দিয়াবল কি আমাদের অসুস্থ করে?
পৃথিবীতে অসুস্থতা থাকারই কথা ছিল না। ঈশ্বর আমাদের নিখুঁত স্বাস্থ্য নিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করেছিলেন। এক আত্মিক প্রাণী শয়তান মানব পরিবারকে দুর্দশায় ভরিয়ে তোলার জন্য অসুস্থতা, ব্যথা ও মৃত্যু এনে দিয়েছিল যখন সে আমাদের প্রথম পিতামাতা আদম ও হবাকে দিয়ে পাপ করিয়েছিল।—আদিপুস্তক ৩:১-৫, ১৭-১৯; রোমীয় ৫:১২.
কিন্তু এটা কি বোঝায় যে সমস্ত অসুস্থতা সরাসরি আত্মিক প্রাণীরাই ঘটিয়ে থাকে? যেমন আমরা আগের প্রবন্ধে দেখেছি, আজকেও অনেকে তাই-ই মনে করে। ছোট্ট ওমাজির ঠাকুমাও ঠিক এইরকমই ভেবেছিলেন। কখনও কখনও ডায়ারিয়া গ্রীষ্মপ্রধান দেশের ছোট বাচ্চাদের খুবই মারাত্মকভাবে হয়। কিন্তু ওমাজির যে ডায়ারিয়া হয়েছিল তা কি সত্যি সত্যিই অদৃশ্য আত্মারা করেছিল?
শয়তানের কার্যকলাপ
বাইবেল খুব পরিষ্কারভাবে এর উত্তর দেয়। প্রথমে এটা দেখায় যে আমাদের মৃত পূর্বপুরুষরা জীবিতদের কোনই ক্ষতি করতে পারে না। কারণ মানুষ যখন মারা যায় তারা “কিছুই জানে না।” তাদের ভিতরে আত্মা বলে কিছু নেই যা মৃত্যুর পরে বেঁচে থাকে। তারা কবরে ঘুমিয়ে থাকে, যেখানে “কোন কার্য্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা, কিছুই নাই।” (উপদেশক ৯:৫, ১০) তাই কোনভাবেই মৃতেরা জীবিতদের অসুস্থ করতে পারে না!
কিন্তু, বাইবেল দেখায় যে দুষ্ট আত্মারা আছে। এই নিখিলবিশ্বে সবচেয়ে প্রথমে এক আত্মিক প্রাণী বিদ্রোহ করেছিল যাকে আজ আমরা শয়তান বলে জানি। অন্য আরও যারা তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল তাদেরকে মন্দ দূত বলা হয়। শয়তান ও মন্দ দূতেরা কি লোকেদের অসুস্থ করতে পারে? হ্যাঁ, তারা করে। যীশু কিছু লোকেদের মধ্যে থেকে মন্দ আত্মাদের দূর করে অলৌকিকভাবে তাদের সুস্থ করেছিলেন। (লূক ৯:৩৭-৪৩; ১৩:১০-১৬) কিন্তু বেশির ভাগ রোগ যা যীশু ভাল করেছিলেন সেগুলোর সবই সরাসরি মন্দ আত্মারা ঘটায়নি। (মথি ১২:১৫; ১৪:১৪; ১৯:২) ঠিক তেমনই, আজকেও অসুস্থতা স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটে থাকে, কোন দৈব শক্তির কারণে নয়।
জাদু-মন্ত্র সম্বন্ধে কী বলা যায়? হিতোপদেশ ১৮:১০ পদ আমাদের ভাল করে জানায়: “সদাপ্রভুর নাম দৃঢ় দুর্গ; ধার্ম্মিক তাহারই মধ্যে পলাইয়া রক্ষা পায়।” যাকোব ৪:৭ পদ বলে: “দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।” হ্যাঁ, ঈশ্বর তাঁর বিশ্বস্ত লোকেদেরকে জাদু-মন্ত্র ও অন্য যে কোন ভূতুড়ে শক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। তাই যীশু যখন বলেছিলেন: “সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে,” তখন তার অর্থ এও ছিল যে ঈশ্বর আমাদের এই ক্ষতিকর শক্তির হাত থেকে রক্ষা করবেন।—যোহন ৮:৩২.
কেউ কেউ হয়তো জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘ইয়োবের সম্বন্ধে কী বলা যায়?’ ‘তাকে কি মন্দ আত্মাই অসুস্থ করেনি?’ হ্যাঁ, বাইবেল বলে যে শয়তান ইয়োবকে অসুস্থ করেছিল। কিন্তু শুধু ইয়োবের ক্ষেত্রেই এটা ঘটেছিল। প্রথম থেকেই ঈশ্বর ইয়োবকে সুরক্ষা যুগিয়ে আসছিলেন তাই মন্দ আত্মারা তার কোনরকম ক্ষতি করতে পারত না। পরে শয়তান যখন ইয়োবের বিশ্বস্ততা সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছিল তখন এর উত্তর দেওয়ার জন্য যিহোবা তাঁর উপাসকের ওপর থেকে কিছু সময়ের জন্য তাঁর সুরক্ষা সরিয়ে নিয়েছিলেন।
কিন্তু, ঈশ্বর ইয়োবকে পুরোপুরি শয়তানের হাতে ছেড়ে দেননি। ঈশ্বর যখন ইয়োবকে যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য শয়তানকে অনুমতি দিয়েছিলেন তখন শয়তান কিছু সময়ের জন্য ইয়োবকে অসুস্থ করতে পারত কিন্তু তাকে মেরে ফেলতে পারত না। (ইয়োব ২:৫, ৬) এরপর কোন এক সময়ে, ইয়োবের কষ্টভোগ শেষ হয়ে যায় আর যিহোবা তার বিশ্বস্ততার জন্য তাকে প্রচুরভাবে পুরস্কৃত করেন। (ইয়োব ৪২:১০-১৭) ইয়োব বিশ্বস্ত থাকায় সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গিয়েছিল আর সেগুলো আমাদের জন্য বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যাতে তা আমাদের সবার কাছে প্রমাণ হিসাবে থাকে। তাই এইরকম আর অন্য কোন পরীক্ষার দরকার নেই।
শয়তান কীভাবে কাজ করে?
প্রায় প্রতিটা ঘটনায়, মানুষের অসুস্থতা এবং শয়তানের মধ্যে একটাই যোগসূত্র হল যে শয়তান প্রথম মানব দম্পতিকে প্রলুব্ধ করে আর তারা পাপ করে। তাই বলে সে ও তার মন্দ দূতেরা আজ সমস্ত রোগের জন্য দায়ী নয়। তবে, শয়তান সবসময়ই আমাদের মধ্যে ভুল চিন্তা নিয়ে আসার ও আমাদের বিশ্বাসের ব্যাপারে আপোশ করানোর চেষ্টা করে চলে যার ফলে হয়ত আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। শয়তান আদম ও হবাকে বাণ মারেনি, হত্যা করেনি এমনকি অসুস্থও করেনি। সে হবাকে ঈশ্বরের অবাধ্য হতে প্ররোচিত করেছিল আর আদমও তার সঙ্গে অবাধ্যতার পথ বেছে নিয়েছিল। আর তাদের এই অবাধ্যতার ফলই ছিল অসুস্থতা ও মৃত্যু।—রোমীয় ৫:১৯.
ইস্রায়েল জাতি একসময় মোয়াবের সীমানার খুব কাছে তাদের তাঁবু খাটিয়েছিল আর তাই মোয়াবের রাজা, বিলিয়ম নামে একজন অবিশ্বস্ত ভাববাদীকে ইস্রায়েল জাতিকে অভিশাপ দেওয়ার জন্য ভাড়া করেছিলেন। বিলিয়ম ইস্রায়েলকে অভিশাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি কারণ ওই জাতি যিহোবার সুরক্ষাধীনে ছিল। তাই পরে মোয়াবীয়রা ইস্রায়েলীয়দের পৌত্তলিকতা ও যৌন অনৈতিকতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে। তাদের এই ফন্দি কাজে লেগেছিল ফলে ইস্রায়েল যিহোবার সুরক্ষা হারিয়েছিল।—গণনাপুস্তক ২২:৫, ৬, ১২, ৩৫; ২৪:১০; ২৫:১-৯; প্রকাশিত বাক্য ২:১৪.
আমরা প্রাচীনকালের ওই ঘটনা থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারি। ঈশ্বরের বিশ্বস্ত উপাসকদের ওপর ঈশ্বরের সুরক্ষা থাকায় শয়তান সরাসরি তাদের ওপর আক্রমণ করতে পারেনি। কিন্তু, শয়তান হয়তো একজন ব্যক্তিকে তার বিশ্বাসের ব্যাপারে আপোশ করানোর চেষ্টা করতে পারে। সে হয়তো তাদেরকে অনৈতিক কাজ করার জন্য প্রলুব্ধ করতে পারে। অথবা, গর্জনকারী সিংহের মতো সে হয়তো তাদেরকে ভয় দেখিয়ে এমন কোন কাজ করানোর চেষ্টা করতে পারে যা করার কারণে তার ওপর থেকে ঈশ্বরের সুরক্ষা চলে যায়। (১ পিতর ৫:৮) আর এইজন্য প্রেরিত পৌল শয়তানকে ‘মৃত্যুর কর্ত্তৃত্ববিশিষ্ট ব্যক্তি’ বলেছিলেন।—ইব্রীয় ২:১৪.
ওমাজির ঠাকুমা, ওই অসুস্থতা থেকে সুরক্ষার জন্য তাবিজ-কবচ পরানো ও ভূতুড়ে সাহায্য নিতে হাওয়াকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন। হাওয়া যদি তাই করতেন তাহলে কী হতো? তিনি দেখাতেন যে যিহোবা ঈশ্বরের ওপর তার বিশ্বাসের অভাব আছে আর তিনি বিশ্বাস করেন না যে যিহোবা সুরক্ষা যোগাতে পারেন।—যাত্রাপুস্তক ২০:৫; মথি ৪:১০; ১ করিন্থীয় ১০:২১.
শয়তান ইয়োবকে দিয়েও ভুল কাজ করানোর চেষ্টা করেছিল। সে তার পরিবার, ধন-সম্পত্তি এমনকি তার স্বাস্থ্য ছিনিয়ে নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি। ইয়োবকে তার স্ত্রী খুব নিমর্ম পরামর্শ দিয়েছিল যখন সে এই কথা বলেছিল: “ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দিয়া প্রাণত্যাগ কর।” (ইয়োব ২:৯) এরপর তার তিনজন “বন্ধু” তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল আর তারা তাকে অনেকভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছিল যে তার অসুস্থতার জন্য তিনি নিজেই দায়ী। (ইয়োব ১৯:১-৩) আর এইভাবেই শয়তান ইয়োবের দুর্বল অবস্থার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, যাতে তিনি নিরাশ হয়ে পড়েন ও যিহোবার ধার্মিকতার ওপর তার বিশ্বাস ভেঙে যায়। এত কিছুর পরও কিন্তু, ইয়োব তার সমস্ত আশা যিহোবার ওপরই রেখেছিলেন আর তাঁর ওপরই নির্ভর করেছিলেন।—গীতসংহিতা ৫৫:২২ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।
আমরা যখন অসুস্থ হই, তখন আমরাও হয়তো ভেঙে পড়ি। শয়তান এইরকমই একটা অবস্থার অপেক্ষায় থাকে আর সে আমাদের দিয়ে এমন কোন কাজ করাতে চেষ্টা করে যা আমাদের বিশ্বাসবিরোধী। সেইজন্য যখন অসুস্থতা আসে তখন এই বিষয়টা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অসিদ্ধতার জন্য অসুস্থ হয়েছি আর এটা একেবারেই কোন ভূতুড়ে কাজের প্রভাব নয়। মনে করে দেখুন যে বিশ্বস্ত ইস্হাক তার মৃত্যুর আগে বেশ কয়েক বছর অন্ধ হয়ে ছিলেন। (আদিপুস্তক ২৭:১) এটা দুষ্ট আত্মাদের জন্য নয় বরং বুড়ো হয়ে যাওয়ার কারণেই হয়েছিল। রাহেল সন্তান প্রসবের সময় মারা গিয়েছিলেন, শয়তান তাকে মেরে ফেলেনি কিন্তু এর কারণ হল মনুষ্য দুর্বলতা। (আদিপুস্তক ৩৫:১৭-১৯) এমন করেই প্রাচীনকালের সব বিশ্বস্ত লোকেরা মারা গিয়েছেন, তারা জাদু-মন্ত্র বা অভিশাপের কারণে নয় বরং উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অসিদ্ধতার কারণেই মারা গিয়েছেন।
আমরা যদি মনে করে নিই যে সমস্ত ছোট বড় অসুস্থতার পিছনে অদৃশ্য আত্মাদের হাত আছে তাহলে তা আমাদের জন্য এক ফাঁদ হয়ে দাঁড়াবে। এটা হয়তো আমাদের মনের মধ্যে আত্মাদের সম্বন্ধে ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিতে পারে। আর তাই আমরা যখন অসুস্থ হব তখন মন্দ আত্মাদের কাছ থেকে দূরে সরে থাকার বদলে আমরা হয়তো তাদেরকে খুশি করার চেষ্টা শুরু করে দিতে পারি। আর শয়তান যদি আমাদের এতখানিই ভয় দেখাতে পারে যে আমরা প্রেতচর্চার সঙ্গে জড়িত বিষয়বস্তুর সাহায্যে নিই, তাহলে তা হবে সত্য ঈশ্বর, যিহোবার সঙ্গে ছলনা করা। (২ করিন্থীয় ৬:১৫) আমাদের ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয় থাকা দরকার কিন্তু তাঁর বিপক্ষের জন্য কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভয় নয়।—প্রকাশিত বাক্য ১৪:৭.
ছোট্ট ওমাজির কাছে দুষ্ট আত্মাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই সবচেয়ে ভাল সুরক্ষা ছিল। প্রেরিত পৌলের কথা অনুযায়ী, ঈশ্বর তাকে “পবিত্র” বলে মনে করেন কারণ তার বিশ্বাসী মা আছে আর তার মা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারেন যেন পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তিনি তার মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে থাকেন। (১ করিন্থীয় ৭:১৪) এইধরনের যথার্থ জ্ঞান থাকায় হাওয়া ওমাজির সুস্থতার জন্য তাবিজ-কবচের ওপর নির্ভর না করে সঠিক চিকিৎসার চেষ্টা করেছিলেন।
অসুস্থতার বিভিন্ন কারণ
বেশিরভাগ লোক আত্মাতে বিশ্বাস করেন না। সুতরাং তারা অসুস্থ হলে আর তাদের কাছে পয়সা থাকলে তারা ডাক্তারের কাছে যান। তবে এটা সত্যি যে একজন অসুস্থ ব্যক্তি ডাক্তারের কাছে গেলেও হয়তো সুস্থ নাও হতে পারেন। কারণ ডাক্তারেরা অলৌকিক কাজ করতে পারেন না। তবুও অনেক কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তি সুস্থ হতে পারেন কিন্তু তারা এমন সময় ডাক্তারের কাছে যান যখন দেখা যায় যে বড় দেরি হয়ে গেছে। তারা সুস্থ হওয়ার জন্য প্রথমে জাদু-মন্ত্র, ঝাড়-ফুঁক পরখ করে দেখেন আর এগুলোতে কাজ না হলে শেষ গতি হিসেবে ডাক্তারের কাছে যান। আর এই কারণে, অনেকে অহেতুকই মারা যান।
অন্যেরা আবার অজ্ঞতার কারণে অকাল মৃত্যুর কবলে পড়েন। তারা রোগের লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন না আর রোগ সারানোর জন্য কোন্ বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে তাও জানেন না। যদি তাদের এই বিষয়ে জ্ঞান থাকে তাহলে তারা অহেতুক দুঃখকষ্ট থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এই বিষয়টা খুব ভালভাবে দেখা গিয়েছে যে শিক্ষিত মায়েদের চেয়ে অশিক্ষিত মায়েদের বাচ্চারা বেশি অসুখে ভুগে মারা যায়। হ্যাঁ, অজ্ঞতার কারণে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
অসুস্থতার আরেকটা কারণ হল অবহেলা। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন কারণ তারা একেবারেই খেয়াল করেন না যে তারা যে খাবার খাচ্ছেন সেগুলো তারা খোলা রেখে দিয়েছেন আর তখন এর ওপর মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে, পোকা-মাকড় বসছে অথবা কেউ কেউ তাদের খাবার তৈরি করার আগে ভালভাবে তাদের হাত ধোন না। এছাড়াও যেসব এলাকায় ম্যালেরিয়া শুরু হয়েছে সেখানে মশারি ছাড়া ঘুমানো খুবই বিপদজনক।a স্বাস্থ্যের ব্যাপারে বলতে গেলে এই কথাটা অনেকটাই সত্যি যে “খানিকটা প্রতিষেধক হাজার হাজার জীবন বাঁচায়।”
খারাপ জীবনযাপন করার কারণেও লাখ লাখ মানুষ অসুস্থ হয় আর অকালেই মারা যায়। মাতলামি, যৌন অনৈতিকতা, নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার আর তামাক জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে অনেকে তাদের স্বাস্থ্যকে নষ্ট করে দেয়। কোন ব্যক্তি যদি এইরকম বদভ্যাস চালিয়ে যায় আর পরে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে কেউ কি বলবেন যে তার ওপর জাদু-মন্ত্র করা হয়েছে অথবা কোন আত্মা তার ওপর ভর করেছে? না। তার এই অসুস্থতার জন্য সে নিজেই দায়ী। আত্মাদের দোষ দেওয়ার মানে হবে যে সে অজুহাত দেখাচ্ছে আর তার এই খারাপ জীবনযাপনের জন্য তার নিজের দায়িত্বকে সে অস্বীকার করছে।
কিন্তু এটাও ঠিক যে কিছু বিষয় আছে যা আমাদের নাগালের বাইরে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায় যে যদি আমরা এমন এক এলাকায় বাস করি যেখানে রোগ ছড়ানোর মতো বিভিন্ন জীবাণু ছড়িয়ে আছে বা পরিবেশ খুবই দূষিত। আর ওমাজির বেলায় ঠিক তাই-ই হয়েছিল। তার মা ভেবে পাচ্ছিলেন না যে কী কারণে এই ডায়ারিয়া হয়েছে। এছাড়াও তার ছেলেমেয়েরা সাধারণত অন্যান্য ছেলেমেয়েদের মতো এত বেশি অসুখে পড়ে না কারণ তিনি তার ঘর ও উঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন এবং খাবার তৈরির আগে সবসময় ভাল করে হাত ধোন। কিন্তু সব ছেলেমেয়েরাই কখনও না কখনও অসুস্থ হয়েই থাকে। প্রায় ২৫টা ভিন্ন ভিন্ন সংক্রমণের কারণে ডায়ারিয়া হতে পারে। এটা হয়তো কখনই জানা যাবে না যে এগুলোর মধ্যে কোন্টার কারণে ওমাজির ডায়ারিয়া হয়েছিল।
চিরকালীন সমাধান
অসুস্থতা ঈশ্বর দেন না। “মন্দ বিষয়ের দ্বারা ঈশ্বরের পরীক্ষা করা যাইতে পারে না, আর তিনি কাহারও পরীক্ষা করেন না।” (যাকোব ১:১৩) যিহোবার একজন উপাসক অসুস্থ হলে তিনি তাকে আধ্যাত্মিকভাবে সুরক্ষা যোগান। “ব্যাধিশয্যাগত হইলে সদাপ্রভু তাহাকে ধরিয়া রাখিবেন; তাহার পীড়ার সময়ে তুমি তাহার সমস্ত শয্যা পরিবর্ত্তন করিয়াছ।” (গীতসংহিতা ৪১:৩) হ্যাঁ, ঈশ্বর করুণাময়। তিনি আমাদের দুঃখকষ্ট দিতে চান না কিন্তু সাহায্য করতে চান।
সত্যি সত্যিই, যিহোবার কাছে অসুস্থতাকে চিরকালের মতো শেষ করে দেওয়ার এক ব্যবস্থা আছে আর তা হল যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান। যীশুর মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে, সৎ হৃদয়ের লোকেরা তাদের পাপপূর্ণ অবস্থা হতে মুক্ত হয়েছেন আর শেষে তারা নিখুঁত স্বাস্থ্য ও এক পার্থিব পরমদেশে অনন্ত জীবনের দিকে পা দেবেন। (মথি ৫:৫; যোহন ৩:১৬) যীশু তাঁর অলৌকিক কাজগুলো করে দেখিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের রাজ্য সত্যিকারের সুস্থতা নিয়ে আসবে। ঈশ্বর সেইসঙ্গে শয়তান ও তার মন্দ দূতদের সরিয়ে ফেলবেন। (রোমীয় ১৬:২০) সত্যিই যিহোবা অপূর্ব বিষয়গুলো সেইসব লোকেদের জন্য মজুত রেখেছেন যারা তাঁকে বিশ্বাস করেন। আমাদের শুধুই ধৈর্য ধরা ও অপেক্ষা করার দরকার রয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে, ঈশ্বর আমাদেরকে বাইবেল ও বিশ্বস্ত উপাসকদের বিশ্বব্যাপী ভাইবোনদের মাধ্যমে কার্যকর প্রজ্ঞা ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি দেখিয়ে দেন যে কীভাবে বাজে অভ্যাসগুলো ছেড়ে দেওয়া যায় যেগুলোর কারণে আমরা অসুস্থ হতে পারি। এছাড়াও তিনি আমাদের জন্য প্রকৃত বন্ধুদের দেন যারা সমস্যার সময় আমাদের সাহায্য করবেন।
আবারও ইয়োবের কথাটা ভাবুন। যদি ইয়োব কোন বৈদ্যর কাছে যেতেন তাহলে সেটাই হতো সবচেয়ে খারাপ বিষয়! এতে তার ওপর থেকে ঈশ্বরের সুরক্ষা চলে যেত আর তার ওই কঠিন পরীক্ষার পরে তার জন্য যে সমস্ত আশীর্বাদ অপেক্ষা করছিল সেগুলোও তিনি হারাতেন। ঈশ্বর ইয়োবকে ভুলে যাননি আর একইভাবে তিনি আমাদেরকেও ভুলে যাবেন না। “তোমরা ইয়োবের ধৈর্য্যের কথা শুনিয়াছ; প্রভুর পরিণামও দেখিয়াছ,” এই কথাগুলো শিষ্য যাকোব বলেছেন। (যাকোব ৫:১১) আমরা যদি কখনও হাল ছেড়ে না দিই তাহলে আমরাও ঈশ্বরের উপযুক্ত সময়ে অপূর্ব আশীর্বাদগুলো পাব।
আর ছোট্ট ওমাজিরই বা কী হয়েছিল? তার মায়ের মনে পড়ে গিয়েছিল যে প্রহরীদুর্গের সাথি পত্রিকা সচেতন থাক! এর একটা প্রবন্ধে খাবার স্যালাইন সম্বন্ধে বলা হয়েছিল।b আর তিনি এটা পড়ে ওমাজির জন্য স্যালাইন তৈরি করেছিলেন। তাই এখন এই ছোট্ট মেয়ে ভাল হয়ে গেছে আর সুস্থ আছে।
[পাদটীকাগুলো]
a প্রায় ৫০ কোটি লোক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। আর প্রায় ২০ লাখ লোক প্রতি বছর এই রোগে মারা যান যার বেশিরভাগই আফ্রিকায় ঘটে।
b ১৯৮৫ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ২৪-২৫ পৃষ্ঠায় “স্যালাইন যা অনেক জীবন বাঁচায়!” নামক প্রবন্ধটা দেখুন।
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার কাছে অসুস্থতাকে চিরদিনের মতো শেষ করে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে