আপনি কি যিহোবার দিনের জন্য প্রস্তুত?
“সদাপ্রভুর মহাদিন নিকটবর্ত্তী, তাহা নিকটবর্ত্তী, অতি শীঘ্র আসিতেছে।”—সফনিয় ১:১৪.
১. শাস্ত্রপদগুলি কিভাবে যিহোবার দিনকে বর্ণনা করে?
যিহোবার “মহৎ ও ভয়ঙ্কর” দিন শীঘ্রই এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার উপর নেমে আসবে। শাস্ত্রপদগুলি যিহোবার দিনকে একটি যুদ্ধ, অন্ধকার, প্রচণ্ড ক্রোধ, চরম দুর্দশা, নিদারুণ যন্ত্রণা, বিপদসংকেত এবং উচ্ছিন্নদশা হিসাবে বর্ণনা করেছে। তবুও রক্ষাপ্রাপ্তেরা থাকবে কারণ “যে কেহ সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকিবে সেই রক্ষা পাইবে।” (যোয়েল ২:৩০-৩২; আমোষ ৫:১৮-২০) হ্যাঁ, তখন ঈশ্বর তাঁর শত্রুদের ধ্বংস করে দেবেন এবং তাঁর লোকেদের রক্ষা করবেন।
২. কেন যিহোবার দিন সম্বন্ধে আমাদের এক তৎপরতার মনোভাব থাকা উচিত?
২ ঈশ্বরের ভাববাদীরা যিহোবার দিনের সাথে এক তৎপরতার মনোভাবকে যুক্ত করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, সফনিয় লিখেছিলেন: “সদাপ্রভুর মহাদিন নিকটবর্ত্তী, তাহা নিকটবর্ত্তী, অতি শীঘ্র আসিতেছে।” (সফনিয় ১:১৪) বর্তমানে এই অবস্থা আরও বেশি জরুরী কারণ ঈশ্বরের প্রধান সংহারক, রাজা যীশু খ্রীষ্ট, ‘তাঁহার খড়্গ কটিদেশে বন্ধন করে, সত্যের ও ধার্ম্মিকতাযুক্ত নম্রতার পক্ষে’ আসতে চলেছেন। (গীতসংহিতা ৪৫:৩, ৪) আপনি কি সেই দিনের জন্য প্রস্তুত?
তাদের মহৎ প্রত্যাশাগুলি ছিল
৩. কিছু থিষলনীকীয় খ্রীষ্টানদের কোন্ প্রত্যাশাগুলি ছিল এবং কোন্ দুটি কারণের প্রতি তারা ভুল ছিল?
৩ যিহোবার দিনের বিষয়ে অনেকের অপরিপূর্ণ প্রত্যাশাগুলি ছিল। থিষলনীকীয়ের কিছু প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা বলেছিল, ‘যিহোবার দিন উপস্থিত!’ (২ থিষলনীকীয় ২:২) কিন্তু দুটি মূল কারণ ছিল যে কেন সেই সময় এটি খুব নিকটে ছিল না। এইগুলির মধ্যে একটি উল্লেখ করে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “লোকে যখন বলে, শান্তি ও অভয়, তখনই তাহাদের কাছে . . . আকস্মিক বিনাশ উপস্থিত হয়।” (১ থিষলনীকীয় ৫:১-৬) এই ‘শেষকালে’ আমরা ওই সমস্ত বাক্যের পরিপূর্ণতার প্রতীক্ষায় আছি। (দানিয়েল ১২:৪) এছাড়াও, থিষলনীকীয়বাসীদের আরেকটি প্রমাণের অভাব ছিল যা যিহোবার মহাদিন উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল। কারণ পৌল তাদের বলেছিলেন: “প্রথমে সেই ধর্ম্ম-ভ্রষ্টতা উপস্থিত হইবে।” (২ থিষলনীকীয় ২:৩) যখন পৌল এই কথাগুলি লিখেছিলেন (প্রায় সা.শ. ৫১ সালে), তখনও সত্য খ্রীষ্টতত্ত্ব থেকে “ধর্ম্ম-ভ্রষ্টতা” সম্পূর্ণরূপে বৃদ্ধি পায়নি। বর্তমানে, খ্রীষ্টীয় জগতে আমরা এটিকে পূর্ণাকারে দেখতে পাই। কিন্তু, তাদের অপরিপূর্ণ প্রত্যাশাগুলি থাকা সত্ত্বেও, থিষলনীকীয়ের সেই বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের যারা মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরকে সেবা করে চলেছিলেন পরিশেষে স্বর্গীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ২:১০) যিহোবার দিনের জন্য প্রতীক্ষারত আমরাও পুরস্কৃত হব যদি আমরা বিশ্বস্ত থাকি।
৪. (ক) ২ থিষলনীকীয় ২:১, ২ পদে যিহোবার দিনকে কিসের সাথে যুক্ত করা হয়েছে? (খ) খ্রীষ্টের পুনরাগমন এবং সম্পর্কিত বিষয়গুলি সম্বন্ধে তথা-কথিত গির্জার ফাদারদের কোন্ দৃষ্টিভঙ্গিগুলি ছিল?
৪ বাইবেল “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] মহাদিন” এর সাথে “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের আগমন”-কে সংযুক্ত করে। (২ থিষলনীকীয় ২:১, ২) তথা-কথিত গির্জার ফাদারদের খ্রীষ্টের পুনরাগমন, তাঁর উপস্থিতি এবং তাঁর হাজার বছরের রাজত্ব সম্বন্ধে বিভিন্ন ধারণা ছিল। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৪) সা.শ. দ্বিতীয় শতাব্দীতে হিয়রাপলির পাপিয়াস, খ্রীষ্টের সহস্র বছর রাজত্বের সময়ে পৃথিবীর বিস্ময়কর উৎপাদন ক্ষমতা সম্বন্ধে প্রত্যাশা পোষণ করেছিলেন। জাস্টিন মারটায়ার বারংবার যীশুর উপস্থিতির কথা বলেছিলেন এবং পুনঃস্থাপিত যিরূশালেম তাঁর রাজ্যের সিংহাসন হবে বলে প্রত্যাশা করেছিলেন। লায়ন্সের ইরিনিয়াস শিক্ষা দিয়েছিলেন যে রোমীয় সাম্রাজ্যের ধ্বংসের পর, যীশু দৃশ্যত উপস্থিত হবেন, শয়তানকে বাঁধবেন এবং পার্থিব যিরূশালেমে রাজত্ব করবেন।
৫. খ্রীষ্টের “দ্বিতীয় আবির্ভাব” এবং তাঁর সহস্র বছর রাজত্ব সম্বন্ধে কিছু পণ্ডিতেরা কী বলেছেন?
৫ ইতিহাসবেত্তা ফিলিপ শেফ মন্তব্য করেছিলেন যে সা.শ. ৩২৫ সালে নিসাইয়ের কাউন্সিলের পূর্ববর্তী সময়ে “সাধারণ পুনরুত্থান এবং বিচারের আগে, হাজার বছরের জন্য পুনরুত্থিত সাধুদের সাথে পৃথিবীতে মহিমান্বিত অবস্থায় খ্রীষ্টের দৃশ্যত রাজত্ব সম্বন্ধে বিশ্বাস ছিল সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়।” জেমস্ হ্যাসটিং দ্বারা সম্পাদিত বাইবেলের এক অভিধান (ইংরাজি) বর্ণনা করে: “টারটুলিয়ান, ইরিনিয়াস এবং হিপালিটেস [যীশু খ্রীষ্টের] আসন্ন আবির্ভাবের জন্য তখনও অপেক্ষা করেছিলেন; কিন্তু আলেকজান্দ্রীয় ফাদারদের মত অনুসারে আমরা চিন্তার একটি নতুন বৃত্তে প্রবেশ করি। . . . সংগ্রামরত গির্জার সক্রিয় সদস্যদের সময়কালের সাথে আগস্টাইনের সহস্র বছরের শনাক্তিকরণে, দ্বিতীয় আবির্ভাবকে সুদূর ভবিষ্যতের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছিল।”
যিহোবার দিন এবং যীশুর উপস্থিতি
৬. কেন আমাদের এই উপসংহারে আসা উচিত নয় যে যিহোবার দিন বহু দূরে আছে?
৬ ভুল ধারণাগুলি হতাশার পথে পরিচালিত করেছে, কিন্তু আমরা যেন এটি চিন্তা না করি যে যিহোবার দিন অনেক দূরে। যীশুর অদৃশ্য উপস্থিতি যার সাথে এটি শাস্ত্রীয়ভাবে সংযুক্ত, তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। যিহোবার সাক্ষীদের প্রহরীদুর্গ এবং সম্পর্কিত প্রকাশনাদি প্রায়ই শাস্ত্রীয় প্রমাণ সরবরাহ করেছে যে যীশুর উপস্থিতি ১৯১৪ সালে শুরু হয়েছিল।a তাহলে, তাঁর উপস্থিতি সম্বন্ধে যীশু কী বলেছিলেন?
৭. (ক) যীশুর উপস্থিতি এবং বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার চিহ্নের কিছু বৈশিষ্ট্যগুলি কী? (খ) কিভাবে আমরা রক্ষা পেতে পারি?
৭ তাঁর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগেই যীশুর উপস্থিতি আলোচনার একটি প্রসঙ্গ হয়ে উঠেছিল। যিরূশালেম মন্দিরের ধ্বংস সম্বন্ধে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী শোনার পর, তাঁর প্রেরিতেরা অর্থাৎ পিতর, যাকোব, যোহন এবং আন্দ্রিয় জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “এই সকল ঘটনা কখন্ হইবে? আর আপনার আগমনের [“উপস্থিতির,” NW] এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” (মথি ২৪:১-৩; মার্ক ১৩:৩, ৪) উত্তরে যীশু তাঁর উপস্থিতি ও এই বিধিব্যবস্থার শেষের “চিহ্ন” রূপে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প এবং অন্যান্য লক্ষণগুলি সম্বন্ধে ভাববাণী করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (মথি ২৪:১৩) আমরা রক্ষা পাব যদি আমরা বিশ্বস্ততা সহকারে আমাদের বর্তমান জীবনের শেষ অথবা এই মন্দ বিধিব্যবস্থার শেষ পর্যন্ত ধৈর্য বজায় রাখি।
৮. যিহূদী বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার আগে, কী সম্পন্ন করতে হয়েছিল এবং আজকে এই সম্বন্ধে কী করা হচ্ছে?
৮ শেষ আসার আগে, যীশুর উপস্থিতির একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণ হবে। এই সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন: “আর সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (মথি ২৪:১৪) সা.শ. ৭০ সালে রোমীয়দের দ্বারা যিরূশালেম ধ্বংস এবং যিহূদী বিধিব্যবস্থার শেষ আসার আগে, পৌল বলতে পেরেছিলেন যে সুসমাচার “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচারিত হইয়াছে।” (কলসীয় ১:২৩) কিন্তু, বর্তমানে “সমুদয় জগতে” যিহোবার সাক্ষীদের দ্বারা আরও অনেক বেশি ব্যাপক প্রচার কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। গত কয়েক বছরে, পূর্ব ইউরোপে এক বিরাট সাক্ষ্যদানের জন্য ঈশ্বর পথ খুলে দিয়েছেন। মুদ্রণ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধাগুলি সহ পৃথিবীব্যাপী যিহোবার সংগঠন বর্ধিত কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, এমনকি “অপ্রচারিত অঞ্চলেও।” (রোমীয় ১৫:২২, ২৩; NW) শেষ আসার আগে আপনার হৃদয় কি আপনাকে সাক্ষ্যদানে যথাসাধ্য করতে অনুপ্রাণিত করে? যদি তাই হয়, তাহলে ঈশ্বর আপনাকে অগ্রবর্তী কাজে পুরস্কারজনক অংশ লাভে শক্তিশালী করতে পারেন।—ফিলিপীয় ৪:১৩; ২ তীমথিয় ৪:১৭.
৯. যীশু কোন্ বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন যেমন মথি ২৪:৩৬ পদে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে?
৯ ভাববাণীকৃত রাজ্যের প্রচার কাজ এবং যীশুর উপস্থিতির অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি ঠিক এখনই পরিপূর্ণ হচ্ছে। অতএব, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ সন্নিকট। সত্যই, যীশু বলেছিলেন: “কিন্তু সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না, স্বর্গের দূতগণও জানেন না, পুত্ত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন।” (মথি ২৪:৪-১৪, ৩৬) কিন্তু যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের “সেই দিনের ও সেই দণ্ডের” জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করতে পারে।
তারা প্রস্তুত ছিল
১০. কিভাবে আমরা জানতে পারি যে আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকা সম্ভব?
১০ যিহোবার মহাদিনে রক্ষা পেতে হলে, আমাদের অবশ্যই আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকতে এবং সত্য উপাসনার জন্য দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। (১ করিন্থীয় ১৬:১৩) আমরা জানি যে সেইরকম ধৈর্য রক্ষা করা সম্ভব, যেহেতু একটি ধার্মিক পরিবার তা করেছিল এবং সেই জলপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছিল যা সা.শ.পূ. ২৩৭০ সালে দুষ্ট মানবজাতিকে ধ্বংস করে। তাঁর উপস্থিতির সাথে সেই যুগকে তুলনা করে, যীশু বলেছিলেন: “নোহের সময়ে যেরূপ হইয়াছিল, মনুষ্যপুত্ত্রের আগমনও [“উপস্থিতি,” NW] তদ্রূপ হইবে। কারণ জলপ্লাবনের সেই পূর্ব্ববর্ত্তী কালে, জাহাজে নোহের প্রবেশ দিন পর্য্যন্ত, লোকে যেমন ভোজন ও পান করিত, বিবাহ করিত ও বিবাহিতা হইত, এবং বুঝিতে পারিল না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল; তদ্রূপ মনুষ্যপুত্ত্রের আগমন হইবে।”—মথি ২৪:৩৭-৩৯.
১১. তার দিনে দৌরাত্ম্য বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও নোহ কোন্ পথ অনুসরণ করেছিলেন?
১১ আমাদের মত নোহ এবং তার পরিবারও একটি দৌরাত্ম্যপূর্ণ জগতে বাস করত। অবাধ্য দূতরূপ “ঈশ্বরের পুত্ত্রেরা” মনুষ্যরূপ ধারণ করেছিল এবং স্ত্রীয়েদের গ্রহণ করেছিল, যাদের দ্বারা তারা কুখ্যাত নেফিলিমদের পিতা হয়েছিল—সেই সমস্ত পীড়নকারীরা নিঃসন্দেহে পরিস্থিতি অত্যধিক দৌরাত্ম্যপূর্ণ করে তুলেছিল। (আদিপুস্তক ৬:১, ২, ৪; ১ পিতর ৩:১৯, ২০) কিন্তু, বিশ্বাসে “নোহ ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন।” তিনি “তাৎকালিক লোকদের মধ্যে . . . সিদ্ধ লোক ছিলেন”—তার দিনের দুষ্ট বংশের মধ্যে। (আদিপুস্তক ৬:৯-১১) ঈশ্বরের উপর প্রার্থনাপূর্ণ নির্ভরতা সহকারে, এই দৌরাত্ম্যপূর্ণ এবং দুষ্ট জগতে আমরাও একই কাজ করতে পারি যখন আমরা যিহোবার দিনের জন্য প্রতীক্ষায় থাকি।
১২. (ক) জাহাজ নির্মাণ ব্যতীত নোহ কোন্ কাজ করেছিলেন? (খ) নোহের প্রচারের প্রতি লোকেদের কিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিল এবং তাদের কী পরিণাম হয়েছিল?
১২ জলপ্লাবনের সময় জীবন সংরক্ষণের জন্য একটি জাহাজের নির্মাণকর্তা হিসাবে নোহ সুপরিচিত। এছাড়াও তিনি ছিলেন “ধার্ম্মিকতার প্রচারক,” কিন্তু তার সমকালীন লোকেরা তার ঈশ্বর-দত্ত বার্তা “বুঝিতে পারিল না।” তারা ভোজন ও পান করেছিল, বিবাহ করেছিল, পরিবার প্রতিপালন করেছিল এবং জীবনের স্বাভাবিক বিষয়গুলি করে চলেছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না বন্যা তাদের সকলকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। (২ পিতর ২:৫; আদিপুস্তক ৬:১৪) তারা ন্যায়পরায়ণ বাক্য এবং আচরণ সম্বন্ধে শুনতে চায়নি, এমনকি ঠিক যেমন যিহোবার সাক্ষীরা “ঈশ্বরের প্রতি মনপরিবর্ত্তন,” খ্রীষ্টে বিশ্বাস, ধার্মিকতা এবং “আগামী বিচারের বিষয়” সম্বন্ধে যা বলে, তার প্রতি আজকের দুষ্ট বংশ তার কান বন্ধ করে রাখে। (প্রেরিত ২০:২০, ২১; ২৪:২৪, ২৫) যখন নোহ ঈশ্বরের বার্তা ঘোষণা করছিল তখন পৃথিবীতে কত লোক বাস করত তার কোন প্রাপ্তিসাধ্য নথি নেই। কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত, সা.শ.পূ. ২৩৭০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রচণ্ডভাবে হ্রাস পেয়েছিল! জলপ্লাবন দুষ্টতাকে নির্মূল করেছিল, শুধুমাত্র তাদেরই আঘাত করেনি যারা ঈশ্বরের সেই কাজের জন্য প্রস্তুত ছিল—নোহ এবং তার পরিবারের অন্যান্য সাতজনকে।—আদিপুস্তক ৭:১৯-২৩; ২ পিতর ৩:৫, ৬.
১৩. কোন্ বিচারসংক্রান্ত অনুশাসনের প্রতি নোহ সম্পূর্ণ প্রত্যয় রেখেছিলেন এবং এর সাথে সংগতি রেখে তিনি কিভাবে কাজ করেছিলেন?
১৩ ঈশ্বর নোহকে বন্যার সঠিক দিন এবং সময় সম্বন্ধে বহু বছর আগে থেকে সতর্ক করেননি। কিন্তু, যখন নোহের বয়স ৪৮০ বছর, যিহোবা এই অনুশাসন ঘোষণা করেছিলেন: “আমার আত্মা মনুষ্যদের মধ্যে নিত্য অধিষ্ঠান করিবেন না, তাহাদের বিপথগমনে তাহারা মাংসমাত্র; পরন্তু তাহাদের সময় এক শত বিংশতি বৎসর হইবে।” (আদিপুস্তক ৬:৩) নোহ এই ঐশিক বিচারসংক্রান্ত অনুশাসনের উপর সম্পূর্ণ প্রত্যয় রেখেছিলেন। ৫০০ বছরে পদার্পণ করার পর, তিনি “শেম, হাম ও যেফতের জন্ম দিলেন” এবং সেই সময়ের রীতি জানায় যে তার সন্তানেরা বিবাহ করার পূর্বে ৫০ থেকে ৬০ বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। বন্যার সময় সংক্ষরণের জন্য যখন নোহকে জাহাজ নির্মাণ করতে বলা হয়েছিল, সেই সন্তানেরা এবং তাদের স্ত্রীয়েরা এই প্রচেষ্টায় স্পষ্টতই তার সাথে সহযোগিতা করেছিল। “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” হিসাবে নোহের পরিচর্যা সম্ভবত জাহাজ নির্মাণের সাথে একই সময়ে চলেছিল, যা তাকে বন্যার আগের শেষ ৪০ থেকে ৫০ বছর ব্যস্ত রেখেছিল। (আদিপুস্তক ৫:৩২; ৬:১৩-২২) সেই সমস্ত বছরগুলিতে, তিনি এবং তার পরিবার বিশ্বাসে কাজ করেছিলেন। আসুন আমরাও বিশ্বাস প্রদর্শন করি যখন আমরা সুসমাচার প্রচার করছি এবং যিহোবার দিনের প্রতীক্ষায় আছি।—ইব্রীয় ১১:৭.
১৪. পরিশেষে যিহোবা নোহকে কী বলেছিলেন এবং কেন?
১৪ যতই জাহাজটির নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পথে এগিয়ে যায়, নোহ হয়ত চিন্তা করেছিলেন যে বন্যা আগতপ্রায়, যদিও তিনি জানতেন না যে ঠিক কখন তা ঘটবে। যিহোবা পরিশেষে তাকে বলেছিলেন: “সাত দিনের পর আমি পৃথিবীতে চল্লিশ দিবারাত্র বৃষ্টি” বর্ষণ করব। (আদিপুস্তক ৭:৪) এটি নোহ এবং তার পরিবারকে, বন্যা শুরু হওয়ার আগে জাহাজের মধ্যে সমস্ত প্রজাতির প্রাণী এবং তাদের নিজেদের প্রবেশ করতে যথেষ্ট সময় দিয়েছিল। আমাদের এই বিধিব্যবস্থার ধ্বংস শুরু হওয়ার দিন এবং সময় জানার প্রয়োজন নেই; আমাদের উপর পশুদের রক্ষার ভার দেওয়া হয়নি এবং সম্ভাব্য রক্ষাপ্রাপ্ত মানবেরা ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিক পরমদেশ, সেই রূপক জাহাজে ইতিমধ্যেই প্রবেশ করছে।
“জাগিয়া থাক”
১৫. (ক) মথি ২৪:৪০-৪৪ পদে প্রাপ্ত যীশুর বাক্যগুলিকে আপনি নিজের ভাষায় কিভাবে বর্ণনা করবেন? (খ) ঈশ্বরের প্রতিশোধ সম্পাদন করার জন্য যীশুর আগমনের সঠিক সময় জ্ঞাত না হওয়ার কোন্ প্রভাব রয়েছে?
১৫ তাঁর উপস্থিতির বিষয়ে যীশু বর্ণনা করেছিলেন: “তখন দুই জন ক্ষেত্রে থাকিবে, এক জনকে লওয়া যাইবে, এবং অন্য জনকে ছাড়িয়া যাওয়া হইবে। দুইটী স্ত্রীলোক যাঁতা পিষিবে, এক জনকে লওয়া যাইবে, এবং অন্য জনকে ছাড়িয়া যাওয়া হইবে। অতএব জাগিয়া থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না। কিন্তু ইহা জানিও, চোর কোন্ প্রহরে আসিবে, তাহা যদি গৃহকর্ত্তা জানিত, তবে জাগিয়া থাকিত, নিজ গৃহে সিঁধ কাটিতে দিত না। এইজন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।” (মথি ২৪:৪০-৪৪; লূক ১৭:৩৪, ৩৫) ঈশ্বরের প্রতিশোধ সম্পাদন করার জন্য যীশুর আসার সঠিক সময় জ্ঞাত না হওয়া, আমাদের সতর্ক হতে প্রণোদিত করে এবং আমরা যে নিঃস্বার্থ মনোভাব নিয়ে যিহোবাকে সেবা করি তা প্রমাণ করার জন্য আমাদের প্রত্যহ সুযোগ করে দেয়।
১৬. যে সমস্ত ব্যক্তিদের “ছাড়িয়া যাওয়া হইবে” এবং যাদের “লওয়া যাইবে” তাদের প্রতি কী ঘটবে?
১৬ যেসব ব্যক্তিদের দুষ্টের সাথে ধ্বংসে “ছাড়িয়া যাওয়া হইবে,” তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে সেই সমস্ত ব্যক্তিরা যারা একবার জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত হয়েছে, কিন্তু জীবনের স্বার্থপর পথে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। আমরা যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি যাদের “লওয়া যাইবে,” যারা যিহোবার কাছে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গীকৃত ও “বিশ্বস্ত এবং বুদ্ধিমান্ দাস” এর মাধ্যমে প্রদত্ত তাঁর আধ্যাত্মিক ব্যবস্থার জন্য প্রকৃতই কৃতজ্ঞ। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) শেষ পর্যন্ত, আসুন আমরা “প্রেম, যাহা শুচি হৃদয়, সৎসংবেদ ও অকল্পিত বিশ্বাস হইতে উৎপন্ন” তা সহকারে ঈশ্বরকে সেবা করি।—১ তীমথিয় ১:৫.
পবিত্র কাজ অপরিহার্য
১৭. (ক) ২ পিতর ৩:১০ পদে কী ভাববাণী করা হয়েছিল? (খ) কিছু আচার ব্যবহার এবং কাজ কী যে সম্বন্ধে ২ পিতর ৩:১১ পদে উৎসাহিত করা হয়েছে?
১৭ প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিন চোরের ন্যায় আসিবে; তখন আকাশমণ্ডল হূহূ শব্দ করিয়া উড়িয়া যাইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া বিলীন হইবে, এবং পৃথিবী ও তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল পুড়িয়া যাইবে।” (২ পিতর ৩:১০) রূপক স্বর্গ এবং পৃথিবী ঈশ্বরের জলন্ত ক্রোধের তাপে রক্ষা পাবে না। তাই পিতর আরও বলেছিলেন: “এইরূপে যখন এই সমস্তই বিলীন হইবে, তখন পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত!” (২ পিতর ৩:১১) এই সমস্ত ব্যবহার এবং কাজের মধ্যে রয়েছে খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকা, অন্যান্যদের প্রতি মঙ্গল করা এবং সুসমাচার প্রচার কাজে এক অর্থপূর্ণ অংশ থাকা।—মথি ২৪:১৪; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫; ১৩:১৬.
১৮. যদি জগতের সাথে আমরা এক সংযোগ গড়ে তুলছি, তাহলে আমাদের কী করা উচিত?
১৮ ‘পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তি’ এটি দাবি করে যে আমরা ‘সংসার হইতে নিজেদের নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা করি।’ (যাকোব ১:২৭) কিন্তু যদি আমরা এই জগতের সাথে এক সংযোগ গড়ে তুলি তাহলে কী? হয়ত আমরা অপরিচ্ছন্ন আমোদপ্রমোদ অন্বেষণ করা অথবা সংগীত ও গান যা এই জগতের ঈশ্বরবিহীন আত্মাকে উন্নীত করে, তা শোনার দ্বারা ঈশ্বরের সম্মুখে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে প্রলুব্ধ হয়েছি। (২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৮) যদি সেটাই বিষয় হয়, তাহলে আসুন আমরা প্রার্থনায় ঈশ্বরের সাহায্য চাই যেন আমরা জগতের সাথে শেষ হয়ে না যাই বরং মনুষ্যপুত্রের সামনে অনুমোদনযোগ্যভাবে দাঁড়িয়ে থাকি। (লূক ২১:৩৪-৩৬; ১ যোহন ২:১৫-১৭) যদি আমরা ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকরণ করে থাকি, তাহলে তাঁর সাথে একটি আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং বজায় রাখতে নিশ্চিতভাবে আমরা আমাদের যথাসাধ্য করতে চাইব আর এইভাবে যিহোবার মহৎ ও ভয়ংকর দিনের জন্য প্রস্তুত থাকব।
১৯. কেন রাজ্যের ঘোষণাকারীদের বৃহৎ একটি দল এই মন্দ বিধিব্যবস্থার শেষের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা করতে পারে?
১৯ ধার্মিক নোহ এবং তার পরিবার সেই বন্যার মধ্যে থেকে বেঁচেছিল যা পুরাতন জগৎকে ধ্বংস করেছিল। সা.শ. ৭০ সালে যিহূদী বিধিব্যবস্থার শেষ থেকে ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিরা রক্ষা পেয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত যোহন প্রায় সা.শ. ৯৬-৯৮ সালেও ঈশ্বরের পরিচর্যায় সক্রিয় ছিলেন, যখন তিনি প্রকাশিত বাক্যের পুস্তকটি, তার সুসমাচারের বিবরণ এবং তিনটি অনুপ্রাণিত পত্র লিখেছিলেন। সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে সেই সমস্ত হাজার হাজার ব্যক্তিরা যারা সত্য বিশ্বাসকে গ্রহণ করেছিল, সম্ভবত তাদের অনেকেই যিহূদী বিধিব্যবস্থার শেষ থেকে রক্ষা পেয়েছিল। (প্রেরিত ১:১৫; ২:৪১, ৪৭; ৪:৪) আজকে রাজ্য ঘোষণাকারীদের এক বৃহৎ দল বর্তমান মন্দ বিধিব্যবস্থার শেষ থেকে রক্ষা পাওয়ার আশা করতে পারে।
২০. কেন আমাদের উদ্যোগী ‘ধার্মিকর্তার প্রচারকগণ’ হওয়া উচিত?
২০ আমাদের সামনে নতুন জগতে রক্ষা পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে আসুন আমরা উদ্যোগী ‘ধার্মিকতার প্রচারকগণ’ হই। এই শেষের দিনগুলিতে ঈশ্বরকে সেবা করা কতই না এক সুযোগ! আর বর্তমান দিনের “জাহাজ” ঈশ্বরের লোকেদের দ্বারা উপভোগ্য আধ্যাত্মিক পরমদেশের প্রতি লোকেদের পরিচালিত করা কতই না আনন্দের বিষয়! আজকে এর মধ্যবর্তী লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা যেন বিশ্বস্ত, আধ্যাত্মিকভাবে জাগ্রত এবং যিহোবার মহাদিনের জন্য প্রস্তুত থাকে। কিন্তু কী আমাদের সকলকে জেগে থাকতে সাহায্য করতে পারে?
[পাদটীকাগুলো]
a ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইয়ের ১০ এবং ১১ অধ্যায় দেখুন।
আপনি কিভাবে উত্তর দিবেন?
◻ যিহোবার দিন এবং খ্রীষ্টের উপস্থিতি সম্বন্ধে কারও কারও কিরূপ প্রত্যাশা ছিল?
◻ কেন আমরা বলতে পারি যে নোহ এবং তার পরিবার বন্যার জন্য প্রস্তুত ছিল?
◻ যারা ‘জাগিয়া থাকে’ এবং যারা থাকে না তাদের কী ঘটবে?
◻ কেন পবিত্র কাজ অপরিহার্য বিশেষভাবে যখন আমরা যিহোবার মহাদিনের সন্নিকট হচ্ছি?