উপদেশক
৭ ভালো তেলের চেয়ে সুনাম আরও ভালো আর জন্মদিনের চেয়ে মৃত্যুদিন আরও ভালো। ২ ভোজের বাড়িতে যাওয়ার চেয়ে শোকের বাড়িতে যাওয়া আরও ভালো। কারণ মৃত্যুই সমস্ত মানুষের শেষ আর জীবিত লোকদের এই কথাটা মনে রাখা উচিত। ৩ হাসার চেয়ে দুঃখ করা আরও ভালো কারণ মুখে দুঃখের ভাব থাকলে সেটা হৃদয়কে আরও ভালো করে। ৪ বিজ্ঞ ব্যক্তির হৃদয় শোকের বাড়িতে পড়ে থাকে, কিন্তু মূর্খ ব্যক্তির হৃদয় সেই বাড়িতে পড়ে থাকে, যেখানে আনন্দফুর্তি করা হচ্ছে।
৫ মূর্খ ব্যক্তিদের গান শোনার চেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তির ধমক শোনা আরও ভালো। ৬ পাত্রের নীচে কাঁটা পোড়ার শব্দ যেমন, মূর্খের হাসিও তেমনই। এটাও বৃথা। ৭ অত্যাচার বিজ্ঞ ব্যক্তিকে পাগল করে তুলতে পারে আর ঘুস হৃদয়কে কলুষিত করে।
৮ কোনো বিষয়ের শুরুর চেয়ে সেটার শেষ আরও ভালো। উদ্ধত মনোভাবের চেয়ে ধৈর্য ধরা ভালো। ৯ তাড়াতাড়ি বিরক্ত হোয়ো না কারণ মূর্খেরাই তাড়াতাড়ি বিরক্ত হয়।*
১০ এমনটা বোলো না, “আগেকার দিনগুলো এখনকার চেয়ে আরও ভালো ছিল।” কারণ এই কথা বলা বিজ্ঞতার কাজ নয়।
১১ প্রজ্ঞার সঙ্গেসঙ্গে উত্তরাধিকার থাকা এক ভালো বিষয়। প্রজ্ঞা সেইসমস্ত ব্যক্তিকে উপকৃত করে, যারা দিনের আলো দেখে।* ১২ কারণ টাকাপয়সা যেমন সুরক্ষা জোগায়, তেমনই প্রজ্ঞাও সুরক্ষা জোগায়, কিন্তু জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এই কারণে আরও ভালো যে, সেগুলো নিজের মালিকের জীবন বাঁচায়।
১৩ সত্য ঈশ্বরের কাজের প্রতি মনোযোগ দাও। কারণ যে-বিষয়গুলোকে ঈশ্বর আঁকাবাঁকা করেছেন, সেগুলোকে কে সোজা করতে পারে? ১৪ ভালো দিনে ভালো কাজ করো, কিন্তু বিপদের* দিনে এই বিষয়টা ভেবে দেখো যে, ভালো দিন এবং খারাপ দিন উভয়ই ঈশ্বর তৈরি করেছেন, যাতে মানুষ নিশ্চিত হতে* না পারে যে, ভবিষ্যতে কী হবে।
১৫ আমি আমার সংক্ষিপ্ত* জীবনে সব কিছু দেখেছি—যে সঠিক কাজ করে, সে সঠিক কাজ করা সত্ত্বেও ধ্বংস হয়ে যায় অথচ মন্দ ব্যক্তি খারাপ কাজ করা সত্ত্বেও অনেক দিন বেঁচে থাকে।
১৬ যা সঠিক, সেই বিষয়ে তোমার দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে চরমে যেয়ো না কিংবা নিজেকে অতিরিক্ত বিজ্ঞ হিসেবে দেখিয়ো না। কেন তুমি নিজের সর্বনাশ ডেকে আনবে? ১৭ অতিরিক্ত মন্দ হোয়ো না কিংবা মূর্খ হোয়ো না। কেন তুমি অকালে মারা যাবে? ১৮ ভালো হবে, যদি তুমি প্রথম সতর্কবাণীকে* ধরে রাখ আর দ্বিতীয় সতর্কবাণীকে* হাতছাড়া হতে না দাও কারণ যে ঈশ্বরকে ভয় করে, সে দুটোতেই কান দেবে।
১৯ প্রজ্ঞা একজন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে নগরের দশ জন শক্তিশালী ব্যক্তির চেয়েও শক্তিশালী করে তোলে। ২০ পৃথিবীতে এমন কোনো নির্দোষ ব্যক্তি নেই, যে সবসময় ভালো কাজ করে আর কখনো পাপ করে না।
২১ লোকদের প্রতিটা কথায় মনোযোগ দিয়ো না, নাহলে তুমি হয়তো শুনবে, তোমার নিজের দাস তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছে। ২২ কারণ তোমার মন খুব ভালোভাবে জানে যে, তুমিও অনেক বার অন্যদের অভিশাপ দিয়েছ।
২৩ আমি এই সমস্ত কিছু প্রজ্ঞার দ্বারা পরীক্ষা করলাম আর বললাম: “আমি বিজ্ঞ হব।” কিন্তু, এটা আমার নাগালের বাইরে ছিল। ২৪ যা-কিছু ঘটেছে, সেগুলো বোঝা আমার সাধ্যের বাইরে। এগুলো খুবই গভীর বিষয়, কে এগুলো বুঝতে পারে? ২৫ আমি প্রজ্ঞা সম্বন্ধে জানার এবং তা খোঁজার ও অনুসন্ধান করার জন্য আমার মন স্থির করলাম। আমি জানতে চেয়েছিলাম, যা-কিছু ঘটে, সেগুলো কেন ঘটে? আমি বুঝতে চেয়েছিলাম, মূর্খতা কেন মন্দ আর পাগলামি কেন বোকামি। ২৬ তখন আমি জানতে পারলাম: মৃত্যুর চেয়েও তেতো এমন এক মহিলা রয়েছে, যে শিকারির জালের মতো, যার হৃদয় টানাজালের মতো আর যার হাত কারাগারের শিকলের মতো। যে সেই মহিলার কাছ থেকে পালাতে পারে, সে সত্য ঈশ্বরকে খুশি করে, কিন্তু যে সেই মহিলার জালে ফেঁসে যায়, সে পাপ করে।
২৭ উপদেশক বলেন: “দেখো, আমি এই বিষয়টা পেয়েছি। আমি একের-পর-এক বিভিন্ন বিষয়ের অনুসন্ধান করেছি, যাতে আমি উপসংহারে পৌঁছোতে পারি। ২৮ কিন্তু, অনেক অনুসন্ধান করেও আমি কোনো উপসংহারে পৌঁছোতে পারিনি। এক হাজার লোকের মধ্যে আমি কেবল এক জন সৎ পুরুষকে পেয়েছি কিন্তু তাদের মধ্যে এক জনও সৎ মহিলাকে পাইনি। ২৯ আমি শুধু এই বিষয়টাই পেয়েছি: সত্য ঈশ্বর মানুষকে সৎ হিসেবে তৈরি করেছিলেন, কিন্তু তারা ভিন্ন ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে।”