ইয়োব
৩১ “আমি আমার চোখের সঙ্গে চুক্তি করেছি।
তাই, আমি কীভাবে কোনো কুমারী মেয়ের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকাতে পারি?
২ আমি যদি এমনটা করি, তা হলে ঈশ্বরের কাছ থেকে আমি কী পাব?
সর্বশক্তিমানের কাছ থেকে আমি কোন উত্তরাধিকার পাব?
৩ অন্যায়কারীদের উপর কি বিপর্যয় আসবে না?
যারা অন্যদের ক্ষতি করে, তাদের উপর কি বিপদ আসবে না?
৪ ঈশ্বর কি আমার কাজগুলো লক্ষ করেন না?
তিনি কি আমার প্রতিটা পদক্ষেপ গোনেন না?
৫ আমি কি কখনো মিথ্যার পথে* চলেছি?
আমি কি কখনো কাউকে ঠকানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি?
৬ ঈশ্বর যেন আমাকে নিখুঁত দাঁড়িপাল্লায় ওজন করেন,
তখন তিনি জানতে পারবেন, আমি বিশ্বস্ত।
৭ আমার পা যদি কখনো বিপথে গিয়ে থাকে,
আমার হৃদয় যদি কখনো আমার চোখের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে থাকে,
আমার হাত যদি মন্দ কাজ করে কলুষিত হয়ে থাকে,
৮ তা হলে আমি বপন করলে যেন অন্যেরা খায়,
আমি গাছ লাগালে যেন অন্যেরা তা উপড়ে ফেলে।*
৯ আমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর প্রতি যদি আমার হৃদয় প্রলুব্ধ হয়ে থাকে
আর আমি যদি তার দরজায় তার জন্য অপেক্ষা করে থাকি,
১০ তা হলে আমার স্ত্রী যেন অন্য পুরুষের জন্য শস্য পেষাই করে
আর অন্য পুরুষেরা যেন তার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করে।
১১ কারণ আমার এই কাজ খুবই লজ্জাজনক হবে,
এমন এক অপরাধ হবে, যেটার জন্য আমি বিচারকদের কাছ থেকে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হব।
১২ এইরকম লজ্জাজনক কাজ এমন আগুনের মতো, যেটা আমাকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে
আর এমনকী আমার সমস্ত কিছু গোড়া থেকে ধ্বংস করে দেবে।*
১৩ আমার বিরুদ্ধে যদি আমার দাস-দাসীদের কোনো অভিযোগ থাকে*
আর আমি যদি তাদের প্রতি ন্যায়বিচার না করে থাকি,
১৪ তা হলে ঈশ্বর যখন আমাকে জিজ্ঞেস করবেন,* তখন আমি কী উত্তর দেব?
তিনি যখন আমার কাছে কৈফিয়ত চাইবেন, তখন আমি কী বলব?
১৫ যিনি আমাকে গর্ভে তৈরি করেছেন, তিনি কি তাদেরও তৈরি করেননি?
তিনিই কি আমাদের জন্মের আগে* গঠন করেননি?
১৬ গরিব ব্যক্তি কিছু চাওয়ার পর আমি যদি তাকে সেটা না দিয়ে থাকি
অথবা আমি যদি কোনো বিধবাকে হতাশ করে থাকি,
১৭ আমি যদি আমার ভাগের খাবার একাই খেয়ে থাকি
আর অনাথদের* তা না দিয়ে থাকি,
১৮ (যুবক বয়স থেকেই আমি অনাথদের বাবার ভূমিকা পালন করে আসছি।
যখন থেকে আমার জ্ঞান হয়েছে, তখন* থেকেই আমি বিধবাদের সাহায্য করে আসছি।)
১৯ আমি যদি কাউকে ঠাণ্ডায় বিনা পোশাকে বিনষ্ট হতে দেখে থাকি,
কিংবা দেখে থাকি যে, কোনো গরিব ব্যক্তির কাছে গায়ে দেওয়ার মতো কিছু নেই,
২০ সে যদি আমার মেষের লোম দিয়ে নিজেকে উষ্ণ না করে থাকে
আর আমাকে আশীর্বাদ না করে থাকে,
২১ নগরের দরজায় যদি কোনো অনাথের আমার সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে থাকে
আর আমি যদি তাকে* হুমকি দিয়ে থাকি,
২২ তা হলে আমার হাত যেন আমার কাঁধ থেকে খসে পড়ে
আর আমার কনুই যেন ভেঙে যায়।
২৩ কারণ আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা বিপর্যয়কে ভয় করি,
তাঁর মহিমার সামনে আমি দাঁড়াতে পারব না।
২৪ আমি যদি সোনার উপর আস্থা রেখে থাকি,
আমি যদি উচ্চমানের সোনাকে বলে থাকি, ‘তুমিই আমাকে সুরক্ষা জোগাবে!’
২৫ আমি যদি আমার প্রচুর ধনসম্পদ
এবং প্রচুর সম্পত্তির কারণে গর্ব করে থাকি,
২৬ আমি যদি সূর্যকে* ঝলমল করতে দেখে
এবং চাঁদকে নিজের মহিমায় ঘুরে বেড়াতে দেখে
২৭ মনে মনে প্রলুব্ধ হয়ে থাকি
এবং সেগুলোর উপাসনা করার জন্য নিজের হাতে চুম্বন করে থাকি,
২৮ তা হলে এটা একটা অপরাধ হবে কারণ এমনটা করে আমি স্বর্গের সত্য ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করব
আর এরজন্য আমি বিচারকদের কাছ থেকে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হব।
২৯ আমি কি কখনো আমার শত্রুদের ধ্বংস হতে দেখে আনন্দ করেছি?
তাদের বিপদের মধ্যে দেখে আমি কি কখনো উল্লাসিত হয়েছি?
৩০ আমি কখনো তাদের মৃত্যুর অভিশাপ দিইনি,
আমি নিজের মুখে কখনো এইরকম পাপ করিনি।
৩১ আমার তাঁবুর লোকেরা কি বলে না,
‘এমন কেউ নেই, যে ইয়োবের বাড়িতে পেট ভরে খাবার* খায়নি’?
৩২ যাত্রীদের জন্য আমার বাড়ির দরজা সবসময় খোলা ছিল,
কখনো কোনো অপরিচিত ব্যক্তিকে* বাইরে রাত কাটাতে হয়নি।
৩৩ আমি কি কখনো অন্যদের মতো নিজের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করেছি?
আমার ভুলগুলো নিজের পোশাকে লুকোনোর চেষ্টা করেছি?
৩৪ আমি কি কখনো এই ভেবে ভয় পেয়েছি যে, লোকেরা কী বলবে,
সমাজে আমার কতটা নিন্দা হবে
কিংবা বাড়ি থেকে বের হওয়া অথবা কাউকে কিছু বলা কঠিন হয়ে যাবে?
৩৫ হায়! কেউ যদি আমার কথা শুনত!
আমি স্বাক্ষর করে জানাতাম, আমার প্রতিটা কথা সত্য।
হায়! সর্বশক্তিমান যদি আমাকে উত্তর দিতেন!
আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে, সে যদি তার অভিযোগগুলো একটা নথিতে লিখে দিত,
৩৬ তা হলে সেই নথিগুলো আমি আমার কাঁধে নিয়ে ঘুরতাম,
সেগুলোকে মুকুটের মতো করে আমার মাথায় পরতাম।
৩৭ আমি একজন অধ্যক্ষের মতো নির্দ্বিধায় ঈশ্বরের কাছে যাব,
তাঁকে আমার প্রতিটা কাজের হিসাব দেব।
৩৮ আমার জমি যদি অভিযোগ করে যে, আমি তাকে চুরি করেছি,
আমার লাঙলের দ্বারা তৈরি হওয়া রেখাগুলো যদি কাঁদে,
৩৯ আমি যদি তার ফসল দাম না দিয়ে খেয়ে থাকি
আর আমার কারণে যদি জমির মালিকদের দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়,
৪০ তা হলে সেই জমিতে যেন গমের পরিবর্তে কাঁটা উৎপন্ন হয়,
যবের পরিবর্তে দুর্গন্ধযুক্ত আগাছা উৎপন্ন হয়।”
এখানে ইয়োবের কথা শেষ হয়।