বাইবেল পড়া—উপকারী ও আনন্দদায়ক
“তুমি দিবারাত্র তাহা ধ্যান কর [পড়]।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৮.
১. বিভিন্ন বইপত্রিকা ও বিশেষ করে বাইবেল পড়ার কিছু উপকার কী?
ভাল কিছু পড়লে অনেক উপকার পাওয়া যায়। ফরাসি দার্শনিক মনটেস্কিউ (চার্লস-লুই ডি সেকেনডাট) লিখেছিলেন: “ক্লান্তি দূর করার জন্য বই পড়ার ওপর আর কোন ওষুধ নেই। এক ঘন্টা বই পড়লেই আমার দেহ-মনের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।” আর বাইবেল পড়ার বিষয়ে এই কথাটা পুরোপুরি সত্যি। ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় গীতরচক বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর ব্যবস্থা সিদ্ধ, প্রাণের স্বাস্থ্যজনক; সদাপ্রভুর সাক্ষ্য বিশ্বসনীয়, অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক। সদাপ্রভুর বিধি সকল যথার্থ, চিত্তের আনন্দবর্দ্ধক।”—গীতসংহিতা ১৯:৭, ৮.
২. কেন যিহোবা বাইবেলকে সংরক্ষণ করেছেন আর তাঁর লোকেদের কাছ থেকে তিনি কী চান?
২ বাইবেলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য ধর্মীয় নেতারা ও সাধারণ লোকেরা অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, বাইবেলের মূল লেখক যিহোবা ঈশ্বর, হাজার হাজার বছর ধরে চরম বিরোধিতার মধ্যেও বাইবেলকে সংরক্ষণ করেছেন। ঈশ্বর চান “যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে” আর তাই তিনি ব্যবস্থা করেছেন যাতে সারা পৃথিবীর মানুষেরা বাইবেল পড়তে পারে। (১ তীমথিয় ২:৪) হিসেব করে দেখা গেছে যে পৃথিবীর শতকরা ৮০ ভাগ লোকেদের বোঝার জন্য ১০০টা ভাষায় বইপত্র ছাপানোই যথেষ্ট। কিন্তু, এখন ৩৭০টা ভাষায় পুরো বাইবেল রয়েছে এবং ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষা মিলিয়ে আরও প্রায় ১,৮৬০টা ভাষায় বাইবেলের কিছু কিছু অংশ পাওয়া যায়। যিহোবা চান যে তাঁর লোকেরা যেন তাঁর বাক্য পড়ে। ঈশ্বরের দাসেরা যখন তাঁর বাক্যে মনোযোগ দেন অর্থাৎ রোজ বাইবেল পড়েন তখন তিনি তাদেরকে অনেক আশীর্বাদ করেন।—গীতসংহিতা ১:১, ২.
অধ্যক্ষদের বাইবেল পড়া দরকার
৩, ৪. ইস্রায়েলের রাজাদেরকে যিহোবা কী করতে বলেছিলেন আর কী কী কারণে আজকে খ্রীষ্টান প্রাচীনদেরও তা করা উচিত?
৩ ভবিষ্যতে ইস্রায়েল জাতির রাজা থাকবে জেনে আগেই যিহোবা বলেছিলেন: “স্বীয় রাজ্যের সিংহাসনে উপবেশন কালে সে আপনার নিমিত্ত একখানি পুস্তকে লেবীয় যাজকদের সম্মুখস্থিত এই ব্যবস্থার অনুলিপি লিখিবে। তাহা তাহার নিকটে থাকিবে, এবং সে যাবজ্জীবন তাহা পাঠ করিবে; যেন সে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিতে ও এই ব্যবস্থার সমস্ত বাক্য ও এই সকল বিধি পালন করিতে শিখে; যেন আপন ভ্রাতাদের উপরে তাহার চিত্ত উদ্ধত না হয়, এবং সে আজ্ঞার দক্ষিণে কি বামে না ফিরে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৮-২০.
৪ যিহোবা কেন ইস্রায়েলের ভাবী রাজাদেরকে রোজ তাঁর ব্যবস্থাপুস্তক পড়তে বলেছিলেন, তার কারণগুলো দেখুন: (১) “যেন সে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিতে ও এই ব্যবস্থার সমস্ত বাক্য ও এই সকল বিধি পালন করিতে শিখে”; (২) “যেন আপন ভ্রাতাদের উপরে তাহার চিত্ত উদ্ধত না হয়”; (৩) যেন “সে আজ্ঞার দক্ষিণে কি বামে না ফিরে।” আজকে খ্রীষ্টান অধ্যক্ষদেরও কি যিহোবাকে ভয় করা ও তাঁর ব্যবস্থা মেনে চলা উচিত নয়? অধ্যক্ষদের কি নিজেদেরকে তাদের ভাইদের থেকে বড় মনে না করা এবং যিহোবার আজ্ঞা মেনে চলা উচিত নয়? ইস্রায়েলের রাজাদের জন্য ব্যবস্থাপুস্তক পড়া যতখানি জরুরি ছিল, আজকে খ্রীষ্টান প্রাচীনদের জন্যও বাইবেল পড়া ঠিক ততখানিই জরুরি।
৫. বাইবেল পড়ার বিষয়ে কিছুদিন আগে শাখা কমিটির সমস্ত ভাইদেরকে পরিচালক গোষ্ঠী কী লিখেছিলেন আর সমস্ত খ্রীষ্টান প্রাচীনদের কেন এই পরামর্শ মেনে চলা উচিত?
৫ মণ্ডলীর প্রাচীনদেরকে অনেক কাজ করতে হয় আর তাই রোজ বাইবেল পড়া তাদের জন্য সত্যিই খুব কঠিন। উদাহরণ হিসেবে, যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালক গোষ্ঠীর সদস্যরা এবং সারা পৃথিবীর শাখা অফিসগুলোতে যে ভাইয়েরা শাখা কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করছেন তারাও অনেক ব্যস্ত থাকেন। তবুও কিছুদিন আগে, শাখা কমিটির সমস্ত ভাইদেরকে রোজ বাইবেল পড়ার ও অধ্যয়নের ভাল অভ্যাস গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে পরিচালক গোষ্ঠী একটা চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল যে রোজ বাইবেল পড়লে যিহোবা ও সত্যের জন্য আমাদের ভালবাসা আরও বাড়বে আর “বিশ্বাস ও আনন্দকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে এবং অধ্যবসায়ী হতে আমাদেরকে সাহায্য করবে।” একইভাবে, যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীগুলোর সমস্ত প্রাচীনদেরও রোজ বাইবেল পড়া দরকার। রোজ বাইবেল পড়লে তা তাদেরকে “বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতে” সাহায্য করবে। (যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৭, ৮) বিশেষ করে তাদের জন্য বাইবেল পড়া “শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধন এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারী।”—২ তীমথিয় ৩:১৬, প্রেমের বাণী।
ছোটবড় সবার দরকার
৬. যিহোশূয় কেন ইস্রায়েলের সমস্ত বংশ ও বিদেশিদের জড়ো করে যিহোবার ব্যবস্থা জোরে জোরে পড়েছিলেন?
৬ প্রাচীন কালে সবার কাছে বাইবেল ছিল না আর তাই সমস্ত লোকেদের জড়ো করে তাদের সামনে বাইবেল পড়া হতো। যিহোবা ইস্রায়েল জাতিকে অয় নগরের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী করার পর, যিহোশূয় ইস্রায়েলের প্রত্যেক বংশের লোকেদের এবল ও গরীষীম পাহাড়ের কাছে জড়ো করেছিলেন। ওই বিবরণ বলে যে এরপর “ব্যবস্থাগ্রন্থে যাহা যাহা লিখিত আছে, তদনুসারে তিনি ব্যবস্থার সমস্ত কথা, আশীর্ব্বাদের ও শাপের কথা পাঠ করিলেন। মোশি যাহা যাহা আদেশ করিয়াছিলেন, যিহোশূয় ইস্রায়েলের সমস্ত সমাজের এবং স্ত্রীলোকদের, বালকবালিকাদের ও তাহাদের মধ্যবর্ত্তী প্রবাসিগণের সম্মুখে সেই সমস্ত পাঠ করিলেন, একটী বাক্যেরও ত্রুটী করিলেন না।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ৮:৩৪, ৩৫) ইস্রায়েলীয় ও বিদেশি, ছোটবড় সবাইকে তাদের মনে গেঁথে নিতে হয়েছিল যে কীধরনের আচরণে যিহোবা আশীর্বাদ করবেন এবং কীধরনের আচরণে তিনি শাস্তি দেবেন। রোজ বাইবেল পড়লে এই বিষয়গুলো আমরাও জানতে পারব।
৭, ৮. (ক) আজকে কারা “প্রবাসিগণের” মতো এবং কেন তাদের রোজ বাইবেল পড়া দরকার? (খ) যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে যে ‘বালকবালিকারা’ আছে তারা কীভাবে যীশুকে অনুকরণ করতে পারে?
৭ আধ্যাত্মিক অর্থে চিন্তা করলে, আজকে যে লাখ লাখ লোকেরা যিহোবাকে সেবা করছেন তারাও ওই “প্রবাসিগণের” মতো। সত্যে আসার আগে তারা জগতের মান অনুসারে জীবনযাপন করতেন কিন্তু এখন তারা তাদের জীবনকে বদলেছেন। (ইফিষীয় ৪:২২-২৪; কলসীয় ৩:৭, ৮) তাই, যিহোবা কোন্টাকে ভাল ও কোন্টাকে খারাপ বলে দেখেন, তা তাদের সবসময় মনে রাখা দরকার। (আমোষ ৫:১৪, ১৫) আর রোজ বাইবেল পড়লে এই বিষয়টা সহজেই তারা বুঝতে পারেন।—ইব্রীয় ৪:১২; যাকোব ১:২৫.
৮ যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে অনেক ‘বালকবালিকারা’ আছে, যাদেরকে তাদের বাবামারা যিহোবার নীতিগুলো শিখিয়েছেন। কিন্তু যিহোবার এই নীতিগুলো সঠিক কি না, তা তাদের নিজেদের যাচাই করে দেখা দরকার। (রোমীয় ১২:১, ২) ছেলেমেয়েরা কীভাবে তা যাচাই করতে পারে? ইস্রায়েলের যাজক ও প্রাচীন ব্যক্তিদের বলা হয়েছিল: “তুমি সমস্ত ইস্রায়েলের সাক্ষাতে তাহাদের কর্ণগোচরে এই ব্যবস্থা পাঠ করিবে। তুমি লোকদিগকে, পুরুষ, স্ত্রী, বালক-বালিকা ও তোমার নগর-দ্বারের মধ্যবর্ত্তী বিদেশী সকলকে একত্র করিবে, যেন তাহারা শুনিয়া শিক্ষা পায়, ও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করে, এবং এই ব্যবস্থার সমস্ত কথা যত্নপূর্ব্বক পালন করে; আর তাহাদের যে সন্তানগণ এই সকল জানে না, তাহারা যেন শুনে, এবং . . . তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিতে শিখে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:১১-১৩) মোশির ব্যবস্থা যীশু মেনে চলতেন আর তাই মাত্র ১২ বছর বয়সেও তিনি তাঁর পিতা যিহোবার ব্যবস্থা ভালভাবে বুঝতে চেয়েছিলেন। (লূক ২:৪১-৪৯) বড় হয়ে, সমাজগৃহে গিয়ে শাস্ত্রের কথা শোনা ও শাস্ত্র পড়া তাঁর অভ্যাসে দাঁড়িয়েছিল। (লূক ৪:১৬; প্রেরিত ১৫:২১) আজকে, ছোটদেরকেও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে তারা যেন যীশুর মতো রোজ বাইবেল পড়ে ও নিয়মিত মিটিংগুলোতে আসে কারণ মিটিংয়ে বাইবেল পড়া হয় এবং বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
বাইবেল পড়াকে সবকিছুর আগে রাখুন
৯. (ক) আমরা কী পড়ব বা পড়ব না, তা কেন বাছাই করতে হবে? (খ) এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক বাইবেল ভিত্তিক বইপত্রিকাগুলোর বিষয়ে কী বলেছিলেন?
৯ জ্ঞানী রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “বহুপুস্তক রচনার শেষ হয় না, এবং অধ্যয়নের আধিক্যে শরীরের ক্লান্তি হয়।” (উপদেশক ১২:১২) এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেকেই হয়তো বলবেন, আজকে যে সমস্ত বইপত্র ছাপানো হচ্ছে সেগুলো পড়ে শুধু আমাদের শরীরই ক্লান্ত হয় না সেইসঙ্গে এগুলো আমাদের মনের জন্যও বিপদজনক। তাই, বাছাই করতে শেখা খুবই জরুরি। এইজন্য বাইবেল ভিত্তিক বইপত্রিকা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাইবেলও পড়া দরকার। এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক, বাইবেল ভিত্তিক বইপত্রিকাগুলোর বিষয়ে পাঠকদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “কখনও ভুলে যাবেন না যে বাইবেলই হল আমাদের মানদণ্ড। আমাদেরকে বাইবেল বুঝতে ‘সাহায্য’ করার জন্য যিহোবা যে বইপত্রিকাগুলো জোগাচ্ছেন সেগুলো কোনভাবেই বাইবেলের বিকল্প নয়।”a তাই, বাইবেল ভিত্তিক বইপত্রিকাগুলো আমরা অবশ্যই পড়ব, তবে বাইবেলকে বাদ দিয়ে নয়।
১০. “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” শ্রেণী কীভাবে দেখিয়েছেন যে বাইবেল পড়া খুবই জরুরি?
১০ বাইবেল পড়া দরকার বুঝে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” শ্রেণী অনেক বছর ধরে ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে বাইবেল পড়ার ব্যবস্থা করেছেন। (মথি ২৪:৪৫) এই বিদ্যালয়ে বাইবেল পড়ার জন্য এখন যে তালিকাটা আছে সেই তালিকা মেনে বাইবেল পড়লে সাত বছরের মধ্যে পুরো বাইবেল পড়া যাবে। এই তালিকাটা সবার জন্যই উপকারী, তবে এটা বিশেষ করে নতুন ব্যক্তিদেরকে সাহায্য করবে, যারা কখনও পুরো বাইবেলটা পড়ে শেষ করেননি। যারা ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়েড ও মিনিস্টেরিয়াল ট্রেনিং স্কুলে যোগ দেন এবং বেথেলে নতুন আসেন তাদেরকে এক বছরের মধ্যে বাইবেল পড়ে শেষ করতে বলা হয়। আপনার বা আপনার পরিবারের যে তালিকাই থাকুক না কেন, সেই তালিকার মধ্যে বাইবেল পড়াকে সবকিছুর আগে রাখা দরকার।
আপনার পড়ার অভ্যাস থেকে কী বোঝা যায়?
১১. কেন আমাদের রোজ যিহোবার ইচ্ছা জানা উচিত ও কীভাবে আমরা তা জানতে পারি?
১১ বাইবেল পড়ার তালিকা মেনে চলা যদি আপনার কাছে কঠিন মনে হয়, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘জগতের বইপত্রিকা পড়া বা টেলিভিশন দেখা কি আমাকে বাইবেল পড়ায় বাধা দেয়?’ মনে করে দেখুন যে মোশি কী লিখেছিলেন আর পরে যীশু ওই কথাগুলোকেই আবার বলেছিলেন, “‘মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।’” (মথি ৪:৪; দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩) শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য যেমন রোজ আমাদের রুটি বা ভাত খাওয়া দরকার, তেমনই আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে ভাল রাখার জন্যও রোজ যিহোবার ইচ্ছাগুলো জানা দরকার। আর রোজ বাইবেল পড়েই আমরা যিহোবার ইচ্ছা জানতে পারি।
১২, ১৩. (ক) প্রেরিত পিতর কীভাবে উদাহরণ দিয়ে দেখান যে ঈশ্বরের বাক্যের জন্য আমাদের লালসা থাকা উচিত? (খ) পৌল কীভাবে পিতরের চেয়ে আলাদা অর্থে দুধের উদাহরণ দিয়েছেন?
১২ আমরা যদি বাইবেলকে “মনুষ্যদের বাক্য নয়, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য” মনে করি, তাহলে এর জন্য আমরা লালসা করব, ঠিক যেভাবে কোন শিশু তার মায়ের দুধের জন্য করে থাকে। (১ থিষলনীকীয় ২:১৩) প্রেরিত পিতর সেই বিষয়ে লিখেছিলেন: “নবজাত শিশুদের ন্যায় সেই পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা কর, যেন তাহার গুণে পরিত্রাণের জন্য বৃদ্ধি পাও, যদি তোমরা এমন আস্বাদ পাইয়া থাক যে, প্রভু মঙ্গলময়।” (১ পিতর ২:১-৩) আমাদের জীবনে আমরা যদি সত্যি সত্যি প্রমাণ পেয়ে থাকি যে “প্রভু মঙ্গলময়,” তাহলে বাইবেল পড়ার জন্য আমরা লালসা গড়ে তুলব।
১৩ এখানে লক্ষ্য করার মতো বিষয়টা হল, পিতর এখানে যে অর্থে দুধের কথা বলেছেন, তা প্রেরিত পৌলের চেয়ে একেবারে আলাদা। কোন শিশু জন্মের পর বেড়ে ওঠার জন্য মায়ের দুধ থেকেই সমস্ত পুষ্টি পায়। পিতরের উদাহরণ দেখায় যে “পরিত্রাণের জন্য বৃদ্ধি” পেতে আমাদের যা যা দরকার, ঈশ্বরের বাক্যে তার সবই রয়েছে। অন্যদিকে পৌল বলেন, সেই লোকেদের জন্য দুধ দরকার, যারা নিজেদেরকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পরিপক্ব বলে দাবি করেন অথচ তারা ঠিক মতো আধ্যাত্মিক খাবার খান না। ইব্রীয় খ্রীষ্টানদেরকে পৌল লিখেছিলেন: “এত দিনে তোমাদের শিক্ষক হয়ে ওঠা উচিত ছিল, কিন্তু তার বদলে ঈশ্বরের বাক্যের গোড়ার কথাগুলোই আবার তোমাদের শিক্ষা দেবার জন্য শিক্ষকের দরকার হয়ে পড়েছে। শক্ত খাবারের বদলে ছোট ছেলেমেয়েদের মত আবার তোমাদের দুধ খাওয়া দরকার হয়ে পড়েছে। যে দুধ খেয়ে বাঁচে সে তো এখনও শিশু, আর সৎ জীবন সম্বন্ধে যে শিক্ষা আছে তাতে সে কাঁচা। যাদের বয়স হয়েছে কেবল তারাই শক্ত খাবার খেতে পারে, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্যের কঠিন শিক্ষাগুলো বুঝতে পারে। অনেক অভ্যাসের ফলে তারা ভাল-মন্দ বিচার করতে শিখেছে।” (ইব্রীয় ৫:১২-১৪, প্রে.বা.) মন দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন, ভাল-মন্দ বিচারের ক্ষমতাকে গড়ে তুলতে এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে অনেক সাহায্য করে।
কীভাবে বাইবেল পড়বেন
১৪, ১৫. (ক) বাইবেলের মূল লেখক আমাদেরকে কী করতে বলেন? (খ) ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া প্রজ্ঞা থেকে আমরা কীভাবে উপকার পাই? (উদাহরণ দিন।)
১৪ বাইবেল পড়ে উপকার পাওয়ার জন্য শুধু পড়ে গেলেই হবে না কিন্তু বাইবেল পড়ার আগে প্রার্থনাও করতে হবে। প্রার্থনা করা একটা বিরাট সুযোগ। প্রার্থনা করা এমন, যেন কোন কঠিন বিষয় পড়ার আগে আপনি সেই বইয়ের লেখককে তা বুঝিয়ে দিতে বলছেন। তাই যদি হয়, তাহলে তা কত বড় এক সুযোগই না হবে! বাইবেলের মূল লেখক যিহোবা আপনাকে সেই সুযোগটা দিয়েছেন। প্রথম শতাব্দীর পরিচালক গোষ্ঠীর একজন সদস্য তার খ্রীষ্টান ভাইবোনদেরকে লিখেছিলেন: “যদি তোমাদের কাহারও জ্ঞানের অভাব হয়, তবে সে ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করুক; তিনি সকলকে অকাতরে দিয়া থাকেন, তিরস্কার করেন না; তাহাকে দত্ত হইবে। কিন্তু সে বিশ্বাসপূর্ব্বক যাচ্ঞা করুক কিছু সন্দেহ না করুক।” (যাকোব ১:৫, ৬) আমাদের দিনেও পরিচালক গোষ্ঠী আমাদেরকে সবসময় প্রার্থনা করে বাইবেল পড়ার জন্য উৎসাহ দেন।
১৫ জ্ঞানকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোই হল প্রজ্ঞা। তাই, বাইবেল খোলার আগে প্রার্থনা করে যিহোবার কাছে সাহায্য চান যাতে তিনি আপনাকে দেখিয়ে দেন যে আপনার জীবনে কোন্ বিষয়গুলো আপনি কাজে লাগাতে পারবেন। আপনি আগে যতটুকু জানতেন তার সঙ্গে নতুন জানা বিষয়গুলোকে যুক্ত করুন। যে বিষয়গুলো আপনি জেনেছেন, সেগুলোকে ‘নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শের’ সঙ্গে মেলান। (২ তীমথিয় ১:১৩) যিহোবার প্রাচীন কালের দাসদের কথা চিন্তা করুন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন যে আপনি যদি ওইরকম অবস্থায় থাকতেন, তাহলে আপনি কী করতেন।—আদিপুস্তক ৩৯:৭-৯; দানিয়েল ৩:৩-৬, ১৬-১৮; প্রেরিত ৪:১৮-২০.
১৬. বাইবেল পড়াকে আরও উপকারী করে তোলার ও কাজে লাগানোর জন্য কোন্ বাস্তব পরামর্শগুলো দেওয়া হয়েছে?
১৬ শুধু তালিকা মেনে চলার জন্যই পড়বেন না। পড়ার জন্য সময় নিন। আপনি যা পড়ছেন তা নিয়ে চিন্তা করুন। কোন একটা বিষয়ে কৌতূহল জাগলে আপনার বাইবেলে যদি ক্রস রেফারেন্স দেওয়া থাকে, তাহলে সেগুলো দেখুন। এরপরও যদি বিষয়টা পরিষ্কার না হয়, তাহলে আরও গবেষণা করার জন্য বিষয়টা লিখে রাখুন। আপনি যখন বাইবেল পড়েন তখন যে পদটাকে আপনার দরকারি মনে হয় বা আপনি মনে রাখতে চান, সেটার নিচে দাগ দিন বা লিখে রাখুন। এছাড়া, আপনি নিজে বাইবেলে কিছু নোট ও ক্রস রেফারেন্সের বিষয়ে লিখে রাখতে পারেন। আপনি যদি মনে করেন যে কিছু কিছু বিষয় আপনি প্রচারে বা স্টাডিতে গিয়ে ব্যবহার করতে চান, তাহলে মূল শব্দটা নোট করে রাখুন এবং বাইবেলের পেছনে যে ইনডেক্স আছে সেখান থেকে পরীক্ষা করে দেখুন।b
বাইবেল পড়াকে আনন্দের বিষয় করে তুলুন
১৭. বাইবেল পড়াকে কেন আমাদের আনন্দের বিষয় করা উচিত?
১৭ গীতরচক সেই ব্যক্তিকে সুখী বলেছেন যিনি “সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে [মন দিয়ে পড়ে]।” (গীতসংহিতা ১:২) নিয়মিত বাইবেল পড়া রোজকার জীবনের সাধারণ কাজের মতো নয় কিন্তু সত্যিকারের আনন্দের বিষয় হওয়া উচিত। বাইবেল পড়াকে আনন্দের বিষয় করে তোলার একটা উপায় হল, যা পড়েছেন সেই বিষয়টার উপকার সম্বন্ধে জানা। জ্ঞানী রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “ধন্য সেই ব্যক্তি যে প্রজ্ঞা পায়, . . . তাহার পথ সকল মনোরঞ্জনের পথ, তাহার সমস্ত মার্গ শান্তিময়। যাহারা তাহাকে ধরিয়া রাখে, তাহাদের কাছে তাহা জীবনবৃক্ষ; যে কেহ তাহা গ্রহণ করে, সে ধন্য [সুখী]।” (হিতোপদেশ ৩:১৩, ১৭, ১৮) প্রজ্ঞা অর্জন করার চেষ্টা সার্থক হবেই কারণ এর পথ সুখের, আনন্দের, শান্তির এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হল প্রজ্ঞা জীবন দেয়।
১৮. বাইবেল পড়া ছাড়াও আর কীসের দরকার এবং পরের প্রবন্ধে আমরা কোন্ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব?
১৮ হ্যাঁ, বাইবেল পড়া উপকারী ও আনন্দদায়ক। কিন্তু শুধু পড়াই কি যথেষ্ট? খ্রীষ্টীয়জগতের লোকেরা শত শত বছর ধরে বাইবেল পড়ে আসছে, তারা “সব সময় শিক্ষার কথা শুনেছে, কিন্তু কখনও ঈশ্বরের সত্যকে গভীরভাবে বুঝতে পারছে না।” (২ তীমথিয় ৩:৭, প্রে.বা.) আমরা যদি বাইবেল পড়ে উপকার পেতে চাই, তাহলে এই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের বাইবেল পড়তে হবে যে বাইবেল থেকে আমরা যে জ্ঞান পাব, তা আমাদের নিজেদের জীবনে কাজে লাগাব এবং প্রচারে ও শিক্ষা দেওয়ার সময় ব্যবহার করব। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) আর এর জন্য চেষ্টা ও অধ্যয়নের ভাল পদ্ধতির দরকার, যা পুরস্কার ও আনন্দ নিয়ে আসে। পরের প্রবন্ধে আমরা সেই বিষয়েই দেখব।
[পাদটীকাগুলো]
a ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির যিহোবার সাক্ষিবৃন্দ—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বইয়ের ২৪১ পৃষ্ঠা দেখুন।
b ১৯৯৫ সালের ১লা মে প্রহরীদুর্গ এর ১৬-১৭ পৃষ্ঠার “আপনার বাইবেল পাঠকে উন্নত করে তোলার কিছু প্রস্তাব” অংশটুকু দেখুন।
পুনরালোচনার প্রশ্ন
• ইস্রায়েলের রাজাদেরকে দেওয়া কোন্ পরামর্শ আজকে অধ্যক্ষদের বেলায়ও খাটে এবং কেন?
• আজকে কারা ‘প্রবাসি’ ও ‘বালকবালিকাদের’ মতো এবং কেন তাদের রোজ বাইবেল পড়া দরকার?
• “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” শ্রেণী কীভাবে আমাদেরকে রোজ বাইবেল পড়তে সাহায্য করেছেন?
• বাইবেল পড়ে আমরা কীভাবে উপকার ও আনন্দ পেতে পারি?
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিশেষ করে প্রাচীনদের রোজ বাইবেল পড়া দরকার
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
সমাজগৃহে গিয়ে বাইবেল পড়া যীশুর অভ্যাস ছিল
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]