খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্য—পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের পথ
“ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।”—যোহন ৩:১৬.
১, ২. আজ মানবজাতি কোন্ হতাশ অবস্থার মধ্যে রয়েছে বর্ণনা করুন।
মনে করুন, আপনি এমন এক রোগে ভুগছেন যে অস্ত্রোপচার না করালে আপনি মারা যাবেন। অস্ত্রোপচারের খরচ যোগাড় করা আপনার সাধ্যের বাইরে, আপনার কেমন লাগবে? আপনার পরিবার ও বন্ধুরা মিলেও যদি খরচ যোগাতে না পারেন তাহলেই বা কী? জীবন মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আপনি হয়তো সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়ে বসবেন!
২ আজ মানবজাতি এইরকমই এক অবস্থায় রয়েছে। আমাদের প্রথম পিতামাতা, আদম ও হবাকে সিদ্ধ করে সৃষ্টি করা হয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) তারা চিরকাল বেঁচে থাকতে এবং ঈশ্বরের এই উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করতে পারত: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর।” (আদিপুস্তক ১:২৮) কিন্তু, আদম ও হবা তাদের স্রষ্টার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) আদম ও হবার অবাধ্যতা কেবল তাদেরকেই পাপী করেনি সেইসঙ্গে তাদের অজাত সন্তানদেরও করেছিল। বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োব পরে বলেছিলেন: “অশুচি হইতে শুচির উৎপত্তি কে করিতে পারে? এক জনও পারে না।”—ইয়োব ১৪:৪.
৩. কিভাবে সব মানুষের মধ্যে মৃত্যু ছড়িয়ে পড়েছে?
৩ তাই পাপ হল এক রোগের মতো যা আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে এসেছে, কারণ বাইবেল বলে যে “সকলেই পাপ করিয়াছে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) আর এটা জীবন মৃত্যুর প্রশ্ন। সত্যিই, “পাপের বেতন মৃত্যু।” (রোমীয় ৩:২৩; ৬:২৩) আমরা কেউই এর থেকে রেহাই পাই না। সব মানুষ পাপ করেছে, তাই সবাই মারা যায়। আদমের বংশধর হওয়ায় আমাদের পাপে জন্ম নিতে হয়। (গীতসংহিতা ৫১:৫) পৌল লিখেছিলেন “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।” (রোমীয় ৫:১২) কিন্তু তার মানে এই নয় যে, পরিত্রাণের কোন আশাই আমাদের নেই।
পাপ ও মৃত্যুকে চিরকালের জন্য দূর করা
৪. মানুষ কেন অসুস্থতা ও মৃত্যু চিরকালের জন্য দূর করতে পারে না?
৪ পাপ ও এর ফলে আসা মৃত্যুকে চিরকালের জন্য দূর করার জন্য কীসের প্রয়োজন? স্পষ্টতই, এমন কিছু যা মানুষের সাধ্যের বাইরে। গীতরচক দুঃখ করে বলেছিলেন: “মানুষের জীবনের মুক্তির মূল্য অনেক অনেক বেশি। কবর থেকে রক্ষা পাওয়ার ও চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য মূল্য পরিশোধ করা মানুষের পক্ষে অসাধ্য।” (গীতসংহিতা ৪৯:৮, ৯, আজকের ইংরাজি সংস্করণ) একথা স্বীকার করতেই হবে যে ভাল খাবার খেয়ে বা ভাল চিকিৎসা করে আজকে আমরা আমাদের আয়ু কয়েক বছর বাড়াতে পারলেও, আদম ও হবার থেকে আমরা যে পাপ পেয়েছি তা থেকে আমরা কেউই মুক্ত হতে পারি না। আমরা কেউই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বার্ধক্যকে ঠেকাতে পারি না এবং ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য অনুসারে আমাদের দেহকে সিদ্ধতার দিকে নিয়ে যেতে পারি না। তাই পৌল কিছু বাড়িয়ে বলেননি যখন তিনি লিখেছিলেন যে আদমের পাপের কারণে মানুষ “অসারতার বশীকৃত হইল”—অথবা দ্যা যিরূশালেম বাইবেল যেমন এই পদটাকে অনুবাদ করে, “তাদেরকে লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্যর্থ করেছিল।” (রোমীয় ৮:২০) কিন্তু, আনন্দের বিষয় যে স্রষ্টা আমাদের পরিত্যাগ করেননি। তিনি পাপ ও মৃত্যুকে চিরকালের জন্য দূর করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিভাবে?
৫. ইস্রায়েল জাতিকে দেওয়া ব্যবস্থা কিভাবে দেখায় যে ন্যায়বিচার খুবই মূল্যবান?
৫ যিহোবা “ধার্ম্মিকতা ও ন্যায়বিচার ভালবাসেন।” (গীতসংহিতা ৩৩:৫) ইস্রায়েল জাতিকে তিনি যে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন তা দেখায় যে ভারসাম্যপূর্ণ ও পক্ষপাতশূন্য ন্যায়বিচারকে তিনি খুবই মূল্যবান বলে মনে করেন। যেমন, ব্যবস্থায় আমরা পড়ি, ‘প্রাণের পরিশোধে প্রাণ দিতে হইবে।’ অন্য কথায়, একজন ইস্রায়েলীয় যদি কাউকে খুন করত, তাহলে সেই খুনের বদলে তাকে নিজের জীবন দিতে হতো। (যাত্রাপুস্তক ২১:২৩; গণনাপুস্তক ৩৫:২১) এভাবেই ঐশিক ন্যায়বিচারে ভারসাম্য আনা হতো।—যাত্রাপুস্তক ২১:৩০ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
৬. (ক) কোন্ অর্থে আদমকে এক খুনি বলা যায়? (খ) আদম কীধরনের জীবন হারিয়েছিল এবং সঠিক ন্যায়বিচার করার জন্য কোন্ ধরনের বলিদানের দরকার ছিল?
৬ আদম যখন পাপ করেছিল তখন সে একজন খুনি হয়ে উঠেছিল। কোন্ অর্থে? সে তার সমস্ত বংশধরদের মধ্যে পাপ এবং মৃত্যু ছড়িয়ে দিয়েছিল। আদমের পাপের কারণেই এখন এই মুহূর্তে আমাদের দেহ ক্ষয় পাচ্ছে আর আমরা দিনের পর দিন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। (গীতসংহিতা ৯০:১০) আদমের পাপ এমনকি আরও খারাপ অবস্থা নিয়ে এসেছে। ভেবে দেখুন যে আদম তার নিজের জন্য ও তার বংশধরদের জন্য যা হারিয়েছিল, তা ৭০ বা ৮০ বছরের সাধারণ জীবন ছিল না। সে সিদ্ধ জীবন অর্থাৎ অনন্ত জীবন হারিয়েছিল। তাই যদি ‘প্রাণের পরিশোধে প্রাণ দিতে হয়,’ তবে এখন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য কোন্ ধরনের জীবনের প্রয়োজন? যুক্তিসংগতভাবেই, তা হবে সিদ্ধ মানব জীবন—আদমের মতো এক জীবন যা সিদ্ধ সন্তানদের জন্ম দিতে পারত। একজন সিদ্ধ মানুষ যদি নিজেকে বলি হিসাবে উৎসর্গ করেন, তাহলে তা শুধু সঠিক ন্যায়বিচারই হবে না, সেইসঙ্গে পাপ ও এর ফলে আসা মৃত্যুকেও চিরকালের জন্য দূর করবে।
পাপের মূল্য পরিশোধ করা
৭. “মুক্তির মূল্য” শব্দের অর্থ বর্ণনা করুন।
৭ আমাদেরকে পাপ থেকে মুক্ত করার জন্য যে মূল্যের প্রয়োজন সেটাকে বাইবেল “মুক্তির মূল্য” বলে বর্ণনা করেছে। (গীতসংহিতা ৪৯:৭, NW) ইংরেজিতে এই শব্দ, একজন অপহরণকারী কাউকে অপহরণ করার পর মুক্তিপণ হিসাবে যে মূল্য দাবি করে সেই মূল্যকে বোঝাতে পারে। অবশ্য, যিহোবা যে মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা করেছেন তাতে অপহরণের মতো কোন বিষয় জড়িত নেই। কিন্তু মূল্য পরিশোধের বিষয়টা একইরকম। আসলে, যে ইব্রীয় ক্রিয়াপদ থেকে “মুক্তির মূল্য” শব্দটা অনুবাদ করা হয়েছে তার আক্ষরিক অর্থ “পরিশোধ করা।” পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য, মুক্তির মূল্য অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে আর তা আদমের সিদ্ধ জীবনের সমান হতে হবে।
৮. (ক) আবার কিনে নেওয়ার নীতিটা বর্ণনা করুন। (খ) আবার কিনে নেওয়ার নীতি কিভাবে আমরা পাপী হওয়ায় আমাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
৮ মোশির নিয়মের আবার কিনে নেওয়ার নীতির সঙ্গে এর মিল আছে। কোন ইস্রায়েলীয় যদি অভাবে পড়তেন ও নিজেকে একজন ন-ইস্রায়েলীয়ের কাছে দাস হিসাবে বিক্রি করে দিতেন, তাহলে তার মূল্য যত ধরা হতো ঠিক সেই একই মূল্যে তার কোন আত্মীয় তাকে আবার কিনে আনতে (অর্থাৎ মুক্ত করতে) পারতেন। (লেবীয় পুস্তক ২৫:৪৭-৪৯) বাইবেল আমাদের জানায় যে অসিদ্ধ মানুষ হিসাবে আমরা “পাপের দাস।” (রোমীয় ৬:৬; ৭:১৪, ২৫) আমাদেরকে আবার কেনার জন্য কীসের প্রয়োজন? আমরা যেমন দেখেছি যে সিদ্ধ মানব জীবনের পরিবর্তে আরেকটা সিদ্ধ জীবনের প্রয়োজন—এর কমও নয় বা বেশিও নয়।
৯. পাপ থেকে মুক্ত করার জন্য যিহোবা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?
৯ আমরা মানুষেরা অসিদ্ধ অবস্থায় জন্ম নিই। আমরা কেউই আদমের সমান হতে পারি না; আমরা কেউই ন্যায়বিচারের দাবি অনুসারে মুক্তির মূল্য পরিশোধ করতে পারি না। শুরুতে যেমন বলা হয়েছে, এটা এক কঠিন রোগ যা আমাদের মধ্যে রয়েছে এবং অস্ত্রোপচারের খরচ যোগানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। এই অবস্থায়, কেউ যদি আমাদের সাহায্য করেন এবং এর খরচ দিয়ে দেন, তাহলে তার প্রতি কি আমরা কৃতজ্ঞ হব না? যিহোবা ঠিক এইরকম কাজই করেছেন! তিনি আমাদেরকে চিরকালের জন্য পাপ থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেছেন। হ্যাঁ, তিনি আমাদের এমন কিছু দিতে ইচ্ছুক যা আমরা নিজেরা আমাদের নিজেদের জন্য কখনও জোগাড় করতে পারতাম না। সেটা কী? পৌল লিখেছিলেন, “ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।” (রোমীয় ৬:২৩) যোহন যীশুকে এভাবে বর্ণনা করেন, “ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান।” (যোহন ১:২৯) আসুন আমরা দেখি যে মুক্তির মূল্য পরিশোধ করার জন্য যিহোবা কিভাবে তাঁর প্রিয় পুত্রকে ব্যবহার করেছিলেন।
“এক সমরূপ মুক্তির মূল্য”
১০. ‘বংশ’ সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে যোষেফ ও মরিয়মের প্রতি পূর্ণ হয়েছিল?
১০ এদনে বিদ্রোহের ঠিক পরপরই যিহোবা এক ‘বংশ’ বা সন্তান উৎপন্ন করা সম্বন্ধে তাঁর উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছিলেন, যে বংশ মানব জাতিকে পাপ থেকে মুক্ত করবে। (আদিপুস্তক ৩:১৫) শতাব্দী ধরে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করে যিহোবা জানিয়েছিলেন যে এই বংশ কোন্ গোত্র থেকে আসবে। অনেক পরে এসে এই ভবিষ্যদ্বাণী যোষেফ ও মরিয়মের প্রতি পূর্ণ হয়েছিল যারা প্যালেস্টাইনে থাকতেন, আর যারা বাগদত্ত ছিলেন। এক স্বপ্নে যোষেফকে বলা হয়েছিল যে মরিয়ম পবিত্র আত্মার দ্বারা গর্ভবতী হয়েছেন। দূত বলেছিলেন: “তিনি পুত্ত্র প্রসব করিবেন, এবং তুমি তাঁহার নাম যীশু [ত্রাণকর্ত্তা] রাখিবে; কারণ তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ হইতে ত্রাণ করিবেন।”—মথি ১:২০, ২১.
১১. (ক) যিহোবা তাঁর পুত্রকে সিদ্ধ মানুষ হিসাবে জন্ম দেওয়ার জন্য কোন্ ব্যবস্থা করেছিলেন? (খ) কেন যীশু “সমরূপ মুক্তির মূল্য” দিতে পেরেছিলেন?
১১ মরিয়মের এই গর্ভধারণ কোনমতেই সাধারণ ছিল না কারণ পৃথিবীতে মানুষ হিসাবে আসার আগে স্বর্গে যীশুর অস্তিত্ব ছিল। (হিতোপদেশ ৮:২২-৩১; কলসীয় ১:১৫) যিহোবার অলৌকিক ক্ষমতা যীশুর জীবনকে মরিয়মের গর্ভে স্থানান্তরিত করেছিল আর এভাবেই ঈশ্বরের প্রিয় পুত্র, মানুষ হিসাবে জন্ম নিয়েছিলেন। (যোহন ১:১-৩, ১৪; ফিলিপীয় ২:৬, ৭) যিহোবা নিজে এই বিষয়গুলো করেছিলেন যাতে যীশু আদমের পাপে কলুষিত না হন। ফলে, যীশু সিদ্ধ অবস্থায় জন্ম নিয়েছিলেন। এভাবেই তিনি সিদ্ধ মানব জীবন লাভ করেছিলেন যা আদম হারিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, এমন একজন মানুষ পাওয়া গিয়েছিল যিনি পাপের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন! আর সা.কা. ৩৩ সালের ১৪ই নিশান যীশু ঠিক সেই কাজটাই করেছিলেন। ওই ঐতিহাসিক দিনে, যীশু বিরোধীদের হাতে মারা যাওয়াকে মেনে নিয়েছিলেন আর এর দ্বারাই তিনি “[সমরূপ] মুক্তির মূল্য” দিয়েছিলেন।—১ তীমথিয় ২:৬.
সিদ্ধ মানব জীবনের মূল্য
১২. (ক) যীশুর মৃত্যু ও আদমের মৃত্যুর মধ্যে বিরাট পার্থক্যটা কী? (খ) যীশু কিভাবে বাধ্য মানুষদের “সনাতন পিতা” হয়েছিলেন?
১২ যীশু ও আদমের মৃত্যুর মধ্যে এক বিরাট বড় পার্থক্য ছিল আর যার থেকে মুক্তির মূল্যের গুরুত্বকে বোঝা যায়। আদমের মৃত্যু উপযুক্ত ছিল কারণ সে স্বেচ্ছায় তার স্রষ্টার অবাধ্য হয়েছিল। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) অন্যদিকে, যীশুর মৃত্যু ছিল একেবারে অনুপযুক্ত কারণ “তিনি পাপ করেন নাই।” (১ পিতর ২:২২) তাই যীশু যখন মারা গিয়েছিলেন, তার সিদ্ধ মানব জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার ছিল যা পাপী আদমের মৃত্যুতে ছিল না আর এই অধিকার খুবই মূল্যবান ছিল। তাই যীশু মরে নিজেকে বলি দিয়েছিলেন। তারপর এক আত্মিক ব্যক্তি হিসাবে স্বর্গে গিয়ে, তিনি যিহোবার কাছে তাঁর বলিদানের মূল্য সমর্পণ করেছিলেন। (ইব্রীয় ৯:২৪) এটা করে যীশু পাপী মানবজাতিকে কিনে নিয়েছিলেন এবং আদমের জায়গায় তাদের নতুন পিতা হয়েছিলেন। (১ করিন্থীয় ১৫:৪৫) তাই ঠিকই যীশুকে “সনাতন পিতা” বলা হয়েছে। (যিশাইয় ৯:৬) চিন্তা করে দেখুন এটা কী বোঝায়! পাপী পিতা আদম তার সমস্ত বংশধরদের মধ্যে মৃত্যু ছড়িয়ে দিয়েছিল। সিদ্ধ পিতা যীশু, বাধ্য মানবজাতিকে অনন্ত জীবন দেওয়ার জন্য তাঁর বলিদানের মূল্যকে ব্যবহার করেন।
১৩. (ক) আদমের ঋণকে যীশু কিভাবে পরিশোধ করেছিলেন তা উদাহরণ দিয়ে বলুন। (খ) যীশুর বলিদান কেন আমাদের প্রথম পিতামাতার পাপকে মুছে দেয় না?
১৩ কিন্তু, একজনের মৃত্যু কিভাবে অনেকের পাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে? (মথি ২০:২৮) কয়েক বছর আগে একটা প্রবন্ধে মুক্তির মূল্যকে আমরা এভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম: “মনে করুন যে একটা বড় কারখানায় কয়েকশ কর্মী আছেন। সেই কারখানার এক দুষ্ট ম্যানেজার ব্যবসাকে দেউলিয়া করেন; ফলে কারখানাটা বন্ধ হয়ে যায়। শত শত কর্মী বেকার হয়ে যান আর তারা তাদের প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে পারেন না। তাদের স্ত্রীরা, ছেলেমেয়ে এবং পাওনাদারেরা সবাই সেই একজন ব্যক্তির দোষে কষ্ট পেতে থাকেন! এরপর একজন ধনী দাতা আসেন যিনি কোম্পানির সব ঋণ শোধ করে দেন এবং সেই কারখানা আবার চালু করেন। সেই ঋণ পরিশোধ করার ফলে অনেক কর্মী, তাদের পরিবার ও ঋণদাতারা স্বস্তি পান। কিন্তু সেই পুরনো ম্যানেজার কি এই নতুন সাফল্যে কোন অংশ পাবেন? না, কারণ তিনি এখন জেলে আছেন এবং শেষ পর্যন্ত তার চাকরিই চলে যায়! একইভাবে, আদমের ঋণ শোধ করে দেওয়ার ফলে তার লক্ষ লক্ষ বংশধরদের উপকার হয়—কিন্তু আদমের নয়।”
১৪, ১৫. আদম ও হবাকে কেন স্বেচ্ছাচারী পাপী বলা যায় আর তাদের থেকে আমাদের পরিস্থিতি কিভাবে আলাদা?
১৪ এটা ন্যায্য। মনে রাখবেন, আদম ও হবা স্বেচ্ছায় পাপ করেছিল। তারা ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া বেছে নিয়েছিল। অন্যদিকে, আমরা পাপ নিয়ে জন্মেছি। আমাদের বাছাই করার কোন বিষয় নেই। যত প্রাণপণে চেষ্টাই করি না কেন, আমরা পাপকে পুরোপুরি এড়াতে পারি না। (১ যোহন ১:৮) কখনও কখনও আমরা হয়ত পৌলের মতো ভাবতে পারি যিনি লিখেছিলেন: “সৎকার্য্য করিতে ইচ্ছা করিলেও মন্দ আমার কাছে উপস্থিত হয়। বস্তুতঃ আন্তরিক মানুষের ভাব অনুসারে আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করি। কিন্তু আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অন্য প্রকার এক ব্যবস্থা দেখিতে পাইতেছি; তাহা আমার মনের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এবং পাপের যে ব্যবস্থা আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে, আমাকে তাহার বন্দি দাস করে। দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি!”—রোমীয় ৭:২১-২৪.
১৫ কিন্তু তারপরও, মুক্তির মূল্যের কারণে আমাদের আশা আছে! যীশুই হলেন সেই বংশ যার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা মতো, “পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ২২:১৮; রোমীয় ৮:২০) যারা যীশুতে বিশ্বাস করেন তাদের জন্য তাঁর বলিদান চমৎকার সুযোগের দ্বার খুলে দেয়। আসুন আমরা এর কয়েকটা বিষয় আলোচনা করি।
খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্য থেকে উপকার পাওয়া
১৬. পাপী হওয়া সত্ত্বেও, যীশুর মুক্তির মূল্য থেকে আমরা এখন কোন্ উপকারগুলো পাচ্ছি?
১৬ বাইবেলের একজন লেখক যাকোব স্বীকার করেছিলেন, “আমরা সকলে অনেক প্রকারে উছোট খাই।” (যাকোব ৩:২) কিন্তু, খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যের ফলে আমাদের ভুলের ক্ষমা হয়। যোহন লেখেন: “যদি কেহ পাপ করে, তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন, তিনি ধার্ম্মিক যীশু খ্রীষ্ট। আর তিনিই আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত।” (১ যোহন ২:১, ২) আমাদের অবশ্যই পাপকে হালকভাবে দেখা উচিত নয়। (যিহূদা ৪. ১ করিন্থীয় ৯:২৭ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) কিন্তু, আমরা যদি পাপ করি, তবে যিহোবা “ক্ষমাবান” তা জেনে আমরা যিহোবার কাছে আমাদের হৃদয় ঢেলে দিতে পারি। (গীতসংহিতা ৮৬:৫; ১৩০:৩, ৪; যিশাইয় ১:১৮; ৫৫:৭; প্রেরিত ৩:১৯) এভাবে মুক্তির মূল্য আমাদেরকে এক শুদ্ধ বিবেক নিয়ে ঈশ্বরকে সেবা করতে এবং যীশু খ্রীষ্টের নামে প্রার্থনায় তাঁর কাছে যেতে সাহায্য করতে পারে।—যোহন ১৪:১৩, ১৪; ইব্রীয় ৯:১৪.
১৭. মুক্তির মূল্যের কারণে ভবিষ্যতে কোন্ আশীর্বাদগুলো রয়েছে?
১৭ খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হওয়ার পথ খুলে দেয়: বাধ্য মানুষেরা চিরকাল পরমদেশ পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন। (গীতসংহিতা ৩৭:২৯) পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের যত প্রতিজ্ঞা, তাঁহাতেই [যীশুতে] সে সকলের ‘হাঁ’ হয়।” (২ করিন্থীয় ১:২০) এটা সত্যি যে মৃত্যু “রাজত্ব” করছে। (রোমীয় ৫:১৭) মুক্তির মূল্য “শেষ শত্রু”-কে নিশ্চিহ্ন করতে একটা মাধ্যম যোগায়। (১ করিন্থীয় ১৫:২৬; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) যারা মারা গেছেন তাদের জন্যও যীশুর মুক্তির মূল্য উপকার নিয়ে আসে। যীশু বলেছিলেন: “এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার [যীশুর] রব শুনিবে, এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।”—যোহন ৫:২৮, ২৯; ১ করিন্থীয় ১৫:২০-২২.
১৮. মানুষের ওপর পাপের কোন্ দুঃখজনক পরিণতি রয়েছে এবং ঈশ্বরের নতুন জগতে তা কিভাবে দূর হবে?
১৮ একবার ভেবে দেখুন যে জীবন যেমন হওয়ার কথা ছিল সেইরকম জীবন উপভোগ করা কত আনন্দেরই না হবে—সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত যা আজকে আমাদের নিরাশায় ডুবিয়ে দেয়! পাপ শুধু ঈশ্বরের সঙ্গেই আমাদের একতাকে নষ্ট করেনি সেইসঙ্গে আমাদের মন, হৃদয় ও দেহকেও কলুষিত করেছে। কিন্তু বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে যে ঈশ্বরের নতুন জগতে, “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা মানুষকে আর কষ্ট দেবে না। কেন? যিশাইয় উত্তর দেন: “তন্নিবাসী প্রজাদের অপরাধের ক্ষমা হইবে।”—যিশাইয় ৩৩:২৪.
মুক্তির মূল্য—প্রেমের উপহার
১৯. আমাদের নিজেদের কিভাবে খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যের প্রতি সাড়া দেওয়া উচিত?
১৯ প্রেমের কারণেই যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠান। (রোমীয় ৫:৮; ১ যোহন ৪:৯) প্রেমের কারণেই যীশু “মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ” করেছিলেন। (ইব্রীয় ২:৯; যোহন ১৫:১৩) উপযুক্ত কারণেই পৌল লিখেছিলেন: “খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে; . . . তিনি সকলের জন্য মরিলেন, যেন, যাহারা জীবিত আছে, তাহারা আর আপনাদের উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করে, যিনি তাহাদের জন্য মরিয়াছিলেন, ও উত্থাপিত হইলেন।” (২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫) যীশু আমাদের জন্য যা করেছেন তা যদি আমরা উপলব্ধি করি তবে আমরা সাড়া দেব। সবচেয়ে বড় বিষয়, মুক্তির মূল্য আমাদেরকে মৃত্যু থেকে উদ্ধার পেতে সাহায্য করে! আমাদের কাজের দ্বারা আমরা নিশ্চয়ই দেখাতে চাইব না যে আমরা যীশুর বলিদানের মূল্যকে হালকাভাবে নিচ্ছি।—ইব্রীয় ১০:২৯.
২০. কিছু উপায় কী যার দ্বারা আমরা যীশুর “বাক্য” পালন করতে পারি?
২০ মুক্তির মূল্যের জন্য আমরা কিভাবে আমাদের আন্তরিক উপলব্ধি দেখাতে পারি। গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুদিন আগে যীশু বলেছিলেন: “কেহ যদি আমাকে প্রেম করে, তবে সে আমার বাক্য পালন করিবে।” (যোহন ১৪:২৩) যীশুর “বাক্য” তাঁর এই আদেশকে যোগ করে, যা পালন করতে আমাদেরও অংশ নিতে হবে: “তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর।” (মথি ২৮:১৯) যীশুর বাধ্য হতে গেলে আমাদের আধ্যাত্মিক ভাইদেরকে ভালবাসা দেখাতে হবে।—যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.
২১. ১লা এপ্রিলে কেন আমাদের স্মরণার্থক সভায় যোগ দেওয়া উচিত?
২১ খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভায় উপস্থিত হয়ে আমরা সবচেয়ে ভালভাবে মুক্তির মূল্যের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে পারি যা এই বছরের ১লা এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে।a এটাও যীশুর ‘বাক্যের’ অংশ কারণ এই অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার সময় যীশু তাঁর অনুগামীদের আদেশ দিয়েছিলেন: “ইহা আমার স্মরণার্থে করিও।” (লূক ২২:১৯) এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এবং খ্রীষ্ট যা আদেশ দিয়েছেন সেগুলো পালন করে আমরা দেখাব যে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যীশুর মুক্তির মূল্যই হল পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের পথ। সত্যিই, “আর অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই।”—প্রেরিত ৪:১২.
[পাদটীকাগুলো]
a সাধারণ কাল ৩৩ সালের ১৪ই নিশান যীশু মারা গিয়েছিলেন আর তা এই বছর ১লা এপ্রিলে পড়েছে। স্মরণার্থক সভা উদ্যাপনের স্থান ও সময় জানার জন্য আপনার কাছাকাছি যে যিহোবার সাক্ষীরা আছেন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
◻ মানুষেরা কেন তাদের পাপপূর্ণ অবস্থার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে পারে না?
◻ কিভাবে যীশু “সমরূপ মুক্তির মূল্য”?
◻ আমাদের উপকারের জন্য যীশু কিভাবে তাঁর সিদ্ধ মানব জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকারকে ব্যবহার করেছিলেন?
◻ খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যের কারণে মানবজাতির জন্য কোন্ আশীর্বাদগুলো আসে?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
একমাত্র একজন সিদ্ধ ব্যক্তি যিনি আদমের সমরূপ—সঠিক ন্যায়বিচারে সাহায্য করতে পারতেন
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
যেহেতু যীশুর সিদ্ধ মানবজীবন নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার ছিল তাই তাঁর মৃত্যু ছিল নিজেকে বলি দেওয়া