পাঠ ৭
পুনরাবৃত্তির এবং অঙ্গভঙ্গির ব্যবহার
১-৩. কেন পুনরাবৃত্তি শিক্ষাদানের এক অপরিহার্য কৌশল?
১ কথা বলার ক্ষেত্রে আপনার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত এমন তথ্য প্রদান করা, যা আপনার শ্রোতারা মনে রাখবে ও ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। যদি তারা ভুলেই যায়, তাহলে কোনো উপকারই হবে না। একটা প্রধান যে-উপায়ের দ্বারা আপনি যা বলেন, তা তাদের মনে গেঁথে রাখতে সাহায্য করতে পারেন, সেটা হচ্ছে যে-বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোকে পুনরাবৃত্তি করা। উপযুক্তভাবেই এইরকম বলা যায় যে, পুনরাবৃত্তি হচ্ছে স্মৃতিশক্তির জননী। পুনরাবৃত্তি হচ্ছে শিক্ষাদানের অপরিহার্য কৌশলগুলোর মধ্যে একটা। আপনি ইতিমধ্যেই আপনার শাস্ত্রপদ ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এর মূল্য সম্বন্ধে শিখেছেন। কিন্তু, “জোর দেওয়ার জন্য পুনরাবৃত্তি” আপনার স্পিচ কাউন্সেল স্লিপ-এ আলাদাভাবে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে কারণ এটা আপনার বক্তৃতার অন্য অংশগুলোর প্রতিও প্রযোজ্য।
২ জোর দেওয়ার জন্য পুনরাবৃত্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য আমরা দুটো ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টা দেখতে যাচ্ছি। প্রত্যেকটার সঙ্গে পুনরাবৃত্তির এক ভিন্ন উপায় জড়িত; প্রত্যেকের একটা ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রধান বিষয়গুলোর পুনরাবৃত্তি এক স্মৃতিসহায়ক হিসেবে কাজ করে। যে-বিষয়গুলো বোঝা যায়নি, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করা তা বুঝতে সাহায্য করে।
৩ এই গুণগত মান বিবেচনা করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বক্তৃতা উপস্থাপনই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে প্রস্তুতিও অতি গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে আগে থেকেই নির্ণয় করতে হবে যে, কোন ধারণাগুলো পুনরাবৃত্তি করা প্রয়োজন ও কখন সেগুলো পুনরাবৃত্তি করা সর্বোত্তম হবে।
৪-৬. “অগ্রগতিমূলক” সারাংশ ও “উপসংহারমূলক” সারাংশ যেভাবে প্রধান বিষয়গুলো পুনরাবৃত্তি করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, তা বর্ণনা করুন।
৪ প্রধান বিষয়গুলো পুনরাবৃত্তি করা। প্রধান বিষয়গুলোর পুনরাবৃত্তি প্রায়ই কয়েক ধরনের সারাংশের দ্বারা সম্পন্ন হয়। আমরা দুটো উল্লেখযোগ্য ধরন আলোচনা করব, যেগুলোকে “অগ্রগতিমূলক” সারাংশ এবং “উপসংহারমূলক” সারাংশ বলে অভিহিত করছি।
৫ অগ্রগতিমূলক সারাংশের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, বিবেচ্য প্রত্যেকটা প্রধান বিষয়ের অপরিহার্য দিকগুলো পুনরালোচনা করে পূর্ববর্তী যে-প্রধান বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটার অপরিহার্য দিকগুলোর ধারাবাহিক সারাংশে পৌঁছানো। এভাবে, বক্তৃতার যোগসূত্র ক্রমাগত আরও জোরালো করা হয়।
৬ বক্তৃতার শেষে উপসংহারমূলক সারাংশ, তা সেটা অগ্রগতিমূলক সারাংশের সঙ্গে ব্যবহার করা হোক বা না হোক, সমস্তকিছুকে একত্রে যুক্ত করে এবং পুরো বক্তৃতাকে অল্প কয়েকটা সংক্ষিপ্ত উক্তির দ্বারা পুনরালোচনা করা যেতে পারে। মাঝে মাঝে এটা ঠিক কয়টা বিষয় পুনরালোচনা করা হচ্ছে, সেটা উল্লেখ করতে সাহায্য করবে। এটা অধিকতর স্মৃতিসহায়ক।
৭-১০. কীভাবে বিষয়গুলোর সারাংশমূলক পুনরাবৃত্তি আগ্রহজনকভাবে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে?
৭ সারাংশের মানে এই নয় যে, কিছু বিষয় বা ধারণার নীরসভাবে পুনরাবৃত্তি বা পুনরুক্তি। এটা বিভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে: দৃষ্টান্তের সাহায্যে, একটি শাস্ত্রপদ ব্যবহারের মাধ্যমে, এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টা তুলে ধরে, তুলনা বা বৈসাদৃশ্যের মাধ্যমে, সমরূপতা তুলে ধরে, সমার্থ শব্দ বা প্রশ্ন ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, জনসাধারণের উদ্দেশে একটি বক্তৃতার খুবই ব্যবহারিক এক সারাংশ হয়তো সংক্ষিপ্ত, পাঁচ মিনিটের একটা অংশ হতে পারে, যেখানে মূল শাস্ত্রপদ ও বক্তৃতার প্রধান যুক্তিতর্ককে সদ্ব্যবহার করা হয়। এখানেই পুরো বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত আকারে রয়েছে, এমন কিছু যা প্রায় প্রত্যেকে মনে রাখতে ও ব্যবহার করতে পারে।
৮ সারাংশ করার মতো পুনরাবৃত্তি বিশেষভাবে সেই বক্তৃতাগুলোর ক্ষেত্রে সাহায্যকারী, যেগুলোর সঙ্গে কারণ ও যুক্তি জড়িত এবং আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত পুনরালোচনার মধ্যে অতিবাহিত সময় শ্রোতাদের মনে ধারণাগুলোকে আরও গভীরভাবে গেঁথে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু, কোনো একটা বিষয়ের সারাংশ করা সবসময়ই আবশ্যক নয়। সম্প্রসারিত করা হবে এমন আরেকটা বিষয়ের এক কার্যকারী ভিত্তি হিসেবে এটাকে প্রায়ই পরে সাধারণভাবে পুনরায় উল্লেখ করা যেতে পারে।
৯ আরেকটা যে-উপায়ে প্রধান বিষয়গুলো পুনরাবৃত্তি করা যায়, সেটা হচ্ছে বক্তৃতার ভূমিকাতে সেগুলো উল্লেখ করা এবং এরপর বক্তৃতার প্রধান অংশে বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করা। এভাবে পুনরাবৃত্তি করা মনের মধ্যে ধারণাগুলোকে আরও বেশি গেঁথে দেয়।
১০ প্রধান বিষয়গুলো পুনরাবৃত্তি করার এই ভিন্ন উপায়গুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে একটি বক্তৃতাকে আগ্রহজনক ও উপভোগ্য করে তোলার এবং সেইসঙ্গে সেটিকে স্মরণে রাখা সহজতর করার জন্য অনেক কিছু করা যেতে পারে।
১১-১৪. যে-বিষয়গুলো বোঝা যায় না, সেগুলো পুনরাবৃত্তি করার ক্ষেত্রে কোন মূল বিষয়গুলো জড়িত?
১১ যে-বিষয়গুলো বোঝা যায় না, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করা। বোধগম্যতার জন্য কোনো একটা বিষয় পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন আছে কি না, তা প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রোতাদের ওপর নির্ভর করে। এটা যদি কোনো অপরিহার্য বিষয় হয়ে থাকে এবং একবারের বেশি বলা না হলে যদি তা তাদের কাছে স্পষ্ট হবে না বলে মনে হয়, তাহলে আপনাকে এটা কোনো না কোনোভাবে পুনর্বিবেচনা করতে হবে, তা না হলে আপনি আপনার শ্রোতাদের ছাড়াই আপনার বক্তৃতার উপসংহারে পৌঁছে যাবেন। অন্যদিকে, অপ্রয়োজনীয় পুনরাবৃত্তি, যা জোর দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয় না, তা বক্তৃতাকে শব্দবহুল ও আগ্রহশূন্য করে তুলবে।
১২ বক্তৃতা প্রস্তুত করার সময় আপনার শ্রোতাদের কথা মনে রাখুন। এটা আপনাকে শ্রোতারা নির্দিষ্ট যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে পারে, সেগুলো সম্বন্ধে কিছুটা আগে থেকে চিন্তা করতে সমর্থ করবে। এই ধারণাগুলো এমনভাবে পুনরাবৃত্তি করার প্রস্তুতি নিন, যাতে সেগুলোকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে।
১৩ কীভাবে আপনি জানতে পারবেন যে, আপনার কথা বোঝা যায়নি? আপনার শ্রোতাদের দিকে তাকান। মৌখিক অভিব্যক্তি পর্যবেক্ষণ করুন অথবা যদি এক বা দুজন ব্যক্তির উদ্দেশে কথা বলে থাকেন, তাহলে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন।
১৪ কিন্তু, এটা ভালভাবে লক্ষ রাখুন: একই শব্দ পুনরাবৃত্তি করা সবসময় আপনার উদ্দেশ্য সম্পাদন করবে না। শিক্ষাদান করার মধ্যে এর চেয়েও বেশি কিছু রয়েছে। আপনার শ্রোতা যদি প্রথমবার আপনার কথা বুঝে না থাকে, তাহলে একই শব্দকে বার বার বলাই আপনার কথা ভালভাবে বোঝানোর জন্য যথেষ্ট না-ও হতে পারে। এই সম্বন্ধে আপনি কী করতে পারেন? আপনাকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার বক্তৃতায় হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে কিছু যুক্ত করার প্রয়োজন হতে পারে। শ্রোতাদের প্রয়োজনগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে শেখা অনেকাংশে একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার কার্যকারিতাকে নির্ধারণ করবে।
**********
১৫-১৮. কীভাবে একজন বর্ণনামূলক অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করা শিখতে পারেন?
১৫ অঙ্গভঙ্গি করাও আপনি যা বলেন, সেটার ওপর জোর দেয় আর সেগুলো মুখে বলা শব্দের অর্থকে প্রায়ই জোরালো করে তোলে। এভাবে, সেগুলো ধারণাগুলোকে সম্পূর্ণ ও জীবন্ত করে তোলে। সত্যি বলতে কী, কেউই অঙ্গভঙ্গি করা ছাড়া কথা বলে না। তাই, আপনি যদি প্ল্যাটফর্ম থেকে অঙ্গভঙ্গি না করেন, তাহলে আপনার শ্রোতা বুঝতে পারবে যে, আপনি স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন না। কিন্তু, যখন আপনি স্বাভাবিকভাবে অঙ্গভঙ্গি করেন, তখন শ্রোতারা আপনার বিষয়ে চিন্তা করবে না; আপনি কী বলছেন, তারা সেই বিষয়ে চিন্তা করবে। অঙ্গভঙ্গি আপনাকে প্রাণচঞ্চল করে তোলার দ্বারা সাহায্য করে, আপনার অনুভূতিকে উদ্দীপিত করে আর এভাবে আপনার উপস্থাপনাকে জীবন্ত করে তোলে। সেগুলো কোনো বই থেকে শেখার বিষয় নয়। আপনাকে কখনো অধ্যয়ন করতে হয়নি যে, কীভাবে মুচকি হাসতে হয় বা অট্টহাসি দিতে হয় বা কীভাবে রাগ হতে হয়, তাই অন্য কারো অঙ্গভঙ্গি নকল করার কোনো প্রয়োজন নেই আর যত স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেগুলো ঘটে, ততই ভাল। মুখে বলা শব্দের প্রতি অনুভূতি যুক্ত করার জন্য মৌখিক অভিব্যক্তি ও অঙ্গভঙ্গি একসঙ্গে দুটোই প্রয়োজন।
১৬ অঙ্গভঙ্গিকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দুটো সাধারণ শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: বর্ণনামূলক এবং জোরালো।
১৭ বর্ণনামূলক অঙ্গভঙ্গি। বর্ণনামূলক অঙ্গভঙ্গি কাজকে প্রকাশ করে অথবা পরিমাপ ও স্থানকে নির্দেশ করে। এগুলো শেখা সবচেয়ে সহজ। তাই, প্ল্যাটফর্মে অঙ্গভঙ্গি করার ব্যাপারে আপনার যদি সমস্যা থাকে, তাহলে প্রথমে সরল, বর্ণনামূলক অঙ্গভঙ্গি করার চেষ্টা করুন।
১৮ যখন আপনি বিদ্যালয়ে এই গুণগত মানের ওপর কাজ করেন, তখন শুধুমাত্র একটা বা দুটো অঙ্গভঙ্গি করেই সন্তুষ্ট হবেন না। পুরো বক্তৃতা জুড়েই অঙ্গভঙ্গি করার চেষ্টা করুন। এটা করার জন্য সেই শব্দগুলো খুঁজুন, যা দিক, দূরত্ব, আকার, এলাকা, গতি, স্থান, বৈসাদৃশ্য, তুলনামূলক অবস্থান বা তুলনা প্রদর্শন করে। প্রয়োজন হলে, অঙ্গভঙ্গি করার বিষয়টা আপনার মনে রাখতে আপনার নোটে এই শব্দগুলো কোনোভাবে চিহ্নিত করে রাখুন। এই অভ্যাসটা চালিয়ে যান, এমনকি আপনি যদি প্রথমবার “G” পেয়েও থাকেন। কয়েক বার বক্তৃতা দেওয়ার পর আপনি দেখতে পাবেন যে আপনার আর অঙ্গভঙ্গির বিষয়টা চিহ্নিত করার প্রয়োজন হয় না অথবা আগে থেকে সেগুলোর বিষয় চিন্তা করতে হয় না এবং এর ফলে আপনি স্বাভাবিকভাবেই অঙ্গভঙ্গি করতে পারবেন।
১৯, ২০. জোরালো অঙ্গভঙ্গি কোন উদ্দেশ্য সাধন করে?
১৯ জোরালো অঙ্গভঙ্গি। জোরালো অঙ্গভঙ্গি অনুভূতি ও প্রত্যয় প্রকাশ করে। এগুলো ধারণাগুলোর মধ্যে বিরতি দেয়, সেগুলোকে প্রাণবন্ত ও দৃঢ়তর করে। তাই, জোরালো অঙ্গভঙ্গি অপরিহার্য। কিন্তু, সাবধান! জোরালো অঙ্গভঙ্গি করা সাধারণত মুদ্রাদোষে পরিণত হয়ে যায়। এটা রোধ করার জন্য অতিরিক্ত অঙ্গভঙ্গি করা এড়িয়ে চলুন।
২০ আপনার যদি অঙ্গভঙ্গি করার মুদ্রাদোষ থাকে, তাহলে কিছু সময়ের জন্য শুধু বর্ণনামূলক অঙ্গভঙ্গি করার মধ্যে নিজেকে সীমিত রাখুন। একবার আপনি বর্ণনামূলক অঙ্গভঙ্গি করায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে, জোরালো অঙ্গভঙ্গিও স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠবে। অভিজ্ঞতা অর্জন করার ও প্ল্যাটফর্মে আরও সাবলীল হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আপনার জোরালো অঙ্গভঙ্গি স্বাভাবিকভাবেই আপনার আভ্যন্তরীণ অনুভূতি প্রকাশ করবে, আপনার প্রত্যয় ও আন্তরিকতা প্রদর্শন করবে। সেগুলো আপনার বক্তৃতাকে আরও অর্থপূর্ণ করে তুলবে।