খ্রিস্টীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াগুলো মর্যাদাপূর্ণ, অনাড়ম্বর এবং ঈশ্বরের প্রীতিজনক
শোকের আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছে। বিশেষ কালো বস্ত্র পরে শোকার্ত ব্যক্তিরা বিলাপ করছে, প্রচণ্ড দুঃখে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কান্নাকাটি করছে। নাচিয়েরা উত্তেজক সংগীতের তালে তালে শরীর দোলাচ্ছে। অথচ, অন্যেরা খাওয়াদাওয়া করছে এবং হাসাহাসি ও আনন্দফূর্তি করে তা উদ্যাপন করছে। কিছুজন তাড়ি এবং বিয়ারের অবাধ পরিবেশনের ফলে মাতাল হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। উপলক্ষ্যটা কী? বিশ্বের কিছু কিছু জায়গায়, এগুলো হল কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সাধারণ বৈশিষ্ট্য, যেখানে শত শত লোক মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে তাদের বিদায়ী বার্তা জানানোর জন্য সমবেত হয়ে থাকে।
অনেক যিহোবার সাক্ষি এমন সমাজগুলোতে বাস করে, যেখানে আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা অত্যন্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও মৃতদের ভয় পায়। লক্ষ লক্ষ লোক বিশ্বাস করে যে, কেউ যখন মারা যায়, তখন সে পুরুষানুক্রমে এক আত্মায় পরিণত হয় আর সে জীবিতদের সাহায্য বা ক্ষতি করতে সক্ষম। এই বিশ্বাসটা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অসংখ্য রীতিনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অবশ্য, মৃত ব্যক্তির জন্য শোক করা স্বাভাবিক বিষয়। কখনো কখনো যিশু ও তাঁর শিষ্যরা প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক করেছিল। (যোহন ১১:৩৩-৩৫, ৩৮; প্রেরিত ৮:২; ৯:৩৯) কিন্তু, তারা কখনোই শোকের চরম অভিব্যক্তিগুলো প্রদর্শন করেনি, যেগুলো তাদের দিনে সাধারণ বিষয় ছিল। (লূক ২৩:২৭, ২৮; ১ থিষল. ৪:১৩) কেন? একটা কারণ ছিল যে, তারা মৃত্যু সম্বন্ধে সত্যটা জানত।
বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে: “জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না, . . . তাহাদের প্রেম, তাহাদের দ্বেষ ও তাহাদের ঈর্ষা সকলই বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে; . . . তুমি যে স্থানে যাইতেছ, সেই পাতালে [মানবজাতির সাধারণ কবরে] কোন কার্য্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা, কিছুই নাই।” (উপ. ৯:৫, ৬, ১০) অনুপ্রাণিত এই বাইবেলের পদগুলো এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দেয় যে, যখন কেউ মারা যায়, তখন সে আর কিছুই জানে না। সে চিন্তা, অনুভব, ভাববিনিময় করতে পারে না বা কিছুই বুঝতে পারে না। বাইবেলের এই গুরুত্বপূর্ণ সত্যটা বুঝতে পারা, খ্রিস্টীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াগুলো যেভাবে পরিচালিত হয়, সেই বিষয়ে কীভাবে প্রভাব ফেলা উচিত?
“অশুচি বস্তু স্পর্শ করিও না”
তাদের সাম্প্রদায়িক বা সাংস্কৃতিক পটভূমি যা-ই হোক না কেন, যিহোবার সাক্ষিরা দৃঢ়ভাবে এমন যেকোনো রীতিনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে থাকে, যেগুলো এই বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে, মৃতেরা সচেতন এবং জীবিতদের প্রভাবিত করতে পারে। রাত জেগে মৃতদেহ পাহারা দেওয়া, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানগুলো, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বার্ষিকী, মৃতদের উদ্দেশে বলিদান এবং বৈধব্য সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠানগুলোর মতো রীতিনীতি, সমস্তই অশুচি এবং ঈশ্বরের কাছে অপ্রীতিকর, কারণ সেগুলো অশাস্ত্রীয়, ভূতদের বা মন্দদূতদের এই শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে, প্রাণ বা আত্মা কখনো মরে না। (যিহি. ১৮:৪) সত্য খ্রিস্টানরা ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] মেজ ও ভূতদের মেজ, এই উভয় মেজের অংশী হইতে পারে না,’ তাই তারা এইরকম রীতিনীতিগুলোতে অংশগ্রহণ করে না। (১ করি. ১০:২১) তারা এই আদেশের বাধ্য হয়: ‘তোমরা পৃথক্ হও, এবং অশুচি বস্তু স্পর্শ করিও না।’ (২ করি. ৬:১৭) কিন্তু, এই ধরনের অবস্থান নেওয়া সবসময় সহজ নয়।
আফ্রিকা এবং অন্যান্য জায়গাতে, এইরকম বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে যে, নির্দিষ্ট কিছু রীতিনীতি অনুসরণ করা না হলে পূর্বপুরুষদের আত্মা অসন্তুষ্ট হবে। তা করতে ব্যর্থ হওয়াকে এক গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, যার ফলে সমাজের ওপরে অভিশাপ বা দুর্দশা নেমে আসতে পারে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অশাস্ত্রীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করতে প্রত্যাখ্যান করার কারণে যিহোবার লোকেদের মধ্যে অনেককে সমালোচনা, অপমান করা হয়েছে আর তাদের গ্রামের লোকেরা অথবা যৌথ পরিবারগুলো তাদের সঙ্গে সমাজের বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের মতো ব্যবহার করেছে। কাউকে কাউকে সমাজবিরোধী এবং তারা মৃত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান দেখায় না বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কখনো কখনো, অবিশ্বাসীরা খ্রিস্টীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দায়িত্ব জোর করে নিজের হাতে নিয়েছে। তাই, ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে এমন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার রীতিনীতিগুলোকে মেনে চলতে যারা খুব জোর করে, তাদের সঙ্গে আমরা কীভাবে তর্কবিতর্ক করা এড়িয়ে চলতে পারি? এমনকী এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারে এমন অশুচি আচার-অনুষ্ঠান ও অভ্যাসগুলো থেকে নিজেদের পৃথক রাখার জন্য আমরা কী করতে পারি?
আপনার সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করুন
বিশ্বের কিছু কিছু জায়গায়, গোষ্ঠীর প্রবীণ ব্যক্তিদের এবং মৃতের নিজ পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের মৃত ব্যক্তির কবর সম্বন্ধীয় সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ব্যাপারে জড়িত করতে হয়। তাই, একজন বিশ্বস্ত খ্রিস্টানকে এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দিতে হবে যে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা বাইবেলের নীতিগুলো অনুসারে সংগঠিত এবং সম্পন্ন করা হবে। (২ করি. ৬:১৪-১৬) কোনো খ্রিস্টীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যা ঘটে, তা সহবিশ্বাসীদের বিবেককে দংশিত করা অথবা অন্যদের বিঘ্নিত করা উচিত নয়, যারা জানে যে, মৃতদের সম্বন্ধে আমরা কী বিশ্বাস করি ও শিক্ষা দিই।
যখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কোনো প্রতিনিধিকে কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদন করার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়, তখন নিযুক্ত প্রাচীনরা সাহায্যকারী পরামর্শ দিতে এবং আধ্যাত্মিক সমর্থন জোগাতে পারে, যাতে সমস্ত ব্যবস্থা শাস্ত্রীয় নির্দেশাবলির সঙ্গে মিল রেখে হয়। কিছু ন-সাক্ষি যদি অশুচি অভ্যাসগুলো করা শুরু করতে চায়, তাহলে দৃঢ় থাকা এবং সাহসের সঙ্গে অথচ সদয়ভাবে ও “শ্রদ্ধার” সঙ্গে আমাদের খ্রিস্টীয় অবস্থান সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। (১ পিতর ৩:১৫, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) কিন্তু অবিশ্বাসী আত্মীয়স্বজন যদি এরপরও এই ব্যবস্থাপনায় অশুচি আচার-অনুষ্ঠানগুলো শুরু করার জন্য জোর করতে থাকে, তাহলে কী বলা যায়? তাহলে, বিশ্বাসী পরিবারটি হয়তো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। (১ করি. ১০:২০) যখন তা ঘটে, তখন এক সাধারণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বক্তৃতা স্থানীয় কিংডম হলে বা অন্য কোনো উপযুক্ত জায়গায় দেওয়া যেতে পারে, যাতে সেই ব্যক্তিদেরকে “শাস্ত্রমূলক . . . সান্ত্বনা” প্রদান করা যায়, যারা প্রিয়জনের মৃত্যুতে গভীর শোকাচ্ছন্ন। (রোমীয় ১৫:৪) এমনকী যদিও সেখানে মৃতদেহকে আনা হয় না, তবুও এই ধরনের এক ব্যবস্থা হবে মর্যাদাসম্পন্ন এবং সর্বোতভাবে গ্রহণযোগ্য। (দ্বিতীয়. ৩৪:৫, ৬, ৮) অবিশ্বাসীদের নির্দয় হস্তক্ষেপ এই উপলক্ষ্যের চাপ ও দুঃখকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু আমরা এটা জেনে সান্ত্বনা পেতে পারি যে, যা সঠিক তা করার বিষয়ে আমাদের দৃঢ়সংকল্প ঈশ্বরের অলক্ষিত থাকে না, যিনি আমাদের “পরাক্রমের উৎকর্ষ” প্রদান করতে পারেন।—২ করি. ৪:৭.
আপনার নির্দেশনাগুলোকে লিখিত আকারে রাখুন
একজন ব্যক্তি যখন তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে তার ব্যক্তিগত নির্দেশনাগুলোকে লিখে রাখেন, তখন পরিবারের ন-সাক্ষি সদস্যদের সঙ্গে যুক্তি করা অনেকটা সহজ হয়ে যায়, যেহেতু তারাও সম্ভবত মৃত ব্যক্তির ইচ্ছাকে সম্মান করতে চায়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কীভাবে পরিচালিত হবে, কোথায় তা অনুষ্ঠিত হবে এবং এটার প্রস্তুতি ও আয়োজনে কে নেতৃত্ব দেবেন, এগুলো হল কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেগুলো লিখে রাখা প্রয়োজন। (আদি. ৫০:৫) ব্যক্তিদের নিজেদের সই করা ও সাক্ষিসহ একটা প্রমাণপত্র হল সবচেয়ে বেশি কার্যকর। যারা বাইবেলের নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে অন্তর্দৃষ্টি এবং প্রজ্ঞা সহকারে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করে তারা জানে যে, এই পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে বিবেচনা করার জন্য তাদেরকে খুব বৃদ্ধ হওয়া অথবা গুরুতরভাবে অসুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।—হিতো. ২২:৩; উপ. ৯:১২.
কেউ কেউ এইরকম নির্দেশনাগুলো লিখিত প্রমাণপত্র হিসেবে রাখতে অস্বস্তিবোধ করেছে। কিন্তু, তা করা খ্রিস্টীয় পরিপক্বতার এবং অন্যদের জন্য প্রেমময় চিন্তার প্রমাণ দেয়। (ফিলি. ২:৪) এইরকম বিষয়গুলো দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে, বরং নিজে মীমাংসা করা আরও ভালো, কারণ পরিবারের সদস্যরা হয়তো সেই অশুচি অভ্যাসগুলোকে গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য চাপ বোধ করতে পারে, যেগুলো মৃত ব্যক্তি বিশ্বাস করতেন না কিংবা অনুমোদনও করতেন না।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াকে অনাড়ম্বর রাখুন
আফ্রিকার অনেক জায়গায়, এইরকম বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে যে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান বেশ বড়ো ও জাঁকালো হতে হবে, যাতে পূর্বপুরুষদের আত্মারা ক্রুদ্ধ না হয়। অন্যেরা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াগুলোকে তাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পদমর্যাদার বিষয়ে “দর্প” করার এক সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে। (১ যোহন ২:১৬) মৃত ব্যক্তিকে “উপযুক্তভাবে” কবর দেওয়ার জন্য অনেক সময় ও প্রচেষ্টা আর সেইসঙ্গে সম্পদ ব্যয় করা হয়। যত বেশি লোককে সম্ভব আকৃষ্ট করার জন্য, বিভিন্ন জায়গায় মৃত ব্যক্তির ছবিসহ বড়ো বড়ো পোস্টার লাগানো হয় আর এইভাবে প্রকাশ্যে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্বন্ধে ঘোষণা করা হয়। মৃত ব্যক্তির ছবি লাগানো টি-শার্ট তৈরি করে বিতরণ করা হয়, যাতে শোকার্ত ব্যক্তিরা সেগুলো পরতে পারে। প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রভাবিত করার জন্য জমকালো নকশা করা, দামি কফিন কেনা হয়ে থাকে। আফ্রিকার একটা দেশে, ধনসম্পদ, জাঁকজমক ও বিলাসিতা জাহির করার জন্য কেউ কেউ এমন ধরনের কফিন পর্যন্ত তৈরি করে থাকে, যেগুলো দেখতে গাড়ি, প্লেন, নৌকা এবং অন্যান্য জিনিসের প্রতিকৃতির মতো। মৃতদেহকে হয়তো কফিন থেকে সরিয়ে বিশেষভাবে সাজানো একটা বিছানার ওপর প্রদর্শন করা হতে পারে। একজন মৃত স্ত্রীলোককে হয়তো বিয়ের সাদা পোশাক পরানো এবং প্রচুর অলংকার ও মালা দিয়ে ভূষিত ও সাজগোজ করানো হতে পারে। এই ধরনের অভ্যাসগুলোতে অংশগ্রহণ করা কি ঈশ্বরের যেকোনো লোকের জন্য সত্যই উপযুক্ত হবে?
পরিপক্ব খ্রিস্টানরা সেইসমস্ত লোকেদের করা চরম বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলার প্রজ্ঞা বুঝতে পারে, যে-লোকেরা ঈশ্বরীয় নীতিগুলোকে জানে না কিংবা সেগুলো সম্বন্ধে চিন্তাও করে না। আমরা জানি যে, আড়ম্বরপূর্ণ এবং অশাস্ত্রীয় রীতিনীতি ও অভ্যাসগুলো ‘ঈশ্বর হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে, যে জগৎ বহিয়া যাইতেছে।’ (১ যোহন ২:১৫-১৭) যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে আমরা ‘প্রতিযোগিতার’ এক অখ্রিস্টীয় মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত না হই ও অন্যদেরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করি। (গালা. ৫:২৬, NW) অভিজ্ঞতা দেখায় যে, মৃতদের সম্বন্ধে ভয় যখন স্থানীয় সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকে, তখন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াগুলো প্রায়ই বড়ো হয় ও সেগুলোকে তত্ত্বাবধান করা কঠিন হয়ে পড়ে আর তাই সেগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মৃতদের শ্রদ্ধা করা সহজেই অবিশ্বাসীদেরকে অশুচি আচরণ পর্যন্ত করতে প্ররোচিত করতে পারে। এই ধরনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াগুলোতে, হয়তো জোরে জোরে ও প্রচণ্ডভাবে কান্নাকাটি করতে, মৃতদেহকে জড়িয়ে ধরতে, যেন তিনি জীবিত আছেন এমনটা ভেবে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে এবং মৃতদেহের সঙ্গে অর্থ ও অন্যান্য জিনিস জুড়ে দিতে দেখা যেতে পারে। কোনো খ্রিস্টীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যদি এমনটা করা হয়, তাহলে তা যিহোবার নাম ও তাঁর লোকেদের ওপর অনেক নিন্দা নিয়ে আসবে।—১ পিতর ১:১৪-১৬.
মৃতদের প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে জানা নিশ্চয়ই আমাদেরকে সেই সাহস প্রদান করা উচিত, যাতে আমাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াগুলোতে জাগতিকতার লেশমাত্র না থাকে। (ইফি. ৪:১৭-১৯) যদিও যিশু সর্বকালের সর্বমহান ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু তাঁকে একরকম গোপনে ও অনাড়ম্বরভাবে কবর দেওয়া হয়েছিল। (যোহন ১৯:৪০-৪২) যাদের “খ্রীষ্টের মন” রয়েছে, তাদের কাছে এই ধরনের কবরপ্রাপ্ত হওয়া মর্যাদাহানিকর কোনো বিষয় নয়। (১ করি. ২:১৬) নিশ্চিতভাবেই, খ্রিস্টীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াগুলোকে সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর রাখা হচ্ছে, শাস্ত্রীয়ভাবে অশুচি বিষয়কে এড়িয়ে চলার ও এক শান্ত পরিবেশ বজায় রাখার সর্বোত্তম উপায়, যা যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে তাদের কাছে মর্যাদাপূর্ণ, রুচিসম্মত এবং উপযুক্ত।
সেখানে কি আনন্দ-ফূর্তি করা উচিত?
সমাহিত করার পর, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং অন্যদের খাওয়াদাওয়া করার ও অত্যন্ত জোরে গান চালিয়ে গানের সঙ্গে নাচার জন্য সমবেত হওয়া হয়তো এক রীতি হতে পারে। এইরকম অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উদ্যাপনগুলোর সঙ্গে প্রায়ই অত্যধিক মদ্যপান ও অনৈতিক কাজকর্ম জড়িত থাকে। কেউ কেউ যুক্তি দেখায় যে, এইরকম আনন্দোৎসব মৃত্যুর শোককে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। অন্যেরা মনে করে যে, এটা শুধুমাত্র তাদের সংস্কৃতির এক অংশ। কিন্তু অনেকে বিশ্বাস করে যে, এইরকম হই-হুল্লোড় করা হচ্ছে ব্যক্তির পদমর্যাদার পরিবর্তন সংক্রান্ত এক অত্যাবশ্যকীয় অনুষ্ঠান, যা মৃত ব্যক্তির সম্মান ও প্রশংসা এবং তার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে মিলিত হতে মৃত ব্যক্তির আত্মার মুক্তির জন্য অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে।
সত্য খ্রিস্টানরা শাস্ত্রীয় পরামর্শ সম্বন্ধীয় প্রজ্ঞাকে বুঝতে পারে: “হাস্য হইতে মনস্তাপ ভাল, কারণ মুখের বিষণ্ণতায় হৃদয় প্রসন্ন হয়।” (উপ. ৭:৩) অধিকন্তু, তারা সংক্ষিপ্ত জীবনকাল ও পুনরুত্থানের আশার বিষয়ে নীরবে চিন্তা করার উপকারগুলো সম্বন্ধে জানে। বস্তুতপক্ষে, যিহোবার সঙ্গে যাদের এক ব্যক্তিগত দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে, তাদের কাছে “জন্মদিন অপেক্ষা মরণদিন ভাল।” (উপ. ৭:১) তাই, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনন্দোৎসব যে প্রেতচর্চা সংক্রান্ত বিশ্বাস ও অনৈতিক কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা জানা সত্য খ্রিস্টানদের জন্য এই ধরনের উদ্যাপনগুলো সংগঠিত করাকে অথবা এমনকী সেগুলোতে যোগদান করাকে একেবারে অনুপযুক্ত করে তোলে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে যারা হই-হুল্লোড় করতে চায়, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো ঈশ্বরের এবং যিহোবার সহউপাসকদের বিবেকের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করবে।
অন্যদেরকে প্রভেদ দেখতে দিন
মৃতদের সম্পর্কে আতঙ্কজনক ভয় থেকে স্বাধীন বা মুক্ত হতে পেরে আমরা কতই না কৃতজ্ঞ, যা সেই ব্যক্তিদের মাঝে খুবই সাধারণ, যারা আধ্যাত্মিক অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে! (যোহন ৮:৩২) “দীপ্তির সন্তান” হিসেবে, আমরা এমন এক উপায়ে আমাদের দুঃখ ও শোক প্রকাশ করে থাকি, যা আধ্যাত্মিক জ্ঞানালোককে প্রতিফলিত করে, যা হল অনাড়ম্বর, সম্মানজনক এবং পুনরুত্থানের নিশ্চিত আশার দ্বারা ভারসাম্যপূর্ণ। (ইফি. ৫:৮; যোহন ৫:২৮, ২৯) এই ধরনের এক আশা আমাদেরকে অত্যধিক শোক প্রকাশ করা থেকে দূরে রাখবে, যা প্রায়ই সেই লোকেদের মাঝে দেখা যায়, “যাহাদের প্রত্যাশা নাই।” (১ থিষল. ৪:১৩) এটা আমাদেরকে লোকভয়ের কাছে নতিস্বীকার না করে বিশুদ্ধ উপাসনার পক্ষে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে সাহস প্রদান করবে।—১ পিতর ৩:১৩, ১৪.
বিশ্বস্ততার সঙ্গে শাস্ত্রীয় নীতিগুলো পালন করা লোকেদেরকে ‘যাহারা ঈশ্বরের সেবা করে, ও যাহারা তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ দেখিতে’ সুযোগ দেবে। (মালাখি ৩:১৮) একদিন মৃত্যু আর হবে না। (প্রকা. ২১:৪) সেই মহান প্রতিজ্ঞাটি বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করার সময় যিহোবা যেন আমাদেরকে নিষ্কলঙ্ক, নির্দ্দোষ এবং এই দুষ্ট জগৎ ও ঈশ্বরের অসম্মানজনক অভ্যাসগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক অবস্থায় দেখতে পান।—২ পিতর ৩:১৪.
[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে আমাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছাগুলোকে লিখিত আকারে রাখা প্রজ্ঞার কাজ
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রিস্টীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াগুলো অনাড়ম্বর ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়া উচিত