‘দেখ, আমিই প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি’
“দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।”—মথি ২৮:২০.
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করুন:
কেন আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, প্রথম শতাব্দী থেকে শুরু করে বর্তমান দিন পর্যন্ত সবসময়ই পৃথিবীতে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা রয়েছে?
১৯১৪ সাল থেকে শুরু করে যিশু কোন পরীক্ষা করেন?
গম এবং শ্যামাঘাস সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্তের কোন ঘটনাগুলো এখনও ভবিষ্যতের বিষয়?
১. (ক) গম এবং শ্যামাঘাসের দৃষ্টান্ত সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। (খ) কীভাবে যিশু এই দৃষ্টান্তের অর্থ ব্যাখ্যা করেছিলেন?
রাজ্য সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে একটাতে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, একজন কৃষক উত্তম গমের বীজ বপন করেন এবং একজন শত্রু সেই উত্তম বীজের মধ্যে শ্যামাঘাস বপন করেন। সেই শ্যামাঘাস বেড়ে গিয়ে গমকে আবৃত করে ফেলে কিন্তু কৃষক তার দাসদের আদেশ দেন, “শস্যচ্ছেদনের সময় পর্য্যন্ত উভয়কে একত্র বাড়িতে দেও।” শস্যচ্ছেদনের সময় শ্যামাঘাস নষ্ট করে দেওয়া হবে এবং গম সংগ্রহ করা হবে। স্বয়ং যিশু সেই দৃষ্টান্ত ব্যাখ্যা করেছিলেন। (পড়ুন, মথি ১৩:২৪-৩০, ৩৭-৪৩.) এই নীতিগল্প কোন বিষয়টাকে প্রকাশ করে? (“গম এবং শ্যামাঘাস” নামক তালিকাটা দেখুন।)
২. (ক) কৃষকের ক্ষেত্রে যে-ঘটনাগুলো ঘটেছিল, সেগুলোর মাধ্যমে কী চিত্রিত করা হয়েছে? (খ) আমরা নীতিগল্পের কোন অংশটা বিবেচনা করব?
২ সেই কৃষকের ক্ষেত্রে যে-ঘটনাগুলো ঘটেছিল, সেগুলো দেখায় যে, কীভাবে এবং কখন যিশু মানবজাতির মধ্যে থেকে সমস্ত গম শ্রেণীকে—তাঁর রাজ্যে তাঁর সঙ্গে শাসন করবে এমন অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের—একত্রিত করবেন। বপন করার কাজ শুরু হয়েছিল ৩৩ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চাশত্তমীর দিনে। সংগ্রহ করার কাজ সেই সময়ে সম্পূর্ণ হবে, যখন এই বিধিব্যবস্থার শেষকালে বেঁচে থাকা অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তাদের চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কন লাভ করবে আর এরপর তাদেরকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হবে। (মথি ২৪:৩১; প্রকা. ৭:১-৪) একটা পর্বতের উঁচু স্থান থেকে একজন ব্যক্তি যেমন তার চারপাশের সমস্ত চিত্র দেখতে পারেন, তেমনই এই নীতিগল্প আমাদেরকে সেই ঘটনাগুলোর এক বিশদ চিত্র প্রদান করে, যেগুলো সেই সময় থেকে প্রায় ২,০০০ বছরের একটা সময়কালের মধ্যে ঘটবে। আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোন ঘটনাগুলো আমরা জানতে পারি? এই নীতিগল্প বপন করার, বৃদ্ধি পাওয়ার এবং শস্যচ্ছেদনের সময় সম্বন্ধে বর্ণনা করে। এই প্রবন্ধ মূলত শস্যচ্ছেদনের সময়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবে।a
যিশুর সতর্ক যত্নাধীনে
৩. (ক) প্রথম শতাব্দীর পর কোন অবস্থা দেখা দিয়েছিল? (খ) মথি ১৩:২৮ পদ অনুযায়ী কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল এবং কারা সেটা উত্থাপন করেছিল? (এ ছাড়া, টীকা দেখুন।)
৩ দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকে, ‘শ্যামাঘাস প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছিল,’ যখন নকল খ্রিস্টানরা জগৎরূপ ক্ষেত্রে দৃশ্যত হয়েছিল। (মথি ১৩:২৬) চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের তুলনায় শ্যামাঘাসতুল্য খ্রিস্টানদের সংখ্যা অধিক হয়ে গিয়েছিল। স্মরণ করে দেখুন যে, নীতিগল্পে দাসেরা তাদের প্রভুর কাছে শ্যামাঘাস উপড়ে ফেলার অনুমতি চেয়েছিল।b (মথি ১৩:২৮) প্রভু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
৪. (ক) প্রভু যিশুর উত্তরের মাধ্যমে কী প্রকাশ পায়? (খ) গমতুল্য খ্রিস্টানরা কখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল?
৪ গম এবং শ্যামাঘাস সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে যিশু বলেছিলেন: “শস্যচ্ছেদনের সময় পর্য্যন্ত উভয়কে একত্র বাড়িতে দেও।” এই আদেশ দেখায় যে, প্রথম শতাব্দী থেকে শুরু করে বর্তমান দিন পর্যন্ত সবসময়ই পৃথিবীতে গমতুল্য কিছু অভিষিক্ত খ্রিস্টান রয়েছে। এই উপসংহারকে, পরবর্তী সময়ে তাঁর শিষ্যদের প্রতি বলা যিশুর এই কথাগুলোর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছিল: “আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:২০) তাই, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা শেষ আসার আগে পর্যন্ত প্রতিদিন যিশুর দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু, যেহেতু তারা শ্যামাঘাসতুল্য খ্রিস্টানদের দ্বারা আবৃত হয়ে গিয়েছিল, তাই আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, সেই দীর্ঘ সময়কালে কারা গম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, শস্যচ্ছেদনের সময় শুরু হওয়ার কয়েক দশক আগে, গম শ্রেণী আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। কীভাবে?
একজন দূত ‘পথ প্রস্তুত করেন’
৫. কীভাবে মালাখির ভবিষ্যদ্বাণী প্রথম শতাব্দীতে পরিপূর্ণ হয়েছিল?
৫ গম এবং শ্যামাঘাসের দৃষ্টান্ত দেওয়ার কয়েক শতাব্দী আগে, যিহোবা তাঁর ভাববাদী মালাখিকে সেই ঘটনাগুলো সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করতে বলেছিলেন, যেগুলো যিশুর দৃষ্টান্তে প্রতিফলিত হয়েছে। (পড়ুন, মালাখি ৩:১-৪.) যোহন বাপ্তাইজক ছিলেন সেই “দূত,” যিনি ‘পথ প্রস্তুত করিয়াছিলেন।’ (মথি ১১:১০, ১১) ২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি যখন এসেছিলেন, তখন ইস্রায়েল জাতির বিচারের সময় নিকটে এসে গিয়েছিল। যিশু ছিলেন দ্বিতীয় দূত। তিনি দু-বার মন্দির পরিষ্কার করেছিলেন, প্রথম বার তাঁর পরিচর্যার শুরুর দিকে এবং দ্বিতীয় বার তাঁর পরিচর্যার শেষের দিকে। (মথি ২১:১২, ১৩; যোহন ২:১৪-১৭) তাই, যিশুর পরিষ্করণ কাজের সঙ্গে একটা সময়কাল জড়িত ছিল।
৬. (ক) মালাখির ভবিষ্যদ্বাণীর সুদূরপ্রসারী পরিপূর্ণতা কী? (খ) কোন সময়কালে যিশু আধ্যাত্মিক মন্দির পরীক্ষা করেছিলেন? (এ ছাড়া, টীকা দেখুন।)
৬ মালাখির ভবিষ্যদ্বাণীর সুদূরপ্রসারী পরিপূর্ণতা কী? ১৯১৪ সালের আগের দশকগুলোতে, সি. টি. রাসেল এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা যোহন বাপ্তাইজকের মতো একটা কাজ করেছিল। অতীব গুরুত্বপূর্ণ সেই কাজের সঙ্গে বাইবেলের সত্যগুলো পুনরুদ্ধার করা জড়িত ছিল। বাইবেল ছাত্ররা খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের প্রকৃত অর্থ সম্বন্ধে শিক্ষা প্রদান করেছিল, নরকাগ্নির মিথ্যা শিক্ষা প্রকাশ করে দিয়েছিল এবং পরজাতিগণের সময় যে শেষ হতে যাচ্ছে, তা ঘোষণা করেছিল। তা সত্ত্বেও, তখন এমন অসংখ্য ধর্মীয় দল ছিল, যারা নিজেদেরকে খ্রিস্টের অনুসারী বলে দাবি করেছিল। তাই, এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন ছিল: সেই দলগুলোর মধ্যে কোন দল গম ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য যিশু ১৯১৪ সালে আধ্যাত্মিক মন্দির পরীক্ষা করতে শুরু করেন। সেই পরীক্ষা এবং পরিষ্করণ কাজের সঙ্গে একটা সময়কাল—১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৯ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত—জড়িত ছিল।c
পরীক্ষা এবং পরিষ্করণের বছরগুলো
৭. যিশু যখন ১৯১৪ সালে তাঁর পরীক্ষা করার কাজ শুরু করেন, তখন তিনি কী দেখতে পান?
৭ যিশু যখন তাঁর পরীক্ষা করার কাজ শুরু করেন, তখন তিনি কী দেখতে পান? উদ্যোগী বাইবেল ছাত্রদের একটা ছোট্ট দলকে দেখতে পান, যারা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে উদ্যোগী প্রচার অভিযান চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের শক্তি এবং সম্পদ ব্যবহার করেছে।d যিশু ও দূতদের জন্য এটা দেখা কতই না আনন্দের এক বিষয় ছিল যে, তুলনামূলকভাবে সংখ্যায় অল্প সেই দৃঢ় গমের শিষ শয়তানের শ্যামাঘাসের নীচে চাপা পড়ে যায়নি! তা সত্ত্বেও, “লেবির সন্তানদিগকে” অর্থাৎ অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ‘শুচি করিবার’ প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। (মালাখি ৩:২, ৩; ১ পিতর ৪:১৭) কেন?
৮. উনিশ-শো চোদ্দো সালের পর, কোন ঘটনাগুলো ঘটে?
৮ উনিশ-শো চোদ্দো সালের শেষের দিকে, কিছু বাইবেল ছাত্র স্বর্গে যায়নি বলে হতাশ হয়ে গিয়েছিল। ১৯১৫ থেকে ১৯১৬ সালের মধ্যে, সংগঠনের বাইরে থেকে আসা বিরোধিতা প্রচার কাজকে ধীর করে দিয়েছিল। এর চেয়েও খারাপ বিষয় হল, ১৯১৬ সালের অক্টোবর মাসে ভাই রাসেলের মৃত্যুর পর, সংগঠনের ভিতরেই বিরোধিতা দেখা দেয়। ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি-র সাত জন পরিচালকের মধ্যে চার জনই, ভাই রাদারফোর্ড যে নেতৃত্ব দেবেন, সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তারা ভাইদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে কিন্তু ১৯১৭ সালের আগস্ট মাসে তারা বেথেল ছেড়ে চলে যায়—সত্যিই এক পরিষ্করণ কাজ! এ ছাড়া, কিছু বাইবেল ছাত্র লোকভয়ের কাছে নতিস্বীকার করে। তা সত্ত্বেও, একটা দল হিসেবে তারা ইচ্ছুক মনোভাব নিয়ে যিশুর পরিষ্করণ কাজে সাড়া দেয় এবং প্রয়োজনীয় রদবদল করে। তাই, যিশু তাদেরকে প্রকৃত খ্রিস্টীয় গম হিসেবে গণ্য করেন কিন্তু খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলোর সমস্ত ব্যক্তি-সহ সব নকল খ্রিস্টানকে প্রত্যাখ্যান করেন। (মালাখি ৩:৫; ২ তীম. ২:১৯) এরপর কী ঘটেছিল? তা জানার জন্য আসুন আমরা গম এবং শ্যামাঘাসের নীতিগল্পে ফিরে যাই।
শস্যচ্ছেদনের সময় শুরু হওয়ার পর কী ঘটে?
৯, ১০. (ক) শস্যচ্ছেদনের সময় সম্বন্ধে এখন আমরা কী বিবেচনা করব? (খ) শস্যচ্ছেদনের সময় প্রথমে কী ঘটেছিল?
৯ “ছেদনের সময় যুগান্ত,” যিশু বলেছিলেন। (মথি ১৩:৩৯) সেই শস্যচ্ছেদন শুরু হয় ১৯১৪ সালে। আমরা পাঁচটা ঘটনা বিবেচনা করব, যেগুলো সেই সময়ে ঘটবে বলে যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
১০ প্রথমটা হল, শ্যামাঘাস সংগ্রহ করা। যিশু বলেন: “ছেদনের সময়ে আমি ছেদকদিগকে বলিব, তোমরা প্রথমে শ্যামাঘাস সংগ্রহ করিয়া বোঝা বোঝা বাঁধিয়া রাখ।” ১৯১৪ সালের পর, দূতেরা অভিষিক্ত “রাজ্যের সন্তানগণ” থেকে শ্যামাঘাসতুল্য খ্রিস্টানদেরকে পৃথক করার মাধ্যমে “সংগ্রহ” করতে শুরু করে।—মথি ১৩:৩০, ৩৮, ৪১.
১১. এখনও কোন বিষয়টা সত্য খ্রিস্টানদেরকে নকল খ্রিস্টানদের থেকে পৃথক করে?
১১ সংগ্রহ করার কাজ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুটো দলের মধ্যে পার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। (প্রকা. ১৮:১, ৪) ১৯১৯ সালের মধ্যে, এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, মহতী বাবিলের পতন ঘটেছে। বিশেষভাবে কোন বিষয়টা সত্য খ্রিস্টানদেরকে নকল খ্রিস্টানদের থেকে পৃথক করেছিল? প্রচার কাজ। যারা বাইবেল ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তারা রাজ্যের প্রচার কাজে ব্যক্তিগতভাবে অংশ নেওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিতে শুরু করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, ১৯১৯ সালে প্রকাশিত যাদেরকে আস্থা সহকারে এই কাজ দেওয়া হয়েছে (ইংরেজি) শিরোনামের প্যামফ্লেটের মধ্যে সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানকে ঘরে ঘরে প্রচার করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। সেখানে বলা ছিল: “কাজটা অনেক বিশাল বলে মনে হয় কিন্তু এটা প্রভুর কাজ এবং তাঁর শক্তির মাধ্যমেই আমরা তা সম্পাদন করতে পারব। আপনাদের এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।” এতে কেমন সাড়া পাওয়া গিয়েছিল? ১৯২২ সালের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় বলা হয়েছিল যে, সেই সময়ের পর থেকে বাইবেল ছাত্ররা তাদের প্রচার কাজে আরও তৎপর হয়ে উঠেছে। অল্পসময়ের মধ্যেই, ঘরে ঘরে প্রচার কাজ সেই বিশ্বস্ত খ্রিস্টানদের শনাক্তকারী চিহ্ন হয়ে ওঠে—যেমনটা এখনও আছে।
১২. কখন থেকে গম শ্রেণীকে সংগ্রহ করা হয়েছে?
১২ দ্বিতীয়টা হল, গম সংগ্রহ করা। যিশু তাঁর দূতদের আদেশ দিয়েছিলেন: “গোম আমার গোলায় সংগ্রহ কর।” (মথি ১৩:৩০) ১৯১৯ সাল থেকে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরকে পুনর্স্থাপিত খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে সংগ্রহ করা হয়েছে। যে-অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা এই বিধিব্যবস্থার শেষকালে জীবিত থাকবে, তাদেরকে সেই সময় চূড়ান্তভাবে সংগ্রহ করা হবে, যখন তারা তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার লাভ করবে।—দানি. ৭:১৮, ২২, ২৭.
১৩. প্রকাশিত বাক্য ১৮:৭ পদ বেশ্যা বা মহতী বাবিল ও এর অন্তর্ভুক্ত খ্রিস্টীয়জগৎ সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?
১৩ তৃতীয়টা হল, রোদন ও দন্তঘর্ষণ। দূতেরা শ্যামাঘাস বাঁধার পর কী ঘটে? শ্যামাঘাস শ্রেণীর লোকেদের সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে যিশু বলেন: “সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে।” (মথি ১৩:৪২) এটা কি এখন ঘটছে? না। বর্তমানে, খ্রিস্টীয়জগৎ বেশ্যার অংশ হিসেবে নিজের সম্বন্ধে এখনও বলে থাকে: “আমি রাণীর মত সিংহাসনে বসিয়া আছি, বিধবা নহি, কোন মতে শোক দেখিব না।” (প্রকা. ১৮:৭) বস্তুতপক্ষে, খ্রিস্টীয়জগৎ নিজেকে অনেক বড়ো বলে মনে করে, এমনকী নিজেকে রাজনৈতিক নেতা শ্রেণীর একেবারে ওপরে ‘বসিয়া থাকা রাণী’ বলে মনে করে। বর্তমানে, শ্যামাঘাস হিসেবে যাদেরকে চিত্রিত করা হয়, তারা দম্ভ করছে, রোদন করছে না। কিন্তু, এটা পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে।
১৪. (ক) কখন এবং কেন নকল খ্রিস্টানরা “দন্তঘর্ষণ” করবে? (খ) মথি ১৩:৪২ পদ সম্বন্ধে আমাদের পরিবর্তিত বোধগম্যতা কীভাবে গীতসংহিতা ১১২:১০ পদে প্রকাশিত চিন্তাভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? (টীকা দেখুন।)
১৪ মহাক্লেশের সময় সমস্ত সংগঠিত মিথ্যা ধর্ম ধ্বংস করে দেওয়ার পর, এর প্রাক্তন অনুসারীরা লুকানোর জন্য দৌড়ে যাবে কিন্তু কোনো নিরাপদ স্থান খুঁজে পাবে না। (লূক ২৩:৩০; প্রকা. ৬:১৫-১৭) এরপর, তারা যখন বুঝতে পারবে যে, ধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় নেই, তখন তারা হতাশ হয়ে রোদন করবে এবং ক্রোধান্বিত হয়ে “দন্তঘর্ষণ” করবে। মহাক্লেশ সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণীতে যিশু যেমন বলেছিলেন, সেই অন্ধকারময় মুহূর্তে তারা “বিলাপ করিবে।”e—মথি ২৪:৩০; প্রকা. ১:৭.
১৫. শ্যামাঘাসকে কী করা হবে এবং এই ঘটনা কখন ঘটবে?
১৫ চতুর্থত, অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ। শ্যামাঘাসের বোঝা কী করা হবে? স্বর্গদূতেরা “তাহাদিগকে অগ্নিকুণ্ডে ফেলিয়া দিবেন।” (মথি ১৩:৪২) এর অর্থ হল সম্পূর্ণ ধ্বংস। তাই, মিথ্যা ধর্মীয় সংগঠনের সেই প্রাক্তন অনুসারীদের মহাক্লেশের চূড়ান্ত পর্যায়ে অর্থাৎ আরমাগিদোনের সময় ধ্বংস করে দেওয়া হবে।—মালাখি ৪:১.
১৬, ১৭. (ক) সেই চূড়ান্ত ঘটনা কী, যে-ঘটনা সম্বন্ধে যিশু তাঁর দৃষ্টান্তে উল্লেখ করেছেন? (খ) কেন আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, সেই ঘটনার পরিপূর্ণতা ভবিষ্যতে ঘটবে?
১৬ পঞ্চমটা হল, দেদীপ্যমান হওয়া। যিশু এই বলে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী শেষ করেন: “তখন ধার্ম্মিকেরা আপনাদের পিতার রাজ্যে সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান হইবে।” (মথি ১৩:৪৩) এটা কখন এবং কোথায় হবে? এই কথাগুলোর পরিপূর্ণতা এখনও ভবিষ্যতের বিষয়। যিশু বর্তমানে পৃথিবীতে সংগঠিত কোনো কাজ সম্বন্ধে নয় বরং ভবিষ্যতে স্বর্গে সংগঠিত একটা ঘটনা সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।f এই উপসংহারে আসার দুটো কারণ বিবেচনা করুন।
১৭ প্রথমটা হল, এটা “কখন” হবে। যিশু বলেছিলেন: ‘তখন ধার্ম্মিকেরা দেদীপ্যমান হইবে।’ “তখন” বাক্যাংশটি স্পষ্টতই সেই ঘটনাকে নির্দেশ করছে, যে-ঘটনা সম্বন্ধে যিশু সবেমাত্র উল্লেখ করেছেন আর তা হল ‘শ্যামাঘাসদিগকে অগ্নিকুণ্ডে ফেলিয়া দেওয়া।’ এই ঘটনা মহাক্লেশের চূড়ান্ত পর্যায়ে ঘটবে। তাই, অভিষিক্ত ব্যক্তিদের “দেদীপ্যমান” হওয়ার বিষয়টাও অবশ্যই ভবিষ্যতে ঘটবে। দ্বিতীয়টা হল, এটা “কোথায়” হবে। যিশু বলেছিলেন যে, ধার্মিকরা ‘রাজ্যে দেদীপ্যমান’ হবে। এর অর্থ কী? সমস্ত বিশ্বস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তি, যারা এখনও পৃথিবীতে রয়েছে, তারা মহাক্লেশের প্রথম পর্যায় যখন শেষ হবে, তখন ইতিমধ্যেই তাদের চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কন লাভ করবে। এরপর, মহাক্লেশ সম্বন্ধে যিশুর ভবিষ্যদ্বাণীতে যেমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে স্বর্গে সংগ্রহ করা হবে। (মথি ২৪:৩১) সেখানে তারা “আপনাদের পিতার রাজ্যে” দেদীপ্যমান হবে এবং আরমাগিদোন যুদ্ধের অল্পসময় পর তারা ‘মেষশাবকের বিবাহে’ যিশুর আনন্দিত বধূ হিসেবে অংশ নেবে।—প্রকা. ১৯:৬-৯.
যেভাবে আমরা উপকার লাভ করি
১৮, ১৯. কোন কোন উপায়ে গম এবং শ্যামাঘাস সম্বন্ধীয় যিশুর দৃষ্টান্ত আমাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত করে?
১৮ এই নীতিগল্প যে-বিশদ চিত্র তুলে ধরে, তা থেকে কীভাবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে উপকার লাভ করি? তিনটে উপায় সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। প্রথমত, এটা আমাদের অন্তর্দৃষ্টিকে গভীর করে। কেন যিহোবা দুষ্টতা থাকতে দিয়েছেন, সেই সম্বন্ধে এই নীতিগল্প এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রকাশ করে। তিনি “দয়াপাত্রদের”—গম শ্রেণীকে—প্রস্তুত করার জন্য “ক্রোধপাত্রদের প্রতি . . . ধৈর্য্য করিয়া থাকেন।”g (রোমীয় ৯:২২-২৪) দ্বিতীয়ত, এটা আমাদের আস্থাকে শক্তিশালী করে। শেষ যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, ততই আমাদের শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধকে আরও জোরদার করছে, কিন্তু আমাদেরকে “তাহারা . . . পরাজয় করিতে পারিবে না।” (পড়ুন, যিরমিয় ১:১৯.) ঠিক যেমন যিহোবা যুগ যুগ ধরে গম শ্রেণীকে সুরক্ষা করেছেন, তেমনই আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিশু এবং দূতদের মাধ্যমে “প্রতিদিন” আমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন।—মথি ২৮:২০.
১৯ তৃতীয়ত, এই নীতিগল্প আমাদেরকে শনাক্ত করতে সাহায্য করে যে, কারা গম শ্রেণী। কেন এটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ? কারা গমতুল্য খ্রিস্টান, তা জানা সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য অপরিহার্য, যে-প্রশ্নটা যিশু শেষকাল সম্বন্ধীয় সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যদ্বাণীতে উত্থাপন করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস কে?” (মথি ২৪:৪৫) পরবর্তী দুটো প্রবন্ধ এই প্রশ্নের এক সন্তোষজনক উত্তর দেবে।
টীকা: (সম্পর্কযুক্ত অনুচ্ছেদের সঙ্গে পাদটীকা হিসেবে পড়ার জন্য।)
[পাদটীকাগুলো]
a অনুচ্ছেদ ২: নীতিগল্পের অন্যান্য অংশের অর্থ মনে করে দেখার জন্য আমরা আপনাকে ২০১০ সালের ১৫ মার্চ প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৯-২১ পৃষ্ঠার “ধার্ম্মিকেরা সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান হইবে” শিরোনামের প্রবন্ধের ১-৯ অনুচ্ছেদ পড়ার জন্য উৎসাহিত করছি।
b অনুচ্ছেদ ৩: যেহেতু যিশুর প্রেরিতরা মারা গিয়েছে এবং পৃথিবীতে অবশিষ্ট অভিষিক্ত ব্যক্তিদেরকে দাসদের দ্বারা নয় বরং গম দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে, তাই দাসেরা স্বর্গদূতদের চিত্রিত করে। সেই দৃষ্টান্তে, যারা পরে শ্যামাঘাস ছেদন করে, তাদেরকে স্বর্গদূত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।—মথি ১৩:৩৯.
c অনুচ্ছেদ ৬: এটা হল রদবদলকৃত এক বোধগম্যতা। আগে আমরা মনে করতাম যে, যিশু ১৯১৮ সালে পরীক্ষা করেছেন।
d অনুচ্ছেদ ৭: ১৯১০ সাল থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত, বাইবেল ছাত্ররা প্রায় ৪০,০০,০০০ বই এবং ২০,০০,০০,০০০-রও বেশি ট্র্যাক্ট এবং প্যামফ্লেট বিতরণ করেছে।
e অনুচ্ছেদ ১৪: এটা হল মথি ১৩:৪২ পদ সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতায় এক রদবদল। আগে আমাদের প্রকাশনাগুলোতে বলা হয়েছিল যে, নকল খ্রিস্টান কয়েক দশক ধরে “রোদন ও দন্তঘর্ষণ” করছে, তাদের আসল চেহারা অর্থাৎ তারা যে “পাপাত্মার সন্তানগণ,” তা “রাজ্যের সন্তানগণ” প্রকাশ করে দিয়েছে বলে বিলাপ করছে। (মথি ১৩:৩৮) কিন্তু, এটা লক্ষ করা উচিত যে, দন্তঘর্ষণ করার ধারণাটা ধ্বংসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।—গীত. ১১২:১০.
f অনুচ্ছেদ ১৬: দানিয়েল ১২:৩ পদ বলে, “যাহারা বুদ্ধিমান্, তাহারা [অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা] বিতানের দীপ্তির ন্যায় . . . দেদীপ্যমান হইবে।” পৃথিবীতে থাকাকালীন প্রচারে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তারা দেদীপ্যমান হয়। কিন্তু, মথি ১৩:৪৩ পদ সেই সময়কে নির্দেশ করে, যখন তারা স্বর্গীয় রাজ্যে দেদীপ্যমান হবে। আগে আমরা মনে করতাম যে, এই দুটো শাস্ত্রপদ একই কাজকে—প্রচার কাজকে—নির্দেশ করে।
g অনুচ্ছেদ ১৮: যিহোবার নিকটবর্তী হোন বইয়ের ২৮৮-২৮৯ পৃষ্ঠা দেখুন।
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
[১০, ১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
গম এবং শ্যামাঘাস
৩৩ খ্রিস্টাব্দে বপন করার কাজ শুরু হয়
বীজবাপক: যিশু
উত্তম বীজ বপন করা: পবিত্র আত্মার মাধ্যমে অভিষিক্ত করা
ক্ষেত্র: মানবজাতির জগৎ
‘একজন ব্যক্তি আপন ক্ষেত্রে ভাল বীজ বপন করিলেন’ (মথি ১৩:২৪)
শত্রু: দিয়াবল
লোকে নিদ্রা যায়: প্রেরিতদের মৃত্যু
‘লোকে নিদ্রা গেলে পর শত্রু শ্যামাঘাসের বীজ বপন করিল’ (মথি ১৩:২৫)
গম: অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা
শ্যামাঘাস: নকল খ্রিস্টানরা
‘শস্যচ্ছেদনের সময় পর্য্যন্ত উভয়ই একত্র বাড়িয়া ওঠে’ (মথি ১৩:৩০)
১৯১৪ সালে শস্যচ্ছেদনের কাজ শুরু হয়
দাসেরা/ ছেদকেরা: স্বর্গদূতেরা
শ্যামাঘাসতুল্য খ্রিস্টানদের “রাজ্যের সন্তানগণ” থেকে পৃথক করা হয়
শ্যামাঘাস সংগ্রহ করে বাঁধা হয় (মথি ১৩:৩০)
(১০, ১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)
১৯১৯ সালে গোলায় সংগ্রহ করা: অভিষিক্ত খ্রিস্টানদেরকে পুনর্স্থাপিত মণ্ডলীতে সংগ্রহ করা হয়
শস্যচ্ছেদনের সময়
‘গোম গোলায় সংগ্রহ করা’ (মথি ১৩:৩০)
আরমাগিদোন
আরমাগিদোনে শ্যামাঘাসকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করা হবে
দেদীপ্যমান হওয়া
আরমাগিদোনের কিছু সময় আগে, অবশিষ্ট বিশ্বস্ত অভিষিক্তদের স্বর্গে সংগ্রহ করা হবে
ধার্মিকেরা রাজ্যে দেদীপ্যমান হয় (মথি ১৩:৪৩) (১৬, ১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)
শ্যামাঘাস সংগ্রহ করে অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দেওয়া হয় (মথি ১৩:৪২) (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)
[চিত্র]
[চিত্র]
[চিত্র]
[চিত্র]
[চিত্র]
[চিত্র]
[চিত্র]
[চিত্র]
[চিত্র]
[চিত্র]
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে খ্রিস্টীয়জগতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক শীঘ্র শেষ হয়ে যাবে