“সর্ব্বজাতির প্রার্থনা-গৃহ”
“ইহা কি লেখা নাই, ‘আমার গৃহকে সর্ব্বজাতির প্রার্থনা-গৃহ বলা যাইবে’?”—মার্ক ১১:১৭.
১. আদিতে আদম ও হবা ঈশ্বরের সাথে কিধরনের সম্পর্ক উপভোগ করত?
যখন আদম ও হবাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তারা তাদের স্বর্গীয় পিতার সাথে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করত। যিহোবা ঈশ্বর তাদের সাথে ভাববিনিময় করেছিলেন এবং মনুষ্যজাতির জন্য তাঁর অপূর্ব উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছিলেন। বাস্তবিকই, সৃষ্টিবিষয়ক তাঁর মহৎ কাজগুলির জন্য যিহোবার প্রশংসায় উদ্বেলিত হতে তারা প্রায়ই পরিচালিত হত। মনুষ্য পরিবারের ভবিষ্যৎ পিতামাতা রূপে তারা তাদের ভূমিকার কথা গভীরভাবে বিবেচনা করার সময় আদম ও হবার যদি নির্দেশনার প্রয়োজন হত তাহলে তারা তাদের পরমদেশরূপ গৃহের যে কোন স্থান থেকে ঈশ্বরকে তা জিজ্ঞাসা করতে পারত। মন্দিরে যাজকের পরিচর্যার প্রয়োজন তাদের ছিল না।—আদিপুস্তক ১:২৮.
২. আদম ও হবা পাপ করাতে কী পরিবর্তন ঘটে?
২ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে যখন একজন বিদ্রোহী দূত হবাকে এই বিষয় চিন্তা করতে প্রলুব্ধ করে এই বলে যে, যদি সে যিহোবার সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করে তাহলে সে “ঈশ্বরের সদৃশ” হবে আর তার জীবনের অবস্থার উন্নতি হবে। সেই অনুযায়ী ঈশ্বর যে গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন হবা তা খায়। তারপর তার স্বামীকে প্ররোচিত করতে শয়তান হবাকে ব্যবহার করেছিল। দুঃখের বিষয়, আদম তার পাপী স্ত্রীর কথা শোনে যাতে এটি প্রকাশ পায় যে ঈশ্বরের সাথে তার সম্পর্কের চাইতে সে তার স্ত্রীর সম্পর্ককে আরও বেশি মূল্য দেয়। (আদিপুস্তক ৩:৪-৭) ফলস্বরূপ, আদম ও হবা শয়তানকে তাদের ঈশ্বর রূপে বেছে নেয়।—তুলনা করুন ২ করিন্থীয় ৪:৪.
৩. আদম ও হবার বিদ্রোহের খারাপ ফল কী ছিল?
৩ এইরূপ করার দ্বারা, প্রথম মানব দম্পতি শুধুমাত্র ঈশ্বরের সাথে তাদের মহামূল্যবান সম্পর্কই হারায়নি, কিন্তু এক পার্থিব পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশাও হারিয়েছিল। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) তাদের পাপপূর্ণ দেহ পরিশেষে ক্ষয় পেতে থাকে যতক্ষণ না তারা মারা যায়। তাদের বংশধরেরা এই পাপপূর্ণ অবস্থা উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করে। বাইবেল ব্যাখ্যা করে, “এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল।”—রোমীয় ৫:১২.
৪. পাপী মানবজাতির কাছে ঈশ্বর কী আশা ব্যক্ত করেছিলেন?
৪ তাদের পবিত্রতম স্রষ্টার সাথে পাপপূর্ণ মানবজাতিকে পুনর্মিলিত করার জন্য কিছুর প্রয়োজন ছিল। আদম ও হবাকে শাস্তি দেওয়ার সময়ে ঈশ্বর তাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের আশা প্রদান করেছিলেন এক ‘বংশ’ সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করে, যা মানবজাতিকে শয়তানের বিদ্রোহের প্রভাবগুলি থেকে রক্ষা করবে। (আদিপুস্তক ৩:১৫) পরে, ঈশ্বর প্রকাশ করেছিলেন যে আশীর্বাদের সেই বংশ অব্রাহামের মাধ্যমে আসবে। (আদিপুস্তক ২২:১৮) এই প্রেমময় উদ্দেশ্যটি মনে রেখে, ঈশ্বর অব্রাহামের বংশধর, ইস্রায়েলদের তাঁর মনোনীত জাতি হওয়ার জন্য নির্বাচিত করেছিলেন।
৫. ইস্রায়েলের সাথে ঈশ্বরের নিয়ম চুক্তি সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে জানতে কেন আমাদের আগ্রহী হওয়া উচিত?
৫ সা.শ.পূ. ১৫১৩ সালে, ইস্রায়েল ঈশ্বরের সাথে একটি চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কে আসে এবং তাঁর নিয়ম পালন করতে সম্মত হয়। সেই নিয়ম চুক্তিটি আজকে যারা ঈশ্বরের উপাসনা করতে চায় তাদের সকলের কাছে মহান আগ্রহের বিষয় হওয়া উচিত কারণ এটি প্রতিজ্ঞাত বংশের প্রতি ইঙ্গিত করে। পৌল বলেছিলেন এটি “আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়াবিশিষ্ট।” (ইব্রীয় ১০:১) পৌল যখন এই মন্তব্যটি করেছিলেন, তখন তিনি অস্থায়ী সমাগমতাম্বু অথবা উপাসনার তাঁবুতে ইস্রায়েলের যাজকদের পরিচর্যার বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। এটিকে বলা হয়েছিল “সদাপ্রভুর মন্দির” অথবা ‘সদাপ্রভুর গৃহ।’ (১ শমূয়েল ১:৯, ২৪) যিহোবার পার্থিব গৃহে সম্পাদিত পবিত্র পরিচর্যা পরীক্ষা করার দ্বারা আমরা দয়াপূর্ণ ব্যবস্থাকে আরও পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারি যার দ্বারা আজকে পাপপূর্ণ মানুষ ঈশ্বরের সাথে পুনর্মিলিত হতে পারে।
অতি পবিত্র
৬. অতি পবিত্র স্থানে কী অবস্থিত ছিল এবং কিভাবে ঈশ্বরের উপস্থিতি সেখানে চিত্রিত হত?
৬ “যিনি পরাৎপর, তিনি হস্তনির্ম্মিত গৃহে বাস করেন না” বাইবেল বলে। (প্রেরিত ৭:৪৮) কিন্তু, তাঁর পার্থিব গৃহে অতি পবিত্র স্থান নামক ভিতরের প্রকোষ্ঠে ঈশ্বরের উপস্থিতি মেঘ দ্বারা চিত্রিত করা হত। (লেবীয় পুস্তক ১৬:২) স্পষ্টতই, এই মেঘ উজ্জ্বলভাবে আলোকিত হত যা অতি পবিত্র স্থানকে আলো দিত। ‘সাক্ষ্য-সিন্দুক’ নামক পবিত্র সিন্দুকের উপরে এটি অবস্থান করত যার মধ্যে ইস্রায়েলের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের দেওয়া কিছু আজ্ঞাখোদিত প্রস্তরফলকগুলি ছিল। সিন্দুকের প্রচ্ছদটির উপর থাকত প্রসারিত ডানাসহ দুটি স্বর্ণের করূব যেটি ঈশ্বরের স্বর্গীয় সংগঠনের উচ্চ-স্তরের আত্মিক প্রাণীদের চিত্রিত করে। আলোসহ অলৌকিক মেঘ প্রচ্ছদের উপর এবং করূবদের মাঝে অবস্থান করত। (যাত্রাপুস্তক ২৫:২২) এটি জীবন্ত করূবদের দ্বারা ধরে থাকা একটি স্বর্গীয় রথের উপর সর্বশক্তিমান ঈশ্বর উপবিষ্ট আছেন এই ধারণাকে প্রকাশ করত। (১ বংশাবলি ২৮:১৮) এটি ব্যাখ্যা করে কেন রাজা হিষ্কিয় প্রার্থনা করেছিলেন: “হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, করূবদ্বয়ে আসীন।”—যিশাইয় ৩৭:১৬.
পবিত্র
৭. পবিত্র স্থানে কী বস্তু ছিল?
৭ সমাগমতাম্বুর দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠকে বলা হত পবিত্র স্থান। এই প্রকোষ্ঠটির ভিতরে প্রবেশের বাঁ দিকে সাতটি-শাখা বিশিষ্ট সুন্দর একটি দীপবৃক্ষ থাকত আর ডান দিকে থাকত দর্শন-রুটির একটি মেজ। সোজা সামনে একটি বেদী থাকত যেখান থেকে ধূপ জ্বালানোর সৌরভ ভেসে আসত। এটি একটি তিরস্করিণীর সামনে অবস্থিত ছিল যেটি অতি পবিত্র থেকে পবিত্রকে আলাদা করত।
৮. পবিত্র স্থানে যাজকেরা নিয়মিতভাবে কী কার্য সম্পাদন করত?
৮ প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় একজন যাজক সমাগমতাম্বুর মধ্যে প্রবেশ করতেন এবং সেই ধূপের বেদীটির উপরে ধূপ জ্বালাতেন। (যাত্রাপুস্তক ৩০:৭, ৮) সকালে ধূপ জ্বালানোর সময়ে, সাতটি দীপ যা স্বর্ণের দীপবৃক্ষের উপরে স্থাপিত ছিল তা তেল দিয়ে পূর্ণ করতে হত। সন্ধ্যার সময়ে দীপগুলি পবিত্র স্থানে আলো প্রদান করতে জ্বালানো হত। প্রতি বিশ্রামবারে একজন যাজককে দর্শন-রুটির মেজের উপরে ১২টি টাটকা রুটি রাখতে হত।—লেবীয় পুস্তক ২৪:৪-৮.
প্রাঙ্গণ
৯. জলের পাত্রের উদ্দেশ্য কী ছিল এবং এর থেকে আমরা কী শিক্ষা লাভ করতে পারি?
৯ সমাগমতাম্বুর একটি প্রাঙ্গণও ছিল যা তাঁবুর কাপড়ের একটি বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা থাকত। এই প্রাঙ্গণে একটি বড় জলের পাত্র থাকত যেখানে যাজকেরা পবিত্র স্থানে প্রবেশের পূর্বে তাদের হাত ও পা ধুতো। এছাড়া প্রাঙ্গণের মধ্যে অবস্থিত বেদীতে বলি উৎসর্গ করার আগেও তাদের ধৌত হতে হত। (যাত্রাপুস্তক ৩০:১৮-২১) পরিচ্ছন্নতার এই প্রয়োজনীয়তা আজকের দিনের ঈশ্বরের দাসেদের কাছে একটি শক্তিশালী অনুস্মারকস্বরূপ যে তাদের অবশ্যই দৈহিক, নৈতিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক শুদ্ধতার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে যদি তারা চায় যে তাদের উপাসনা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হোক। (২ করিন্থীয় ৭:১) কালক্রমে, বেদীর উপরে আগুনের জন্য কাঠ এবং উন্মুক্ত জলের পাত্রে জল যোগান দিত ন-ইস্রায়েলীয় মন্দিরের দাসেরা।—যিহোশূয় ৯:২৭.
১০. উৎসর্গের বেদীতে কী কী বলি উৎসর্গ করা হত?
১০ প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায়, বলির জন্য একটি হৃষ্টপুষ্ট ভেড়াকে বেদীর উপরে হোমবলি দেওয়া হত ও সেইসাথে শস্যদানা ও পানীয় উৎসর্গ করা হত। (যাত্রাপুস্তক ২৯:৩৮-৪১) অন্যান্য বলিদানগুলি বিশেষ দিনগুলিতে করা হত। কখনও কখনও ব্যক্তিগত নির্দিষ্ট কোন পাপের জন্য বলিদান করতে হত। (লেবীয় পুস্তক ৫:৫, ৬) অন্যান্য সময়ে একজন ইস্রায়েলীয় স্বেচ্ছায় মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করতে পারত যার অংশ যাজকেরা এবং যে বলি অর্পণ করত তারা খেত। এটি ইঙ্গিত করত যে মনুষ্য পাপীরা ঈশ্বরের সাথে শান্তির সম্বন্ধে থাকতে পারত, রূপকভাবে তাঁর সাথে ভোজন উপভোগ করার মাধ্যমে। এমনকি একজন বিদেশী যিহোবার উপাসক হতে পারত এবং তাঁর গৃহে স্বেচ্ছাকৃত দান উৎসর্গ করতে সুযোগ পেত। কিন্তু যিহোবার প্রাপ্য সম্মান দেখাতে, যাজকেরা কেবলমাত্র উত্তম মানের দান গ্রহণ করতে পারত। উৎসর্গীকরণের দানাশস্যের আটা উত্তমরূপে পিষ্ট হওয়ার প্রয়োজন ছিল এবং বলিদানের জন্য পশু নিখুঁত হতে হত।—লেবীয় পুস্তক ২:১; ২২:১৮-২০; মালাখি ১:৬-৮.
১১. (ক) পশু বলির রক্ত দিয়ে কী করা হত এবং এটি কোন্ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করত? (খ) মানুষ ও পশু উভয়ের রক্ত সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
১১ এই বলিদানগুলির রক্ত বেদীর উপরে আনা হত। এটি জাতির পক্ষে প্রাত্যহিক অনুস্মারক রূপে কাজ করত যে তারা পাপী এবং তাদের একজন উদ্ধারকর্তার প্রয়োজন যার পাতিত রক্ত চিরস্থায়ীরূপে তাদের পাপের প্রায়শ্চিত করতে এবং তাদের মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে পারবে। (রোমীয় ৭:২৪, ২৫; গালাতীয় ৩:২৪; তুলনা করুন ইব্রীয় ১০:৩.) এছাড়া রক্তের এই পবিত্র ব্যবহার ইস্রায়েলীয়দের মনে করিয়ে দিত যে রক্ত চিত্রিত করে জীবনকে আর সেই জীবন হল ঈশ্বরের। মানুষের দ্বারা রক্তের অন্য যে কোন ব্যবহার ঈশ্বর সবসময় নিষিদ্ধ করেছেন।—আদিপুস্তক ৯:৪; লেবীয় পুস্তক ১৭:১০-১২; প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯.
প্রায়শ্চিত্তের দিন
১২, ১৩. (ক) কোন্ দিনটি প্রায়শ্চিত্তের দিন ছিল? (খ) মহাযাজককে অতি পবিত্র স্থানে রক্ত আনার আগে কী করতে হত?
১২ বছরে একবার যেটিকে প্রায়শ্চিত্তের দিন বলা হত, সেই দিন যারা যিহোবার উপাসনা করত এমন বিদেশীসহ সমগ্র ইস্রায়েল জাতিকে উপবাস করতে হত এবং সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকত হত। (লেবীয় পুস্তক ১৬:২৯, ৩০) এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটিতে, এক চিত্রিত অর্থে জাতিটি পাপ থেকে পরিষ্কৃত হত যাতে করে আর একটি বছর তারা যিহোবার সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক উপভোগ করতে পারে। আসুন দৃশ্যটি কল্পনা করি এবং কিছু মুখ্য বিষয় বিবেচনা করি।
১৩ মহাযাজক সমাগমতাম্বুর প্রাঙ্গণের মধ্যে আছেন। জলের পাত্রে নিজের হাত ধুয়ে তিনি বলিদানের জন্য একটি ষাঁড়কে হত্যা করেন। ষাঁড়টির রক্ত একটি পাত্রের মধ্যে ঢালা হল; এটিকে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে, যাজকীয় লেবীর বংশের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য ব্যবহার করা হবে। (লেবীয় পুস্তক ১৬:৪, ৬, ১১) কিন্তু বলিদান নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আগে মহাযাজককে অবশ্যই কিছু করতে হয়। তিনি সুগন্ধি ধূপ (সম্ভবত একটি বড় চামচে রাখা) এবং বেদীতে আগুনের পাত্র থেকে জ্বলন্ত কয়লা নেন। এরপর তিনি পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন এবং অতি পবিত্র স্থানের তিরস্করিণীর দিকে এগোতে থাকেন। তিনি ধীরে ধীরে তিরস্করিণীর চারদিকে ঘুরে নিয়ম-সিন্দুকের সামনে দাঁড়ান। এরপর, মনুষ্যের দৃষ্টির অগোচরে, তিনি জ্বলন্ত কয়লার উপর ধূপ ঢালেন এবং এইভাবে অতি পবিত্র স্থানটি সুমিষ্ট সুগন্ধের মেঘ দিয়ে ভরে যায়।—লেবীয় পুস্তক ১৬:১২, ১৩.
১৪. কেন দুটি পৃথক পশুর রক্ত নিয়ে মহাযাজককে অতি পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে হত?
১৪ এখন ঈশ্বর দয়া দেখাতে এবং এক চিত্রিত উপায়ে প্রসন্ন হতে ইচ্ছুক। এই কারণে সিন্দুকের প্রচ্ছদটিকে বলা হয় “দয়ার আসন” অথবা “প্রসন্নতামূলক প্রচ্ছদ।” (ইব্রীয় ৯:৫, NW, পাদটীকা) মহাযাজক পবিত্রের পবিত্র স্থান থেকে বেরিয়ে এসে ষাঁড়ের রক্ত নেন এবং পুনরায় অতি পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন। নিয়মে যেমন আদেশ করা হয়েছিল, তিনি রক্তের মধ্যে তার আঙ্গুল ডুবান এবং সিন্দুকটির ঢাকার উপর সাত বার রক্ত ছিটান। (লেবীয় পুস্তক ১৬:১৪) তারপর তিনি পুনরায় প্রাঙ্গণে ফিরে যান এবং একটি ছাগল বলি দেন, যেটি হল “লোকদের” জন্য পাপের বলিদান। তিনি কিছুটা ছাগলের রক্ত অতি পবিত্র স্থানে আনেন এবং ষাঁড়ের রক্ত দিয়ে যেমন করেছিলেন এটি দিয়েও ঠিক তেমন করেন। (লেবীয় পুস্তক ১৬:১৫) অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলিও প্রায়শ্চিত্তের দিনেই ঘটত। উদাহরণস্বরূপ, মহাযাজককে আর একটি ছাগলের মাথার উপরে হাত রেখে “ইস্রায়েল সন্তানগণের সমস্ত অপরাধ” এর জন্য পাপ স্বীকার করতে হত। এই জীবিত ছাগলটিকে তারপর প্রান্তরে নিয়ে যাওয়া হত রূপক অর্থে জাতিটির পাপ বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এইভাবে “যাজকগণের ও সমাজের সমস্ত লোকের জন্য” প্রতি বছর প্রায়শ্চিত্ত করা হত।—লেবীয় পুস্তক ১৬:১৬, ২১, ২২, ৩৩.
১৫. (ক) কিভাবে শলোমনের মন্দিরটি সমাগমতাম্বুর মতই ছিল? (খ) সমাগমতাম্বু ও মন্দির উভয় স্থানে সম্পাদিত পবিত্র পরিচর্যা সম্বন্ধে ইব্রীয়ের পুস্তকটি কী বলে?
১৫ ঈশ্বরের চুক্তিবদ্ধ লোক হিসাবে ইস্রায়েলের ইতিহাসের প্রথম ৪৮৬ বছর, অস্থায়ী সমাগমতাম্বু তাদের ঈশ্বর, যিহোবাকে উপাসনা করার স্থান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তারপর, ইস্রায়েলের শলোমনকে স্থায়ী কাঠামো নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। যদিও এই মন্দিরটি আরও বড় ও বেশি বিস্তৃত হওয়ার কথা ছিল, তবুও ঐশিকভাবে প্রদত্ত পরিকল্পনাটি সমাগমতাম্বুর নমুনা অনুসরণ করে। সমাগমতাম্বুর মত, এটি উপাসনার জন্য “মনুষ্যকর্ত্তৃক নয়” কিন্তু যিহোবা কর্তৃক “স্থাপিত হইয়াছে” এমন ব্যবস্থা যা বৃহত্তর, আরও বেশি কার্যকারী হিসাবে প্রদর্শিত হয়।—ইব্রীয় ৮:২, ৫; ৯:৯, ১১.
প্রথম এবং দ্বিতীয় মন্দির
১৬. (ক) মন্দির উৎসর্গ করার সময়ে শলোমন কী প্রেমপূর্ণ অনুরোধ করেছিলেন? (খ) কিভাবে যিহোবা দেখিয়েছিলেন যে তিনি শলোমনের প্রার্থনা গ্রহণ করেছিলেন?
১৬ সেই গৌরবময় মন্দিরটি উৎসর্গ করার সময়ে শলোমন এই অনুপ্রাণিত অনুরোধটি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন: ‘তোমার প্রজা ইস্রায়েলগোষ্ঠীয় নয়, এমন কোন বিদেশী লোক যখন তোমার মহানামের . . . উদ্দেশে দূর দেশ হইতে আসিবে, যখন তাহারা আসিয়া এই গৃহের অভিমুখে প্রার্থনা করিবে, তখন তুমি স্বর্গ হইতে তোমার নিবাস-স্থান হইতে তাহা শুনিও; এবং সেই বিদেশী লোক তোমার নিকটে যে কিছু প্রার্থনা করিবে, তদনুসারে করিও; যেন তোমার প্রজা ইস্রায়েলের ন্যায় পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতি তোমার নাম জ্ঞাত হয়, ও তোমাকে ভয় করে, এবং তাহারা যেন জানিতে পায় যে, আমার নির্ম্মিত এই গৃহের উপরে তোমারই নাম কীর্ত্তিত।” (২ বংশাবলি ৬:৩২, ৩৩) স্পষ্টতই, শলোমনের উৎসর্গীকরণ প্রার্থনা যে তিনি গ্রহণ করেছেন তা ঈশ্বর দেখিয়েছিলেন। আকাশ থেকে অগ্নি নেমে এসে বেদীর উপরে পশু বলিগুলিকে গ্রাস করে এবং মন্দিরটি যিহোবার গৌরবে পূর্ণ হয়ে যায়।—২ বংশাবলি ৭:১-৩.
১৭. শলোমনের দ্বারা নির্মিত মন্দিরের পরিশেষে কী ঘটেছিল এবং কেন?
১৭ কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার প্রতি তাদের স্বাস্থ্যকর ভয় হারায়। কালক্রমে, রক্তপাত, প্রতিমাপূজা, ব্যভিচার, অজাচার এবং অনাথ শিশু, বিধবা এবং বিদেশীদের প্রতি খারাপ ব্যবহার করার দ্বারা তারা তাঁর মহান নামকে কলঙ্কিত করেছিল। (যিহিষ্কেল ২২:২, ৩, ৭, ১১, ১২, ২৬, ২৯) তাই, সা.শ.পূ. ৬০৭ সালে, মন্দিরকে ধ্বংস করার জন্য বাবিলনীয় সৈন্যবাহিনীদের এনে ঈশ্বর বিচারদণ্ড দেন। যে সমস্ত ইস্রায়েলীয়রা জীবিত ছিল তাদের বাবিলনে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৮. দ্বিতীয় মন্দিরে কিছু ন-ইস্রায়েলীয় ব্যক্তিদের জন্য কোন্ সুযোগগুলি খুলে দেওয়া হয়েছিল যারা সম্পূর্ণচিত্তে যিহোবার উপাসনাকে সমর্থন করেছিল?
১৮ তারপর ৭০ বছর পরে, অবশিষ্টাংশ অনুতপ্ত যিহূদীরা যিরূশালেমে ফিরে আসে এবং যিহোবার মন্দির পুনর্নিমাণের সুযোগ পায়। আগ্রহের বিষয়, এই দ্বিতীয় মন্দিরে সেবা করার জন্য যাজক ও লেবীয়দের অভাব ছিল। ফলে, নথীনীয়বর্গ, যারা ন-ইস্রায়েলীয় মন্দিরের দাসেদের বংশধর ছিল, তাদের ঈশ্বরের গৃহে পরিচারক রূপে কাজ করার মহান সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তারা কখনও যাজক ও লেবীয়দের সমপর্যায়ভুক্ত হয়নি।—ইষ্রা ৭:২৪; ৮:১৭, ২০.
১৯. দ্বিতীয় মন্দিরটি সম্বন্ধে ঈশ্বর কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং কিভাবে এই কথাগুলি সত্য হয়েছিল?
১৯ প্রথমে মনে হয়েছিল যে পূর্বের মন্দিরের তুলনায় দ্বিতীয় মন্দিরটি কিছুই নয়। (হগয় ২:৩) কিন্তু যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত করিব; এবং সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল আসিবে; আর আমি এই গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করিব, . . . এই গৃহের পূর্ব্ব প্রতাপ অপেক্ষা উত্তর প্রতাপ গুরুতর হইবে।” (হগয় ২:৭, ৯) এই বাক্যগুলির সত্যতাস্বরূপ, দ্বিতীয় মন্দিরটি আরও বেশি প্রতাপ অর্জন করেছিল। এটি প্রথমটির তুলনায় ১৬৪ বছর বেশি স্থায়ী ছিল এবং বিভিন্ন দেশ থেকে বহু উপাসকেরা এর প্রাঙ্গণে একত্রিত হত। (তুলনা করুন প্রেরিত ২:৫-১১.) দ্বিতীয় মন্দিরের নবরূপদান করা শুরু হয়েছিল রাজা হেরোদের সময়ে আর এর প্রাঙ্গণগুলি বড় করা হয়েছিল। অতি বৃহদাকার এক পাথরের প্ল্যাটফর্মের উপর দণ্ডায়মান থাকায় এবং সুন্দর স্তম্ভশ্রেণীর দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায়, শলোমনের দ্বারা নির্মিত আদি মন্দিরের মহত্ত্বের কাছে এটি প্রতিদ্বন্দ্বীস্বরূপ ছিল। যিহোবাকে উপাসনা করতে চায় এমন জাতিগণের জন্য এটির একটি বড় বহিঃস্থ প্রাঙ্গণ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভিতরের প্রাঙ্গণকে যেটি কেবলমাত্র ইস্রায়েলদের জন্য সংরক্ষিত ছিল, সেটিকে একটি পাথরের প্রতিবন্ধক পরজাতিদের এই বিভাগটির থেকে পৃথক করে রাখত।
২০. (ক) কোন্ উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দ্বিতীয় মন্দিরটিতে ছিল? (খ) কী প্রদর্শন করেছিল যে যিহূদীরা ভুলভাবে মন্দিরটিকে দেখেছিল এবং এর প্রতিদানে যীশু কী করেছিলেন?
২০ ঈশ্বরের পুত্র, যীশু খ্রীষ্ট এর প্রাঙ্গণের মধ্যে শিক্ষা দেওয়ায় এই দ্বিতীয় মন্দিরটি বিরাট পার্থক্য উপভোগ করেছিল। কিন্তু প্রথম মন্দিরের মতই, যিহূদীদের সাধারণত ঈশ্বরের গৃহে তত্ত্বাবধায়ক হওয়ার তাদের সুযোগ সম্বন্ধে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না। কারণ তারা পরজাতীয়দের প্রাঙ্গণে ব্যবসা করার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুমতি দিয়েছিল। এছাড়া, যিরূশালেমের চতুর্দিকে জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত পথ হিসাবে মন্দিরটি ব্যবহার করতে লোকেদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর চার দিন আগে, যীশু মন্দির থেকে এইধরনের জাগতিক অভ্যাসগুলিকে দূর করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “ইহা কি লেখা নাই, ‘আমার গৃহকে সর্ব্বজাতির প্রার্থনা-গৃহ বলা যাইবে’? কিন্তু তোমরা ইহা ‘দস্যুগণের গহ্বর’ করিয়াছ।”—মার্ক ১১:১৫-১৭.
ঈশ্বর তাঁর পার্থিব গৃহকে চিরকালের জন্য পরিত্যাগ করেন
২১. যিরূশালেম মন্দির সম্পর্কে যীশু কী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন?
২১ ঈশ্বরের বিশুদ্ধ উপাসনার সমর্থনে যীশুর সাহসী কাজের জন্য যিহূদী নেতারা তাঁকে হত্যা করতে সংকল্পবদ্ধ হয়। (মার্ক ১১:১৮) শীঘ্রই তাঁকে হত্যা করা হবে জেনে, যীশু যিহূদী ধর্মীয় নেতাদের বলেছিলেন: “তোমাদের গৃহ তোমাদর নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল।” (মথি ২৩:৩৭, ৩৮) এর দ্বারা তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন যে শীঘ্রই ঈশ্বর যিরূশালেমের আক্ষরিক মন্দিরে কৃত এইধরনের উপাসনা আর গ্রহণ করবেন না। এটি আর “সর্ব্বজাতির প্রার্থনা-গৃহ” রূপে থাকবে না। যখন তাঁর শিষ্যেরা অত্যুৎকৃষ্ট মন্দিরটি সম্বন্ধে যীশুর কাছে উল্লেখ করে তখন তিনি বলেন: “তোমরা কি এই সকল দেখিতেছ না? . . . এই স্থানের একখানি পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকিবে না, সমস্তই ভূমিসাৎ হইবে।”—মথি ২৪:১, ২.
২২. (ক) মন্দির সম্পর্কে যীশুর কথাগুলি কিভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল? (খ) এক পার্থিব নগরের উপরে তাদের আশাকে কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে, প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা কিসের অন্বেষণ করেছিল?
২২ ৩৭ বছর পরে, সা.শ. ৭০ সালে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল, যখন রোমীয় সৈন্যেরা যিরূশালেম ও তার মন্দিরকে ধ্বংস করে। এটি যথাযথ প্রমাণ দিয়েছিল যে ঈশ্বর বাস্তবিকই তাঁর আক্ষরিক গৃহকে পরিত্যাগ করেছিলেন। যিরূশালেমে আর একটি মন্দির পুনর্নিমিত হবে বলে যীশু কখনও ভাববাণী করেননি। পার্থিব সেই নগরটি সম্বন্ধে ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের উদ্দেশ্যে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “এখানে আমাদের চিরস্থায়ী নগর নাই; কিন্তু আমরা সেই আগামী নগরের অন্বেষণ করিতেছি।” (ইব্রীয় ১৩:১৪) প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা “স্বর্গীয় যিরূশালেম” এর অংশ হওয়ার অপেক্ষায় ছিল—ঈশ্বরের নগরতুল্য রাজ্য। (ইব্রীয় ১২:২২) তাই, যিহোবার সত্য উপাসনা আর পৃথিবীতে কোন একটি আক্ষরিক মন্দিরে কেন্দ্রীভূত রইল না। যারা তাঁকে “আত্মায় ও সত্যে” উপাসনা করতে চায় তাদের জন্য তিনি যে সর্বোত্তম ব্যবস্থা রেখেছেন আমাদের পরবর্তী প্রবন্ধে সেই সম্বন্ধে আমরা আলোচনা করব।—যোহন ৪:২১, ২৪.
পুনরালোচনার প্রশ্নগুলি
◻ ঈশ্বরের সাথে কিধরনের সম্পর্ক আদম ও হবা হারিয়েছিল?
◻ সমাগমতাম্বুর বৈশিষ্ট্যগুলি কেন আমাদের কাছে আগ্রহের হওয়া উচিত?
◻ সমাগমতাম্বুর প্রাঙ্গণের কার্যাবলী থেকে আমরা কী শিক্ষা লাভ করি?
◻ ঈশ্বর তাঁর মন্দিরকে কেন ধ্বংস হতে অনুমতি দিয়েছিলেন?
[১০, ১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
হেরোদের দ্বারা মন্দির পুনর্নিমাণ করা হয়েছিল
১. অতি পবিত্র
২. পবিত্র
৩. হোমবলির বেদী
৪. গোলাকার সমুদ্রপাত্র
৫. যাজকদের প্রাঙ্গণ
৬. ইস্রায়েলের প্রাঙ্গণ
৭. স্ত্রীলোকেদের প্রাঙ্গণ