যিহোবার বাক্য জীবন্ত
গণনাপুস্তকের প্রধান বিষয়গুলো
মিশর থেকে বের হয়ে আসার পর, ইস্রায়েলীয়রা একটা জাতি হিসেবে সংগঠিত হয়েছিল। এর কিছু পরেই, তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে পারত কিন্তু তারা তা পারেনি। এর পরিবর্তে, তাদের প্রায় চল্লিশ বছর ‘ভয়ানক মহাপ্রান্তরে’ ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:১৫) কেন? বাইবেলের গণনাপুস্তকের ঐতিহাসিক বিবরণ আমাদের জানায় যে, কী ঘটেছিল। এটা আমাদের যিহোবা ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার এবং তাঁর প্রতিনিধিদের সম্মান করার প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করার জন্য প্রভাবিত করা উচিত।
প্রান্তরে এবং মোয়াবের তলভূমিতে মোশির দ্বারা লিখিত গণনাপুস্তকে ৩৮ বছর ৯ মাস—সা.কা.পূ. ১৫১২ সাল থেকে সা.কা.পূ. ১৪৭৩ সাল পর্যন্ত—সময়কালের বিবরণ রয়েছে। (গণনাপুস্তক ১:১; দ্বিতীয় বিবরণ ১:৩) এই নাম ইস্রায়েলীয়দের দুবার লোকগণনা করা থেকে নেওয়া হয়েছে, যা প্রায় ৩৮ বছর ব্যবধানে ঘটেছে। (অধ্যায় ১-৪, ২৬) বিবরণটি তিন ভাগে বিভক্ত রয়েছে। প্রথম ভাগ, সীনয় পর্বতের ঘটানাগুলো সম্বন্ধে বর্ণনা করে। দ্বিতীয় ভাগে, ইস্রায়েলীয়রা প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানোর সময় যা ঘটেছিল, সেই ঘটনাগুলো রয়েছে। আর শেষ ভাগটি মোয়াবের তলভূমিতে ঘটিত ঘটনাগুলো সম্বন্ধে আলোচনা করে। এই বিবরণটি পড়ার সময়, আপনি হয়তো নিজেকে জিজ্ঞেস করতে চাইবেন: ‘এই ঘটনাগুলো আমাকে কী শিক্ষা দেয়? এই পুস্তকে কি এমন কিছু নীতি রয়েছে, যেগুলো আজকে আমাকে উপকৃত করতে পারে?’
সীনয় পর্বতে
(গণনাপুস্তক ১:১–১০:১০)
দুবার লোকগণনার মধ্যে প্রথমটা সেই সময়ে হয়, যখন ইস্রায়েলীয়রা তখনও সীনয় পর্বতের তলে অবস্থিতি করছিল। লেবীয়রা ছাড়া, ২০ বছর বয়সী ও ততোধিক বয়সী পুরুষদের মোট সংখ্যা ছিল ৬,০৩,৫৫০ জন। স্পষ্টতই, এই লোকগণনা সামরিক উদ্দেশ্যে করা হয়। মহিলা, বাচ্চা ও লেবীয় সবাইকে মিলিয়ে পুরো শিবিরে হয়তো মোট ৩০ লক্ষেরও বেশি লোক ছিল।
লোকগণনার পর, ইস্রায়েলীয়রা শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে দল বেঁধে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা, লেবীয়দের বিভিন্ন দায়িত্ব ও সমাগম-তাম্বুর কাজগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ, রুদ্ধ করে রাখার নানা আদেশ এবং ঈর্ষা সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন নিয়ম আর নাসরীয়দের নেওয়া শপথগুলো পায়। ৭ অধ্যায়ে বেদির উদ্বোধনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে গোষ্ঠী প্রধানদের দ্বারা দেওয়া বলিগুলো সম্বন্ধে তথ্য রয়েছে এবং ৯ অধ্যায় নিস্তারপর্ব উদ্যাপন নিয়ে আলোচনা করে। এ ছাড়া, সম্মিলিত লোকেদের শিবির স্থাপন করা ও তুলে ফেলার বিষয়ও বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
২:১, ২—‘চিহ্নের সহিত পতাকা’ কী ছিল, যেগুলোর চারপাশে তিন ভাগে বিভক্ত গোষ্ঠীর প্রান্তরে শিবির স্থাপন করতে হতো? চিহ্নের সহিত পতাকাগুলো কী ছিল, সেই বিষয়ে বাইবেল কোনো বর্ণনা দেয় না। কিন্তু, এগুলোকে পবিত্র প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো না অথবা ধর্মীয়ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হতো না। চিহ্নের সহিত পতাকাগুলো ব্যবহৃত হতো এক ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে—একজন ব্যক্তিকে শিবিরে তার সঠিক জায়গাটা খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য।
৫:২৭—ব্যভিচারের দোষে দোষী একজন স্ত্রীর ‘ঊরু অবশ হইয়া পড়িবার’ অর্থ কী? এখানে জনন অঙ্গগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য “ঊরু” শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এটা ‘অবশ হইয়া পড়া’ ইঙ্গিত করে যে, এই অঙ্গগুলো ক্ষয় পেয়েছে, যাতে গর্ভধারণ করা অসম্ভব হয়ে উঠবে।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
৬:১-৭. নাসরীয়দের দ্রাক্ষাফল বা আঙুরের তৈরি খাবার এবং সব ধরনের মদ্য জাতীয় পানীয়কে পরিহার করতে হতো, অর্থাৎ আত্মত্যাগের প্রয়োজন ছিল। তাদের চুল লম্বা রাখতে হতো—যা যিহোবার প্রতি বশীভূত হওয়ার এক চিহ্ন ছিল, ঠিক যেমন স্ত্রীদের তাদের স্বামী অথবা বাবার বশীভূত হওয়ার দরকার ছিল। নাসরীয়দের যেকোনো শব, এমনকি নিকটাত্মীয়ের শব থেকে দূরে থেকে শুদ্ধ থাকতে হতো। বর্তমানে, পূর্ণসময়ের সেবকরা আত্মত্যাগ করার এবং যিহোবার ও তাঁর ব্যবস্থার প্রতি বশীভূত থাকার ব্যাপারে আত্মোৎসর্গমূলক মনোভাব দেখায়। কিছু কার্যভারের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে দূর দেশে যাওয়া, যার ফলে এমনকি নিজের পরিবারের নিকট সদস্যের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার জন্য দেশে ফিরে আসা হয়তো কঠিন অথবা অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
৮:২৫, ২৬. লেবীয়দের পরিচর্যা কর্মের পদে যোগ্য ব্যক্তিদের পূরণ করার এবং তাদের নিজের বয়সের কথা বিবেচনা করে, বয়স্ক ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করার আদেশ দেওয়া হয়। তবে, তারা অন্য লেবীয়দের স্বেচ্ছায় সাহায্য করতে পারত। বর্তমানে, যদিও এক রাজ্য ঘোষণাকারী হওয়া থেকে কোনো অবসর নেই, তবে এই ব্যবস্থার নীতিটি আমাদের এক মূল্যবান শিক্ষা দেয়। বয়সের কারণে একজন খ্রিস্টান যদি কিছু বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে না পারেন, তা হলে তিনি হয়তো সেবার এমন এক ক্ষেত্রে রত হতে পারেন, যেটা করা তার সাধ্যের মধ্যে রয়েছে।
প্রান্তরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়
(গণনাপুস্তক ১০:১১–২১:৩৫)
সমাগম-তাম্বুর বা আবাসের ওপর অবস্থিত মেঘ যখন ধীরে ধীরে উঠে যায়, তখন ইস্রায়েলীয়রা যাত্রা শুরু করে যা তাদের ৩৮ বছর এক বা দুই মাস পরে মোয়াবের মরুভূমিতে পৌঁছে দেবে। আপনি যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত “সেই উত্তম দেশ দেখুন” (ইংরেজি) ব্রোশারের ৯ পৃষ্ঠায় দেওয়া মানচিত্রে তাদের যাত্রাপথটি অনুসরণ করে হয়তো উপকৃত হতে পারেন।
কাদেশে যাওয়ার পথে পারণ প্রান্তরে, অন্তত তিনটে অভিযোগের ঘটনা দেখা যায়। প্রথমটা নিষ্পত্তি করা হয়, যখন যিহোবা কিছু লোককে ধ্বংস করার জন্য আগুন নিক্ষেপ করেন। এরপর ইস্রায়েলীয়রা মাংসের জন্য ক্রন্দন করে এবং যিহোবা ভারুই পাখি জোগান। মোশির বিরুদ্ধে মরিয়ম ও হারোণের অভিযোগের ফলে কিছু সময়ের জন্য মরিয়ম কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হন।
কাদেশে শিবির স্থাপর করার সময়ে, মোশি ১২ জন পুরুষকে প্রতিজ্ঞাত দেশ নিরীক্ষণ করার জন্য পাঠিয়েছিল। তারা ৪০ দিন পর ফিরে আসে। দশ জন গুপ্তচরের খারাপ সংবাদকে বিশ্বাস করে লোকেরা মোশি, হারোণ এবং বিশ্বস্ত গুপ্তচর যিহোশূয় ও কালেবকে পাথর মারতে চায়। যিহোবা লোকেদের মহামারী দ্বারা আঘাত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন কিন্তু মোশি মধ্যস্ততা করায়, ঈশ্বর ঘোষণা করেন যে, তারা ৪০ বছর ধরে প্রান্তরে যাযাবরের মতো ঘুরবে—যতদিন না যাদের গণনা করা হয়েছিল, তারা মারা যায়।
যিহোবা আরও কিছু নিয়ম দেন। কোরহ ও অন্যান্যরা মোশির এবং হারোণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কিন্তু বিদ্রোহীদের আগুন দ্বারা ধ্বংস করা হয় অথবা পৃথিবী তাদের গ্রাস করে। পরদিন সমস্ত মণ্ডলী মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে বচসা করে। ফলে ১৪,৭০০ জন যিহোবার কাছ থেকে আসা মারীতে মারা যায়। মহাযাজক হিসেবে তিনি যাকে বাছাই করেছেন, তা জানানোর জন্য ঈশ্বর হারোণের যষ্টিকে মুকুলিত করেন। এরপর যিহোবা লেবীয়দের দায়িত্ব এবং লোকেদের পরিষ্করণ সম্বন্ধীয় আরও কিছু নিয়ম দেন। রক্তবর্ণা গাভীর ভস্ম ব্যবহার করা, যিশুর বলিদানের মাধ্যমে শুদ্ধ হওয়াকে চিত্রিত করে।—ইব্রীয় ৯:১৩, ১৪.
ইস্রায়েল সন্তানেরা কাদেশে ফিরে আসে, যেখানে মরিয়ম মারা যান। মণ্ডলী আবারও মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। কারণটা কী ছিল? জলের অভাব। মোশি ও হারোণ অলৌকিকভাবে জল প্রদান করার সময় যিহোবার নামকে পবিত্রীকৃত করতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশের সুযোগ হারায়। ইস্রায়েল কাদেশ ছেড়ে এগিয়ে যায় এবং হোর পর্বতে হারোণ মারা যান। ইদোমের চারপাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, ইস্রায়েলীয়রা ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং ঈশ্বর ও মোশির বিরুদ্ধে কথা বলে। যিহোবা তাদের শাস্তি দিতে বিষাক্ত সাপ পাঠান। মোশি আরেকবার মধ্যস্ততা করেন আর ঈশ্বর তাকে এক পিতলের সাপ বানানোর এবং সেটাকে পতাকার ওপরে রাখার আদেশ দেন, যাতে এটার দিকে তাকিয়ে সেই ব্যক্তিরা সুস্থ হয়ে ওঠে, যাদের সাপে কামড়েছে। সাপটা, আমাদের অন্ততকালীন উপকারের জন্য যিশু খ্রিস্টের বিদ্ধ হওয়াকে চিত্রিত করে। (যোহন ৩:১৪, ১৫) ইস্রায়েলীয়রা ইমোরীয় রাজা সীহোন ও ওগকে পরাস্ত করে এবং তাদের দেশগুলো দখল করে।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
১২:১—কেন মরিয়ম ও হারোণ মোশির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল? সম্ভবত মরিয়মের আরও ক্ষমতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই ছিল তাদের অভিযোগ করার প্রকৃত কারণ। মোশির স্ত্রী সিপ্পোরা যখন প্রান্তরে মোশির সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন, তখন মরিয়ম হয়তো ভয় পেয়েছিলেন যে, শিবিরে তাকে হয়তো প্রধান নারী হিসেবে আর মর্যাদা দেওয়া হবে না।—যাত্রাপুস্তক ১৮:১-৫.
১২:৯-১১—একমাত্র মরিয়মেরই কেন কুষ্ঠরোগ হয়েছিল? খুব সম্ভবত, তিনিই অভিযোগটাকে উসকে দিয়েছিলেন এবং হারোণকে তার সঙ্গে যোগ দিতে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছিলেন। হারোণ তার ভুল স্বীকার করে এক সঠিক মনোভাব দেখিয়েছিলেন।
২১:১৪, ১৫—এখানে উল্লেখিত পুস্তকটি কী ছিল? শাস্ত্র বিভিন্ন বইয়ের উল্লেখ করে, যেগুলোকে বাইবেল লেখকরা উৎস বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যবহার করেছিল। (যিহোশূয়ের পুস্তক ১০:১২, ১৩; ১ রাজাবলি ১১:৪১; ১৪:১৯, ২৯) ‘সদাপ্রভুর যুদ্ধপুস্তক’ ছিল সেই ধরনের একটি বই। এটাতে যিহোবার লোকেদের যুদ্ধের এক ঐতিহাসিক বিবরণ ছিল।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
১১:২৭-২৯. যিহোবার কাজে অন্যেরা যখন সুযোগগুলো পায়, তখন আমাদের যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত সেই বিষয়ে মোশি এক সর্বোত্তম উদাহরণ রেখেছেন। ঈর্ষান্বিত হয়ে নিজের জন্য গৌরব পাওয়ার চেষ্টা করার পরিবর্তে, মোশি খুশি হয়েছিলেন যখন ইল্দদ ও মেদদ ভবিষ্যদ্বক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেছিল।
১২:২, ৯, ১০; ১৬:১-৩, ১২-১৪, ৩১-৩৫, ৪১, ৪৬-৫০. যিহোবা আশা করেন যেন তাঁর উপাসকরা ঈশ্বরদত্ত অধিকারের প্রতি সম্মান দেখায়।
১৪:২৪. মন্দ কাজ করার প্রতি জাগতিক চাপগুলোকে প্রতিরোধ করার চাবিকাঠিটি হল “অন্য আত্মা” অথবা মনোভাব গড়ে তোলা। এটা এমন হওয়া আবশ্যক, যেটা জগতের চেয়ে আলাদা।
১৫:৩৭-৪১. ইস্রায়েলীয়দের জামায় অসাধারণ থোপ তাদের এই বিষয়টা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য ছিল যে, ঈশ্বরের উপাসনা এবং তাঁর আদেশগুলোর বাধ্য হওয়ার জন্য তারা পৃথকীকৃত লোক ছিল। আমাদেরও কি ঈশ্বরের মান অনুযায়ী চলা উচিত নয় এবং জগতের থেকে আলাদা বলে দেখানো উচিত নয়?
মোয়াবের তলভূমিতে
(গণনাপুস্তক ২২:১–৩৬:১৩)
মোয়াবের মরুভূমিতে ইস্রায়েল সন্তানরা যখন শিবির স্থাপন করে, তখন মোয়াবীয়রা তাদের দেখে অত্যন্ত ভীত হয়। এইজন্য, মোয়াবের রাজা বালাক ইস্রায়েলীয়দের শাপ দেওয়ার জন্য বিলিয়মকে ভাড়া করেন। কিন্তু যিহোবা বিলিয়মকে তাদের আশীর্বাদ করতে বাধ্য করেন। এরপর, ইস্রায়েলীয় পুরুষদের অনৈতিকতা ও প্রতিমাপূজায় প্রলুব্ধ করার জন্য মোয়াবীয় ও মিদিয়নীয় স্ত্রীলোকদের ব্যবহার করা হয়। এর ফলে, যিহোবা ২৪,০০০ জন অন্যায়কারীকে ধ্বংস করেন। পরিশেষে, শাস্তির সমাপ্তি ঘটে যখন পীনহস দেখান যে, তিনি যিহোবার প্রতি করা কোনো বিরোধীতাকে সহ্য করেন না।
দ্বিতীয় লোকগণনা প্রকাশ করে যে, যেসমস্ত পুরুষকে প্রথম গণনায় গণিত করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে যিহোশূয় ও কালেব ছাড়া কেউ-ই জীবিত নেই। যিহোশূয়কে মোশির উত্তরাধিকার হওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইস্রায়েলীয়রা উপহারগুলো দেওয়ার এবং নানা মানত করার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্বন্ধে নির্দেশনা লাভ করে। এ ছাড়া, ইস্রায়েলের লোকেরা মিদিয়নীয়দের বিরুদ্ধে প্রতিশোধও নেয়। রূবেণ, গাদ এবং মনঃশির অর্ধেক বংশ যর্দন নদীর পূর্বদিকে বসতি করে। ইস্রায়েলীয়দের যর্দন পার হওয়ার এবং দেশটা দখল করার বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়। দেশটার বিস্তারিত সীমানা নিরূপণ করা হয়। গুলিবাঁট করার দ্বারা উত্তরাধিকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। লেবীয়দের ৪৮টা শহর দেওয়া হয়েছিল আর এগুলোর মধ্যে ৬টা আশ্রয়-নগর হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য ছিল।
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
২২:২০-২২—কেন বিলিয়মের প্রতি যিহোবার ক্রোধ প্রজ্বলিত হয়েছিল? যিহোবা ভাববাদী বিলিয়মকে বলেছিলেন যে, তিনি যেন ইস্রায়েলীয়দের শাপ না দেন। (গণনাপুস্তক ২২:১২) কিন্তু, ভাববাদী ইস্রায়েলকে শাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই বালাকের লোকদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। বিলিয়ম মোয়াবীয় রাজাকে খুশি করতে ও তার কাছ থেকে বেতন বা পুরস্কার লাভ করতে চেয়েছিলেন। (২ পিতর ২:১৫, ১৬; যিহূদা ১১) এমনকি বিলিয়ম যখন ইস্রায়েলকে শাপ দেওয়ার পরিবর্তে আশীর্বাদ দেওয়ার জন্য বাধ্য হয়েছিলেন, তখন তিনি এই পরামর্শ দিয়ে রাজার অনুগ্রহ লাভ করার চেষ্টা করেছিলেন যে, ইস্রায়েলীয় পুরুষদের প্রলোভিত করার জন্য বাল দেবের উপাসনাকারী মহিলাদের যেন ব্যবহার করা হয়। (গণনাপুস্তক ৩১:১৫, ১৬) তাই, বিলিয়মের প্রতি ঈশ্বরের ক্রোধ প্রজ্বলিত হওয়ার কারণ ছিল সেই ভাববাদীর বিবেকবর্জিত লোভ।
৩০:৬-৮—একজন খ্রিস্টান পুরুষ কি তার স্ত্রীর মানতকে বাতিল করতে পারেন? মানতের ক্ষেত্রে, এখন যিহোবা তাঁর উপাসকদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আচরণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকরণ হল এক ব্যক্তিগত মানত। (গালাতীয় ৬:৫) একজন স্বামীর এই ধরনের মানতকে বাতিল করার কোনো অধিকার নেই। তবে, একজন স্ত্রীর এমন কোনো মানত করা এড়িয়ে চলা উচিত, যেটা ঈশ্বরের বাক্য অথবা তার স্বামীর প্রতি তার কর্তব্যগুলোর সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
২৫:১১. যিহোবার উপাসনার প্রতি উদ্যোগ দেখানোর কী এক উদাহরণই না পীনহস আমাদের জন্য রেখেছেন! মণ্ডলীকে শুদ্ধ রাখার আকাঙ্ক্ষা, আমাদের জানা যেকোনো জঘন্য অনৈতিকতার বিষয় কি খ্রিস্টান প্রাচীনদের কাছে জানানোর জন্য আমাদের পরিচালিত করবে না?
৩৫:৯-২৯. একজন অনিচ্ছাকৃত নরঘাতককে কিছু সময়ের জন্য তার ঘর ছেড়ে এক আশ্রয়-নগরে পালিয়ে যেতে হতো, এই বিষয়টা আমাদের শেখায় যে, জীবন হল পবিত্র এবং আমাদের এটার প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।
৩৫:৩৩. নিরীহ লোকেদের রক্তপাত দ্বারা কলুষিত এই পৃথিবীকে, একমাত্র তাদের রক্ত দ্বারাই প্রায়শ্চিত্ত করা যেতে পারে, যারা এই লোকেদের রক্ত ঝরিয়েছে। এটা কতই না উপযুক্ত যে, এই পৃথিবী এক পরমদেশে পরিণত হওয়ার আগে যিহোবা দুষ্টদের ধ্বংস করবেন!—হিতোপদেশ ২:২১, ২২; দানিয়েল ২:৪৪.
ঈশ্বরের বাক্য কার্যসাধক
আমাদের অবশ্যই যিহোবাকে এবং তাঁর লোকেদের মাঝে দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্মান করতে হবে। গণনাপুস্তক এই সত্যটি আরও স্পষ্ট করে। বর্তমানে, মণ্ডলীতে শান্তি ও একতা বজায় রাখার কী এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা!
গণনাপুস্তকে বর্ণিত ঘটনাগুলো দেখায় যে, যারা তাদের আধ্যাত্মিকতাকে অবহেলা করে, তারা কত সহজে বচসা, অনৈতিকতা ও প্রতিমাপূজার মতো মন্দ কাজ করায় পতিত হতে পারে। বাইবেলের এই পুস্তকের কিছু উদাহরণ ও শিক্ষা, যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীগুলোর পরিচর্যা সভায় হওয়া স্থানীয় প্রয়োজন বক্তৃতাগুলোর এক ভিত্তি হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। সত্যিই, আমাদের জীবনে “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক।”—ইব্রীয় ৪:১২.
[২৪, ২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
সমাগম-তাম্বুর উপরে অবস্থিত অলৌকিক মেঘ দ্বারা যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের, শিবির স্থাপন করার ও সেগুলো তুলে ফেলার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবা আমাদের বাধ্যতা পাওয়ার যোগ্য আর তিনি আশা করেন যে, আমরা তাঁর প্রতিনিধিদের সম্মান দেখাবো