আপনার কি “অপেক্ষা করার মনোভাব” আছে?
“পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে [“ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলোর বিষয়ে,” NW] কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের [“যিহোবার,” NW] সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই।”—২ পিতর ৩:১১, ১২.
১, ২. কীভাবে আমরা যিহোবার দিন সম্বন্ধে “অপেক্ষা করার মনোভাব” রাখার বিষয়টি উদাহরণের মাধ্যমে বর্ণনা করতে পারি?
কল্পনা করুন যে, একটি পরিবার রাতের খাবারের জন্য অতিথিরা আসবে বলে প্রতীক্ষা করছে। তাদের আসার নির্ধারিত সময় দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। স্ত্রী খাবারের সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না, তা শেষবারের মতো দেখে নেওয়ায় ব্যস্ত রয়েছেন। সবকিছু তৈরি আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার স্বামী এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সাহায্য করছে। প্রত্যেকে অত্যন্ত উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। হ্যাঁ, পুরো পরিবার অতিথিদের আসার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছে এবং এক সুস্বাদ ভোজ ও উত্তম সাহচর্যের জন্য প্রতীক্ষা করে আছে।
২ খ্রিস্টান হিসেবে আমরা আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছুর জন্য অপেক্ষা করে আছি। কীসের জন্য? আমরা সকলে “যিহোবার সেই দিনের” অপেক্ষায় আছি! সেই দিন না আসা পর্যন্ত আমাদের ভাববাদী মীখার মতো হতে হবে, যিনি বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর প্রতি দৃষ্টি রাখিব, আমার ত্রাণেশ্বরের অপেক্ষা করিব [“আমার পরিত্রাণের ঈশ্বরের প্রতি অপেক্ষা করার মনোভাব দেখাব,” NW]।” (মীখা ৭:৭) এর অর্থ কি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া? না। বরং অনেক কাজ রয়েছে, যেগুলো করতে হবে।
৩. দ্বিতীয় পিতর ৩:১১, ১২ পদ অনুসারে খ্রিস্টানদের কোন মনোভাব রাখা উচিত?
৩ প্রেরিত পিতর আমাদের অপেক্ষা করার সময় সঠিক মনোভাব রাখতে সাহায্য করেন। তিনি বলেন: “পবিত্র আচার ব্যবহার ও ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলোর বিষয়ে, কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! যিহোবার সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই।” (২ পিতর ৩:১১, ১২) লক্ষ করুন যে, এটা এক বিস্ময়সূচক বিবৃতি। পিতর কোনো প্রশ্ন করছিলেন না। ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত তার দুটো চিঠিতে তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে, খ্রিস্টানদের কীধরনের লোক হওয়া উচিত। এ ছাড়া, তিনি তাদেরকে ‘পবিত্র আচার ব্যবহার ও ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলো’ করে চলার জন্যও উপদেশ দিয়েছিলেন। যদিও যিশু খ্রিস্ট “বিধিব্যবস্থার শেষের” চিহ্ন দেওয়ার পর প্রায় ৩০ বছর কেটে গিয়েছিল, তবুও খ্রিস্টানরা তাদের সর্তক মনোভাবকে ধীর হয়ে পড়তে দেননি। (মথি ২৪:৩, NW) তাদের যিহোবার দিনের আগমনের জন্য “অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে” হয়েছিল।
৪. ‘যিহোবার সেই দিনের আগমনের আকাঙ্ক্ষা করিবার’ সঙ্গে কী জড়িত?
৪ এখানে যে-গ্রিক শব্দকে ‘আকাঙ্ক্ষা করা’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার আক্ষরিক মানে হল ‘ত্বরান্বিত করা।’ অবশ্য, আক্ষরিক অর্থে আমরা যিহোবার দিনকে ‘ত্বরান্বিত করিতে’ পারি না। এমনকি আমরা “সেই দিন বা সেই দণ্ড” সম্বন্ধে জানি না, যখন যিশু খ্রিস্ট তাঁর পিতার শত্রুদের ওপর বিচার নিয়ে আসবেন। (মথি ২৪:৩৬; ২৫:১৩) একটা তথ্য গ্রন্থ ব্যাখ্যা করে যে, এখানে ‘ত্বরান্বিত করা’ অভিব্যক্তির মূল ক্রিয়াপদের অর্থ হল “‘তাড়াতাড়ি করা’ এবং এভাবে ‘উদ্যোগী, সক্রিয়, কোনো কিছুর জন্য চিন্তিত হওয়ার’ সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।” তাই, পিতর সহ বিশ্বাসীদের যিহোবার দিনের আগমনের জন্য আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর সবসময় তা মনে রাখার মাধ্যমে তারা তা করতে পারত। ‘সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] ঐ মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিন’ এখন খুব নিকটে, তাই আমাদেরও একই মনোভাব রাখতে হবে।—যোয়েল ২:৩১.
“পবিত্র আচার ব্যবহার” সহকারে অপেক্ষা করুন
৫. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, ‘যিহোবার সেই দিন’ দেখার জন্য আমরা আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করছি?
৫ যিহোবার দিনে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা যদি আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করে থাকি, তা হলে আমরা সেটা আমাদের “পবিত্র আচার ব্যবহার ও ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলোর” মাধ্যমে প্রমাণ করব। “পবিত্র আচার ব্যবহার” অভিব্যক্তিটি হয়তো আমাদের পিতরের এই উপদেশ মনে করিয়ে দেয়: “আজ্ঞাবহতার সন্তান বলিয়া তোমরা তোমাদের পূর্ব্বকার অজ্ঞানতাকালের অভিলাষের অনুরূপ হইও না, কিন্তু যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, সেই পবিত্রতমের ন্যায় আপনারাও সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র হও; কেননা লেখা আছে, ‘তোমরা পবিত্র হইবে, কারণ আমি পবিত্র’।”—১ পিতর ১:১৪-১৬.
৬. পবিত্র হতে হলে, আমাদের কী করতে হবে?
৬ পবিত্র হওয়ার জন্য আমাদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। যিহোবার নাম বহনকারী লোক হিসেবে নিজেদের পবিত্র রাখার মাধ্যমে আমরা কি “যিহোবার সেই দিনের” জন্য প্রস্তুত হচ্ছি? আজকে, এইরকম শুদ্ধতা বজায় রাখা খুব সহজ নয় কারণ জগতের নৈতিক মানগুলো দিন-দিন নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। (১ করিন্থীয় ৭:৩১; ২ তীমথিয় ৩:১৩) আমরা কি আমাদের এবং জগতের নৈতিক মানগুলোর মধ্যে পার্থক্যকে আরও বৃদ্ধি পেতে দেখছি? যদি না দেখি, তা হলে আমাদের চিন্তা করার কারণ রয়েছে। এমন কি হতে পারে যে, আমাদের ব্যক্তিগত মানগুলো, যদিও জগতের থেকে উচ্চ, ধীরে ধীরে ক্ষয় পেতে শুরু করেছে? যদি তা-ই হয়, তা হলে ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য বিষয়গুলো সংশোধন করতে আমাদের ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে।
৭, ৮. (ক) কীভাবে আমরা ‘পবিত্র আচার ব্যবহারে’ রত থাকার গুরুত্বকে হালকা করে দেখতে পারি? (খ) সংশোধনের কোন পদক্ষেপগুলো প্রয়োজন হতে পার?
৭ ইন্টারনেটে অশ্লীল বিষয়গুলোর আবির্ভাব এবং যেখানে সহজেই এগুলো পাওয়া যায়, সেখানে গোপনীয়তার কারণে কিছু ব্যক্তি যারা আগে কখনোই এই ধরনের অনৈতিক বিষয়বস্তুগুলো দেখেনি, তারা এখন “যৌনতার সুযোগগুলোর এক অফুরন্ত ভাণ্ডার” খুঁজে পাচ্ছে, একজন মেডিক্যাল ডাক্তার বলেন। আমরা যদি এই ধরনের নোংরা ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাটি করে থাকি, তা হলে নিঃসন্দেহে আমরা বাইবেলের এই আদেশ অমান্য করছি যে, “অশুচি কোন বস্তু স্পর্শ করিও না।” (যিশাইয় ৫২:১১) আমরা কি সত্যিই “যিহোবার সেই দিনের আগমনের . . . আকাঙ্ক্ষা করিতে” থাকব? অথবা সেই দিনকে কি মনে মনে পিছিয়ে দিচ্ছি, এই যুক্তি দেখিয়ে যে এমনকি আমরা যদি নোংরা বিষয়বস্তু দিয়ে আমাদের মনকে কলুষিত করিও, তবুও নিজেদের শুচি করার জন্য এখনও যথেষ্ট সময় আছে? আমরা যদি এই ধরনের কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকি, তা হলে ‘অলীকতা-দর্শন হইতে আমাদের চক্ষু ফিরানো এবং তাঁহার পথে আমাদের সঞ্জীবিত করিবার’ জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা কত জরুরি!—গীতসংহিতা ১১৯:৩৭.
৮ বেশির ভাগ যিহোবার সাক্ষি, যুবক-যুবতী ও সেইসঙ্গে বয়স্ক ব্যাক্তিরা, ঈশ্বরের উচ্চ নৈতিক মানগুলোর প্রতি স্থির রয়েছে এবং এই জগতের অনৈতিক প্রলোভনগুলোকে পরিহার করছে। আমাদের সময়ের গুরুত্ব এবং “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিন চোরের ন্যায় আসিবে,” পিতরের এই সাবধানবাণী সম্বন্ধে সর্তক থেকে তারা সবসময় “পবিত্র আচার ব্যবহার” করে চলে। (২ পিতর ৩:১০) তাদের কাজগুলো প্রমাণ করে যে তারা ‘যিহোবার সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতেছে।’a
“ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলো” সহকারে অপেক্ষা করুন
৯. ঈশ্বরীয় ভক্তি আমাদের কী করতে পরিচালিত করবে?
৯ ‘ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলোও’ গুরুত্বপূর্ণ যদি আমরা যিহোবার দিনের আকাঙ্ক্ষা করতে চাই। “ঈশ্বরীয় ভক্তির” সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা যুক্ত রয়েছে, যা আমাদের তাঁর চোখে যেটা ভাল তা করতে প্রেরণা দেয়। যিহোবার সঙ্গে অনুগতভাবে থাকা হল এই ধরনের ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলোর পিছনে প্রেরণাদায়ক শক্তি। তাঁর ইচ্ছা এই যেন “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৪) “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” (২ পিতর ৩:৯) তা হলে, আমাদের ঈশ্বরীয় ভক্তি কি লোকেদেরকে যিহোবা সম্বন্ধে জানাতে এবং তাঁকে অনুকরণ করার জন্য তাদের সাহায্য করতে আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও বৃদ্ধি করার জন্য উদ্দীপিত করে না?—ইফিষীয় ৫:১.
১০. ‘ধনের মায়ার’ বিরুদ্ধে কেন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে?
১০ আমাদের জীবন ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলো দিয়ে পরিপূর্ণ থাকবে যদি আমরা ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথমে রাখার চেষ্টা করি। (মথি ৬:৩৩) এর অন্তর্ভুক্ত হল, বস্তুগত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা। যিশু সাবধান করেছিলেন: “সাবধান, সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” (লূক ১২:১৫) অর্থপ্রিয় হয়ে নিজেরা অন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে কল্পনা করা যদিও কঠিন হতে পারে কিন্তু আমাদের এই বিষয়টা লক্ষ রাখা উচিত যে, “সংসারের চিন্তা ও ধনের মায়া” ঈশ্বরের “সেই বাক্য চাপিয়া” রাখতে পারে। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (মথি ১৩:২২) জীবিকা অর্জন করা সহজ না-ও হতে পারে। তাই, পৃথিবীর কিছু কিছু জায়গায় অনেকে যুক্তি দেখায় যে, ভালভাবে জীবনযাপন করতে হলে তাদের আরও ধনী কোনো দেশে যেতে হবে, হয়তো তাদের পরিবারকে কিছু বছরের জন্য রেখে যেতে হবে। এমনকি ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যেও কেউ কেউ এইরকম যুক্তি দেখিয়েছে। অন্য দেশে যাওয়ার মাধ্যমে তারা হয়তো তাদের পরিবারের আধুনিক সুযোগসুবিধাগুলো দিতে সমর্থ হয়। কিন্তু, বাড়িতে তাদের যে প্রিয়জনরা রয়েছে, তাদের আধ্যাত্মিক অবস্থা কেমন হবে? ঘরে সঠিক মস্তকপদ না থাকলে তাদের কি এমন আধ্যাত্মিকতা থাকবে, যা যিহোবার দিনে রক্ষা পাওয়ার জন্য দরকার?
১১. একজন অস্থায়ী কর্মী কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে, ধনসম্পদের চেয়ে ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
১১ ফিলিপাইন থেকে আসা একজন অস্থায়ী কর্মী জাপানে যিহোবার সাক্ষিদের কাছ থেকে বাইবেলের সত্য শেখেন। মস্তকপদের শাস্ত্রীয় দায়িত্বগুলো সম্বন্ধে শেখার পর তিনি বুঝতে পারেন যে, যিহোবার উপাসক হওয়ার জন্য তার পরিবারকে তার সাহায্য করা উচিত। (১ করিন্থীয় ১১:৩) বাড়িতে তার যে-স্ত্রী ছিলেন, তিনি নতুন পাওয়া তার এই বিশ্বাসের প্রচণ্ড বিরোধিতা করেন এবং বাড়ি ফিরে এসে পরিবারকে বাইবেল-ভিত্তিক বিশ্বাসগুলো সম্বন্ধে শেখানোর পরিবর্তে তাকে নিয়মিত টাকা পাঠাতে বলেন। কিন্তু, সময়ের গুরুত্ব এবং তার প্রিয়জনদের জন্য চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রেমময় আচরণ দেখানোর ক্ষেত্রে তার ধৈর্য পুরস্কৃত হয়েছিল। এক সময় তার পরিবার সত্য উপাসনায় ঐক্যবদ্ধ হয় এবং তার স্ত্রী পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করতে শুরু করেন।
১২. আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে কেন আমরা জীবনে প্রথমে রাখব?
১২ আমাদের পরিস্থিতি অগ্নিদগ্ধ বিল্ডিংয়ের লোকেদের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ভেঙে পড়ছে এমন প্রজ্জ্বলিত বিল্ডিং থেকে বস্তুগত বিষয়গুলো উদ্ধার করার জন্য ক্ষিপ্তভাবে দৌড়াদৌড়ি করা কি বিজ্ঞের কাজ হবে? এর পরিবর্তে, আমাদের নিজেদের এবং আমাদের পরিবার ও সেইসঙ্গে বিল্ডিংয়ে যারা রয়েছে, তাদের জীবন বাঁচানো কি আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়? একইভাবে এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থা দ্রুত ভেঙে পড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তা বুঝতে পেরে নিশ্চিতভাবেই আমাদের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখা এবং জীবন রক্ষাকারী রাজ্য প্রচার কাজে উদ্যোগের সঙ্গে মনোযোগ দেওয়া উচিত।—১ তীমথিয় ৪:১৬.
আমাদের “নিষ্কলঙ্ক” হওয়া প্রয়োজন
১৩. যিহোবার দিন যখন আসবে, তখন আমরা কোন অবস্থায় থাকতে চাই?
১৩ অপেক্ষা করার মনোভাব বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে পিতর বলেন: “প্রিয়তমেরা, তোমরা যখন এই সকলের অপেক্ষা করিতেছ, তখন যত্ন কর, যেন [ঈশ্বরের] কাছে তোমাদিগকে নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়!” (২ পিতর ৩:১৪) পবিত্র আচার ব্যবহার এবং ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলোতে রত থাকার বিষয়ে পিতর তার উপদেশ ছাড়াও, যিহোবা যেন শেষ পর্যন্ত প্রত্যেককে যিশুর অমূল্য রক্তের মাধ্যমে পরিষ্কৃত হিসেবে দেখতে পান, সেই বিষয়ের গুরুত্বের ওপর তিনি জোর দিয়েছেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) এর জন্য একজন ব্যক্তিকে যিশুর বলিদানে বিশ্বাস অনুশীলন করা এবং যিহোবার একজন উৎসর্গীকৃত ও বাপ্তাইজিত দাস হওয়া প্রয়োজন।
১৪. “নিষ্কলঙ্ক” থাকার সঙ্গে কী জড়িত?
১৪ আমাদের যাতে “নিষ্কলঙ্ক” হিসেবে পাওয়া যায়, সেইজন্য পিতর আমাদের প্রাণপণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। জগতের দ্বারা খুঁতযুক্ত না হয়ে আমরা কি আমাদের খ্রিস্টীয় আচরণ ও ব্যক্তিত্বের পোশাক-পরিচ্ছদ নিষ্কলঙ্ক রাখি? আমরা যখন আমাদের কাপড়ে দাগ দেখি, তখন সঙ্গে সঙ্গে সেটা দূর করার চেষ্টা করি। সেটা যদি কোনো প্রিয় পোশাক হয়, তা হলে সেটা পরিষ্কার করার ব্যাপারে আমরা খুবই সর্তক হই। রূপকভাবে বলতে গেলে, আমাদের ব্যক্তিত্বে অথবা আচরণে কোনো দোষের কারণে যদি আমাদের খ্রিস্টীয় পোশাক-পরিচ্ছদ দাগযুক্ত হয়ে পড়ে, তা হলে তখনও কি আমরা একইরকম মনে করি?
১৫. (ক) ইস্রায়েলীয়দের কেন তাদের বস্ত্রের কোণে থোপ তৈরি করতে হতো? (খ) কেন যিহোবার বর্তমান দিনের দাসেরা পৃথক হিসেবে অসাধারণ?
১৫ ইস্রায়েলীয়দের “আপন আপন বস্ত্রের কোণে থোপ” এবং “কোণস্থ থোপে নীল সূত্র বদ্ধ” করতে হতো। কেন? যাতে তারা যিহোবার আদেশগুলো মনে রাখে, সেগুলো মেনে চলে এবং তাদের ঈশ্বরের কাছে ‘পবিত্র হয়।’ (গণনাপুস্তক ১৫:৩৮-৪০) যিহোবার বর্তমান দিনের দাস হিসেবে, জগৎ থেকে আমরা পৃথক কারণ আমরা ঐশিক আইনকানুন এবং নীতিগুলো মেনে চলি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা নৈতিক শুদ্ধতা বজায় রাখি, রক্তের পবিত্রতাকে সম্মান করি এবং সমস্ত ধরনের প্রতিমাপূজা এড়িয়ে চলি। (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) নিজেদের নিষ্কলঙ্ক রাখার জন্য আমাদের দৃঢ় সংকল্পকে অনেকে সম্মান করে।—যাকোব ১:২৭.
আমাদের “নির্দ্দোষ” থাকা প্রয়োজন
১৬. নিজেদের “নির্দ্দোষ” রাখার সঙ্গে কী জড়িত?
১৬ পিতর এও বলেন যে, আমাদের যেন “নির্দ্দোষ” অবস্থায় পাওয়া যায়। সেটা কীভাবে সম্ভব? সাধারণত, একটা দাগ দূর করা বা পরিষ্কার করা যায় কিন্তু দোষ নয়। একটা দোষ দেখায় যে ভিতরে কোনো ভুল রয়েছে, কোনো ত্রুটি রয়েছে। প্রেরিত পৌল ফিলিপীর সহ খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা বচসা ও তর্কবিতর্ক বিনা সমস্ত কার্য্য কর, যেন তোমরা অনিন্দনীয় ও অমায়িক হও, এই কালের সেই কুটিল ও বিপথগামী লোকদের মধ্যে ঈশ্বরের নিষ্কলঙ্ক সন্তান হও, যাহাদের মধ্যে তোমরা জগতে জ্যোতির্গণের ন্যায় প্রকাশ পাইতেছ।” (ফিলিপীয় ২:১৪, ১৫) আমরা যদি সেই পরামর্শ মেনে চলি, তা হলে আমরা বচসা এবং তর্কবিতর্ক এড়িয়ে চলতে পারব ও এক শুদ্ধ মনোভাব নিয়ে ঈশ্বরকে সেবা করব। “রাজ্যের এই সুসমাচার” প্রচার করার সময় আমরা যিহোবা এবং আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি প্রেমের দ্বারা পরিচালিত হব। (মথি ২২:৩৫-৪০; ২৪:১৪) সর্বোপরি, আমরা সর্বদা সুসমাচার ঘোষণা করে চলব, যদিও বেশির ভাগ লোক বুঝতে পারে না যে, কেন আমরা ঈশ্বর ও তাঁর বাক্য বাইবেল সম্বন্ধে অন্যদের শেখানোর জন্য সাহায্য করতে স্বেচ্ছায় আমাদের সময় ও প্রচেষ্টা দিই।
১৭. খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে বিভিন্ন সুযোগের আকাঙ্ক্ষী হওয়ার সময় আমাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত?
১৭ যেহেতু আমরা চাই যেন আমাদের “নির্দ্দোষ” দেখতে পাওয়া যায়, তাই সমস্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের উদ্দেশ্যগুলো পরীক্ষা করা উচিত। আমরা স্বার্থপর কারণগুলো যেমন, ধনসম্পদ বা ক্ষমতা পাওয়ার জন্য জগতের মতো করে কাজ করা বাদ দিয়েছি। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আমরা যদি সুযোগগুলোর আকাঙ্ক্ষী হই, তা হলে আমাদের মনোভাব যেন শুদ্ধ থাকে এবং আমরা যেন সবসময় যিহোবা ও অন্যদের প্রতি প্রেমের দ্বারা পরিচালিত হই। যিহোবা এবং তাদের সহ বিশ্বাসীদের দাস হওয়ার জন্য আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিদের আনন্দ ও নম্র ইচ্ছা সহকারে “অধ্যক্ষপদের আকাঙ্ক্ষী” হতে দেখা সত্যিই সতেজতাদায়ক! (১ তীমথিয় ৩:১; ২ করিন্থীয় ১:২৪) বস্তুত, যারা প্রাচীন হিসেবে সেবা করার যোগ্য তারা “ইচ্ছাপূর্ব্বক” ‘ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন করে; কুৎসিত লাভার্থে নয়, কিন্তু উৎসুকভাবে করে; নিরূপিত অধিকারের উপরে কর্ত্তৃত্বকারীরূপে নয়, কিন্তু পালের আদর্শ হইয়াই করে।’—১ পিতর ৫:১-৪.
আমাদের “শান্তিতে” থাকা প্রয়োজন
১৮. কোন গুণগুলোর জন্য যিহোবার সাক্ষিরা সুপরিচিত?
১৮ পরিশেষে, পিতর আমাদের “শান্তিতে” দেখতে পাওয়ার কথা বলেছেন। এই প্রয়োজন অনুসারে জীবনযাপন করার জন্য, যিহোবা এবং আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের শান্তিতে থাকা প্রয়োজন। পিতর “পরস্পর একাগ্রভাবে প্রেম” করার এবং আমাদের সহ খ্রিস্টানদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। (১ পিতর ২:১৭; ৩:১০, ১১; ৪:৮; ২ পিতর ১:৫-৭) আমাদের শান্তি বজায় রাখার জন্য আমাদের নিজেদের মধ্যে প্রেম রাখা প্রয়োজন। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; ইফিষীয় ৪:১, ২) আমাদের প্রেম এবং শান্তি বিশেষ করে তখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন আমাদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলো হয়। ১৯৯৯ সালে কোস্টা রিকায় একটা সম্মেলনে এয়ারপোর্টের একজন বিক্রেতা অস্থির হয়ে পড়েছিলেন কারণ স্থানীয় সাক্ষিরা যখন উপস্থিত অভ্যাগতদের স্বাগতম জানাচ্ছিলেন, তখন অসাবধানতাবশত তার দোকান ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিন তিনি, অভ্যাগতরা যে-অত্যুৎসাহী অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন, সেটার মধ্যে প্রেম এবং শান্তি লক্ষ করেছিলেন, যদিও স্থানীয় সাক্ষিরা ব্যক্তিগতভাবে তাদের চিনতেন না। শেষ দিন বিক্রেতাও স্বাগতম জানান এবং বাইবেল অধ্যয়নের জন্য অনুরোধ করেন।
১৯. সহ বিশ্বাসীদের সঙ্গে শান্তি অনুধাবন করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
১৯ আমাদের আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনদের সঙ্গে শান্তি অনুধাবন করার জন্য আমাদের আন্তরিকতা হয়তো আমরা কতটা আগ্রহের সঙ্গে যিহোবার দিন এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতের জন্য অপেক্ষা করছি, সেটার ওপর প্রভাব ফেলে। (গীতসংহিতা ৩৭:১১; ২ পিতর ৩:১৩) ধরুন কোনো সহ বিশ্বাসীর সঙ্গে শান্তি বজায় রাখতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আমরা কি নিজেদের কল্পনা করতে পারি যে, তার সঙ্গে আমরা পরমদেশে শান্তিতে বাস করছি? কোনো ভাইয়ের যদি আমাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা থাকে, তা হলে আমাদের নিজে থেকে গিয়ে ‘তাহার সহিত সম্মিলিত হইতে হইবে।’ (মথি ৫:২৩, ২৪) আমরা যদি যিহোবার সঙ্গে শান্তিতে থাকতে চাই, তা হলে এটা করা গুরুত্বপূর্ণ।—গীতসংহিতা ৩৫:২৭; ১ যোহন ৪:২০.
২০. কোন কোন উপায়ে “অপেক্ষা করার মনোভাব” প্রকাশ পাওয়া উচিত?
২০ ব্যক্তিগতভাবে আমরা কি ‘যিহোবার সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতেছি’? দুষ্টতার শেষ দেখার জন্য আমাদের আকুল আকাঙ্ক্ষা এই অনৈতিক জগতে আমাদের পবিত্র থাকার মাধ্যমে দেখা যায়। সর্বোপরি, যিহোবার দিন আসার এবং রাজ্য শাসনের অধীন জীবনের জন্য আমাদের ঐকান্তিক আকাঙ্ক্ষা আমাদের ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলোর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আর শান্তিপূর্ণ নতুন জগতে থাকার জন্য আমাদের প্রত্যাশা এখন আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে শান্তি অনুধাবন করার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এগুলোর মাধ্যমে আমরা দেখাই যে আমাদের “অপেক্ষা করার মনোভাব” আছে এবং ‘যিহোবার সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতেছি।’
[পাদটীকা]
a উদাহরণের জন্য ২০০০ সালের ১লা জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৬ পৃষ্ঠা এবং যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ১৯৯৭ (ইংরেজি) এর ৫১ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• ‘যিহোবার সেই দিনের আগমনের আকাঙ্ক্ষা করিবার’ মানে কী?
• আমাদের আচরণের মধ্যে দিয়ে কীভাবে “অপেক্ষা করার মনোভাব” দেখানো যায়?
• ‘ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলো’ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
• যিহোবা যাতে “নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে” দেখতে পান, সেইজন্য আমাদের কী করতে হবে?
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
“অপেক্ষা করার মনোভাব” পবিত্র আচার ব্যবহারের মধ্যে প্রকাশ পায়
[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
রাজ্য প্রচার কাজ জীবন রক্ষাকারী
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার দিনের অপেক্ষা করার সময় আসুন আমরা অন্যদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখি