বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ—পুয়ের্টো রিকো
ক্যারিবিয়ান সমুদ্র ও আটল্যানটিক মহাসমুদ্রের মধ্যবর্তী অঞ্চলে গ্রীষ্মমণ্ডলে অবস্থিত পরিপূর্ণ পুয়ের্টো রিকো দ্বীপটি। ক্রীষ্টোফার কলোম্বাস ১৪৯৩ সালে এই দ্বীপটিকে স্পেনের সীমানার অভ্যন্তরে বলে জানান এবং যোহন বাপ্তাইজকের স্মরণার্থে দ্বীপটির নাম রাখেন স্যান্ জুয়ান বাউটেস্টা। দীর্ঘকাল ধরে এই দ্বীপটির বৃহত্তম শহরটি পুয়ের্টো রিকো বা “রিচ্ পোর্ট” নামে খ্যাত ছিল। কালক্রমে, এই নামটি পুরো দ্বীপটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, আর শহরটির নামকরণ হয় স্যান্ জুয়ান।
পুয়ের্টো রিকো বিভিন্ন কারণের জন্য এক সমৃদ্ধশালী বন্দর প্রমাণিত হয়েছে। স্পেনীয় শাসনের গোড়ার দিকে বহু পরিমাণ সোনা এখান থেকে জাহাজে বোঝাই করা হত। এখন এই দ্বীপটি আখ, কফি, কলদীবৃক্ষ এবং লেবুজাত ফল রপ্তানি করে থাকে, যদিও উৎপাদন ও শ্রমশিল্প বর্তমানে এই দেশের আর্থিক ব্যবস্থার বেশির ভাগ গঠন করে। যাইহোক, পুয়ের্টো রিকো কিন্তু আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণের জন্য একটি সমৃদ্ধশালী বন্দররূপে প্রমাণিত হয়েছে।
১৯৩০ এর দশক থেকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার এখানে প্রচার করা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে পুয়ের্টো রিকোতে প্রায় ২৫,০০০ এরও বেশি সুসমাচার প্রচারক রয়েছে। ১৯৯৩ সালে এখানকার ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির শাখা অফিসের সদস্য সংখ্যা ২৩ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০০এরও বেশিতে দাঁড়িয়েছে। এই বৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল যাতে করে এই শাখা বাইবেল ভিত্তিক প্রকাশনাদির স্পেনীয় ভাষাতে অনুবাদের তত্ত্বাবধান করতে পারে, যাতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৫,০০,০০,০০০ স্পেনভাষী তা পড়তে পারে।
নতুন এক ক্ষেত্র
শাখা অফিস এও জানায়: “পুয়ের্টো রিকোতে একটি নতুন ক্ষেত্র খোলা হয়েছে, কারণ আমরা বধিরদের কাছে রাজ্যের বার্তা পৌঁছে দেবার প্রচেষ্টা করছি। এক ভগিনী নিম্নলিখিত অভিজ্ঞতাটি জানায়: “আমি বধির ব্যক্তিদের মাঝে কাজ করছিলাম ও দুটি সন্তানবিশিষ্ট এক নারীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। যে মুহূর্তে সে জানতে পারে যে আমি একজন সাক্ষী, তৎক্ষণাৎ সে আমাকে পরিত্যাগ করে, কারণ তার কালা স্বামী “যিহোবার সাক্ষীদের” পছন্দ করেন না।
“‘কয়েকমাস পরে সেই মহিলাটি তার এক বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যে যিহোবার সাক্ষীদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করছিল। সেই মহিলাটি অধ্যয়নে যোগ দেয় ও তা খুব উপভোগ করে। আমি আবার সেই মহিলাটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করি এবং এবারেও সে পুনরাবৃত্তি করে যে তার স্বামী “যিহোবার সাক্ষীদের” পছন্দ করেন না। যাইহোক সে বাইবেল বুঝতে চাইল, কারণ তার গীর্জা তাকে বাইবেলের কিছুই শেখায়নি। একটি ট্র্যাক্ট নিয়ে আমরা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করলাম। একদিন সে আমাকে শনিবার আসার জন্য অনুরোধ জানায় কারণ তার স্বামী সেদিন বাড়িতে থাকেন। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “কিন্তু সে ত আমাদের পছন্দ করে না, করে কি?” সে উত্তরে বলেছিল: “তিনি জানতে চান যে যিহোবার সাক্ষীরা কী শেখায়?”
‘পরদিন তারা দুজনেই আমার দরজায় কড়া নাড়ে! যেহেতু তার স্বামীর মনে অনেক প্রশ্ন ছিল, আমি তাদের বধিরদের সভাতে আমন্ত্রণ করেছিলাম। আমি পৌঁছিবার আগেই সে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল ও তখন থেকে আর কোন সভাতে অনুপস্থিত থাকেনি। সে এখন অন্যান্য বধিরদের কাছে প্রচার করছে, একটি আধিবেশনেও যোগ দিয়েছে ও অধীর আগ্রহে বাপ্তিস্মের জন্য অপেক্ষা করে আছে।”’
শাখা অফিসের রিপোর্ট আরও বলে: “আমাদের এবছরের জেলা সম্মেলনে সমস্ত অনুষ্ঠান মূক-বধিরদের ভাষার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছিল আর অনেক বধির লোকেরা সপরিবারে সেখানে উপস্থিত ছিল। এক বিশেষ ভাবাবেগের মুহূর্ত আসে, যখন শেষ বক্তৃতার সময় বক্তা উল্লেখ করেন যে বধিরদের মাঝে কাজ কিভাবে সম্পন্ন হচ্ছে ও বলেন যে প্রায় ৭০ জন উপস্থিত ছিল। বিরাট এক প্রশংসাধ্বনি শোনা গিয়েছিল, কিন্তু বক্তা উপলব্ধি করলেন যে বধিররা সেই ধ্বনি শুনতে পায়নি। সুতরাং বক্তা বধিরদের বলেন, তারা যেন শ্রোতাদের দিকে তাকায় এবং বক্তা প্রশ্নটির পুনরাবৃত্তি করেন, ‘আপনারা কি বধির ভাইদের আপনাদের মধ্যে পেয়ে খুশি?’ এবং শ্রোতাদের প্রশংসাধ্বনি করতে বলেন—দুটি হাতকেই দুলিয়ে। এটা ছিল এক বিস্ময়কর দৃশ্য যে ১১,০০০ ভাইবোনেরা দুহাত দুলিয়ে প্রশংসাধ্বনি করছিল। আমাদের বধির ভাইবোনেরা অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছিল ও অনুভব করেছিল যে তারাও এই বিশাল ভ্রাতৃসমাজের অংশ বিশেষ। অনেকেই আনন্দে চোখের জলও ঝরিয়েছিল।
যখন যিহোবার সাক্ষীরা পুয়ের্টো রিকোতে শস্যছেদনের কাজে ব্যস্ত, কোন সন্দেহই নেই যে এটা একটা সমৃদ্ধশালী বন্দরের মর্যাদা রক্ষা করে চলবে। ঈশ্বরের “মেষ,” যাদেরকে তিনি “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জনের বস্তু সকল” বলে সম্বোধন করেন, ক্রমাগতভাবে আসতেই থাকবে যাতে করে যিহোবার গৃহ মহিমায় পরিপূর্ণ হয়।—যোহন ১০:১৬; হগয় ২:৭.
[৯ পৃষ্ঠার বাক্স]
দেশের পরিলেখ
১৯৯৪ পরিচর্যা বছর
সাক্ষ্যদানের শীর্ষসংখ্যা: ২৫,৪২৮
অনুপাত: প্রতি ১৩৯ জনের জন্য ১টি সাক্ষী
স্মরণার্থক সভার উপস্থিতি: ৬০,২৫২
গড় প্রতি অগ্রগামী প্রকাশকের সংখ্যা: ২,৩২৯
গড় প্রতি বাইবেল অধ্যয়নের সংখ্যা: ১৯,০১২
বাপ্তাইজিতের সংখ্যা: ৯১৯
মণ্ডলীর সংখ্যা: ৩১২
শাখা অফিস: গেনাবো