আজকে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা কীভাবে কাজ করে?
জন্ম থেকেই লোকটা খোঁড়া ছিল। সে রোজ মন্দিরের সুন্দর নামের দরজার কাছে বসে যারা মন্দিরে যাওয়া আসা করত, তাদের কাছ থেকে ভিক্ষে চাইত। কিন্তু একবার এই অক্ষম ভিখারি এমন এক দান পেয়েছিল, যার মূল্য কিছু মুদ্রার চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তাকে সুস্থ করা হয়েছিল!—প্রেরিত ৩:২-৮.
প্রেরিত পিতর ও যোহন তাকে সুস্থ করেছিলেন। তারা যখন ‘তাহাকে তুলিয়াছিলেন’ তখন ‘তাহার চরণ ও গুল্ফ সবল হইয়াছিল।’ কিন্তু এই কাজের জন্য প্রেরিত পিতর ও যোহন নিজেরা প্রশংসা নিতে চাননি। কেন? পিতর এর উত্তর দিয়েছিলেন: “হে ইস্রায়েলীয় লোকেরা, এই ব্যক্তির বিষয়ে কেন আশ্চর্য্য জ্ঞান করিতেছ? অথবা আমরাই যে নিজ শক্তি বা ভক্তিগুণে ইহাকে চলিবার শক্তি দিয়াছি, ইহা মনে করিয়া কেনই বা আমাদের প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া রহিয়াছ?” সত্যিই, পিতর ও যোহন দুজনেই বুঝতে পেরেছিলেন যে তারা তাদের নিজেদের শক্তিতে নয় কিন্তু ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার শক্তিতেই এই কাজ করতে পেরেছিলেন।—প্রেরিত ৩:৭-১৬; ৪:২৯-৩১.
সেই সময় এইরকম “পরাক্রম-কার্য্য” দেখানো হতো যাতে সবাই বুঝতে পারে যে নতুন খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর পিছনে ঈশ্বরের সাহায্য আছে। (ইব্রীয় ২:৪) কিন্তু, প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে ঈশ্বরের সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে গেলে “তাহার লোপ হইবে।”a (১ করিন্থীয় ১৩:৮) তাই, আজকে আমরা সত্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা শক্তিতে কাউকে অলৌকিকভাবে সুস্থ হতে দেখি না, কোন ভবিষ্যদ্বাণী শুনতে পাই না কিংবা কোন ভূতে পাওয়া লোককে সুস্থ হতে দেখি না।
কিন্তু এর মানে কি এই যে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা এখন আর কাজ করে না? একেবারেই না! এখন আসুন আমরা দেখি যে ঈশ্বরের আত্মা প্রথম শতাব্দীতে কীভাবে কাজ করেছিল ও আমাদের দিনে তা কীভাবে কাজ করে।
“সত্যের আত্মা”
ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার একটা কাজ হল সত্য জানানো, সত্যের জ্ঞানকে বাড়ানো ও সত্যকে প্রকাশ করা। যীশু তাঁর মৃত্যুর কয়েক দিন আগে শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমাদিগকে বলিবার আমার আরও অনেক কথা আছে, কিন্তু তোমরা এখন সে সকল সহ্য করিতে পার না। পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন।”—যোহন ১৬:১২, ১৩.
সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন ১২০ জন নারী-পুরুষ যখন যিরূশালেমের ওপরের কুঠরিতে জড়ো হয়েছিলেন তখন তাদের ওপর “সত্যের আত্মা” এসেছিল আর তারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ২:১-৪) বার্ষিক পর্বের সময় হওয়ায় প্রেরিত পিতরও সেখানে ছিলেন। পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে তিনি “দাঁড়াইয়া” যীশুর সম্বন্ধে কিছু সত্য বিষয় জানিয়েছিলেন বা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। যেমন, তিনি লোকেদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে “নাসরতীয় যীশু” কীভাবে “ঈশ্বরের দক্ষিণ হস্ত দ্বারা উচ্চীকৃত” হয়েছেন। (প্রেরিত ২:১৪, ২২, ৩৩) এছাড়াও, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে পিতর সাহসের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত যিহুদিদের বলেছিলেন: “ইস্রায়েলের সমস্ত কুল নিশ্চয় জ্ঞাত হউক যে, যাঁহাকে তোমরা ক্রুশে দিয়াছিলে, সেই যীশুকেই ঈশ্বর প্রভু ও খ্রীষ্ট উভয়ই করিয়াছেন।” (প্রেরিত ২:৩৬) আত্মার দ্বারা চালিত হয়ে পিতর যে বার্তা বলেছিলেন, তা শুনে প্রায় তিন হাজার ব্যক্তি “তাঁহার কথা গ্রাহ্য করিল” এবং তারা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। এভাবে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা তাদেরকে সত্যের পথ দেখিয়েছিল।—প্রেরিত ২:৩৭-৪১.
এছাড়াও, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা তাদের শিক্ষকের কাজ করেছিল এবং তাদেরকে বিভিন্ন বিষয় মনে করিয়ে দিয়েছিল। যীশু বলেছিলেন: “সেই সহায়, পবিত্র আত্মা, যাঁহাকে পিতা আমার নামে পাঠাইয়া দিবেন, তিনি সকল বিষয়ে তোমাদিগকে শিক্ষা দিবেন, এবং আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছি, সে সকল স্মরণ করাইয়া দিবেন।”—যোহন ১৪:২৬.
পবিত্র আত্মা কীভাবে তাদের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছিল? ঈশ্বরের আত্মা যীশুর শিষ্যদের মন খুলে দিয়েছিল, তাদের সেই সমস্ত কথা বুঝতে সাহায্য করেছিল, যা তারা যীশুর কাছে শুনেছিলেন কিন্তু সেই সময় তারা সেগুলো পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রেরিতেরা জানতেন যে যীশুর মৃত্যুর আগের রাতে বিচারের সময় তিনি যিহূদিয়ার রোমীয় রাজ্যপাল পন্তীয় পীলাতকে বলেছিলেন: “আমার রাজ্য এ জগতের নয়।” কিন্তু যীশুর পুনরুত্থানের ৪০ দিন পরে তিনি স্বর্গে যাওয়ার সময়েও প্রেরিতেরা ভুলভাবে মনে করেছিলেন যে রাজ্য এখানে, এই পৃথিবীতে স্থাপিত হবে। (যোহন ১৮:৩৬; প্রেরিত ১:৬) অতএব, এর থেকে বোঝা যায় যে সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রেরিতদের ওপর ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা না আসা পর্যন্ত তারা যীশুর কথার মানে পুরোপুরি বুঝতে পারেননি।
এছাড়াও, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা মনে করিয়ে দেওয়ার কাজও করেছিল কারণ পবিত্র আত্মা যখন প্রেরিতদের ওপর এসেছিল, তখন যীশুর শেখানো বিভিন্ন বিষয় তাদের মনে পড়ে গিয়েছিল। যেমন খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থান সম্বন্ধে যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করা ছিল, পবিত্র আত্মার সাহায্যে সেগুলো তারা আরও ভালভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। (মথি ১৬:২১; যোহন ১২:১৬) যখন প্রেরিতদের যীশুর দেওয়া শিক্ষা মনে পড়ে গিয়েছিল তখন তারা রাজা, দেশাধ্যক্ষ ও ধর্মীয় নেতাদের সামনে সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।—মার্ক ১৩:৯-১১; প্রেরিত ৪:৫-২০.
এছাড়াও, ঈশ্বরের আত্মা প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের জানিয়েছিল যে কোথায় সেই লোকেদের পাওয়া যাবে, যারা সুসমাচার শুনবে। (প্রেরিত ১৬:৬-১০) ঈশ্বরের আত্মা প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদেরকে সারা জগতের মানুষের উপকারের জন্য ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেলের কিছু অংশ লিখতে চালিত করেছিল। (২ তীমথিয় ৩:১৬) অতএব, এটা পরিষ্কার যে প্রথম শতাব্দীতে ঈশ্বরের আত্মা শুধু অলৌকিক কাজই নয় বরং আরও অন্য কাজও করেছিল।
আমাদের দিনে পবিত্র আত্মার কাজ
একইভাবে আমাদের দিনে সত্য খ্রীষ্টানদের ভালর জন্য পবিত্র আত্মা কাজ করে। উনিশ শতকের শেষ দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার আ্যলিঘেনিতে কয়েকজন বাইবেল ছাত্রের বেলায় এটা সত্যি হয়েছিল। “সত্য” জানার জন্য তারা খুবই ইচ্ছুক ছিলেন।—যোহন ৮:৩২; ১৬:১৩.
এই দলেরই একজন, চার্লস টেজ রাসেল বাইবেলের সত্য জানার জন্য তার যে পিপাসা ছিল সেই বিষয়ে লিখেছিলেন: “আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি . . . যাতে আমার মন থেকে সেই সমস্ত কুসংস্কার ও ভুল ধারণাগুলো চলে যায়, যা আমাকে সত্য বুঝতে বাধা দিতে পারে। আমি প্রার্থনা করেছিলাম ঈশ্বর যেন তাঁর পবিত্র আত্মা দিয়ে আমাকে ঠিকভাবে বাইবেল বুঝতে সাহায্য করেন।” ঈশ্বর তার এই বিনয়ী প্রার্থনা শুনেছিলেন।
রাসেল ও তার সহযোগীরা যখন মন দিয়ে শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন, তখন কিছু কিছু বিষয় তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। রাসেল বলেছিলেন, ‘আমরা দেখেছি যে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন খ্রীষ্টান দল বাইবেলের শিক্ষাকে নিজেদের মতো করে শিখিয়েছে, তারা বাইবেলের শিক্ষায় মানুষের ধারণা ও মিথ্যা শিক্ষা মিশিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, এই জন্যই “সত্যের মধ্যে মিথ্যা জায়গা করে নিয়েছে।” শতাব্দী ধরে গির্জাগুলোতে এত বেশি পৌত্তলিক শিক্ষা ঢুকে গিয়েছে যে বাইবেলের আসল সত্য যেন সেই ভিড়ে চাপা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু, রাসেল স্থির করেছিলেন যে তিনি সত্য জানবেন ও তা প্রচার করবেন।
রাসেল ও তার সহযোগীরা সাহসের সঙ্গে জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার আ্যন্ড হেরাল্ড অফ্ ক্রাইস্টস্ প্রেজেন্স পত্রিকা ছাপাতে শুরু করেন ও এর পাতায় পাতায় মিথ্যা ধর্মের বিভিন্ন শিক্ষাগুলোকে খণ্ডন করেন, যেগুলো ঈশ্বরকে অসম্মান করে। তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে ধর্মগুলো যা শিখিয়েছে, তা ভুল। তারা জেনেছিলেন যে মানুষের আত্মা অমর নয়, মানুষ মরে গেলে মাটিতে মিশে যায় এবং যিহোবা হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর আর তাই তিনি ত্রিত্বের কোন অংশ নন।
আপনি নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারছেন যে এই মিথ্যা শিক্ষাগুলোকে প্রকাশ করে দেওয়ায় খ্রীষ্টীয়জগতের পাদ্রিরা কতটা রেগে গিয়েছিলেন। পাদ্রিরা দেখেছিলেন যে এভাবে চলতে থাকলে সমাজে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিকে ধরে রাখা মুশকিল হবে, তাই ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট পাদ্রিরা মিলে রাসেলকে মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু তাই বলে রাসেল ও তার সহযোগীরা হাল ছেড়ে দেননি। বরং তারা পুরোপুরি বিশ্বাস নিয়ে ঈশ্বরের আত্মার ওপর নির্ভর করেছিলেন। রাসেল বলেছিলেন, ‘আমাদের মুক্তিদাতা, মধ্যস্থ ও মস্তক প্রভু যীশু প্রতিজ্ঞা করেছেন যে তিনি আমাদের পিতার কাছে অনুরোধ করবেন যেন পিতা তাঁর পবিত্র আত্মা দিয়ে আমাদেরকে শেখান।’ আর সত্যি সত্যিই পবিত্র আত্মা তাদের শিখিয়েছিল! এই বাইবেল ছাত্ররা বাইবেল থেকে সত্যের বিশুদ্ধ জল পান করেছিলেন ও সেগুলো সারা পৃথিবীতে প্রচার করে চলেছিলেন।—প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭.
আজ যিহোবার সাক্ষিদের সংগঠন একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা তাদের যে পথ দেখিয়ে আসছে, সেই পথে কাজ করে চলেছে। এইজন্য যিহোবার আত্মার সাহায্যে ঈশ্বর সম্বন্ধে তাদের জ্ঞান দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে আর সত্য সম্বন্ধে তারা যে নতুন ধারণাগুলো পান, সেগুলোকে খুশি মনে মেনে নেন এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা বদলে নেন।—হিতোপদেশ ৪:১৮.
“তোমরা . . . আমার সাক্ষী হইবে”
ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে সম্পূর্ণ হবে এমন আরেকটা কাজ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা . . . পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” (প্রেরিত ১:৮) যীশু তাঁর শিষ্যদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তারা “শক্তি” ও “পবিত্র আত্মা” পেয়ে ঈশ্বরের দেওয়া কাজকে সম্পূর্ণ করবে। যীশুর এই প্রতিজ্ঞা আজকের দিনেও সত্যি হচ্ছে।
যিহোবার সাক্ষিরা যে প্রচার করেন, তা আজকে সবাই-ই খুব ভালভাবে জানেন। (বাক্স দেখুন।) যিহোবার সাক্ষিরা আজকে দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩০টার বেশি জায়গায় সত্য প্রচার করেন। প্রতিটা সুযোগে, যে কোন পরিস্থিতিতে সাহসের সঙ্গে তারা ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতেও তারা উৎসাহের সঙ্গে প্রচার করেন। প্রচার কাজে তাদের উৎসাহ জোরালো সাক্ষ্য দেয় যে আজকেও পবিত্র আত্মা কাজ করে চলেছে। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে যিহোবা ঈশ্বর তাদেরকে তাদের পরিশ্রমের ফল দিয়ে চলেছেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত বছর যিহোবার সাক্ষিরা একশ কোটিরও বেশি ঘন্টা ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করেছিলেন। তাদের এই পরিশ্রমের ফল কী হয়েছিল? প্রায় ৩,২৩,৪৩৯ জন তাদের জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করেছিলেন ও জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। এছাড়াও, প্রত্যেক সপ্তায় আগ্রহী ব্যক্তিদের সঙ্গে ৪৪,৩৩,৮৮৪টা বাইবেল অধ্যয়ন করা হয়েছিল। আর সবশুদ্ধ ২,৪৬,০৭,৭৪১টা বই, ৬৩,১১,৬২,৩০৯টা পত্রিকা এবং ৬,৩৪,৯৫,৭২৮টা পুস্তিকা লোকেদের দেওয়া হয়েছিল। ঈশ্বরের আত্মা যে কাজ করে চলেছে তার কী এক জোরালো প্রমাণ!
ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা ও আপনি
যখন একজন ব্যক্তি মন দিয়ে সুসমাচার শোনেন, ঈশ্বরের নিয়ম মেনে নিজেকে বদলান এবং খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস দেখান, তখন ঈশ্বরের চোখে তিনি শুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এই ব্যক্তিদের প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বর . . . নিজ পবিত্র আত্মা তোমাদিগকে প্রদান করেন।”—১ থিষলনীকীয় ৪:৭, ৮; ১ করিন্থীয় ৬:৯-১১.
ঈশ্বরের আত্মা যখন আমাদের ওপর কাজ করে তখন আমরা অনেক আশীর্বাদ ভোগ করি। কীধরনের আশীর্বাদ? ঈশ্বরের বাক্য বলে যে একটা আশীর্বাদ হল: “আত্মার ফল প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, [এবং] ইন্দ্রিয়দমন।” (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) এর মানে হল যে আমরা যখন ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা পাই তখন আমরা ভাল কাজ করতে ও ঈশ্বরের গুণগুলো দেখাতে পারি।
এছাড়া আপনি যদি বাইবেল পড়েন ও শেখা বিষয়গুলোকে কাজে লাগান, তাহলে ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে আপনি প্রজ্ঞা, জ্ঞান, বুদ্ধি, ন্যায়বিচার ও চিন্তা শক্তিকে বাড়াতে পারবেন। রাজা শলোমন যখন মানুষকে নয় কিন্তু ঈশ্বরকে খুশি করতে চেয়েছিলেন তখন ঈশ্বর তাকে “বিপুল জ্ঞান ও সূক্ষ্মবুদ্ধি এবং . . . চিত্তের বিস্তীর্ণতা দিলেন।” (১ রাজাবলি ৪:২৯) যেহেতু যিহোবা শলোমনকে পবিত্র আত্মা দিয়েছিলেন তাই এর থেকে বোঝা যায় যে আজকে যারা তাকে খুশি করতে চায়, তাদেরকেও তিনি পবিত্র আত্মা দেবেন।
এছাড়া ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা খ্রীষ্টানদের শয়তান ও মন্দ দূতেদের বিরুদ্ধে, এই দুষ্ট জগৎ এবং পাপপূর্ণ মাংসের খারাপ ইচ্ছাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সাহায্য করে। কীভাবে? প্রেরিত পৌল উত্তর দেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।” (ফিলিপীয় ৪:১৩) পবিত্র আত্মা হয়তো পরীক্ষা বা প্রলোভনগুলো থেকে আমাদের বাঁচায় না; কিন্তু এগুলো সহ্য করতে শক্তি দেয়। যদি আমরা ঈশ্বরের আত্মার ওপর নির্ভর করি, তাহলে আমরা “পরাক্রমের উৎকর্ষ” পাব আর তখন আমরা সমস্ত মুশকিল বা বাধাকে পার করতে পারব।—২ করিন্থীয় ৪:৭; ১ করিন্থীয় ১০:১৩.
আপনি যখন এই সমস্ত প্রমাণ নিয়ে চিন্তা করেন, তখন এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে পবিত্র আত্মা আজকে সত্যিই কাজ করে চলেছে। যিহোবার আত্মার সাহায্যেই তাঁর দাসেরা তাঁর মহৎ উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেন। পবিত্র আত্মাই নতুন নতুন তথ্য দিয়ে আমাদের আধ্যাত্মিক দীপ্তি দিয়ে চলে, আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে আর তা আমাদেরকে কঠিন অবস্থাতেও আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার শক্তি দেয়। আমরা ঈশ্বরের কাছে কতই না কৃতজ্ঞ যে ঈশ্বর তাঁর দাসদের পবিত্র আত্মা দেবেন বলে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা আজকের দিনেও তিনি পূর্ণ করে চলেছেন!
[পাদটীকাগুলো]
a ১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর ৫০১-৫ পৃষ্ঠার “ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে অলৌকিক কাজ করার বর কেন লোপ পেয়েছে?” প্রবন্ধটা দেখুন।
[১০ পৃষ্ঠার বাক্স]
যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে অন্যেরা যা বলেন
“অন্য গির্জাগুলো লোকেদেরকে গির্জায় নিয়ে আসার জন্য উপদেষ্টাদের ভাড়া করে আর সমকামিতা, গর্ভপাত বা এইরকম অন্য বিষয়গুলোকে মেনে নেয় কিন্তু সাক্ষিরা তাদের নীতির ব্যাপারে কোনরকম আপোশ করেন না। তারা আজও সারা পৃথিবীতে সংগঠিতভাবে তাদের প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।”—অরেঞ্জ কাউন্টির দি অরেঞ্জ কাউন্টি রেজিস্টার, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।
“নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রচার করার ব্যাপার যখন আসে তখন হাতে গোনা খুব অল্প কয়েকটা দলই আছে . . . যারা যিহোবার সাক্ষিদের মতো . . . এত উৎসাহ নিয়ে প্রচার করে।”—কলম্বাসের দ্যা রিপাবলিক, ইন্ডিয়ানা, যুক্তরাষ্ট্র।
“একমাত্র তারাই ঘরে ঘরে গিয়ে ‘সুসমাচার প্রচার করেন’ এবং বাইবেলের নীতিগুলোকে মেনে চলেন।”—জিসি লিটারেকি, পোল্যান্ড।
“যিহোবার সাক্ষিরা যত দূর দূর গিয়ে প্রচার করেন এরকম প্রচার পৃথিবীতে আর কখনও হয়নি। তারা পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত সকলকে যিহোবার বার্তা জানান।”—নিউজ-অবজারভার, টামাকুয়া, পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।
[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা আমাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান বাড়ায়,
. . . ভাল খ্রীষ্টীয় গুণগুলো গড়ে তোলে
. . এবং সারা পৃথিবীতে প্রচার করতে আমাদের সাহায্য করে