্গেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পরীক্ষাগুলো মোকাবিলা করতেও সাহায্য করে, যেগুলো হয়তো যিহোবার দিন যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, ততই বৃদ্ধি পাবে।
পরীক্ষাগুলো যেন আপনাকে শক্তিশালী করে
১৩. আমাদের জীবনে যখন বিভিন্ন পরীক্ষা আসে, তখন কী আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে?
১৩ আমরা যতদিন এই পুরোনো বিধিব্যবস্থার মধ্যে বাস করব, ততদিন বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা আসবেই। কিন্তু, হতাশ হওয়ার পরিবর্তে, পরীক্ষাগুলোকে ঈশ্বরের প্রতি আপনার প্রেম প্রমাণ করার ও সেইসঙ্গে তাঁর এবং তাঁর বাক্যের ওপর আপনার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার এক সুযোগ হিসেবে দেখুন না কেন? শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্ব্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও; জানিও, তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা ধৈর্য্য সাধন করে।” (যাকোব ১:২-৪) এ ছাড়া, এও মনে রাখবেন যে, “প্রভু [ঈশ্বর] ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে . . . জানেন।”—২ পিতর ২:৯.
১৪. কীভাবে যোষেফের উদাহরণ আপনাকে উৎসাহিত করে?
১৪ যাকোবের পুত্র যোষেফের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যাকে তার নিজের ভাইয়েরা দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল। (আদি. ৩৭:২৩-২৮; ৪২:২১) সেই নিষ্ঠুর কাজের কারণে কি যোষেফ বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন? তার ওপর মন্দ বিষয় ঘটতে দেওয়ার কারণে কি তিনি ঈশ্বরের প্রতি তিক্তবিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন? ঈশ্বরের বাক্য স্পষ্টভাবে উত্তর দেয় যে, না! অধিকন্তু, সেখানেই যোষেফের পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়নি। পরবর্তী সময়ে, তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং তাকে কারাবন্দি করা হয়েছিল। কিন্তু, আবারও তিনি ঈশ্বরের প্রতি তার ভক্তির ক্ষেত্রে দৃঢ় ছিলেন। (আদি. ৩৯:৯-২১) এর পরিবর্তে, পরীক্ষাগুলোর দ্বারা তিনি নিজেকে শক্তিশালী করেছিলেন আর এই কারণে প্রচুর পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
১৫. নয়মীর উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৫ এটা ঠিক যে, পরীক্ষাগুলো আমাদের দুঃখিত করতে অথবা এমনকী হতাশ করতে পারে। সম্ভবত, মাঝে মাঝে যোষেফও এইরকম বোধ করেছিলেন। নিশ্চিতভাবেই, ঈশ্বরের অন্যান্য বিশ্বস্ত দাসও একইরকম বোধ করেছিল। নয়মীর কথা বিবেচনা করুন, যিনি তার স্বামী ও দুই পুত্র হারিয়েছিলেন। “আমাকে নয়মী [মনোরমা] বলিও না,” তিনি বলেছিলেন। “বরং মারা [তিক্তা] বলিয়া ডাক, কেননা সর্ব্বশক্তিমান আমার প্রতি অতিশয় তিক্ত ব্যবহার করিয়াছেন।” (রূৎ. ১:২০, ২১) নয়মীর প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক ও বোধগম্য ছিল। কিন্তু, যোষেফের মতো তিনিও তার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেননি এবং ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হতে দেননি কিংবা বিশ্বস্ত পথ পরিত্যাগ করেননি। ফল স্বরূপ, যিহোবা সেই চমৎকার নারীকে পুরস্কৃত করেছিলেন। (রূৎ. ৪:১৩-১৭, ২২) অধিকন্তু, আসন্ন পার্থিব পরমদেশে তিনি শয়তান ও তার দুষ্ট জগতের কারণে ঘটিত সমস্ত ক্ষতি দূর করে দেবেন। “পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না।”—যিশা. ৬৫:১৭.
১৬. প্রার্থনার প্রতি আমাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত এবং কেন?
১৬ আমাদের ওপর যে-পরীক্ষাগুলোই আসুক না কেন, ঈশ্বরের প্রেম আমাদের টিকিয়ে রাখে। (পড়ুন, রোমীয় ৮:৩৫-৩৯.) যদিও শয়তান আমাদেরকে নিরুৎসাহিত করে দেওয়ার ব্যাপারে তার প্রচেষ্টা বন্ধ করবে না কিন্তু আমরা যদি “সংযমশীল” ও “প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ” থাকি, তাহলে সে ব্যর্থ হবে। (১ পিতর ৪:৭) যিশু বলেছিলেন: “কিন্তু তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুত্ত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে, শক্তিমান্ হও।” (লূক ২১:৩৬) যিশু এখানে ‘প্রার্থনার’ জন্য যে-শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করাকে বোঝায়। আমাদেরকে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করার উপদেশ দেওয়ার দ্বারা যিশু এই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন যে, তাঁর ও তাঁর পিতার সামনে আমাদের অবস্থানকে হালকা করে দেখার সময় এখন নয়। একমাত্র যাদের অনুমোদিত অবস্থান রয়েছে, তাদেরই যিহোবার দিনে রক্ষা পাওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
যিহোবার সেবায় সক্রিয় থাকুন
১৭. আপনার এলাকায় সাক্ষদান করা যদি কঠিন হয়ে থাকে, তাহলে প্রাচীনকালের ভাববাদীদের উত্তম উদাহরণ থেকে আপনি কীভাবে উপকার লাভ করতে পারেন?
১৭ আধ্যাত্মিক কাজকর্মে অংশ নেওয়া আমাদের সতেজ করে। এটা আমাদের পিতরের এই কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়: “পবিত্র আচার ব্যবহার ও ঈশ্বরের সেবার্থে কাজে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত!” (২ পিতর ৩:১১) এর মধ্যে সবচেয়ে প্রধান কাজ হচ্ছে, রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করা। (মথি ২৪:১৪) এটা ঠিক যে, সম্ভবত উদাসীনতা অথবা বিরোধিতা কিংবা লোকেরা কেবল রোজকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডুবে থাকার কারণে কিছু এলাকায় প্রচার করা হয়তো কঠিন। যিহোবার প্রাচীনকালের দাসেরাও একইরকম মনোভাবের সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু, তারা কখনো হাল ছেড়ে দেয়নি বরং তাদের ঈশ্বরদত্ত বার্তা নিয়ে বার বার লোকেদের কাছে গিয়েছিল। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ৩৬:১৫, ১৬; যির. ৭:২৪-২৬) কী তাদেরকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছিল? তারা তাদের কার্যভারকে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী দেখেছিল, জগতের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী নয়। এ ছাড়া, তারা ঈশ্বরের নাম বহন করাকে বিরাট সম্মানের বিষয় হিসেবে গণ্য করেছিল।—যির. ১৫:১৬.
১৮. রাজ্যের প্রচার কাজ ভবিষ্যতে ঈশ্বরের নামকে মহিমান্বিত করার ওপর কোন প্রভাব ফেলবে?
১৮ আমাদেরও যিহোবার নাম এবং উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এই বিষয়টা চিন্তা করুন: আমাদের প্রচার কাজের ফল স্বরূপ ঈশ্বরের শত্রুরা সেই সময়ে এই অজুহাত দেখাতে পারবে না যে, তাদেরকে কখনো তাঁর ও তাঁর উদ্দেশ্যের বিষয়ে বলা হয়নি, যখন যিহোবা তাঁর মহাদিন নিয়ে আসবেন। সত্যিই, প্রাচীনকালের ফরৌণের মতো, তারা জানতে পারবে যে, যিহোবাই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। (যাত্রা. ৮:১, ২০; ১৪:২৫) একইসময়ে, যিহোবা এই বিষয়টা পুরোপুরি স্পষ্ট করার মাধ্যমে তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের সম্মানিত করবেন যে, তারা বাস্তবিকই তাঁর প্রতিনিধি ছিল।—পড়ুন, যিহিষ্কেল ২:৫; ৩৩:৩৩.
১৯. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা যিহোবার দীর্ঘসহিষ্ণুতার সদ্ব্যবহার করতে চাই?
১৯ পিতর তার দ্বিতীয় চিঠির শেষের দিকে সহবিশ্বাসীদের লিখেছিলেন: “আমাদের প্রভুর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে পরিত্রাণ জ্ঞান কর।” (২ পিতর ৩:১৫) হ্যাঁ, আসুন আমরা যিহোবার দীর্ঘসহিষ্ণুতার সদ্ব্যবহার করি। কীভাবে? তাঁকে খুশি করে এমন গুণাবলি গড়ে তুলে, “নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ” থেকে, পরীক্ষাগুলো সম্বন্ধে সঠিক মনোভাব বজায় রেখে এবং রাজ্যের সেবায় ব্যস্ত থেকে। তা করার মাধ্যমে আমরা “নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর” সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অফুরন্ত আশীর্বাদ লাভ করতে পারব।—২ পিতর ৩:১৩.
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কীভাবে আমরা ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি?
• কীভাবে আমরা “নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ” থাকতে পারি?
• যোষেফ ও নয়মীর উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
• কেন প্রচার কাজে অংশ নিতে পারা এক বিরাট সুযোগ?
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
স্বামীরা, কী আপনাদেরকে ও আপনাদের পরিবারকে ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে সাহায্য করবে?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
পরীক্ষার সঙ্গে যোষেফ যেভাবে মোকাবিলা করেছিলেন, সেটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?