অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২০
প্রকাশিত বাক্যে ঈশ্বরের শত্রুদের ধ্বংসের বার্তা
“অশুচি বার্তাগুলো সেই রাজাদের, ইব্রীয় ভাষায় যে-জায়গাকে হর্মাগিদোন বলা হয়, সেখানে একত্রিত করল।”—প্রকা. ১৬:১৬.
গান ৪৯ যিহোবা মোদের আশ্রয়
সারাংশa
১. প্রকাশিত বাক্যে যেমনটা বলা হয়েছে, আজ ঈশ্বরের লোকদের প্রতি কী ঘটছে?
প্রকাশিত বাক্য বই থেকে বোঝা যায় যে, স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করতে শুরু করে দিয়েছে আর শয়তানকে পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। (প্রকা. ১২:১-৯) এর ফলে, স্বর্গে তো শান্তি হয়, তবে পৃথিবীতে আমাদের জন্য সমস্যা আরও বেড়ে যায়। শয়তান প্রচণ্ড রেগে আছে আর তাই, সে যিহোবার বিশ্বস্ত উপাসকদের উপর আক্রমণ করছে।—প্রকা. ১২:১২, ১৫, ১৭.
২. কীভাবে আমরা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি?
২ শয়তানের আক্রমণ সত্ত্বেও কীভাবে আমরা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি? (প্রকা. ১৩:১০) আমরা বিভিন্ন বিষয় থেকে সাহায্য লাভ করতে পারি। সেগুলোর মধ্যে একটা হল ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে, সেই বিষয়ে জানা। উদাহরণ স্বরূপ, প্রকাশিত বাক্যে প্রেরিত যোহন বলেছিলেন, ভবিষ্যতে আমরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করব। একটা আশীর্বাদ হল, ঈশ্বরের শত্রুদের চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে। তাই আসুন, প্রকাশিত বাক্য বই থেকে জানি যে, সেই শত্রুরা কারা এবং তাদের কী হবে।
শত্রুদের শনাক্ত করার জন্য ‘বিভিন্ন চিহ্ন’
৩. প্রকাশিত বাক্যে বলা ‘বিভিন্ন চিহ্ন’ কী?
৩ প্রকাশিত বাক্য বইয়ের প্রথম পদেই বলা হয়েছে যে, এই বইয়ের কথাগুলো “বিভিন্ন চিহ্নের” মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে। (প্রকা. ১:১) যেমন, এই বইয়ে অনেক অদ্ভুত পশুদের বিষয়ে বলা হয়েছে। ‘একটা হিংস্র পশু সমুদ্র থেকে উঠে আসে।’ সেই পশুর ‘দশটা শিং এবং সাতটা মাথা রয়েছে।’ (প্রকা. ১৩:১) পরে ‘ভূমির মধ্য থেকে আরেকটা হিংস্র পশু উঠে আসে।’ সে ভয়ংকর সাপের মতো কথা বলে আর ‘আকাশ থেকে পৃথিবীতে আগুন নামায়।’ (প্রকা. ১৩:১১-১৩) এরপর, ‘গাঢ় লাল রঙের এক হিংস্র পশুকে’ দেখা যায়, যার উপর একজন বেশ্যা বসে আছে। এই তিনটে পশু এমন শত্রুদের চিত্রিত করে, যারা দীর্ঘসময় ধরে যিহোবা এবং তাঁর রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে। তাই, তাদের শনাক্ত করা খুবই জরুরি।—প্রকা. ১৭:১, ৩.
৪-৫. প্রকাশিত বাক্যে বলা পশুগুলো কাদের চিত্রিত করে আর এটা কীভাবে আমরা দানিয়েল ৭:১৫-১৭ পদ থেকে বুঝতে পারি?
৪ এই শত্রুদের শনাক্ত করার আগে আমাদের জানতে হবে, এই পশুগুলো কাদের চিত্রিত করে। এই বিষয়টা আমরা বাইবেলের অন্যান্য বই থেকে বুঝতে পারি। সেগুলোর মধ্যে একটা বই হল দানিয়েল। ভাববাদী দানিয়েল লিখেছিলেন, তিনি একটা স্বপ্নে “সমুদ্র হইতে বৃহৎ চারিটা জন্তু” বা পশুকে বের হতে দেখেন। (দানি. ৭:১-৩) তিনি এও লিখেছিলেন, সেই চারটে বড়ো বড়ো পশু চার জন “রাজা” বা সরকারকে চিত্রিত করে। (পড়ুন, দানিয়েল ৭:১৫-১৭.) এটা থেকে আমরা বুঝতে পারি, প্রকাশিত বাক্যে বলা পশুগুলোও সরকারগুলোকে চিত্রিত করে।
৫ এই কথাগুলো মনে রেখে আসুন আমরা প্রকাশিত বাক্যে বলা কিছু চিহ্নের উপর মনোযোগ দিই। এগুলো বোঝার জন্য আমরা বাইবেলের আলাদা আলাদা পদের উপর মনোযোগ দেব। আসুন, সবচেয়ে প্রথমে জানি, এই হিংস্র পশুগুলো কোন সরকারগুলোকে চিত্রিত করে। আমরা এও জানব যে, তাদের প্রতি কী ঘটতে যাচ্ছে আর তা জেনে আমাদের কী করতে হবে।
ঈশ্বরের শত্রুদের শনাক্তকরণ
৬. প্রকাশিত বাক্য ১৩:১-৪ পদে বলা সাতটা মাথাবিশিষ্ট হিংস্র পশু কে?
৬ সাতটা মাথাবিশিষ্ট হিংস্র পশু কে? আমরা যেমনটা জানলাম, দানিয়েল ৭ অধ্যায়ে চারটে আলাদা আলাদা পশুর বিষয়ে বলা হয়েছে, যেগুলো আলাদা আলাদা সরকারকে চিত্রিত করে। সেখানে লেখা রয়েছে, একটা পশু চিতাবাঘের মতো, একটা ভাল্লুকের মতো, একটা সিংহের মতো আর আরেকটা পশুর মাথায় দশটা শিং রয়েছে। কিন্তু, প্রকাশিত বাক্য ১৩:১-৪ পদে বলা সাতটা মাথাবিশিষ্ট হিংস্র পশু দেখতে দানিয়েল বইয়ে বলা চারটে পশুর মতো। (পড়ুন।) এর শরীর একটা চিতাবাঘের মতো, এর পায়ের পাতা ভাল্লুকের পায়ের পাতার মতো, এর মুখ সিংহের মুখের মতো আর এর দশটা শিং রয়েছে। এটা দেখায় যে, সাতটা মাথাবিশিষ্ট হিংস্র পশু কোনো একটা সরকারকে চিত্রিত করে না। প্রকাশিত বাক্যে লেখা রয়েছে, এই পশু “প্রত্যেক বংশ ও বর্ণ ও ভাষা ও জাতির লোকদের উপর” শাসন করে। (প্রকা. ১৩:৭) এই সমস্ত কিছু থেকে বোঝা যায়, সাতটা মাথাবিশিষ্ট হিংস্র পশু এখন পর্যন্ত আসা সমস্ত সরকারকে চিত্রিত করে।b—উপ. ৮:৯.
৭. হিংস্র পশুর সাতটা মাথা কাকে চিত্রিত করে?
৭ হিংস্র পশুর সাতটা মাথা কাকে চিত্রিত করে? এর উত্তর জানার জন্য আসুন প্রকাশিত বাক্য ১৭ অধ্যায়ের উপর আমরা মনোযোগ দিই। সেখানে হিংস্র পশুর মূর্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। প্রকাশিত বাক্য ১৭:১০ পদে লেখা আছে: “এগুলো সাত জন রাজাকে চিত্রিত করে: পাঁচ জন পতিত হয়েছে, একজন আছে এবং আরেকজন এখনও আসেনি; সে আসার পর তাকে কেবল অল্পসময় থাকতে হবে।” শয়তান এখনও পর্যন্ত অনেক সরকারকে ব্যবহার করেছে, যাদের মধ্যে সাতটা সরকারের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাব ছিল। তাই, এগুলোকে বিশ্বশক্তি বলা হয় এবং প্রকাশিত বাক্যে তাদের তুলনা ‘মাথার’ সঙ্গে করা হয়েছে। ঈশ্বরের লোকদের এই বিশ্বশক্তির মধ্য থেকে কিছু বিশ্বশক্তির অধীনে থাকতে হয়েছে, আবার কিছু বিশ্বশক্তির কাছ থেকে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। প্রেরিত যোহনের দিন পর্যন্ত পাঁচটা বিশ্বশক্তি এসে চলে গিয়েছিল। সেগুলো ছিল, মিশর, অশূর, বাবিল, মাদীয়-পারস্য ও গ্রিস। আর তার দিনে ষষ্ঠ বিশ্বশক্তি রোম শাসন করছিল। তাহলে এখন প্রশ্ন ওঠে, সপ্তম ও শেষ বিশ্বশক্তি কে হত?
৮. হিংস্র পশুর সপ্তম মাথা কোন বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে?
৮ “প্রভুর দিনে” অর্থাৎ এই শেষকালে কোন বিশ্বশক্তির শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে? (প্রকা. ১:১০) অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির। তাই, আমরা বলতে পারি, প্রকাশিত বাক্য ১৩:১-৪ পদে যে-হিংস্র পশুর বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, এর সপ্তম মাথা এই বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে। আর এটার প্রমাণ আমরা দানিয়েল বই থেকেও পাই।
৯. যে-হিংস্র পশুর “মেষের মতো দুটো শিং রয়েছে,” সেটা কাকে চিত্রিত করে?
৯ প্রকাশিত বাক্য ১৩ অধ্যায়ে বলা সপ্তম মাথা অর্থাৎ অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে এমন এক হিংস্র পশুর মতো বলা হয়েছে, যেটার ‘মেষের মতো দুটো শিং রয়েছে, কিন্তু ভয়ংকর সাপের মতো কথা বলে।’ এই পশু ‘বড়ো বড়ো অলৌকিক কাজ করে এবং আকাশ থেকে পৃথিবীতে আগুন নামায়।’ (প্রকা. ১৩:১১-১৫) আবার প্রকাশিত বাক্য ১৬ ও ১৯ অধ্যায়ে এই পশুকে ‘মিথ্যা ভাববাদী’ বলা হয়েছে। (প্রকা. ১৬:১৩; ১৯:২০) দানিয়েলের বইয়েও বলা হয়েছিল যে, অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি “আশ্চর্য্যরূপে বিনাশ” করবে। (দানি. ৮:১৯, ২৩, ২৪) এই ভবিষ্যদ্বাণী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পরিপূর্ণ হয়েছিল। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা দুটো পরমাণু বোমা তৈরি করেছিল আর এই দুই দেশ মিলে জাপানের উপর সেই বোমা ফেলেছিল। এর ফলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিল। এভাবে, অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি ‘আকাশ থেকে পৃথিবীতে আগুন নামিয়েছিল।’
১০. “হিংস্র পশুর মূর্তি” কাকে চিত্রিত করে? (প্রকাশিত বাক্য ১৩:১৪, ১৫; ১৭:৩, ৮, ১১)
১০ এখন আমরা আরেকটা হিংস্র পশুর বিষয়ে লক্ষ করব। এই পশু দেখতে একেবারে সাতটা মাথাবিশিষ্ট হিংস্র পশুর মতো, শুধু এর রং গাঢ় লাল। এটাকে “হিংস্র পশুর মূর্তি” এবং “অষ্টম রাজা” বলা হয়েছে।c (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৩:১৪, ১৫; ১৭:৩, ৮, ১১.) ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে যে, এই “রাজা” আসবে, কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং পরে আবারও ফিরে আসবে। এই বৈশিষ্ট্য পুরোপুরিভাবে জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘের (ইউনাইটেড নেশন্স) সঙ্গে মিলে যায়। আগে এটার নাম ছিল লিগ অব নেশন্স। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটা অদৃশ্য হয়ে যায়, কিন্তু পরে এটা আবারও ফিরে আসে আর এখন আমাদের সময়ে এটা ইউনাইটেড নেশন্স হিসেবে পরিচিত। এটা পুরো পৃথিবীর সরকারগুলোকে সমর্থন করে।
১১. (ক) হিংস্র পশুগুলো কী করবে? (খ) কেন আমরা সেইসময় ভয় পাব না?
১১ সমস্ত হিংস্র পশু অর্থাৎ সরকারগুলো লোকদের উসকে দেবে যেন তারা যিহোবা এবং তাঁর উপাসকদের বিরোধিতা করে। এভাবে, সেই সরকারগুলো ‘পুরো পৃথিবীর রাজাদের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের মহাদিনের যুদ্ধে’ অর্থাৎ আরমাগিদোনের যুদ্ধের জন্য একত্রিত করবে। (প্রকা. ১৬:১৩, ১৪, ১৬) কিন্তু সেইসময়, আমাদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন হবে না। আমাদের ঈশ্বর যিহোবা আমাদের রক্ষা করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।—যিহি. ৩৮:২১-২৩.
১২. সমস্ত হিংস্র পশুর কী হবে?
১২ সমস্ত হিংস্র পশুর কী হবে? প্রকাশিত বাক্য ১৯:২০ পদে লেখা আছে: “সেই হিংস্র পশুকে ও সেইসঙ্গে সেই মিথ্যা ভাববাদীকে ধরা হল, যে হিংস্র পশুর সামনে বিভিন্ন অলৌকিক কাজ করার মাধ্যমে সেই লোকদের ভ্রান্ত করত, যারা হিংস্র পশুর চিহ্ন গ্রহণ করেছিল এবং যারা এটার মূর্তির উপাসনা করত। সেই হিংস্র পশু এবং মিথ্যা ভাববাদী, উভয়কেই জীবিত অবস্থায় গন্ধকের দ্বারা জ্বলছে এমন আগুনের হ্রদে নিক্ষেপ করা হল।” লক্ষ করুন, এই পদে লেখা আছে যে, তাদের জীবিত অবস্থায় আগুনের হ্রদে ফেলে দেওয়া হবে। এর অর্থ হল, সরকারগুলোর শাসন চলাকালীনই ঈশ্বর তাদের ধ্বংস করে দেবেন।
১৩. সরকারগুলো আমাদের উপর কোন বিষয়ে চাপ দেয়?
১৩ এটা জেনে আমাদের কী করতে হবে? আমাদের যিহোবা এবং তাঁর রাজ্যের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে। (যোহন ১৮:৩৬) এরজন্য জরুরি রয়েছে যেন আমরা পুরোপুরিভাবে নিরপেক্ষ থাকি আর জগতের রাজনৈতিক বিষয়ে জড়িয়ে না পড়ি। এইরকমটা করা কঠিন হতে পারে কারণ সরকারগুলো চায় যেন আমরা আমাদের কথাবার্তা এবং কাজের মাধ্যমে তাদের সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করি। তবে, যে-লোকেরা তাদের সমর্থন করছে, তারা এক অর্থে নিজেদের উপর হিংস্র পশুর চিহ্ন গ্রহণ করছে। (প্রকা. ১৩:১৬, ১৭) যাদের এই চিহ্ন থাকবে, যিহোবা তাদের প্রত্যাখ্যান করবেন আর তারা অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ হাতছাড়া করবে। (প্রকা. ১৪:৯, ১০; ২০:৪) তাই, সরকারগুলো আমাদের উপর যতই চাপ দিক না কেন, আমাদের সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।
মহাবেশ্যার লজ্জাজনক বিনাশ
১৪. প্রেরিত যোহন কী দেখে হতবাক হয়ে যান? (প্রকাশিত বাক্য ১৭:৩-৫)
১৪ প্রকাশিত বাক্য ১৭:৩-৫ পদ পড়ুন। প্রেরিত যোহন দর্শনে এমন কিছু দেখেন, যেটা দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান। তিনি দেখেন, এক মহিলা গাঢ় লাল রঙের হিংস্র পশুর উপরে বসে আছে। সেই মহিলা ‘মহাবেশ্যা,’ যাকে “মহতী বাবিল” বলা হয়েছে আর যে ‘পৃথিবীর রাজাদের সঙ্গে যৌন অনৈতিক কাজ করছে।’—প্রকা. ১৭:১, ২, ৬.
১৫-১৬. “মহতী বাবিল” কে আর কীভাবে আমরা তা বলতে পারি?
১৫ “মহতী বাবিল” কে? এই বেশ্যা কোনো সরকারকে চিত্রিত করে না, কারণ প্রকাশিত বাক্যে বলা হয়েছে, সে পৃথিবীর রাজাদের সঙ্গে যৌন অনৈতিক কাজ করছে। (প্রকা. ১৮:৯) সেখানে এও বলা হয়েছে যে, সে হিংস্র পশুর উপরে বসে আছে অর্থাৎ সরকারগুলোর উপর কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করছে। আর এই বেশ্যা লোভী ব্যবসায়ীদেরও চিত্রিত করে না, কারণ তাদের আলাদা করে ‘পৃথিবীর বণিক’ বলা হয়েছে।—প্রকা. ১৮:১১, ১৫, ১৬.
১৬ বাইবেলে অনেক লোককে “বেশ্যা” বলা হয়েছে। কারণ তারা যিহোবার উপাসনা করার দাবি করে, কিন্তু অন্যদিকে তারা মূর্তিপূজা করে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে জগতের অংশ হয়ে থাকে। (যিহি. ১৬:২, ৩৫, ৩৬; যাকোব ৪:৪) তবে, যে-লোকেরা মন থেকে যিহোবার উপাসনা করে এবং তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, বাইবেলে তাদের “শুদ্ধ” কিংবা “কুমার” বলা হয়েছে। (২ করি. ১১:২; প্রকা. ১৪:৪) এ ছাড়া, প্রাচীন বাবিল থেকে মিথ্যা ধর্মের শুরু হয়েছিল। এই সমস্ত বিষয় থেকে বোঝা যায় যে, মহতী বাবিল পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা সমস্ত মিথ্যা ধর্মকে চিত্রিত করে।—প্রকা. ১৭:৫, ১৮; jw.org ওয়েবসাইটে “মহতী বাবিল কে?” শিরোনামের অনলাইন প্রবন্ধটা ইংরেজি ভাষায় দেখুন।
১৭. মহতী বাবিলের কী হবে?
১৭ মহতী বাবিলের কী হবে? প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬, ১৭ পদে লেখা আছে: “তুমি যে-দশটা শিং এবং হিংস্র পশুকে দেখলে, সেগুলো ওই বেশ্যাকে ঘৃণা করবে আর তার সমস্ত কিছু কেড়ে নেবে এবং তাকে উলঙ্গ অবস্থায় ফেলে রাখবে; এরপর এগুলো তার মাংস খেয়ে ফেলবে এবং পরে তাকে আগুনে পুরোপুরিভাবে পুড়িয়ে দেবে। কারণ এই ইচ্ছা ঈশ্বরই এদের হৃদয়ে দিলেন, যেন এরা নিজেদেরই যে-একই উদ্দেশ্য রয়েছে, সেই অনুযায়ী কাজ করে, যেটা আসলে ঈশ্বরেরই উদ্দেশ্য। ঈশ্বর তা করলেন, যাতে এরা ঈশ্বরের বাক্য সফল না হওয়া পর্যন্ত এদের শাসন করার ক্ষমতা সেই হিংস্র পশুকে দিয়ে দেয়।” এই পদগুলো থেকে বুঝতে পারি যে, যিহোবা জগতের সরকারগুলোকে পরিচালিত করবেন, যাতে তারা গাঢ় লাল রঙের হিংস্র পশু অর্থাৎ ইউনাইটেড নেশন্স-এর মাধ্যমে জগতের সমস্ত মিথ্যা ধর্মকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেয়।—প্রকা. ১৮:২১-২৪.
১৮. মহতী বাবিল থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
১৮ এটা জেনে আমাদের কী করতে হবে? আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমাদের উপাসনা “ঈশ্বর ও পিতার দৃষ্টিতে বিশুদ্ধ ও নিষ্কলঙ্ক” হয়। (যাকোব ১:২৭) এরজন্য, আমাদের মহতী বাবিল থেকে বের হয়ে আসা উচিত। আমাদের মিথ্যা শিক্ষাগুলো মেনে চলা উচিত নয়, পৌত্তলিক ছুটির দিনগুলো পালন করা উচিত নয়, নিজেদের নৈতিক মানকে নীচে নামতে দেওয়া উচিত নয় এবং জাদুবিদ্যা চর্চা করা উচিত নয়। শুধু তা-ই নয়, আমাদের অন্যদের উৎসাহিত করা উচিত যেন তারা মহতী বাবিল থেকে ‘বের হয়ে আসে’ এবং এর পাপের অংশী না হয়।—প্রকা. ১৮:৪.
ঈশ্বরের সবচেয়ে বড়ো শত্রুর ধ্বংস
১৯. “আগুনের মতো লাল এক প্রকাণ্ড ভয়ংকর সাপ” কে?
১৯ প্রকাশিত বাক্য বইয়ে ‘আগুনের মতো লাল এক প্রকাণ্ড ভয়ংকর সাপের’ বিষয়েও বলা হয়েছে। (প্রকা. ১২:৩) এই ভয়ংকর সাপ যিশু এবং তাঁর স্বর্গদূতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। (প্রকা. ১২:৭-৯) এই সাপ ঈশ্বরের লোকদের উপর অত্যাচার করে আর এ-ই হিংস্র পশুকে অর্থাৎ জগতের সমস্ত সরকারকে ক্ষমতা দিয়েছে। (প্রকা. ১২:১৭; ১৩:৪) এই ভয়ংকর সাপ কে? “এ সেই পুরোনো সাপ, যেটাকে দিয়াবল ও শয়তান বলা হয়।” (প্রকা. ১২:৯; ২০:২) সে হল যিহোবার সবচেয়ে বড়ো শত্রু আর সে যিহোবার বাকি শত্রুদের পর্দার আড়ালে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
২০. ভয়ংকর সাপের কী হবে?
২০ ভয়ংকর সাপের কী হবে? প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩ পদে বলা হয়েছে, একজন স্বর্গদূত শয়তানকে অতল গহ্বরে ফেলে দেবেন আর তাকে ১,০০০ বছরের জন্য বেঁধে রাখবেন। সেইসময় শয়তান “জাতিগুলোকে আর ভ্রান্ত করতে” পারবে না। হাজার বছর শেষ হওয়ার পর তাকে এবং তার মন্দ স্বর্গদূতদের “আগুন ও গন্ধকের হ্রদে” ফেলে দেওয়া হবে। (প্রকা. ২০:১০) এর অর্থ হল, তাদের চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে। একটু চিন্তা করুন, যখন শয়তান এবং তার মন্দ স্বর্গদূতেরা থাকবে না, তখন সবাই কতই-না স্বস্তি পাবে!
২১. কেন আমরা প্রকাশিত বাক্যের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পড়ে আনন্দিত হই?
২১ প্রকাশিত বাক্য বইয়ে দেওয়া চিহ্নগুলোর অর্থ জেনে আমরা কতই-না আনন্দিত হয়েছি এবং সাহস লাভ করেছি, তাই না? আমরা শুধু ঈশ্বরের শত্রুদের শনাক্তই করিনি, কিন্তু সেইসঙ্গে এও জানতে পেরেছি যে, তাদের কী হবে। সত্যিই, “সুখী সেই ব্যক্তি, যে এই ভবিষ্যদ্বাণীর কথাগুলো জোরে জোরে পড়ে এবং . . . ভবিষ্যদ্বাণীতে লেখা বিষয়গুলো শোনে।” (প্রকা. ১:৩) কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, শত্রুদের ধ্বংস করার পর ঈশ্বরের লোকেরা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করবে? এর উত্তর পরের প্রবন্ধে দেওয়া হবে।
গান ৩০ যিহোবা তাঁর শাসন শুরু করেন
a প্রকাশিত বাক্য বইয়ে কিছু চিহ্ন দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর সাহায্যে আমরা শনাক্ত করতে পারি যে, ঈশ্বরের শত্রুরা কারা। এই চিহ্নগুলোর অর্থ জানার জন্য আমরা দানিয়েলের বই পরীক্ষা করতে পারি, কারণ সেখানে দেওয়া কিছু ভবিষ্যদ্বাণী এবং প্রকাশিত বাক্যের কিছু ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে মিল রয়েছে। এই প্রবন্ধে, আমরা সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর বিষয়ে আলোচনা করব। এভাবে আমরা ঈশ্বরের শত্রুদের শনাক্ত করতে পারব আর এও জানতে পারব যে, তাদের কী হবে।
b সাতটা মাথাবিশিষ্ট হিংস্র পশুর দশটা শিং আছে, এটা থেকেও বোঝা যায় যে, এই পশু সমস্ত সরকারকে চিত্রিত করে। বাইবেলে দশ সংখ্যা প্রায়ই পূর্ণতাকে চিত্রিত করে।
c প্রথম হিংস্র পশু এবং সেটার মূর্তির মধ্যে আরেকটা পার্থক্য আছে। মূর্তির শিংগুলোতে কোনো “মুকুট” নেই। (প্রকা. ১৩:১) কেন? কারণ এটা কোনো সরকার নয় বরং এটা ‘সাতটা [বিশ্বশক্তির] মধ্য থেকে এসেছে।’—jw.org ওয়েবসাইটে “প্রকাশিত বাক্য ১৭ অধ্যায়ে বলা গাঢ় লাল রঙের পশু কাকে চিত্রিত করে?” শিরোনামের অনলাইন প্রবন্ধটা ইংরেজি ভাষায় দেখুন।