“এই জগতের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হচ্ছে”
“আমি এই কথা বলিতেছি, ভ্রাতৃগণ, সময় সঙ্কুচিত।”—১ করিন্থীয় ৭:২৯.
১, ২. আপনি আপনার জীবনকালে কোন পরিবর্তনগুলো দেখেছেন?
আপনি আপনার জীবনকালে কোন পরিবর্তনগুলো দেখেছেন? আপনি কি সেগুলোর কয়েকটা বর্ণনা করতে পারেন? উদাহরণস্বরূপ, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করা হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে গবেষণার কারণে, কিছু দেশে গড় আয়ু বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ৫০ বছরের নিচে থেকে বর্তমানে ৭০ বছরের ওপরে বৃদ্ধি পেয়েছে! সেই উপায়গুলোর কথাও ভেবে দেখুন যেগুলোর মাধ্যমে রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন এবং ফ্যাক্স মেশিনের সঠিক ব্যবহার থেকে আমরা উপকার পেয়েছি। সেইসঙ্গে শিক্ষা, পরিবহণ ব্যবস্থা এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অগ্রগতিমূলক যে-পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলোও উপেক্ষা করা যায় না, যেগুলোর সবই লক্ষ লক্ষ জীবনকে উন্নত করেছে।
২ অবশ্য, সমস্ত পরিবর্তনই ইতিবাচক হয়নি। অপরাধের মাত্রা, নৈতিক মূল্যবোধ, নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার, বিবাহবিচ্ছেদের হার, মুদ্রাস্ফীতি ও সন্ত্রাসবাদের হুমকির চরম বৃদ্ধির ধ্বংসাত্মক প্রভাবকে অবহেলা করা অসম্ভব। যাই হোক, আপনি হয়তো প্রেরিত পৌল অনেক আগে যা লিখেছিলেন, সেটার সঙ্গে একমত হবেন: “এই জগতের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হচ্ছে।”—১ করিন্থীয় ৭:৩১, NW.
৩. পৌল যখন লিখেছিলেন যে, “এই জগতের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হচ্ছে,” তখন তিনি এর দ্বারা কী বুঝিয়েছিলেন?
৩ পৌল যখন সেই কথা বলেছিলেন, তখন তিনি জগৎকে একটা মঞ্চের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। সেই মঞ্চের অংশগ্রহণকারীরা—রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিখ্যাত ব্যক্তিরা—আত্মপ্রকাশ করে, নির্দিষ্ট ভূমিকায় অভিনয় করে এবং এরপর অন্যদের জন্য মঞ্চ ছেড়ে দিয়ে যায়। এটা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে। অতীতে, একটা রাজবংশ হয়তো কয়েক দশক ধরে—এমনকি কয়েক শতাব্দী ধরে—শাসন করত এবং পরিবর্তনগুলো ধীর গতিতে হতো। কিন্তু আজকে এইরকম নয়, যখন কোনো বিশিষ্ট নেতা আততায়ীর হাতে নিহত হন, তখনই ইতিহাসের ধারা মুহূর্তের মধ্যে পালটে যেতে পারে! হ্যাঁ, এই অশান্ত সময়ে আমরা জানি না যে আগামীকাল কী হবে।
৪. (ক) জগতের ঘটনাগুলোর বিষয়ে খ্রিস্টানদের কোন ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখা দরকার? (খ) আমরা এখন কোন দুটো প্রত্যয় উৎপাদক প্রমাণ সম্বন্ধে বিবেচনা করব?
৪ এই জগৎ যদি একটা মঞ্চ আর এর নেতারা অংশগ্রহণকারী হয়, তা হলে খ্রিস্টানরা হল দর্শক।a কিন্তু, “জগতের নয়” বলে তারা প্রদর্শনীতে অথবা অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে নিজেদের অতিরিক্ত জড়িত করে না। (যোহন ১৭:১৬) বরং, তারা নাটক যে এর চূড়ান্ত পর্যায়ে—এক বিপর্যয়মূলক সমাপ্তিতে—পৌঁছাচ্ছে, সেই লক্ষণগুলোর জন্য উৎসুকভাবে অপেক্ষা করছে কারণ তারা জানে যে, যিহোবা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ধার্মিকতার নতুন জগতে নিয়ে যাওয়ার আগে এই বিধিব্যবস্থার শেষ হতে হবে।b তা হলে, আসুন আমরা দুটো প্রমাণ পরীক্ষা করে দেখি, যা দেখায় যে আমরা শেষকালে বাস করছি এবং নতুন জগৎ খুবই নিকটে। এগুলো হল, (১) বাইবেলের কালনিরূপণবিদ্যা এবং (২) জগতের অধঃপতিত পরিস্থিতি।—মথি ২৪:২১; ২ পিতর ৩:১৩.
অবশেষে এক রহস্যের সমাধান হয়!
৫. “জাতিগণের সময়” কী এবং কেন তা আমাদের কাছে আগ্রহের বিষয়?
৫ কালনিরূপণবিদ্যা হল সময় এবং ঘটনাগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সম্বন্ধীয় অধ্যয়ন। যিশু এমন একটা সময়ের কথা বলেছিলেন, যখন জগতের নেতারা ঈশ্বরের রাজ্যের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই মঞ্চের প্রধান অংশগ্রহণকারী হবে। যিশু সেই সময়কালকে বলেছেন “জাতিগণের সময়।” (লূক ২১:২৪) সেই ‘সময়ের’ শেষে, ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য ক্ষমতায় আসবে, যার ন্যায্য শাসক হলেন যিশু। প্রথমে, যিশু “আপন শত্রুদের মধ্যে” শাসন করবেন। (গীতসংহিতা ১১০:২) এরপর দানিয়েল ২:৪৪ পদ অনুসারে, সেই রাজ্য সমস্ত মনুষ্য সরকারগুলোকে “চূর্ণ ও বিনষ্ট” করবে এবং এটা চিরস্থায়ী হবে।
৬. “জাতিগণের সময়” কখন শুরু হয়েছিল, তা কতটা সময় স্থায়ী ছিল এবং কখন তা শেষ হয়েছিল?
৬ কখন “জাতিগণের সময়” শেষ হবে এবং ঈশ্বরের রাজ্য শাসন শুরু হবে? এর উত্তর বাইবেলের কালনিরূপণবিদ্যার মধ্যে রয়েছে, যে-উত্তর “শেষকাল পর্য্যন্ত . . . মুদ্রাঙ্কিত” ছিল। (দানিয়েল ১২:৯) সেই “সময়” যখন উপস্থিত হয়েছিল, তখন যিহোবা বাইবেল ছাত্রদের এক নম্র দলের কাছে এর উত্তর প্রকাশ করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে, তারা বুঝতে পেরেছিল যে, “জাতিগণের সময়” সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেমের ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং সেই ‘সময়ের’ দীর্ঘতা ছিল ২,৫২০ বছর। এর থেকে তারা গণনা করেছিল যে, ১৯১৪ সাল “জাতিগণের সময়” শেষ হওয়াকে চিহ্নিত করে। এ ছাড়া, তারা এও বুঝতে পেরেছিল যে, ১৯১৪ সাল ছিল এই বিধিব্যবস্থার শেষ হওয়ার শুরুর সময়। বাইবেলের একজন ছাত্র হিসেবে, আপনি কি ১৯১৪ সাল কীভাবে গণনা করা হয়, তা শাস্ত্র থেকে ব্যাখ্যা করতে পারেন?c
৭. কোন শাস্ত্রপদগুলো দানিয়েল বইয়ে উল্লেখিত সাত কালের শুরু, দীর্ঘতা এবং শেষ খুঁজে বের করতে আমাদের সাহায্য করে?
৭ দানিয়েলের বইয়ে একটা সূত্র গুপ্ত রাখা হয়েছিল। যেহেতু যিহোবা সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে ‘জাতিগণের সময়ের’ শুরুতে যিরূশালেম ধ্বংস করার জন্য বাবিলের রাজা নবূখদ্নিৎসরকে ব্যবহার করেছিলেন, তাই তিনি সেই শাসকের দ্বারা প্রকাশ করেছিলেন যে, জাতিগণ ঐশিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই মোট প্রতীক সাত কাল ধরে শাসন করে যাবে। (যিহিষ্কেল ২১:২৬, ২৭; দানিয়েল ৪:১৬, ২৩-২৫) সেই সাত কাল কতটা দীর্ঘ? প্রকাশিত বাক্য ১১:২, ৩, এবং ১২:৬, ১৪ পদ অনুসারে সাড়ে তিন কাল হল ১,২৬০ দিন দীর্ঘ। এভাবে, সাত কাল অবশ্যই সেই দীর্ঘ সময়ের দ্বিগুণ অথবা ২,৫২০ দিন হবে। এখানেই কি এর শেষ? না, কারণ দানিয়েলের সমকালীন ব্যক্তি ভাববাদী যিহিষ্কেলকে যিহোবা প্রতীকবাদ ব্যাখ্যা করার জন্য নিয়ম দিয়েছিলেন: “আমি চল্লিশ দিন, এক এক বৎসরের নিমিত্ত এক এক দিন, তোমার জন্য রাখিলাম।” (যিহিষ্কেল ৪:৬) অতএব, সাত কাল আসলে ২,৫২০ বছর দীর্ঘ হবে। সা.কা.পূ. ৬০৭ সালকে শুরু হিসেবে এবং ২,৫২০ বছরকে দীর্ঘতা হিসেবে ব্যবহার করে, আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, সেই সময় ১৯১৪ সালে শেষ হয়েছিল।
“শেষকাল” নিশ্চিত হয়
৮. জগতের পরিস্থিতি যে ১৯১৪ সাল থেকে মন্দতর হচ্ছে, সেই বিষয়ে আপনি কোন প্রমাণ উল্লেখ করতে পারেন?
৮ উনিশশ চৌদ্দ সালের পর থেকে জগতের ঘটনাগুলো নিশ্চিত করে যে, বাইবেলের কালনিরূপণবিদ্যার ওপর ভিত্তি করে দেওয়া ওপরের বোধগম্যতাটি সঠিক। যিশু নিজে বলেছিলেন যে, ‘যুগান্ত’ যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ এবং মহামারী দ্বারা চিহ্নিত হবে। (মথি ২৪:৩-৮; প্রকাশিত বাক্য ৬:২-৮) ১৯১৪ সাল থেকে তা-ই হয়ে আসছে। প্রেরিত পৌল এই বলে আরও যুক্ত করেন যে, একে অপরের প্রতি লোকেদের আচরণে লক্ষণীয় পার্থক্য থাকবে। পরিবর্তনগুলো সম্বন্ধে তার বর্ণনা, যা আমরা সকলে প্রত্যক্ষ করেছি, তা একেবারে সঠিক ছিল।—২ তীমথিয় ৩:১-৫.
৯. সেই ১৯১৪ সাল থেকে জগতের পরিস্থিতির বিষয়ে পর্যবেক্ষকদের কী বলার আছে?
৯ সেই ১৯১৪ সাল থেকে “এই জগতের দৃশ্যপট” কি আসলেই অনেক পরিবর্তিত হয়েছে? অধ্যাপক রর্বাট ভোল তার ১৯১৪ সালের বংশ (ইংরেজি) বইয়ে মন্তব্য করেন: “যারা যুদ্ধের মধ্যে রক্ষা পেয়েছিল, তারা কোন রকমভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে একটি জগতের শেষ হয়েছে এবং ১৯১৪ সালের আগস্ট মাসে আরেকটির আরম্ভ হয়েছে।” এই বিষয়টার সত্যতা স্বীকার করে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র মানসিক-স্বাস্থ্য পরিচালক ড. জর্জ এ. কস্তা ই সিলভা লিখেছিলেন: “আমরা প্রচণ্ড দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে, এমন একটা সময়ে বাস করছি, যার কারণে এতটা মাত্রায় উদ্বিগ্নতা এবং চাপ আসছে, যা মানব ইতিহাসে আগে আর কখনও দেখা যায়নি।” আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও কি তা-ই?
১০. সেই ১৯১৪ সাল থেকে জগতের মন্দতর পরিস্থিতির কারণ সম্বন্ধে বাইবেল কীভাবে আমাদের জ্ঞানালোকিত করে?
১০ জগতের মন্দতর পরিস্থিতির পিছনে অপরাধী ব্যক্তিটা কে? প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-৯ পদ সেই অপরাধীকে প্রকাশ করে: “স্বর্গে যুদ্ধ হইল; মীখায়েল [যিশু খ্রিস্ট] ও তাঁহার দূতগণ ঐ নাগের [শয়তান দিয়াবলের] সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। তাহাতে সেই নাগ ও তাহার দূতগণও যুদ্ধ করিল, কিন্তু জয়ী হইল না, এবং স্বর্গে তাহাদের স্থান আর পাওয়া গেল না। আর সেই মহানাগ নিক্ষিপ্ত হইল; . . . সে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়।” তাই শয়তান দিয়াবল হল সেই দোষী অশান্তি সৃষ্টিকারী আর ১৯১৪ সালে স্বর্গ থেকে তার বহিষ্কৃত হওয়ার মানে ছিল, “পৃথিবী ও সমুদ্রের সন্তাপ হইবে; কেননা দিয়াবল তোমাদের নিকটে নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।”—প্রকাশিত বাক্য ১২:১০, ১২.
যেভাবে চূড়ান্ত অঙ্ক প্রদর্শিত হবে
১১. (ক) ‘জগৎ সমুদয়কে’ ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য শয়তান কোন পন্থাগুলো ব্যবহার করে? (খ) শয়তানের কোন বিশেষ প্রচেষ্টার দিকে প্রেরিত পৌল দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছিলেন?
১১ তার শেষ এগিয়ে আসছে, তা জেনে শয়তান সেই ১৯১৪ সাল থেকে ‘জগৎ সমুদয়কে’ ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য তার শক্তিকে আরও বাড়িয়েছে। সবসময় প্রধান প্রতারক শয়তান মঞ্চের ওপরে জগতের নেতা এবং উদ্ভাবকদের প্রধান অভিনয়কারী হিসেবে বসিয়ে দিয়ে দৃশ্যগুলোর পিছনে কাজ করে। (২ তীমথিয় ৩:১৩; ১ যোহন ৫:১৯) তার লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটা হল, মানবজাতিকে এই চিন্তার দ্বারা প্রতারিত করা যে, তার পরিচালনা পদ্ধতি তাদের জন্য প্রকৃত শান্তি নিয়ে আসতে পারে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, তার অপপ্রচার সফল হয়েছে কারণ পরিস্থিতি যে মন্দ থেকে মন্দতর হচ্ছে, সেই সম্বন্ধে প্রচুর প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও লোকেরা আশাবাদী। প্রেরিত পৌল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, বিধিব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঠিক আগে, শয়তানের অপপ্রচারের উল্লেখযোগ্য অভিব্যক্তি দেখা যাবে। তিনি লিখেছিলেন: “লোক যখন বলে, শান্তি ও অভয়, তখনই তাহাদের কাছে যেমন গর্ব্ভবতীর প্রসববেদনা উপস্থিত হইয়া থাকে, তেমনি আকস্মিক বিনাশ উপস্থিত হয়।”—১ থিষলনীকীয় ৫:৩; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৩.
১২. আমাদের সময়ে শান্তি নিয়ে আসার জন্য কোন ক্রমাগত প্রচেষ্টা করা হচ্ছে?
১২ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, রাজনীতিবিদরা প্রায়ই মানুষের বিভিন্ন পরিকল্পনা বর্ণনা করার জন্য “শান্তি ও অভয়” অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছে। তারা এমনকি ১৯৮৬ সালকে আন্তর্জাতিক শান্তির বছর বলে আখ্যায়িত করে যদিও সেই বছর এই আখ্যা অনুযায়ী চলেনি। জগতের নেতাদের এই ধরনের প্রচেষ্টাগুলো কি ১ থিষলনীকীয় ৫:৩ পদের কথাগুলোর সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতাকে বোঝায়, নাকি পৌল সেই নাটকীয় অংশগুলোর কোনো একটা নির্দিষ্ট ঘটনাকে নির্দেশ করছিলেন, যা জগতের মনোযোগ আকর্ষণ করবে?
১৩. পৌল যখন “শান্তি ও অভয়” বলে চিৎকার করার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তখন তিনি এর পরেই যে-ধ্বংস আসবে, সেটাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন আর এর থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৩ যেহেতু বেশির ভাগ সময়ই বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো একমাত্র তখনই পুরোপুরি বোঝা যায়, যখন সেগুলো পরিপূর্ণ হয় বা পরিপূর্ণ হওয়ার পথে, তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবুও, এটা আগ্রহজনক যে, “শান্তি ও অভয়” বলে চিৎকার করার পর যে-আকস্মিক ধ্বংস আসবে, সেটাকে পৌল গর্ভবতী মহিলার প্রসববেদনার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। প্রায় নয় মাস সময়ের মধ্যে একজন প্রত্যাশী মা তার মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশুর বিষয়ে ক্রমান্বয়ে সতর্ক হয়ে ওঠেন। তিনি হয়তো তার শিশুর হৃদ্স্পন্দন শুনতে অথবা গর্ভের মধ্যে তার নড়াচড়া বুঝতে পারেন। এমনকি শিশুটি হয়তো তাকে লাথিও মারে। প্রায়ই লক্ষণগুলো সেই দিন পর্যন্ত আরও সুস্পষ্ট হয়, যেদিন তিনি এক আকস্মিক বেদনা অনুভব করেন আর সেটা ইঙ্গিত দেয় যে কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত—শিশুর জন্মের সময়—উপস্থিত হয়েছে। তাই, “শান্তি ও অভয়” বলে চিৎকার করার ভবিষদ্বাণী যেভাবেই পরিপূর্ণ হোক না কেন, এটা এক আকস্মিক, বেদনাদায়ক কিন্তু শেষে সেই আশীর্বাদের দিকে পরিচালিত করবে, যা হল দুষ্টতার ধ্বংস এবং নতুন জগৎ ব্যবস্থার শুরু।
১৪. ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো কোন সাধারণ ধারায় ঘটবে আর তা কোন পরিণতিতে পৌঁছাবে?
১৪ যে-বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা দর্শক হিসেবে দেখবে তাদের জন্য আসন্ন ধ্বংস ভয়ংকর হবে। প্রথমত, পৃথিবীর রাজারা (শয়তানের সংগঠনের রাজনৈতিক অংশ) মহতী বাবিলের সমর্থকদের (ধর্মীয় অংশকে) আক্রমণ করবে এবং তাদের ধ্বংস করবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১, ১৫-১৮) এভাবে নাটকের ধারাবাহিকতা হঠাৎ পরিবর্তিত হয়ে শয়তানের রাজ্য এর বিরুদ্ধেই পৃথক হয়ে যাবে, একটা অংশ আরেকটাকে আক্রমণ করবে এবং তা রোধ করার কোনো ক্ষমতাই শয়তানের থাকবে না। (মথি ১২:২৫, ২৬) যিহোবা ‘তাঁহারই মানস পূর্ণ করিবার,’ অর্থাৎ তাঁর ধর্মীয় বিপক্ষদের পৃথিবী থেকে দূর করার জন্য পৃথিবীর রাজাদের হৃদয়ে প্রবৃত্তি দেবেন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) মিথ্যা ধর্ম ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর, শয়তানের যে-সংগঠনগুলো—বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক অংশগুলো—বাকি থাকবে, সেগুলোকে পুরোপুরি পরাজিত করার জন্য যিশু খ্রিস্ট তাঁর স্বর্গীয় বাহিনীকে পরিচালনা দেবেন। অবশেষে, শয়তানকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রাখা হবে। এই ঘটনার মাধ্যমে দৃশ্যের যবনিকা নেমে যাবে এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে চলা নাটকটি শেষ হবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪-১৬; ১৯:১১-২১; ২০:১-৩.
১৫, ১৬. “সময় সঙ্কুচিত,” এই অনুস্মারকটির আমাদের জীবনের ওপর কেমন প্রভাব ফেলা উচিত?
১৫ এই সমস্তকিছু কখন ঘটবে? আমরা সেই দিন বা সময়ের কথা জানি না। (মথি ২৪:৩৬) কিন্তু আমরা জানি যে, “সময় সঙ্কুচিত।” (১ করিন্থীয় ৭:২৯) তাই, বাকি যে-সময়টুকু রয়েছে, তা বিজ্ঞের সঙ্গে ব্যবহার করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে? প্রেরিত পৌল যেমন ব্যাখ্যা করেন, আমাদেরকে অবশ্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্য অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো থেকে ‘সুযোগ কিনিয়া লইতে’ হবে এবং দিন গণনা করতে হবে। এর কারণ? “কেননা এই কাল মন্দ।” আর আমাদের জন্য ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] ইচ্ছা কি, তাহা বুঝিয়া’ আমরা বাকি সংক্ষিপ্ত মূল্যবান সময়কে নষ্ট করব না।—ইফিষীয় ৫:১৫-১৭; ১ পিতর ৪:১-৪.
১৬ সমগ্র জগতের বিধিব্যবস্থার জন্য যে সমাপ্তি অপেক্ষা করছে, তা জেনে ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত? প্রেরিত পিতর আমাদের উপকারের জন্য লিখেছিলেন: “এইরূপে যখন এই সমস্তই বিলীন হইবে, তখন পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত!” (২ পিতর ৩:১১) সত্যিই আমাদের এইরকম ব্যক্তি হওয়া উচিত! পিতরের বিজ্ঞ পরামর্শ অনুযায়ী (১) আমাদের আচরণ পবিত্র কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আচরণের প্রতি ভালভাবে খেয়াল রাখা এবং (২) যিহোবার সেবায় আমাদের উদ্যোগী কাজগুলো সবসময় তাঁর প্রতি আমাদের গভীর ভালবাসা প্রকাশ করে কি না, সেই বিষয়ে আমাদের নিশ্চিত হওয়া দরকার।
১৭. শয়তানের কোন ফাঁদগুলোর বিরুদ্ধে বিশ্বস্ত খ্রিস্টানদের সতর্ক থাকতে হবে?
১৭ ঈশ্বর প্রতি প্রেম আমাদের এই জগতের প্রলোভনগুলোর জন্য এর প্রতি অনুরক্ত হওয়া থেকে আমাদের প্রতিরোধ করবে। বর্তমান বিধিব্যবস্থার জন্য যা রয়েছে, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে জাগতিক, আনন্দবাদী জীবনের চাকচিক্যের দ্বারা আকৃষ্ট হওয়া আমাদের জন্য বিপদজনক। যদিও আমরা এই জগতে বাস করি এবং এখানে কাজ করি, আমাদের এই জগৎকে পূর্ণমাত্রায় ভোগ না করার বিজ্ঞ পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া উচিত। (১ করিন্থীয় ৭:৩১) বস্তুত, জগতের অপপ্রচারের দ্বারা ভুল পথে চালিত হওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করতে হবে। এই জগৎ এর সমস্যাগুলো সমাধান করতে সফল হবে না। এটা অনির্দিষ্ট সময় ধরে চলবে না। কেন আমরা এত নিশ্চিত হতে পারি? কারণ ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য তা বলে: “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৭.
এখনও উত্তম বিষয় আসার বাকি আছে!
১৮, ১৯. নতুন জগতে আপনি কোন পরিবর্তনগুলো দেখার জন্য অপেক্ষা করে আছেন এবং কেন সেই অপেক্ষা সার্থক হবে?
১৮ যিহোবা খুব শীঘ্রই শয়তান এবং তার সমর্থকদের মঞ্চের যবনিকা নামাবেন। এরপর ঈশ্বরের আশীর্বাদে এই বিধিব্যবস্থার শেষ থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা “দৃশ্যপট” পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কাজ শুরু করবে, যা চিরকাল থাকবে। যুদ্ধ আর এই দৃশ্যকে নষ্ট করবে না; ঈশ্বর “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত” করবেন। (গীতসংহিতা ৪৬:৯) খাদ্যাভাবের পরিবর্তে “দেশমধ্যে . . . প্রচুর শস্য হইবে।” (গীতসংহিতা ৭২:১৬) জেলখানা, পুলিশ স্টেশন, যৌনবাহিত রোগব্যাধি, মাদকদ্রব্যের সম্রাটরা, বিবাহবিচ্ছেদের মামলা, দেউলিয়া ব্যবস্থা এবং সন্ত্রাসবাদ চলে যাবে।—গীতসংহিতা ৩৭:২৯; যিশাইয় ৩৩:২৪; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩-৫.
১৯ স্মারণিক কবর শূন্য হয়ে যাবে এবং পুনরুত্থিত কোটি কোটি ব্যক্তিকে—আরও অংশগ্রহণকারীদের—দেখা যাবে। এক বংশ যখন অন্য বংশের সঙ্গে আবার মিলিত হবে এবং দীর্ঘদিন ধরে পৃথক থাকা প্রিয়জনেরা যখন এক উষ্ণ, আন্তরিক আলিঙ্গনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরবে, তখন কত আনন্দই না হবে! অবশেষে, প্রত্যেক জীবিত প্রাণী যিহোবাকে উপাসনা করবে। (প্রকাশিত বাক্য ৫:১৩) পরিবর্তনগুলো যখন পরিপূর্ণ হবে, তখন যবনিকা এক পৃথিবীব্যাপী পরমদেশ প্রকাশ করবে। আপনি যখন সেই দৃশ্য দেখবেন, তখন আপনার কেমন লাগবে? কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি বিস্ময়ে এই বলতে পরিচালিত হবেন: ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এর জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম কিন্তু সেই অপেক্ষা সার্থক হয়েছে!’
[পাদটীকাগুলো]
a এক ভিন্ন প্রসঙ্গে পৌল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের “জগতের ও দূতেদের ও মানুষের সামনে নাটকীয় দৃশ্য” হওয়ার বিষয়ে বলেছিলেন।—১ করি. ৪:৯, NW.
b উদাহরণস্বরূপ, দানিয়েল ১১:৪০, ৪৪ ৪৫ পদে উল্লেখিত ‘উত্তর দেশের রাজার’ পরিচয় সম্বন্ধে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে মনোযোগ দিন (ইংরেজি) বইয়ের ২৮০-১ পৃষ্ঠা দেখুন।
c বাইবেলই দেখায় যে, সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে বন্দি যিহুদিদের ফিরে আসার ৭০ বছর আগে যিরূশালেম পতিত হয়। (যিরমিয় ২৫:১১, ১২; দানিয়েল ৯:১-৩) “জাতিগণের সময়” সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্র থেকে যুক্তি করা (ইংরেজি) বইয়ের ৯৫-৭ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• “এই জগতের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হচ্ছে,” প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলো কীভাবে আমাদের সময়ে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে?
• কীভাবে বাইবেলের কালনিরূপণবিদ্যা ‘জাতিগণের সময়কে’ নির্ভুলভাবে নির্দেশ করে?
• জগতের পরিবর্তিত পরিস্থিতি কীভাবে নিশ্চিত করে যে, ১৯১৪ সাল ‘শেষকালের’ শুরুকে নির্দেশ করে?
• “সময় সঙ্কুচিত” এই বিষয়টার কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করা উচিত?
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
অবশেষে—রহস্যের সমাধান হয়!