বিচারকর্তৃগণের বিবরণ
৩ যিহোবা কয়েকটা জাতিকে থাকতে দিলেন, যাতে ওই জাতিগুলো সেই ইজরায়েলীয়দের পরীক্ষা করতে পারে, যাদের কনান দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ২ (এমনটা ঘটল যাতে ইজরায়েলের নতুন প্রজন্ম, যারা কখনো যুদ্ধ দেখেনি, তারাও যুদ্ধ সম্বন্ধে জানতে পারে।) ৩ এই জাতিগুলোর মধ্যে এই লোকেরা ছিল: পলেষ্টীয়দের পাঁচ জন শাসনকর্তা, সমস্ত কনানীয়, সীদোনীয় এবং সেই সমস্ত হিব্বীয়, যারা বাল্-হর্মোণ পর্বত থেকে শুরু করে লিবো-হমাৎ* পর্যন্ত লেবানন পর্বতে বাস করত। ৪ এই লোকদের মাধ্যমে ইজরায়েলীয়দের পরীক্ষা করা হল যে, তারা যিহোবার সেই আজ্ঞাগুলো পালন করবে কি না, যেগুলো মোশি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলেন। ৫ তাই, ইজরায়েলীয়েরা কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের মাঝে বাস করল। ৬ ইজরায়েলীয়েরা তাদের মেয়েদের বিয়ে করল এবং তাদের ছেলেদের সঙ্গে নিজেদের মেয়েদের বিয়ে দিল আর তারা তাদের দেবতাদের সেবা করতে লাগল।
৭ এভাবে ইজরায়েলীয়েরা যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা-ই করল। তারা তাদের ঈশ্বর যিহোবাকে ভুলে গেল আর বাল দেবতাদের এবং উপাসনার খুঁটিগুলোর* সেবা করতে লাগল। ৮ এতে যিহোবার ক্রোধের আগুন তাদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠল। তিনি তাদের মেসোপটেমিয়ার* রাজা কূশন-রিশিয়াথয়িমের হাতে সমর্পণ করলেন। ইজরায়েলীয়েরা আট বছর ধরে কূশন-রিশিয়াথয়িমের দাসত্ব করল। ৯ তারপর, তারা সাহায্য চেয়ে যিহোবাকে ডাকতে লাগল। যিহোবা তাদের উদ্ধার করার জন্য অৎনীয়েলকে বেছে নিলেন, যিনি কালেবের ভাই কনসের ছেলে ছিলেন। ১০ যিহোবার পবিত্র শক্তি অৎনীয়েলের উপর এল আর তিনি ইজরায়েলের বিচারক হলেন। তিনি যখন যুদ্ধ করতে গেলেন, তখন যিহোবা মেসোপটেমিয়ার* রাজা কূশন-রিশিয়াথয়িমকে তার হাতে সমর্পণ করলেন আর অৎনীয়েল কূশন-রিশিয়াথয়িমকে পরাজিত করলেন। ১১ এরপর, দেশে ৪০ বছর পর্যন্ত শান্তি রইল। তারপর, কনসের ছেলে অৎনীয়েল মারা গেলেন।
১২ ইজরায়েলীয়েরা আবারও যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা-ই করতে শুরু করল। যিহোবা মোয়াবের রাজা ইগ্লোনকে ইজরায়েলের উপর জয় লাভ করতে দিলেন কারণ ইজরায়েলীয়েরা যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা-ই করছিল। ১৩ ইগ্লোন অম্মোনীয় ও অমালেকীয়দের সঙ্গে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এলেন। তারা ইজরায়েলের উপর আক্রমণ করল আর খেজুর গাছের নগর দখল করে নিল। ১৪ ইজরায়েলীয়েরা ১৮ বছর ধরে মোয়াবের রাজা ইগ্লোনের দাসত্ব করল। ১৫ পরে, ইজরায়েলীয়েরা সাহায্যের জন্য যিহোবাকে ডাকতে লাগল। যিহোবা তাদের উদ্ধার করার জন্য এহূদকে নিযুক্ত করলেন, যিনি গেরার ছেলে ছিলেন। তিনি বিন্যামীন বংশের ছিলেন এবং তিনি বাঁ-হাতি ছিলেন। যখন মোয়াবের রাজা ইগ্লোনকে কর দেওয়ার সময় এল, তখন ইজরায়েলীয়েরা এহূদের হাতে রাজার জন্য কর পাঠাল। ১৬ এহূদ নিজের জন্য দু-দিকেই ধার রয়েছে এমন একটা তলোয়ার তৈরি করলেন, যেটা এক হাত* লম্বা ছিল। তিনি সেটা তার পোশাকের ভিতরে ডান ঊরুতে বেঁধে নিলেন। ১৭ পরে, তিনি মোয়াবের রাজা ইগ্লোনের কাছে গিয়ে তাকে কর দিলেন। ইগ্লোন খুবই মোটা ছিলেন।
১৮ কর দেওয়ার পর এহূদ সেই লোকদের সঙ্গে চলে গেলেন,* যারা কর বয়ে এনেছিল। ১৯ কিন্তু, এহূদ গিল্গলে খোদাই করা মূর্তিগুলোর* কাছে পৌঁছানোর পর আবারও রাজার কাছে ফিরে এলেন। তিনি বললেন: “মহারাজ আমি আপনার জন্য একটা গোপন সংবাদ নিয়ে এসেছি।” তখন রাজা তার দাসদের বেরিয়ে যাওয়ার আদেশ দিলেন আর তারা সবাই চলে গেল। ২০ রাজা ছাদের উপরে তার ঘরে* একা বসে ছিলেন। এহূদ তাকে বললেন: “ঈশ্বর আপনার জন্য একটা সংবাদ পাঠিয়েছেন।” এই কথা শুনে রাজা তার সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। ২১ তখন এহূদ বাঁ-হাত দিয়ে ডান ঊরুতে বাঁধা তলোয়ারটা বের করলেন এবং রাজার পেটে সেটা ঢুকিয়ে দিলেন। ২২ এহূদ তলোয়ারটা বের করলেন না। তলোয়ারের সঙ্গে সঙ্গে সেটার বাঁটও পেটের ভিতরে ঢুকে গেল। পুরো তলোয়ারটাই রাজার চর্বিতে ঢাকা পড়ে গেল আর তার মল বেরিয়ে গেল। ২৩ তারপর, এহূদ ছাদের সেই ঘরে তালা লাগিয়ে বারান্দা* দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। ২৪ তিনি চলে যাওয়ার পর রাজার দাসেরা সেখানে এসে দেখল, সেই ঘরের দরজা বন্ধ রয়েছে। তারা বলাবলি করতে লাগল: “রাজা নিশ্চয়ই হালকা হওয়ার* জন্য ভিতরের ঘরে গিয়েছেন।” ২৫ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও রাজা যখন বেরিয়ে এলেন না, তখন তারা চিন্তিত হয়ে পড়ল। তারা চাবি দিয়ে তালা খুলে দেখল, তাদের প্রভু মাটিতে মরে পড়ে রয়েছেন!
২৬ এরই মধ্যে এহূদ সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন আর খোদাই করা মূর্তিগুলোর* পাশ দিয়ে গিয়ে নিরাপদে সিয়ীরাতে পৌঁছে গেলেন। ২৭ তিনি সেখানে ইফ্রয়িমের পার্বত্য এলাকায় পৌঁছে শিঙা বাজালেন আর ইজরায়েলীয়েরা তার সঙ্গে পার্বত্য এলাকা থেকে নেমে এল। এহূদ তাদের আগে আগে গেলেন। ২৮ এহূদ তাদের বললেন: “আমার পিছন পিছন এসো কারণ যিহোবা তোমাদের শত্রুদের অর্থাৎ মোয়াবীয়দের তোমাদের হাতে সমর্পণ করেছেন।” তখন তারা তার পিছন পিছন গেল আর জর্ডন নদীর যে-জায়গাগুলো দিয়ে হেঁটে পার হওয়া যায়, সেই জায়গাগুলোতে তাদের মোতায়েন করা হল, যাতে মোয়াবীয় সৈন্যেরা জর্ডন পার হতে না পারে। ২৯ সেই দিন ইজরায়েলীয়েরা প্রায় ১০,০০০ জন মোয়াবীয় বীরযোদ্ধাকে মেরে ফেলল। তাদের মধ্যে কেউই পালাতে পারল না। ৩০ এভাবে ইজরায়েলীয়েরা মোয়াবকে পরাজিত করল আর দেশে ৮০ বছর পর্যন্ত শান্তি রইল।
৩১ এহূদের পর অনাতের ছেলে শম্গর ইজরায়েলীয়দের রক্ষা করলেন। তিনি একটা পাঁচনি* দিয়ে ৬০০ জন পলেষ্টীয় পুরুষকে মেরে ফেললেন।