পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ
“তিনি আদেশ করিলেন, যেন আমরা লোকদের কাছে প্রচার করি ও [“পুঙ্খানুপুঙ্খ,” NW] সাক্ষ্য দিই।”—প্রেরিত ১০:৪২.
১. কর্ণীলিয়ের সামনে কথা বলার সময় পিতর কোন দায়িত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন?
ইতালীয় শতপতি তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে এমন এক ঘটনার জন্য একত্রিত করেছিলেন, যেটা মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছিল। সেই ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি ছিলেন কর্ণীলিয়। প্রেরিত পিতর সেই একত্রিত লোকেদের বলেছিলেন যে, প্রেরিতদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল ‘যেন তাহারা লোকদের কাছে প্রচার করে ও’ যিশুর বিষয়ে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেয়।’ পিতরের সাক্ষ্যদান প্রচুর ফল উৎপন্ন করেছিল। অচ্ছিন্নত্বক্ পরজাতিরা ঈশ্বরের আত্মা লাভ করেছিল, বাপ্তাইজিত হয়েছিল এবং স্বর্গে যিশুর সঙ্গে ভাবী রাজা হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। পিতরের পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়ার কী এক চমৎকার ফলাফল!—প্রেরিত ১০:২২, ৩৪-৪৮.
২. কীভাবে আমরা জানতে পারি যে, সাক্ষ্য দেওয়ার আদেশ শুধুমাত্র ১২ জন প্রেরিতের মধ্যেই সীমিত ছিল না?
২ সেই ঘটনাটা ঘটেছিল সা.কা. ৩৬ সালে। এর প্রায় দুবছর আগে, খ্রিস্ট ধর্মের একজন ঘোর বিরোধীর জীবনে এমন এক ঘটনা ঘটেছিল, যা তার জীবনকে পালটে দিয়েছিল। তার্ষ নগরের শৌল দম্মেশকে যাওয়ার পথে যিশু তাঁর কাছে আবির্ভূত হয়েছিলেন ও বলেছিলেন: “উঠ, নগরে প্রবেশ কর, তোমাকে কি করিতে হইবে, তাহা বলা যাইবে।” শিষ্য অননিয়কে যিশু আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, শৌল “জাতিগণের ও রাজগণের এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের নিকটে” সাক্ষ্য দেবেন। (পড়ুন, প্রেরিত ৯:৩-৬, ১৩-২০.) শৌলের সঙ্গে থাকার সময় অননিয় বলেছিলেন: “আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর তোমাকে নিযুক্ত করিয়াছেন . . . কারণ তুমি . . . সকল মনুষ্যের নিকটে তাঁহার সাক্ষী হইবে।” (প্রেরিত ২২:১২-১৬) শৌল, যিনি পরে পৌল হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন, তিনি সাক্ষ্য দেওয়ার কার্যভারকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন?
তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিয়েছিলেন!
৩. (ক) আমরা কোন নির্দিষ্ট বিবরণের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করব? (খ) ইফিষের প্রাচীনরা পৌলের বার্তার প্রতি কীভাবে সাড়া দিয়েছিল আর এর ফলে তারা কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিল?
৩ পৌল এরপরে যা-কিছু করেছিলেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করা আগ্রহজনক হবে, কিন্তু এখন আসুন আমরা এমন একটা বক্তৃতার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি, যা পৌল সা.কা. প্রায় ৫৬ সালে দিয়েছিলেন, যেটার বিষয়ে প্রেরিত ২০ অধ্যায়ে উল্লেখ করা আছে। পৌল এই বক্তৃতা তার তৃতীয় মিশনারি যাত্রার শেষের দিকে উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি ঈজিয়ান সমুদ্রের একটা বন্দর মিলীতে নেমেছিলেন এবং ইফিষ মণ্ডলীর প্রাচীনদেরকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকে ইফিষ প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ছিল কিন্তু ঘোরা পথের কারণে সেই যাত্রা দীর্ঘ ছিল। আপনি নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারেন যে, পৌলের বার্তা পাওয়ার পর ইফিষের প্রাচীনরা কত রোমাঞ্চিতই না হয়েছিল। (তুলনা করুন, হিতোপদেশ ১০:২৮.) তবে, মিলীতে যাত্রা করার জন্য তাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা করতে হয়েছিল। তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে কি কাজ থেকে ছুটি নিতে বা তাদের দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছিল? আজকেও অনেক খ্রিস্টান তাদের বার্ষিক জেলা সম্মেলনের এমনকি একটা অধিবেশনও যাতে বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য এইরকম বিষয়গুলো করে থাকে।
৪. পৌল কোন ধারা অনুসরণ করেছিলেন, যখন তিনি কয়েক বছরের জন্য ইফিষে ছিলেন?
৪ প্রাচীনদের সেখানে আসার জন্য যে-তিন বা চার দিন সময় লেগেছিল, সেই সময়ে পৌল মিলীতে কী করেছিলেন বলে আপনি মনে করেন? আপনি থাকলে কী করতেন? (তুলনা করুন, প্রেরিত ১৭:১৬, ১৭.) ইফিষের প্রাচীনদের উদ্দেশে বলা পৌলের কথাগুলো, এই বিষয়ে কিছুটা অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। তিনি তার কয়েক বছরের জীবনধারা সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, যার মধ্যে এর আগে তিনি যখন ইফিষে ছিলেন, তখনকার কথাও ছিল। (পড়ুন, প্রেরিত ২০:১৮-২১.) তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারে এইরকম আশঙ্কা না থাকায় তিনি বলেছিলেন: “তোমরা জান, এশিয়া দেশে আসিয়া, আমি প্রথম দিন অবধি . . . [“পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে,” NW] সাক্ষ্য দিয়া আসিতেছি।” হ্যাঁ, তিনি যিশুর কাছ থেকে প্রাপ্ত তার দায়িত্ব পালন করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। ইফিষে তিনি কীভাবে তা সম্পাদন করেছিলেন? একটা উপায় ছিল যিহুদিদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে, এমন জায়গায় গিয়ে যেখানে অনেককে পাওয়া যাবে। লূক জানান যে, সা.কা. ৫২-৫৫ সালে পৌল যখন ইফিষে ছিলেন, তখন তিনি সমাজগৃহে ‘কথা প্রসঙ্গ করিয়াছিলেন ও প্রবৃত্তি দিয়াছিলেন।’ যিহুদিরা যখন ‘কঠিন ও অবাধ্য হইয়াছিল,’ তখন পৌল অন্যদের দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন, সেই শহরের অন্য এলাকায় গিয়েছিলেন, তবে প্রচার কাজ অব্যাহত ছিল। এভাবে তিনি সেই বড় শহরের যিহুদি ও গ্রিকদের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।—প্রেরিত ১৯:১, ৮, ৯.
৫, ৬. কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, পৌল যখন ঘরে ঘরে প্রচার করেছিলেন, তখন তিনি অবিশ্বাসীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন?
৫ যাদের কাছে পৌল মিলীতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে যারা খ্রিস্টান হয়েছিল, তাদের কেউ কেউ পরবর্তী সময়ে প্রাচীন হওয়ার যোগ্য হয়ে উঠেছিল। পৌল তাদেরকে এই বলে তার ব্যবহৃত পদ্ধতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “কোন হিতকথা গোপন না করিয়া তোমাদিগকে সকলই জানাইতে, এবং সাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে শিক্ষা দিতে, সঙ্কুচিত হই নাই।” আমাদের সময়ে, কিছু লোক দাবি করেছে যে, পৌল এখানে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের প্রতি করা পালকীয় সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করছিলেন। কিন্তু, আসলে তা নয়। ‘সাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে শিক্ষা দিবার’ বর্ণনা মূলত অবিশ্বাসীদের কাছে সুসমাচার প্রচার করার প্রতি প্রযোজ্য ছিল। তার পরবর্তী কথাগুলো থেকে এটা স্পষ্ট। পৌল বলেছিলেন যে, তিনি “ঈশ্বরের প্রতি মনপরিবর্ত্তন এবং আমাদের প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বাস বিষয়ে যিহূদী ও গ্রীকদের নিকটে” সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। স্পষ্টতই, পৌল অবিশ্বাসীদের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, যাদের মনপরিবর্তন করার বা অনুতপ্ত হওয়ার এবং যিশুর প্রতি বিশ্বাস রাখার প্রয়োজন ছিল।—প্রেরিত ২০:২০, ২১.
৬ খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-র এক বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে একজন পণ্ডিত ব্যক্তি প্রেরিত ২০:২০ পদ সম্বন্ধে বলেছিলেন: “পৌল ইফিষে তিন বছর কাটিয়েছিলেন। তিনি প্রত্যেকটা ঘরে সাক্ষাৎ করেছিলেন বা অন্ততপক্ষে তিনি সব লোকের কাছে প্রচার করেছিলেন (২৬ পদ)। ঘরে ঘরে সুসমাচার প্রচারের ও সেইসঙ্গে জনসাধারণের উদ্দেশে অনুষ্ঠিত সভাগুলোতে যা সম্পাদন করা হতো, সেটার শাস্ত্রীয় ভিত্তি এখানেই রয়েছে।” এই পণ্ডিত ব্যক্তি যেমন দাবি করেন যে, পৌল আক্ষরিকভাবে প্রতিটা ঘরে সাক্ষাৎ করুন বা না-ই করুন, পৌল চেয়েছিলেন যে, তিনি কীভাবে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ও এর ফল কী হয়েছিল, ইফিষের প্রাচীনরা যেন তা ভুলে না যায়। লূক জানিয়েছিলেন: “এশিয়া-নিবাসী যিহূদী ও গ্রীক সকলেই প্রভুর বাক্য শুনিতে পাইল।” (প্রেরিত ১৯:১০) কিন্তু, কীভাবে এশিয়ার “সকলেই” শুনতে পেয়েছিল আর এই কথাগুলো আমাদের সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে কী ইঙ্গিত দেয়?
৭. পৌলের প্রচার কীভাবে যাদের কাছে তিনি সরাসরি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, সেই ব্যক্তিদের ছাড়িয়েও অন্যদেরকে প্রভাবিত করেছিল?
৭ জনসাধারণের স্থানগুলোতে ও ঘরে ঘরে পৌলের প্রচারের দ্বারা অনেকে তার বার্তা শুনেছিল। আপনি কি মনে করেন যে, এমনটা হতে পারে, যারা সেই বার্তা শুনেছিল তারা ইফিষেই থাকত, ব্যাবসার উদ্দেশ্যে, তাদের নিকট আত্মীয়দের কাছে যেতে বা বড় শহুরে জীবনের ঝুটঝামেলা থেকে স্বস্তি পেতে অন্য কোথাও যায়নি? নিশ্চয়ই আপনি এমনটা মনে করবেন না। এই কারণগুলোর জন্য আজকে অনেকে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে; খুব সম্ভবত আপনিও গিয়েছেন। এমনকি সেই সময়ও, অন্যান্য জায়গা থেকে লোকেরা সামাজিক বা ব্যবসায়িক কারণে ইফিষে আসত। সেখানে এসে তাদের হয়তো পৌলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং তারা তার সাক্ষ্য শুনেছিল। তারা যখন নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়েছিল, তখন কী হয়েছিল? যারা সত্য গ্রহণ করেছিল তারা সাক্ষ্য দিয়েছিল। অন্যেরা হয়তো বিশ্বাসী হয়নি কিন্তু তারা ইফিষে থাকতে যা শুনেছিল, সেই বিষয়ে সম্ভবত কথা বলেছিল। ফলে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী বা ক্রেতারা সত্য সম্বন্ধে শুনেছিল এবং কেউ কেউ হয়তো তা গ্রহণ করেছিল। (তুলনা করুন, মার্ক ৫:১৪.) আপনার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রভাব সম্বন্ধে এটা হয়তো কী ইঙ্গিত দিতে পারে?
৮. এশিয়া দেশের বিভিন্ন জায়গার লোকেরা হয়তো কীভাবে সত্য শুনেছিল?
৮ এর আগে ইফিষে তার পরিচর্যার বিষয়ে পৌল লিখেছিলেন যে, ‘তাহার সম্মুখে এক দ্বার খোলা রহিয়াছে, তাহা বৃহৎ ও কার্য্যসাধক।’ (১ করি. ১৬:৮, ৯) সেটা কোন দ্বার ছিল ও তার সামনে সেটা কীভাবে খোলা হয়েছিল? ইফিষে পৌলের অবিরত পরিচর্যার ফলে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভবপর হয়েছিল। ইফিষের মধ্যভাগে অবস্থিত কলসী, লায়দিকেয়া এবং হিয়রাপলি নামে তিনটে নগরের কথা বিবেচনা করুন। পৌল কখনো সেই জায়গাগুলোতে যাননি কিন্তু সেখানেও সুসমাচার পৌঁছে গিয়েছিল। ইপাফ্রা সেই এলাকার লোক ছিলেন। (কল. ২:১; ৪:১২, ১৩) ইপাফ্রা কি ইফিষে পৌলের সাক্ষ্য শুনেছিলেন এবং একজন খ্রিস্টান হয়েছিলেন? বাইবেল এই বিষয়ে নির্দিষ্ট করে বলে না। কিন্তু, তার নিজের এলাকায় সত্য ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইপাফ্রা হয়তো পৌলকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। (কল. ১:৭) এ ছাড়া, পৌল যখন ইফিষে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন, সেই সময়ে খ্রিস্টীয় বার্তা হয়তো ফিলাদিল্ফিয়া, সার্দ্দি ও থুয়াতীরা নগরগুলোতেও পৌঁছে গিয়েছিল।
৯. (ক) পৌলের কোন আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা ছিল? (খ) ২০০৯ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ কী হবে?
৯ ফলে, ইফিষের প্রাচীনদের পৌলের এই মন্তব্যকে মেনে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল: “আমি নিজ প্রাণকেও কিছুর মধ্যে গণ্য করি না, আমার পক্ষে মহামূল্য গণ্য করি না, যেন নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িতে পারি, এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহের সুসমাচারের পক্ষে [“পুঙ্খানুপুঙ্খ,” NW] সাক্ষ্য দিবার যে পরিচর্য্যাপদ প্রভু যীশু হইতে পাইয়াছি, তাহা সমাপ্ত করিতে পারি।” এই পদে, ২০০৯ সালের জন্য ইতিবাচক, প্রেরণাদায়ক বার্ষিক শাস্ত্রপদ রয়েছে: ‘সুসমাচারের পক্ষে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিন।’—প্রেরিত ২০:২৪.
আজকে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া
১০. কীভাবে আমরা জানি যে, আমাদেরও পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিতে হবে?
১০ ‘লোকদের কাছে প্রচার করিবার ও পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিবার’ আদেশে প্রেরিতরা ছাড়াও আরও অন্যেরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। পুনরুত্থিত যিশু যখন গালীলে সমবেত শিষ্যদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন সম্ভবত ৫০০ জনকে তিনি এই আদেশ দিয়েছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।” সেই আদেশ আজকে সমস্ত সত্য খ্রিস্টানের প্রতি প্রযোজ্য, যেমন যিশুর কথাগুলো ইঙ্গিত করে: “দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।”—মথি ২৮:১৯, ২০.
১১. যিহোরা সাক্ষিরা কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার জন্য পরিচিত?
১১ উদ্যোগী খ্রিস্টানরা ক্রমাগত সেই আদেশের বাধ্য হয়, ‘সুসমাচারের পক্ষে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিবার’ আপ্রাণ চেষ্টা করে। তা করার এক মূল পদ্ধতি হচ্ছে সেই বিষয়টা, যে-বিষয়ে পৌল ইফিষের প্রাচীনদের কাছে উল্লেখ করেছিলেন—ঘরে ঘরে প্রচার। ফলপ্রসূ মিশনারি কাজের ওপর ২০০৭ সালের একটি বইয়ে ডেভিড জি. স্টুয়ার্ট, জুনিয়র বলেছিলেন: “যিহোবার সাক্ষিদের পদ্ধতি, যেটার মাধ্যমে তারা ব্যক্তি বিশেষদের শিক্ষা দেয় যে, কীভাবে তাদের বিশ্বাস অন্যদের সঙ্গে বন্টন করতে হয়, তা শুধুমাত্র নিরর্থক, তত্ত্বগত [মঞ্চ থেকে ক্রমাগত আহ্ববান জানানোর] বিষয় হওয়ার চেয়ে বরং আরও অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়েছে। অধিকাংশ যিহোবার সাক্ষির কাছে, তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে অন্যদেরকে জানানো হল এক প্রিয় কাজ।” এর ফল কী হয়? “পূর্ব ইউরোপের দুটো রাজধানী শহরে সমীক্ষা চালিয়ে আমি লক্ষ করেছি যে, ১৯৯৯ সালে মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ লোক উল্লেখ করেছে যে, তাদের কাছে লেটার-ডে সেন্টস্ বা ‘মরমন’ ধর্মের মিশনারিরা এসেছে। কিন্তু, ৭০ শতাংশের বেশি লোক উল্লেখ করেছে যে, যিহোবার সাক্ষিরা তাদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে এসেছে, প্রায়ই একাধিক বার।”
১২. (ক) কেন আমরা আমাদের এলাকার ঘরগুলোতে “একাধিক বার” যাই? (খ) আপনি কি এমন কারো অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে পারেন, যার আমাদের বার্তার প্রতি মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছে?
১২ আপনার এলাকার লোকেদের বিষয়েও হয়তো একই কথা বলা যেতে পারে। সম্ভবত আপনি সেই বিষয়ে অবদান রেখেছেন। ঘরে ঘরে পরিচর্যা করার সময় আপনি যখন ‘ব্যক্তিগতভাবে’ লোকেদের কাছে ‘গিয়েছেন,’ তখন আপনি বিভিন্ন নারী-পুরুষ ও তরুণ-তরুণীর সঙ্গে কথা বলেছেন। কেউ কেউ হয়তো “একাধিক বার” গেলেও শোনেনি। আবার অন্যেরা হয়তো আপনি যখন বাইবেলের কোনো পদ বা শাস্ত্রীয় মতামত জানিয়েছিলেন, তখন একটু সময় নিয়ে তা শুনেছে। কিন্তু, আবার অন্যদের কাছে আপনি হয়তো উত্তম সাক্ষ্য দিতে সমর্থ হয়েছেন এবং তারা বার্তার প্রতি সাড়া দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে বিভিন্ন সম্ভাবনা, যখন আমরা ‘সুসমাচারের পক্ষে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিই।’ সম্ভবত আপনি জানেন যে, এমন ব্যক্তিদের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, যাদের কাছে “একাধিক বার” যাওয়ার পরেও তারা সামান্য আগ্রহ দেখিয়েছিল কিন্তু পরে তা পরিবর্তিত হয়েছে। সম্ভবত, তাদের বা তাদের কোনো প্রিয়জনের জীবনে কিছু ঘটেছিল, যা সত্যের প্রতি তাদের মন ও হৃদয়কে খুলে দিয়েছিল। এখন তারা আমাদের ভাই ও বোন হয়েছে। তাই, সাড়া দেয়নি এমন অনেক ব্যক্তিকে আপনি যদি সম্প্রতি না-ও পেয়ে থাকেন, তবুও হাল ছেড়ে দেবেন না। আমরা এইরকমটা আশা করি না যে, প্রত্যেকে সত্যে আসবে। কিন্তু, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে যা চান, সেটা হচ্ছে আমরা যেন অধ্যবসায় ও উদ্যোগের সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিয়ে চলি।
যে-ফলাফল সম্বন্ধে আমরা হয়তো জানি না
১৩. কীভাবে আমাদের সাক্ষ্য দেওয়া এমন ফলাফল উৎপন্ন করতে পারে, যে-সম্বন্ধে আমরা হয়তো জানি না?
১৩ পৌলের পরিচর্যার প্রভাব শুধুমাত্র তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, যাদেরকে খ্রিস্টান হতে তিনি সরাসরি সাহায্য করেছিলেন; আমাদের বেলায়ও এমনটা হয় না। আমরা ঘরে ঘরে পরিচর্যায় নিয়মিত অংশ নেওয়াকে আমাদের অভ্যাস করে তুলি, যতজনের কাছে সম্ভব সাক্ষ্য দিই। আমরা প্রতিবেশী, সহকর্মী, সহপাঠী ও আত্মীয়স্বজনদের কাছে সুসমাচার সম্বন্ধে বলি। আমরা কি এই সমস্তকিছুর ফলাফল সম্বন্ধে জানি? কারো কারো জন্য হয়তো উত্তম ফলাফল তাৎক্ষণিক আসতে পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রে, সত্যের বীজ হয়তো কিছু সময়ের জন্য সুপ্ত থাকতে পারে, কিন্তু এরপর কারো হৃদয়ের ভূমিতে শিকড় বিস্তৃত হতে ও বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনকি তা না ঘটলেও, যে-লোকেদের সঙ্গে আমরা কথা বলি, তারা হয়তো আমরা যা বলেছি, যা বিশ্বাস করি এবং যেভাবে কাজ করি, সেই সম্বন্ধে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। হ্যাঁ, এইরকম হতে পারে যে, তারা নিজেদের অজান্তেই সেই বীজগুলোকে অন্য কোথাও সাড়াপ্রদানকারী ভূমি খুঁজে পেতে সমর্থ করে।
১৪, ১৫. একজন ভাইয়ের সাক্ষ্যদান কোন ফলাফলের দিকে পরিচালিত করেছে?
১৪ উদাহরণ হিসেবে, রায়েন ও তার স্ত্রী ম্যান্ডির কথা বিবেচনা করুন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বাস করে। রায়েন তার কর্মস্থলে তার একজন সহকর্মীর কাছে রীতিবহির্ভূতভাবে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তি, যিনি হিন্দু ছিলেন, তিনি রায়েনের পোশাক-আশাক এবং রায়েন যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন, তা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। তাদের কথাবার্তায় রায়েন পুনরুত্থান এবং মৃতদের অবস্থা, এই ধরনের বিষয়গুলো উত্থাপন করেছিলেন। জানুয়ারি মাসের এক সন্ধ্যায়, সেই ব্যক্তি তার স্ত্রী জোডিকে জিজ্ঞেস করেন যে, যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে তিনি কী জানেন। তার স্ত্রী একজন ক্যাথলিক ছিলেন আর তিনি বলেছিলেন যে, যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে তিনি শুধু এটুকুই জানেন যে, তারা “ঘরে ঘরে প্রচার” করে। তাই, জোডি ইন্টারনেটে “Jehovah’s Witnesses” টাইপ করে খোঁজেন ও তিনি আমাদের www.watchtower.org ওয়েব সাইট খুঁজে পান। কয়েক মাস ধরে জোডি সেই সাইট থেকে বিভিন্ন বিষয়বস্তু পড়েন, যার মধ্যে বাইবেল ও বিভিন্ন আগ্রহজনক প্রবন্ধও ছিল।
১৫ পরে জোডির সঙ্গে ম্যান্ডির দেখা হয় কারণ তারা দুজনেই নার্স ছিল। ম্যান্ডি জোডির প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে আনন্দিত হয়েছিলেন। কিছু সময় পর, জোডি যেমন বর্ণনা করেন যে, তাদের “আদম থেকে আরমাগিদোন পর্যন্ত” আলোচনা হয়েছিল। জোডি এক গৃহ বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন। শীঘ্রই তিনি কিংডম হলের সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করেছিলেন। অক্টোবর মাসে, জোডি একজন অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হয়েছিলেন আর তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। তিনি লেখেন: “এখন আমি সত্য জানি বলে খুবই সুখী ও পরিপূর্ণ।”
১৬. ফ্লোরিডার একজন ভাইয়ের অভিজ্ঞতা পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টার বিষয়ে কী ইঙ্গিত করে?
১৬ রায়েনের কোনো ধারণাই ছিল না যে, একজন ব্যক্তির কাছে তার সাক্ষ্যদানের ফলে কেউ সত্যে আসবে। এটা ঠিক যে, এই ঘটনার দ্বারা তিনি ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিবার’ বিষয়ে তার দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়ার প্রভাব সম্বন্ধে শিখেছিলেন। কিন্তু, এইরকম হতে পারে যে, আপনি ঘরে ঘরে, কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে বা কোনো রীতিবহির্ভূত পরিবেশে সাক্ষ্য দেন আর আপনার অজান্তেই তা অন্যদের কাছে সত্য ছড়িয়ে দেওয়ার উপায় হয়ে ওঠে। ঠিক যেমন পৌল “এশিয়া দেশে” তার সাক্ষ্যদানের ফলাফল সম্বন্ধে সমস্তকিছু জানতে পারেননি, তেমনই আপনারও হয়তো নিজের পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়ার উত্তম ফলাফল সম্বন্ধে জানার কোনো সুযোগ না-ও থাকতে পারে। (পড়ুন, প্রেরিত ২৩:১১;a ২৮:২৩.b) কিন্তু, এটা কতই না গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনি যেন তা করে চলেন!
১৭. দুহাজার নয় সালজুড়ে আপনি কী করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
১৭ দুহাজার নয় সালজুড়ে আমরা সকলেই যেন ঘরে ঘরে ও অন্যান্য উপায়ে সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে আমাদের দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নিই। এর ফলে, আমরা পৌলের মতো এই একই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো অবস্থানে থাকব: “আমি নিজ প্রাণকেও কিছুর মধ্যে গণ্য করি না, আমার পক্ষে মহামূল্য গণ্য করি না, যেন নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িতে পারি, এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহের সুসমাচারের পক্ষে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিবার যে পরিচর্য্যাপদ প্রভু যীশু হইতে পাইয়াছি, তাহা সমাপ্ত করিতে পারি।”
[পাদটীকাগুলো]
a প্রেরিত ২৩:১১ (NW): “কিন্তু পরদিন রাতে প্রভু পৌলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললেন: সাহস কর! কারণ আমার বিষয়ে যিরূশালেমে যেমন পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিয়েছ, তেমনই রোমেও তোমাকে সাক্ষ্য দিতে হবে।”
b প্রেরিত ২৮:২৩ (NW): “পরে তারা তার সঙ্গে একটি দিন স্থির করল এবং তারা অনেকে তিনি যেখানে থাকতেন, সেখানে তার কাছে আসলেন। আর তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিয়ে এবং মোশির ব্যবস্থা ও ভাববাদীদের গ্রন্থ থেকে যিশুর বিষয়ে তাদের প্রত্যয় উৎপাদন করে, সেই বিষয়টা ব্যাখ্যা করলেন।”
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কীভাবে প্রথম শতাব্দীতে প্রেরিত পিতর, পৌল এবং অন্যান্যরা পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিয়েছিল?
• কেন আমাদের সাক্ষ্যদানের প্রভাব আমরা যা জানি, তার চেয়েও বেশি হতে পারে?
• ২০০৯ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ কী আর কেন আপনি মনে করেন যে, তা উপযুক্ত?
[১৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
২০০৯ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হবে: ‘সুসমাচারের পক্ষে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিন।’ —প্রেরিত ২০:২৪, NW.
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইফিষের প্রাচীনরা পৌলের ঘরে ঘরে সাক্ষ্য দেওয়ার অভ্যাসের বিষয়ে জানতেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হবে?