বিচারকর্তৃগণের বিবরণ
৮ ইফ্রয়িমের পুরুষেরা গিদিয়োনকে বলল: “তুমি যখন মিদিয়নীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলে, তখন কেন আমাদের ডাকনি? তুমি এটা ঠিক করনি।” আর তারা গিদিয়োনের সঙ্গে ঝগড়া করতে লাগল। ২ কিন্তু, গিদিয়োন তাদের বললেন: “তোমাদের তুলনায় আমি কীই-বা করেছি? আমরা অবীয়েষরের লোকেরা যতটা করেছি, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি তোমরা ইফ্রয়িমীয়েরা করেছ।* ৩ ঈশ্বর মিদিয়নীয়দের অধ্যক্ষ ওরেব ও সেবকে তোমাদের হাতে সমর্পণ করে দিয়েছেন। আমি যা করেছি, তা তোমাদের তুলনায় কিছুই নয়।” গিদিয়োনের কথা শুনে তাদের রাগ ঠাণ্ডা হল।
৪ তারপর, গিদিয়োন শত্রুদের পিছন পিছন জর্ডন পর্যন্ত এলেন আর তিনি জর্ডন পার হলেন। তিনি এবং তার ৩০০ জন পুরুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাদের পিছু ধাওয়া করতে থাকলেন। ৫ সুক্কোতে এসে তিনি সেখানকার লোকদের বললেন: “আমি মিদিয়নীয়দের রাজা সেবহ ও সল্মুন্নের পিছু ধাওয়া করছি। আমার সঙ্গে যে-ব্যক্তিরা রয়েছে, তারা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। দয়া করে তাদের কিছু রুটি দাও।” ৬ কিন্তু, সুক্কোতের অধ্যক্ষেরা বলল: “তুমি তো এমনভাবে রুটি চাইছ, যেন তোমার লোকেরা ইতিমধ্যেই সেবহ ও সল্মুন্নকে ধরে ফেলেছে!” ৭ গিদিয়োন তাদের বললেন: “ঠিক আছে। কিন্তু, তোমরাও শুনে রাখো, যিহোবা যখন সেবহ ও সল্মুন্নকে আমার হাতে সমর্পণ করে দেবেন, তখন আমি ফিরে এসে জঙ্গলের কাঁটাঝোপ দিয়ে তোমাদের খুব মারব।” ৮ তারপর, গিদিয়োন পনূয়েলে গেলেন আর সেখানেও তিনি লোকদের কাছে রুটি চাইলেন। কিন্তু, সুক্কোতের লোকেরা যে-উত্তর দিয়েছিল, তারাও ঠিক সেই উত্তরই দিল। ৯ গিদিয়োন পনূয়েলের লোকদের বললেন: “আমি যখন জয় করে ফিরে আসব, তখন তোমাদের নগরের দুর্গটা ভেঙে ফেলব।”
১০ সেবহ ও সল্মুন্ন তাদের সৈন্যদলের প্রায় ১৫,০০০ জন পুরুষের সঙ্গে কর্কোরে ছিলেন। পূর্ব দেশের লোকদের সৈন্যের মধ্যে কেবল এত জন পুরুষই বেঁচে ছিল। বাকি ১,২০,০০০ জন যোদ্ধা ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছিল। ১১ গিদিয়োন এগিয়ে গিয়ে নোবহ ও যগ্বিহের পূর্ব দিকে সেই রাস্তা ধরে গেলেন, যেখানে যাযাবরেরা বাস করত আর তিনি আচমকা শত্রুদের শিবিরের উপর আক্রমণ করলেন। ১২ দুই মিদিয়নীয় রাজা সেবহ ও সল্মুন্ন সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন, কিন্তু গিদিয়োন তাদের পিছু ধাওয়া করে ধরে ফেললেন। এতে শত্রুদের পুরো শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল।
১৩ যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় যোয়াশের ছেলে গিদিয়োন হেরসে উঠে যাওয়ার পথ ধরে এলেন। ১৪ রাস্তায় তিনি সুক্কোতের একজন যুবককে ধরলেন আর তার কাছে সুক্কোতের অধ্যক্ষ ও প্রাচীনদের নাম জানতে চাইলেন। সেই যুবক গিদিয়োনকে সেখানকার ৭৭ জন ব্যক্তির নাম লিখে দিল। ১৫ তখন গিদিয়োন সুক্কোতের লোকদের কাছে গিয়ে বললেন: “এই যে, সেবহ ও সল্মুন্ন। এদের বিষয়েই তোমরা আমাকে ঠাট্টা করে বলেছিলে, ‘তুমি তো এমনভাবে তোমার ক্লান্ত লোকদের জন্য রুটি চাইছ, যেন তারা ইতিমধ্যেই সেবহ ও সল্মুন্নকে ধরে ফেলেছে।’” ১৬ তখন গিদিয়োন জঙ্গলের কাঁটাঝোপ দিয়ে সুক্কোতের অধ্যক্ষ ও প্রাচীনদের উচিতশিক্ষা দিলেন। ১৭ এরপর, তিনি পনূয়েলের দুর্গ ভেঙে ফেললেন এবং সেই নগরের লোকদের হত্যা করলেন।
১৮ গিদিয়োন সেবহ ও সল্মুন্নকে জিজ্ঞেস করলেন: “তাবোরে তোমরা যে-লোকদের হত্যা করেছিলে, তারা কেমন দেখতে ছিল?” তারা বললেন: “একদম আপনার মতো, তারা প্রত্যেকেই দেখতে রাজপুত্রের মতো ছিল।” ১৯ গিদিয়োন বললেন: “তারা আমার নিজের ভাই ছিল। আমি জীবন্ত ঈশ্বর যিহোবার দিব্য করে বলছি, তোমরা যদি আমার ভাইদের হত্যা না করতে, তা হলে আমিও তোমাদের হত্যা করতাম না।” ২০ তারপর, তিনি তার প্রথমজাত ছেলে যেথরকে বললেন: “এদের মেরে ফেলো।” কিন্তু, যেথর নিজের তলোয়ার বের করল না। সে ভয় পেয়ে গিয়েছিল কারণ তখনও সে অল্পবয়সি ছিল। ২১ এতে সেবহ ও সল্মুন্ন গিদিয়োনকে বললেন: “ওকে কী বলছেন? সাহস থাকলে তলোয়ার নিন আর মেরে ফেলুন আমাদের!” তখন গিদিয়োন সেবহ ও সল্মুন্নকে মেরে ফেললেন আর তিনি তাদের উটগুলোর গলা থেকে চন্দ্রহার নিয়ে নিলেন।
২২ এরপর, ইজরায়েলীয়েরা গিদিয়োনকে বলল: “আপনি আমাদের রাজা হোন আর আপনার পরে আপনার ছেলে ও নাতিও আমাদের উপর রাজত্ব করুক কারণ আপনি মিদিয়নীয়দের হাত থেকে আমাদের উদ্ধার করেছেন।” ২৩ তখন গিদিয়োন তাদের বললেন: “আমি কিংবা আমার ছেলে, আমরা কেউই তোমাদের উপর রাজত্ব করব না। যিহোবাই তোমাদের রাজা আর তিনিই তোমাদের উপর রাজত্ব করবেন।” ২৪ তিনি এও বললেন: “তোমাদের কাছে একটা অনুরোধ রয়েছে: তোমরা প্রত্যেকে নিজেদের লুট করা জিনিসপত্রের মধ্য থেকে আমাকে একটা করে নথ দাও।” (কারণ ইজরায়েলীয়েরা যাদের পরাজিত করেছিল, তারা ইশ্মায়েলীয় ছিল আর তারা সোনার নথ পরত।) ২৫ ইজরায়েলীয়েরা বলল: “হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই দেব।” তারা একটা চাদর পাতল আর প্রত্যেক পুরুষ নিজের লুট করা জিনিসের মধ্য থেকে একটা করে নথ সেটার মধ্যে ফেলল। ২৬ গিদিয়োন যত সোনার নথ পেলেন, সেগুলোর মোট ওজন ১,৭০০ শেকল।* এ ছাড়া, তিনি চন্দ্রহার, দুল, মিদিয়নীয় রাজাদের বেগুনি রঙের পোশাক এবং উটের গলার হারও পেলেন।
২৭ গিদিয়োন সেই সোনাগুলো দিয়ে একটা এফোদ* তৈরি করলেন আর নিজের নগর অফ্রাতে সেটার প্রদর্শনী করলেন। কিন্তু, সমস্ত ইজরায়েলীয় এফোদটাকে দেবতা মনে করে সেটার উপাসনা* করতে লাগল আর সেই এফোদ গিদিয়োন এবং তার পরিবারের জন্য ফাঁদের মতো হয়ে উঠল।
২৮ এভাবে মিদিয়নীয়েরা ইজরায়েলীয়দের হাতে পরাজিত হল এবং তাদের আর ইজরায়েলীয়দের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস হল না।* গিদিয়োনের জীবনকালে দেশে ৪০ বছর পর্যন্ত শান্তি রইল।
২৯ যোয়াশের ছেলে যিরূব্বাল* নিজের বাড়ি ফিরে গেলেন আর সেখানেই থাকলেন।
৩০ গিদিয়োনের ৭০টি ছেলে হল কারণ তার অনেক স্ত্রী ছিল। ৩১ শিখিমে তার যে-উপপত্নী ছিল, সেও তার জন্য এক ছেলের জন্ম দিল। তিনি তার নাম রাখলেন অবীমেলক। ৩২ যোয়াশের ছেলে গিদিয়োন এক দীর্ঘ জীবন উপভোগ করার পর মারা গেলেন। তাকে অবীয়েষ্রীয়দের এলাকায় অফ্রাতে তার বাবা যোয়াশের কবরে কবর দেওয়া হল।
৩৩ গিদিয়োনের মৃত্যুর পর পরই ইজরায়েলীয়েরা আবারও বাল দেবতাদের উপাসনা* করতে শুরু করল আর তারা বাল্বরীৎকে নিজেদের দেবতা করে তুলল। ৩৪ তারা তাদের ঈশ্বর যিহোবাকে ভুলে গেল, যিনি আশেপাশের সমস্ত শত্রুর হাত থেকে তাদের উদ্ধার করেছিলেন। ৩৫ শুধু তা-ই নয়, যিরুব্বাল অর্থাৎ গিদিয়োন তাদের প্রতি যত মঙ্গলজনক কাজ করেছিলেন, তারা সেগুলোও ভুলে গেল আর তার পরিবারের প্রতি কোনো দয়া* দেখাল না।