“ঈশ্বরের মন্দির” এবং গ্রীসের প্রতিমাগুলি উভয়ের মধ্যে চুক্তি?
অত্যন্ত উষ্ণ গ্রীষ্মকালের এই দিনে, সূর্য চকচকে পাথরগুলির উপরে তাপসহ কিরণ দেয়। কিন্তু, প্রখর উত্তাপ ধর্মপ্রাণ গ্রীক অর্থোডক্স তীর্থযাত্রীদের যারা পাহাড়ের চূড়াতে অবস্থিত চ্যাপেলের দিকে এগিয়ে যায় তাদের উদ্দীপনা ও দৃঢ়সংকল্পকে দমাতে পারেনি বলে মনে হয়।
আপনি একজন পরিশ্রান্ত বৃদ্ধ মহিলাকে দেখতে পারেন, যিনি দেশের অপর প্রান্ত থেকে ভ্রমণ করে এসেছেন, তার ক্লান্ত পা দুটিকে চালাতে কঠোরভাবে চেষ্টা করে চলেছেন। অল্প কিছু দূর উপরেই একজন ঐকান্তিক আগ্রহী ব্যক্তি, প্রচণ্ডভাবে ঘামছেন কারণ তিনি উদ্বেগের সাথে ভিড় ঠেলে তার রাস্তা তৈরি করার চেষ্টা করছেন। আর এক তরুণী, ব্যথা এবং মুখে হতাশার অভিব্যক্তি নিয়ে, তার মারাত্মক রক্তাক্ত হাঁটুতে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চলেছে। এদের লক্ষ্য কী? বিখ্যাত “সাধু”-র প্রতিমূর্তির কাছে সঠিক সময়ে পৌঁছান তার সম্মুখে প্রার্থনা করা এবং যদি সম্ভব হয়, তবে সেই প্রতিমূর্তি স্পর্শ ও চুম্বন করা।
সারা বিশ্বে “সাধুদের” উদ্দেশ্যে গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শনে উৎসর্গীকৃত স্থানগুলিতে এর অনুরূপ দৃশ্যগুলি বার বার দেখা যায়। স্পষ্টতই, এই তীর্থযাত্রীদের সকলেই বিশ্বাস করে যে এই উপায়ে তারা তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য যে ঈশ্বরের পথ সেটি অনুসরণ করছে আর এইভাবে তাদের ভক্তি ও বিশ্বাস প্রকাশ করছে। আমাদের গোঁড়া খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস (ইংরাজি) বইটি জানায়: “আমরা স্মৃতিরক্ষার্থে [“সাধুদের”] অনুষ্ঠান করি এবং তাদের পবিত্র ব্যক্তিত্বের প্রতি গৌরব ও সম্মান প্রদর্শন করি . . ., আর আমরা আমাদের নিমিত্তে ঈশ্বরের কাছে তাদের মাধ্যমে প্রার্থনাগুলি এবং আমাদের জীবনের অনেক প্রয়োজনগুলিতে সাহায্যের জন্য বিনতি সকল যাঞ্চা করে থাকি। . . . আমাদের আধ্যাত্মিক ও দৈহিক প্রয়োজনগুলির জন্য . . . আমরা আশ্চর্যকাজ-সাধনকারী সাধুদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করি।” এছাড়াও, রোমান ক্যাথলিক গির্জার যাজকীয় বিচারসভার ব্যবস্থাগুলি অনুসারে, “সাধুরা” মধ্যস্থ হিসাবে ঈশ্বরের কাছে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করেন আর সেই কারণে “সাধুদের” পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন ও মূর্তি উভয়ই গভীররূপে শ্রদ্ধা করতে হবে।
একজন প্রকৃত খ্রীষ্টানের জন্য “আত্মায় ও সত্যে” ঈশ্বরের উপাসনা করা প্রধান আগ্রহের বিষয় হওয়া উচিত। (যোহন ৪:২৪) এই কারণে আসুন আমরা সেই পথ সম্বন্ধে কিছু তথ্য বিবেচনা করি যার দ্বারা খ্রীষ্টীয় জগতের ধর্মীয় অভ্যাসগুলির অংশ হিসাবে “সাধুদের” প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন প্রবর্তিত হয়েছে। এইরূপ একটি পরীক্ষা যারা তাঁর গ্রহণযোগ্য উপায়ে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে আকাঙ্ক্ষী তাদের সকলের জন্য অত্যন্ত জ্ঞানালোকস্বরূপ হওয়া উচিত।
কিভাবে “সাধুরা” গৃহীত হয়েছিল
খ্রীষ্টীয় গ্রীক শাস্ত্রাবলী সমস্ত প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের যারা খ্রীষ্টের রক্তের মাধ্যমে পরিষ্কৃত হয়েছিল এবং যারা খ্রীষ্টের সাথে প্রত্যাশিত সহদায়াদ হিসাবে ঈশ্বরের পরিচর্যা করার জন্য পৃথক ছিল তাদের “পবিত্র লোক” অথবা “সাধুগণ” হিসাবে আখ্যা দেয়। (প্রেরিত ৯:৩২; ২ করিন্থীয় ১:১; ১৩:১৩)a মণ্ডলীতে পুরুষ ও স্ত্রীলোক, বিশিষ্ট এবং সাধারণ সকলকে পৃথিবীতে জীবিত থাকাকালে “পবিত্র লোক” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। শাস্ত্রীয়ভাবে সাধু হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য স্পষ্টতই তাদের মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত না।
কিন্তু, সা.শ. দ্বিতীয় শতাব্দীর পর, যখন ধর্মভ্রষ্ট খ্রীষ্টতত্ত্ব গঠিত হচ্ছিল, তখন খ্রীষ্টতত্ত্বকে জনপ্রিয় করার চেষ্টার প্রতি প্রবণতা দেখা গিয়েছিল, এমন এক ধর্ম যা পৌত্তলিক লোকেদের কাছে আকর্ষণীয় এবং তাদের কাছে সহজেই গ্রহণযোগ্য হবে। এই সব পৌত্তলিকেরা একাধিক দেবতাদের উপাসনা করত আর এই নতুন ধর্মটি ছিল দৃঢ়রূপে একেশ্বরবাদী। তাই “সাধুদের” গ্রহণের মাধ্যমে একটি সমঝোতা সম্ভবপর হবে, যারা প্রাচীন দেবতাদের, উপদেবতাদের এবং পৌরাণিক নায়কদের স্থান গ্রহণ করবে। এর উপর মন্তব্য করে, ইকলিসিয়েস্টিকি ইস্টোরিয়া (গির্জা-সংক্রান্ত ইতিহাস) জানায়: “যারা পৌত্তলিকতা থেকে খ্রীষ্টতত্ত্বে ধর্মান্তরিত হয়েছিল, তাদের পক্ষে শহীদদের সাথে তাদের পরিত্যক্ত নায়কদের স্বীকার করা এবং পূর্বে প্রাক্তন ব্যক্তিদের যেমন করেছিল তেমনি তাদের সম্মান করতে শুরু করা সহজ ছিল। . . . কিন্তু, সাধুদের প্রতি এইরূপ সম্মান প্রদর্শন প্রায়ই বিশুদ্ধ প্রতিমাপূজায় পরিণত হত।”
অন্য একটি তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে যে কিভাবে “সাধুরা” খ্রীষ্টীয় জগতে পরিচিত হয়েছিল: “গ্রীক অর্থোডক্স গির্জার সাধুদের সম্মান প্রদর্শনে, পৌত্তলিক ধর্মের যে জোরাল প্রভাব ছিল তার স্পষ্ট সাক্ষ্যগুলি আমরা খুঁজে পাই। [লোকেরা] খ্রীষ্টতত্ত্বে ধর্মান্তরিত হওয়ার পূর্বে যে গুণাবলি অলিম্পিয়ান দেবতাদের অঙ্গ হিসাবে গণ্য করা হত তা এখন সাধুদের উপর আরোপ করা হয়। . . . নতুন ধর্মের প্রাথমিক বছরগুলি থেকে, আমরা দেখতে পাই যে এর অনুগামীরা সূর্য-দেবতাকে (ফীব্যাস্ অ্যাপলো) ভাববাদী এলিয়তে প্রতিস্থাপিত করে, এই দেবতাদের প্রাচীন মন্দির অথবা তীর্থ স্থানগুলির ধ্বংসাবশেষে অথবা তার পাশাপাশি গির্জাগুলি নির্মাণ করে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাহাড় ও উঁচু পর্বতগুলির চূড়ায় আর সেই সমস্ত স্থানে যেখানে প্রাচীন গ্রীকরা আলোক-দাতা ফীব্যাস্ অ্যাপলোকে সম্মান করত। . . . তারা এমনকি কুমারী-দেবী অ্যাথিনাকে স্বয়ং কুমারী মরিয়ম হিসাবে চিহ্নিত করত। ফলে, শূন্যতা যা অ্যাথিনার মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার সময়ে সৃষ্টি হয়েছিল তা ধর্মান্তরিত প্রতিমাপূজকদের প্রাণের মধ্যে কোন প্রভাব ফেলেনি।”—নিওটেরন ইংগিক্লোপেডিকন লেক্সিকন (নিউ এনসাইক্লোপিডিক ডিক্সনারী), খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৭০-১.
উদাহরণস্বরূপ, সা.শ. চতুর্থ শতাব্দীর প্রায় শেষভাগে এথেন্সে বিদ্যমান পরিস্থিতিটি পরীক্ষা করুন। সেই শহরের অধিবাসীদের অধিকাংশই তখনও পৌত্তলিক ছিল। তাদের সর্বাপেক্ষা পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি ছিল ইলিউসিনিয়ান গুপ্ত ধর্মীয় পর্ব, দুই ভাগে বিভক্ত অনুষ্ঠান,b এথেন্সের ২৩ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে অবস্থিত, ইলিউসিসের শহরে ফেব্রুয়ারিতে বাৎসরিকভাবে অনুষ্ঠিত হত। এই গুপ্ত ধর্মীয় পর্বগুলিতে উপস্থিত থাকার জন্য, পৌত্তলিক এথেন্সবাসীদের পবিত্র উপায় (হিয়েরা হোডস্) অনুসরণ করতে হত। উপাসনার একটি বিকল্প স্থান সরবরাহের প্রচেষ্টায়, শহরের নেতারা বিজ্ঞ প্রমাণিত হন। পৌত্তলিকদের আকর্ষণ করতে এবং গুপ্ত ধর্মীয় পর্বে যোগ দেওয়া রোধ করতে, এথেন্স থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে, একই রাস্তার উপরে ড্যাফ্নি মঠ নির্মাণ করা হয়েছিল। মঠের গির্জাটি গ্রীক দেবতা ড্যাফনাইয়স্ অথবা পিথিয়স্ অ্যাপলোর প্রতি উৎসর্গীকৃত প্রাচীন মন্দিরের ভিত্তির উপর নির্মিত হয়েছিল।
“সাধুদের” গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মধ্যে পৌত্তলিক দেবদেবীদের সংযুক্ত করার প্রমাণ গ্রীসের, কিথিরার দ্বীপে পাওয়া যেতে পারে। দ্বীপের চূড়াগুলির একটির উপর, দুটি ছোট বাইজেনটাইন চ্যাপেল আছে—তাদের মধ্যে একটি “সাধু” জর্জের, অন্যটি কুমারী মরিয়মের প্রতি উৎসর্গীকৃত। খনন করা এলাকাগুলি প্রকাশ করে যে এটি মিনোয়ান চূড়ার একটি তীর্থস্থানের নির্ধারিত জায়গা ছিল যা প্রায় ৩,৫০০ বছর পূর্বে উপাসনার স্থান হিসাবে ব্যবহৃত হত। সা.শ. ষষ্ঠ অথবা সপ্তম শতাব্দীতে, “খ্রীষ্টানেরা” “সাধু” জর্জের জন্য চূড়ার তীর্থস্থানের ঠিক সেই জায়গাটিতেই তাদের চ্যাপেল নির্মাণ করেছিল। এই পদক্ষেপ লক্ষ্যণীয়ভাবে প্রতীকাত্মক ছিল; মিনোয়ান ধর্মের সেই উন্নত কেন্দ্র ইজিয়েন সমুদ্রের সামুদ্রিক গমনপথ নিয়ন্ত্রণ করত। কুমারী মরিয়ম ও “সাধু” জর্জের অনুগ্রহ সুরক্ষিত করতে সেখানে দুটি গির্জা নির্মাণ করা হয়েছিল, এর মধ্যে দ্বিতীয়টি একই দিনে “নাবিকদের রক্ষক,” “সাধু” নিকোলাসের উদ্দেশ্যে উদ্যাপিত হয়েছিল। এই আবিষ্কারের উপর বিবরণ পেশকারী একটি সংবাদপত্র বলেছিল: ধর্মীয় পরিচর্যা সম্পন্ন করার জন্য “আজকে [গ্রীক অর্থোডক্স] যাজক পর্বতে আরোহণ করবে, ঠিক যেমন প্রাচীনকালে মিনোয়ান যাজক করত!”
পৌত্তলিক গ্রীক ধর্ম দ্বারা ধর্মভ্রষ্ট খ্রীষ্টতত্ত্ব যতদূর প্রভাবিত হয়েছিল তা পর্যালোচনা করে এক ঐতিহাসিক গবেষিকা বলেন: “খ্রীষ্টীয় ধর্মের পৌত্তলিক ভিত্তি প্রায়ই জনপ্রিয় বিশ্বাসগুলিতে অপরিবর্তিত রয়েছে, আর এইভাবে তা পরম্পরাগত রীতিগুলির ধৈর্যশীল বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ দিচ্ছে।”
“আমরা যাহা জানি, তাহার ভজনা করিতেছি”
যীশু শমরীয়া স্ত্রীলোকটিকে বলেছিলেন: “আমরা যাহা জানি, তাহার ভজনা করিতেছি; . . . প্রকৃত ভজনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতার ভজনা করিবে; কারণ বাস্তবিক পিতা এইরূপ ভজনাকারীদেরই অন্বেষণ করেন।” (যোহন ৪:২২, ২৩) লক্ষ্য করুন যে সত্যে উপাসনা করা অত্যাবশ্যক! অতএব যথাযথ জ্ঞান এবং সত্যের প্রতি গভীর প্রেম ব্যতিরেকে গ্রহণযোগ্যরূপে ঈশ্বরকে উপাসনা করা অসম্ভব। সত্য খ্রীষ্টীয় ধর্ম অবশ্যই সত্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, পৌত্তলিক ধর্ম থেকে গ্রহণ করা পরম্পরাগত রীতিনীতি এবং অভ্যাসগুলির উপর নয়। আমরা জানি যিহোবা কেমন বোধ করেন যখন লোকেরা তাঁকে ভুল পথে উপাসনা করতে প্রচেষ্টা করে থাকে। প্রেরিত পৌল প্রাচীন গ্রীক শহর করিন্থের খ্রীষ্টানদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন: “বলীয়ালের [পাপদেবের] সহিত খ্রীষ্টের কি ঐক্য? . . . প্রতিমাদের সহিত ঈশ্বরের মন্দিরেরই বা কি সম্পর্ক?” (২ করিন্থীয় ৬:১৫, ১৬) প্রতিমাদের সাথে ঈশ্বরের মন্দিরের ঐক্য সাধন করার যে কোন প্রচেষ্টা তাঁর কাছে ঘৃণ্য।
এছাড়াও, অত্যন্ত স্পষ্টভাবে, শাস্ত্রাবলী ঈশ্বরের সাথে মধ্যস্থ হিসাবে কাজ করতে “সাধুদের” কাছে প্রার্থনা করার ধারণাকে বাতিল করে দেয়। তাঁর আদর্শ প্রার্থনায়, যীশু শিখিয়েছিলেন যে প্রার্থনা একমাত্র পিতাকে সম্বোধন করে করতে হবে, কারণ তিনি তাঁর শিষ্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা এই মত প্রার্থনা করিও; হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” (মথি ৬:৯) যীশু আরও বলেছিলেন: “আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না। যদি আমার নামে আমার কাছে কিছু যাচ্ঞা কর, তবে আমি তাহা করিব।” আর প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “একমাত্র ঈশ্বর আছেন; ঈশ্বরের ও মনুষ্যদের মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থও আছেন, তিনি মনুষ্য, খ্রীষ্ট যীশু।”—যোহন ১৪:৬, ১৪; ১ তীমথিয় ২:৫.
আমরা যদি সত্যিই চাই যে ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনা শুনুন, তাহলে তাঁর বাক্যের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের তাঁর কাছে উপস্থিত হওয়া প্রয়োজন। যিহোবার সমীপবর্তী হওয়ার একমাত্র বৈধ উপায়ের উপর জোর দিয়ে, পৌল আরও লিখেছিলেন: “খ্রীষ্ট যীশু ত মরিলেন, বরং উত্থাপিতও হইলেন; আর তিনিই ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন, আবার আমাদের পক্ষে অনুরোধ করিতেছেন।” “যাহারা তাঁহা দিয়া ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করিতে পারেন, কারণ তাহাদের নিমিত্ত অনুরোধ করণার্থে তিনি সতত জীবিত আছেন।”—রোমীয় ৮:৩৪; ইব্রীয় ৭:২৫.
‘আত্মায় ও সত্যে ভজনা করা’
পৌত্তলিকদের তাদের মিথ্যা উপাসনা পরিত্যাগ এবং যীশু খ্রীষ্টের সত্য শিক্ষাগুলি অনুসরণ করতে প্রণোদিত করার জন্য ধর্মভ্রষ্ট খ্রীষ্টতত্ত্বের না ছিল আধ্যাত্মিক শক্তি না ছিল পবিত্র আত্মার সমর্থন। এটি ধর্মান্তরিত, ক্ষমতা এবং জনপ্রিয়তার অভীষ্ট সাধনে পৌত্তলিক বিশ্বাস ও অভ্যাসগুলিকে আত্মস্থ করেছিল। এই কারণে, এটি ঈশ্বর ও যীশুর কাছে গ্রহণযোগ্য, দৃঢ় খ্রীষ্টান নয়, বরঞ্চ রাজ্যের পক্ষে অযোগ্য “শ্যামাঘাস,” নকল বিশ্বাসীদের উৎপন্ন করেছিল।—মথি ১৩:২৪-৩০.
কিন্তু, এই শেষ সময়ে, যিহোবার পরিচালনাধীনে সত্য উপাসনা পুনর্স্থাপনের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠিত কার্যধারা আছে। বিশ্বব্যাপী যিহোবার লোকেরা, তাদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক অথবা ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে, তাদের জীবন ও বিশ্বাসগুলিকে বাইবেলের মানগুলির উপযোগী করার চেষ্টা করে থাকে। কিভাবে “আত্মায় ও সত্যে” ঈশ্বরের উপাসনা করতে হবে সেই সম্পর্কে আপনি যদি আরও বেশি কিছু জানতে চান, তাহলে অনুগ্রহ করে আপনি যেখানে থাকেন সেখানকার যিহোবার সাক্ষীদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার যুক্তি করার ক্ষমতা ও তাঁর বাক্যের যথাযথ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে, ঈশ্বরের প্রতি গ্রহণযোগ্য পবিত্র সেবা প্রদান করার জন্য সাহায্য করতে তারা অত্যন্ত খুশি হবে। পৌল লিখেছিলেন: “হে ভ্রাতৃগণ, ঈশ্বরের নানা করুণার অনুরোধে আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত [“যুক্তি করার ক্ষমতা,” NW] আরাধনা। আর এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।” আর কলসীয়দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন: “আমরাও, যে দিন সেই সংবাদ শুনিয়াছি, সেই দিন অবধি তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনা ও বিনতি করিতে ক্ষান্ত হই নাই, যেন তোমরা সমস্ত আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে তাঁহার ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞানে পূর্ণ হও, আর তদ্দ্বারা প্রভুর যোগ্যরূপে সর্ব্বতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ কর, সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্ ও ঈশ্বরের তত্ত্বজ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু হও।”—রোমীয় ১২:১, ২; কলসীয় ১:৯, ১০.
[পাদটীকাগুলো]
a কিছু বাইবেল অনুবাদগুলি গ্রীক শব্দ হেজিওস “পবিত্র লোক” হিসাবে এবং অন্যান্য অনুবাদগুলি “সাধু” হিসাবে অনুবাদ করেছে।
b বৃহত্তর ইলিউসিনিয়া প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে এথেন্স এবং ইলিউসিসে অনুষ্ঠিত হত।
[২৮ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
অ্যাথিনী-দেবীর মন্দিরের অনুপযুক্ত ব্যবহার
“খ্রীষ্টান” সম্রাট থিওডোসিয়াস দ্বিতীয়, এথেন্সের শহরে (সা.শ. ৪৩৮ সাল) অধ্যাদেশগুলি জারি করে পৌত্তলিক আচার এবং গুপ্ত ধর্মীয় পর্বগুলি লোপ করেছিলেন, পৌত্তলিক মন্দিরগুলি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে সেগুলিকে খ্রীষ্টান গির্জাগুলিতে পরিবর্তিত করা যেতে পারত। একটি মন্দিরের সফল পরিবর্তনের জন্য একমাত্র প্রয়োজন ছিল এর ভিতরে একটি ক্রুশ স্থাপন করার মাধ্যমে এটিকে পবিত্র করা!
অ্যাথিনী-দেবীর মন্দিরটি ছিল পরিবর্তিত মন্দিরগুলির মধ্যে প্রথম। অ্যাথিনী-দেবীর মন্দিরকে “খ্রীষ্টান” মন্দির হিসাবে যথোচিতভাবে উপযোগী করার জন্য বৃহত্তর পুনর্সংস্করণগুলি করা হয়েছিল। সা.শ ৮৬৯ সাল থেকে, এটি এথেন্সের ক্যাথিড্রেল হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এটিকে “পবিত্র প্রজ্ঞা”-র গির্জা হিসাবে সম্মান করা হত। এটি এই বিষয়টির উদ্দেশ্যপূর্ণ অনুস্মারক ছিল যে মন্দিরের প্রকৃত “অধিকারিনী,” অ্যাথিনী ছিলেন প্রজ্ঞার দেবী। পরবর্তীকালে এটিকে “এথেন্সবাসী কুমারী মরিয়ম” এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত করা হয়েছিল। অর্থোডক্সদের ব্যবহার করার আট শতাব্দী পর, মন্দিরটি এথেন্সের সাধ্বী মরিয়মের ক্যাথলিক গির্জায় পরিবর্তিত হয়েছিল। অ্যাথিনী-দেবীর মন্দিরের এইরূপ “ধারাবাহিক পরিবর্তন” সেই পর্যন্ত চলতে থাকে যখন, ১৫শ শতাব্দীতে অটোম্যান টার্কস্ এটিকে মস্জিদে পরিণত করেন।
আজকে অ্যাথিনী-দেবীর মন্দির, অ্যাথিনী পার্থেনস (“কুমারী”) এর প্রাচীন ডরিক মন্দির, প্রজ্ঞার গ্রীক দেবী হাজার হাজার পর্যটকদের দ্বারা গ্রীক স্থাপত্যশিল্পের শুধুমাত্র এক সেরা শিল্প নিদর্শন হিসাবে পরিদর্শিত হয়ে থাকে।
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
ড্যাফ্নি মঠ—প্রাচীন এথেন্সের পৌত্তলিকদের উপাসনার এক বিকল্প স্থান