আসুন আমরা একসঙ্গে যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করি
“আমার সহিত সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] মহিমা কীর্ত্তন কর; আইস, আমরা একসঙ্গে তাঁহার নামের প্রতিষ্ঠা করি।”—গীতসংহিতা ৩৪:৩.
১. যিশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
সাধারণ কাল ৩৩ সালের ১৪ই নিশান রাতে, যিশু ও তাঁর প্রেরিতরা যিরূশালেমের ওপরের কুঠরিতে একসঙ্গে যিহোবার উদ্দেশে প্রশংসা গীত গেয়েছিল। (মথি ২৬:৩০) মানুষ হিসেবে যিশু এই শেষবারের মতো তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে প্রশংসা গীত গেয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি যে এভাবে তাদের সঙ্গে সভা শেষ করেছিলেন, তা উপযুক্ত ছিল। তাঁর পার্থিব পরিচর্যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যিশু তাঁর পিতার প্রশংসা করেছিলেন এবং উদ্যোগের সঙ্গে তাঁর নাম জানিয়েছিলেন। (মথি ৪:১০, NW; ৬:৯; ২২:৩৭, ৩৮; যোহন ১২:২৮; ১৭:৬) বস্তুতপক্ষে, তিনি গীতরচকের এই উষ্ণ আমন্ত্রণের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন: “আমার সহিত যিহোবার মহিমা কীর্ত্তন কর; আইস, আমরা একসঙ্গে তাঁহার নামের প্রতিষ্ঠা করি।” (গীতসংহিতা ৩৪:৩) আমাদের অনুসরণের জন্য কতই না উত্তম এক উদাহরণ!
২, ৩. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, ৩৪ গীতের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক তাৎপর্য রয়েছে? (খ) এই প্রবন্ধে ও পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?
২ যিশুর সঙ্গে প্রশংসা গীত গাওয়ার কয়েক ঘন্টা পর, প্রেরিত যোহন একেবারে ভিন্ন ধরনের একটা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছিলেন। তিনি তাঁর প্রভু ও দুজন অপরাধীকে যাতনাদণ্ডে মৃত্যুদণ্ড পেতে দেখেছিলেন। রোমীয় সৈন্যরা দুজন অপরাধীর মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করার জন্য তাদের পা ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু, যোহন উল্লেখ করেন যে, তারা যিশুর পা ভাঙেনি। সৈন্যরা যখন যিশুর কাছে এসেছিল, তখন তিনি ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছিলেন। যোহন তার সুসমাচারে সেই ঘটনাকে ৩৪ গীতের আরেকটা অংশের পরিপূর্ণতা হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন: “তাঁহার একখানি অস্থিও ভগ্ন হইবে না।”—যোহন ১৯:৩২-৩৬; গীতসংহিতা ৩৪:২০.
৩ চৌত্রিশ গীতে খ্রিস্টানদের জন্য আরও অনেক আগ্রহজনক বিষয় রয়েছে। তাই, এই প্রবন্ধে ও পরের প্রবন্ধে আমরা সেই পরিস্থিতিগুলো পুনর্বিবেচনা করব, যে-পরিস্থিতিগুলোতে দায়ূদ এই গীত লিখেছিলেন আর এরপর এই গীতের উৎসাহমূলক বিষয়বস্তু বিবেচনা করব।
শৌলের কাছ থেকে দায়ূদের পলায়ন
৪. (ক) কেন দায়ূদ ইস্রায়েলের ভাবী রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন? (খ) কেন শৌল দায়ূদকে অতিশয় “ভালবাসিতে লাগিলেন”?
৪ দায়ূদের বয়স যখন কম ছিল, তখন শৌল ইস্রায়েলের রাজা ছিলেন। কিন্তু, শৌল অবাধ্য হয়ে পড়েছিলেন এবং যিহোবার অনুগ্রহ হারিয়েছিলেন। সেই কারণে ভাববাদী শমূয়েল তাকে বলেছিলেন: “সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] অদ্য তোমা হইতে ইস্রায়েলের রাজ্য টানিয়া ছিঁড়িলেন, এবং তোমা হইতে উত্তম তোমার এক প্রতিবাসীকে তাহা দিলেন।” (১ শমূয়েল ১৫:২৮) পরবর্তী সময়ে, যিশয়ের সবচেয়ে ছোট ছেলে দায়ূদকে ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করার জন্য যিহোবা শমূয়েলকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে, ঈশ্বরের আত্মা থেকে বঞ্চিত হয়ে রাজা শৌল বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলেন। রাজার সেবা করার জন্য একজন দক্ষ বাদক দায়ূদকে গিবিয়াতে নিয়ে আসা হয়েছিল আর দায়ূদের যন্ত্রসংগীত শৌলের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছিল, যিনি “তাঁহাকে অতিশয় ভালবাসিতে লাগিলেন।”—১ শমূয়েল ১৬:১১, ১৩, ২১, ২৩.
৫. কেন দায়ূদের প্রতি শৌলের মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল আর দায়ূদ কী করতে বাধ্য হয়েছিলেন?
৫ সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, যিহোবা দায়ূদের সঙ্গে রয়েছেন বলে প্রমাণিত হয়েছিল। যিহোবা দায়ূদকে পলেষ্টীয় দৈত্যাকৃতি গলিয়াৎকে পরাজিত করার জন্য সাহায্য করেছিলেন এবং দায়ূদ যখন তার সামরিক দক্ষতার জন্য ইস্রায়েলে সম্মানিত হয়েছিলেন, তখন তাকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু, দায়ূদের ওপর যিহোবার আশীর্বাদ শৌলকে ঈর্ষান্বিত করে তুলেছিল এবং তিনি দায়ূদকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিলেন। দায়ূদ যখন শৌলের সামনে বীণা বাজাচ্ছিলেন, তখন দুবার রাজা তার দিকে তার বর্শা নিক্ষেপ করেছিলেন। দুবারই দায়ূদ বর্শার সামনে থেকে সরে যেতে পেরেছিলেন। শৌল যখন তাকে হত্যা করার জন্য তৃতীয় বার প্রচেষ্টা করেছিলেন, তখন ইস্রায়েলের ভাবী রাজা দায়ূদ বুঝতে পেরেছিলেন যে, জীবন রক্ষার জন্য তাকে পালাতে হবে। পরিশেষে, তাকে ধরে হত্যা করার জন্য শৌলের ক্রমাগত প্রচেষ্টার কারণে দায়ূদ ইস্রায়েল অঞ্চলের বাইরে আশ্রয় খোঁজার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।—১ শমূয়েল ১৮:১১; ১৯:৯, ১০.
৬. কেন শৌল নোবের অধিবাসীদের হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন?
৬ ইস্রায়েলের সীমান্তে যাওয়ার পথে দায়ূদ নোব নগরে থেমেছিলেন, যেখানে যিহোবার আবাস অবস্থান করছিল। স্পষ্টতই, দায়ূদ পালানোর সময়ে তার সঙ্গে যুবকদের এক রক্ষীদল ছিল আর দায়ূদ তাদের ও নিজের জন্য কিছু খাবারদাবারের সন্ধান করেছিলেন। শৌল জানতে পেরেছিলেন যে, দায়ূদ ও তার লোকেদেরকে মহাযাজক কিছু খাবার এবং মৃত গলিয়াতের কাছ থেকে দায়ূদ যে-খড়্গ নিয়েছিলেন, সেটা দিয়েছেন। ক্রুদ্ধ হয়ে শৌল ৮৫ জন যাজকসহ সেই নগরের সমস্ত অধিবাসীকে হত্যা করেছিলেন।—১ শমূয়েল ২১:১, ২; ২২:১২, ১৩, ১৮, ১৯; মথি ১২:৩, ৪.
মৃত্যুর হাত থেকে আরেকবার রেহাই
৭. কেন গাৎ দায়ূদের লুকানোর জন্য নিরাপদ জায়গা ছিল না?
৭ দায়ূদ নোব থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে পল্টেষ্টীয় অঞ্চলে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং গলিয়াতের নিজ নগর গাতের রাজা আখীশের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন। হতে পারে দায়ূদ এই যুক্তি করেছিলেন যে, সম্ভবত শৌল তাকে গাতে খুঁজবেন না। কিন্তু, শীঘ্রই গাতের রাজার দাসেরা দায়ূদকে চিনে ফেলেছিল। দায়ূদ যখন শুনতে পেয়েছিলেন যে, তাকে চিনে ফেলেছে, তখন তিনি “গাতের রাজা আখীশ হইতে অতিশয় ভীত হইলেন।”—১ শমূয়েল ২১:১০-১২.
৮. (ক) গাতে দায়ূদের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ৫৬ গীত আমাদের কী বলে? (খ) কীভাবে দায়ূদ একটুর জন্য মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন?
৮ এরপর পলেষ্টীয়রা দায়ূদকে ধরে ফেলে। হয়তো এই সময়ই দায়ূদ সেই হৃদয়গ্রাহী গীত রচনা করেছিলেন, যেখানে তিনি যিহোবার কাছে এই সনির্বন্ধ আবেদন করেছিলেন: “আমার নেত্রজল তোমার কুপাতে রাখ।” (গীতসংহিতা ৫৬:৮ এবং শীর্ষলিখন) এভাবে তিনি তার এই আস্থা প্রকাশ করেছিলেন যে, যিহোবা তার দুঃখ ভুলে যাবেন না বরং প্রেমের সঙ্গে তার যত্ন নেবেন ও তাকে সুরক্ষা করবেন। এ ছাড়া, পলেষ্টীয় রাজাকে বিভ্রান্ত করার জন্য দায়ূদ একটা কৌশল বের করেছিলেন। তিনি পাগলের ভান করেছিলেন। এটা দেখে রাজা আখীশ তার সামনে একজন “ক্ষিপ্ত” বা উন্মত্ত ব্যক্তিকে নিয়ে আসার জন্য তার দাসদের তিরস্কার করেছিলেন। স্পষ্টতই, যিহোবা দায়ূদের কৌশলকে আশীর্বাদ করেছিলেন। দায়ূদকে সেই নগর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল আর এভাবে তিনি আরেকবার একটুর জন্য মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলেন।—১ শমূয়েল ২১:১৩-১৫.
৯, ১০. কোন কারণে দায়ূদ ৩৪ গীত লিখেছিলেন আর সেই গীত রচনা করার সময় তার মনে হয়তো কাদের কথা ছিল?
৯ দায়ূদের সমর্থনকারীরা তার সঙ্গে গাতে পালিয়ে গিয়েছিল নাকি ইস্রায়েলের কাছের গ্রামগুলোতে থেকে তাকে পাহারা দিচ্ছিল, সেই সম্বন্ধে বাইবেল কিছু বলে না। যা-ই হোক না কেন, কীভাবে যিহোবা আবারও তাকে উদ্ধার করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে দায়ূদ যখন তাদের কাছে বলেছিলেন, তখন নিশ্চয়ই এক আনন্দিত পুনর্মিলন ঘটেছিল। সেই ঘটনাই ছিল ৩৪ গীতের পটভূমি, যেমনটা শীর্ষলিখনের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। এই গীতের প্রথম সাতটা পদে, দায়ূদকে ঈশ্বর উদ্ধার করেছিলেন বলে তিনি তাঁর প্রশংসা করেছিলেন এবং যিহোবাকে তাঁর লোকেদের মহান উদ্ধারকর্তা হিসেবে উচ্চীকৃত করায় তার সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য তার সমর্থনকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।—গীতসংহিতা ৩৪:৩, ৪, ৭.
১০ দায়ূদ ও তার লোকেরা গাৎ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্বে ইস্রায়েলের পাহাড়ি এলাকার অদুল্লম গুহায় নিরাপত্তা খুঁজে পেয়েছিল। সেখানে সেই ইস্রায়েলীয়রা এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল, যারা রাজা শৌলের শাসনাধীনে বিদ্যমান বিভিন্ন অবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল। (১ শমূয়েল ২২:১, ২) দায়ূদ যখন গীতসংহিতা ৩৪:৮-২২ পদের কথাগুলো রচনা করেছিলেন, তখন তার মনে হয়তো এই ব্যক্তিদের কথাই ছিল। সেই পদগুলোর অনুস্মারকগুলো আজকে আমাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ আর নিশ্চিতভাবেই আমরা এই চমৎকার গীতের বিস্তারিত আলোচনা থেকে উপকার লাভ করব।
আপনারও কি দায়ূদের মতো একই প্রধান চিন্তার বিষয় রয়েছে?
১১, ১২. অবিরতভাবে যিহোবার প্রশংসা করার কোন কোন কারণ আমাদের রয়েছে?
১১ “আমি সর্ব্বসময়ে সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] ধন্যবাদ করিব; তাঁহার প্রশংসা নিরন্তর আমার মুখে থাকিবে।” (গীতসংহিতা ৩৪:১) বহিষ্কৃত ব্যক্তি হিসেবে জীবনযাপন করায় দায়ূদকে নিশ্চয়ই বস্তুগত বিষয় নিয়ে অনেক চিন্তা করতে হয়েছিল কিন্তু এই কথাগুলো যেমন দেখায় যে, তার দৈনন্দিন চিন্তাগুলো যিহোবাকে প্রশংসা করার বিষয়ে তার দৃঢ়সংকল্পকে ম্লান করে দেয়নি। আমরা যখন দুঃখকষ্ট ভোগ করি, তখন এটা আমাদের জন্য কতই না উত্তম এক উদাহরণ! আমরা স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে, সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে অথবা জনসাধারণের পরিচর্যায়, যেখানেই থাকি না কেন, আমাদের প্রধান আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত যিহোবার প্রশংসা করা। তা করার যে-অসংখ্য কারণ আমাদের রয়েছে, সেগুলো নিয়ে একটু চিন্তা করুন! উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার বিস্ময়কর সৃষ্টি কাজের মধ্যে আমরা যাকিছু আবিষ্কার ও উপভোগ করতে পারি, তার কোনো শেষ নেই। আর যিহোবা তাঁর সংগঠনের পার্থিব অংশের মাধ্যমে যা সম্পাদন করেছেন, তা বিবেচনা করে দেখুন! যদিও তারা অসিদ্ধ কিন্তু আধুনিক সময়ে যিহোবা বিশ্বস্ত মানুষদের প্রবলভাবে ব্যবহার করেছেন। ঈশ্বরের কাজকে কীভাবে এমন ব্যক্তিদের কাজের সঙ্গে তুলনা করা যায়, যারা জগতের দ্বারা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়ে থাকে? আপনি কি দায়ূদের সঙ্গে একমত নন, যিনি এও লিখেছিলেন: “হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], দেবগণের মধ্যে তোমার তুল্য কেহই নাই, তোমার কর্ম্ম সকলের তুল্য কিছুই নাই।”—গীতসংহিতা ৮৬:৮.
১২ দায়ূদের মতো আমরাও যিহোবার অতুলনীয় কাজগুলোর জন্য অবিরতভাবে তাঁর প্রশংসা করার জন্য অনুপ্রাণিত হই। অধিকন্তু, আমরা এটা জেনে রোমাঞ্চিত হই যে, ঈশ্বরের রাজ্য এখন দায়ূদের স্থায়ী উত্তরাধিকারী যিশু খ্রিস্টের হাতে রয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫) এর অর্থ হল যে, এই বিধিব্যবস্থার শেষ একেবারে নিকটে। ছয়শো কোটিরও বেশি মানুষের অনন্তকালীন ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে রয়েছে। ঈশ্বরের রাজ্য এবং মানবজাতির জন্য শীঘ্রই এটি কী করবে, সেই সম্বন্ধে অন্যদেরকে বলার ও তাদেরকে আমাদের সঙ্গে যিহোবার প্রশংসা করতে সাহায্য করার এত প্রয়োজন এর আগে কখনো হয়নি। নিশ্চিতভাবেই, খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই এই “সুসমাচার” গ্রহণ করতে অন্যদেরকে উৎসাহিত করার জন্য প্রতিটা সুযোগকে ব্যবহার করাই আমাদের জীবনের অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত।—মথি ২৪:১৪.
১৩. (ক) দায়ূদ কাকে নিয়ে দম্ভ করেছিলেন আর কোন ধরনের লোকেরা সাড়া দিয়েছিল? (খ) কীভাবে মৃদুশীল ব্যক্তিরা আজকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে?
১৩ “আমার প্রাণ সদাপ্রভুরই [“যিহোবার,” NW] শ্লাঘা করিবে; তাহা শুনিয়া নম্রগণ আনন্দিত হইবে।” (গীতসংহিতা ৩৪:২) দায়ূদ এখানে ব্যক্তিগত কোনো সাফল্যের জন্য শ্লাঘা বা দম্ভ করেননি। উদাহরণস্বরূপ, গাতের রাজাকে তিনি যেভাবে বিভ্রান্ত করেছিলেন, সেটার জন্য তিনি বড়াই করেননি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি যখন গাতে ছিলেন, তখন যিহোবাই তাকে রক্ষা করেছিলেন আর যিহোবার সাহায্যেই তিনি রেহাই পেয়েছিলেন। (হিতোপদেশ ২১:১) তাই, দায়ূদ নিজেকে নিয়ে নয় বরং যিহোবাতে দম্ভ করেছিলেন। এই কারণে নম্র বা মৃদুশীল ব্যক্তিরা যিহোবার নিকটবর্তী হয়েছিল। একইভাবে যিশুও যিহোবার নামকে মহিমান্বিত করেছিলেন আর এটা নম্র, শিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিদের তাঁর নিকটবর্তী করেছিল। আজকে, সমস্ত জাতি থেকে আসা মৃদুশীল ব্যক্তিরা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের আন্তর্জাতিক মণ্ডলীর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, যে-মণ্ডলীর মস্তক হলেন যিশু। (কলসীয় ১:১৮) এই ধরনের মৃদুশীল ব্যক্তিদের হৃদয় অনুপ্রাণিত হয়, যখন তারা ঈশ্বরের নামকে তাঁর নম্র লোকেদের দ্বারা গৌরবান্বিত হতে শোনে এবং যখন তারা বাইবেলের সেই বার্তা শোনে, যে-বার্তা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে।—যোহন ৬:৪৪; প্রেরিত ১৬:১৪.
সভাগুলো আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে
১৪. (ক) দায়ূদ কি কেবল একান্তে যিহোবার প্রশংসা করে সন্তুষ্ট ছিলেন? (খ) উপাসনার জন্য একত্রিত হওয়ার বিষয়ে যিশু কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
১৪ “আমার সহিত যিহোবার মহিমা কীর্ত্তন কর; আইস, আমরা একসঙ্গে তাঁহার নামের প্রতিষ্ঠা করি।” (গীতসংহিতা ৩৪:৩) দায়ূদ কেবল একান্তে যিহোবার প্রশংসা করে সন্তুষ্ট ছিলেন না। ঈশ্বরের নামকে প্রতিষ্ঠা বা উচ্চীকৃত করায় তার সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি তার সঙ্গীদের উষ্ণভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। একইভাবে মহান দায়ূদ যিশু খ্রিস্ট জনসমক্ষে—স্থানীয় সমাজগৃহে, যিরূশালেমে ঈশ্বরের মন্দিরে উৎসবের সময় এবং তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে মেলামেশার সময়ে—যিহোবার প্রশংসা করে আনন্দিত ছিলেন। (লূক ২:৪৯; ৪:১৬-১৯; ১০:২১; যোহন ১৮:২০) বিশেষভাবে এখন যেহেতু আমরা ‘সেই দিন অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছি,’ তাই সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে একত্রে সম্ভাব্য প্রতিটা সুযোগে যিহোবার প্রশংসা করার ক্ষেত্রে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করা কী এক আনন্দপূর্ণ সুযোগ!—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
১৫. (ক) দায়ূদের অভিজ্ঞতা তার লোকেদের ওপর কোন প্রভাব ফেলেছিল? (খ) কীভাবে আমরা আমাদের সভাগুলোতে উপস্থিত হয়ে উপকৃত হই?
১৫ “আমি সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] অন্বেষণ করিলাম, তিনি আমাকে উত্তর দিলেন, আমার সকল আশঙ্কা হইতে উদ্ধার করিলেন।” (গীতসংহিতা ৩৪:৪) এই অভিজ্ঞতা দায়ূদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই, তিনি আরও বলেছিলেন: “এই দুঃখী ডাকিল, সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] শ্রবণ করিলেন, ইহাকে সকল সঙ্কট হইতে নিস্তার করিলেন।” (গীতসংহিতা ৩৪:৬) সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করার সময়, কীভাবে যিহোবা আমাদের কঠিন পরিস্থিতিগুলো সহ্য করতে সাহায্য করেছেন, সেই সম্বন্ধে গঠনমূলক অভিজ্ঞতাগুলো বলার অনেক সুযোগ আমাদের রয়েছে। এটা আমাদের সহবিশ্বাসীদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে, ঠিক যেমন দায়ূদের অভিব্যক্তিগুলো তার সমর্থনকারীদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল। দায়ূদের ক্ষেত্রে তার সঙ্গীরা “[যিহোবার] প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া দীপ্যমান হইল; তাহাদের মুখ কখনও বিবর্ণ হইবে না [“তাদের মুখে লজ্জার ভাব দেখা যায় না,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]।” (গীতসংহিতা ৩৪:৫) যদিও তারা রাজা শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল, তবুও তারা লজ্জাবোধ করেনি। তাদের এই আস্থা ছিল যে, দায়ূদকে ঈশ্বর সমর্থন করছিলেন এবং এতে তাদের মুখ দীপ্যমান ছিল। একইভাবে, নতুন আগ্রহী ব্যক্তিরা ও সেইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সত্য খ্রিস্টান হিসেবে রয়েছে এমন ব্যক্তিরা সমর্থনের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করে। ব্যক্তিগতভাবে তারা তাঁর সাহায্য সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করে বলে তাদের দীপ্যমান মুখ বিশ্বস্ত থাকার বিষয়ে তাদের দৃঢ়সংকল্পকে প্রতিফলিত করে।
স্বর্গদূতদের কাছ থেকে সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞ হোন
১৬. আমাদের উদ্ধারের জন্য কীভাবে যিহোবা তাঁর দূতদের ব্যবহার করেছেন?
১৬ “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] দূত, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের চারিদিকে শিবির স্থাপন করেন, আর তাহাদিগকে উদ্ধার করেন।” (গীতসংহিতা ৩৪:৭) যিহোবার দ্বারা উদ্ধারপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয়টাকে দায়ূদ এমন কিছু হিসেবে দেখেননি, যা কেবল তার প্রতিই ঘটতে পারে। এটা ঠিক যে, দায়ূদ যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তি, ইস্রায়েলের ভাবী রাজা ছিলেন; কিন্তু তিনি জানতেন যে, যিহোবা তাঁর সমস্ত বিশ্বস্ত উপাসকের প্রতি লক্ষ রাখার জন্য তাঁর দূতদের ব্যবহার করেন, তা তারা বিশিষ্ট বা সাধারণ ব্যক্তি যে-ই হোক না কেন। আজকে আমাদের আধুনিক দিনে, সত্য উপাসকরাও সেই সুরক্ষা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, যা যিহোবা জুগিয়ে থাকেন। নাৎসি জার্মানি—ও সেইসঙ্গে আ্যংগোলা, মালাউই, মোজাম্বিক এবং অন্যান্য অনেক দেশে—যিহোবার সাক্ষিদের নিঃশেষে বিনষ্ট করে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষরা অভিযান চালিয়েছে। তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এর পরিবর্তে, সেই দেশগুলোতে যিহোবার লোকেরা একত্রে ঈশ্বরের নামকে উচ্চীকৃত করার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। কেন? কারণ যিহোবা তাঁর লোকেদের সুরক্ষা করার ও পরিচালনা দেওয়ার জন্য তাঁর পবিত্র দূতদের ব্যবহার করেন।—ইব্রীয় ১:১৪.
১৭. কোন কোন উপায়ে ঈশ্বরের দূতেরা আমাদের সাহায্য করে?
১৭ অধিকন্তু, যিহোবার দূতেরা বিভিন্ন বিষয়কে কৌশলে পরিচালনা করতে পারে, যার ফলে যেকেউ অন্যদের বিঘ্নজনক হয়, তাদেরকে যিহোবার লোকেদের মধ্যে থেকে দূর করে দেওয়া হয়। (মথি ১৩:৪১; ১৮:৬, ১০) আর যদিও মাঝে মাঝে আমরা হয়তো জানিও না কিন্তু স্বর্গদূতেরা সেইসমস্ত বাধা দূর করে দেয়, যেগুলো ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সেবাকে ব্যাহত করতে পারে আর তারা আমাদেরকে সেই বিষয়গুলো থেকে সুরক্ষা করে, যেগুলো যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে বিপদের মুখে ফেলতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, তারা সমস্ত মানবজাতির কাছে “অনন্তকালীন সুসমাচার” ঘোষণার কাজে পরিচালনা দেয়, যার অন্তর্ভুক্ত সেই জায়গার লোকেদের কাছে, যেখানে বিপদজনক পরিস্থিতির মধ্যে সুসমাচার প্রচার কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬) স্বর্গদূতদের সাহায্যের প্রমাণ সম্বন্ধে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল সাহিত্যাদিতে প্রায়ই বলা হয়েছে।a এই ধরনের এত এত অভিজ্ঞতা রয়েছে যে, এগুলোকে কেবল কাকতালীয় ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
১৮. (ক) স্বর্গদূতদের সাহায্য থেকে উপকার পাওয়ার জন্য আমাদের কী করার প্রয়োজন? (খ) পরের প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?
১৮ স্বর্গদূতদের পরিচালনা ও সুরক্ষা থেকে উপকার পেয়ে চলার জন্য আমাদের এমনকি বিরোধিতার মুখেও যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করে যেতে হবে। মনে রাখবেন যে, ঈশ্বরের দূতেরা কেবল “যাহারা [যিহোবাকে] ভয় করে, তাহাদের চারিদিকে” শিবির স্থাপন করে। এর অর্থ কী? ঈশ্বরের প্রতি ভয় কী আর কীভাবে আমরা তা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি? কেন আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁকে ভয় করি? এই প্রশ্নগুলো পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
[পাদটীকা]
a যিহোবার সাক্ষিরা—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বইয়ের ৫৫০ পৃষ্ঠা; যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ২০০৫ (ইংরেজি) এর ৫৩-৪ পৃষ্ঠা; ২০০০ সালের ১লা মার্চ প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৫-৬ পৃষ্ঠা; ১৯৯১ সালের ১লা জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২৭ পৃষ্ঠা এবং ১৯৯১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২৬ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• একজন যুবক হিসেবে দায়ূদ কোন পরীক্ষাগুলো ভোগ করেছিলেন?
• দায়ূদের মতো আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় কী?
• খ্রিস্টীয় সভাগুলোকে আমরা কীভাবে দেখি?
• আমাদের সাহায্য করার জন্য যিহোবা কীভাবে তাঁর দূতদের ব্যবহার করেন?
[২১ পৃষ্ঠার মানচিত্র]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
রামা
গাৎ
সিক্লগ
গিবিয়া
নোব
যিরূশালেম
বৈৎলেহম
অদুল্লম
কিয়ীলা
হিব্রোণ
সীফ
হোরেশ
কর্মিল
মায়োন
ঐন্-গদী
লবণসমুদ্র
[সৌজন্যে]
মানচিত্র: Based on maps copyrighted by Pictorial Archive (Near Eastern History) Est. and Survey of Israel
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
এমনকি পলাতক থাকাকালীন দায়ূদ যিহোবার নামকে উচ্চীকৃত করেছিলেন
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা যখন আমাদের খ্রিস্টীয় সমাবেশগুলোতে বলা গঠনমূলক অভিজ্ঞতাগুলো শুনি, তখন আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হয়