অধ্যায় ষোলো
সত্য উপাসনার পক্ষ নিন
বাইবেল প্রতিমার ব্যবহার ও পূর্বপুরুষদের উপাসনা সম্বন্ধে কী শিক্ষা দেয়?
ধর্মীয় ছুটির দিনগুলোকে খ্রিস্টানরা কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে থাকে?
কীভাবে আপনি অন্যদের অসন্তুষ্ট না করেও আপনার বিশ্বাসকে ব্যাখ্যা করতে পারেন?
১, ২. মিথ্যা ধর্ম ছেড়ে চলে আসার পর, আপনার নিজেকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হবে আর তা কেন গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?
ধরুন আপনি দেখতে পেলেন যে, আপনি যে-পাড়ায় থাকেন সেটা পুরোপুরিভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। কেউ গোপনে এলাকার মধ্যে ক্রমাগত বিষাক্ত আবর্জনা ফেলে চলছে আর এখন পরিস্থিতি জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ হয়ে উঠেছে। আপনি কী করবেন? কোনো সন্দেহ নেই যে, পারলে আপনি সেখান থেকে চলে যাবেন। কিন্তু, তা করার পরেও আপনি এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটার মুখোমুখি হবেন, ‘আমি কি বিষে আক্রান্ত হয়েছি?’
২ মিথ্যা ধর্মের ক্ষেত্রেও অনুরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, এই ধরনের উপাসনা অশুচি শিক্ষা এবং অভ্যাসগুলোর দ্বারা দূষিত হয়ে পড়েছে। (২ করিন্থীয় ৬:১৭) সেই কারণে মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য “মহতী বাবিল” থেকে বেরিয়ে আসা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। (প্রকাশিত বাক্য ১৮:২, ৪) আপনি কি বেরিয়ে এসেছেন? যদি এসে থাকেন, তা হলে আপনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু, এর সঙ্গে মিথ্যা ধর্ম থেকে নিজেকে পৃথক করা বা সেখান থেকে ইস্তফা দেওয়ার চেয়েও আরও বেশি কিছু জড়িত। পরে, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমার মধ্যে কি এখনও মিথ্যা উপাসনার কোনো লেশ রয়েছে?’ কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন।
প্রতিমা ও পূর্বপুরুষদের উপাসনা
৩. (ক) প্রতিমার ব্যবহার সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে আর কারো কারো জন্য ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেওয়া কেন কঠিন হতে পারে? (খ) আপনার কাছে থাকা মিথ্যা উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো সামগ্রীকে আপনার কী করা উচিত?
৩ কারো কারো বাড়িতে বছরের পর বছর ধরে প্রতিমা বা উপাসনার জন্য বেদি রয়েছে। সেটা কি আপনার বেলায় সত্য? যদি থেকে থাকে, তা হলে আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, এই ধরনের একটা দৃশ্যত সাহায্য ছাড়া ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা অস্বাভাবিক বা ভুল। এইরকম কিছু বিষয়ের প্রতি আপনি হয়তো এমনকী আসক্তিবোধ করতে পারেন। কিন্তু, ঈশ্বর নিজেই বলেছেন যে তাঁকে কীভাবে উপাসনা করা উচিত এবং বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, তিনি চান যেন আমরা প্রতিমা ব্যবহার না করি। (পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ২০:৪, ৫; গীতসংহিতা ১১৫:৪-৮; যিশাইয় ৪২:৮; ১ যোহন ৫:২১) তাই, আপনার কাছে থাকা মিথ্যা উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো সামগ্রী ধ্বংস করে দেওয়ার দ্বারা আপনি সত্য উপাসনার পক্ষ নিতে পারেন। যেকোনোভাবেই হোক, সেগুলোকে যিহোবার মতো করে দেখুন—এমন কিছু যা হচ্ছে “ঘৃণিত।”—দ্বিতীয় বিবরণ ২৭:১৫.
৪. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, পূর্বপুরুষদের উপাসনা করা বৃথা? (খ) কেন যিহোবা তাঁর লোকেদের কোনো ধরনের প্রেতচর্চায় জড়িত হতে নিষেধ করেছিলেন?
৪ অনেক মিথ্যা ধর্মে পূর্বপুরুষদের উপাসনাও খুবই প্রচলিত। বাইবেলের সত্য জানার আগে কেউ কেউ বিশ্বাস করত যে, মৃতেরা এক অদৃশ্য রাজ্যে সচেতন রয়েছে আর তারা জীবিতদের সাহায্য বা ক্ষতি করতে পারে। হতে পারে, আপনার মৃত প্রিয়জনদের সন্তুষ্ট করার জন্য আপনি অনেক প্রচেষ্টা করতেন। কিন্তু, এই বইয়ের ৬ অধ্যায়ে আপনি যেমন শিখেছেন যে, মৃতেরা কোনো জায়গায়ই সচেতন অবস্থায় থাকে না। তাই, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রচেষ্টাগুলো বৃথা। যেকোনো বার্তা যা কোনো মৃত প্রিয়জনের কাছ থেকে এসেছে বলে মনে হয়, তা প্রকৃতপক্ষে মন্দদূতদের কাছ থেকেই এসেছে। তাই, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের মৃতদের সঙ্গে কথা বলার কিংবা কোনো ধরনের প্রেতচর্চায় জড়িত হওয়ার চেষ্টাকে নিষেধ করেছিলেন।—পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২.
৫. প্রতিমার ব্যবহার অথবা পূর্বপুরুষদের উপাসনা করা যদি আপনার পূর্বের ধর্মের অংশ হয়ে থাকে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?
৫ প্রতিমার ব্যবহার অথবা পূর্বপুরুষদের উপাসনা করা যদি আপনার পূর্বের ধর্মের অংশ হয়ে থাকে, তা হলে আপনি কী করতে পারেন? বাইবেলের সেই বাক্যাংশগুলো পড়ুন ও সেগুলো নিয়ে ভাবুন, যেগুলো আপনাকে দেখায় যে ঈশ্বর এই বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখেন। সত্য উপাসনার পক্ষ নেওয়ার জন্য আপনার ইচ্ছার কথা জানিয়ে প্রতিদিন যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন এবং আপনাকে তাঁর মতো করে চিন্তা করার জন্য সাহায্য করতে অনুরোধ জানান।—যিশাইয় ৫৫:৯.
বড়োদিন—প্রাথমিক খ্রিস্টানরা উদ্যাপন করত না
৬, ৭. (ক) বড়োদিনে স্পষ্টতই কোন বিষয়টা স্মরণ করা হয়ে থাকে আর যিশুর প্রথম শতাব্দীর অনুসারীরা কি এটা পালন করত? (খ) যিশুর প্রাথমিক শিষ্যদের সময়ে জন্মদিন উদ্যাপনগুলো কীসের সঙ্গে জড়িত ছিল?
৬ একজন ব্যক্তির উপাসনা মিথ্যা ধর্মের দ্বারা দূষিত হতে পারে, যদি তা জনপ্রিয় ছুটির দিনগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, বড়োদিনের কথা বিবেচনা করুন। বড়োদিনে স্পষ্টতই যিশু খ্রিস্টের জন্মকে স্মরণ করা হয়ে থাকে আর নিজেদের খ্রিস্টান বলে দাবি করে, এমন প্রায় প্রত্যেকটা ধর্ম এটাকে উদ্যাপন করে থাকে। অথচ কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই যে, যিশুর প্রথম শতাব্দীর শিষ্যরা এই ধরনের একটা ছুটির দিন পালন করত। অন্তর্নিহিত বিষয়গুলোর পবিত্র উৎস (ইংরেজি) বইটা বলে: “খ্রিস্টের জন্মের পরে দুই শতাব্দী পর্যন্ত কেউ জানতই না যে, ঠিক কখন তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন আর অল্প লোকই এই বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামাতো।”
৭ এমনকী যিশুর শিষ্যরা যদি তাঁর জন্মের বিষয়ে সঠিক তারিখটা জানতও, তবুও তারা এটা উদ্যাপন করত না। কেন? কারণ, দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া যেমন বলে, প্রাথমিক খ্রিস্টানরা “কারো জন্মদিন উদ্যাপন করাকে এক পৌত্তলিক প্রথা হিসেবে বিবেচনা করত।” বাইবেলে একমাত্র এমন দু-জন শাসকের জন্মদিন পালনের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, যারা যিহোবাকে উপাসনা করত না। (আদিপুস্তক ৪০:২০; মার্ক ৬:২১) এ ছাড়া, পৌত্তলিক দেব-দেবীদের সম্মানেও জন্মদিন উদ্যাপন করা হতো। উদাহরণ স্বরূপ, রোমীয়রা মে মাসের ২৪ তারিখে দীয়ানা দেবীর জন্মদিন উদ্যাপন করত। এর পরদিন, তারা তাদের সূর্য দেবতা অ্যাপোলোর জন্মদিন পালন করত। তাই, জন্মদিন উদ্যাপন পৌত্তলিক ধর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল, খ্রিস্ট ধর্মের সঙ্গে নয়।
৮. জন্মদিন উদ্যাপন ও কুসংস্কারের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করুন।
৮ আরেকটা কারণ রয়েছে যেজন্য প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা যিশুর জন্মদিন উদ্যাপন করত না। তাঁর শিষ্যরা সম্ভবত জানতেন যে, জন্মদিন উদ্যাপনগুলো কুসংস্কারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। উদাহরণ স্বরূপ, প্রাচীনকালের অনেক গ্রিক ও রোমীয় লোক বিশ্বাস করত যে, প্রত্যেক মানুষের জন্মের সময় এক আত্মা উপস্থিত থাকে ও সারাজীবন ধরে তাকে সুরক্ষা করে। “এই আত্মার সেই দেবতার সঙ্গে এক রহস্যময় সম্পর্ক ছিল, যে-দেবতার জন্মদিনে সেই ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছেন,” জন্মদিনের কাহিনী (ইংরেজি) বইটা বলে। যিহোবা নিশ্চয়ই এমন কোনো পর্বাদি পালনে সন্তুষ্ট হবেন না, যা যিশুকে কুসংস্কারের সঙ্গে যুক্ত করে। (যিশাইয় ৬৫:১১, ১২) তাহলে, কেন এত লোক বড়োদিন উদ্যাপন করে থাকে?
বড়োদিনের উৎস
৯. কীভাবে ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন পালন করার জন্য বাছাই করা হয়েছিল?
৯ যিশু পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কয়েক-শো বছর পর লোকেরা ২৫ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন পালন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু, সেটা যিশুর জন্মের তারিখ ছিল না কারণ তাঁর জন্ম স্পষ্টতই অক্টোবর মাসে হয়েছিল।a তাহলে কেন ২৫ ডিসেম্বর তারিখটা বেছে নেওয়া হয়েছিল? পরবর্তী সময়ে নিজেদের খ্রিস্টান বলে দাবি করেছিল এমন কেউ কেউ সম্ভবত “চেয়েছিল যে তারিখটা যেন পৌত্তলিক রোমীয় উৎসব ‘অজেয় সূর্যের জন্মদিনের’ সঙ্গে একই দিনে পড়ে।” (দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা) শীতের সময়, যখন সূর্যের তেজ সবচেয়ে কম বলে মনে হতো, তখন পৌত্তলিক উপাসকরা উষ্ণতা ও আলোর এই উৎসকে এর দূরবর্তী ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার জন্য নানা উৎসব পালন করত। ২৫ ডিসেম্বর তারিখটা সূর্যের ফিরে আসার দিন হিসেবে মনে করা হতো। পৌত্তলিক উপাসকদের ধর্মান্তরিত করার প্রচেষ্টায় ধর্মীয় নেতারা এই উৎসবকে গ্রহণ করে নিয়েছিল আর এটাকে “খ্রিস্টীয়” উৎসব বলে মনে করানোর চেষ্টা করেছিল।b
১০. অতীতে, কেন কিছু লোক বড়োদিন উদ্যাপন করত না?
১০ বড়োদিন যে পৌত্তলিক উৎস থেকে এসেছে, তা দীর্ঘসময় ধরেই স্বীকৃত হয়ে আসছে। এর অশাস্ত্রীয় উৎসের কারণে, সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার কিছু ঔপনিবেশিক স্থানে বড়োদিন উদ্যাপন নিষেধ করা হয়েছিল। এমনকী কেউ যদি বড়োদিনের দিন কাজে না গিয়ে ঘরে থাকত, তা হলে তাকে অর্থ জরিমানা দিতে হতো। তবে, শীঘ্রই পুরনো রীতিনীতি আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এবং আরও নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছিল। বড়োদিন আবারও এক জনপ্রিয় ছুটির দিনে পরিণত হয়েছিল আর অনেক দেশে এখনও এইরকমই রয়ে গিয়েছে। কিন্তু, বড়োদিনের সঙ্গে মিথ্যা ধর্মের সম্পর্ক থাকায়, যারা ঈশ্বরকে খুশি করতে চায়, তারা বড়োদিন অথবা পৌত্তলিক উপাসনার সঙ্গে যুক্ত অন্য কোনো ছুটির দিন উদ্যাপন করে না।c
উৎস কি প্রকৃতপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কিছু?
১১. কেন কিছু লোক ছুটির দিনগুলো পালন করে থাকে, কিন্তু আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় কী হওয়া উচিত?
১১ কেউ কেউ একমত যে, বড়োদিনের মতো ছুটির দিনগুলোর উৎস পৌত্তলিক কিন্তু তবুও তারা মনে করে যে, সেগুলো পালন করা ভুল কিছু নয়। বস্তুতপক্ষে, অধিকাংশ লোকই ছুটির দিনগুলো উদ্যাপন করার সময় মিথ্যা উপাসনার বিষয়ে চিন্তা করে না। এ ছাড়া, এই উপলক্ষগুলো পরিবারের সকলকে একত্রিত হওয়ারও সুযোগ করে দেয়। আপনিও কি এইরকম মনে করেন? যদি করে থাকেন, তা হলে মিথ্যা ধর্মের প্রতি ভালোবাসা নয় বরং পরিবারের প্রতি ভালোবাসাই সম্ভবত সত্য উপাসনার পক্ষ নেওয়াকে আপনার জন্য কঠিন করে তুলছে। এই বিষয়ে নিশ্চিত হোন যে যিহোবা, যিনি পরিবারের উৎস তিনি চান যেন আপনার আত্মীয়দের সঙ্গে আপনার এক উত্তম সম্পর্ক থাকে। (ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫) কিন্তু, আপনি এই ধরনের বন্ধনগুলোকে ঈশ্বরের অনুমোদিত উপায়ে শক্তিশালী করতে পারেন। তবে, যে-বিষয়টা আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত সেই বিষয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা কর।”—ইফিষীয় ৫:১০.
১২. উদাহরণের সাহায্যে বর্ণনা করুন যে, কেন আমাদের সেই রীতিনীতি ও পর্বাদি পালন করা এড়িয়ে চলা উচিত, যেগুলো নোংরা উৎস থেকে এসেছে?
১২ সম্ভবত আপনি মনে করেন যে, ছুটির দিনগুলো আজকে যেভাবে উদ্যাপিত হয়ে থাকে তার সঙ্গে এর উৎসগুলোর তেমন সম্পর্ক নেই বললেই চলে। উৎস কি প্রকৃতপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কিছু? হ্যাঁ! উদাহরণ স্বরূপ: ধরুন আপনি দেখলেন যে, নর্দমায় একটা লজেন্স পড়ে আছে। আপনি কি সেই লজেন্সটা তুলে নিয়ে সেটা খাবেন? অবশ্যই না! সেই লজেন্সটা নোংরা। সেই লজেন্সটার মতো, ছুটির দিনগুলোকে হয়তো মধুর বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সেগুলোকে নোংরা জায়গা থেকে তুলে আনা হয়েছে। সত্য উপাসনার পক্ষ নেওয়ার জন্য আমাদের ভাববাদী যিশাইয়ের মতো দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে, যিনি সত্য উপাসকদের বলেছিলেন: “অশুচি কোন বস্তু স্পর্শ করিও না।”—যিশাইয় ৫২:১১.
অন্যদের সঙ্গে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা
১৩. ছুটির দিনগুলোতে অংশ না নিলে হয়তো কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো দেখা দিতে পারে?
১৩ আপনি যখন ছুটির দিনগুলোতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দিতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, সহকর্মীরা হয়তো ভাবতে পারে যে, কেন আপনি যেখানে কাজ করেন, সেখানকার নির্দিষ্ট কিছু ছুটির দিনের কর্মকাণ্ডে অংশ নেন না। কী হবে যদি আপনাকে বড়োদিনের কোনো উপহার দেওয়া হয়? এটা নেওয়া কি ভুল হবে? কী হবে যদি আপনার বিবাহসঙ্গী আপনার বিশ্বাসে বিশ্বাসী না হন? কীভাবে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে, ছুটির দিনগুলো উদ্যাপন না করার কারণে আপনার ছেলে-মেয়েরা বঞ্চিতবোধ করছে না?
১৪, ১৫. আপনাকে যদি কোনো ছুটির দিনে শুভেচ্ছা জানানো হয় বা কেউ যদি আপনাকে কোনো উপহার দিতে চায়, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?
১৪ প্রত্যেকটা পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নির্ধারণ করতে বিচক্ষণতার প্রয়োজন। কোনো ছুটির দিন উপলক্ষে যদি হঠাৎ কখনো শুভেচ্ছা জানানো হয়, তা হলে আপনি হয়তো শুভাকাঙ্ক্ষীকে শুধু ধন্যবাদ জানাতে পারেন। কিন্তু, ধরুন এমন কেউ আপনাকে তা বলছে, যার সঙ্গে আপনার নিয়মিত দেখা হয় বা কাজ করতে হয়। সেই ক্ষেত্রে আপনি হয়তো আরও কিছু কথা বলতে চাইবেন। সমস্ত ক্ষেত্রেই কৌশলী হোন। বাইবেল উপদেশ দেয়: “তোমাদের বাক্য সর্ব্বদা অনুগ্রহ সহযুক্ত হউক, লবণে আস্বাদযুক্ত হউক, কাহাকে কেমন উত্তর দিতে হয়, তাহা যেন তোমরা জানিতে পার।” (কলসীয় ৪:৬) অন্যদেরকে অসম্মান না করার ক্ষেত্রে সাবধান হোন। এর পরিবর্তে, কৌশলে আপনার অবস্থান ব্যাখ্যা করুন। স্পষ্ট করুন যে, আপনি উপহার আদান-প্রদান ও একত্রে মিলিত হওয়ার বিপক্ষে নন, কিন্তু অন্য কোনো সময়ে এই ধরনের বিষয়গুলোতে অংশ নিতে চান।
১৫ কী হবে, যদি কেউ আপনাকে একটা উপহার দিতে চান? অধিকাংশই নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর। দাতা হয়তো বলতে পারেন: “আমি জানি আপনি ছুটির দিন পালন করেন না। তবুও, আমি আপনাকে এটা দিতে চাই।” আপনি হয়তো স্থির করতে পারেন যে, এই পরিস্থিতিগুলোতে উপহার গ্রহণ করা আর ছুটির দিনে অংশ নেওয়া এক বিষয় নয়। অবশ্য, দাতা যদি আপনার বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচিত না হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি জানাতে পারেন যে, আপনি সেই ছুটির দিনটা উদ্যাপন করেন না। এটা আপনাকে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে যে, কেন আপনি উপহার গ্রহণ করেন অথচ এই উপলক্ষে কাউকে উপহার দেন না। অন্যদিকে, আপনি আপনার বিশ্বাসের প্রতি অনুগত নন অথবা বস্তুগত বিষয় পাওয়ার জন্য আপনি আপোশ করবেন, এটা দেখানোর স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে যদি উপহার দেওয়া হয়, তা হলে সেটা গ্রহণ না করাই বিজ্ঞতার কাজ হবে।
পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে কী বলা যায়?
১৬. ছুটির দিনগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে কৌশলী হতে পারেন?
১৬ কী হবে যদি পরিবারের সদস্যরা আপনার বিশ্বাসে বিশ্বাসী না হয়? আবারও কৌশলী হোন। আপনার আত্মীয়স্বজন যে-সমস্ত রীতিনীতি বা পর্বাদি উদ্যাপন করা বেছে নেয়, সেগুলোর প্রত্যেকটা নিয়ে যুক্তিতর্ক করার প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে, তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি রাখার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখান, ঠিক যেমন আপনি চান যে তারা যেন আপনার নিজ অধিকারকেও সম্মান করে। (পড়ুন, মথি ৭:১২.) এমন যেকোনো পদক্ষেপ এড়িয়ে চলুন, যা আপনাকে সেই ছুটির দিনে অংশ নিতে পরিচালিত করবে। তা সত্ত্বেও, সেই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যুক্তিবাদী হোন যেগুলো প্রকৃত উদ্যাপনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। অবশ্য, আপনার এমনভাবে কাজ করা উচিত যা আপনাকে এক উত্তম বিবেক বজায় রাখতে সাহায্য করবে।—পড়ুন, ১ তীমথিয় ১:১৮, ১৯.
১৭. অন্যেরা ছুটির দিনগুলো উদ্যাপন করছে দেখে আপনার ছেলে-মেয়েরা যেন বঞ্চিতবোধ না করে সেইজন্য আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?
১৭ অশাস্ত্রীয় ছুটির দিনগুলো উদ্যাপন না করার কারণে আপনার ছেলে-মেয়েরা যাতে বঞ্চিতবোধ না করে, সেইজন্য আপনি কী করতে পারেন? এর অনেকটা নির্ভর করে বছরের অন্যান্য সময়ে আপনি কী করেন, তার উপর। কিছু বাবা-মা তাদের ছেলে-মেয়েদের উপহার দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় আলাদা করে রাখে। আপনার ছেলে-মেয়েদের দিতে পারেন এমন সর্বোত্তম উপহারগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে, আপনার সময় ও প্রেমময় মনোযোগ।
সত্য উপাসনা করে চলুন
১৮. কীভাবে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়া আপনাকে সত্য উপাসনার পক্ষ নিতে সাহায্য করতে পারে?
১৮ ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য আপনাকে অবশ্যই মিথ্যা ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করতে এবং সত্য উপাসনার পক্ষ নিতে হবে। এর সঙ্গে কী জড়িত? বাইবেল বলে: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস—বরং পরস্পরকে চেতনা দিই; আর তোমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।” (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) খ্রিস্টীয় সভাগুলো হচ্ছে আপনার জন্য ঈশ্বরের অনুমোদিত উপায়ে তাঁকে উপাসনা করার আনন্দপূর্ণ উপলক্ষ। (গীতসংহিতা ২২:২২; ১২২:১) এই ধরনের সভাগুলোতে, বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা ‘একে অন্যের থেকে উৎসাহ পায়।’—রোমীয় ১:১২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।
১৯. বাইবেল থেকে আপনি যা যা শিখেছেন, সেই বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
১৯ সত্য উপাসনার পক্ষ নেওয়ার আরেকটা উপায় হচ্ছে, অন্যদের সঙ্গে সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা, যেগুলো আপনি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার দ্বারা শিখেছেন। বর্তমানে জগতে ক্রমাগত যে-দুষ্ট কাজকর্ম হচ্ছে তার জন্য অনেক লোক সত্যিই দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করছে ও কোঁকাচ্ছে। সম্ভবত আপনি এমন কিছু লোককে চেনেন, যারা সেইরকম মনে করে। ভবিষ্যতের ব্যাপারে আপনার বাইবেলভিত্তিক আশা সম্বন্ধে তাদের সঙ্গে কথা বলুন না কেন? আপনি যখন সত্য খ্রিস্টানদের সঙ্গে মেলামেশা করেন এবং বাইবেলের যে-অপূর্ব সত্যগুলো শিখেছেন সেই বিষয়ে অন্যদের জানান, তখন আপনি দেখতে পাবেন যে, মিথ্যা উপাসনার রীতিনীতিগুলো সম্বন্ধে যেকোনো আকাঙ্ক্ষা যা হয়তো তখনও আপনার হৃদয়ে রয়ে গেছে, তা ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হোন যে, যদি আপনি সত্য উপাসনার পক্ষ নেন, তা হলে আপনি খুবই সুখী হবেন এবং অনেক আশীর্বাদ লাভ করবেন।—মালাখি ৩:১০.
a পরিশিষ্টে দেওয়া “যিশু কি ডিসেম্বর মাসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন?” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।
b ডিসেম্বর মাসের ২৫ তারিখকে বাছাই করার ক্ষেত্রে স্যাটার্নালিয়া-ও একটা ভূমিকা পালন করেছিল। রোমীয় কৃষি দেবতার সম্মানে আয়োজিত এই উৎসব ডিসেম্বর ১৭-২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হতো। স্যাটার্নালিয়া চলাকালীন ভোজ, আনন্দোৎসব ও উপহার আদান-প্রদান করা হতো।
c সত্য খ্রিস্টানরা অন্যান্য জনপ্রিয় ছুটির দিনগুলোকে কীভাবে দেখে থাকে, সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য পরিশিষ্টে দেওয়া “আমাদের কি ছুটির দিনগুলো উদ্যাপন করা উচিত?” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।