যোহন লিখিত সুসমাচার
১৬ “আমি তোমাদের এইসমস্ত কথা এইজন্য বললাম, যেন তোমরা বিশ্বাস না হারাও।* ২ লোকেরা তোমাদের সমাজগৃহ থেকে বের করে দেবে। আর এমন সময় আসছে, যখন যে-কেউ তোমাদের হত্যা করবে, সে মনে করবে, সে ঈশ্বরকে পবিত্র সেবা প্রদান করেছে। ৩ তারা এইসমস্ত কাজ করবে, কারণ তারা পিতাকেও জানে না, আমাকেও জানে না। ৪ কিন্তু, আমি তোমাদের এইসমস্ত কথা এইজন্য বললাম, যাতে এইসমস্ত ঘটনা যখন ঘটবে, তখন তোমরা মনে করতে পার যে, আমি তোমাদের এই কথাগুলো বলেছিলাম।
“আমি আগে তোমাদের এইসমস্ত কথা বলিনি, কারণ আমি তোমাদের সঙ্গেই ছিলাম। ৫ কিন্তু, এখন আমি তাঁর কাছে যাচ্ছি, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন; অথচ তোমাদের মধ্যে কেউই আমাকে জিজ্ঞেস করছে না, ‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ ৬ তবে, আমি যেহেতু তোমাদের এইসমস্ত কথা বললাম, তাই তোমাদের হৃদয় দুঃখিত হয়ে উঠেছে। ৭ তা সত্ত্বেও, আমি তোমাদের সত্য বলছি, তোমাদের ভালোর জন্যই আমি চলে যাচ্ছি। কারণ আমি যদি চলে না যাই, তা হলে সেই সাহায্যকারী* তোমাদের কাছে আসবে না; কিন্তু আমি যদি যাই, তা হলে আমি তাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব। ৮ আর সে যখন আসবে, তখন সে পাপ সম্বন্ধে, যা সঠিক, সেই সম্বন্ধে এবং বিচার সম্বন্ধে এই জগৎকে অকাট্য প্রমাণ দেবে: ৯ প্রথমে পাপ সম্বন্ধে, কারণ তারা আমার উপর বিশ্বাস করে না; ১০ এরপর যা সঠিক, সেই সম্বন্ধে, কারণ আমি পিতার কাছে যাচ্ছি এবং তোমরা আমাকে আর দেখতে পাবে না; ১১ এরপর বিচার সম্বন্ধে, কারণ এই জগতের শাসককে বিচার করা হয়েছে।
১২ “তোমাদের বলার মতো আরও অনেক কথা আমার আছে, তবে এখন তোমরা সেগুলো বুঝতে পারবে না। ১৩ কিন্তু, সে অর্থাৎ সত্যের পবিত্র শক্তি যখন আসবে, তখন সে তোমাদের পথ দেখিয়ে সত্যের দিকে নিয়ে যাবে, কারণ সে নিজে থেকে কথা বলবে, এমন নয়, বরং ঈশ্বরের কাছ থেকে যা শোনে, তা-ই বলবে এবং তোমাদের কাছে আসন্ন বিষয়গুলো ঘোষণা করবে। ১৪ সে আমাকে মহিমান্বিত করবে কারণ সে আমার কাছ থেকে যা শুনেছে, তোমাদের কাছে তা ঘোষণা করবে। ১৫ পিতার যা যা আছে, সেগুলো সবই আমার। এইজন্য আমি বললাম, সে আমার কাছ থেকে যা শুনেছে, তোমাদের কাছে তা ঘোষণা করবে। ১৬ অল্পসময় পরে তোমরা আমাকে আর দেখতে পাবে না, কিন্তু আবার অল্পসময় পরেই তোমরা আমাকে দেখতে পাবে।”
১৭ এতে তাঁর শিষ্যদের মধ্যে কয়েক জন একে অন্যকে বলতে লাগলেন: “আমাদের এই কথা বলার মাধ্যমে উনি কী বোঝাতে চাইছেন, ‘অল্পসময় পরে তোমরা আমাকে দেখতে পাবে না, কিন্তু আবার অল্পসময় পরেই তোমরা আমাকে দেখতে পাবে’ এবং ‘কারণ আমি পিতার কাছে যাচ্ছি’?” ১৮ তাই, তারা বলতে লাগলেন: “এই কথার মাধ্যমে উনি কী বোঝাতে চাইছেন, ‘অল্পসময়’? উনি কী বলছেন, আমরা বুঝতে পারছি না।” ১৯ যিশু বুঝতে পারলেন, তারা তাঁকে প্রশ্ন করতে চাইছেন, তাই তিনি তাদের বললেন: “আমি তোমাদের এই কথা বলেছি বলে কি তোমরা একে অন্যকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছ: ‘অল্পসময় পরে তোমরা আমাকে দেখতে পাবে না, কিন্তু আবার অল্পসময় পরেই তোমরা আমাকে দেখতে পাবে’? ২০ আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি, তোমরা কাঁদবে এবং বিলাপ করবে, কিন্তু এই জগৎ আনন্দ করবে; তোমরা দুঃখার্ত হবে, কিন্তু তোমাদের দুঃখ আনন্দে পরিণত হবে। ২১ যখন একজন মহিলার প্রসববেদনা ওঠে, তখন তার কষ্ট* হয় কারণ তার প্রসব করার সময় উপস্থিত; কিন্তু সন্তান প্রসব করার পর, তার কষ্ট আনন্দে পরিণত হয়, কারণ সে তার সন্তানকে দেখতে পায়। ২২ একইভাবে তোমরাও এখন দুঃখ পাচ্ছ; কিন্তু তোমাদের সঙ্গে আমার আবার দেখা হবে আর তখন তোমাদের হৃদয় আনন্দে পূর্ণ হবে আর কেউ তোমাদের সেই আনন্দ কেড়ে নিতে পারবে না। ২৩ সেই দিন তোমরা আমাকে কোনো প্রশ্নই করবে না। আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি, তোমরা যদি পিতার কাছে কিছু চাও, তা হলে তিনি আমার নামে তোমাদের তা দেবেন। ২৪ এই পর্যন্ত তোমরা আমার নামে কিছুই চাওনি। চাও, তা হলে পাবে, যেন তোমাদের আনন্দ সম্পূর্ণ হয়।
২৫ “এইসমস্ত বিষয় আমি তোমাদের দৃষ্টান্ত দিয়ে বললাম। এমন সময় আসছে, যখন আমি তোমাদের আর দৃষ্টান্ত দিয়ে বলব না, বরং আমি পিতা সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে তোমাদের বলব। ২৬ সেই দিন তোমরা আমার নামে পিতার কাছে অনুরোধ করবে; এই কথা বলে আমি বোঝাতে চাইছি না যে, আমিই তোমাদের হয়ে অনুরোধ করব। ২৭ পিতা নিজে তোমাদের ভালোবাসেন,* কারণ তোমরা আমাকে ভালোবাস* এবং তোমরা বিশ্বাস করেছ যে, আমি ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে এসেছি। ২৮ আমি পিতার প্রতিনিধি হিসেবে এই জগতে এসেছি। এখন আমি এই জগৎ ছেড়ে চলে যাচ্ছি এবং পিতার কাছে যাচ্ছি।”
২৯ তাঁর শিষ্যেরা বললেন: “দেখুন! এখন আপনি স্পষ্টভাবে বলছেন, দৃষ্টান্ত ব্যবহার করছেন না। ৩০ এখন আমরা বুঝতে পারলাম, আপনি সমস্ত কিছু জানেন এবং কারোরই আপনাকে প্রশ্ন করার দরকার নেই। এভাবে আমরা বিশ্বাস করলাম, আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন।” ৩১ যিশু তাদের বললেন: “তোমরা এখন বিশ্বাস করছ? ৩২ দেখো! এমন সময় আসছে, আসলে এখনই উপস্থিত, যখন তোমরা প্রত্যেকে আমাকে একা রেখে নিজ নিজ বাড়িতে পালিয়ে যাবে। তবে, আমি একা নই, কারণ আমার পিতা আমার সঙ্গে আছেন। ৩৩ আমি তোমাদের এইসমস্ত বিষয় বললাম, যেন তোমরা আমার মাধ্যমে শান্তি লাভ কর। এই জগতে তোমরা ক্লেশ ভোগ করবে, কিন্তু সাহস করো! আমিই এই জগৎকে জয় করেছি।”