রাজ্য ঘোষণাকারীরা বিবৃতি দেয়
‘সময়ে অসময়ে’ প্রচার করা
বসনিয়া ও হারজিগোভিনায় যুদ্ধের সময় হাজার হাজার লোককে প্রচণ্ড কষ্ট ভোগ করতে হয়েছিল। সেই কষ্টের সময়ে যিহোবার সাক্ষীরা লোকেদের উৎসাহ ও আশা দেওয়ার জন্য সব রকমের চেষ্টা করেছিলেন। নিচে একজন সাক্ষী ভাইয়ের লেখা চিঠি থেকে কিছুটা তুলে দেওয়া হল, যিনি সারাজেভোতে কিছু দিনের জন্য কাজ করেছিলেন।
“এখানে জীবন খুবই কষ্টের কিন্তু তবুও লোকেরা বাইবেলের সত্য জানার জন্য খুবই ইচ্ছুক। এখানকার সাক্ষীরা ধৈর্য ধরে প্রচার করে চলার ক্ষেত্রে এক সুন্দর উদাহরণ। তাদের ধনসম্পত্তি একেবারে নেই বললেই চলে কিন্তু তাদের খুবই উদ্যোগ আছে। মণ্ডলীর প্রায় সব যুবক-যুবতীই পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করে চলেছে। নতুন প্রকাশকেরা তাদের উদ্যোগ দেখে উৎসাহিত হন আর প্রকাশক হওয়ার প্রথম মাস থেকেই ৬০ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় প্রচার করা তাদের কাছে খুব বেশি কিছু বলে মনে হয় না।
“ঘরে ঘরে প্রচার করা ছাড়াও আমরা লোকেদের কাছে পৌঁছানোর জন্য অন্যান্য উপায়গুলো কাজে লাগিয়েছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শহরের অনেক কবরস্থানে বাইবেলের প্রকাশনাদি বিতরণ করে আমরা খুব ভাল ফল পেয়েছি।
“হাসপাতালগুলোতেও সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। সারাজেভোর একটা হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক ১৯৯৬ সালের ৮ই ডিসেম্বরের সচেতন থাক! (ইংরাজি) পত্রিকাটা নেন, যেটার প্রচ্ছদ শিরোনাম ছিল: ‘হার্ট অ্যাটাক—কী করা যেতে পারে?’ অন্যান্য ডাক্তারদের দেওয়ার জন্য তিনি আরও পত্রিকা চান। এরপর সাক্ষীদের সেই বিভাগের সব রোগীদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। ফলে এক ঘন্টার কিছু বেশি সময়ের মধ্যে সব রোগীদের কাছে গিয়ে একশটারও বেশি পত্রিকা দেওয়া হয়েছিল। অনেক রোগী বলেছিলেন যে উৎসাহ এবং আশা দেওয়ার জন্য এই প্রথমবারের মতো কেউ হাসপাতালে তাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
“আরেকবার সাক্ষীরা শিশুদের উপযোগী কিছু পত্রিকা নিয়ে শিশুচিকিৎসা বিভাগে গিয়েছিলেন। সেখানকার প্রধান চিকিৎসকও হাসপাতালের সবার পড়ার জন্য কয়েকটা আমার বাইবেলের গল্পের বই নেন। এখন যে সব মায়েরা হাসপাতালে তাদের ছেলেমেয়েদের দেখতে আসেন তারা প্রতিদিন তাদেরকে বাইবেলের গল্পগুলো পড়ে শোনান। ডাক্তারের সঙ্গে তার ঘরে গিয়ে পুনর্সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থাও করা হয়।
“সারাজেভোতে বিভিন্ন জাতির কয়েক হাজার ন্যাটো [নর্থ আটলান্টিক ট্রীটি অরগানাইজেশন] সৈন্য আছে। তাদের কাছেও ভাল করে সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। মাঝে মাঝে আমরা সামরিক ট্যাংকগুলোতে গিয়ে সমস্ত জাতির জন্য সুসমাচার নামের পুস্তিকা থেকে সাক্ষ্য দিয়ে বিভিন্ন ভাষার প্রহরীদুর্গ ও সচেতন থাক! পত্রিকা দিয়েছিলাম। ইতালীয় সৈন্যবিভাগে দুশটারও বেশি পত্রিকা দেওয়া হয়েছিল। অনেক ইতালীয় সৈন্যরা খুবই অবাক হয়ে বলেন যে এর আগে তারা কখনও যিহোবার সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেননি। যাইহোক, সারাজেভোতে আমরা তাদের কাছে যেতে পেরেছি।
“একদিন একটা সামরিক ট্যাংক রাস্তার একপাশে দাঁড় করানো ছিল। আমি ছাতা দিয়ে গাড়িতে টোকা দেওয়ায় একজন সৈন্য বের হয়ে আসেন। আমি তাকে একটা প্রহরীদুর্গ দেখাই যার প্রচ্ছদ শিরোনাম ছিল ‘শান্তির বার্তাবাহকগণ—তারা কারা?’ তিনি আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি নিশ্চয়ই একজন যিহোবার সাক্ষী, তাই না?’ আমি একজন যিহোবার সাক্ষী তা জানার পর তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আপনারা এখানেও আছেন! পৃথিবীতে এমন কোন জায়গা কি আছে যেখানে যিহোবার সাক্ষীরা নেই?’”
প্রেরিত পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি বাক্য প্রচার কর, সময়ে অসময়ে।” (২ তীমথিয় ৪:২) সারা পৃথিবীর ভাইবোনদের মতো সারাজেভোর যিহোবার সাক্ষীরাও এই কাজ করে যাচ্ছেন—হাসপাতাল থেকে শুরু করে সামরিক ট্যাংকগুলো পর্যন্ত!