যিশাইয়
৩০ যিহোবা ঘোষণা করেন: “ধিক সেই একগুঁয়ে ছেলেদের,
যারা এমন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে, যেগুলো আমার নয়,
যারা এমন চুক্তি করে,* যেগুলোতে আমার মত নেই*
আর এভাবে তারা একটার পর একটা পাপ করে চলে।
২ তারা আমাকে জিজ্ঞেস না করে* মিশরে যায়,
যাতে তারা ফরৌণের কাছে* সুরক্ষা লাভ করতে পারে
এবং মিশরের ছায়ায় আশ্রয় নিতে পারে!
৩ কারণ ফরৌণের সুরক্ষা তোমাদের জন্য লজ্জার কারণ হবে
আর মিশরের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া তোমাদের জন্য অপমানের কারণ হবে।
৪ কারণ তার অধ্যক্ষেরা সোয়নে রয়েছে
আর তার বার্তাবাহকেরা হানেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে।
৫ সমস্ত ইজরায়েলীয়কে লজ্জিত করা হবে
কারণ মিশরীয়েরা তাদের কোনো উপকার করতে পারে না,
তারা কোনো সাহায্য কিংবা উপকার করে না,
কেবল লজ্জা ও অপমান নিয়ে আসে।”
৬ দক্ষিণের পশুদের বিরুদ্ধে এক বার্তা:
তারা গাধার পিঠে তাদের ধনসম্পদ চাপিয়ে
এবং উটের কুঁজে তাদের জিনিসপত্র চাপিয়ে
সেই দেশের মধ্য দিয়ে যায়, যেখানে দুঃখ ও কষ্ট,
সিংহ, হ্যাঁ, গর্জনকারী সিংহ,
বিষধর সাপ এবং খুব দ্রুত চলে এমন বিষধর সাপ রয়েছে।
কিন্তু, এগুলো লোকদের কোনো উপকার করবে না।
৭ কারণ মিশরের সাহায্য কোনো কাজের নয়।
তাই, আমি তার নাম রেখেছি: “রাহব, যে স্থির হয়ে বসে থাকে।”
৮ “এখন যাও, তাদের সামনে একটা ফলকে এই কথাগুলো লেখো,
একটা বইয়ে এগুলো লেখো,
যাতে এটা ভবিষ্যতে এক চিরস্থায়ী সাক্ষ্য হিসেবে থাকে।
৯ কারণ তারা এক বিদ্রোহী জাতি, প্রতারণাকারী ছেলে,
এমন ছেলে, যারা যিহোবার আইন* শুনতে চায় না।
১০ তারা দর্শকদের বলে, ‘দর্শন দেখো না,’
তারা ভাববাদীদের বলে, ‘আমাদের বিষয়ে সত্য ভবিষ্যদ্বাণী কোরো না।
আমাদের তোষামোদকারী কথা বলো, প্রতারণা করে এমন কাল্পনিক বিষয়গুলোর দর্শন দেখো।
১১ সঠিক পথ থেকে সরে যাও, সেই রাস্তা ছেড়ে দাও।
ইজরায়েলের পবিত্র ঈশ্বরের বিষয়ে আমাদের আর কিছু বোলো না।’”
১২ তাই, ইজরায়েলের পবিত্র ঈশ্বর এই কথা বলেন:
“যেহেতু তোমরা এই বাক্য প্রত্যাখ্যান করেছ
আর প্রতারণা ও ছলনার উপর আস্থা রেখেছ
এবং সেগুলোর উপর নির্ভর করেছ,
১৩ তাই তোমাদের এই ভুল তোমাদের জন্য এমন প্রাচীরের মতো হবে, যেটাতে ফাটল ধরেছে,
এমন এক উঁচু প্রাচীরের মতো, যেটা ফুলে উঠেছে এবং যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে।
সেটা হঠাৎ করে, এক মুহূর্তে ভেঙে পড়বে।
১৪ সেটাকে কুমোরের বড়ো পাত্রের মতোই ভেঙে ফেলা হবে।
সেটাকে এমনভাবে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে যে, সেটার একটাও টুকরো অবশিষ্ট থাকবে না,
যেটা দিয়ে আগুন থেকে জ্বলন্ত কয়লা বের করা যেতে পারে
কিংবা গর্ত* থেকে জল তোলা যেতে পারে।”
১৫ কারণ নিখিলবিশ্বের প্রভু, ইজরায়েলের পবিত্র ঈশ্বর যিহোবা এই কথা বলেন:
“আমার কাছে ফিরে এলে এবং আমার জন্য অপেক্ষা করলে তোমরা রক্ষা পাবে,
শান্ত থাকলে এবং আস্থা রাখলে তোমরা শক্তি পাবে।”
কিন্তু, তোমরা এতে রাজি হলে না।
১৬ তোমরা বললে: “না, আমরা ঘোড়ায় চড়ে পালাব!”
তাই, তোমরা পালাবে।
তোমরা বললে: “আমরা এমন ঘোড়ায় চড়ে যাব, যেগুলো জোরে দৌড়োতে পারে!”
তাই, যারা তোমাদের পিছু ধাওয়া করবে, তারাও দ্রুতগতিতে যাবে।
১৭ এক জনের হুমকিতে এক হাজার জন কেঁপে উঠবে,
পাঁচ জনের হুমকিতে তোমরা পালিয়ে যাবে,
যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে যারা অবশিষ্ট থাকবে, তারা পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত একটা মাস্তুলের মতো হয়,
পাহাড়ের উপরে থাকা একটা পতাকার মতো হয়।
১৮ কিন্তু, যিহোবা তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ দেখানোর জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা* করছেন
আর তিনি তোমাদের প্রতি করুণা দেখানোর জন্য উঠে দাঁড়াবেন।
কারণ যিহোবা ন্যায়বিচারের ঈশ্বর।
সুখী সেই ব্যক্তিরা, যারা তাঁর জন্য অপেক্ষা* করছে।
১৯ লোকেরা যখন সিয়োনে, জেরুসালেমে বাস করবে, তখন তুমি একেবারেই কাঁদবে না। তিনি সাহায্য চেয়ে করা তোমার আর্তনাদ শুনে অবশ্যই তোমার প্রতি অনুগ্রহ দেখাবেন, তিনি তোমার আর্তনাদ শোনামাত্রই তোমাকে উত্তর দেবেন। ২০ যদিও যিহোবা তোমাদের বিপদের রুটি এবং অত্যাচারের জল খাওয়াবেন, তবুও তোমার মহান নির্দেশক আর নিজেকে তোমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবেন না আর তুমি তোমার মহান নির্দেশককে নিজের চোখে দেখতে পাবে। ২১ আর তোমরা যদি সঠিক পথ ছেড়ে ডান দিকে কিংবা বাঁ-দিকে ঘোর, তা হলে তোমার নিজের কান পিছন থেকে এই কথা শুনতে পাবে, “এটাই পথ। এই পথেই চলো।”
২২ আর তোমরা তোমাদের রুপো দিয়ে মোড়ানো খোদাই-করা মূর্তিগুলো এবং সোনা দিয়ে মোড়ানো ধাতব* মূর্তিগুলো অশুচি করবে। তোমরা সেগুলো ঋতুস্রাবের কাপড়ের মতো ছুড়ে ফেলবে আর বলবে, “দূর হও!”* ২৩ আর তুমি মাটিতে যে-বীজ বোন, ঈশ্বর সেটার জন্য বৃষ্টি দেবেন আর জমি প্রচুর পরিমাণে ভালো ফসল উৎপন্ন করবে। সেই দিন তোমার পশুপাল বড়ো বড়ো চারণভূমিতে* চরে বেড়াবে। ২৪ আর যে-গরু, ষাঁড় ও গাধা খেতের কাজ করে, তারা বেলচা এবং কাঁটা বেলচা দিয়ে ঝাড়া ভালো খাবারের মিশ্রণ খাবে। ২৫ যে-দিন বড়ো বড়ো দুর্গ পড়ে যাবে এবং প্রচুর লোককে হত্যা করা হবে, সেই দিন প্রত্যেকটা উঁচু পর্বত এবং প্রত্যেকটা উঁচু পাহাড়ের উপর দিয়ে জলের ধারা এবং নদী বয়ে যাবে। ২৬ যে-দিন যিহোবা তাঁর লোকদের ক্ষত* বেঁধে দেবেন এবং তিনি তাদের যে-আঘাত করেছিলেন, সেটার ফলে হওয়া গভীর ক্ষত সারিয়ে তুলবেন, সেই দিন পূর্ণিমার আলো সূর্যের আলোর মতো হয়ে উঠবে এবং সূর্যের আলো সাত দিনের আলোর মতো সাত গুণ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
২৭ দেখো! যিহোবা* দূর থেকে আসছেন,
তিনি তাঁর ক্রোধের আগুন এবং ঘন মেঘের সঙ্গে আসছেন।
তাঁর ঠোঁট প্রচণ্ড রাগে পূর্ণ
আর তাঁর জিভ গ্রাসকারী আগুনের মতো।
২৮ তাঁর শক্তি* প্রচণ্ড বেগে বয়ে আসা বন্যার জলের মতো, যেটা গলা পর্যন্ত উঠে যায়।
তিনি জাতিগুলোকে বিনাশের চালুনিতে চালবেন
আর বিভিন্ন দেশের লোকের চোয়ালে লাগাম পরাবেন, যেটা তাদের ভুল পথে নিয়ে যাবে।
২৯ কিন্তু, তোমরা এমন গান গাইবে,
যেমনটা তোমরা উৎসবের প্রস্তুতির সময়* রাতে গেয়ে থাকো
আর তোমাদের হৃদয় সেই ব্যক্তির মতো আনন্দিত হবে,
যে হাতে বাঁশি নিয়ে*
ইজরায়েলের শৈল যিহোবার পর্বতে উঠে যায়।
৩০ যিহোবা নিজের ক্রোধের আগুন,
গ্রাসকারী আগুনের শিখা, মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, প্রচণ্ড ঝড় এবং শিলাবৃষ্টির দ্বারা
নিজের জোরালো গলার আওয়াজ শোনাবেন
এবং নিজের হাতের শক্তি দেখাবেন।
৩১ যিহোবার গলার আওয়াজের কারণে অশূরে আতঙ্ক ছেয়ে যাবে
আর তিনি লাঠি দিয়ে অশূরকে আঘাত করবেন।
৩২ যিহোবা যখন যুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে নিজের হাত বাড়াবেন
এবং তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য নিজের লাঠি ঘোরাবেন,
তখন প্রতিটা আঘাতের সঙ্গে
খঞ্জনি ও বীণার সুর শোনা যাবে।
৩৩ কারণ অশূরের তোফৎ* ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে,
সেটাকে রাজার জন্যও প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি কাঠের স্তূপ বাড়িয়েছেন
আর প্রচুর পরিমাণে কাঠ ও আগুন প্রস্তুত করে রেখেছেন।
যিহোবার নিঃশ্বাস গন্ধকের নদীর মতো
আর সেই নিঃশ্বাস সেটাতে আগুন লাগিয়ে দেবে।