বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি | ধ্যান
ধ্যান
ধ্যান করা বলতে কী বোঝায়?
“আমি তোমার সমস্ত কর্ম্ম ধ্যানও করিব, তোমার ক্রিয়া সকল আলোচনা করিব।”—গীতসংহিতা ৭৭:১২.
লোকেরা যা বলে
ধ্যান অনেক প্রকারের হতে পারে, যেগুলোর মধ্যে কয়েকটা প্রাচ্যের প্রাচীন ধর্মগুলো থেকে এসেছে। এই বিষয়ে জে. কৃষ্ণমুর্তি বলেছিলেন, “কোনো কিছুকে সুস্পষ্টরূপে চিন্তা করার জন্য নিজের মনকে শূণ্য করতে হবে।” তার কথাগুলো এই ধারণা প্রকাশ করে যে, মনকে শূণ্য করে কোনো শব্দ অথবা মূর্তি কিংবা ছবির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করলে, মনের শান্তি পাওয়া যায় আর মানসিকভাবে স্পষ্ট ধারণা ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোক লাভ করা যায়।
বাইবেল যা বলে
বাইবেল ধ্যান বা চিন্তা করাকে উচ্চমূল্য দিয়ে থাকে। (১ তীমথিয় ৪:১৫) তবে, এটি যে-প্রকারের ধ্যান করাকে উৎসাহিত করে, সেটার জন্য যে মনকে শূণ্য করতে হবে অথবা মন্ত্রের মতো কোনো শব্দ কিংবা কথা বার বার উচ্চারণ করতে হবে, এমন নয়। এর পরিবর্তে, বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ধ্যান করা বলতে, কোনো গঠনমূলক বিষয় যেমন ঈশ্বরের গুণাবলী, মানদন্ড এবং তাঁর সৃষ্টির বিষয়গুলো নিয়ে অর্থপূর্ণভাবে চিন্তা করাকে বোঝায়। ঈশ্বরের একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি প্রার্থনায় বলেছিলেন, “আমি . . . তোমার সমস্ত কর্ম্ম ধ্যান করিতেছি, তোমার হস্তের কার্য্য আলোচনা করিতেছি।” (গীতসংহিতা ১৪৩:৫) তিনি এও বলেছিলেন: “আমি শয্যার উপরে যখন তোমাকে স্মরণ করি, তখন প্রহরে প্রহরে তোমার বিষয় ধ্যান করি।”—গীতসংহিতা ৬৩:৬.
ধ্যান করা কীভাবে আপনাকে উপকৃত করতে পারে?
“ধার্ম্মিকের মন উত্তর করিবার নিমিত্ত চিন্তা করে।”—হিতোপদেশ ১৫:২৮.
বাইবেল যা বলে
গঠনমূলক বিষয়গুলো নিয়ে ধ্যান করা আমাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়, অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি জোগায় ও নৈতিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করে আর এই সমস্ত কিছুই কথাবার্তা বলার ও আচরণ করার সময় আমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে। (হিতোপদেশ ১৬:২৩) তাই, এই ধরনের ধ্যান করা সুখী ও পরিতৃপ্তিদায়ক জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। যে-ব্যক্তি নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বিষয়ে ধ্যান করেন, তার সম্বন্ধে গীতসংহিতা ১:৩ পদ বলে: “সে জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ হইবে, যাহা যথাসময়ে ফল দেয়, যাহার পত্র ম্লান হয় না; আর সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।”
এ ছাড়া, ধ্যান করা আমাদের বোধগম্যতা ও স্মরণশক্তিকে বাড়িয়ে তোলে। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যখন সৃষ্টির কোনো বিষয় অথবা বাইবেলের নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করি, তখন আমরা বিভিন্ন ধরনের আগ্রহজনক তথ্য জানতে পারি। কিন্তু, আমরা যখন এই তথ্যগুলো নিয়ে ধ্যান করি, তখন একটা তথ্যের সঙ্গে আরেকটা তথ্য কীভাবে সম্পর্কযুক্ত, তা বুঝতে পারি। আর সেইসঙ্গে ইতিমধ্যেই আমরা যা শিখেছি, সেগুলোর সঙ্গে এই নতুন তথ্যের কী সম্পর্ক রয়েছে, তা-ও বুঝতে পারি। ঠিক যেমন একজন ছুতোর মিস্ত্রি কাঠ দিয়ে কোনো সুন্দর আসবাবপত্র তৈরি করেন, তেমনি ধ্যান করা তথ্যগুলোকে যুক্তি সহকারে পর পর সুন্দরভাবে “সাজাতে” আমাদের সাহায্য করে।
ধ্যান করাকে কি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত?
“অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য, কে তাহা জানিতে পারে?” —যিরমিয় ১৭:৯.
বাইবেল যা বলে
“ভিতর হইতে, মনুষ্যদের অন্তঃকরণ হইতে, কুচিন্তা বাহির হয়—বেশ্যাগমন, চৌর্য্য, নরহত্যা, ব্যভিচার, লোভ, দুষ্টতা, ছল, লম্পটতা, কুদৃষ্টি, . . . ও মূর্খতা।” (মার্ক ৭:২১, ২২) ঠিক যেমন আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তেমনি ধ্যানকেও নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন! তা না হলে, অনুপযুক্ত চিন্তাভাবনা থেকে ক্ষতিকর আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠতে পারে আর এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে মন্দ কাজকর্ম করার জন্য প্ররোচিত করতে পারে।—যাকোব ১:১৪, ১৫.
সেইজন্য, বাইবেল আমাদের ‘যাহা যাহা সত্য, ন্যায্য, বিশুদ্ধ, প্রীতিজনক, সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সদ্গুণ ও যে কোন কীর্ত্তি’ সম্বন্ধে ধ্যান করতে উৎসাহিত করে। (ফিলিপীয় ৪:৮, ৯) আমরা যখন এই ধরনের ভালো বিষয়গুলো নিজেদের মনে গেঁথে নেব, তখন আমরা উত্তম গুণাবলি, মার্জিত কথাবার্তা ও অন্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব।—কলসীয় ৪:৬. ◼ (g১৪-E ০৫)