আপনার কি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করা উচিত?
গ্রীক দার্শনিক প্লেটো পুনর্জন্মের ধারণার সাথে প্রেমে পড়াকে যুক্ত করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে দেহের মৃত্যুর পর প্রাণ অমর হয়ে সেখানে চলে যায়, যাকে “পরম আকৃতির স্তর” বলা হয়। দেহবিহীন অবস্থায়, আকৃতিগুলিকে অবলোকন করতে, এটি সেখানে কিছু সময়ের জন্য থাকে। পরবর্তীকালে যখন এটি অন্য একটি দেহধারণ করে, তখন অবচেতনভাবে আকৃতির স্তরের বিষয়ে প্রাণ মনে করে এবং তার প্রতি আকুল আকাঙ্ক্ষা অনুভব করে। প্লেটোর মতানুসারে, লোকেরা প্রেমে পড়ে কারণ তারা তাদের প্রিয়জনের মধ্যে সৌন্দর্যের সেই আদর্শ আকৃতি দেখতে পায় যা তাদের অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে এবং তারা তা খুঁজে থাকে।
উৎস এবং ভিত্তিটিকে শনাক্ত করা
পুনর্জন্মের শিক্ষার জন্য প্রাণের অমরত্ব আবশ্যক। অতএব, পুনর্জন্মের উৎস সম্বন্ধে জানতে, আমাদের অবশ্যই সেই লোক বা জাতিগুলিকে খুঁজে বের করতে হবে যাদের এইধরনের বিশ্বাস ছিল। এই ভিত্তিতে, কেউ কেউ মনে করে যে প্রাচীন মিশরে এর উৎপত্তি। আর অন্যান্যেরা বিশ্বাস করে যে এটি প্রাচীন বাবিলে শুরু হয়েছিল। বাবিলের ধর্মের খ্যাতি সৃষ্টি করতে, এর যাজকবর্গ প্রাণের দেহান্তরিত হওয়ার মতবাদটি উত্থাপন করেছিলেন। ফলে তারা দাবি করতে পারতেন যে তাদের ধর্মীয় গুরুরা, দীর্ঘদিন যাবৎ মৃত, বিশিষ্ট পূর্বপুরুষদের দেহধারণ করেছিলেন।
কিন্তু, ভারতেই পুনর্জন্মে বিশ্বাস পূর্ণরূপে বিকশিত হয়েছিল। হিন্দু পণ্ডিতেরা মানুষের মন্দতা এবং দুঃখকষ্টজনিত সর্বজনীন সমস্যাগুলির সাথে লড়াই করেছিলেন। ‘একজন ধার্মিক সৃষ্টিকর্তার ধারণার সাথে কিভাবে এইগুলি সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে?’ তারা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তারা ঈশ্বরের ধার্মিকতা এবং জগতের আকস্মিক দুর্যোগ ও ভেদাভেদগুলির মধ্যে সংঘর্ষের সমাধান করতে চেষ্টা করেছিলেন। কালক্রমে, তারা “কর্মের আইন” উদ্ভাবন করেছিলেন অর্থাৎ কারণ ও প্রভাবের আইন—‘একজন ব্যক্তি যা কিছু বুনবে তাই কাটবে।’ তারা একটি বিশদ ‘হিসাব খাতা’ তৈরি করেছিলেন, যার দ্বারা একটি জীবনের গুণ ও দোষগুলি পরবর্তী জীবনে পুরস্কৃত বা দণ্ডায়িত হবে।
“কর্ম” কথাটির সহজ অর্থ হল “আচরণ।” একজন হিন্দু যদি সামাজিক এবং ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলে তবে বলা হয়ে থাকে যে তার কর্ম উত্তম এবং যদি সে তা না করে তবে তার কর্ম মন্দ। তার আচরণ বা কর্ম, প্রতিটি ধারাবাহিক জন্মান্তরে তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। “সমস্ত মানুষ চরিত্রের একটি প্রতিকৃতি নিয়ে জন্মায়, যা প্রধানতঃ তাদের পূর্ব জীবনের আচরণের দ্বারা গঠিত, যদিও তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলি বংশগতির দ্বারা নির্দিষ্ট হয়। [এইভাবে] একজন মানুষ তার নিজের ভাগ্যের স্থপতি, তার নিজের নিয়তির নির্মাতা,” দার্শনিক নিখিলানন্দ বলেন। কিন্তু, চূড়ান্ত লক্ষ্য হল আত্মার দেহান্তরিত হওয়ার এই চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া এবং ব্রাহ্মণ—পরম বাস্তবতার সাথে একত্রিত হওয়া। মনে করা হয় যে, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য আচরণ এবং বিশেষ হিন্দু জ্ঞানের জন্য কঠোর প্রচেষ্টার দ্বারা এটি অর্জন করা যায়।
অতএব পুনর্জন্মের শিক্ষা তার ভিত্তি হিসাবে প্রাণের অমরত্বের মতবাদটি ব্যবহার করে এবং কর্মের আইন প্রয়োগ করার দ্বারা এটিকে গড়ে তোলে। আসুন আমরা দেখি এই ধারণাগুলি সম্বন্ধে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য, বাইবেলের কী বলার আছে।
মানুষের কোন অংশ কি অমর?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে, আসুন আমরা বিষয়টির উপর সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের প্রতি মনোযোগ দিই—সৃষ্টিকর্তার অনুপ্রাণিত বাক্য। প্রথম মানুষ, আদমের সৃষ্টি সম্বন্ধে বর্ণনা দিতে গিয়ে, বাইবেলের প্রথম পুস্তকটি বলে: “সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে [অর্থাৎ মনুষ্যকে] নির্ম্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন; তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী [নেফিস] হইল।”a (আদিপুস্তক ২:৭) স্পষ্টতই, শাস্ত্র উল্লেখ করে না যে এক জীবাত্মা বা প্রাণী প্রথম মানুষ থেকে পৃথক। মানুষের কোন প্রাণী নেই, সে নিজে হল একটি প্রাণী। এখানে প্রাণীর জন্য যে ইব্রীয় শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হল নেফিস। বাইবেলে এটি প্রায় ৭০০ বার পাওয়া যায় এবং কখনই এটিকে মানুষের এক পৃথক বা অশরীরী অংশ বলে উল্লেখ করা হয়নি কিন্তু সর্বদাই এমন কিছুর প্রতি উল্লেখ করা হয়েছে যা বাস্তব এবং শারীরিক।—ইয়োব ৬:৭; গীতসংহিতা ৩৫:১৩; ১০৭:৯; ১১৯:২৮.
তাহলে, মৃত্যুতে কী হয়? মৃত্যুতে আদমের কী হয়েছিল তা বিবেচনা করুন। যখন সে পাপ করেছিল, তখন ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন: “তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন . . . করিবে; তুমি ত তাহা হইতেই গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৯) এর অর্থ কী চিন্তা করুন। ঈশ্বর ধূলি থেকে তাকে সৃষ্টি করার পূর্বে, আদম অস্তিত্বে ছিল না। তার মৃত্যুর পর, আদম একইরূপ অস্তিত্বহীনতায় ফিরে গিয়েছিল।
সহজভাবে উল্লেখ করলে বলা যায়, বাইবেল শিক্ষা দেয় যে মৃত্যু হল জীবনের বিপরীত। উপদেশক ৯:৫, ১০ পদে আমরা পড়ি: “জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না, এবং তাহাদের আর কোন ফলও হয় না, কারণ লোকে তাহাদের বিষয় ভুলিয়া গিয়াছে। তোমার হস্ত যে কোন কার্য্য করিতে পায়, তোমার শক্তির সহিত তাহা কর; কেননা তুমি যে স্থানে যাইতেছ, সেই পাতালে কোন কার্য্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা, কিছুই নাই।”
এর অর্থ হল যে মৃতেরা কোন কিছু করতে বা অনুভব করতে অসমর্থ। তাদের আর কোন সংকল্প থাকে না বা তারা কোন কিছু স্মরণ করতে পারে না। গীতরচক বলেন: “তোমরা নির্ভর করিও না রাজন্যগণে, বা মনুষ্য-সন্তানে, যাহার নিকটে ত্রাণ নাই। তাহার শ্বাস নির্গত হয়, সে নিজ মৃত্তিকায় প্রতিগমন করে; সেই দিনেই তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়।”—গীতসংহিতা ১৪৬:৩, ৪.
বাইবেল স্পষ্টভাবে দেখায় যে মৃত্যুতে জীবাত্মা বা প্রাণ অন্য একটি দেহে স্থানান্তরিত হয় না কিন্তু সেটি মারা যায়। বাইবেল জোরের সাথে বলে, “যে প্রাণী পাপ করে, সেই মরিবে।” (যিহিষ্কেল ১৮:৪, ২০; প্রেরিত ৩:২৩; প্রকাশিত বাক্য ১৬:৩) অতএব, আত্মার অমরত্বের মতবাদ—পুনর্জন্ম তত্ত্বের প্রকৃত ভিত্তি সম্বন্ধে—শাস্ত্রাবলীতে কোন সমর্থন পাওয়া যায় না। এটি ব্যতিরেকে, তত্ত্বটি মূল্যহীন। তাহলে, কোন্ বিষয়টি জগতে আমরা যে কষ্টভোগ দেখতে পাই সেই সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দেয়?
লোকেরা কেন কষ্ট ভোগ করে?
মানুষের কষ্টভোগের মূল কারণ হল অসিদ্ধতা যা আমরা সকলে পাপী আদম থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল,” বাইবেল বলে। (রোমীয় ৫:১২) আদম থেকে জন্ম হওয়ায়, আমরা সকলে অসুস্থ হই, বৃদ্ধ হই ও মারা যাই।—গীতসংহিতা ৪১:১, ৩; ফিলীপীয় ২:২৫-২৭.
এছাড়াও, সৃষ্টিকর্তার অপ্রতিরোধ্য নৈতিক আইন বলে: “তোমরা ভ্রান্ত হইও না, ঈশ্বরকে পরিহাস করা যায় না; কেননা মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে। ফলতঃ আপন মাংসের উদ্দেশে যে বুনে, সে মাংস হইতে ক্ষয়রূপ শস্য পাইবে।” (গালাতীয় ৬:৭, ৮) অতএব, এক উচ্ছৃঙ্খল জীবন-ধারা হয়ত আবেগগত হতাশা, অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা এবং যৌন সংক্রামক রোগের দিকে পরিচালিত করতে পারে। “আশ্চর্যের বিষয় যে [যুক্তরাষ্ট্রে] প্রাণনাশক ক্যানসারের শতকরা ৩০ ভাগের জন্য প্রধানতঃ ধূমপানকে দায়ী করা যেতে পারে এবং সম পরিমাণ দায় জীবনধারা, বিশেষভাবে খাদ্য-সংক্রান্ত অভ্যাস এবং শরীরচর্চার অভাবের উপর আরোপ করা যেতে পারে,” সায়েন্টিফিক আমেরিকান পত্রিকাটি বলে। কিছু বিপর্যয় যা কষ্টভোগ নিয়ে আসে তা মানুষের দ্বারা পৃথিবীর সম্পদগুলির অপব্যবহারের ফলে ঘটে থাকে।—তুলনা করুন প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮.
হ্যাঁ, তার অধিকাংশ দুর্দশার জন্য মানুষকেই দায়ী করা যায়। কিন্তু, প্রাণ যেহেতু অমর নয়, তাই ‘যা বুনবে তাই কাটবে’ আইনটি মানুষের কষ্টভোগকে কর্মের সাথে যুক্ত করতে ব্যবহার করা যায় না—যা অনুমানলব্ধ পূর্ব জীবনের কাজ। “যে মরিয়াছে, সে পাপ হইতে ধার্ম্মিক গণিত হইয়াছে।” (রোমীয় ৬:৭, ২৩) তাই পাপের ফল মৃত্যুর পরের এক জীবনে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় না।
শয়তান দিয়াবলও অনেক কষ্টভোগ নিয়ে আসে। বাস্তবিকপক্ষে, শয়তান এই জগতের উপর কর্তৃত্ব করছে। (১ যোহন ৫:১৯) আর যীশু খ্রীষ্ট যেমন ভাববাণী করেছিলেন, তাঁর শিষ্যেরা ‘তাঁহার নাম প্রযুক্ত সকলের ঘৃণিত হইবে।’ (মথি ১০:২২) ফলস্বরূপ, প্রায়ই দুষ্টদের চেয়ে ধার্মিকেরাই বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।
এই জগতে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যেগুলির কারণ মোটেও স্পষ্ট নয়। দ্রুততম দৌড়বিদ্ হয়ত হোঁচট খেতে এবং প্রতিযোগিতায় হেরে যেতে পারে। এক শক্তিমান সৈন্যবাহিনী হয়ত হীনতর শক্তির কাছে পরাস্ত হতে পারে। একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি হয়ত একটি উত্তম কাজ পেতে অসমর্থ হতে এবং সেই কারণে হয়ত ক্ষুধার্ত থাকতে পারে। পরিস্থিতির কারণে, লোকেদের ব্যবসা ব্যবস্থাপনার উৎকৃষ্ট জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও, তারা তাদের জ্ঞানকে হয়ত কার্যে প্রয়োগ করতে পারে না এবং এর ফলে তারা দারিদ্রের সম্মুখীন হয়। বুদ্ধিমান ব্যক্তিবিশেষেরা হয়ত যারা কর্তৃত্বে রয়েছেন তাদের রোষানলে পড়তে পারে এবং উপেক্ষিত হতে পারে। কেন এইরূপ হয়? “কিন্তু সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে,” জ্ঞানী রাজা শলোমন উত্তর দেন।—উপদেশক ৯:১১.
হিন্দু পণ্ডিতেরা এর অস্তিত্বের কারণ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করার বহু আগে থেকেই কষ্টভোগ ছিল মানবজাতির এক অংশ। কিন্তু এক উত্তম ভবিষ্যতের জন্য কি কোন আশা আছে? আর মৃতদের জন্য বাইবেলে কোন্ প্রতিজ্ঞা রয়েছে?
এক শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ
সৃষ্টিকর্তা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে শীঘ্রই তিনি শয়তানের অধীনস্ত এই বর্তমান জগৎ সমাজের শেষ আনবেন। (হিতোপদেশ ২:২১, ২২; দানিয়েল ২:৪৪) এক ধার্মিক নতুন মানব সমাজ—“নূতন পৃথিবী”—তখন বাস্তব হবে। (২ পিতর ৩:১৩) সেই সময়ে “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” (যিশাইয় ৩৩:২৪) এমনকি মৃত্যুর যন্ত্রণা দূরীভূত হবে, কারণ ঈশ্বর “তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.
ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতের অধিবাসীদের সম্পর্কে, গীতরচক ভাববাণী করেছিলেন: “ধার্ম্মিকেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৯) তদুপরি, মৃদুশীলেরা “শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১১.
পূর্ববর্তী প্রবন্ধে উল্লেখিত, মুকুন্দভাই ঈশ্বরের চমৎকার প্রতিজ্ঞার বিষয়টি না জেনে মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু সেই সমস্ত কোটি কোটি ব্যক্তি যারা ঈশ্বরকে না জেনে মারা গিয়েছে তাদের এইরূপ একটি শান্তিপূর্ণ নতুন জগতে জেগে ওঠার প্রত্যাশা রয়েছে, কারণ বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে: “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।”—প্রেরিত ২৪:১৫; লূক ২৩:৪৩.
এখানে “পুনরুত্থান” শব্দটি গ্রীক শব্দ আনাসটাসিস থেকে অনুবাদিত হয়েছে, যার আক্ষরিক অর্থ “আবার উঠে দাঁড়ানো।” সুতরাং, পুনরুত্থান এক ব্যক্তির জীবনধারার পুনর্কার্যাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে।
স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা অসীম প্রজ্ঞার অধিকারী। (ইয়োব ১২:১৩) মৃতদের জীবনধারা মনে রাখা তাঁর কাছে কোন সমস্যাই নয়। (তুলনা করুন যিশাইয় ৪০:২৬.) এছাড়াও যিহোবা ঈশ্বরের প্রচুর পরিমাণে প্রেম রয়েছে। (১ যোহন ৪:৮) অতএব, মৃতেরা যে মন্দ কাজ করেছে তার জন্য শাস্তি দিতে নয় বরঞ্চ মৃত্যুর পূর্বে তাদের যে ব্যক্তিত্ব ছিল সেই ব্যক্তিত্বসহ এক পরমদেশ পৃথিবীতে জীবনে ফিরিয়ে আনতে, তিনি তাঁর সিদ্ধ স্মৃতিশক্তিকে ব্যবহার করতে পারেন।
মুকুন্দভাইয়ের মত কোটি কোটি ব্যক্তিদের জন্য, পুনরুত্থানের অর্থ হবে পুনরায় তাদের প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হওয়া। কিন্তু কল্পনা করুন যারা এখন জীবিত আছে তাদের জন্য এর কী অর্থ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মুকুন্দভাইয়ের পুত্র সম্বন্ধে বিবেচনা করুন, যিনি ঈশ্বর এবং তাঁর উদ্দেশ্যগুলি সম্পর্কিত চমৎকার সত্যগুলি জেনেছেন। তার জন্য এটি জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে তার পিতা জন্মান্তরের প্রায় এক অন্তহীন চক্রের ফাঁদে আটকে যাননি, যার প্রত্যেকটি দুষ্টতা এবং কষ্টভোগের দ্বারা পরিবেষ্টিত! তিনি কেবলমাত্র মৃত্যুতে ঘুমিয়ে আছেন, পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি নিজে বাইবেল থেকে যা শিখেছেন তা কোন এক দিন তার পিতার সাথে বন্টন করে নেওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে চিন্তা করা তার পক্ষে কতই না রোমাঞ্চকর!
ঈশ্বরের ইচ্ছা এই যে “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৩, ৪) এখনই হচ্ছে শেখার সময় যে কিভাবে আপনি, লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যারা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছে তাদের সাথে, এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারেন।—যোহন ১৭:৩.
[পাদটীকাগুলো]
a ইব্রীয় শব্দ নেফিস এবং গ্রীক শব্দ সাইকি ভারতীয় ভাষাগুলির বাইবেলে বিভিন্নভাবে অনুবাদিত হয়েছে যেমন “আত্মা,” “জীব,” “জীবাত্মা,” “প্রাণী,” “দেহী” এবং “ব্যক্তি।” (উদাহরণস্বরূপ, তামিল অথরাইজড ভারসন এবং নিউ হিন্দী বাইবেল-এ যিহিষ্কেল ১৮:৪ এবং মথি ১০:২৮ পদ দেখুন।) সঙ্গতিপূর্ণরূপে আপনার বাইবেল মূল-ভাষার শব্দগুলিকে “আত্মা,” “প্রাণ” বা অন্যভাবে অনুবাদ করুক বা নাই করুক, যেখানে নেফিস ও সাইকি পাওয়া যায় সেই পদগুলি পরীক্ষা করা আপনাকে এই পরিভাষাগুলির অর্থ প্রাচীনকালের ঈশ্বরের লোকেদের কাছে কী ছিল তা জানতে সাহায্য করবে। এইভাবে আপনি নিজে জীবাত্মার সঠিক প্রকৃতি সম্বন্ধে নির্ধারণ করতে পারেন।
[৭ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
“সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে।”—উপদেশক ৯:১১
[৬ পৃষ্ঠার বাক্স]
ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব এবং কর্মের আইন
মোহনদাস কে. গান্ধী ব্যাখ্যা করেছিলেন, “কর্মের আইন হল অদম্য এবং তা পরিহার করা অসম্ভব। এই কারণে সেখানে ঈশ্বরের হস্তক্ষেপ করার কোন প্রয়োজনই নেই। তিনি আইনটি স্থাপন করেছিলেন আর তারপর যেন অবসর গ্রহণ করেছেন।” গান্ধী এটিকে বিঘ্নস্বরূপ মনে করেছিলেন।
অপরপক্ষে, পুনরুত্থানের প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করে যে তাঁর সৃষ্টির প্রতি ঈশ্বরের গভীর আগ্রহ রয়েছে। এক পরমদেশ পৃথিবীতে মৃত ব্যক্তিকে জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য, ঈশ্বরকে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে সমস্তকিছু জানতে এবং স্মরণ রাখতে হবে। বাস্তবিকপক্ষে ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেকের জন্য চিন্তা করেন।—১ পিতর ৫:৬, ৭.
[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
হিন্দু জীবন চক্র
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের বাক্য পুনরুত্থানের শিক্ষা দেয়