‘আপনারা সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র হও’
“যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, সেই পবিত্রতমের ন্যায় আপনারাও সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র হও; কেননা লেখা আছে, ‘তোমরা পবিত্র হইবে, কারণ আমি পবিত্র’।”—১ পিতর ১:১৫, ১৬.
১. কেন পিতর খ্রীষ্টানদের পবিত্র হতে আহ্বান করেছেন?
কেন প্রেরিত পিতর উপরোক্ত উপদেশটি দিয়েছিলেন? কারণ তিনি প্রত্যেক খ্রীষ্টানের পক্ষে, যিহোবার পবিত্রতার সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য তাদের চিন্তাধারা এবং কাজকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। এইজন্য, তিনি উপরের বাক্যগুলির পূর্বেই বলেছিলেন: “তোমরা আপন আপন মনের কটি বাঁধিয়া মিতাচারী হও, . . . আজ্ঞাবহতার সন্তান বলিয়া তোমরা তোমাদের পূর্ব্বকার অজ্ঞানতাকালের অভিলাষের অনুরূপ হইও না।”—১ পিতর ১:১৩, ১৪.
২. সত্য শেখার পূর্বে কেন আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলি অপবিত্র ছিল?
২ আমাদের পূর্বের আকাঙ্ক্ষাগুলি অপবিত্র ছিল। কেন? কারণ আমাদের মধ্যে অনেকেই খ্রীষ্টীয় সত্য গ্রহণ করার পূর্বে জাগতিক কার্যকলাপ অনুসরণ করত। পিতর এটি জানতেন যখন তিনি স্পষ্টত লিখেছিলেন: “পরজাতীয়দের বাসনা সাধন করিয়া, লম্পটতা, সুখাভিলাষ, মদ্যপান, রঙ্গরস পানার্থক সভা ও ঘৃণার্হ প্রতিমাপূজারূপ পথে চলিয়া যে কাল অতীত হইয়াছে, তাহাই যথেষ্ট।” অবশ্যই, পিতর আমাদের আধুনিক জগতের স্বাতন্ত্র্যসূচক অপবিত্র কাজগুলিকে তালিকাভুক্ত করেননি, যেহেতু তখন সেগুলি অজ্ঞাত ছিল।—১ পিতর ৪:৩, ৪.
৩, ৪. (ক) কিভাবে আমরা মিথ্যা আকাঙ্ক্ষাগুলিকে প্রতিরোধ করতে পারি? (খ) খ্রীষ্টানদের কি আবেগহীন হতে হবে? বর্ণনা করুন।
৩ আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে এইসকল আকাঙ্ক্ষাগুলি মাংস, অনুভূতি এবং আবেগকে স্পর্শ করে? যখন আমরা এগুলিকে আমাদের অধিকৃত করতে অনুমোদন করি তখন আমাদের চিন্তাধারা এবং কাজগুলি অতি সহজেই অপবিত্র হয়ে পড়ে। এটি চিত্তসঙ্গত বিষয় দ্বারা আমাদের কাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে প্রদর্শন করে। পৌল এটিকে এভাবে প্রকাশ করেছিলেন: “অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, ঈশ্বরের নানা করুণার অনুরোধে আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা।”—রোমীয় ১২:১, ২.
৪ ঈশ্বরের কাছে পবিত্র বলি উপস্থাপন করার জন্য আমাদের অবশ্যই আবেগকে নয়, কিন্তু চিত্তসঙ্গত বিষয়কে কর্তৃত্ব করতে দিতে হবে। কত জন অনৈতিকতায় জড়িত হয়ে পড়েছে কারণ তারা তাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের অনুভূতিকে অনুমতি দিয়েছিল! এর অর্থ এই নয় যে আমাদের আবেগকে দমন করতে হবে; অন্যথায়, আমরা যিহোবার পরিচর্যায় কিভাবে আনন্দ প্রকাশ করতে পারতাম? কিন্তু, যদি আমরা মাংসের কার্যের চেয়ে বরঞ্চ আত্মার ফল উৎপন্ন করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই খ্রীষ্টের চিন্তাধারা অনুযায়ী মনঃস্থির করতে হবে।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩; ফিলিপীয় ২:৫.
পবিত্র জীবন, পবিত্র মূল্য
৫. কেন পিতর পবিত্রতার প্রয়োজনীয়তার প্রতি সচেতন ছিলেন?
৫ কেন পিতর খ্রীষ্টীয় পবিত্রতার প্রয়োজনীয়তার প্রতি এত বেশি সচেতন ছিলেন? কারণ তিনি পবিত্র মূল্য সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন যা বাধ্য মানবজাতিকে উদ্ধার করার জন্য প্রদান করা হয়েছিল। তিনি লিখেছিলেন: “তোমরা ত জান, তোমাদের পিতৃপুরুষগণের সমর্পিত অলীক আচার ব্যবহার হইতে তোমরা ক্ষয়ণীয় বস্তু দ্বারা, রৌপ্য বা স্বর্ণ দ্বারা, মুক্ত হও নাই, কিন্তু নির্দ্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক মেষশাবকস্বরূপ খ্রীষ্টের বহুমূল্য রক্ত দ্বারা মুক্ত হইয়াছ।” (১ পিতর ১:১৮, ১৯) হ্যাঁ, পবিত্রতার উৎস, যিহোবা ঈশ্বর তাঁর একজাত পুত্র, “পবিত্র ব্যক্তি”-কে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন মুক্তির মূল্য দেওয়ার জন্য যেটি লোকেদের ঈশ্বরের সাথে এক উত্তম সম্পর্ক রাখতে অনুমোদন করেছে।—যোহন ৩:১৬; ৬:৬৯; যাত্রাপুস্তক ২৮:৩৬; মথি ২০:২৮.
৬. (ক) পবিত্র আচরণ বজায় রাখা কেন আমাদের জন্য সহজ নয়? (খ) আমাদের আচরণ পবিত্র রাখতে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
৬ যাইহোক, আমাদের শনাক্ত করতে হবে যে শয়তানের কলুষিত জগতের মধ্যে থেকে পবিত্র জীবনযাপন করা সহজ নয়। সে সেই সত্য খ্রীষ্টানদের জন্য ফাঁদ পাতে যারা তার এই বিধিব্যবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে। (ইফিষীয় ৬:১২; ১ তীমথিয় ৬:৯, ১০) জাগতিক চাকুরির চাপ, পারিবারিক বিরোধিতা, স্কুলে বিদ্রূপের সম্মুখীন হওয়া এবং সঙ্গীদের চাপ একজন ব্যক্তির জন্য পবিত্রতা বজায় রাখতে শক্তিশালী আধ্যাত্মিকতার প্রয়োজনীয়তা দাবি করে। এটি আমাদের ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে নিয়মিত উপস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দেয়। পৌল তীমথিয়কে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি আমার কাছে যাহা যাহা শুনিয়াছ, সেই নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাসে ও প্রেমে ধারণ কর।” (২ তীমথিয় ১:১৩) আমাদের কিংডম হলে সে সকল স্বাস্থ্যজনক বাক্য আমরা শুনি এবং আমাদের ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নে তা পড়ি। সেগুলি আমাদের প্রত্যহ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের আচরণে পবিত্র হতে সাহায্য করতে পারে।
পরিবারে পবিত্র আচরণ
৭. পবিত্রতা আমাদের পারিবারিক জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করে?
৭ যখন পিতর লেবীয় পুস্তক ১১:৪৪ পদ উদ্ধৃতি করেন, তিনি গ্রীক শব্দ হাজিওস ব্যবহার করেছিলেন যার অর্থ “পাপ থেকে পৃথক এবং এইজন্য ঈশ্বরের প্রতি উৎসর্গীকৃত, পবিত্র।” (ডব্লিউ. ই. ভাইন কর্তৃক অ্যান এক্সপোজিটরি ডিকশ্নারী অফ নিউ টেস্টামেন্ট) আমাদের খ্রীষ্টীয় পারিবারিক জীবনকে এটি কিভাবে প্রভাবিত করা উচিত? এটি অবশ্যই নিশ্চিতভাবে এই অর্থ করে যে আমাদের পারিবারিক জীবন প্রেমের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত কারণ “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) আত্ম-ত্যাগমূলক প্রেম হল সেই তেল যা বিবাহ সঙ্গী এবং পিতামাতা ও সন্তানদের মধ্যে সম্পর্ককে মসৃণ করে।—১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮; ইফিষীয় ৫:২৮, ২৯, ৩৩; ৬:৪; কলসীয় ৩:১৮, ২১.
৮, ৯. (ক) কিধরনের পরিস্থিতি কখনও কখনও এক খ্রীষ্টীয় গৃহে বৃদ্ধি পায়? (খ) এই বিষয়ে বাইবেল কোন্ গভীর পরার্মশ প্রদান করে?
৮ আমরা হয়ত চিন্তা করতে পারি যে খ্রীষ্টীয় পরিবারে এইধরনের প্রেমের প্রকাশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে। তবুও, এটি স্বীকার করতে হয় যে কিছু খ্রীষ্টীয় গৃহে প্রেম সবসময় ততখানি ব্যাপকমাত্রায় বিরাজমান নয় যতখানি হওয়া উচিত। কিংডম হলে হয়ত তা করতে দেখা যায়, কিন্তু গৃহ পরিবেশের মধ্যে কত সহজেই আমাদের পবিত্রতা কমে যেতে পারে। তখন আমরা হয়ত অকস্মাৎ ভুলে যাই যে স্ত্রী এখনও আমাদের খ্রীষ্টীয় বোন অথবা স্বামী এখনও সেই একই ভাই (আর সম্ভবত একজন পরিচারক দাস অথবা একজন প্রাচীন) যাকে কিংডম হলে সম্মানিত হতে দেখা গিয়েছিল। স্নায়ুগুলি উত্তেজিত হয় এবং উত্তপ্ত তর্কগুলি বৃদ্ধি পেতে পারে। দ্বৈত বৈশিষ্ট্য আমাদের জীবনে এমনকি নিঃশব্দে প্রবেশ করতে পারে। তখন এটি আর খ্রীষ্টতুল্য স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্ক থাকে না, বরং কলহপূর্ণ একজন পুরুষ এবং নারীতে পরিণত হয়। তারা ভুলে যায় যে গৃহের মধ্যে পবিত্র পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া থাকা উচিত। সম্ভবত তারা জাগতিক লোকেদের মত কথা বলতে শুরু করে। কত সহজেই না এক অশ্লীল, তীব্র ব্যঙ্গপূর্ণ মন্তব্য মুখ থেকে বের হতে পারে!—হিতোপদেশ ১২:১৮; তুলনা করুন প্রেরিত ১৫:৩৭-৩৯.
৯ যাইহোক, পৌল পরামর্শ দেন: “তোমাদের মুখ হইতে কোন প্রকার কদালাপ [গ্রীক, লোগস্ স্যাপ্রোস, “নোংরা কথা,” অর্থাৎ অপবিত্র] বাহির না হউক, কিন্তু প্রয়োজনমতে গাঁথিয়া তুলিবার জন্য সদালাপ বাহির হউক, যেন যাহারা শুনে, তাহাদিগকে অনুগ্রহ দান করা হয়।” আর এটি গৃহের সকল শ্রোতাদের প্রতি নির্দেশ করে যার অন্তর্ভুক্ত সন্তানেরাও।—ইফিষীয় ৪:২৯; যাকোব ৩:৮-১০.
১০. পবিত্রতার উপর পরার্মশ কিভাবে সন্তানদের উপর প্রযোজ্য হয়?
১০ এছাড়া পবিত্রতার উপর এই নির্দেশনা খ্রীষ্টীয় পরিবারের সন্তানদের প্রতিও সমানভাবে প্রযোজ্য। স্কুল থেকে গৃহে ফিরে এসে তাদের জাগতিক সঙ্গীদের বিদ্রোহী এবং অসম্মানজনক কথাবার্তা অনুকরণ করতে শুরু করা তাদের জন্য কত সহজ! সন্তানেরা, সেই অমার্জিত ছেলেদের প্রদর্শিত মনোভাব দ্বারা আর্কষিত হয়ো না যারা যিহোবার ভাববাদীকে অপমান করেছিল এবং বর্তমানে যারা তাদের মত নোংরা ভাষা ব্যবহারকারী, ঈশ্বরনিন্দাপূর্ণ ব্যক্তির সদৃশ। (২ রাজাবলি ২:২৩, ২৪) তোমাদের কথাবার্তা অমার্জিত খারাপ ভাষা ব্যবহারকারী সেই লোকেদের যারা উপযুক্ত বাক্য ব্যবহারের প্রতি যথেষ্ট শ্রমবিমুখ অথবা অবিবেচক, তাদের দ্বারা কলুষিত হওয়া উচিত নয়। খ্রীষ্টান হিসাবে, আমাদের কথাবার্তা পবিত্র, মনোরম, গঠনমূলক, সদয় এবং “লবণে আস্বাদযুক্ত” হওয়া উচিত। এটি আমাদের অন্য লোকেদের থেকে পৃথক করবে।—কলসীয় ৩:৮-১০; ৪:৬.
পবিত্রতা এবং আমাদের অবিশ্বাসী পারিবারিক সদস্যেরা
১১. কেন পবিত্র হওয়ার অর্থ আত্ম-ধার্মিক হওয়া নয়?
১১ যখন আমরা বিবেক-বুদ্ধিপূর্ণভাবে পবিত্রতা অনুশীলন করতে চেষ্টা করি, আমাদের উচ্চতর এবং আত্ম-ধার্মিক মনোভাব দেখান উচিত নয়, বিশেষ করে অবিশ্বাসী পারিবারিক সদস্যদের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে। আমাদের সদয় খ্রীষ্টীয় আচরণ অন্তত তাদের যেন বুঝতে সাহায্য করে যে আমরা ইতিবাচকভাবে পৃথক এবং আমরা জানি কিভাবে প্রেম এবং সহানুভূতি দেখাতে হয়, এমনকি যেমন যীশুর দৃষ্টান্তে উত্তম শমরিয় করেছিলেন।—লূক ১০:৩০-৩৭.
১২. কিভাবে খ্রীষ্টীয় বিবাহসঙ্গীরা সত্যকে তাদের সাথীর কাছে আরও হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে পারে?
১২ পিতর আমাদের অবিশ্বাসী পারিবারিক সদস্যদের প্রতি যথাযথ মনোভাব রাখার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন যখন তিনি খ্রীষ্টীয় স্ত্রীদের উদ্দেশ্য লিখেছিলেন: “তদ্রূপ, হে ভার্য্যা সকল, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।” একজন খ্রীষ্টীয় স্ত্রীর (অথবা স্বামীর এইক্ষেত্রে) আচরণ যদি বিশুদ্ধ, সুবিবেচক এবং সম্মানজনক হয় তাহলে সে একজন অবিশ্বাসী সাথীর কাছে সত্যকে আরও হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে পারে। এর অর্থ হল ঐশিক তালিকায় নমনীয়তা রাখা উচিত যাতে অবিশ্বাসী বিবাহ সঙ্গী উপেক্ষিত অথবা তুচ্ছিকৃত না হয়।a—১ পিতর ৩:১, ২.
১৩. কিভাবে প্রাচীন এবং পরিচারক দাসেরা কখনও কখনও অবিশ্বাসী স্বামীদের সত্যের প্রতি উপলব্ধি আনতে সাহায্য করতে পারে?
১৩ কখনও কখনও প্রাচীন এবং পরিচারক দাসেরা সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে অবিশ্বাসী স্বামীর সাথে পরিচিত হয়ে তাদের সাহায্য করতে পারেন। এইভাবে তিনি হয়ত উপলব্ধি করতে পারবেন যে সাক্ষীরা স্বাভাবিক, ভদ্র লোক যাদের বাইবেল ছাড়া অন্যান্য বিষয়েও এক ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। একটি ক্ষেত্রে, একজন প্রাচীন এক স্বামীর মাছ ধরার সখের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। প্রাথমিক বাধাটুকু অতিক্রম ও বন্ধুত্ব শুরু করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। পরিশেষে ঐ স্বামী এক বাপ্তাইজিত ভাই হয়েছিলেন। আরেকটি ক্ষেত্রে, একজন অবিশ্বাসী স্বামী ক্যান্যারী পাখিদের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। এক্ষেত্রেও প্রাচীনেরা পরাজিত হননি। তাদের মধ্যে একজন এই বিষয়ে অধ্যয়ন করেন, ফলে পরবর্তী সময়ে যখন তিনি ঐ স্বামীর সাথে মিলিত হন তখন তার প্রিয় বিষয়টি নিয়ে কথোপকথন শুরু করতে পেরেছিলেন! সুতরাং, পবিত্র হওয়ার অর্থ সংরক্ষণশীল অথবা সংকীর্ণচিত্ত হওয়া নয়।—১ করিন্থীয় ৯:২০-২৩.
মণ্ডলীতে কিভাবে আমরা পবিত্র হতে পারি?
১৪. (ক) মণ্ডলীকে দুর্বল করতে শয়তানের একটি পন্থা কী? (খ) কিভাবে আমরা শয়তানের ফাঁদকে প্রতিরোধ করতে পারি?
১৪ শয়তান দিয়াবল একজন অপবাদক কারণ দিয়াবলের জন্য ব্যবহৃত গ্রীক নামটি হল ডাইয়াবোলস্, যার অর্থ “অভিযোগকারী” অথবা “অপবাদক।” অপবাদ দেওয়া তার একটি বিশেষত্ব এবং এটি সে মণ্ডলীতে প্রয়োগ করার চেষ্টা করে। তার প্রিয় পদ্ধতি হল গুজব রটানো। আমরা কি এই অপবিত্র আচরণের মাধ্যমে নিজেকে তার দ্বারা প্রতারিত ব্যক্তিতে পরিণত হতে অনুমতি দিই? কিভাবে তা হতে পারে? এটি প্রবর্তন করার দ্বারা, এর পুনরাবৃত্তি করার দ্বারা অথবা এটি শোনার দ্বারা। বিজ্ঞ প্রবাদ জানায়: “কুটিল ব্যক্তি বিবাদ খুলিয়া দেয়, পরীবাদক মিত্রভেদ জন্মায়।” (হিতোপদেশ ১৬:২৮) গুজব রটানো এবং অপবাদ দেওয়ার প্রতিষেধক কী? আমাদের নিশ্চিত থাকা উচিত যে আমাদের বাক্য যেন সবসময় গঠনমূলক এবং প্রেমের উপর ভিত্তি করে হয়। আমরা যদি আমাদের ভাইয়েদের সম্ভাব্য দোষগুলির চেয়ে নৈতিক গুণগুলির অনুসন্ধান করি, তাহলে আমাদের কথোপকথন সবসময় মনোরম এবং আধ্যাত্মিক হবে। মনে রাখবেন সমালোচনা করা সহজ। আর যে ব্যক্তি অন্যদের সম্বন্ধে আপনার কাছে গুজব রটায় সে হয়ত অন্যদের কাছে আপনার সম্বন্ধেও গুজব রটাতে পারে!—১ তীমথিয় ৫:১৩; তীত ২:৩.
১৫. খ্রীষ্টতুল্য কোন্ গুণাবলিগুলি মণ্ডলীর সকলকে পবিত্র থাকতে সাহায্য করবে?
১৫ মণ্ডলীকে পবিত্র রাখতে হলে আমাদের সকলের খ্রীষ্টের মন থাকা প্রয়োজন এবং আমরা জানি যে তাঁর বিশিষ্টতম গুণ হল প্রেম। সেই কারণে, পৌল কলসীয়দের খ্রীষ্টের ন্যায় করুণাপূর্ণ হতে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা, ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের, পবিত্র ও প্রিয় লোকদের, উপযোগী মতে করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। . . . পরস্পর ক্ষমা কর; . . . এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।” পরে তিনি আরও বলেন: “আর খ্রীষ্টের শান্তি তোমাদের হৃদয়ে কর্ত্তৃত্ব করুক।” নিশ্চিতরূপে এই ক্ষমাশীল মনোভাবের মাধ্যমে আমরা মণ্ডলীতে একতা এবং পবিত্রতা রক্ষা করতে পারি।—কলসীয় ৩:১২-১৫.
আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি কি আমাদের পবিত্রতা দেখা যায়?
১৬. আমাদের পবিত্র উপাসনা কেন সুখী উপাসনা হওয়া উচিত?
১৬ আমাদের প্রতিবেশীদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তারা আমাদের কিভাবে মূল্যায়ন করে? আমরা কি সত্যের আনন্দকে বিচ্ছুরিত করছি অথবা এটিকে আমরা এমনভাবে দেখিয়ে থাকি যেন এটি একটি বোঝাস্বরূপ? যদি আমরা পবিত্র হই ঠিক যেমন যিহোবা পবিত্র, তাহলে সেটি আমাদের কথাবার্তা এবং আচরণে স্পষ্ট প্রতীয়মান হওয়া উচিত। এটি পরিষ্কার হওয়া উচিত যে আমাদের পবিত্র উপাসনা সুখী উপাসনা। তা কেন? কারণ আমাদের ঈশ্বর, যিহোবা একজন সুখী ঈশ্বর যিনি চান তাঁর উপাসনাকারীরা আনন্দপূর্ণ হোক। এইজন্য, গীতরচক যিহোবার প্রাচীনকালের লোকেদের সম্বন্ধে বলতে পেরেছিলেন: “সুখী সেই লোকেরা, যিহোবা যাদের ঈশ্বর!” আমরা কি সেই সুখকে প্রতিফলিত করি? আমাদের সন্তানেরাও কি কিংডম হলে এবং অধিবেশনগুলিতে যিহোবার লোকেদের মধ্যে থাকার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করে?—গীতসংহিতা ৮৯:১৫, ১৬; ১৪৪:১৫খ, NW.
১৭. ভারসাম্যপূর্ণ পবিত্রতা দেখাতে আমরা ব্যবহারিক দিক দিয়ে কী করতে পারি?
১৭ এছাড়াও আমরা আমাদের সহযোগী মনোভাব এবং প্রতিবেশীসুলভ দয়ার মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ পবিত্রতা দেখাতে পারি। সম্ভবত প্রতিবেশী এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে অথবা যেমন কিছু দেশে, সড়ক এবং রাজপথের উন্নতিবিধান করতে কখনও কখনও প্রতিবেশীদের সকলে একসাথে সহযোগিতা করার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে, আমরা আমাদের বাগান, উঠান অথবা অন্যান্য সম্পত্তির কিভাবে যত্ন নিই তা থেকে আমাদের পবিত্রতা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হতে পারে। যদি আমরা চারিদিকে আবর্জনা ফেলে রাখি অথবা অপরিচ্ছন্ন বা অপরিপাটী উঠান রাখি, এমনকি হয়ত পুরনো নষ্ট হয়ে যাওয়া যানবাহন যদি এমন জায়গায় রাখা হয় যা সকলে দেখতে পায়, তাহলে আমরা কি বলতে পারি যে আমরা আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি সম্মানের সাথে আচরণ করছি?—প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮.
কর্মক্ষেত্রে এবং স্কুলে পবিত্রতা
১৮. (ক) বর্তমানে খ্রীষ্টানদের জন্য এক বিপদজনক অবস্থা কী? (খ) কিভাবে আমরা জগৎ থেকে পৃথক হতে পারি?
১৮ প্রেরিত পৌল অপবিত্র নগরী করিন্থের খ্রীষ্টানদের উদ্দেশ্য লিখেছিলেন: “আমি আমার পত্রে তোমাদিগকে লিখিয়াছিলাম যে, ব্যভিচারীদের সংসর্গে থাকিতে নাই; এই জগতের ব্যভিচারী কি লোভী কি পরধনগ্রাহী কি প্রতিমাপূজকদের সংসর্গ একেবারে ছাড়িতে হইবে, তাহা নয়, কেননা তাহা হইলে সুতরাং জগতের বাহিরে যাওয়া তোমাদের আবশ্যক হইয়া পড়ে।” (১ করিন্থীয় ৫:৯, ১০) এটি খ্রীষ্টানদের জন্য এক বিপদজনক অবস্থা যাদের প্রতিদিনই অসৎ অথবা অনৈতিক লোকেদের সাথে মিলিত হতে হয়। এটি বিশ্বস্ততার একটি বৃহৎ পরীক্ষা, বিশেষ করে সেই সকল সংস্কৃতিতে যেখানে যৌন হয়রানি, দুর্নীতি এবং অসাধুতাকে উৎসাহিত অথবা মার্জনা করা হয়। এই ক্ষেত্রগুলিতে, আমাদের মানকে আমরা নিচে নামাতে পারি না যাতে করে আমাদের চারপাশের ব্যক্তিদের কাছে “স্বাভাবিক” মনে হয়। বরঞ্চ, আমাদের সদয় অথচ স্বতন্ত্র খ্রীষ্টীয় আচরণ আমাদের বিশিষ্ট করবে সেই লোকেদের নির্ণয় করতে, যারা আধ্যাত্মিক চাহিদা উপলব্ধি করে এবং উত্তম কিছুর অনুসন্ধান করে।—মথি ৫:৩; ১ পিতর ৩:১৬, ১৭.
১৯. (ক) সন্তানেরা স্কুলে তোমাদের কোন্ পরীক্ষাগুলি রয়েছে? (খ) পিতামাতারা সন্তানদের এবং তাদের পবিত্র আচরণকে সমর্থন করতে কী করতে পারেন?
১৯ একইভাবে, আমাদের সন্তানেরা স্কুলে অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছে। পিতামাতারা, আপনাদের সন্তানদের স্কুলে কি আপনারা সাক্ষাৎ করতে যান? আপনি কি জানেন কিধরনের পারিপার্শ্বিকতা সেখানে বিরাজ করে? আপনার কি শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে? কেন এই প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ? কারণ পৃথিবীর অনেক শহর এলাকায় স্কুলগুলি দৌরাত্ম্য, মাদকদ্রব্য এবং যৌনতার অরণ্যে পরিণত হয়েছে। আপনার সন্তানেরা কিভাবে তাদের বিশ্বস্ততা এবং আচরণ পবিত্র রাখবে যদি তারা তাদের পিতামাতার কাছ থেকে সম্পূর্ণ সহানুভূতিপূর্ণ সমর্থন না পায়? সঠিকভাবেই পৌল পিতামাতাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, পাছে তাহাদের মনোভঙ্গ হয়।” (কলসীয় ৩:২১) সন্তানদের ক্রুদ্ধ করার একটি বিষয় হল তাদের প্রত্যেকদিনের সমস্যা এবং পরীক্ষাগুলি বুঝতে ব্যর্থ হওয়া। স্কুলের প্রলোভনগুলির জন্য প্রস্তুত হওয়া খ্রীষ্টীয় গৃহের আধ্যাত্মিক পরিস্থিতির মধ্যে থেকে শুরু হয়।—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬-৯; হিতোপদেশ ২২:৬.
২০. আমাদের সকলের জন্য কেন পবিত্রতা অপরিহার্য?
২০ উপসংহারে বলা যায়, আমাদের সকলের জন্য কেন পবিত্রতা অপরিহার্য? কারণ এটি শয়তানের জগৎ এবং চিন্তাধারার আক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসাবে কাজ করে। এটি বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এটি আমাদের ধার্মিকতার নতুন জগতে যে বাস্তব জীবন হবে তার নিশ্চয়তা পেতে সাহায্য করে। এটি আমাদের নির্মম রক্ষণশীল নয়—ভারসাম্যপূর্ণ, অভিগম্য, সদালাপী খ্রীষ্টান হতে সাহায্য করে। সংক্ষেপে, এটি আমাদের খ্রীষ্টতুল্য করে গড়ে তোলে।—১ তীমথিয় ৬:১৯.
[পাদটীকাগুলো]
a অবিশ্বাসী সঙ্গীদের সাথে সুবুদ্ধিসম্পন্ন সম্পর্কের উপর আরও তথ্যের জন্য আগস্ট ১৫, ১৯৯০, প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), এর “আপনার সঙ্গীকে অবহেলা করবেন না!” নামক প্রবন্ধটির পৃষ্ঠা ২০-২ এবং নভেম্বর ১, ১৯৮৮, পৃষ্ঠা ২৪-৫, অনুচ্ছেদ ২০-২ দেখুন।
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
◻ কেন পিতর পবিত্রতার উপর খ্রীষ্টানদের পরার্মশ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছিলেন?
◻ পবিত্র জীবন যাপন করা কেন সহজ নয়?
◻ পরিবারে পবিত্রতার উন্নতি বিধান করতে আমরা সকলে কী করতে পারি?
◻ মণ্ডলীকে পবিত্র রাখতে হলে, আমাদের কোন্ অপবিত্র আচরণ এড়িয়ে চলা উচিত?
◻ কিভাবে আমরা কর্মক্ষেত্রে এবং স্কুলে পবিত্র থাকতে পারি?
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার সাক্ষী হিসাবে, ঈশ্বরের সেবায় এবং অন্যান্য কাজে আমাদের আনন্দিত হওয়া উচিত