যিহোবা আমাদের “নিস্তারকর্ত্তা”
“সদাপ্রভু তাহাদের সাহায্য করেন, তাহাদিগকে রক্ষা করেন।”—গীত. ৩৭:৪০.
১, ২. যিহোবা সম্বন্ধে কোন মৌলিক সত্য আমাদের জন্য সান্ত্বনা ও শক্তির এক উৎস?
সূর্যের দ্বারা সৃষ্ট ছায়া এক জায়গায় স্থির থাকে না। পৃথিবী ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে ছায়াও সবসময় অবস্থান বদলাতে থাকে এবং পরিবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু, পৃথিবী ও সূর্যের সৃষ্টিকর্তা কখনো পরিবর্তিত হন না। (মালাখি ৩:৬) “যাঁহাতে,” বাইবেল বলে, “অবস্থান্তর কিম্বা পরিবর্ত্তনজনিত ছায়া হইতে পারে না।” (যাকোব ১:১৭) যিহোবা সম্বন্ধে এই মৌলিক সত্য আমাদের জন্য প্রকৃতই সান্ত্বনা ও শক্তির এক উৎস আর তা বিশেষভাবে সেই সময়ে, যখন আমরা বিভিন্ন পরীক্ষা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হই। কেন?
২ আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন লক্ষ করেছি যে, বাইবেলের সময়ে যিহোবা “নিস্তারকর্ত্তা” হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন। (গীত. ৭০:৫) তিনি অপরিবর্তনীয় এবং তাঁর বাক্য অনুযায়ী কাজ করেন; তাই আজকে তাঁর উপাসকদের ‘তাহাদের সাহায্য করিবার, তাহাদিগকে রক্ষা করিবার’ ব্যাপারে তাঁর ওপর নির্ভর করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। (গীত. ৩৭:৪০) কীভাবে যিহোবা আধুনিক দিনে তাঁর দাসদের রক্ষা করেছেন? কীভাবে তিনি হয়তো আমাদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে তা করতে পারেন?
বিরোধীদের কাছ থেকে উদ্ধার
৩. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, বিরোধীরা যিহোবার লোকেদের সুসমাচার প্রচার করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না?
৩ শয়তানের কোনো বিরোধিতাই কখনো যিহোবা যে-একাগ্র উপাসনা পাওয়ার যোগ্য, তা দেওয়া থেকে যিহোবার সাক্ষিদের বিরত করতে পারবে না। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয়: “যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না; যে কোন জিহ্বা বিচারে তোমার প্রতিবাদিনী হয়, তাহাকে তুমি দোষী করিবে।” (যিশা. ৫৪:১৭) বিরোধীরা ঈশ্বরের লোকেদের প্রচার করার ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। দুটো উদাহরণ বিবেচনা করুন।
৪, ৫. উনিশশো আঠারো সালে যিহোবার লোকেরা কোন বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল আর এর ফল কী হয়েছিল?
৪ উনিশশো আঠারো সালে, যিহোবার লোকেরা সেই পাদরিদের দ্বারা প্ররোচিত ক্রমবর্ধমান তাড়না ভোগ করেছিল, যারা তাদের প্রচার কাজকে বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার মে মাসের ৭ তারিখে, জে. এফ. রাদারফোর্ড, যিনি সেই সময় বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজ দেখাশোনা করতেন, তার বিরুদ্ধে এবং প্রধান কার্যালয়ের বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। দুই মাসের মধ্যে ভাই রাদারফোর্ড ও তার সঙ্গীদেরকে অন্যায্যভাবে ষড়যন্ত্রের দোষে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য জেলে পাঠানো হয়েছিল। বিরোধীরা কি প্রচার কাজকে চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আদালতকে ব্যবহার করায় সফল হয়েছিল? অবশ্যই না!
৫ যিহোবার এই প্রতিজ্ঞা স্মরণ করে দেখুন: “যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না।” ঘটনার নাটকীয় এক পরিবর্তনে, ১৯১৯ সালের ২৬ মার্চ—ভাই রাদারফোর্ড ও তার সহযোগীরা সাজা পাওয়ার নয় মাস পর—জেলে বন্দি থাকা ভাইয়েরা জামিনে ছাড়া পায়। পরের বছর অর্থাৎ ১৯২০ সালের ৫ মে, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো খারিজ করা হয়। ভাইয়েরা তাদের এই স্বাধীনতা রাজ্যের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করে। এর ফল কী হয়? সেই সময় থেকে বিস্ময়কর প্রসার ঘটেছে! যা-কিছু ঘটেছে, সেই সমস্তকিছুর জন্য কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য হচ্ছেন “নিস্তারকর্ত্তা।”—১ করি. ৩:৭.
৬, ৭. (ক) নাতসি জার্মানিতে যিহোবার সাক্ষিদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান চালানো হয়েছিল আর এর ফল কী হয়েছিল? (খ) যিহোবার লোকেদের আধুনিক দিনের ইতিহাস কোন ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে?
৬ এবার দ্বিতীয় উদাহরণটা বিবেচনা করুন। ১৯৩৪ সালে হিটলার জার্মানির যিহোবার সাক্ষিদের নির্মূল করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। সেটা নিছক এক হুমকি ছিল না। এর পর পরই ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তার ও বন্দি করা হয়। হাজার হাজার সাক্ষি তাড়িত হয়; শত শত সাক্ষিকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে হত্যা করা হয়। সাক্ষিদের নির্মূল করে দেওয়ার বিষয়ে হিটলারের অভিযান কি সফল হয়েছিল? তিনি কি জার্মানিতে সমস্ত সুসমাচার প্রচার কাজ বন্ধ করতে পেরেছিলেন? না! তাড়নার সময়ে, আমাদের ভাইয়েরা গোপনে প্রচার কাজ চালিয়ে গিয়েছিল। নাতসি শাসনের পতনের পর, তারা তাদের স্বাধীনতা প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করেছিল। বর্তমানে, জার্মানিতে ১,৬৫,০০০-রেরও বেশি রাজ্য প্রকাশক রয়েছে। আবারও, “নিস্তারকর্ত্তা” তাঁর এই প্রতিজ্ঞা রেখেছেন: “যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না।”
৭ যিহোবার সাক্ষিদের আধুনিক ইতিহাস এই প্রমাণ দেয় যে, যিহোবা কখনো তাঁর লোকেদেরকে একটা দল হিসেবে নির্মূল হতে দেবেন না। (গীত. ১১৬:১৫) কিন্তু, ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? কীভাবে যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আমাদেরকে রক্ষা করেন?
দৈহিক সুরক্ষা সম্বন্ধে কী বলা যায়?
৮, ৯. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, আমাদের তাৎক্ষণিক দৈহিক সুরক্ষা সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি? (খ) আমাদের বাস্তবসম্মতভাবে কী স্বীকার করতে হবে?
৮ আমরা জানি যে, ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে আমাদের তাৎক্ষণিক দৈহিক সুরক্ষা সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। আমরা সেই তিনজন বিশ্বস্ত ইব্রীয়ের দ্বারা প্রকাশিত অবস্থান গ্রহণ করি, যারা রাজা নবূখদ্নিৎসরের স্বর্ণময় প্রতিমার সামনে প্রণিপাত করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেই ঈশ্বরভয়শীল যুবকেরা এইরকম ধরে নেয়নি যে, যিহোবা তাদেরকে দৈহিক ক্ষতি থেকে অলৌকিকভাবে সুরক্ষা করবেন। (পড়ুন, দানিয়েল ৩:১৭, ১৮.) পরবর্তী সময়ে দেখা গিয়েছিল যে, যিহোবা তাদেরকে প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের শিখা থেকে উদ্ধার করেছিলেন। (দানি. ৩:২১-২৭) কিন্তু, এমনকি বাইবেলের সময়েও, অলৌকিকভাবে উদ্ধার খুব কমই ঘটত। যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত দাস বিরোধীদের হাতে মৃত্যুবরণ করেছিল।—ইব্রীয় ১১:৩৫-৩৭.
৯ আজকের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়? “নিস্তারকর্ত্তা” হিসেবে যিহোবা নিশ্চিতভাবেই ব্যক্তি বিশেষদের বিপদজনক পরিস্থিতিগুলো থেকে উদ্ধার করতে পারেন। নির্দিষ্ট ঘটনাগুলোতে যিহোবা হস্তক্ষেপ করেছিলেন নাকি করেননি, তা কি আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি? না। তা সত্ত্বেও, কোনো বিপদজনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেয়ে একজন ব্যক্তি হয়তো মনে করতে পারেন যে, যিহোবা এতে হস্তক্ষেপ করেছেন। সেই ব্যক্তির অনুভূতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা হবে ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ। একইসঙ্গে, আমাদের বাস্তবসম্মতভাবে এও স্বীকার করতে হবে যে, অনেক বিশ্বস্ত খ্রিস্টান তাড়নার কারণে মারা গিয়েছেন, যেমনটা নাতসি আমলে হয়েছিল। আবার অন্যেরা দুঃখজনক পরিস্থিতিতে মারা গিয়েছে। (উপ. ৯:১১) আমরা হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘যিহোবা কি সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জন্য “নিস্তারকর্ত্তা” হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, যাদের অকালমৃত্যু হয়েছে?’ তা কখনোই সত্য হতে পারে না।
১০, ১১. কেন মানুষ মৃত্যুর কাছে অসহায় কিন্তু এই বিষয়ে যিহোবা কী করতে পারেন?
১০ এটা বিবেচনা করুন: মৃত্যুর কাছে মানুষ অসহায় কারণ কোনো মানুষ মানবজাতির সাধারণ কবর ‘পাতালের হস্ত হইতে আপন প্রাণ মুক্ত করিতে’ পারে না। (গীত. ৮৯:৪৮) কিন্তু, যিহোবা সম্বন্ধে কী বলা যায়? নাতসি নির্যাতনের সময়ে রক্ষা পেয়েছিলেন এমন একজন বোন, কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে প্রিয়জনদের হারানোর বিষয়ে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য একবার তার সাক্ষি মা যা বলেছিলেন, তা স্মরণ করেন: “মৃত্যু যদি চিরকাল মানবজাতিকে আঁকড়ে ধরে রাখত, তাহলে তা ঈশ্বরের চেয়ে শক্তিশালী হতো, তাই না?” নিশ্চিতভাবেই, মৃত্যু কখনোই জীবনের সর্বশক্তিমান উনুই বা উৎসের চেয়ে বেশি শক্তিশালী নয়! (গীত. ৩৬:৯) যারা পাতালে রয়েছে, তারা সকলে যিহোবার স্মৃতিতে রয়েছে আর তিনি তাদের প্রত্যেককে রক্ষা করবেন।—লূক ২০:৩৭, ৩৮; প্রকা. ২০:১১-১৪.
১১ ইতিমধ্যে, যিহোবা বর্তমানে তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের সত্যিই যত্ন নিয়ে থাকেন। আসুন আমরা তিনটে উপায় বিবেচনা করি, যেগুলোতে যিহোবা নিশ্চিতভাবে আমাদের “নিস্তারকর্ত্তা।”
আধ্যাত্মিকভাবে সুরক্ষিত
১২, ১৩. কেন আধ্যাত্মিক সুরক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে যিহোবা আমাদের জন্য তা জোগান?
১২ যিহোবা আমাদের আধ্যাত্মিক সুরক্ষা প্রদান করেন, যা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সত্য খ্রিস্টান হওয়ায় আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, আমাদের বর্তমান জীবনের চেয়ে আরও মূল্যবান কিছু রয়েছে। আমাদের মহামূল্যবান সম্পদ হল, যিহোবার সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক। (গীত. ২৫:১৪, NW; ৬৩:৩) সেই সম্পর্ক না থাকলে, আমাদের বর্তমান জীবনের কোনো মূল্যই থাকবে না এবং আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন হবে আশাহীন।
১৩ আনন্দের বিষয় যে, যিহোবার সঙ্গে এক নিকট সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমাদের যে-সাহায্যের প্রয়োজন, সেই সমস্তই তিনি আমাদের প্রদান করেন। আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য আমাদের কাছে তাঁর বাক্য, তাঁর পবিত্র আত্মা ও বিশ্বব্যাপী তাঁর মণ্ডলী রয়েছে। কীভাবে আমরা পূর্ণরূপে এই ব্যবস্থাগুলোর সদ্ব্যবহার করতে পারি? নিয়মিতভাবে ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করে আমরা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে ও আমাদের আশাকে উজ্জ্বল রাখতে পারব। (রোমীয় ১৫:৪) তাঁর আত্মার জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে, আমরা আপত্তিজনক আচরণে রত হওয়ার প্রলোভনকে প্রতিরোধ করার জন্য সাহায্য লাভ করব। (লূক ১১:১৩) বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি ও সেইসঙ্গে সভা এবং সম্মেলনের মাধ্যমে দাস শ্রেণীর জোগানো নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে চলার মাধ্যমে আমরা “উপযুক্ত সময়ে” আধ্যাত্মিক “খাদ্য” থেকে পুষ্টি লাভ করব। (মথি ২৪:৪৫) এই ধরনের ব্যবস্থা আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সুরক্ষা করে এবং ঈশ্বরের নিকটবর্তী থাকতে সাহায্য করে।—যাকোব ৪:৮.
১৪. একটা অভিজ্ঞতার কথা বলুন, যা আধ্যাত্মিক সুরক্ষার বিষয়ে তুলে ধরে।
১৪ এই ধরনের আধ্যাত্মিক সুরক্ষার বিষয়টা তুলে ধরার জন্য আগের প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত বাবামার কথা মনে করে দেখুন। তাদের মেয়ে টিরেসার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট করার কয়েক দিন পর, তারা এক মারাত্মক সংবাদ পান: তাকে খুন করা হয়েছে।a তার বাবা স্মরণ করে বলেন: “আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যেন তিনি তাকে সুরক্ষা করেন। আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, তাকে যখন খুন করা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, তখন প্রথমে আমি ভেবে অবাক হয়েছিলাম যে, কেন আমার প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়নি। অবশ্য, আমি জানি যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য আলাদা আলাদাভাবে অলৌকিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেন না। আমি বোধগম্যতার জন্য ক্রমাগত প্রার্থনা করেছিলাম। আমি এই বিষয়টা জেনে সান্ত্বনা লাভ করেছিলাম যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিকভাবে সুরক্ষা করেন—অর্থাৎ তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে সুরক্ষা করার জন্য আমাদের যা-কিছু প্রয়োজন, তিনি তা জুগিয়ে থাকেন। এই ধরনের সুরক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা আমাদের অনন্ত ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করতে পারে। সেই অর্থে যিহোবা টিরেসাকে সুরক্ষা করেছিলেন; মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে গিয়েছিল। এটা জেনে আমি শান্তি লাভ করেছিলাম যে, টিরেসার ভবিষ্যৎ জীবনের আশা তাঁর প্রেমময় হস্তের মধ্যে রয়েছে।”
অসুস্থতার সময় ধরে রাখেন
১৫. আমরা যখন অসুস্থতার দ্বারা আক্রান্ত হই, তখন কোন কোন উপায়ে যিহোবা আমাদের সাহায্য করতে পারেন?
১৫ “ব্যাধিশয্যাগত হইলে” যিহোবা আমাদের ধরে রাখতে পারেন, যেমনটা তিনি দায়ূদকে রেখেছিলেন। (গীত. ৪১:৩) যদিও আমাদের সময়ে যিহোবা অলৌকিকভাবে আরোগ্য করে আমাদের রক্ষা করেন না কিন্তু তিনি আমাদের সাহায্য করেন। কীভাবে? তাঁর বাক্যে প্রাপ্ত নীতিগুলো আমাদেরকে চিকিৎসা ও অন্যান্য বিষয়ে বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করতে পারে। (হিতো. ২:৬) আমরা হয়তো প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকায় প্রকাশিত সেই প্রবন্ধগুলো থেকে উপকারী তথ্য ও ব্যবহারিক পরামর্শ লাভ করতে পারি, যেগুলো আমাদের নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে। যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা যেন আমাদের পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে ও আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারি, সেইজন্য যিহোবা তাঁর আত্মার মাধ্যমে আমাদেরকে “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দান করতে পারেন। (২ করি. ৪:৭) এই ধরনের সাহায্যের মাধ্যমে আমরা আমাদের অসুস্থতা নিয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন হওয়া এড়াতে পারি, যা কিনা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের মনোযোগ নষ্ট করতে পারে।
১৬. কীভাবে একজন ভাই অসুস্থতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছিল?
১৬ আগের প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত যুবক ভাইয়ের কথা বিবেচনা করুন। ১৯৯৮ সালে পরীক্ষা করে তার এমাইয়োট্রোফিক লেটারেল স্কেরোসিস অথবা এএলএস নামক এক ধরনের রোগ ধরা পড়ে, যা অবশেষে তাকে সম্পূর্ণরূপে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে ফেলে।b কীভাবে তিনি তার অসুস্থতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সমর্থ হয়েছেন? তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমার এমন কষ্টকর ও হতাশাজনক মুহূর্ত এসেছিল, যখন আমি মনে করেছিলাম যে, মৃত্যুই হল আমার রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়। যখনই আমি অস্থির হয়ে পড়ি, তখন আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাকে এই তিনটে বিষয় দান করেন: এক প্রশান্ত হৃদয়, ধৈর্য এবং সহিষ্ণুতা। আমি বুঝতে পারি যে, যিহোবা সেই প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন। এক প্রশান্ত হৃদয় আমাকে সান্ত্বনামূলক বিষয়গুলো চিন্তা করতে সাহায্য করে যেমন, নতুন জগতে আমি যখন হাঁটতে পারব, সুস্বাদু কোনো খাবার উপভোগ করব এবং আমার পরিবারের সঙ্গে আবার কথা বলতে পারব, তখন কেমন লাগবে। ধৈর্য আমাকে পক্ষাঘাতের অসুবিধাগুলো এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো সহ্য করতে সাহায্য করে। সহিষ্ণুতা আমাকে বিশ্বস্ত থাকতে এবং আমার আধ্যাত্মিক ভারসাম্য হারিয়ে না ফেলতে সমর্থ করে। আমি সত্যিই গীতরচক দায়ূদের সঙ্গে একমত হতে পারি, কারণ আমি অনুভব করতে পারি যে, যিহোবা আমাকে ব্যাধিশয্যায় ধরে রেখেছেন।”—যিশা. ৩৫:৫, ৬.
ভরণপোষণ জোগান
১৭. যিহোবা আমাদের জন্য কী করার প্রতিজ্ঞা করেছেন আর এই প্রতিজ্ঞার অর্থ কী?
১৭ যিহোবা আমাদেরকে বস্তুগতভাবে যত্ন নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। (পড়ুন, মথি ৬:৩৩, ৩৪ এবং ইব্রীয় ১৩:৫, ৬.) এর অর্থ এই নয় যে, আমরা আশা করতে পারি আমাদের বস্তুগত চাহিদাগুলো অলৌকিকভাবে জোগানো হবে কিংবা আমাদের কাজ করতে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। (২ থিষল. ৩:১০) এই প্রতিজ্ঞার অর্থ হল: আমরা যদি জীবনে ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রথমে রাখার চেষ্টা করি এবং জীবনযাপনের জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক হই, তাহলে জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো লাভ করতে আমাদের সাহায্য করার জন্য আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারি। (১ থিষল. ৪:১১, ১২; ১ তীম. ৫:৮) তিনি এমন উপায়ে আমাদের প্রয়োজনগুলো জোগাতে পারেন, যা হয়তো আমরা আশা করি না, হতে পারে কোনো সহউপাসকের মাধ্যমে, যিনি আমাদের বস্তুগত সাহায্য দান করেন অথবা চাকরির প্রস্তাব দেন।
১৮. একটা অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করুন, যা দেখায় যে প্রয়োজনের সময় আমাদের ভরণপোষণ জোগানো হতে পারে।
১৮ আগের প্রবন্ধের ভূমিকাতে উল্লেখিত সেই একক মায়ের কথা স্মরণ করে দেখুন। তিনি ও তার মেয়ে যখন এক নতুন এলাকায় যান, তখন একটা চাকরি খুঁজে পেতে তার কষ্ট হয়। তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমি সকালে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যেতাম এবং প্রতিদিন বিকেলে চাকরি খুঁজতাম। আমার মনে আছে যে, একদিন আমি মুদির দোকানে দুধ কেনার জন্য গিয়েছিলাম। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সবজি দেখছিলাম কিন্তু সেগুলোর একটাও কেনার মতো যথেষ্ট টাকা আমার কাছে ছিল না। আমার জীবনে আমি কখনো এতটা হতাশ হইনি। সেই দিন আমি যখন দোকান থেকে বাড়িতে ফিরে আসি, তখন আমার পিছনের বারান্দা সমস্ত ধরনের সবজিতে বোঝাই অনেক ব্যাগে পূর্ণ ছিল। কয়েক মাস খাওয়ার মতো যথেষ্ট খাবার সেখানে ছিল। আমি কেঁদে দিই এবং যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাই।” এই বোন শীঘ্রই জানতে পারেন যে, সেই ব্যাগগুলো মণ্ডলীর একজন ভাই রেখে গিয়েছিলেন, যিনি তার বাগানে সবজির চাষ করেছিলেন। পরে তিনি সেই ভাইকে এই কথা লিখেছিলেন: “যদিও আমি সেই দিন আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম কিন্তু সেইসঙ্গে আমি যিহোবাকেও ধন্যবাদ জানিয়েছি কারণ তাঁর প্রেম সম্বন্ধে আমাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আপনার সদয় মনোভাবকে ব্যবহার করেছেন।”—হিতো. ১৯:১৭.
১৯. মহাক্লেশের সময় যিহোবার দাসদের কোন আস্থা থাকবে আর আমাদের এখন কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?
১৯ স্পষ্টতই, বাইবেলের সময়ে ও আমাদের দিনে যিহোবা যা-কিছু করেছেন, তা আমাদেরকে আমাদের সহায় হিসেবে তাঁর ওপর নির্ভর করার কারণ জোগায়। শীঘ্রই, শয়তানের জগতের ওপর যখন মহাক্লেশ আসবে, তখন আমাদের আগের চেয়ে আরও বেশি যিহোবার সাহায্যের প্রয়োজন হবে। তবে, যিহোবার দাসেরা সম্পূর্ণ আস্থা সহকারে তাঁর ওপর নির্ভর করতে সমর্থ হবে। তারা এটা জেনে তাদের মাথা তুলে আনন্দ করতে সমর্থ হবে যে, তাদের মুক্তি সন্নিকট। (লূক ২১:২৮) সেই সময় পর্যন্ত আমাদের ওপর যে-পরীক্ষাই আসুক না কেন, আসুন আমরা এই পূর্ণ আস্থা রেখে যিহোবার ওপর নির্ভর করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই যে, আমাদের অপরিবর্তনীয় ঈশ্বর সত্যিই আমাদের “নিস্তারকর্ত্তা।”
[পাদটীকাগুলো]
a ২০০১ সালের ২২ জুলাই সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ১৯-২৩ পৃষ্ঠার “অবর্ণনীয় দুঃখজনক ঘটনার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করা” নামক প্রবন্ধটি দেখুন।
b ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ২৫-২৯ পৃষ্ঠায় “আমার বিশ্বাসের দ্বারা ধরে রাখা হয়েছিল—এএলএস সত্ত্বেও বেঁচে থাকা” নামক প্রবন্ধটি দেখুন।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কীভাবে যিহোবা সেই ব্যক্তিদের রক্ষা করতে পারেন, যাদের অকালমৃত্যু হয়েছে?
• কেন আধ্যাত্মিক সুরক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
• বস্তুগতভাবে আমাদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে যিহোবার প্রতিজ্ঞার অর্থ কী?
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯১৮ সালে গ্রেপ্তার হওয়া ভাই রাদারফোর্ড এবং তার সহযোগীরা পরে ছাড়া পায় এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করা হয়
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবা ‘ব্যাধিশয্যায়’ আমাদের ধরে রাখতে পারেন