“মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে”
“শেষ শত্রু যে মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে।”—১ করিন্থীয় ১৫:২৬.
১, ২. (ক) মৃতদের জন্য প্রেরিত পৌল কোন্ আশা তুলে ধরেছিলেন? (খ) পৌল পুনরুত্থান সম্বন্ধে কোন্ প্রশ্ন করেছিলেন?
“আমি দেহের পুনরুত্থান ও অনন্ত জীবনে . . . বিশ্বাস করি।” অ্যাপসলস্ ক্রিড তা বলে। ক্যাথলিক এবং প্রটেস্ট্যান্টরা একইভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে এটি আবৃত্তি করে কিন্তু তারা একেবারেই উপলব্ধি করতে পারেন না যে তাদের ধর্মমতগুলি প্রেরিতগণ যা কিছু বিশ্বাস করতেন তার সাথে নয় কিন্তু গ্রীক দর্শনের সঙ্গে অনেক বেশি সংগতিপূর্ণ। কিন্তু, প্রেরিত পৌল গ্রীক দর্শন অগ্রাহ্য করেছিলেন এবং অমর আত্মায় বিশ্বাস করেননি। তবুও, তিনি দৃঢ়ভাবে এক ভবিষ্যৎ জীবনে বিশ্বাস করেছিলেন এবং অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছিলেন: “শেষ শত্রু যে মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে।” (১ করিন্থীয় ১৫:২৬) মরণশীল মানবজাতির জন্য এর অর্থ কী?
২ উত্তরের জন্য, আসুন আমরা ১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ পুনরুত্থান সম্বন্ধীয় পৌলের আলোচনায় ফিরে যাই। আপনি স্মরণ করবেন যে প্রারম্ভিক পদগুলিতে, পৌল পুনরুত্থানকে খ্রীষ্টীয় মতবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এখন তিনি একটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন তুলে ধরেন: “কিন্তু কেহ বলিবে, মৃতেরা কি প্রকারে উত্থাপিত হয়? কি প্রকার দেহেই বা আইসে?”—১ করিন্থীয় ১৫:৩৫.
কী প্রকার দেহ?
৩. কেন কিছুজন পুনরুত্থানকে অস্বীকার করেছিলেন?
৩ এই প্রশ্ন উত্থাপনকালে, পৌলের হয়ত প্লেটোর দর্শনের প্রভাব দূর করার সদুদ্দেশ্য ছিল। প্লেটো শিক্ষা দিয়েছিলেন যে মানুষের একটি অমর আত্মা আছে যা দেহের মৃত্যুতে মুক্ত হয়। যারা এইধরনের একটি ধারণা নিয়ে বড় হয়েছেন, নিঃসন্দেহে তাদের কাছে খ্রীষ্টীয় শিক্ষা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছিল। যদি একটি আত্মা থাকে যা মৃত্যুতে মুক্ত হয়, তাহলে পুনরুত্থানের উদ্দেশ্য কী? এছাড়াও, পুনরুত্থান সম্ভবত অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছিল। একবার যখন দেহ মাটিতে মিশে গিয়েছে, তখন কিভাবে পুনরুত্থান হতে পারে? বাইবেল সমালোচক হেনরিক মেয়ার বলেন যে কিছু করিন্থীয়দের বিরোধিতা সম্ভবত “দেহের পদার্থের পুনর্গঠন অসম্ভব এই দার্শনিক ভিত্তির” উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।
৪, ৫. (ক) বিশ্বাসহীন ব্যক্তিদের আপত্তি কেন অযৌক্তিক ছিল? (খ) ‘বীজ’ সম্বন্ধে পৌলের দৃষ্টান্তটি ব্যাখ্যা করুন। (গ) পুনরুত্থিত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ঈশ্বর কিধরনের দেহ প্রদান করেন?
৪ পৌল তাদের যুক্তির মূর্খতা প্রকাশ করেন: “হে নির্ব্বোধ, তুমি আপনি যাহা বুন, তাহা না মরিলে জীবিত করা যায় না। আর যাহা বুন, যে দেহ উৎপন্ন হইবে, তুমি তাহা বুন না; বরং গোমেরই হউক, কি অন্য কোন কিছুরই হউক, বীজমাত্র বুনিতেছ; আর ঈশ্বর তাহাকে যে দেহ দিতে ইচ্ছা করিলেন, তাহাই দেন; আর তিনি প্রত্যেক বীজকে তাহার নিজের দেহ দেন।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৬-৩৮) পৃথিবীতে থাকাকালে লোকেদের যে দেহ ছিল ঈশ্বর তা উত্থাপন করতে যাচ্ছেন না। বরঞ্চ, এক রূপান্তরণ ঘটবে।
৫ পৌল পুনরুত্থানকে একটি বীজের অঙ্কুরোদ্গমের সঙ্গে তুলনা করেন। গোমের একটি ছোট বীজের, এটি থেকে যে চারাগাছ উৎপন্ন হবে তার সঙ্গে কোন মিল থাকে না। দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে: “একটি বীজ যখন অঙ্কুরিত হতে শুরু করে, তখন এটি প্রচুর পরিমাণ জল শোষণ করে। জল বীজের ভিতরে অনেক রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। এছাড়াও এটি বীজের অভ্যন্তরীণ কলাগুলি প্রসারিত এবং বীজত্বককে বিদীর্ণ করে।” ফলস্বরূপ, বীজটি একটি বীজ হিসাবে মারা যায় এবং একটি নতুন চারাগাছে পরিণত হয়। “ঈশ্বর তাহাকে . . . দেহ . . . দেন,” এইভাবে তিনি এটির বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী বৈজ্ঞানিক আইনগুলি স্থাপন করেন এবং প্রতিটি বীজ এর প্রজাতি অনুযায়ী একটি দেহ লাভ করে। (আদিপুস্তক ১:১১) একইভাবে, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা প্রথমে মানুষ হিসাবে মারা যান। পরে, ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে তিনি তাদের সম্পূর্ণ নতুন দেহে জীবনে ফিরিয়ে আনেন। পৌল যেমন ফিলিপীয়দের বলেছিলেন: ‘যীশু খ্রীষ্ট, . . . আমাদের দীনতার দেহকে রূপান্তর করিয়া নিজ প্রতাপের দেহের সমরূপ করিবেন।’ (ফিলিপীয় ৩:২০, ২১; ২ করিন্থীয় ৫:১, ২) তারা প্রতাপের দেহে পুনরুত্থিত হন এবং স্বর্গীয় রাজ্যে বাস করেন।—১ যোহন ৩:২.
৬. কেন এটি বিশ্বাস করা যুক্তিসংগত যে ঈশ্বর পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের উপযুক্ত আত্মিক দেহ সরবরাহ করতে পারেন?
৬ এটি বিশ্বাস করা কি অত্যন্ত কঠিন? না। পৌল যুক্তি দেখান যে জীবজন্তুদের বিভিন্ন প্রকারের দেহ আছে। এছাড়াও, তিনি স্বর্গীয় দূতেদের সঙ্গে রক্তমাংসের মানুষের তুলনামূলক বৈষম্য প্রদর্শন করেন এই বলে: “স্বর্গীয় দেহ আছে, ও পার্থিব দেহ আছে।” জড় সৃষ্টিতেও ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে। বিজ্ঞান ব্লু স্টার, রেড জায়েন্ট ও হোয়াইট ডোয়ারফের মত নক্ষত্রগুলি আবিষ্কার করার বহু পূর্বে পৌল বলেছিলেন: “তেজ সম্বন্ধে একটি নক্ষত্র হইতে অন্য নক্ষত্র ভিন্ন।” এর পরিপ্রেক্ষিতে, এটি কি যুক্তিসংগত নয় যে ঈশ্বর পুনরুত্থিত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের উপযুক্ত স্বর্গীয় দেহ প্রদান করতে পারেন?—১ করিন্থীয় ১৫:৩৯-৪১.
৭. অক্ষয়তা ও অমরতার অর্থ কী?
৭ এরপর পৌল বলেন: “মৃতগণের পুনরুত্থানও তদ্রূপ। ক্ষয়ে বপন করা যায়, অক্ষয়তায় উত্থাপন করা হয়।” (১ করিন্থীয় ১৫:৪২) একটি মানব দেহ, এমনকি সিদ্ধ হলেও ক্ষয়িষ্ণু। এটিকে হত্যা করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পৌল বলেছিলেন যে পুনরুত্থিত যীশুর “আর ক্ষয়ে ফিরিয়া যাইতে হইবে না।” (প্রেরিত ১৩:৩৪) তাকে আর কখনও এক ক্ষয়িষ্ণু, এমনকি সিদ্ধ মানব দেহে জীবনে ফিরে যেতে হবে না। ঈশ্বর পুনরুত্থিত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের যে দেহ দেন তা অক্ষয়—মৃত্যু অথবা ক্ষয়ের ঊর্ধ্বে। পৌল বলে চলেন: “অনাদরে বপন করা যায়, গৌরবে উত্থাপন করা হয়; দুর্ব্বলতায় বপন করা যায়, শক্তিতে উত্থাপন করা হয়; প্রাণিক দেহ বপন করা যায়, আত্মিক দেহ উত্থাপন করা হয়।” (১ করিন্থীয় ১৫:৪৩, ৪৪) এছাড়াও, পৌল বলেন: “এই ক্ষয়ণীয়কে অক্ষয়তা পরিধান করিতে হইবে।” অক্ষয়তার অর্থ সীমাহীন, ধ্বংসাতীত জীবন। (১ করিন্থীয় ১৫:৫৩; ইব্রীয় ৭:১৬) এইভাবে, পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা ‘স্বর্গীয় ব্যক্তির প্রতিমূর্ত্তি,’ যীশু যিনি তাদের পুনরুত্থান সম্ভবপর করেছিলেন তাঁকে ধারণ করেন।—১ করিন্থীয় ১৫:৪৫-৪৯.
৮. (ক) আমরা কিভাবে জানি যে পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকাকালীন যেমন ছিলেন সেই একই ব্যক্তি থেকে যাবেন? (খ) যখন পুনরুত্থান হবে সেই সময় কোন্ ভবিষ্যদ্বাণীগুলি পরিপূর্ণ হবে?
৮ এই রূপান্তরণ সত্ত্বেও, পুনরুত্থিতেরা তাদের মৃত্যুর পূর্বে যেমন ছিলেন সেই একই ব্যক্তি থেকে যাবেন। তারা একই স্মৃতি এবং একই উচ্চমানের খ্রীষ্টীয় গুণাবলি সহ উত্থিত হবেন। (মালাখি ৩:৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:১০, ১৮) এই দিক দিয়ে তারা যীশু খ্রীষ্টের সদৃশ। তিনি স্বর্গীয় রূপ থেকে মানব রূপে পরিবর্তিত হয়েছিলেন। তারপর তিনি মারা গিয়েছিলেন এবং এক স্বর্গীয় সত্ত্বা হিসাবে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। তবুও, “যীশু খ্রীষ্ট কল্য ও অদ্য এবং অনন্তকাল যে, সেই আছেন।” (ইব্রীয় ১৩:৮) অভিষিক্তদের কী এক গৌরবজনক সুযোগই না আছে! পৌল বলেন: “আর এই ক্ষয়ণীয় যখন অক্ষয়তা পরিহিত হইবে, এবং এই মর্ত্ত্য যখন অমরতা পরিহিত হইবে, তখন এই যে কথা লিখিত আছে, তাহা সফল হইবে ‘মৃত্যু জয়ে কবলিত হইল।’ ‘মৃত্যু তোমার জয় কোথায়? মৃত্যু তোমার হুল কোথায়?’”—১ করিন্থীয় ১৫:৫৪, ৫৫; যিশাইয় ২৫:৮; হোশেয় ১৩:১৪.
এক পার্থিব পুনরুত্থান?
৯, ১০. (ক) ১ করিন্থীয় ১৫:২৪ পদের প্রসঙ্গে, “পরিণাম” কী এবং এর সঙ্গে যুক্ত কোন্ ঘটনাগুলি ঘটবে? (খ) মৃত্যুকে বিলুপ্ত করার জন্য অবশ্যই কী ঘটতে হবে?
৯ যে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিদের স্বর্গে অমর আত্মিক জীবনের আশা নেই তাদের জন্য কি কোন ভবিষ্যৎ আছে? অবশ্যই আছে! খ্রীষ্টের উপস্থিতিকালে স্বর্গীয় পুনরুত্থান ঘটবে তা ব্যাখ্যা করার পর, পৌল পরবর্তী ঘটনাবলি উল্লেখ করেন এই বলে: “তৎপরে পরিণাম হইবে; তখন তিনি সমস্ত আধিপত্য এবং সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও পরাক্রম লোপ করিলে পর পিতা ঈশ্বরের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিবেন।”—১ করিন্থীয় ১৫:২৩, ২৪.
১০ “পরিণাম” হল খ্রীষ্টের সহস্র বছর রাজত্বের শেষ, যখন যীশু নম্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে রাজ্য তাঁর ঈশ্বর ও পিতার হাতে তুলে দেবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৪) “সমস্তই খ্রীষ্টেই সংগ্রহ করা” সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের উদ্দেশ্য তখন পরিপূর্ণ হবে। (ইফিষীয় ১:৯, ১০) কিন্তু, প্রথমে খ্রীষ্ট ঈশ্বরের সার্বভৌম ইচ্ছার বিরোধী “সমস্ত আধিপত্য এবং সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও পরাক্রম” ধ্বংস করবেন। এটি হর্মাগিদোনে সম্পাদিত ধ্বংসের চেয়ে আরও বেশি কিছুকে জড়িত করে। (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৬; ১৯:১১-২১) পৌল বলেন: “যাবৎ তিনি ‘সমস্ত শত্রুকে তাঁহার পদতলে না রাখিবেন,’ [খ্রীষ্টকে] রাজত্ব করিতেই হইবে। শেষ শত্রু যে মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে।” (১ করিন্থীয় ১৫:২৫, ২৬) হ্যাঁ, আদমজাত পাপ ও মৃত্যুর সমস্ত চিহ্নগুলি দূর করা হবে। তাহলে, অপরিহার্যভাবেই ঈশ্বর মৃতদের জীবনে ফিরিয়ে আনার দ্বারা ‘কবরগুলি’ খালি করবেন।—যোহন ৫:২৮.
১১. (ক) কিভাবে আমরা জানি যে ঈশ্বর মৃত প্রাণদের পুনর্সৃষ্টি করতে পারেন? (খ) যারা পৃথিবীতে পুনরুত্থিত হবেন তাদের কিধরনের দেহ সরবরাহ করা হবে?
১১ এর অর্থ মানব প্রাণের পুনর্সৃষ্টি। এটি কি অসম্ভব? না, কারণ গীতসংহিতা ১০৪:২৯, ৩০ পদ আমাদের আশ্বস্ত করে যে ঈশ্বর তা করতে পারেন: “তুমি তাহাদের নিঃশ্বাস হরণ করিলে তাহারা মরিয়া যায়, তাহাদের ধূলিতে প্রতিগমণ করে। তুমি নিজ আত্মা পাঠাইলে তাহাদের সৃষ্টি হয়।” যদিও পুনরুত্থিতরা তাদের মৃত্যুর পূর্বে তারা যেমন ছিলেন সেই একই ব্যক্তি হবেন, তবুও তাদের সেই একই দেহের প্রয়োজন হবে না। স্বর্গে যারা পুনরুত্থিত হবেন তাদের ন্যায়, ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছানুসারে তাদেরকে একটি দেহ দেবেন। নিঃসন্দেহে তাদের নতুন দেহ শারীরিক দিক দিয়ে সুস্থ থাকবে এবং যুক্তিসংগতভাবেই তাদের প্রথম দেহের অনুরূপ হবে যাতে তাদের প্রিয়জনেরা তাদেরকে চিনতে পারেন।
১২. পার্থিব পুনরুত্থান কখন ঘটবে?
১২ কখন পার্থিব পুনরুত্থান সংঘটিত হবে? মার্থা তার মৃত ভাই লাসার সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি জানি, শেষ দিনে পুনরুত্থানে সে উঠিবে।” (যোহন ১১:২৪) কিভাবে তিনি তা জানতে পেরেছিলেন? তার দিনে পুনরুত্থান একটি বিতর্কের বিষয় ছিল, কারণ ফরীশীরা এতে বিশ্বাস করতেন কিন্তু সদ্দূকীরা করতেন না। (প্রেরিত ২৩:৮) তবুও, মার্থা প্রাক্-খ্রীষ্টীয় সাক্ষীদের জানতেন যারা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতেন। (ইব্রীয় ১১:৩৫) অধিকন্তু, তিনি দানিয়েল ১২:১৩ পদ থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে পুনরুত্থান শেষ দিনে হবে। তিনি হয়ত তা স্বয়ং যীশুর কাছ থেকে জেনেছিলেন। (যোহন ৬:৩৯) সেই ‘শেষ দিন’ খ্রীষ্টের সহস্র বছর রাজত্বের সমসাময়িক। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৬) সেই ‘দিনের’ রোমাঞ্চকর অবস্থা সম্বন্ধে কল্পনা করুন যখন এই মহান ঘটনা শুরু হয়!—লূক ২৪:৪১ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
কারা ফিরে আসছেন?
১৩. প্রকাশিত বাক্য ২০:১২-১৪ পদে পুনরুত্থান সম্বন্ধীয় কোন্ দর্শনটি লিপিবদ্ধ আছে?
১৩ প্রকাশিত বাক্য ২০:১২-১৪ পদে পার্থিব পুনরুত্থান সম্বন্ধে যোহনের দর্শনটি লিপিবদ্ধ করা আছে: “আমি দেখিলাম, ক্ষুদ্র ও মহান্ সমস্ত মৃত লোক সেই সিংহাসনের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে; পরে ‘কয়েকখান পুস্তক খোলা গেল’, এবং আর একখানি পুস্তক, অর্থাৎ জীবন-পুস্তক খোলা গেল, এবং মৃতেরা পুস্তকসমূহে লিখিত প্রমাণে ‘আপন আপন কার্য্যানুসারে’ বিচারিত হইল। আর সমুদ্র আপনার মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল, এবং মৃত্যু ও পাতাল আপনাদের মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল, এবং তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন কার্য্যানুসারে বিচারিত হইল। পরে মৃত্যু ও পাতাল অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল; তাহাই, অর্থাৎ সেই অগ্নিহ্রদ, দ্বিতীয় মৃত্যু।”
১৪. এই পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে কারা থাকবেন?
১৪ পুনরুত্থান “ক্ষুদ্র ও মহান্,” বিশিষ্ট ও অবিশিষ্ট সকল মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে যারা একসময় বেঁচে ছিলেন ও মারা গিয়েছিলেন। এমনকি শিশুরাও সেই সংখ্যার মধ্যে থাকবে! (যিরমিয় ৩১:১৫, ১৬) প্রেরিত ২৪:১৫ পদে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রকাশ করা হয়েছে: “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” “ধার্ম্মিক”-দের মধ্যে প্রাচীন কালের বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীগণ লক্ষণীয় হবেন, যেমন হেবল, হনোক, নোহ, অব্রাহাম, সারা এবং রাহব। (ইব্রীয় ১১:১-৪০) এইধরনের ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার এবং বহু পূর্বের বাইবেল ঘটনাবলির পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য লাভ করার বিষয়টি কল্পনা করুন। “ধার্ম্মিক”-রা সেই হাজার হাজার ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তিদেরও অন্তর্ভুক্ত করে যারা সম্প্রতিকালে মারা গিয়েছেন এবং যাদের স্বর্গীয় আশা নেই। আপনার কি এদের মধ্যে থাকতে পারেন এমন কোন পারিবারিক সদস্য কিংবা প্রিয়জন আছে? আপনি তাদের আবার দেখতে পাবেন এটি জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক! তাহলে, এই “অধার্ম্মিক” ব্যক্তিরা কারা যারাও পুনরুত্থানে আসবেন। এটি লক্ষ লক্ষ, হয়ত কোটি কোটি ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে যারা বাইবেলের সত্য জানার ও প্রয়োগ করার সুযোগ না পেয়ে মারা গিয়েছিলেন।
১৫. ফিরে আসা ব্যক্তিরা “পুস্তকসমূহে লিখিত প্রমাণে . . . বিচারিত” হবেন এর অর্থ কী?
১৫ তাহলে, কিভাবে ফিরে আসা ব্যক্তিরা “পুস্তকসমূহে লিখিত প্রমাণে ‘আপন আপন কার্য্যানুসারে’ বিচারিত” হবেন? এই পুস্তকগুলি তাদের পূর্ববর্তী কাজের নথি নয়; তারা যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন তারা তাদের জীবনকালে কৃত পাপ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। (রোমীয় ৬:৭, ২৩) কিন্তু, পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা তখনও আদমজাত পাপের অধীনে থাকবেন। অতএব, এই পুস্তকগুলি ঐশিক তথ্য ঘোষণা করবে যা যীশু খ্রীষ্টের বলিদান থেকে সম্পূর্ণ উপকার লাভ করার জন্য সকলকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। আদমজাত পাপের শেষ চিহ্ন যখন দূরীভূত হবে, তখন সম্পূর্ণ অর্থে ‘মৃত্যু বিলুপ্ত হইবে।’ সহস্র বছরের শেষে, ঈশ্বর “সর্ব্বেসর্ব্বা” হবেন। (১ করিন্থীয় ১৫:২৮) মানুষের আর কখনও মহাযাজক অথবা মুক্তির মূল্যদাতার মধ্যস্থতার প্রয়োজন হবে না। সমস্ত মানবজাতি সিদ্ধতা ফিরে পাবে যা আদম শুরুতে উপভোগ করেছিলেন।
এক অনুক্রমিক পুনরুত্থান
১৬. (ক) কেন এটি বিশ্বাস করা যুক্তিসংগত যে পুনরুত্থান এক অনুক্রমিক প্রক্রিয়ায় হবে? (খ) মৃত অবস্থা থেকে প্রথমে ফিরে আসাদের মধ্যে সম্ভবত কারা থাকবেন?
১৬ যেহেতু স্বর্গীয় পুনরুত্থান অনুক্রমিক, “প্রত্যেক জন আপন আপন শ্রেণীতে,” তাই এটি স্পষ্ট যে পার্থিব পুনরুত্থান বিশৃঙ্খল জনসংখ্যা বিস্ফোরণ সৃষ্টি করবে না। (১ করিন্থীয় ১৫:২৩) এটি বোঝা যায় যে, নতুন পুনরুত্থিত ব্যক্তিদের দেখাশোনা করার প্রয়োজন হবে। (লূক ৮:৫৫ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) তাদের শারীরিক খাদ্য—আরও গুরুত্বপূর্ণরূপে—যিহোবা ঈশ্বর ও যীশুখ্রীষ্ট বিষয়ক জীবনদানকারী জ্ঞানার্জনের জন্য আধ্যাত্মিক সহযোগিতার প্রয়োজন পড়বে। (যোহন ১৭:৩) সকলে যদি একই সময়ে জীবন ফিরে পান, তাহলে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে যত্ন নেওয়া অসম্ভব হবে। এটি ধরে নেওয়া যুক্তিসংগত যে পুনরুত্থান ক্রমান্বয়ে সংঘটিত হবে। যে বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানেরা শয়তানের ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার অল্প সময় পূর্বে মারা গিয়েছিলেন তারা সম্ভবত প্রথমে উত্থিতদের মধ্যে থাকবেন। আমরা প্রাচীন কালের বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদের জন্যেও প্রথমে পুনরুত্থান আশা করতে পারি যারা “অধ্যক্ষ” হিসাবে সেবা করবেন।—গীতসংহিতা ৪৫:১৬.
১৭. পুনরুত্থান সম্বন্ধে কিছু বিষয় কী যে বিষয়ে বাইবেল নীরব এবং কেন খ্রীষ্টানদের এইধরনের বিষয়গুলি সম্বন্ধে অযথা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়?
১৭ তাসত্ত্বেও, আমাদের এইধরনের বিষয়গুলি সম্বন্ধে বদ্ধমূল হওয়া উচিত নয়। অনেক বিষয়ে বাইবেল নীরব। এটি কিভাবে, কখন এবং কোন্ পরিস্থিতিতে ব্যক্তিদের পুনরুত্থান হবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করে না। এটি আমাদের বলে না যে সেই ফিরে আসা ব্যক্তিদের কিভাবে গৃহ, খাবার এবং পোশাক সরবরাহ করা হবে? আমরা নিশ্চয়তার সঙ্গে বলতে পারি না যে কিভাবে যিহোবা এইধরনের বিষয়গুলি পরিচালনা করবেন যেমন পুনরুত্থিত শিশুদের লালন পালন ও যত্ন নেওয়া অথবা কিভাবে তিনি কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতির ব্যবস্থা করবেন যা আমাদের বন্ধু এবং প্রিয়জনদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এটি সত্য যে, এইধরনের বিষয়গুলি সম্বন্ধে চিন্তা করা স্বাভাবিক; কিন্তু যে প্রশ্নগুলির উত্তর বর্তমানে দেওয়া হয়নি সেগুলির উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করার জন্য সময় ব্যয় করা বোকামি। আমরা অবশ্যই যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করা ও অনন্ত জীবন লাভ করার উপর আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করব। অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা তাদের আশা এক প্রতাপান্বিত স্বর্গীয় পুনরুত্থানে স্থাপন করেন। (২ পিতর ১:১০, ১১) “অপর মেষেরা” (NW) ঈশ্বরের রাজ্যের পার্থিব এলাকায় এক অনন্তকালীন উত্তরাধিকারের আশা করেন। (যোহন ১০:১৬; মথি ২৫:৩৩, ৩৪) পুনরুত্থান সম্বন্ধে অজানা বিভিন্ন বিষয়গুলির জন্য আমরা স্পষ্টভাবে যিহোবার উপর নির্ভর করতে পারি। আমাদের ভবিষ্যৎ সুখ এমন একজনের হাতে রক্ষিত যিনি “সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ” করতে পারেন।—গীতসংহিতা ১৪৫:১৬; যিরমিয় ১৭:৭.
১৮. (ক) পৌল কোন্ বিজয় সম্বন্ধে তুলে ধরেন? (খ) কেন আমরা পুনরুত্থানের বিশ্বাসে নিশ্চিতভাবে নির্ভর করি?
১৮ পৌল তাঁর যুক্তি এই বিষয়টি ঘোষণা করার দ্বারা শেষ করেন: “ঈশ্বরের ধন্যবাদ হউক, তিনি আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমাদিগকে জয় প্রদান করেন।” (১ করিন্থীয় ১৫:৫৭) হ্যাঁ, যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মাধ্যমে আদমজাত মৃত্যুকে জয় করা হয় এবং অভিষিক্ত ও “অপর মেষ” উভয়েই এই বিজয়ে অংশ নেন। অবশ্য, আজকে জীবিত “অপর মেষ”-দের এমন একটি আশা রয়েছে যা এই বংশের কাছে অদ্বিতীয়। ক্রমবৃদ্ধিরত “বিস্তর লোক”-দের অংশ হিসাবে তারা হয়ত আসন্ন ‘মহাক্লেশে’ রক্ষা পাবেন এবং কখনও আক্ষরিক মৃত্যু ভোগ করবেন না। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) কিন্তু, যারা “কাল ও দৈব” এর কারণে অথবা শয়তানের প্রতিনিধিগুলির হাতে মারা যান তারাও পুনরুত্থানের আশায় তাদের আস্থা রাখতে পারেন।—উপদেশক ৯:১১.
১৯. কোন্ পরামর্শের প্রতি আজকে সমস্ত খ্রীষ্টানেরা অবশ্যই মনোযোগ দেবেন?
১৯ অতএব, আমরা আকুল আকাঙ্ক্ষায় সেই দিনের অপেক্ষা করি যখন মৃত্যু বিলুপ্ত হবে। পুনরুত্থান সম্বন্ধীয় যিহোবার প্রতিজ্ঞায় আমাদের অটল নির্ভরতা বিষয়গুলি সম্বন্ধে আমাদের এক বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এই জীবনে আমাদের প্রতি যাই ঘটুক না কেন—এমনকি আমাদের যদি মৃত্যুও হয়—কোন কিছুই আমাদের কাছ থেকে যিহোবার প্রতিজ্ঞাত পুরস্কারটি ছিনিয়ে নিতে পারে না। সুতরাং, করিন্থীয়দের প্রতি পৌলের চূড়ান্ত পরামর্শ দুই হাজার বছর পূর্বে যেমন ছিল আজকেও তেমনই উপযুক্ত: “হে আমার প্রিয় ভ্রাতৃগণ, সুস্থির হও, নিশ্চল হও, প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া পড়, কেননা তোমরা জান যে, প্রভুতে তোমাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়।”—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ পুনরুত্থিত হওয়ার সময় অভিষিক্তদের কিধরনের দেহ থাকবে সেই প্রশ্নের উত্তর পৌল কিভাবে দিয়েছিলেন?
◻ কিভাবে এবং কখন মৃত্যুকে চূড়ান্তরূপে বিলুপ্ত করা হবে?
◻ পার্থিব পুনরুত্থানে কারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন?
◻ বাইবেল যে সমস্ত বিষয়গুলি সম্বন্ধে নীরব সেগুলি সম্বন্ধে আমাদের কিরূপ মনোভাব রাখা উচিত?
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
একটি বীজ নাটকীয় পরিবর্তন ভোগ করার দ্বারা ‘মারা যায়’
[Pictures on page 23]
প্রাচীন কালের বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীরা, যেমন নোহ, অব্রাহাম, সারা ও রাহব পুনরুত্থিতদের মাঝে থাকবেন
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
পুনরুত্থান মহা আনন্দের এক সময় হবে!