আমাদের ‘দেশে’ যিহোবার আশীর্বাদ
“এই স্রোত যে কোন স্থান দিয়া বহিবে, সেই স্থানের সকলই সঞ্জীবিত হইবে।”—যিহিষ্কেল ৪৭:৯.
১, ২. (ক) জল কতটা গুরুত্বপূর্ণ? (খ) যিহিষ্কেলের দর্শনে নদীর জল কী চিত্রিত করে?
জল এক অসাধারণ তরল পদার্থ। সমস্ত ধরনের জীবন এর ওপর নির্ভরশীল। আমরা কেউই জল ছাড়া বেশি দিন বাঁচতে পারি না। যেহেতু জল ময়লা পরিষ্কার করতে এবং ধুয়ে ফেলতে পারে তাই আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজেও জলের ওপর নির্ভর করি। তাই আমরা আমাদের শরীর, আমাদের কাপড়চোপড়, এমনকি খাবার জিনিসও জল দিয়ে ধুই। আর এটা করে আমরা আমাদের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখি।
২ বাইবেলে জীবনের জন্য যিহোবার আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলোকে জলের দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে। (যিরমিয় ২:১৩; যোহন ৪:৭-১৫) এই ব্যবস্থাগুলোয় ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান রয়েছে যা তাঁর বাক্যে পাওয়া যায় আর খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মাধ্যমে তাঁর লোকেদের শুচি করাও এর সঙ্গে যুক্ত। (ইফিষীয় ৫:২৫-২৭) যিহিষ্কেলের মন্দির সম্বন্ধীয় দর্শনে যে বিস্ময়কর নদী মন্দির থেকে বয়ে আসে সেটা এইরকম জীবনদায়ক আশীর্বাদকে চিত্রিত করে। কিন্তু কখন এই নদী বইতে থাকে এবং আজকে আমাদের জন্য এর অর্থ কী?
পুনর্স্থাপিত দেশে এক নদী বয়ে যায়
৩. যিহিষ্কেল কী দেখেছিলেন যা যিহিষ্কেল ৪৭:২-১২ পদে লেখা রয়েছে?
৩ যিহিষ্কেলের সময়ের লোকেরা যখন বাবিলনে নির্বাসিত ছিল তখন যিহোবার ব্যবস্থাগুলো তাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। তাই পবিত্র স্থান থেকে সরু ধারায় জল বেরিয়ে দর্শনের মন্দিরের বাইরে তা বয়ে যাচ্ছে দেখা যিহিষ্কেলের জন্য কতই না উৎসাহের ছিল! একজন দূত কিছুক্ষণ পর পর জলধারাকে ১০০০ হাত করে মাপেন। এটার গভীরতা ক্রমশ গোড়ালি থেকে হাঁটু পর্যন্ত, হাঁটু থেকে কটি পর্যন্ত, কটি থেকে নদীর সমান হয়ে যায় ফলে সাঁতারের প্রয়োজন হয়। নদী জীবন এবং উর্বরতা নিয়ে আসে। (যিহিষ্কেল ৪৭:২-১১) যিহিষ্কেলকে বলা হয়: “নদীর ধারে এপারে ওপারে সর্ব্বপ্রকার ভোজনার্থ ফলের বৃক্ষ হইবে।” (যিহিষ্কেল ৪৭:১২ক) যখন এই নদী নির্জীব জলকুন্ড মৃত সাগরে মেশে, তখন সেটা জীবন ফিরে পায়! প্রচুর মাছ জন্মায়। মৎস শিল্প গড়ে ওঠে।
৪, ৫. নদী সম্পর্কিত যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিলে যায় আর কেন এটা তাৎপর্যপূর্ণ?
৪ এই চমৎকার ভবিষ্যদ্বাণী হয়ত যিহূদী নির্বাসিতদের দুই শতাব্দীরও বেশি আগে লেখা আরেকটা ভবিষ্যদ্বাণীর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল যা হল: “সদাপ্রভুর গৃহ হইতে এক উৎস নির্গত হইবে, তাহা শিটীমের স্রোতোমার্গকে জল দিবে।”a (যোয়েল ৩:১৮) যিহিষ্কেলের মতো যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতেও এটা বলা হয় যে একটা নদী ঈশ্বরের গৃহ অর্থাৎ মন্দির থেকে বয়ে আসবে আর শুকনো অঞ্চলে জীবন নিয়ে আসবে।
৫ প্রহরীদুর্গ অনেক দিন ধরে বলে আসছে যে যোয়েলের ভাববাণী আমাদের দিনে পূর্ণ হচ্ছে।b তাই, সন্দেহ নেই যে যিহিষ্কেলের এই একইরকম দর্শনও আমাদের দিনেই পূর্ণ হচ্ছে। প্রাচীন ইস্রায়েলের মতো আজকেও ঈশ্বরের লোকেদের পুনর্স্থাপিত দেশে যিহোবার আশীর্বাদ সত্যিই বয়ে যাচ্ছে।
আশীর্বাদের ধারা
৬. দর্শনের যজ্ঞবেদির ওপর রক্ত ছিটিয়ে দেওয়ার বিষয়টা যিহূদীদের কী মনে করিয়ে দিয়েছিল?
৬ ঈশ্বরের পুনর্স্থাপিত লোকেদের ওপর আশীর্বাদের উৎস কী? লক্ষ্য করুন যে ঈশ্বরের মন্দির থেকে জল বয়ে আসছে। একইভাবে আজকের দিনেও, যিহোবার মহান আধ্যাত্মিক মন্দির—তাঁর বিশুদ্ধ উপাসনার ব্যবস্থার মাধ্যমে যিহোবার কাছ থেকে আশীর্বাদ আসছে। যিহিষ্কেলের দর্শন এক গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ দেয়। অন্তঃস্থ প্রাঙ্গণে জলস্রোত যজ্ঞবেদি পেরিয়ে তার ঠিক দক্ষিণ দিক দিয়ে বয়ে যায়। (যিহিষ্কেল ৪৭:১) যজ্ঞবেদি দর্শনের মন্দিরের একেবারে মাঝখানে রয়েছে। যিহিষ্কেলের কাছে যিহোবা এটার বিস্তারিত বিবরণ দেন এবং এর ওপর বলির রক্ত ছিটিয়ে দেওয়ার জন্য আজ্ঞা দেন। (যিহিষ্কেল ৪৩:১৩-১৮, ২০) সমস্ত ইস্রায়েলের জন্য সেই যজ্ঞবেদির এক বড় অর্থ ছিল। বহুকাল আগে মোশি যখন সিয়োন পর্বতের পাদদেশে যজ্ঞবেদির ওপর রক্ত ছিটিয়ে দিয়েছিলেন তখন যিহোবার সঙ্গে তাদের চুক্তি বলবৎ হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ২৪:৪-৮) সুতরাং দর্শনের যজ্ঞবেদির ওপর রক্ত ছিটিয়ে দেওয়া তাদের মনে করিয়ে দিয়েছিল যে একবার যখন তারা পুনর্স্থাপিত দেশে ফিরে এসেছে তখন তারা ততদিন পর্যন্ত যিহোবার আশীর্বাদ পাবে যতদিন তারা তাঁর সঙ্গে কৃত চুক্তি মেনে চলবে।—দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১-১৪.
৭. আজকে খ্রীষ্টানেরা প্রতীক যজ্ঞবেদির কোন্ অর্থ খুঁজে পান?
৭ একইভাবে, আজকে ঈশ্বরের লোকেরা আরও উত্তম এক চুক্তি, নতুন চুক্তির মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ করেন। (যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪) এটাও অনেক আগে যীশু খ্রীষ্টের রক্তের দ্বারা বলবৎ করা হয়েছিল। (ইব্রীয় ৯:১৫-২০) আজকে আমরা অভিষিক্ত ব্যক্তিই হই যারা সেই চুক্তির অংশ বা আমরা অপর মেষই হই যারা এর উপকারগুলো ভোগ করে, সবার জন্য এই প্রতীক যজ্ঞবেদি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ রাখে। এটা খ্রীষ্টের বলিদানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঈশ্বরের ইচ্ছাকে ইঙ্গিত করে। (যোহন ১০:১৬; ইব্রীয় ১০:১০) প্রতীক যজ্ঞবেদি যেমন আধ্যাত্মিক মন্দিরের একেবারে মাঝখানে রয়েছে, ঠিক তেমনই খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান হল বিশুদ্ধ উপাসনার কেন্দ্রবিন্দু। এটা আমাদের পাপ থেকে ক্ষমা পাওয়ার ভিত্তি আর তাই এটা আমাদের ভবিষ্যতের সমস্ত আশার মূল। (১ যোহন ২:২) ফলে আমরা নতুন চুক্তির সঙ্গে যুক্ত ব্যবস্থা অর্থাৎ “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি। (গালাতীয় ৬:২) যতদিন আমরা তা করব, জীবনের জন্য যিহোবার ব্যবস্থাগুলো থেকে ততদিন আমরা উপকার লাভ করতে পারব।
৮. (ক) দর্শনের মন্দিরের অন্তঃস্থ প্রাঙ্গণে কোন্ জিনিসের অভাব ছিল? (খ) দর্শনের মন্দিরে যাজকবর্গ কিভাবে তাদের শুচি করেছিলেন?
৮ এই উপকারগুলোর মধ্যে একটা হল যিহোবার সামনে বিশুদ্ধ মান বজায় রাখা। দর্শনের মন্দিরের অন্তঃস্থ প্রাঙ্গণে একটা জিনিসের অভাব ছিল যা সমাগমতাম্বু আর শলোমনের মন্দিরে খুবই লক্ষণীয় ছিল—আর তা হল যাজকদের পরিষ্কৃত হওয়ার জন্য একটা বড় জলের পাত্র, যেটাকে পরে সমুদ্র বলা হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ৩০:১৮-২১; ২ করিন্থীয় ৪:২-৬) তাহলে যিহিষ্কেলের দর্শনে দেখা মন্দিরের যাজকেরা শুচি হওয়ার জন্য কী ব্যবহার করতেন? সেই অলৌকিক জলস্রোত যা অন্তঃস্থ প্রাঙ্গণের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে! হ্যাঁ, যিহোবা তাদের শুদ্ধ কিংবা পবিত্র মান বজায় রাখার উপকরণগুলো দিয়ে আশীর্বাদ করবেন
৯. আজকে কিভাবে অভিষিক্তগণ এবং বিরাট জনতা শুদ্ধ মান বজায় রাখতে পারেন?
৯ একইভাবে আজকের দিনেও, যিহোবার সামনে শুদ্ধ মান বজায় রেখে অভিষিক্তরা আশীর্বাদ লাভ করেছেন। যিহোবা তাদেরকে পবিত্র হিসাবে দেখেন এবং ধার্মিক বলে ঘোষণা করেন। (রোমীয় ৫:১, ২) “বিরাট জনতা” সম্পর্কে কী বলা যায়, যারা অযাজকীয় বংশ হিসাবে চিত্রিত হয়েছেন? তারা বহিঃস্থ প্রাঙ্গণে আরাধনা করেন এবং সেই একই জলস্রোত দর্শনের মন্দিরের ওই অংশ দিয়েও বয়ে যায়। তাহলে প্রেরিত যোহন, শুক্ল ও শুচি বস্ত্র পরিহিত যে বিরাট জনতাকে আধ্যাত্মিক মন্দিরের প্রাঙ্গণে আরাধনা করতে দেখেছিলেন তা কতই না উপযুক্ত! (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৪) এই মন্দ জগতে তাদের সঙ্গে যতই খারাপ ব্যবহার করা হয়ে থাকুক না কেন, তারা জানেন যে যতদিন তারা খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাস করবেন ততদিন যিহোবা তাদেরকে শুচি এবং বিশুদ্ধ হিসাবে দেখবেন। কিভাবে তারা দেখান যে তারা বিশ্বাস করেন? যীশুর পদচিহ্নকে অনুসরণ করে আর যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে পুরোপুরি আস্থা রেখে।—১ পিতর ২:২১.
১০, ১১. প্রতীক জলের একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য কী এবং এটা কিভাবে নদীর বিস্তারলাভের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত?
১০ আগেই যেমন বলা হয়েছে, এই প্রতীক জলের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে আর তা হল জ্ঞান। পুনর্স্থাপিত ইস্রায়েলে, যিহোবা যাজকবর্গের মাধ্যমে তাঁর লোকেদের শাস্ত্রীয় শিক্ষা দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। (যিহিষ্কেল ৪৪:২৩) একইভাবে, আজকেও যিহোবা ‘রাজকীয় যাজকবর্গের’ মাধ্যমে তাঁর লোকেদের তাঁর সত্য বাক্য সম্বন্ধে প্রচুর নির্দেশনা দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন। (১ পিতর ২:৯) এই শেষকালে যিহোবা ঈশ্বর, মানবজাতির জন্য তাঁর উদ্দেশ্য এবং বিশেষ করে যীশু খ্রীষ্ট আর মশীহ রাজ্য সম্বন্ধে জ্ঞান প্রচুরভাবে দিচ্ছেন। এত প্রচুরভাবে আধ্যাত্মিক সতেজতা পাওয়া কতই না চমৎকার বিষয়।—দানিয়েল ১২:৪.
১১ দূত যে নদীকে মাপছিলেন সেটা যেমন গভীর হয়ে চলেছিল, তেমনই যিহোবার কাছ থেকে আসা জীবনদায়ক আশীর্বাদ বেড়েই চলেছে যাতে করে আমাদের আশীর্বাদপ্রাপ্ত আধ্যাত্মিক দেশে আসতে থাকা লোকেদের জন্য জায়গা করা যায়। পুনর্স্থাপন সম্বন্ধীয় অন্য এক ভবিষ্যদ্বাণী বলেছিল: “যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্ জাতি হইয়া উঠিবে; আমি সদাপ্রভু যথাকালে ইহা সম্পন্ন করিতে সত্বর হইব।” (যিশাইয় ৬০:২২) এই কথাগুলো পূর্ণ হয়েছে—লক্ষ লক্ষ লোক দলে দলে বিশুদ্ধ উপাসনায় যোগ দিয়েছেন! যারা যিহোবার কাছে আসেন তাদের সকলের জন্য যিহোবা প্রচুর পরিমাণ “জল” দান করেন। (প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭) তিনি নজর রাখেন যেন তাঁর পার্থিব সংগঠন সারা পৃথিবীতে বাইবেল এবং বাইবেল ভিত্তিক সাহিত্যাদি শত শত ভাষায় বিতরণ করে। একইভাবে, সারা পৃথিবীতে খ্রীষ্টীয় সভা এবং অধিবেশনগুলো হয়ে থাকে যাতে করে সকলকে সত্যের স্বচ্ছ জল দেওয়া যেতে পারে। এই ব্যবস্থা কিভাবে লোকেদের প্রভাবিত করে?
জল জীবন নিয়ে আসে!
১২. (ক) কেন যিহিষ্কেলের দর্শনের গাছগুলো এত বেশি উৎপাদন করতে পারে? (খ) শেষকালে এই ফলবতী গাছগুলো কী চিত্রিত করে?
১২ যিহিষ্কেলের দর্শনের নদী জীবন দেয় এবং আরোগ্য করে। যিহিষ্কেল যখন সেই গাছগুলো সম্বন্ধে জানতে পারেন যেগুলো নদীর পাশেই জন্মাবে, তখন তাকে বলা হয়েছিল: “তাহার পত্র ম্লান হইবে না, ও ফল শেষ হইবে না . . . আর তাহার ফল আহারের জন্য ও পত্র আরোগ্যের নিমিত্ত ব্যবহৃত হইবে।” কেন এই গাছগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা বিস্ময়কর? “কেননা তাহার সেচনের জল ধর্ম্মধাম হইতে নির্গত।” (যিহিষ্কেল ৪৭:১২খ) যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে মানবজাতিকে আবার সিদ্ধতায় নিয়ে আসার জন্য এই প্রতীক গাছগুলো ঈশ্বরের সমস্ত ব্যবস্থাকে চিত্রিত করে। এখন পৃথিবীতে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা আধ্যাত্মিক পুষ্টি এবং আরোগ্য করার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ১,৪৪,০০০ জনের সকলে স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করার পর, খ্রীষ্টের সঙ্গে সহশাসক হিসাবে তাদের যাজকীয় পরিচর্যা থেকে উপকার ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আদমজাত মৃত্যুকে সম্পূর্ণভাবে জয় করা হয়।—প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০; ২১:২-৪.
১৩. আমাদের সময়ে কোন্ আরোগ্য সাধন হচ্ছে?
১৩ দর্শনে দেখা নদী নির্জীব মৃত সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায় এবং যতদূর বয়ে যায় সমস্ত কিছুকেই আরোগ্য করে। এই সমুদ্র আধ্যাত্মিকভাবে মৃত এক অবস্থাকে চিত্রিত করে। কিন্তু “এই স্রোতের জল যে কোন স্থানে বহিবে” সেখানেই জীবন বাঁচবে। (যিহিষ্কেল ৪৭:৯) একইভাবে, শেষকালে যেখানেই এই জীবন জল পৌঁছেছে, সেখানেই লোকেরা আধ্যাত্মিকভাবে জীবিত হয়েছেন। এভাবে ১৯১৯ সালে এটা যাদেরকে প্রথমে জীবিত করে তুলেছিল তারা ছিলেন অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশেরা। তারা মৃত্যুতুল্য, নিষ্ক্রিয় অবস্থা থেকে আধ্যাত্মিকভাবে আবার জীবন ফিরে পেয়েছিলেন। (যিহিষ্কেল ৩৭:১-১৪; প্রকাশিত বাক্য ১১:৩, ৭-১২) সেই সময় থেকে ওই জীবনদায়ক জল আধ্যাত্মিকভাবে মৃত অন্যান্য ব্যক্তিদের কাছেও পৌঁছে গেছে ফলে তারা জীবিত হয়ে উঠেছেন আর অপর মেষের এক বিরাট জনতা তৈরি করেছেন যাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে আর যারা যিহোবাকে ভালবাসেন ও তাঁর সেবা করেন। খুব তাড়াতাড়ি এই ব্যবস্থা হাজার হাজার পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের প্রতিও প্রসারিত হবে।
১৪. মৃত সমুদ্রের উপকূলে বেড়ে ওঠা মৎস শিল্প আজকে কী চিত্রিত করে?
১৪ আধ্যাত্মিক সজীবতা উৎপাদনকে বাড়ায়। মৎস শিল্পই এর উদাহরণ যা সমুদ্র উপকূলে বেড়ে উঠেছিল যেটা আগে মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। যীশু তাঁর অনুগামীদের বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে মনুষ্যধারী করিব।” (মথি ৪:১৯) শেষকালে এই মাছ ধরার কাজ অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের একত্রিত করার দ্বারা শুরু হয়েছিল কিন্তু তা সেখানেই থেমে থাকেনি। যিহোবার আধ্যাত্মিক মন্দির থেকে জীবনদায়ক জল, যার মধ্যে আছে যথার্থ জ্ঞান সমস্ত জাতির লোকেদের প্রভাবিত করে। যেখানেই এই স্রোত পৌঁছায় সেখানেই আধ্যাত্মিক জীবন ফিরে আসে।
১৫. কী দেখায় যে সবাই জীবনের জন্য ঈশ্বরের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করবেন না এবং এইরকম ব্যক্তিদের শেষ ফল কী?
১৫ অবশ্য, আজকে সকল লোকই জীবনের বার্তার প্রতি অনুকূল সাড়া দেন না আর খ্রীষ্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের মধ্যেও সবাই সাড়া দেবেন না। (যিশাইয় ৬৫:২০; প্রকাশিত বাক্য ২১:৮) স্বর্গদূত ঘোষণা করছেন যে সমুদ্রের কিছু অংশ আরোগ্য লাভ করবে না। এই পঙ্কিল, নির্জীব স্থানগুলো “লবণার্থে নিরূপিত।” (যিহিষ্কেল ৪৭:১১) আমাদের দিনেও সবাই যিহোবার জীবনদায়ী জল গ্রহণ করে না যাদের কাছে তা নিয়ে যাওয়া হয়। (যিশাইয় ৬:১০) যারা আধ্যাত্মিকভাবে নির্জীব এবং অসুস্থ অবস্থায় থাকাকে বেছে নিয়েছেন তাদের সবাইকে হর্মাগিদোনে “লবণার্থে নিরূপিত” করা হবে অর্থাৎ তারা চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-২১) কিন্তু, যারা বিশ্বস্তভাবে এই জল পান করছেন তারা পরিত্রাণের এবং এই ভবিষ্যদ্বাণীর চূড়ান্ত পূর্ণতা দেখার আশা রাখতে পারেন।
পরমদেশে বইতে থাকা নদী
১৬. কখন এবং কিভাবে যিহিষ্কেলের মন্দির সম্বন্ধীয় দর্শন চূড়ান্তভাবে পূর্ণ হবে?
১৬ পুনর্স্থাপন সম্বন্ধীয় অন্য ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মতো, যিহিষ্কেলের দর্শন হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে চূড়ান্তভাবে পূর্ণ হবে। তখন যাজকীয় শ্রেণী আর পৃথিবীতে থাকবেন না। “তাহারা ঈশ্বরের ও খ্রীষ্টের যাজক হইবে, এবং সেই সহস্র বৎসর তাঁহার সঙ্গে [স্বর্গে] রাজত্ব করিবে।” (প্রকাশিত বাক্য ২০:৬) এই স্বর্গীয় যাজকগণ খ্রীষ্টের সঙ্গে থেকে খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের পূর্ণ উপকার পৌঁছে দেবেন। ফলে ধার্মিক লোকেরা পরিত্রাণ ও সিদ্ধতা ফিরে পাবেন!—যোহন ৩:১৭
১৭, ১৮. (ক) প্রকাশিত বাক্য ২২:১, ২ পদে জীবনদায়ী নদীর কথা কিভাবে বর্ণনা করা আছে এবং ওই দর্শন পূর্ণ হওয়ার মুখ্য সময় কখন? (খ) পরমদেশে কেন জীবন জলের নদী সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত হবে?
১৭ বাস্তবিকই, যিহিষ্কেল যে নদী দেখেছিলেন তা সেইসময় জীবনের অত্যন্ত কার্যকর জল নিয়ে বয়ে চলবে। এটাই হল প্রকাশিত বাক্য ২২:১, ২ পদে লেখা ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণ হওয়ার আসল সময়: “আর তিনি আমাকে জীবন-জলের নদী দেখাইলেন, তাহা স্ফটিকের ন্যায় উজ্জ্বল, তাহা ঈশ্বরের ও মেষশাবকের সিংহাসন হইতে নির্গত হইয়া তথাকার চকের মধ্যস্থানে বহিতেছে; নদীর এপারে ওপারে জীবন-বৃক্ষ আছে, তাহা দ্বাদশ বার ফল উৎপন্ন করে, এক এক মাসে আপন আপন ফল দেয়, এবং সেই বৃক্ষের পত্র জাতিগণের আরোগ্য নিমিত্তক।”
১৮ হাজার বছরের রাজত্বের সময় শারীরিক, মানসিক এবং আবেগগত সমস্ত ধরনের অসুস্থদের আরোগ্য করা হবে। প্রতীক গাছগুলো দিয়ে “জাতিগণের আরোগ্য” লাভ করাকে খুব ভালভাবে দেখানো হয়েছে। খ্রীষ্ট এবং ১,৪৪,০০০ জনের দ্বারা পরিচালিত ব্যবস্থাগুলোর কারণে “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” (যিশাইয় ৩৩:২৪) আর নদী এইসময়ে সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত হবে। লক্ষ লক্ষ, সম্ভবত কোটি কোটি পুনরুত্থিত মানুষ যারা বিশুদ্ধ জীবন জল পান করবেন তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য এটাকে চওড়া এবং গভীর হতে হবে। দর্শনের নদী মৃত সমুদ্রকে জীবন দিয়েছিল আর যেখানেই এর জল বয়ে গিয়েছিল সেখানেই জীবন এসেছিল। তাই পরমদেশে পুরুষ ও স্ত্রীরা পূর্ণ অর্থে জীবন পাবেন। আদমের সন্তান হওয়ায় যে মৃত্যু তারা পেয়েছেন তার থেকে তারা মুক্তি পাবেন যদি তারা তাদের জন্য দেওয়া মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাস করেন। প্রকাশিত বাক্য ২০:১২ পদ ভাববাণী করে যে সেই সময়ে “কয়েকখানি পুস্তক” খোলা হবে যা বোঝার জন্য অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওযা হবে, যাতে পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা উপকার লাভ করেন। দুঃখের বিষয় যে পরমদেশে কিছু ব্যক্তি আরোগ্য লাভ করতে চাইবেন না। এই বিদ্রোহীরা “লবণার্থে নিরূপিত” যারা চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবেন।—প্রকাশিত বাক্য ২০:১৫.
১৯. (ক) কিভাবে জমি ভাগ করে দেওয়া পরমদেশে পূর্ণ হবে? (খ) পরমদেশের কোন্ বৈশিষ্ট্য নগরকে চিত্রিত করে? (গ) নগর মন্দির থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে এর তাৎপর্য কী?
১৯ যিহিষ্কেলের দর্শনের ভূমি ভাগ করে দেওয়ার বিষয়টাও সেই সময়ে চূড়ান্তভাবে পূর্ণ হবে। যিহিষ্কেল তার দর্শনে ভূমিকে যথাযথভাবে ভাগ করে দিতে দেখেছিলেন, একইভাবে প্রত্যেক বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান নিশ্চিত হতে পারেন যে পরমদেশে তার নিজস্ব জায়গা অর্থাৎ এক অধিকার থাকবে। সম্ভবত একটা ঘর থাকা ও সেটাকে সাজানোর যে আকাঙ্ক্ষা আমাদের আছে তা যথাযথভাবে পূর্ণ হবে। (যিশাইয় ৬৫:২১; ১ করিন্থীয় ১৪:৩৩) যিহিষ্কেল যে নগর দেখেছিলেন তা যথার্থই সেই প্রশাসন ব্যবস্থাকে চিত্রিত করে যা পৃথিবীর জন্য যিহোবা স্থির করেছেন। অভিষিক্ত যাজক শ্রেণী মানবজাতির সঙ্গে দৈহিকভাবে আর থাকবেন না। এই দর্শনে নগরকে মন্দির থেকে কিছুটা দূরে “কলুষিত” ভূমিতে স্থাপন করে তা বোঝান হয়েছে। (যিহিষ্কেল ৪৮:১৫) কিন্তু যখন স্বর্গে ১,৪৪,০০০ জন খ্রীষ্টের সঙ্গে রাজত্ব করবেন, তখনও পৃথিবীতে রাজার প্রতিনিধিরা থাকবেন। তাঁর মানব প্রজারা অধ্যক্ষ শ্রেণীর প্রেমময় পরিচালনা এবং নির্দেশনা থেকে প্রচুরভাবে উপকৃত হবেন। কিন্তু সরকারের কেন্দ্র মূলত স্বর্গেই থাকবে, পৃথিবীতে নয়। অধ্যক্ষ শ্রেণী ও পৃথিবীর সবাই মশীহ রাজ্যের বশীভূত হবেন।—দানিয়েল ২:৪৪; ৭:১৪, ১৮, ২২.
২০, ২১. (ক) নগরের নাম কেন উপযুক্ত? (খ) যিহিষ্কেলের দর্শন সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতা আমাদের নিজেদেরকে কোন্ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পরিচালিত করবে?
২০ যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণীর চূড়ান্ত বাক্যগুলো লক্ষ্য করুন: “সেই দিন অবধি নগরটীর এই নাম হইবে, ‘সদাপ্রভু তত্র’।” (যিহিষ্কেল ৪৮:৩৫) এই নগর লোকেদেরকে ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব দেওয়ার জন্য অস্তিত্বে থাকবে না; কিংবা এটা কোন মানুষের ইচ্ছাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যও থাকবে না। এটা হল যিহোবার নগর। এটা সবসময় যিহোবার মনকে এবং তিনি যেভাবে প্রেমময় ও যুক্তিবাদী উপায়ে কাজ করেন তা প্রতিফলিত করবে। (যাকোব ৩:১৭) এটা আমাদের দৃঢ় আশ্বাস দেয় যে যিহোবা অনন্তকাল স্থায়ী ভবিষ্যতে তাঁর সংগঠিত “নূতন পৃথিবী” অর্থাৎ মনুষ্য সমাজকে আশীর্বাদ করবেন।—২ পিতর ৩:১৩.
২১ আমাদের সামনে যে আশা রয়েছে তার জন্য আমরা কি রোমাঞ্চিত নই? তাহলে আমরা নিজেদের জিজ্ঞাসা করলে ঠিক করব যে, ‘যিহিষ্কেলের দর্শনে যে চমৎকার আশীর্বাদগুলোর কথা বলা হয়েছে আমি সেগুলোতে কিভাবে সাড়া দিই? প্রেমময় অধ্যক্ষ যার মধ্যে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশ এবং অধ্যক্ষ শ্রেণীর ভাবী সদস্যেরা রয়েছেন তারা যে কাজ করে চলেছেন আমি কি তা বিশ্বস্তভাবে সমর্থন করি? আমি কি বিশুদ্ধ উপাসনাকে আমার জীবনের প্রধান লক্ষ্যবস্তু করেছি? আজকে প্রচুররূপে যে জীবন জল বয়ে চলেছে তা থেকে আমি কি পূর্ণ উপকার নিচ্ছি?’ আমরা যেন সকলে তা করে চলি আর অনন্তকাল ধরে যিহোবার ব্যবস্থায় আনন্দ করি!
[পাদটীকাগুলো]
a এই স্রোতমার্গ হয়ত কিদ্রোণ উপত্যকাকে বোঝায় যেটা যিরূশালেমের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে মৃত সাগর পর্যন্ত বয়ে চলেছে। বিশেষ করে এর নিচের অংশে জল থাকে না আর তাই সারা বছর এটা শুকনো থাকে।
b ১৮৮১ সালের ১লা মে এবং ১৯৮১ সালের ১লা জুন সংখ্যার প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি) দেখুন।
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ মন্দির থেকে জল বয়ে আসা কী চিত্রিত করে?
◻ প্রতীক নদীর মাধ্যমে যিহোবা কোন্ আরোগ্য সাধন করেছেন এবং কেন নদীর জল বেড়েছে?
◻ প্রতীক নদীর তীরের গাছগুলো কী চিত্রিত করে?
◻ হাজার বছর রাজত্বের সময় নগর কী চিত্রিত করবে এবং নগরের নাম কেন উপযুক্ত?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
জীবন নদী পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে চিত্রিত করে