সেই পশু ও তার ছাপকে শনাক্ত করা
আপনি কি কোনো রহস্য সমাধান করতে পছন্দ করেন? তা করার জন্য আপনি কিছু সূত্রের সন্ধান করেন, যা আপনাকে সমাধান খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। প্রকাশিত বাক্য ১৩ অধ্যায়ের সেই পশুর ৬৬৬ নম্বর, নাম বা ছাপ সম্বন্ধে ঈশ্বর তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্যে প্রয়োজনীয় সূত্রগুলো জুগিয়েছেন।
এই প্রবন্ধে আমরা চারটে প্রধান যুক্তির—অতি গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলোর—দিকে নজর দেব, যেগুলো সেই পশুর ছাপের অর্থ প্রকাশ করবে। আমরা বিবেচনা করব যে, (১) বাইবেলে পাওয়া নামগুলো কখনও কখনও কীভাবে বাছাই করা হয়, (২) সেই বন্যপশুর পরিচয়, (৩) “মনুষ্যের সংখ্যা” ৬৬৬ দ্বারা কী বোঝানো হয় এবং (৪) ৬ সংখ্যার তাৎপর্য ও কেন তিন বার এটার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে, যেমন ৬০০-র সঙ্গে ৬০ যোগ করা ও তাতে ৬ যোগ করা হয়েছে অর্থাৎ ৬৬৬.—প্রকাশিত বাক্য ১৩:১৮.
বাইবেলে পাওয়া নামগুলো—শুধুমাত্র লেবেল নয়
প্রায়ই, বাইবেলে পাওয়া নামগুলোর বিশেষ করে ঈশ্বরদত্ত নামগুলোর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অব্রাম বহু জাতির পিতা হতে চলেছিলেন বলে ঈশ্বর এই কুলপতির নাম পালটে অব্রাহাম রেখেছিলেন, যার মানে “বহুলোকের পিতা।” (আদিপুস্তক ১৭:৫) যোষেফ ও মরিয়মকে ঈশ্বর মরিয়মের ভবিষ্যৎ সন্তানের নাম যিশু রাখতে বলেছিলেন, যার অর্থ “ত্রাণকর্ত্তা [“যিহোবা হলেন পরিত্রাণ,” পাদটীকা, NW]।” (মথি ১:২১; লূক ১:৩১) সেই অর্থপূর্ণ নামের সঙ্গে সংগতি রেখে যিশুর পরিচর্যা ও বলিদানমূলক মৃত্যুর মাধ্যমে যিহোবা আমাদের পরিত্রাণ সম্ভবপর করেছেন।—যোহন ৩:১৬.
সেই অনুসারে, ঈশ্বরদত্ত সংখ্যান্বিত-নাম ৬৬৬-ও নিশ্চয়ই এমন কিছুকে চিত্রিত করে, যেটাকে সেই পশুর বিশিষ্ট কোনো গুণ বলে ঈশ্বর বিবেচনা করেন। স্বাভাবিকভাবেই, সেই বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার জন্য আমাদের স্বয়ং সেই পশুকে শনাক্ত করা এবং তার কার্যাবলি সম্বন্ধে জানা দরকার।
সেই পশুকে শনাক্ত করা হয়েছে
বাইবেলের দানিয়েল বইটি প্রতীক জন্তুগুলোর অর্থ সম্বন্ধে অনেক তথ্য প্রকাশ করে। ৭ অধ্যায়ে ‘বৃহৎ চারিটা জন্তুর’—সিংহ, ভল্লূক, চিতাবাঘ এবং বৃহৎ লৌহময় দন্তের এক ভয়ংকর পশুর—সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। (দানিয়েল ৭:২-৭) দানিয়েল আমাদের বলেন যে, এই জন্তুগুলো বিভিন্ন “রাজা” বা রাজনৈতিক রাজ্যগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা ধারাবাহিকভাবে বিশাল সাম্রাজ্যগুলোর ওপর শাসন করে।—দানিয়েল ৭:১৭, ২৩.
প্রকাশিত বাক্য ১৩:১, ২ পদের পশু সম্বন্ধে দি ইন্টারপ্রিটারস্ ডিকশনারি অফ দ্যা বাইবেল বলে যে, এর “মধ্যে দানিয়েলের দর্শনে দেখা চারটে জন্তুর সমস্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে . . . সেই অনুসারে, [প্রকাশিত বাক্যের] এই প্রথম পশুটা জগতে ঈশ্বর বিরুদ্ধ সমস্ত রাজনৈতিক শাসনের যৌথ শক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে।” এই মন্তব্যকে প্রকাশিত বাক্য ১৩:৭ পদ সমর্থন করে, যা সেই পশুর সম্বন্ধে বলে: “তাহাকে সমস্ত বংশের ও লোকবৃন্দের ও ভাষার ও জাতির উপরে কর্ত্তৃত্ব দত্ত হইল।”a (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)
কেন বাইবেল পশুদেরকে মানব শাসনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে? অন্তত দুটো কারণে। প্রথমত, পশুতুল্য রক্তপাতের নথি গড়ে তোলার কারণে, যা সরকারগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পুঞ্জিভূত করেছে। “যুদ্ধ হচ্ছে ইতিহাসের চলমান ঘটনাগুলোর মধ্যে একটা,” ইতিহাসবেত্তা উইল এবং এরিয়েল ডুরান্ট লিখেছিলেন, “আর সভ্যতা বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও তা হ্রাস পায়নি।” এটা কতই না সত্য যে, “এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে”! (উপদেশক ৮:৯) দ্বিতীয় কারণটা হল যে, “সেই নাগ [শয়তান] আপনার পরাক্রম ও আপনার সিংহাসন ও মহৎ কর্ত্তৃত্ব তাহাকে [পশুকে] দান করিল।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯; ১৩:২) সেই অনুসারে, মানুষের শাসন হল দিয়াবলের সৃষ্টি, তাই এটা তার পশুতুল্য, নাগতুল্য প্রকৃতিকে প্রতিফলিত করে।—যোহন ৮:৪৪; ইফিষীয় ৬:১২.
কিন্তু, তার মানে এই নয় যে, প্রত্যেক মনুষ্য শাসকই সরাসরি শয়তানের হাতিয়ার। বস্তুতপক্ষে, এক অর্থে মানব সরকারগুলো ‘ঈশ্বরের পরিচারক’ হিসেবে সেবা করে যেমন মানব সমাজকে সুদৃঢ় কাঠামো দান করে, যারা না থাকলে সমাজ বিশৃঙ্খলায় ভরে যেত। আর কিছু নেতা মৌলিক মানবাধিকারগুলোকে রক্ষা করে এসেছে, যার অন্তর্ভুক্ত সত্য উপাসনা চালিয়ে যাওয়ার অধিকার—যেটা থাকুক বলে শয়তান চায় না। (রোমীয় ১৩:৩, ৪; ইষ্রা ৭:১১-২৭; প্রেরিত ১৩:৭) তা সত্ত্বেও, দিয়াবলের প্রভাব থাকার কারণে কোনো মানুষ অথবা মনুষ্য প্রতিষ্ঠান কখনও লোকেদের জন্য স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে আসতে পারেনি।b—যোহন ১২:৩১.
“মনুষ্যের সংখ্যা”
৬৬৬ এর অর্থ বোঝার তৃতীয় সূত্রটা হল যে, এটাকে “মনুষ্যের সংখ্যা” বলা হয়েছে। এই অভিব্যক্তিটা কোনো ব্যক্তিবিশেষকে বোঝাতে পারে না কারণ শয়তানের—কোনো মানুষের নয়—সেই পশুর ওপর কর্তৃত্ব রয়েছে। (লূক ৪:৫, ৬; ১ যোহন ৫:১৯; প্রকাশিত বাক্য ১৩:২, ১৮) অন্যদিকে, সেই পশুর “মনুষ্যের সংখ্যা” বা ছাপ থাকা ইঙ্গিত করে যে, এটা হল এক মানব সত্তা, কোনো আত্মা বা মন্দ দূতের মতো নয় আর তাই এটা মানুষের নির্দিষ্ট কিছু স্বভাব প্রদর্শন করে। সেগুলো কী হতে পারে? বাইবেল উত্তর দেয়, এই বলে: “[মানুষ] সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।” (রোমীয় ৩:২৩) তাই, সেই পশুর “মনুষ্যের সংখ্যা” থাকা ইঙ্গিত করে যে, সরকারগুলো পতিত মানব অবস্থাকে, পাপ এবং অসিদ্ধতার ছাপকে প্রতিফলিত করে।
ইতিহাস এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। “যেকোনো সময়ে অস্তিত্বপ্রাপ্ত প্রতিটা সভ্যতাই শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়েছে,” যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন। “ইতিহাস হল সেই সমস্ত প্রচেষ্টার এক বিবরণ যেগুলো ব্যর্থ হয়েছে, উচ্চাকাঙ্ক্ষার কাহিনী যেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি . . . তাই, একজন ইতিহাসবেত্তা হিসেবে একজনকে, দুঃখজনক ঘটনাগুলো যে অপ্রতিরোধ্য, এই বোধ নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।” কিসিঞ্জারের সৎ মূল্যায়ন বাইবেলের এই মৌলিক সত্যকে প্রমাণ করে: “মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।”—যিরমিয় ১০:২৩.
এখন আমরা যেহেতু সেই পশুকে শনাক্ত করেছি এবং ঈশ্বর এটাকে কীভাবে দেখেন তা বুঝতে পেরেছি, তাই আমরা এখন আমাদের ধাঁধা পরীক্ষা করে দেখার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি—ছয় সংখ্যা এবং কেন এটাকে তিন বার পুনরাবৃত্তি করে লেখা হয়েছে—অর্থাৎ ৬৬৬ বা ৬০০-র সঙ্গে ৬০ যোগ করা ও তাতে ৬ যোগ করা।
ছয় সংখ্যার তিন বার পুনরাবৃত্তি —কেন?
শাস্ত্রে, কিছু কিছু সংখ্যার প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সাত সংখ্যাটা প্রায়ই এমন কিছুকে চিত্রিত করতে ব্যবহৃত হয়, যা ঈশ্বরের চোখে সম্পূর্ণ বা নিখুঁত। যেমন, সাত “দিবস” বা বিস্তৃত সময়কাল নিয়ে ঈশ্বরের সৃষ্টির সপ্তাহ গঠিত, যে-সময়কালে ঈশ্বর পৃথিবীর বিষয়ে তাঁর সৃষ্টি সংক্রান্ত উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন করেন। (আদিপুস্তক ১:৩–২:৩) ঈশ্বরের “বাক্য” হচ্ছে রুপোর মতো, যা “সাত বার পরিষ্কৃত” হয়েছে, ফলে নিখুঁতভাবে বিশোধিত। (গীতসংহিতা ১২:৬; হিতোপদেশ ৩০:৫, ৬) কুষ্ঠরোগী নামানকে যর্দন নদীতে সাত বার স্নান করতে বলা হয়েছিল, যার পর তিনি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়েছিলেন।—২ রাজাবলি ৫:১০, ১৪.
ছয় সংখ্যা সাতের চেয়ে এক কম। তা হলে এটা কি উপযুক্তভাবে এমন কিছুর প্রতীক নয়, যা ঈশ্বরের চোখে অসিদ্ধ বা খুঁতযুক্ত? হ্যাঁ, অবশ্যই! (১ বংশাবলি ২০:৬, ৭) এ ছাড়া, ৬৬৬ হিসেবে ছয় সংখ্যাকে তিন বার পুনরাবৃত্তি করে লেখা অত্যন্ত জোরালোভাবে সেই অসিদ্ধতার ওপর জোর দেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি যে সঠিক, সেটাকে এই বিষয়টা সমর্থন করে যে ৬৬৬ হল “মনুষ্যের সংখ্যা,” যা আমরা আলোচনা করেছি। তাই, সেই পশুর ইতিহাস, এর “মনুষ্যের সংখ্যা” ও এমনকি ৬৬৬ সংখ্যা, এই সমস্তকিছু এক নির্ভুল উপসংহারের দিকে পরিচালিত করে—যিহোবার চোখে পুরোপুরি ত্রুটিযুক্ত ও ব্যর্থ।
সেই পশুর অসম্পূর্ণতাগুলোর বর্ণনা আমাদের সেই কথা মনে করিয়ে দেয়, যা প্রাচীন বাবিলের রাজা বেল্শৎসর সম্বন্ধে বলা হয়েছিল। দানিয়েলের মাধ্যমে সেই শাসককে যিহোবা বলেছিলেন: “আপনি তুলাতে পরিমিত হইয়া লঘুরূপে নির্ণীত হইয়াছেন।” সেই রাতেই বেল্শৎসরকে হত্যা করা হয়েছিল এবং শক্তিশালী বাবিল সাম্রাজ্য পতিত হয়েছিল। (দানিয়েল ৫:২৭, ৩০) একইভাবে, সেই রাজনৈতিক পশু এবং যারা তার ছাপ ধারণ করে তাদের ওপর ঈশ্বরের বিচার সেই পশু ও তার সমর্থকদের ধ্বংসকে বোঝায়। কিন্তু, এই ক্ষেত্রে ঈশ্বর কেবলমাত্র একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে উন্মূলিত করবেন না কিন্তু মানব শাসনের প্রতিটা চিহ্ন মুছে ফেলবেন। (দানিয়েল ২:৪৪; প্রকাশিত বাক্য ১৯:১৯, ২০) তাই, এটা কতই না গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা সেই পশুর মারাত্মক ছাপ গ্রহণ করা এড়িয়ে চলি!
ছাপকে শনাক্ত করা হয়েছে
৬৬৬ সংখ্যাটা প্রকাশ করার পর মূহূর্তে প্রকাশিত বাক্য মেষশাবক, যিশু খ্রিস্টের ১,৪৪,০০০ জন অনুসারীর বিষয় উল্লেখ করে, যাদের কপালে তাঁর নাম এবং তাঁর পিতা যিহোবার নাম লেখা রয়েছে। এই নামগুলো এর বহনকারীদের যিহোবা ও তাঁর পুত্রের অধিকারভুক্ত হিসেবে শনাক্ত করে, যাদের সম্বন্ধে তারা গর্বের সঙ্গে সাক্ষ্য বহন করে। একইভাবে, যাদের সেই পশুর ছাপ রয়েছে, তারা সেই পশুর প্রতি তাদের বশ্যতা ঘোষণা করে। তাই, সেই ছাপ রূপকভাবে বলতে গেলে ডান হাতে বা কপালে যেখানেই থাকুক না কেন, সেটা হল এমন এক প্রতীক, যা এর বহনকারীকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করে, যে জগতের পশুতুল্য রাজনৈতিক ব্যবস্থাগুলোকে উপাসনাপূর্ণ সমর্থন করে থাকে। যাদের সেই ছাপ রয়েছে, তারা “কৈসরকে” সেটা দিয়ে থাকে, যা উপযুক্তভাবে ঈশ্বরের অধিকারভুক্ত। (লূক ২০:২৫; প্রকাশিত বাক্য ১৩:৪, ৮; ১৪:১) কীভাবে? রাজনৈতিক সংগঠন, এর প্রতীকগুলো ও এর সামরিক শক্তিকে উপাসনাপূর্ণ সম্মান দিয়ে, যেগুলোর দিকে তারা আশা ও পরিত্রাণের জন্য নির্ভর করে। সত্য ঈশ্বরের প্রতি যেকোনো উপাসনা তারা দিয়ে থাকে, তা কেবলমাত্র মুখে মুখে।
এর বৈসাদৃশ্যে, বাইবেল আমাদের জোরালোভাবে পরামর্শ দেয়: “তোমরা নির্ভর করিও না রাজন্যগণে, বা মনুষ্য-সন্তানে, যাহার নিকটে ত্রাণ নাই। তাহার শ্বাস নির্গত হয়, সে নিজ মৃত্তিকায় প্রতিগমন করে; সেই দিনেই তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়।” (গীতসংহিতা ১৪৬:৩, ৪) সেই বিজ্ঞ পরামর্শে যারা মনোযোগ দেয় তারা হতাশ হয় না, যখন সরকারগুলো তাদের প্রতিজ্ঞাগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয় বা যখন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের নেতারা অনুকূল অবস্থান থেকে পতিত হয়।—হিতোপদেশ ১:৩৩.
এর মানে নয় যে, সত্য খ্রিস্টানরা মানবজাতির অবস্থা দেখে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকে। বরং, তারা সক্রিয়ভাবে এমন এক সরকারের বিষয় ঘোষণা করে, যা মানবজাতির সমস্যাগুলো সমাধান করবে—ঈশ্বরের রাজ্য, যেটাকে তারা প্রতিনিধিত্ব করে।—মথি ২৪:১৪.
ঈশ্বরের রাজ্য—মানবজাতির একমাত্র আশা
যিশু পৃথিবীতে থাকাকালীন ঈশ্বরের রাজ্যকে তাঁর প্রচারের প্রধান বিষয়বস্তু করেছিলেন। (লূক ৪:৪৩) তাঁর আদর্শ প্রার্থনায়, যেটাকে কখনও কখনও প্রভুর প্রার্থনাও বলা হয়, তাতে যিশু তাঁর অনুসারীদের সেই রাজ্য আসার বিষয়ে এবং এখানে এই পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইচ্ছা যেন সম্পন্ন হয়, সেই সম্বন্ধে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। (মথি ৬:৯, ১০) রাজ্য হল এক সরকার, যা সমগ্র পৃথিবীর ওপর শাসন করবে, কোনো পার্থিব রাজধানী থেকে নয় কিন্তু স্বর্গ থেকে। তাই, যিশু এটাকে “স্বর্গ-রাজ্য” বলেছিলেন।—মথি ১১:১২.
সেই রাজ্যের রাজা হওয়ার জন্য যিশু খ্রিস্ট ছাড়া আর কে তাঁর চেয়ে উপযুক্ত অবস্থানে আছেন, যিনি তাঁর ভবিষ্যৎ প্রজাদের জন্য মারা গিয়েছিলেন? (যিশাইয় ৯:৬, ৭; যোহন ৩:১৬) এই সিদ্ধ শাসক, বর্তমানে একজন শক্তিমান আত্মিক ব্যক্তি, শীঘ্রই সেই পশুকে, তার রাজাদের ও তার সৈন্যবাহিনীকে “প্রজ্বলিত গন্ধকময় অগ্নিহ্রদে” সজোরে নিক্ষেপ করবেন, যা সম্পূর্ণ ধ্বংসের এক প্রতীক। কিন্তু এটাই সব নয়। এ ছাড়া, যিশু শয়তানকে নির্মূল করবেন, এমন এক কাজ যা কোনো মানুষ কখনও করতে পারবে না।—প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫; ১৯:১৬, ১৯-২১; ২০:২, ১০.
ঈশ্বরের রাজ্য এর সমস্ত বাধ্য প্রজার জন্য শান্তি নিয়ে আসবে। (গীতসংহিতা ৩৭:১১, ২৯; ৪৬:৮, ৯) এমনকি দুঃখ, ব্যথা ও মৃত্যু আর থাকবে না। যারা সেই পশুর ছাপ থেকে মুক্ত থাকে, তাদের জন্য কী এক গৌরবান্বিত প্রত্যাশাই না রয়েছে!—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
[পাদটীকাগুলো]
a এই পদগুলোর ওপর এক বিস্তারিত আলোচনার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত প্রকাশিত বাক্য—তার মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! (ইংরেজি) বইয়ের ২৮ অধ্যায় দেখুন।
b মনুষ্য শাসন প্রায়ই পশুতুল্য এটা অবগত হওয়া সত্ত্বেও, সত্য খ্রিস্টানরা বাইবেলের নির্দেশ অনুযায়ী “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের” বশীভূত হয়। (রোমীয় ১৩:১) কিন্তু, এই কর্তৃপক্ষরা যখন তাদেরকে ঈশ্বরের আইনের বিরুদ্ধ কোনো কিছু করার জন্য আদেশ দেয়, তখন তারা ‘মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিয়া থাকে।’—প্রেরিত ৫:২৯.
[৫ পৃষ্ঠার বাক্স]
৬৬৬ এর অর্থ বোঝার সূত্রগুলো
১. বাইবেলে পাওয়া নামগুলো প্রায়ই বহনকারী ব্যক্তিদের স্বভাব বা জীবনধারা সম্বন্ধে প্রকাশ করে থাকে, যেমন অব্রাহাম, যিশু এবং আরও অন্যান্য অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। একইভাবে, পশুর সংখ্যান্বিত-নামের বৈশিষ্ট্যগুলোকে চিত্রিত করে।
২. বাইবেলের দানিয়েল বইয়ে, বিভিন্ন পশু ধারাবাহিকভাবে শাসনে আসা মানব রাজ্য বা সাম্রাজ্যগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রকাশিত বাক্য ১৩:১, ২ পদের যৌগিক পশুটা বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে চিত্রিত করে, যা শয়তানের দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত ও নিয়ন্ত্রিত।
৩. সেই পশুর “মনুষ্যের সংখ্যা” থাকা ইঙ্গিত করে যে, এটা হল এক মানব সত্তা, কোনো মন্দ দূত নয়। তাই, এটা পাপ ও অসিদ্ধতার ফলে পাওয়া মানব ত্রুটিগুলোকে প্রতিফলিত করে।
৪. ঈশ্বরের চোখে ছয় সংখ্যাটা, বাইবেলে সম্পূর্ণ বা সিদ্ধতার প্রতীক সাত সংখ্যার চেয়ে কম হওয়ায় তা অসিদ্ধতাকে ইঙ্গিত করে। ৬৬৬ ছাপটা তিন বার সেই সংখ্যার পুনরাবৃত্তি করে সেই ত্রুটির ওপর জোর দেয়।
[৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
মানব শাসন ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে, যা ৬৬৬ সংখ্যা দিয়ে উপযুক্তভাবে চিত্রিত করা হয়েছে
[সৌজন্যে]
ক্ষুধার্ত শিশু: UNITED NATIONS/Photo by F. GRIFFING
[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিশু খ্রিস্ট পৃথিবীতে নিখুঁত শাসনব্যবস্থা নিয়ে আসবেন