আমাদের পিতা করুণাময়
“তোমাদের পিতা যেমন দয়ালু [“করুণাময়,” NW], তোমরাও তেমনি দয়ালু [“করুণাময়,” NW] হও।”—লূক ৬:৩৬.
১, ২. কীভাবে অধ্যাপক ও ফরীশী এবং তাঁর অনুসারীদের প্রতি বলা যিশুর কথাগুলো দেখায় যে, করুণা এক কাঙ্ক্ষিত গুণ?
মোশির মাধ্যমে যে-ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছিল, তাতে প্রায় ৬০০টা আইন ও বিধিনিষেধ ছিল। যদিও মোশির ব্যবস্থার চাহিদাগুলো পালন করে চলা অপরিহার্য ছিল কিন্তু করুণা দেখানোর বিষয়টাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যিশু সেই ফরীশীদের কী বলেছিলেন, যারা অন্যদের প্রতি করুণা দেখাতো না, তা বিবেচনা করে দেখুন। দুবার তিনি তাদের তিরস্কার করেছিলেন এই বিষয়টা উল্লেখ করে যে, ঈশ্বর বলেছেন: “আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়।”a (মথি ৯:১০-১৩; ১২:১-৭; হোশেয় ৬:৬) যিশু তাঁর পরিচর্যার শেষের দিকে বলেছিলেন: “হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্ তোমাদিগকে! কারণ তোমরা পোদিনা, মৌরি ও জিরার দশমাংশ দিয়া থাক; আর ব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর বিষয়—ন্যায়বিচার, দয়া ও বিশ্বাস—পরিত্যাগ করিয়াছ।”—মথি ২৩:২৩.
২ নিঃসন্দেহে, যিশু করুণাকে উচ্চমূল্য দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন: “তোমাদের পিতা যেমন করুণাময়, তোমরাও তেমনি করুণাময় হও।” (লূক ৬:৩৬) কিন্তু, এই ক্ষেত্রে ‘ঈশ্বরের অনুকারী হইবার’ জন্য আমাদের জানতে হবে যে, প্রকৃত করুণা আসলে কী। (ইফিষীয় ৫:১) অধিকন্তু, করুণার উপকারগুলো সম্বন্ধে বোঝা আমাদেরকে এই গুণটি নিজেদের জীবনে আরও পূর্ণরূপে দেখাতে পরিচালিত করবে।
সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের প্রতি করুণা
৩. প্রকৃত করুণা আসলে কী, সেটা জানার জন্য কেন আমাদের যিহোবার প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত?
৩ গীতরচক গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভু কৃপাময় ও স্নেহশীল, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্। সদাপ্রভু সকলের পক্ষে মঙ্গলময়, তাঁহার করুণা তাঁহার কৃত সমস্ত পদার্থের উপরে আছে।” (গীতসংহিতা ১৪৫:৮, ৯) যিহোবা হলেন, “করুণা-সমষ্টির পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর।” (২ করিন্থীয় ১:৩) কারো সঙ্গে সমবেদনাপূর্ণ উপায়ে আচরণ করার মাধ্যমে করুণা দেখানো হয়ে থাকে। এটা হল ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বের একটি প্রধান দিক। তাঁর উদাহরণ ও আমাদের প্রতি তাঁর নির্দেশনাগুলো আমাদেরকে শিক্ষা দিতে পারে যে, প্রকৃত করুণা আসলে কী।
৪. যিশাইয় ৪৯:১৫ পদ করুণা সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
৪ যিশাইয় ৪৯:১৫ পদে যেমন লিপিবদ্ধ রয়েছে, যিহোবা বলেন: “স্ত্রীলোক কি আপন স্তন্যপায়ী শিশুকে ভুলিয়া যাইতে পারে? আপন গর্ব্ভজাত বালকের প্রতি কি স্নেহ করিবে না?” এখানে “স্নেহ” হিসেবে অনুবাদিত শব্দটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ইব্রীয় শব্দগুলো, ওপরে উদ্ধৃত গীতসংহিতা ১৪৫:৮, ৯ পদে করুণা শব্দটির ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে। যে-আবেগ যিহোবাকে করুণাময় হতে পরিচালিত করে, সেটাকে সেই উষ্ণ অনুভূতির সঙ্গে তুলনা করা যায়, যা সাধারণত একজন স্তন্যদাত্রী মা তার সন্তানের প্রতি অনুভব করে থাকেন। হতে পারে সেই শিশু ক্ষুধার্ত অথবা তার অন্যান্য চাহিদা রয়েছে। তখন সেই মা, তার ভিতরে যে-সমবেদনার অনুভূতি অথবা সহানুভূতি জেগে ওঠে, সেটার দ্বারা পরিচালিত হয়ে তার শিশুর চাহিদার প্রতি যত্ন নিয়ে থাকেন। যিহোবারও সেই ব্যক্তিদের প্রতি এইরকম কোমল অনুভূতি রয়েছে, যাদের প্রতি তিনি করুণা দেখান।
৫. কীভাবে যিহোবা দেখিয়েছেন যে, ইস্রায়েলের প্রতি তিনি “দয়াধনে ধনবান্”?
৫ সমবেদনা অনুভব করা এক কথা আর সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের উপকারের জন্য সেই অনুযায়ী কাজ করা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। প্রায় ৩,৫০০ বছর আগে, যিহোবার উপাসকরা যখন মিশরে দাসত্বে ছিল, তখন তিনি কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন, তা বিবেচনা করুন। তিনি মোশিকে বলেছিলেন: “সত্যই আমি মিসরস্থ আপন প্রজাদের কষ্ট দেখিয়াছি, এবং কার্য্যশাসকদের সমক্ষে তাহাদের ক্রন্দনও শুনিয়াছি; ফলতঃ আমি তাহাদের দুঃখ জানি। আর মিস্রীয়দের হস্ত হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করিবার জন্য, এবং সেই দেশ হইতে উঠাইয়া লইয়া উত্তম ও প্রশস্ত এক দেশে, . . . সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে তাহাদিগকে আনিবার জন্য নামিয়া আসিয়াছি।” (যাত্রাপুস্তক ৩:৭, ৮) ইস্রায়েলীয়রা মিশর থেকে উদ্ধার লাভ করার প্রায় ৫০০ বছর পর, যিহোবা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন: “আমিই ইস্রায়েলকে মিসর হইতে আনিয়াছি, এবং মিস্রীয়দের হস্ত হইতে, ও তোমাদের প্রতি যে সমস্ত রাজ্য উপদ্রব করিত, তাহাদের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছি।” (১ শমূয়েল ১০:১৮) ঈশ্বরের ধার্মিক মানগুলো থেকে সরে যাওয়ার কারণে ইস্রায়েলীয়রা বার বার চরম কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল। তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাদের জন্য মমতা বা সমবেদনা অনুভব করেছিলেন এবং বার বার তাদেরকে উদ্ধার করেছিলেন। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২:১১-১৬; ২ বংশাবলি ৩৬:১৫) এটা দেখায় যে, প্রেমময় ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের প্রতি কীভাবে সাড়া দেন, যাদের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এবং যারা বিপদ বা কঠিন সমস্যার মধ্যে রয়েছে। যিহোবা “দয়াধনে ধনবান্।”—ইফিষীয় ২:৪.
৬. কীভাবে যিশু খ্রিস্ট করুণা দেখানোর ক্ষেত্রে তাঁর পিতাকে অনুকরণ করেছিলেন?
৬ পৃথিবীতে থাকাকালীন, যিশু করুণা দেখানোর ক্ষেত্রে তাঁর পিতাকে নিখুঁতভাবে অনুকরণ করেছিলেন। যিশু কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন, যখন দুজন অন্ধ ব্যক্তি এই বলে তাঁর কাছে বিনতি করেছিল: “প্রভু, দায়ূদ-সন্তান, আমাদের প্রতি দয়া করুন”? তারা যিশুকে অনুরোধ করছিল যেন তিনি অলৌকিকভাবে তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। যিশু তা-ই করেছিলেন, তবে সেই অলৌকিক কাজ তিনি আবেগহীনভাবে করেননি। “যীশু করুণাবিষ্ট হইয়া” বাইবেল বলে, “তাহাদের চক্ষু স্পর্শ করিলেন, আর তখনই তাহারা দেখিতে পাইল।” (মথি ২০:৩০-৩৪) করুণা যিশুকে এমন অনেক অলৌকিক কাজ করতে পরিচালিত করেছিল, যা অন্ধ, ভূতগ্রস্ত, কুষ্ঠী ও সেইসঙ্গে দুর্দশাগ্রস্ত সন্তান রয়েছে এমন বাবামার জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছিল।—মথি ৯:২৭; ১৫:২২; ১৭:১৫; মার্ক ৫:১৮, ১৯; লূক ১৭:১২, ১৩.
৭. যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের উদাহরণ আমাদেরকে করুণা সম্বন্ধে কী শিক্ষা দেয়?
৭ যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্টের উদাহরণ দেখায় যে, করুণার দুটো বৈশিষ্ট্য রয়েছে—সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা, সহানুভূতি অথবা স্নেহ বা মমতা অনুভব করা এবং গ্রহীতাদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে এমন কাজ করা। করুণাময় হওয়ার জন্য দুটো বিষয়ই আবশ্যক। শাস্ত্রে, করুণা শব্দটি বেশির ভাগ সময়ই সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের প্রতি সদয় বিবেচনার ইতিবাচক এক অভিব্যক্তিকে নির্দেশ করে। কিন্তু, বিচার সংক্রান্ত এক বিষয়ে কীভাবে করুণা দেখানো হয়? করুণা দেখানোর সঙ্গে কি নেতিবাচক এক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এমন বিষয়ও জড়িত রয়েছে, যেমন শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত থাকা?
পাপীদের প্রতি করুণা
৮, ৯. বৎশেবার সঙ্গে পাপ করার পর দায়ূদের প্রতি দেখানো করুণার সঙ্গে কী জড়িত ছিল?
৮ বৎশেবার সঙ্গে প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের পারদারিকতার বিষয়টা, ভাববাদী নাথন দায়ূদের সামনে নিয়ে আসার পর কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন। অনুতপ্ত দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন: “হে ঈশ্বর, তোমার দয়ানুসারে আমার প্রতি কৃপা কর; তোমার করুণার বাহুল্য অনুসারে আমার অধর্ম্ম সকল মার্জ্জনা কর। আমার অপরাধ হইতে আমাকে নিঃশেষে ধৌত কর, আমার পাপ হইতে আমাকে শুচি কর। কেননা আমি নিজে আমার অধর্ম্ম সকল জানি; আমার পাপ সতত আমার সম্মুখে আছে। তোমার বিরুদ্ধে, কেবল তোমারই বিরুদ্ধে আমি পাপ করিয়াছি, তোমার দৃষ্টিতে যাহা কুৎসিত, তাহাই করিয়াছি।”—গীতসংহিতা ৫১:১-৪.
৯ দায়ূদ গভীরভাবে অনুতপ্ত হয়েছিলেন। যিহোবা তার পাপ ক্ষমা করেছিলেন এবং তার ও বৎশেবার ওপর বিচার নিয়ে আসার ক্ষেত্রে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন। মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী দায়ূদ ও বৎশেবা, উভয়কেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ২২:২২) যদিও তারা তাদের পাপের সমস্ত পরিণতি থেকে রেহাই পায়নি কিন্তু তাদের জীবন রক্ষা পেয়েছিল। (২ শমূয়েল ১২:১৩) ঈশ্বরের করুণা দেখানোর সঙ্গে অন্যায় ক্ষমা করা জড়িত। তবে, তিনি উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত হন না।
১০. যদিও বিচার করার সময় যিহোবা করুণাময়, তবুও কেন আমরা অবশ্যই তাঁর করুণার অপব্যবহার করব না?
১০ যেহেতু “এক মনুষ্য [আদম] দ্বারা পাপ . . . জগতে প্রবেশ করিল” এবং “পাপের বেতন মৃত্যু,” তাই সমস্ত মানুষ মৃত্যুর যোগ্য। (রোমীয় ৫:১২; ৬:২৩) আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি যে, বিচার করার সময় যিহোবা করুণা দেখিয়ে থাকেন! কিন্তু, ঈশ্বরের করুণার অপব্যবহার না করার বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। “[ঈশ্বরের] সমস্ত পথ ন্যায্য,” দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪ পদ বলে। করুণা দেখানোর ক্ষেত্রে ঈশ্বর তাঁর ন্যায়বিচারের নিখুঁত মানগুলোকে উপেক্ষা করেন না।
১১. কীভাবে যিহোবা বৎশেবার সঙ্গে দায়ূদের পাপ নিয়ে দায়ূদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের প্রতি উপযুক্ত সম্মান দেখিয়েছেন?
১১ দায়ূদ ও বৎশেবার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিচারটা লাঘব করার আগে, তাদের পাপকে ক্ষমা করতে হতো। ইস্রায়েলীয় যাজকদের তা করার অধিকার ছিল না। তাদেরকে যদি বিষয়টা মীমাংসা করতে দেওয়া হতো, তা হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না। ব্যবস্থা অনুযায়ী সেটাই আবশ্যক ছিল। কিন্তু, দায়ূদের সঙ্গে তাঁর চুক্তির কারণে যিহোবা দেখতে চেয়েছিলেন যে, দায়ূদের পাপ ক্ষমা করার কোনো ভিত্তি আছে কি না। (২ শমূয়েল ৭:১২-১৬) তাই, “সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” যিহোবা ঈশ্বর, যিনি ‘অন্তঃকরণের পরীক্ষা করিয়া থাকেন,’ তিনি নিজে বিষয়টা মীমাংসা করা বেছে নিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১৮:২৫; ১ বংশাবলি ২৯:১৭) ঈশ্বর একেবারে সঠিকভাবে দায়ূদের হৃদয় পড়তে, তার অনুতাপের অকৃত্রিমতা মূল্যায়ন করতে এবং ক্ষমা করতে সমর্থ ছিলেন।
১২. কীভাবে পাপী মানুষ ঈশ্বরের করুণা থেকে উপকার লাভ করতে পারে?
১২ উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপের শাস্তি থেকে আমাদের মুক্তি সম্ভবপর করার মাধ্যমে যিহোবা যে-করুণা দেখিয়েছেন, তা তাঁর ন্যায়বিচারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ন্যায়বিচার লঙ্ঘন না করেই পাপের ক্ষমা সম্ভবপর করার জন্য যিহোবা তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান জুগিয়েছেন—সর্বকালের সর্বমহান করুণা দেখিয়েছেন। (মথি ২০:২৮; রোমীয় ৬:২২, ২৩) ঈশ্বরের সেই করুণা, যা আমাদেরকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপের শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে, তা থেকে উপকার লাভ করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ‘পুত্ত্রে বিশ্বাস করিতে হইবে।’—যোহন ৩:১৬, ৩৬.
করুণা ও ন্যায়বিচারের ঈশ্বর
১৩, ১৪. ঈশ্বরের করুণা কি তাঁর ন্যায়বিচারকে হালকা করে দেয়? ব্যাখ্যা করুন।
১৩ যদিও যিহোবার করুণা তাঁর ন্যায়বিচারের মানকে লঙ্ঘন করে না কিন্তু এটা কি কোনো উপায়ে তাঁর ন্যায়বিচারকে প্রভাবিত করে? করুণা কি ঐশিক ন্যায়বিচারকে হালকা করার মাধ্যমে এর প্রভাবকে হ্রাস করে দেয়? না, তা করে না।
১৪ ভাববাদী হোশেয়র মাধ্যমে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “আমি চিরকালের জন্য তোমাকে বাগ্দান করিব; হাঁ, ধার্ম্মিকতায়, ন্যায়বিচারে, দয়াতে ও বহুবিধ অনুকম্পায় তোমাকে বাগ্দান করিব।” (হোশেয় ২:১৯) এই কথাগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যিহোবার করুণা দেখানো সবসময় তাঁর অন্যান্য গুণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার মধ্যে ন্যায়বিচারও রয়েছে। যিহোবা হলেন, “স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, . . . অপরাধের, অধর্ম্মের ও পাপের ক্ষমাকারী; তথাপি তিনি অবশ্য [পাপের] দণ্ড দেন।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭) যিহোবা করুণা ও ন্যায়বিচারের ঈশ্বর। তাঁর সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) ঈশ্বরের করুণার মতো তাঁর ন্যায়বিচারও সিদ্ধ। কোনোটাই অন্যটার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয় অথবা কোনোটারই অন্যটার প্রভাবকে হালকা করার দরকার হয় না। এর পরিবর্তে, উভয় গুণই পরস্পরের সঙ্গে নিখুঁত সামঞ্জস্য বজায় রেখে কাজ করে।
১৫, ১৬. (ক) কী দেখায় যে, ঐশিক ন্যায়বিচার কঠোর নয়? (খ) যিহোবা যখন এই বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ওপর তাঁর বিচার নিয়ে আসবেন, তখন তাঁর উপাসকরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারে?
১৫ যিহোবার ন্যায়বিচার কঠোর নয়। প্রায় সবসময়ই ন্যায়বিচারের বৈধ তাৎপর্য রয়েছে আর বিচার সাধারণত অন্যায়কারীদের প্রাপ্য শাস্তি নিয়ে আসে। কিন্তু, ঈশ্বরীয় ন্যায়বিচারের সঙ্গে যোগ্য ব্যক্তিদের পরিত্রাণও জড়িত থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সদোম ও ঘমোরা নগরের দুষ্ট লোকেদের যখন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল, তখন কুলপতি লোট ও তার দুই মেয়ে রক্ষা পেয়েছিল।—আদিপুস্তক ১৯:১২-২৬.
১৬ আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা যখন বর্তমান বিধিব্যবস্থার ওপর তাঁর বিচার নিয়ে আসবেন, তখন সত্য উপাসকদের “বিস্তর লোক,” যারা “মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে, ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে,” তারা রক্ষা পাবে। এভাবে, তারা “মহাক্লেশের মধ্য হইতে” আসবে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৪.
কেন করুণাময় হবেন?
১৭. করুণাময় হওয়ার মূল কারণ কী?
১৭ যিহোবা ও যিশু খ্রিস্টের উদাহরণ সত্যিই আমাদের শিক্ষা দেয় যে, প্রকৃত করুণা আসলে কী। করুণাময় হওয়ার মূল কারণ সম্বন্ধে তুলে ধরে হিতোপদেশ ১৯:১৭ পদ বলে: “যে দরিদ্রকে কৃপা করে, সে সদাপ্রভুকে ঋণ দেয়; তিনি তাহার সেই উপকারের পরিশোধ করিবেন।” আমরা যখন অন্যদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে করুণাময় হয়ে যিহোবা ও তাঁর পুত্রকে অনুকরণ করি, তখন যিহোবা খুশি হন। (১ করি. ১০:৩৪) আর অন্যেরাও করুণাময় হওয়ার জন্য উৎসাহিত হয় কারণ করুণার প্রতিদানে করুণা পাওয়া যায়।—লূক ৬:৩৮.
১৮. কেন আমাদের করুণাময় হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত?
১৮ করুণা হল অনেক উত্তম গুণের মিশ্রণ। এর সঙ্গে সদয়ভাব, প্রেম ও মঙ্গলভাব জড়িত। সমবেদনা ও সহানুভূতির মতো কোমল অনুভূতি হল, করুণাপূর্ণ কাজের প্রেরণা। যদিও ঈশ্বরীয় করুণা ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে আপোশ করে না কিন্তু যিহোবা ক্রোধে ধীর এবং অন্যায়কারীদেরকে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য ধৈর্য ধরে যথেষ্ট সময় দেন। (২ পিতর ৩:৯, ১০) এভাবে করুণা ধৈর্য ও দীর্ঘসহিষ্ণুতার সঙ্গে যুক্ত। করুণাপূর্ণ এক কাজের সঙ্গে যেহেতু অনেক কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য যুক্ত—যার মধ্যে ঈশ্বরের আত্মার ফলের বিভিন্ন দিকও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—তাই এই ধরনের এক কাজ এই গুণাবলি গড়ে তোলার এক সুযোগে পরিণত হয়। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) তাই, আমাদের জন্য করুণাময় হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ!
“ধন্য যাহারা দয়াশীল”
১৯, ২০. কোন উপায়ে করুণা বিচারজয়ী হয়ে শ্লাঘা করে?
১৯ শিষ্য যাকোব আমাদের বলেন যে, কেন করুণাকে আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য গুণ করে তোলা উচিত। তিনি লিখেছিলেন: “দয়াই বিচারজয়ী হইয়া শ্লাঘা করে।” (যাকোব ২:১৩খ) যাকোব সেই করুণা সম্বন্ধে বলছিলেন, যা যিহোবার একজন উপাসক অন্যদের প্রতি দেখিয়ে থাকে। এটি এই অর্থে বিচারজয়ী হয়ে শ্লাঘা করে যে, একজন ব্যক্তির যখন ‘ঈশ্বরের কাছে আপন নিকাশ দিবার’ সময় আসে, তখন যিহোবা সেই ব্যক্তির করুণাপূর্ণ আচরণকে বিবেচনা করেন এবং তাঁর পুত্রের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে তাকে ক্ষমা করেন। (রোমীয় ১৪:১২) কোনো সন্দেহ নেই যে, একটা যে-কারণে দায়ূদকে বৎশেবার সঙ্গে তার পাপের জন্য ক্ষমা করা হয়েছিল, সেটা ছিল যে দায়ূদ নিজে একজন করুণাময় ব্যক্তি ছিলেন। (১ শমূয়েল ২৪:৪-৭) অন্যদিকে, “যে ব্যক্তি দয়া করে নাই, বিচার তাহার প্রতি নির্দ্দয়।” (যাকোব ২:১৩ক) এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, “নির্দ্দয়” ব্যক্তিকে, তাদের মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যাদেরকে যিহোবা “মৃত্যুর যোগ্য” বলে গণ্য করেন!—রোমীয় ১:৩১, ৩২.
২০ পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু বলেছিলেন: “ধন্য যাহারা দয়াশীল, কারণ তাহারা দয়া পাইবে।” (মথি ৫:৭) এই কথাগুলো কত জোরালোভাবেই না দেখায় যে, যারা ঈশ্বরের করুণা পেতে চায়, তাদের নিজেদেরও করুণাময় হওয়া উচিত! পরের প্রবন্ধ আলোচনা করবে যে, কীভাবে আমরা আমাদের রোজকার জীবনে করুণা দেখাতে পারি।
[পাদটীকা]
a বাংলা বাইবেলে মূল ভাষার যে-শব্দটিকে করুণা হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি দয়া, কৃপা, স্নেহ, অনুকম্পা হিসেবেও অনুবাদিত হয়েছে।
আপনি কী শিখেছেন?
• করুণা কী?
• কোন কোন উপায়ে করুণা দেখানো হয়?
• কোন উপায়ে যিহোবা করুণা ও ন্যায়বিচারের ঈশ্বর?
• কেন আমাদের করুণাময় হওয়া উচিত?
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের প্রতি যিহোবার কোমল অনুভূতি ঠিক একজন মায়ের সেই অনুভূতির মতো, যা তার শিশুর প্রতি রয়েছে
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশুর অলৌকিক কাজগুলো থেকে করুণা সম্বন্ধে আমরা কী শিখি?
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
দায়ূদের প্রতি করুণা দেখিয়ে যিহোবা কি তাঁর ন্যায়বিচার লঙ্ঘন করেছিলেন?
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
পাপী মানুষদের প্রতি ঈশ্বরের করুণা তাঁর ন্যায়বিচারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ