বিশ্বব্যাপী এক সমস্যা, বিশ্বব্যাপী এক সমাধান
সর্বত্র দুঃখকষ্ট দেখা যায় আর অনেকে সমবেদনার সঙ্গে সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করে, যারা দুঃখকষ্ট ভোগ করে। উদাহরণস্বরূপ, অসুস্থ বা আহত ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য চিকিৎসা কর্মীরা হাসপাতালগুলোতে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করে। দমকলকর্মী, পুলিশ, আইনপ্রণেতা এবং উদ্ধারকর্মীরা অন্যদের দুঃখকষ্ট লাঘব কিংবা রোধ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। এই ধরনের প্রচেষ্টাগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে লোকেদের সাহায্য করার জন্য অনেক কিছুই করে, কিন্তু পৃথিবীব্যাপী দুঃখকষ্ট দূর করা কোনো ব্যক্তি-বিশেষ অথবা সংগঠনের সাধ্যের বাইরে। এর বিপরীতে, ঈশ্বর বিশ্বব্যাপী এক সমাধান নিয়ে আসতে পারেন এবং আনবেন।
বাইবেলের শেষ বইয়ে এই আশ্বাস পাওয়া যায়: “[ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) এই প্রতিজ্ঞার পরিধি সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। এটা সমস্ত দুঃখকষ্টের শেষ নিয়ে আসার বিষয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে। আর এটা তিনি পৃথিবী থেকে যুদ্ধ, ক্ষুধা, অসুস্থতা এবং অবিচার ও সেইসঙ্গে সমস্ত দুষ্ট লোককে দূর করার দ্বারা করবেন। কোনো মানুষই তা সম্পাদন করতে পারবে না।
ঈশ্বরের রাজ্য যা সম্পাদন করবে
নিখিলবিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ব্যক্তির—পুনরুত্থিত যিশু খ্রিস্টের—মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করবেন। এমন সময় আসতে যাচ্ছে, যখন যিশু পুরো পৃথিবীর ওপর কোনো বিরোধিতা ছাড়াই রাজা হিসেবে রাজত্ব করবেন। মানবজাতি আর মানব রাজা, রাষ্ট্রপতি বা রাজনীতিবিদদের দ্বারা শাসিত হবে না। এর পরিবর্তে, তাদের ওপর একজন রাজা এবং একটা সরকার—ঈশ্বরের রাজ্য—শাসন করবে।
সেই রাজ্য সমস্ত মানব সরকারকে দূর করে দেবে। অনেক আগে, বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: “স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না; তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” (দানিয়েল ২:৪৪) সারা পৃথিবীর লোকেরা একটা মাত্র ধার্মিক সরকারের—ঈশ্বরের রাজ্যের—অধীনে একতাবদ্ধ হবে।
যিশু যখন একজন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি অনেক বার সেই রাজ্য সম্বন্ধে কথা বলেছিলেন। আদর্শ প্রার্থনায় তিনি এই রাজ্যের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন ও তাঁর শিষ্যদের এভাবে প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (মথি ৬:১০) লক্ষ করুন, যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, সেই রাজ্য পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর ঈশ্বরের ইচ্ছা হল পৃথিবীব্যাপী দুঃখকষ্ট দূর করা।
ঈশ্বরের ধার্মিক সরকার সেই আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে, যেগুলো কোনো মানব সরকার কখনোই নিয়ে আসতে পারবে না। মনে করে দেখুন যে, যিহোবা তাঁর পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে প্রদান করেছেন, যাতে মানুষেরা অনন্তজীবন লাভ করতে পারে। রাজ্যের উপকারী শাসনব্যবস্থার অধীনে লোকেরা ধীরে ধীরে সিদ্ধতার দিকে এগিয়ে যাবে। এর ফল কী হবে? যিহোবা “মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট [করিবেন], ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন।”—যিশাইয় ২৫:৮.
কেউ কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারে: ‘কেন ঈশ্বর আরও আগে পদক্ষেপ নেননি? তিনি কীসের জন্য অপেক্ষা করছেন?’ সমস্ত দুঃখকষ্ট দূর অথবা এমনকী রোধ করার জন্য যিহোবা অনেক আগেই পদক্ষেপ নিতে পারতেন। এর পরিবর্তে, তিনি এটাকে চলতে দিয়েছেন, তবে কোনো স্বার্থপর কারণের জন্য নয় বরং পৃথিবীতে তাঁর সন্তানদের অনন্ত উপকারের জন্য। প্রেমময় বাবা-মায়েরা সেই সময় তাদের সন্তানকে কষ্ট ভোগ করতে দেবে, যদি তারা জানে যে, এটা বিভিন্ন স্থায়ী উপকার নিয়ে আসবে। একইভাবে, যিহোবা যে মানুষকে সাময়িকভাবে দুঃখকষ্ট ভোগ করতে দিয়েছেন, সেটার পিছনে অনেক উত্তম কারণ রয়েছে আর এই কারণগুলো সম্বন্ধে বাইবেলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে এই ধরনের বিষয়গুলো জড়িত যেমন, স্বাধীন ইচ্ছা, পাপ এবং যিহোবার শাসন করার ন্যায্যতা সম্বন্ধীয় বিচার্য বিষয়। বাইবেল এও ব্যাখ্যা করে যে, সীমিত সময়ের জন্য এক মন্দ আত্মিক প্রাণীকে জগতের ওপর শাসন করতে দেওয়া হয়েছে।a
যদিও আমরা এখানে মাত্র কয়েকটা পৃষ্ঠায় সমস্ত কারণ ব্যাখ্যা করতে পারব না কিন্তু দুটো বিষয় রয়েছে, যেগুলো আমাদের আশা ও উৎসাহ প্রদান করতে পারে। প্রথমটা হল: আমরা যে-দুঃখকষ্টই ভোগ করি না কেন, যিহোবা আমাদেরকে সেগুলোর চেয়ে আরও বেশি আশীর্বাদ করবেন। অধিকন্তু, ঈশ্বর আমাদের আশ্বাস দেন: “পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না।” (যিশাইয় ৬৫:১৭) সাময়িকভাবে মন্দতা থাকতে অনুমতি দেওয়ার ফলে যে-দুর্দশা ও দুঃখকষ্ট এসেছে, সেগুলোকে ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে এবং স্থায়ীভাবে দূর করবেন।
দ্বিতীয় বিষয়টা হল: দুঃখকষ্টের শেষ নিয়ে আসার জন্য ঈশ্বর এক অপরিবর্তনীয় সময় নির্ধারণ করে রেখেছেন। মনে করে দেখুন, ভাববাদী হবক্কূক জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, যিহোবা কতকাল দৌরাত্ম্য এবং বিবাদ থাকতে অনুমতি দেবেন। যিহোবা উত্তর দিয়েছিলেন: “এই দর্শন এখনও নিরূপিত কালের নিমিত্ত . . . তাহা . . . যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (হবক্কূক ২:৩) পরের প্রবন্ধে আমরা যেমন দেখব যে, ‘নিরূপিত কাল’ সন্নিকট। (w০৯-E ১২/০১)
[পাদটীকা]
a কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দিয়েছেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ১১ অধ্যায় দেখুন।
[৭ পৃষ্ঠার বাক্স]
যে-শাস্ত্রপদগুলো এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে নির্দেশ করে
যুদ্ধ আর থাকবে না:
“চল, সদাপ্রভুর কার্য্যকলাপ সন্দর্শন কর, যিনি পৃথিবীতে ধ্বংস সাধন করিলেন। তিনি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন।”—গীতসংহিতা ৪৬:৮, ৯.
প্রিয়জনেরা ফিরে আসবে:
“ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।”—প্রেরিত ২৪:১৫.
সকলের জন্য খাদ্য থাকবে:
“দেশমধ্যে পর্ব্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হইবে।” —গীতসংহিতা ৭২:১৬.
অসুস্থতা আর থাকবে না:
“নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।”—যিশাইয় ৩৩:২৪.
দুষ্ট লোকেরা আর থাকবে না:
“দুষ্টগণ দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইবে, বিশ্বাসঘাতকেরা তথা হইতে উন্মূলিত হইবে।”—হিতোপদেশ ২:২২.
ন্যায়বিচার বিরাজ করবে:
“দেখ, এক রাজা [খ্রিস্ট যিশু] ধার্ম্মিকতায় রাজত্ব করিবেন, ও শাসনকর্ত্তৃগণ ন্যায়ে শাসন করিবেন।”—যিশাইয় ৩২:১.
[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
আমরা যে-দুঃখকষ্টই ভোগ করি না কেন, ঈশ্বরের রাজ্য তার প্রতিকার করবে