জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
মার্চ ৪-১০
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | রোমীয় ১২-১৪
“খ্রিস্টীয় প্রেম দেখানো বলতে যা বোঝায়”
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৫৫, ইংরেজি
স্নেহ
খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সকল সদস্যের মধ্যে ভ্রাতৃপ্রেম (গ্রিক, ফিলাডেলফিয়া, আক্ষরিক অর্থ “একজন ভাইয়ের প্রতি স্নেহ”) থাকা উচিত। (রোমীয় ১২:১০; ইব্রীয় ১৩:১; এ ছাড়া, ১পিতর ৩:৮ পদ দেখুন।) তাই, মণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক, একটা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থাকা সম্পর্কের মতো ঘনিষ্ঠ, দৃঢ় ও উষ্ণ হওয়া উচিত। যদিও মণ্ডলীর সদস্যরা ইতিমধ্যেই ভ্রাতৃপ্রেম দেখিয়ে থাকে, তারপরও তাদের আরও পূর্ণ মাত্রায় তা দেখানোর জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।—১থিষল ৪:৯, ১০.
গ্রিক শব্দ ফিলোস্টর্গোস অর্থ “কোমল স্নেহ থাকা” আর এটা এমন একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যিনি আরেক জন ব্যক্তির সঙ্গে উষ্ণ অন্তরঙ্গতা সহকারে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখেন। এই যৌগিক শব্দের একটা মূল শব্দ হল স্টেরগো, যা প্রায়ই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থাকা স্বাভাবিক স্নেহ বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের এই গুণ গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। (রোমীয় ১২:১০) এ ছাড়া, পৌল এই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, শেষকাল “স্নেহরহিত” (গ্রিক, এস্টোরগোই) লোকেদের দ্বারা চিহ্নিত হবে আর এই ধরনের লোকেরা মৃত্যুর যোগ্য।—২তীম ৩:৩; রোমীয় ১:৩১, ৩২.
“মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক”
রোমীয় ১২:১৭ পদ পড়ুন। পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন, কেউ বিদ্বেষপরায়ণ মনোভাব দেখালে, প্রতিদানে আমাদের শত্রুভাবাপন্ন হওয়া উচিত নয়। তার এই পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া নির্দিষ্টভাবে সেই পরিবারগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সব সদস্য যিহোবাকে উপাসনা করে না। একজন খ্রিস্টান সাথি, নির্দয় কথা বা কাজের পরিশোধে নির্দয় আচরণ করার প্রলোভনকে প্রতিরোধ করেন। ‘মন্দের পরিশোধে মন্দ করিবার’ ফলে ভালো কিছুই আসে না। এর বিপরীতে, এই ধরনের আচরণ পরিস্থিতিকে কেবল আরও খারাপই করতে পারে।
প্রহরীদুর্গ ০৭ ৭/১ ২৪-২৫ অনু. ১২-১৩
“মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না”
বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, সেই সম্বন্ধে পৌলের পরবর্তী উপদেশ হল: “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না।” এই উক্তি এর আগে বলা তার এই কথাগুলোর যুক্তিযুক্ত উপসংহার: “যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা কর।” বস্তুতপক্ষে, কীভাবে একজন ব্যক্তি বলতে পারেন যে, তিনি মন্দতাকে সত্যিই ঘৃণা করেন, যদি তিনি অন্যদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মন্দতাকেই ব্যবহার করে থাকেন? তা করা “নিষ্কপট” প্রেম দেখানোর বিপরীত হবে। এরপর পৌল বলেন: “সকল মনুষ্যের দৃষ্টিতে যাহা উত্তম, ভাবিয়া চিন্তিয়া তাহাই কর।” (রোমীয় ১২:৯, ১৭) কীভাবে আমরা এই কথাগুলো কাজে লাগাতে পারি?
এর আগে, করিন্থীয়দের কাছে লেখা তার চিঠিতে পৌল প্রেরিতরা যে-তাড়নার মুখোমুখি হয়েছিল, সেই সম্বন্ধে লিখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমরা জগতের ও দূতগণের ও মনুষ্যদের কৌতুকাস্পদ [“মানুষদের সামনে দর্শনীয় একটা দৃশ্যের মতো,” জুবিলী বাইবেল] হইয়াছি। . . . নিন্দিত হইতে হইতে আশীর্ব্বাদ করিতেছি, তাড়িত হইতে হইতে সহ্য করিতেছি, অপবাদিত হইতে হইতে বিনয় করিতেছি।” (১ করিন্থীয় ৪:৯-১৩) একইভাবে, আজকেও এই জগতের লোকেরা সত্য খ্রিস্টানদের দেখছে। আমাদের চারপাশের লোকেরা যখন দেখে যে, এমনকী আমাদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করা সত্ত্বেও আমরা উত্তম কাজগুলো করছি, তখন তারা হয়তো আমাদের খ্রিস্টীয় বার্তার প্রতি আরও অনুকূলভাবে সাড়া দিতে পারে।—১ পিতর ২:১২.
প্রহরীদুর্গ ১২ ১১/১৫ ২৯ অনু. ১৩
পরস্পরকে ক্ষমা করুন
কোনো কোনো সময় আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, যে-ব্যক্তি আপনার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে, তাকে আপনি খ্রিস্টীয় মানগুলো বোঝানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “‘তোমার শত্রু যদি ক্ষুধিত হয়, তাহাকে ভোজন করাও; যদি সে পিপাসিত হয়, তাহাকে পান করাও; কেননা তাহা করিলে তুমি তাহার মস্তকে জ্বলন্ত অঙ্গারের রাশি করিয়া রাখিবে।’ তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর।” (রোমীয় ১২:২০, ২১) উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে আপনার সদয়ভাবের মাধ্যমে আপনি হয়তো এমনকী কঠিন মনোভাবকে নরম করে দিতে এবং লোকেদের মধ্যে থেকে ভালো কিছু বের করে আনতে পারবেন। অসন্তুষ্ট করেছেন এমন ব্যক্তির প্রতি বিবেচনা এবং সহমর্মিতা—এমনকী সমবেদনা—দেখানোর মাধ্যমে আপনি হয়তো তাকে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করতে পারবেন। যা-ই হোক না কেন, মৃদুভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো একজন ব্যক্তিকে আপনার উত্তম আচরণ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ করে দেয়।—১ পিতর ২:১২; ৩:১৬.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
‘ঈশ্বরের প্রেম’ ৭২-৭৩ অনু. ৫-৬
যেভাবে গঠনমূলক আমোদপ্রমোদ বাছাই করা যায়
জীবনে আপনি যা-কিছুই করুন না কেন, সেগুলো যিহোবার প্রতি আপনার উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই সত্য যেন সহবিশ্বাসীদের উপর প্রভাব ফেলে, সেইজন্য রোমীয়দের প্রতি লেখা তার চিঠিতে, পৌল এক জোরালো অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি তাদেরকে অনুরোধ করেছিলেন: “তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা।” (রোমীয় ১২:১) আপনার দেহের অন্তর্ভুক্ত আপনার মন, হৃদয়, ও দৈহিক শক্তি। এই সমস্তকিছুই আপনি ঈশ্বরের সেবায় ব্যবহার করে থাকেন। (মার্ক ১২:৩০) পৌল এই ধরনের পূর্ণহৃদয়ের সেবাকে বলিদান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই অভিব্যক্তির মধ্যে এক পরোক্ষ সতর্কবাণী রয়েছে। মোশির ব্যবস্থার অধীনে যে-বলিদান খুঁতযুক্ত থাকত, সেটা ঈশ্বর প্রত্যাখ্যান করতেন। (লেবীয় পুস্তক ২২:১৮-২০) একইভাবে, একজন খ্রিস্টানের আধ্যাত্মিক বলিদান যদি কোনো দিক দিয়ে ত্রুটিযুক্ত হয়, তা হলে সেটা ঈশ্বর প্রত্যাখ্যান করবেন। তাহলে, কীভাবে এমনটা হতে পারে?
পৌল রোমের খ্রিস্টানদেরকে উপদেশ দিয়েছিলেন: “আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ . . . পাপের কাছে সমর্পণ করিও না।” এ ছাড়া, পৌল তাদেরকে ‘দেহের ক্রিয়া সকল মৃত্যুসাৎ করিতে’ বলেছিলেন। (রোমীয় ৬:১২-১৪; ৮:১৩) এর আগে তার চিঠিতে, তিনি ‘দেহের’ এই ধরনের ‘ক্রিয়া সকলের’ কিছু উদাহরণ দিয়েছিলেন। পাপী মানবজাতি সম্বন্ধে আমরা পড়ি: ‘তাহাদের মুখ অভিশাপে পূর্ণ।’ “তাহাদের চরণ রক্তপাতের জন্য ত্বরান্বিত।” “ঈশ্বর-ভয় তাহাদের চক্ষুর অগোচর।” (রোমীয় ৩:১৩-১৮) একজন খ্রিস্টান যদি তার “অঙ্গপ্রত্যঙ্গ” অথবা দেহের কোনো অংশকে এই ধরনের পাপপূর্ণ অভ্যাসের জন্য ব্যবহার করেন, তা হলে তিনি তার দেহকে খুঁতযুক্ত করবেন। উদাহরণ স্বরূপ, একজন খ্রিস্টান যদি আজকে ইচ্ছাকৃতভাবে পর্নোগ্রাফির মতো নীতিহীন বিষয়বস্তু অথবা নিষ্ঠুর দৌরাত্ম্য দেখেন, তা হলে তিনি ‘[তাহার চোখকে] পাপের কাছে সমর্পণ করিতেছেন’ আর এভাবে তার সম্পূর্ণ দেহকে কলুষিত করছেন। তার প্রদত্ত যেকোনো উপাসনা এমন এক বলি হয়ে উঠবে, যা আর পবিত্র নয় এবং ঈশ্বরের কাছে অগ্রহণযোগ্য। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:২১; ১ পিতর ১:১৪-১৬; ২ পিতর ৩:১১) গঠনমূলক নয় এমন আমোদপ্রমোদ বাছাই করার জন্য কী এক চরম মূল্যই না দিতে হয়!
রোমীয়দের প্রতি লেখা চিঠির প্রধান বিষয়গুলো
১৩:১—কীভাবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষরা “ঈশ্বরনিযুক্ত”? জাগতিক কর্তৃপক্ষরা এই অর্থে “ঈশ্বরনিযুক্ত” যে, তারা ঈশ্বরের অনুমোদনক্রমে শাসন করে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঈশ্বর তাদের শাসন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। বাইবেল বেশ কয়েক জন শাসক সম্বন্ধে যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, তাতে এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ক্ষেত্রের পরিচর্যায় ব্যবহার করার প্রচেষ্টা করুন
প্রহরীদুর্গ ১১ ৯/১ ২১-২২, ইংরেজি
কর ও বিবেক
লক্ষণীয় বিষয়টা হল, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের যে-কর দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেই করের একটা অংশ সেনাবাহিনীর খরচ মেটানোর জন্য চলে যেত। বিবেকের সঙ্গে জড়িত এই বিষয়টাই পরে গান্ধী ও থারোকে কর না দিতে চাওয়ার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করেছিল।
লক্ষ করুন, খ্রিস্টানরা শুধু শাস্তি এড়ানোর জন্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের বিবেক বা ‘সংবেদের নিমিত্ত’ রোমীয় ১৩ অধ্যায়ে দেওয়া আদেশের বাধ্য হয়েছিল। (রোমীয় ১৩:৫) হ্যাঁ, একজন খ্রিস্টানের বিবেক আসলে তাকে কর দিতে বাধ্য করত, এমনকী যদিও সেগুলো এমন কাজে সমর্থন জোগানোর জন্য ব্যবহার করা হতো, যা তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। আপাতদৃষ্টিতে আত্মবিরোধী এই বিষয়টা বোঝার জন্য, আমাদের বিবেক অর্থাৎ আমাদের ভিতরের স্বর সম্বন্ধে মূল সত্যটা বুঝতে হবে, যা আমাদের বলে দেয়, আমাদের কাজটা সঠিক না কি ভুল।
থারো যেমন মন্তব্য করেছিলেন, প্রত্যেকেরই ভিতরের এক স্বর রয়েছে। তবে, সেটা যে নির্ভরযোগ্য এমন নয়। আমরা যদি ঈশ্বরকে খুশি করতে চাই, তা হলে আমাদের বিবেককে তাঁর নৈতিক মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। আমাদের প্রায়ই ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার সঙ্গে মিল রেখে নিজেদের চিন্তাভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গিকে রদবদল করতে হয়, কারণ তাঁর চিন্তাভাবনা আমাদের চেয়ে উচ্চতর। (গীতসংহিতা ১৯:৭) তাই, মানব সরকার সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কী?
আমরা লক্ষ করি যে, প্রেরিত পৌল মানব সরকারকে “ঈশ্বরের সেবাকারী” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। (রোমীয় ১৩:৬) এর অর্থ কী? সাধারণভাবে এর অর্থ হল, তারা সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখে ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। এমনকী সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ সরকারও সাধারণত বিভিন্ন সেবা প্রদান করে, যেমন চিঠিপত্র বিলি করা, জনসাধারণের শিক্ষার ব্যবস্থা করা, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা করা ও আইন কার্যকর করা। যদিও ঈশ্বর মানুষের তৈরি এসব কর্তৃপক্ষের ভুলত্রুটি সম্বন্ধে পুরোপুরি অবগত আছেন, তারপরও একটা সময়ের জন্য তিনি তাদের অস্তিত্বে থাকতে দিয়েছেন এবং এই আদেশ দিয়েছেন যেন আমরা তাঁর ব্যবস্থার প্রতি অর্থাৎ মানবজাতিকে শাসন করার জন্য তিনি যে এই ধরনের সরকারকে অনুমতি দিয়েছেন, সেই ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কর প্রদান করি।
কিন্তু, ঈশ্বর যে মানব সরকারকে শাসন করতে দিয়েছেন, তা সাময়িক। তাঁর ইচ্ছা হল, এসব সরকারের জায়গায় তাঁর স্বর্গীয় রাজ্য আসবে এবং সেইসমস্ত ক্ষতি পুরোপুরি দূর করে দেবে, যেগুলো শত শত বছর ধরে মানব শাসকরা মানবজাতির উপর চাপিয়ে দিয়েছে। (দানিয়েল ২:৪৪; মথি ৬:১০) তবে এই সময়ের মধ্যে, কর দিতে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে নাগরিক আইনের বিরোধিতা করার অধিকার ঈশ্বর খ্রিস্টানদের দেননি।
গান্ধীর মতো যদি আপনারও মনে হয় যুদ্ধকে সমর্থন করার জন্য কর প্রদান করা হল পাপ, তা হলে? ঠিক যেমন উঁচু এলাকাতে আমরা যত বেশি উপরে উঠি তত ভালোভাবে দৃশ্য দেখতে পারি, তেমনই ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি যে আমাদের চেয়ে অনেক উচ্চ তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে আমরা আরও সহজে তাঁর সংকল্প বা চিন্তাভাবনার সঙ্গে মিল রেখে নিজেদের চিন্তাভাবনা রদবদল করতে পারি। ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে ঈশ্বর বলেছিলেন: “ভূতল হইতে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, তোমাদের পথ হইতে আমার পথ, ও তোমাদের সঙ্কল্প হইতে আমার সঙ্কল্প তত উচ্চ।”—যিশাইয় ৫৫:৮, ৯.
মার্চ ১১-১৭
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | রোমীয় ১৫-১৬
“ধৈর্য ও সান্ত্বনা লাভের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করুন”
“যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন কর”
লাসারের মৃত্যুর সময়ে যিশুর প্রচণ্ড শোকের বিবরণ হল ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া অনেক সান্ত্বনাদায়ক শাস্ত্রপদের মধ্যে কেবল একটা। এটা আমাদের অবাক করে না কারণ “পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল, যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” (রোমীয় ১৫:৪) আপনি যদি শোকার্ত হয়ে থাকেন, তা হলে আপনিও এইরকম কিছু শাস্ত্রপদ থেকে কোমল সান্ত্বনা খুঁজে পেতে পারেন:
▪ “সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন।”—গীত. ৩৪:১৮, ১৯.
▪ “আমার আন্তরিক ভাবনার বৃদ্ধিকালে তোমার [সদাপ্রভুর] দত্ত সান্ত্বনা আমার প্রাণকে আহ্লাদিত করে।”—গীত. ৯৪:১৯.
▪ “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আপনি, ও আমাদের পিতা ঈশ্বর, যিনি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন, এবং অনুগ্রহ দ্বারা অনন্তকালস্থায়ী সান্ত্বনা ও উত্তম প্রত্যাশা দিয়াছেন, তিনি তোমাদের হৃদয়কে সান্ত্বনা দিউন, এবং . . . সুস্থির করুন।”—২ থিষল. ২:১৬, ১৭.
“ধৈর্য্যগুণকে তোমাদের জীবনে পুরোপুরিভাবে কাজ করতে দাও”
যিহোবার কাছে শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করুন। যিহোবা হলেন “ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বর।” (রোমীয় ১৫:৫) তিনিই হলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি আমাদের পরিস্থিতি, আমাদের অনুভূতি এবং আমাদের পটভূমি পুরোপুরি বোঝেন। তাই, ধৈর্য ধরার জন্য আমাদের কী প্রয়োজন, তা তিনি সঠিকভাবে জানেন। বাইবেল বলে: “যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তিনি তাহাদের বাঞ্ছা পূর্ণ করেন, আর তাহাদের আর্ত্তনাদ শুনিয়া তাহাদিগকে ত্রাণ করেন।” (গীত. ১৪৫:১৯) কিন্তু, আমরা যখন ধৈর্য ধরার জন্য শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করি, তখন ঈশ্বর কীভাবে এর উত্তর দেন?
প্রহরীদুর্গ ১৪ ৬/১৫ ১৪ অনু. ১১
“তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে”
যিহোবা ‘প্রত্যাশা’ দেন, যা ‘আমাদিগকে আনন্দে এবং শান্তিতে পরিপূর্ণ করে।’ (রোমীয় ১৫:১৩) ঈশ্বরদত্ত প্রত্যাশা আমাদেরকে বিশ্বাসের পরীক্ষা সহ্য করার জন্য সমর্থ করে। বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের স্বর্গে অনন্তকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে। (প্রকা. ২:১০) আর পার্থিব আশাসম্পন্ন নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিরা পৃথিবীব্যাপী প্রতিজ্ঞাত পরমদেশে অনন্ত আশীর্বাদ উপভোগ করবে। (লূক ২৩:৪৩) এই ধরনের প্রত্যাশার প্রতি আমাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া কেমন? আমাদের হৃদয় কি আনন্দ, শান্তি ও সেইসঙ্গে ‘সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বরের’ দাতার জন্য ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয় না?—যাকোব ১:১৭.
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রহরীদুর্গ ৮৯ ১২/১ ২৪ অনু. ৩, ইংরেজি
‘তোমাদের প্রেমের যথার্থতা পরীক্ষা করিতেছি’
নিশ্চিতভাবেই, তাদের পরজাতীয় ভাই-বোনেরা তাদের দুর্দশার প্রতি সাড়া দিতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। কারণ তারা এক বিশেষ কারণে যিরূশালেমের খ্রিস্টানদের কাছে “ঋণী” ছিল। যিরূশালেম থেকেই কি পরজাতীয়দের কাছে সুসমাচার ছড়িয়ে পড়েনি? পৌল মনে করেছিলেন: “যিহূদীরা যখন তাদের আত্মিক আশীর্বাদের ভাগ অযিহূদীদের দিয়েছে তখন অযিহূদীদেরও উচিত সাংসারিক বিষয়ে যিহূদীদের সাহায্য করা।”—রোমীয় ১৫:২৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।
অন্তর্দৃষ্টি-১ ৮৫৮ অনু. ৫, ইংরেজি
পূর্বজ্ঞান, পূর্বনির্ধারণ
মশীহ বা খ্রিস্টের সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ হওয়ার কথা ছিল, যাঁর মাধ্যমে পৃথিবীর সমস্ত পরিবারের ধার্মিক ব্যক্তিরা আশীর্বাদ লাভ করবে। (গালা ৩:৮, ১৪) এদনে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর পরই, তবে হেবলের জন্মের আগে এই বংশ সম্বন্ধে প্রথম উল্লেখ করা হয়। (আদি ৩:১৫) আর এই উল্লেখের বিষয়টা, মশীহ সংক্রান্ত “বংশ” স্পষ্টভাবে শনাক্ত করার মাধ্যমে যখন ‘সেই নিগূঢ়তত্ত্ব’ প্রকাশিত হয়, তার প্রায় ৪,০০০ বছর আগে ঘটেছিল। তাই, এটা সত্যিই “অনাদি কাল অবধি অকথিত ছিল।”—রোমীয় ১৬:২৫-২৭; ইফি ১:৮-১০; ৩:৪-১১.
মার্চ ১৮-২৪
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ করিন্থীয় ১-৩
“আপনি কি একজন প্রাণিক মনুষ্য, না কি একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি?”
একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার অর্থ কী?
একজন প্রাণিক ব্যক্তি কীভাবে চিন্তা করেন? একজন প্রাণিক ব্যক্তি জগতের মনোভাবকে অনুকরণ করেন, যেটা মূলত স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষার উপর কেন্দ্রীভূত। পৌল এই মনোভাবকে ‘যে আত্মা এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে, সেই আত্মা’ হিসেবে বর্ণনা করেন। (ইফি. ২:২) এই মনোভাব বেশিরভাগ লোককে তাদের আশেপাশের লোকেদের অনুকরণ করতে প্ররোচিত করে। তারা ঈশ্বরের মান সম্বন্ধে চিন্তা না করে কেবল সেটাই করে, যেটা তাদের দৃষ্টিতে সঠিক বলে মনে হয়। একজন প্রাণিক বা মাংসিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি মূলত মাংসিক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করেন এবং প্রায়ই মনে করেন যে, তার পদমর্যাদা, টাকাপয়সা অথবা ব্যক্তিগত অধিকারগুলো অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
একজন প্রাণিক ব্যক্তি প্রায়ই এমন কাজগুলো করেন, যেগুলোকে বাইবেলে “মাংসের কার্য্য সকল” বলা হয়েছে। (গালা. ৫:১৯-২১) পৌল করিন্থের খ্রিস্টানদের প্রতি লেখা তার প্রথম চিঠিতে এমন আরও কিছু বিষয়ের উল্লেখ করেন, যেগুলো প্রাণিক ব্যক্তিরা করে থাকে। তারা মতবিরোধের সময়ে কোনো এক পক্ষ নিয়ে থাকে, লোকেদের বিভক্ত করার চেষ্টা করে, অন্যদের বিদ্রোহ করতে উৎসাহিত করে, একে অন্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে, মস্তকপদের প্রতি কোনো সম্মান দেখায় না এবং খাওয়া-দাওয়া ও পান করাকে তাদের জীবনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। একজন প্রাণিক ব্যক্তি যখন খারাপ কিছু করার জন্য প্রলুব্ধ হন, তখন তিনি সেটার প্রতিরোধ করেন না। (হিতো. ৭:২১, ২২) যিহূদা বলেছিলেন যে, প্রাণিক ব্যক্তিরা এমনকী যিহোবার আত্মা হারিয়ে ফেলতে পারে।—যিহূদা ১৮, ১৯.
একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার অর্থ কী?
একজন প্রাণিক ব্যক্তির বিপরীতে একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। তিনি নিজেকে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা নির্দেশিত হতে দেন এবং যিহোবাকে অনুকরণ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন। (ইফি. ৫:১) তিনি যিহোবার মতো করে চিন্তা করতে শেখার এবং বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে দেখার প্রচেষ্টা করেন। ঈশ্বর তার কাছে খুবই বাস্তব একজন ব্যক্তি। একজন প্রাণিক ব্যক্তির বিপরীতে একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি তার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে যিহোবার মানগুলোর সম্মান করেন। (গীত. ১১৯:৩৩; ১৪৩:১০) তিনি “মাংসের কার্য্য সকল” না করে বরং “আত্মার ফল” গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। (গালা. ৫:২২, ২৩) আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার অর্থ কী, তা আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য এই তুলনাটা নিয়ে চিন্তা করুন: যে-ব্যক্তি ব্যাবসা করার ক্ষেত্রে খুবই দক্ষ, তাকে বলা হয় ব্যাবসায়িকমনা ব্যক্তি এবং যে-ব্যক্তি ঈশ্বরের প্রতি তার উপাসনার বিষয়ে সত্যিই চিন্তা করেন, তাকে বলা হয় আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি।
একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার অর্থ কী?
১৫ কীভাবে আমরা খ্রিস্টকে অনুকরণ করতে পারি? প্রথম করিন্থীয় ২:১৬ পদ ব্যাখ্যা করে যে, আমাদের “খ্রীষ্টের মন” অর্জন করতে হবে। ফিলিপীয় ২:৫ পদ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, “খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক।” খ্রিস্টের মতো হওয়ার জন্য আমাদের তাঁর মতো করে চিন্তা করা, অনুভব করা এবং কাজ করা শিখতে হবে। যিশু অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়ে বেশি চিন্তা করতেন। তাই, যিশুর মতো হওয়া আমাদের আরও বেশি করে যিহোবার মতো করে তোলে। এই কারণেই, যিশুর মতো করে চিন্তা করতে শেখা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
অন্তর্দৃষ্টি-২ ১১৯৩ অনু. ১, ইংরেজি
প্রজ্ঞা
তাই, এই জগৎ নিজের প্রজ্ঞা অনুযায়ী যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে যিহোবার ব্যবস্থাকে মূর্খতা মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছিল; এর শাসনকর্তারা যদিও হয়তো দক্ষ ও বিচক্ষণ প্রশাসক ছিলেন, তারপরও তারা “গৌরবান্বিত প্রভুকে বিদ্ধ করেছিলেন।” (১করি ১:১৮, NW; ২:৭, ৮, NW) কিন্তু অন্যদিকে, ঈশ্বর জগতের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রজ্ঞাকে মূর্খতায় পরিণত করেছেন। তারা যেটাকে “ঈশ্বরের যে মূর্খতা” বলে মনে করত, তা ব্যবহার করে ঈশ্বর তাদের বিজ্ঞ লোকদের লজ্জায় ফেলেছিলেন ও সেইসঙ্গে তাঁর অপ্রতিরোধ্য উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য তারা যে-ব্যক্তিদের ‘নীচ, তুচ্ছ, কিছু নয়’ বলে মনে করত, তাদের ব্যবহার করেছিলেন। (১করি ১:১৯-২৮) পৌল করিন্থীয় খ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ‘এই যুগের এবং এই যুগের শাসনকর্ত্তাদের’ প্রজ্ঞা ব্যর্থ হয়ে যাবে; তাই এই প্রজ্ঞা প্রেরিতদের আধ্যাত্মিক বার্তার অংশ ছিল না। (১করি ২:৬, ১৩) তিনি কলসীয় খ্রিস্টানদের সাবধান করে দিয়েছিলেন, “দর্শনবিদ্যা [ফিলোসোফিয়াস, আক্ষরিক অর্থ প্রজ্ঞার প্রতি প্রেম] ও অনর্থক প্রতারণা,” যা “মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ,” সেটার দ্বারা কেউ যেন তাদের বন্দি করে না ফেলে।—কল ২:৮; তুলনা করুন, ২০-২৩ পদ।
করিন্থীয়দের প্রতি লেখা চিঠির প্রধান বিষয়গুলো
২:৩-৫. গ্রিক দর্শনবিদ্যা ও শিক্ষার কেন্দ্রস্থল করিন্থে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে, পৌল হয়তো এই বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন যে, তিনি তার শ্রোতাদের মধ্যে প্রত্যয় জন্মাতে পারবেন কি না। কিন্তু, তিনি কোনো ধরনের দুর্বলতা বা ভয়কে তার ঈশ্বরদত্ত পরিচর্যা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে দেননি। একইভাবে, ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিগুলোকে আমাদের বাধা হতে দেওয়া উচিত নয়। পৌলের মতো আমরাও সাহায্যের জন্য আস্থার সঙ্গে যিহোবার উপর নির্ভর করতে পারি।
মার্চ ২৫-৩১
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | ১ করিন্থীয় ৪-৬
“অল্প তাড়ী সূজীর সমস্ত তাল তাড়ীময় করিয়া ফেলে”
অন্তর্দৃষ্টি-২ ২৩০, ইংরেজি
তাড়ি
প্রেরিত পৌল করিন্থের খ্রিস্টানদের একজন নীতিহীন ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়ার জন্য আদেশ দেওয়ার সময় একই রূপক শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা কি জান না যে, অল্প তাড়ী সূজীর সমস্ত তাল তাড়ীময় করিয়া ফেলে। পুরাতন তাড়ী বাহির করিয়া দেও; যেন তোমরা নূতন তাল হইতে পার—তোমরা ত তাড়ীশূন্য। কারণ আমাদের নিস্তারপর্ব্বীয় মেষশাবক বলীকৃত হইয়াছেন, তিনি খ্রীষ্ট।” এরপর তিনি স্পষ্টভাবে দেখিয়েছিলেন, তাড়ি বলতে তিনি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন: “অতএব আইস, আমরা পুরাতন তাড়ী দিয়া নয়, হিংসা ও দুষ্টতার তাড়ী দিয়া নয়, কিন্তু সরলতা ও সত্যশীলতার তাড়ীশূন্য রুটী দিয়া পর্ব্বটী পালন করি।” (১করি ৫:৬-৮) পৌল এখানে যিহুদিদের তাড়িশূন্য রুটির উৎসবের রূপক অর্থ ব্যবহার করেছিলেন, যে-উৎসব নিস্তারপর্বের পর পরই উদ্যাপন করা হতো। ঠিক যেমন সামান্য খামির সুজির সমস্ত তাল কিংবা কিছু রুটিকে তাড়িময় করে তোলে, তেমনই পুরো মণ্ডলী ঈশ্বরের চোখে অশুদ্ধ হয়ে যায়, যদি তারা সেই নীতিহীন কলুষিত প্রভাব মণ্ডলী থেকে দূর করে না দেয়। তাদের মধ্য থেকে সেই “তাড়ী” তাদের দূর করে দিতে হতো, ঠিক যেমনটা নিস্তারপর্বের পর তাড়িশূন্য রুটির উৎসবের সময় ইস্রায়েলীয়রা তাদের ঘরে কোনো তাড়ি রাখতে পারত না।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ৮৬৯-৮৭০, ইংরেজি
শয়তান
একজন ‘ব্যক্তিকে মাংসের বিনাশার্থে শয়তানের হস্তে সমর্পণ করিবার’ অর্থ কী?
মণ্ডলীর একজন সদস্য, যিনি মন্দ আকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হয়ে তার বাবার স্ত্রীর সঙ্গে অজাচারে লিপ্ত ছিলেন, তার বিষয়ে করিন্থীয় মণ্ডলীকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার সময় প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “পরাক্রম সহকারে তাদৃশ ব্যক্তিকে মাংসের বিনাশার্থে শয়তানের হস্তে সমর্পণ করিতে হইবে।” (১করি ৫:৫) সেই ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়ার ও তার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। (১করি ৫:১৩) শয়তানের হস্তে সমর্পণ করার মাধ্যমে তাকে মণ্ডলী থেকে বের করে জগতের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে, যে-জগতের দেবতা ও শাসক হল শয়তান। সুজির ‘সমস্ত তালের’ মধ্যে থাকা ‘অল্প তাড়ীর’ মতো, এই ব্যক্তি ছিলেন মণ্ডলীর ভিতরে থাকা ‘মাংস’ বা মাংসিক প্রভাবের মতো; আর অজাচারে রত এই ব্যক্তিকে দূর করে দেওয়ার মাধ্যমে মণ্ডলীর আধ্যাত্মিকমনা সদস্যরা মণ্ডলীর মধ্য থেকে ‘মাংস’ দূর করে দেবে। (১করি ৫:৬, ৭) একইভাবে, হুমিনায় ও আলেক্সান্দরকেও পৌল শয়তানের হস্তে সমর্পণ করেছিলেন, কারণ তারা তাদের বিশ্বাস ও উত্তম বিবেক বজায় রাখেননি এবং তাদের বিশ্বাসরূপ নৌকা ভগ্ন হয়েছিল।—১তীম ১:২০.
‘ঈশ্বরের প্রেম’ ৩৯-৪০ অনু. ১৯-২১
যখন মেলামেশা বন্ধ করতে হবে
কখনো কখনো আমাদের এমন কারো সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করতে বলা হয়, যিনি মণ্ডলীর একজন সদস্য ছিলেন। এই পরিস্থিতি তখনই দেখা দেয়, যখন একজন ব্যক্তি অনুতাপহীনভাবে ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘন করেন বলে তাকে সমাজচ্যুত করা হয় অথবা যখন একজন ব্যক্তি মিথ্যা মতবাদ শিক্ষা দেওয়ার বা মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করার মাধ্যমে বিশ্বাসকে ত্যাগ করেন। ঈশ্বরের বাক্য স্পষ্টভাবে আমাদের বলে যে, এই ধরনের ব্যক্তির “সংসর্গে থাকিতে নাই।” (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৫:১১-১৩; ২ যোহন ৯-১১) এমন কাউকে এড়িয়ে চলা খুবই কঠিন হতে পারে, যিনি হয়তো একজন বন্ধু ছিলেন অথবা যিনি আমাদের আত্মীয়। আমরা কি এক্ষেত্রে দৃঢ়পদক্ষেপ গ্রহণ করব আর এভাবে দেখাব যে, সমস্তকিছুর ঊর্ধ্বে আমরা যিহোবা ও তাঁর ধার্মিক আইনগুলোর প্রতি আনুগত্য বজায় রাখছি? মনে রাখবেন, যিহোবা আনুগত্য ও বাধ্যতাকে উচ্চমূল্য দিয়ে থাকেন।
সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থা সত্যিই যিহোবার কাছ থেকে এক প্রেমময় ব্যবস্থা। কীভাবে? একজন অনুতাপহীন পাপীকে বের করে দেওয়ার মাধ্যমে যিহোবার পবিত্র নাম ও তাঁর মানগুলো এবং স্বয়ং যিহোবার প্রতি প্রেম প্রদর্শন করা হয়। (১ পিতর ১:১৫, ১৬) সমাজচ্যুত করা মণ্ডলীকে নিরাপদ রাখে। বিশ্বস্ত সদস্যরা স্বেচ্ছাকৃত পাপীদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকে এবং এটা জেনে তাদের উপাসনা চালিয়ে যেতে পারে যে, এই দুষ্ট জগতে মণ্ডলী হল এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল। (১ করিন্থীয় ৫:৭; ইব্রীয় ১২:১৫, ১৬) কড়া শাসন অন্যায়কারীর প্রতি প্রেম প্রকাশ করে। এটা হয়তো ঠিক সেই আকস্মিক ঝাঁকুনির মতো, যা তার চেতনা লাভ করার ও যিহোবার কাছে ফিরে আসার জন্য অপরিহার্য পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন।—ইব্রীয় ১২:১১.
আমরা এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করতে পারি না যে, আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব আমাদের উপর এক দৃঢ় ও জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, বিজ্ঞতার সঙ্গে বন্ধুবান্ধব বাছাই করা আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যিহোবার বন্ধুদেরকে আমাদের বন্ধু করলে এবং যাদেরকে ঈশ্বর ভালোবাসেন, তাদেরকে ভালোবাসলে আমাদের চারপাশে যথাসম্ভব সর্বোত্তম বন্ধুবান্ধব থাকবে। তাদের কাছ থেকে আমরা যা গ্রহণ করব, তা যিহোবাকে খুশি করার বিষয়ে আমাদের দৃঢ়সংকল্প অনুযায়ী জীবনযাপন করতে আমাদেরকে সাহায্য করবে।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
প্রহরীদুর্গ ০৯ ৫/১৫ ২৪ অনু. ১৬
স্বর্গদূতেরা—“সেবাকারী আত্মা”
পরীক্ষার মুখোমুখি খ্রিস্টানরা ‘দূতদের সামনে দর্শনীয় একটা দৃশ্যের মত।’ (১ করি. ৪:৯, জুবিলী বাইবেল) প্রচুর পরিতৃপ্তি সহকারে স্বর্গদূতেরা আমাদের বিশ্বস্ত কাজগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে আর এমনকী একজন পাপীর অনুতপ্ত হওয়াতে আনন্দ করে। (লূক ১৫:১০) খ্রিস্টান নারীদের ঈশ্বরভক্তিপূর্ণ কাজগুলো স্বর্গদূতেরা দেখে থাকে। বাইবেল দেখায় যে, “স্ত্রীর মস্তকে কর্ত্তৃত্বের চিহ্ন রাখা কর্ত্তব্য—দূতগণের জন্য।” (১ করি. ১১:৩, ১০) হ্যাঁ, স্বর্গদূতেরা এটা দেখে আনন্দিত যে, খ্রিস্টান নারীরা ও ঈশ্বরের অন্যান্য পার্থিব দাসেরা ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মস্তকপদকে মেনে নেয়। এই ধরনের বাধ্যতা হচ্ছে ঈশ্বরের এই স্বর্গীয় পুত্রদের জন্য এক উপযুক্ত অনুস্মারক।
অন্তর্দৃষ্টি-২ ২১১, ইংরেজি
ব্যবস্থা
স্বর্গদূতদের উদ্দেশে দেওয়া ব্যবস্থা। স্বর্গদূতেরা, যারা মানুষের চেয়ে উচ্চতর, তারা ঈশ্বরের আইনকানুন ও আজ্ঞার প্রতি বশীভূত থাকে। (ইব্রীয় ১:৭, ১৪; গীত ১০৪:৪) যিহোবা এমনকী তাঁর বিপক্ষ শয়তানকেও আজ্ঞা দিয়েছিলেন ও তার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। (ইয়োব ১:১২; ২:৬) প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল, সর্বোচ্চ বিচারক হিসেবে যিহোবার পদমর্যাদাকে শনাক্ত ও সম্মান করেছিলেন, যখন তিনি দিয়াবলের সঙ্গে বাদানুবাদ করার সময় এই কথা বলেছিলেন: “প্রভু [যিহোবা, NW] তোমাকে ভর্ৎসনা করুন।” (যিহূদা ৯; তুলনা করুন, সখ ৩:২.) সমস্ত স্বর্গদূত গৌরবান্বিত যিশু খ্রিস্টের অধীনে রয়েছে আর যিহোবা ঈশ্বরই তাঁকে সেই কর্তৃত্ব প্রদান করেছেন। (ইব্রীয় ১:৬; ১পিতর ৩:২২; মথি ১৩:৪১; ২৫:৩১; ফিলি ২:৯-১১) তাই, যিশুর নির্দেশে একজন বার্তাবাহক স্বর্গদূতকে যোহনের কাছে পাঠানো হয়েছিল। (প্রকা ১:১) তবে ১ করিন্থীয় ৬:৩ পদে, প্রেরিত পৌল খ্রিস্টের আত্মিক ভাইদের সম্বন্ধে বলেছিলেন, যাদের স্বর্গদূতদের বিচার করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে আর স্পষ্টতই এর কারণ হল, তারাও কোনো-না-কোনো উপায়ে মন্দ আত্মিক প্রাণীদের বিচার কার্যকর করায় অংশ নেবেন।