বিচারকর্তৃগণের বিবরণ
৬ ইজরায়েলীয়েরা আবারও যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা-ই করতে শুরু করল। তাই, যিহোবা সাত বছরের জন্য তাদের মিদিয়নীয়দের হাতে সমর্পণ করলেন। ২ মিদিয়নীয়েরা ইজরায়েলীয়দের উপর প্রচণ্ড অত্যাচার করল। তাদের কারণে ইজরায়েলীয়েরা পর্বতে, গুহায় এবং এমন এমন স্থানে লুকোনোর জায়গা* বানাল, যেখানে শত্রুরা পৌঁছাতে পারবে না। ৩ ইজরায়েলীয়েরা যখন তাদের খেতে বীজ বুনত, তখন মিদিয়নীয়েরা ও অমালেকীয়েরা এবং পূর্ব দেশের লোকেরা তাদের উপর আক্রমণ করত। ৪ তারা শিবির স্থাপন করত এবং গাজা পর্যন্ত তাদের সমস্ত খেতের ফসল নষ্ট করে দিত। তারা ইজরায়েলীয়দের জন্য খাবারদাবার কিংবা মেষ, ষাঁড় বা গাধা, কিছুই রাখত না। ৫ মিদিয়নীয়েরা যখন তাদের পশুপালের সঙ্গে শিবির স্থাপন করত, তখন মনে হত যেন ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল মাঠে নেমে এসেছে। মিদিয়নীয়দের এবং তাদের উটের সংখ্যা যেন গুনে শেষ করা যেত না। তারা এসে ইজরায়েলীয়দের এলাকা একেবারে তছনছ করে দিত। ৬ তাদের কারণেই ইজরায়েল প্রচণ্ড দরিদ্রতায় ডুবে গেল আর ইজরায়েলীয়েরা সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে কাঁদতে লাগল।
৭ ইজরায়েলীয়েরা যখন মিদিয়নীয়দের কারণে যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে কাঁদল, ৮ তখন যিহোবা তাদের কাছে একজন ভাববাদীকে পাঠালেন। সেই ভাববাদী তাদের বললেন: “ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবা এই কথা বলেন, ‘আমি তোমাদের দাসত্বের দেশ মিশর থেকে বের করে আনলাম। ৯ আমি মিশরীয়দের হাত থেকে এবং যারা তোমাদের উপর অত্যাচার করত, তাদের সবার হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করলাম আর তোমাদের সামনে থেকে তোমাদের শত্রুদের তাড়িয়ে দিয়ে তাদের দেশ তোমাদের দিলাম। ১০ আমি তোমাদের বললাম: “আমি তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা। তোমরা যে-ইমোরীয়দের দেশে বাস কর, তোমরা তাদের দেবতাদের উপাসনা করবে না।” কিন্তু, তোমরা আমার কথায় কান দিলে না।’”
১১ এরপর, যিহোবার একজন স্বর্গদূত অফ্রায় এলেন এবং সেখানে সেই বড়ো গাছের নীচে গিয়ে বসলেন, যেটা অবীয়েষ্রীয় যোয়াশের ছিল। যোয়াশের ছেলে গিদিয়োন আঙুর পেষাই করার গর্তে গম মাড়াই করছিলেন, যাতে মিদিয়নীয়দের কাছ থেকে তা লুকিয়ে রাখতে পারেন। ১২ যিহোবার স্বর্গদূত তাকে দেখা দিলেন এবং বললেন: “হে বীরযোদ্ধা, যিহোবা তোমার সঙ্গে রয়েছেন।” ১৩ গিদিয়োন তাকে বললেন: “ক্ষমা করবেন প্রভু, কিন্তু যিহোবা যদি আমাদের সঙ্গে থাকেন, তা হলে আমাদের এই অবস্থা কেন? আমাদের পূর্বপুরুষেরা তো তাঁর আশ্চর্যজনক কাজগুলো স্মরণ করে বলত, ‘যিহোবা আমাদের মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন।’ তাহলে, কেন তিনি এখন আমাদের জন্য কিছু করছেন না? যিহোবা আমাদের ছেড়ে দিয়েছেন, তিনি আমাদের মিদিয়নীয়দের হাতে সমর্পণ করেছেন।” ১৪ যিহোবা তার দিকে তাকিয়ে বললেন: “তুমি ইজরায়েলকে মিদিয়নীয়দের হাত থেকে উদ্ধার করবে কারণ আমি তোমাকে পাঠাচ্ছি। তাই, সাহসী হও এবং যাও।” ১৫ গিদিয়োন তাকে বললেন: “ক্ষমা কোরো যিহোবা, কিন্তু আমি কীভাবে ইজরায়েলকে উদ্ধার করতে পারি? মনঃশি বংশের মধ্যে আমার পরিবার খুবই নগণ্য আর আমার বাবার পুরো পরিবারের মধ্যে আমি খুবই সাধারণ এক ব্যক্তি।” ১৬ কিন্তু, যিহোবা তাকে বললেন: “আমি তোমার সঙ্গে থাকব আর তুমি খুব সহজেই মিদিয়নীয়দের পরাজিত করবে।”*
১৭ তখন গিদিয়োন বললেন: “আপনি যদি আমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন, তা হলে আমাকে এমন কোনো চিহ্ন দেখান যে, আপনিই আমার সঙ্গে কথা বলছেন। ১৮ আমি যতক্ষণ না আমার উপহার নিয়ে আসি এবং আপনার সামনে রাখি, ততক্ষণ দয়া করে আপনি এখান থেকে যাবেন না।” তিনি বললেন: “ঠিক আছে, তুমি না আসা পর্যন্ত আমি এখানেই থাকব।” ১৯ গিদিয়োন ভিতরে গেলেন আর একটা বাচ্চা ছাগল রান্না করলেন এবং এক ঐফা* ময়দা দিয়ে খামিরবিহীন* রুটি বানালেন। তারপর, তিনি ঝুড়িতে মাংস নিলেন এবং হাঁড়িতে ঝোল নিলেন আর বাইরে এসে সেই বড়ো গাছের নীচে তা পরিবেশন করলেন।
২০ তখন সত্য ঈশ্বরের স্বর্গদূত তাকে বললেন: “এই মাংস এবং খামিরবিহীন* রুটি নিয়ে গিয়ে ওই বড়ো শিলার উপর রাখো আর ঝোলটা সেটার উপর ঢেলে দাও।” গিদিয়োন তা-ই করলেন। ২১ তারপর, যিহোবার স্বর্গদূত তার হাতে থাকা লাঠিটা সেই শিলার দিকে বাড়ালেন। যেই-না তিনি লাঠির প্রান্ত দিয়ে মাংস এবং খামিরবিহীন* রুটি স্পর্শ করলেন, অমনি শিলা থেকে আগুন বের হল আর মাংস ও রুটি গ্রাস করে নিল। যিহোবার স্বর্গদূত গিদিয়োনের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ২২ গিদিয়োন বুঝতে পারলেন, তিনি যিহোবার স্বর্গদূত ছিলেন।
গিদিয়োন সঙ্গেসঙ্গে বললেন: “হে নিখিলবিশ্বের প্রভু যিহোবা, আমি তোমার স্বর্গদূতকে সামনাসামনি দেখলাম! হে যিহোবা, এখন কী হবে?” ২৩ যিহোবা তাকে বললেন: “শান্ত হও।* ভয় পেয়ো না, তুমি মারা যাবে না।” ২৪ এরপর, গিদিয়োন সেখানে যিহোবার জন্য একটা বেদি তৈরি করলেন। তিনি সেটার নাম রাখলেন যিহোবাশালোম* আর আজ পর্যন্ত সেটার এই নামই রয়েছে। এই বেদি আজও অফ্রায় অবীয়েষ্রীয়দের এলাকায় রয়েছে।
২৫ সেই রাতে যিহোবা গিদিয়োনকে বললেন: “তোমার বাবার ষাঁড়টা নাও, সেই ষাঁড়টা,* যেটার বয়স সাত বছর। আর তোমার বাবার বালের যে-বেদি রয়েছে, সেটা ভেঙে ফেলো আর সেটার পাশেই যে-উপাসনার খুঁটি* রয়েছে, সেটা কেটে ফেলো। ২৬ তারপর, তুমি সেই উঁচু জায়গায় একটার উপর আরেকটা পাথর রেখে তোমার ঈশ্বর যিহোবার জন্য একটা বেদি তৈরি করো আর সেটার উপর সেই ষাঁড়টাকে* হোমবলি হিসেবে উৎসর্গ করো। তুমি যে-উপাসনার খুঁটিটা* কেটে ফেলবে, সেটার কাঠ দিয়েই তুমি এই হোমবলি উৎসর্গ করবে।” ২৭ তখন গিদিয়োন তার দাসদের মধ্য থেকে দশ জন পুরুষকে নিলেন আর যিহোবা যেমনটা বলেছিলেন, তেমনটাই করলেন। কিন্তু, তিনি তার বাবার পরিবারের এবং নগরের লোকদের ভয়ে দিনে নয় বরং রাতে সেই কাজটা করলেন।
২৮ পরের দিন নগরের পুরুষেরা যখন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠল, তখন তারা দেখল, বালের বেদিটা ভেঙে ফেলা হয়েছে আর সেটার পাশে থাকা উপাসনার খুঁটিটা* কেটে ফেলা হয়েছে আর সেখানে একটা নতুন বেদি রয়েছে, যেটার উপর ষাঁড়* উৎসর্গ করা হয়েছে। ২৯ তখন তারা একে অন্যকে জিজ্ঞেস করতে লাগল: “কে এটা করেছে?” তারা খোঁজখবর নেওয়ার পর জানতে পারল, এটা যোয়াশের ছেলে গিদিয়োনের কাজ। ৩০ নগরের পুরুষেরা যোয়াশকে বলল: “তোমার ছেলেকে বের করে আনো। আমরা ওকে শেষ করে ফেলব। ও বালের বেদি ভেঙে দিয়েছে আর সেটার পাশে থাকা উপাসনার খুঁটি* কেটে দিয়েছে।” ৩১ তখন যে-লোকেরা যোয়াশকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের তিনি বললেন: “বালের হয়ে ওকালতি করার এবং তাকে উদ্ধার করার জন্য বালের কি তোমাদের প্রয়োজন রয়েছে? কান খুলে শুনে নাও, যে তার হয়ে ওকালতি করবে, তাকে আজ সকালেই মেরে ফেলা হবে। বাল যদি সত্যিই ঈশ্বর হয়, তা হলে সে-ই নিজের হয়ে ওকালতি করুক কারণ তারই বেদি ভেঙে ফেলা হয়েছে।” ৩২ সেই দিন যোয়াশ তার ছেলে গিদিয়োনের নাম রাখলেন যিরুব্বাল* কারণ তিনি বললেন: “বালই নিজের হয়ে ওকালতি করুক কারণ তারই বেদি ভেঙে ফেলা হয়েছে।”
৩৩ তারপর, সমস্ত মিদিয়নীয় ও অমালেকীয় এবং পূর্ব দেশের লোকেরা একজোট হল আর তারা নদী পার হয়ে যিষ্রিয়েল উপত্যকায়* এল আর সেখানে শিবির স্থাপন করল। ৩৪ তখন যিহোবার পবিত্র শক্তি গিদিয়োনের উপর এল আর তিনি শিঙা বাজালেন। অবীয়েষ্রীয়েরা গিদিয়োনের পিছন পিছন গেল। ৩৫ গিদিয়োন মনঃশির সমস্ত এলাকায় তার বার্তাবাহকদের পাঠালেন আর তারাও তার পিছন পিছন গেল। তিনি আশের, সবূলূন ও নপ্তালির এলাকাতেও তার বার্তাবাহকদের পাঠালেন আর তারা তার সঙ্গে যোগ দিতে এল।
৩৬ গিদিয়োন সত্য ঈশ্বরকে বললেন: “যদি এমনটা হয় যে, তুমি তোমার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী আমার মাধ্যমে ইজরায়েলকে উদ্ধার করবে, ৩৭ তা হলে আমাকে এই চিহ্ন দাও: আমি শস্য মাড়াই করার জায়গায় এই মেষলোম রাখছি। যদি কেবল এই মেষলোমের উপর শিশির পড়ে, কিন্তু এর আশেপাশের মাটি শুকনো থাকে, তা হলে আমি বুঝব, তুমি আমার মাধ্যমে ইজরায়েলকে উদ্ধার করবে, ঠিক যেমনটা তুমি প্রতিজ্ঞা করেছ।” ৩৮ পরের দিন তেমনটাই হল। গিদিয়োন যখন সকাল সকাল উঠলেন আর সেই মেষলোমটা নিংড়ালেন, তখন সেটার মধ্য থেকে এত জল বের হল যে, একটা বড়ো পাত্র ভরে গেল। ৩৯ তখন গিদিয়োন সত্য ঈশ্বরকে বললেন: “হে ঈশ্বর, দয়া করে আমার উপর রেগে যেয়ো না। আমি তোমার কাছে আরেকটা অনুরোধ করতে চাই। আমি আবারও পরীক্ষা করে দেখতে চাই যে, তুমি আমার সঙ্গে রয়েছ কি না। এবার যেন মেষলোমটা শুকনো থাকে, কিন্তু আশেপাশের মাটি শিশিরে ভিজে যায়।” ৪০ সেই রাতে ঈশ্বর ঠিক তা-ই করলেন। মেষলোমটা একেবারে শুকনো রইল, কিন্তু সেটার আশেপাশের মাটি শিশিরে ভিজে গেল।