“তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন কর”
“তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন কর; অধ্যক্ষের কার্য্য কর, আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্ব্বক . . . কর।”—১ পিতর ৫:২.
১. পিতর যখন তার প্রথম চিঠিটি লিখেছিলেন, তখন খ্রিস্টানরা কোন ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছিল?
নিরো রোমের খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে তাড়না নিয়ে আসার অল্পসময় আগে, প্রেরিত পিতর তার প্রথম চিঠিটি লিখেছিলেন। তিনি তার সহবিশ্বাসীদেরকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন। দিয়াবল খ্রিস্টানদেরকে গ্রাস করার জন্য অন্বেষণ করে ‘বেড়াইতেছিল।’ তার বিরুদ্ধে দৃঢ় থাকার জন্য তাদের ‘প্রবুদ্ধ হইবার’ এবং ‘ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে নত হইবার’ প্রয়োজন ছিল। (১ পিতর ৫:৬, ৮) এ ছাড়া, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধও থাকতে হয়েছিল। তারা ‘পরস্পর দংশাদংশি ও গেলাগেলি করিতে’ পারত না কারণ সেটা করলে তারা “পরস্পরের দ্বারা কবলিত” হয়ে পড়ত।—গালা. ৫:১৫.
২, ৩. আমাদের কার বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত আর আমরা এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোতে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করব?
২ বর্তমানে আমরাও একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকি। দিয়াবল আমাদেরকে গ্রাস করার বিভিন্ন সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে। (প্রকা. ১২:১২) আর আমাদের সামনে “এরূপ ‘মহাক্লেশ’” আসতে যাচ্ছে, “যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই।” (মথি ২৪:২১) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদেরকে যেমন নিজেদের মধ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিবাদ করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়েছিল, তেমনই আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। এর জন্য মাঝে মাঝে আমাদের যোগ্য প্রাচীনদের কাছ থেকে সাহায্যের প্রয়োজন।
৩ আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি যে, কীভাবে প্রাচীনরা ‘তাহাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা’ পালন করার যে-বিশেষ সুযোগ লাভ করেছে, সেটার প্রতি তাদের উপলব্ধিকে বৃদ্ধি করতে পারে। (১ পিতর ৫:২) তাই, পালকীয় কাজ সম্পাদন করার সঠিক উপায় নিয়ে আমরা গভীরভাবে চিন্তা করব। পরের প্রবন্ধে আমরা পরীক্ষা করে দেখব যে, কীভাবে মণ্ডলী ‘যাঁহারা তাহাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন ও তাহাদের উপরে নিযুক্ত আছেন, তাঁহাদিগকে চিনিয়া লইতে [‘সম্মান করতে,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]’ পারে। (১ থিষল. ৫:১২) এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা আমাদেরকে আমাদের প্রধান শত্রুর বিরুদ্ধে অটল থাকতে এবং তার সঙ্গেই যে আমাদের মল্লযুদ্ধ হচ্ছে, সেটা বুঝতে সাহায্য করবে।—ইফি. ৬:১২.
ঈশ্বরের পালকে পালন করুন
৪, ৫. পালকে প্রাচীনবর্গের কীভাবে দেখা উচিত? ব্যাখ্যা করুন।
৪ পিতর প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মধ্যে বিদ্যমান প্রাচীনবর্গকে সেই পালের প্রতি ঈশ্বরীয় দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে উৎসাহিত করেছিলেন, যে-পালের দায়িত্ব আস্থা সহকারে তাদের ওপর অর্পণ করা হয়েছিল। (পড়ুন, ১ পিতর ৫:১, ২.) যদিও তাকে মণ্ডলীর মধ্যে এক স্তম্ভ হিসেবে গণ্য করা হতো কিন্তু তা সত্ত্বেও পিতর প্রাচীনদেরকে অবজ্ঞা করে কথা বলেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাদেরকে সহপ্রাচীন হিসেবে উপদেশ দিয়েছিলেন। (গালা. ২:৯) পিতরের মতো একই মনোভাব নিয়ে বর্তমানেও পরিচালকগোষ্ঠী, মণ্ডলীর প্রাচীনদেরকে জোরালো পরামর্শ দেয়, যাতে তারা ঈশ্বরের পালকে পালন করার গুরু দায়িত্ব সম্পন্ন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে।
৫ প্রেরিত লিখেছিলেন যে, প্রাচীনবর্গকে ‘তাহাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন’ করতে হবে। তাদের জন্য এই বিষয়টা স্বীকার করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, এই পাল যিহোবা এবং যিশু খ্রিস্টের। প্রাচীনরা ঈশ্বরের মেষদের কীভাবে দেখাশোনা করছে, সেই বিষয়ে তাদের নিকাশ দিতে হতো। ধরুন, আপনার কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাইরে থাকার সময় আপনাকে তার বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে বলেছেন। আপনি কি সেই বাচ্চাদের উত্তম যত্ন নিতেন না এবং তাদের খাবার দিতেন না? কোনো একটি বাচ্চা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ত, তাহলে আপনি কি এই বিষয়টা লক্ষ রাখতেন না, যেন সে প্রয়োজনীয় যেকোনো চিকিৎসা লাভ করে? একইভাবে, মণ্ডলীর প্রাচীনদের ‘ঈশ্বরের সেই মণ্ডলীকে পালন করিতে হয়, যাহাকে তিনি নিজ [“নিজ পুত্রের,” NW] রক্ত দ্বারা ক্রয় করিয়াছেন।’ (প্রেরিত ২০:২৮) তারা মনে রাখে যে, প্রতিটা মেষকে খ্রিস্ট যিশুর অমূল্য রক্ত দ্বারা ক্রয় করা হয়েছিল। নিকাশ দিতে বাধ্য হওয়ায় প্রাচীনরা পালকে খাবার দেয়, সুরক্ষা করে ও এর যত্ন নেয়।
৬. প্রাচীনকালের মেষপালকদের কী দায়িত্ব ছিল?
৬ বাইবেলের সময়ে মেষপালকদের যে-দায়িত্বগুলো পালন করতে হতো, সেই বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। তাদেরকে পালের যত্ন নেওয়ার জন্য দিনের উত্তাপ ও রাতের ঠাণ্ডা সহ্য করতে হতো। (আদি. ৩১:৪০) তারা এমনকী মেষের জন্য তাদের জীবনের ঝুঁকি নিত। অল্পবয়সি মেষপালক দায়ূদ যে-বন্য পশুদের হাত থেকে তার পালকে রক্ষা করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে একটা সিংহ ও একটা ভাল্লুক ছিল। সেগুলোর একেকটার বিষয়ে দায়ূদ বলেছিলেন যে, তিনি ‘তাহার দাড়ি ধরিয়া প্রহার করিয়া তাহাকে বধ করিয়াছিলেন।’ (১ শমূ. ১৭:৩৪, ৩৫) কতই না সাহসী কাজ! তিনি নিশ্চয়ই সেই পশুর গ্রাসের কত সামনেই না চলে গিয়েছিলেন! তা সত্ত্বেও, তিনি তার মেষকে রক্ষা করতে ইতস্তত করেননি।
৭. রূপকভাবে বললে, কীভাবে প্রাচীনরা দিয়াবলের গ্রাস থেকে মেষকে টেনে নেয়?
৭ বর্তমানে, প্রাচীনদেরকে দিয়াবলের সিংহতুল্য আক্রমণগুলোর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। এটার সঙ্গে দিয়াবলের গ্রাস থেকে মেষকে রূপকভাবে টেনে নেওয়ার মতো এক সাহসী কাজ জড়িত থাকতে পারে। রূপকভাবে বললে, সেই বন্য পশুর দাড়ি টেনে ধরার মাধ্যমে প্রাচীনরা মেষদের উদ্ধার করতে পারে। তারা হয়তো সেই অসতর্ক ভাইবোনদের সঙ্গে যুক্তি করতে পারে, যারা শয়তানের বিভিন্ন ফাঁদের দ্বারা প্রলোভিত হয়েছে। (পড়ুন, যিহূদা ২২, ২৩.) অবশ্য, প্রাচীনরা যিহোবার সাহায্যেই তা করে থাকে। তারা একটা আঘাতপ্রাপ্ত মেষের সঙ্গে কোমলভাবে আচরণ করে, ঈশ্বরের বাক্যের উপশমকারী মলম দ্বারা তার ক্ষত বেঁধে দেয় ও তাকে সুস্থ করে তোলে।
৮. প্রাচীনরা পালকে কোথায় পরিচালিত করে এবং কীভাবে?
৮ এ ছাড়া, একজন মেষপালক পালকে কোনো উপযুক্ত চারণভূমি ও জলাশয়ের দিকে পরিচালিত করত। একইভাবে, প্রাচীনরা পালকে মণ্ডলীর দিকে পরিচালিত করে অর্থাৎ নিয়মিতভাবে সভাতে যোগ দিতে উৎসাহিত করে, যাতে মেষপাল পরিপুষ্ট হতে ও “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য” লাভ করতে পারে। (মথি ২৪:৪৫) প্রাচীনদের হয়তো বাড়তি সময় ব্যয় করার প্রয়োজন হতে পারে, যাতে তারা আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে ঈশ্বরের বাক্য থেকে পুষ্টি গ্রহণ করার জন্য কোমলভাবে সাহায্য করতে পারে। একটা বিপথগামী মেষ হয়তো পালের মধ্যে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। তাদের ভাইকে আতঙ্কিত করার পরিবর্তে, প্রাচীনরা কোমলভাবে শাস্ত্রীয় নীতিগুলো ব্যাখ্যা করে এবং তাকে দেখায় যে, কীভাবে তিনি সেগুলো নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারেন।
৯, ১০. কীভাবে প্রাচীনদের আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়া উচিত?
৯ আপনি যখন অসুস্থ হন, তখন কোন ধরনের ডাক্তারকে আপনি দেখাতে চান? এমন একজনকে, যিনি আপনার কথা শোনার জন্য অল্প সময়ই ব্যয় করেন আর এরপর তাড়াতাড়ি ওষুধ লিখে দেন, যাতে তিনি পরবর্তী রোগী দেখার জন্য সময় পান? নাকি এর পরিবর্তে আপনি এমন একজন ডাক্তারকে দেখাতে চান, যিনি আপনার কথা শোনেন, আপনার সমস্যাটা কী হতে পারে, তা আপনার কাছে ব্যাখ্যা করেন এবং সম্ভাব্য চিকিৎসা সম্বন্ধে উল্লেখ করেন?
১০ একইভাবে, প্রাচীনরা আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির কথা শুনতে পারে এবং ক্ষত সুস্থ করার জন্য সাহায্য করতে পারে আর এভাবে রূপকভাবে ‘প্রভুর [ঈশ্বরের] নামে তাহাকে তৈলাভিষিক্ত করিতে’ পারে। (পড়ুন, যাকোব ৫:১৪, ১৫.) গিলিয়দের তরুসার বা গাছের নির্যাসের মতো, ঈশ্বরের বাক্য অসুস্থ ব্যক্তির পীড়া উপশম করতে পারে। (যির. ৮:২২; যিহি. ৩৪:১৬) কাজে লাগানো হলে বাইবেলের নীতিগুলো দুর্বল ব্যক্তিকে তার আধ্যাত্মিক ভারসাম্য ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। হ্যাঁ, প্রাচীনরা যখন অসুস্থ মেষের চিন্তার বিষয়গুলো শোনে ও তার সঙ্গে প্রার্থনা করে, তখন তারা অনেক উত্তম কিছু সম্পাদন করে থাকে।
আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্বক
১১. কী প্রাচীনদেরকে স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের পালকে পালন করার জন্য অনুপ্রাণিত করে?
১১ এরপর পিতর প্রাচীনবর্গকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, পালকীয় কাজের সময় কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়। প্রাচীনদেরকে ঈশ্বরের পালকে পালন করতে হয়, তবে সেটা “আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্ব্বক।” কী প্রাচীনদেরকে তাদের ভাইবোনদেরকে স্বেচ্ছায় সেবা করতে অনুপ্রাণিত করে? কী পিতরকে যিশুর মেষদের পালন এবং চরাতে অনুপ্রাণিত করেছিল? একটা প্রধান বিষয় ছিল প্রভুর প্রতি তার প্রেম। (যোহন ২১:১৫-১৭) প্রেমের বশবর্তী হয়ে, প্রাচীনরা “আর আপনাদের উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করে, যিনি তাহাদের জন্য মরিয়াছিলেন।” (২ করি. ৫:১৪, ১৫) এই প্রেম ও সেইসঙ্গে ঈশ্বর এবং তাদের ভাইবোনদের প্রতি তাদের প্রেম প্রাচীনদেরকে পালের সেবা করতে আর তা করার ক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টা, সম্পদ ও সময় নিয়োজিত করতে অনুপ্রাণিত করে। (মথি ২২:৩৭-৩৯) তারা নিজেদের বিলিয়ে দেয়, তবে অনিচ্ছুকভাবে নয় বরং স্বেচ্ছায়।
১২. প্রেরিত পৌল কত দূর পর্যন্ত নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন?
১২ প্রাচীনদের কত দূর পর্যন্ত নিজেদের বিলিয়ে দেওয়া উচিত? মেষদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা প্রেরিত পৌলকে অনুকরণ করে, ঠিক যেমনটা তিনি যিশুকে অনুকরণ করেছিলেন। (১ করি. ১০:৩৪) থিষলনীকীয় ভাইবোনদের প্রতি স্নেহ থাকায় পৌল ও তার সঙ্গীরা তাদের জন্য “কেবল ঈশ্বরের সুসমাচার নয়, আপন আপন প্রাণও” দিতে সন্তুষ্ট ছিলেন। তা করার সময় তারা “যেমন স্তন্যদাত্রী নিজ বৎসদিগের লালন পালন করে, তেমনি” কোমল হয়েছিল। (১ থিষল. ২:৭, ৮) পৌল জানতেন যে, একজন স্তন্যদাত্রী মা তার সন্তানদের সম্বন্ধে কেমন বোধ করেন। তিনি তাদের জন্য যেকোনো কিছু করবেন, যার অন্তর্ভুক্ত তাদের স্তন্যদান করার জন্য মাঝ রাতে ঘুম থেকে ওঠা।
১৩. প্রাচীনদের কোন ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে?
১৩ প্রাচীনদেরকে পালকীয় কাজের বিভিন্ন দায়িত্ব এবং নিজেদের পরিবারের প্রতি তাদের বাধ্যবাধকতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। (১ তীম. ৫:৮) প্রাচীনরা মণ্ডলীর সঙ্গে যে-সময় ব্যয় করে, তা হচ্ছে সেই মূল্যবান সময়, যেটা তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে ব্যয় করতে পারত। দুটো দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার একটা উপায় হচ্ছে, কখনো কখনো অন্যদেরকে তাদের পারিবারিক উপাসনার সন্ধ্যায় আমন্ত্রণ জানানো। বেশ কয়েক বছর ধরে, মাসানাও নামে জাপানের একজন প্রাচীন অবিবাহিত ব্যক্তিদের ও আধ্যাত্মিকভাবে পিতৃহীন পরিবারগুলোকে তার পারিবারিক অধ্যয়নে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন। পরবর্তী সময়ে, যারা সাহায্য লাভ করেছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাচীন হয়েছিল এবং মাসানাওর চমৎকার উদাহরণ অনুকরণ করেছিল।
কুৎসিত লাভের উদ্দেশ্য পরিহার করুন —পালকে উৎসুকভাবে পালন করুন
১৪, ১৫. কেন প্রাচীনদের ‘কুৎসিত লাভের’ উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা উচিত আর কীভাবে তারা এই বিষয়ে পৌলকে অনুকরণ করতে পারে?
১৪ এ ছাড়া, পিতর প্রাচীনদেরকে “কুৎসিত লাভার্থে নয়, কিন্তু উৎসুকভাবে” পালকে পালন করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। যদিও প্রাচীনদের কাজের জন্য যথেষ্ট সময় ব্যয় করার প্রয়োজন হয়, কিন্তু এর বিনিময়ে তারা কোনো অর্থ আশা করে না। পিতর সহপ্রাচীনবর্গকে “কুৎসিত লাভার্থে” পালকে পালন করার বিপদ সম্বন্ধে সাবধান করার প্রয়োজনীয়তা লক্ষ করেছিলেন। সেই বিপদটা ‘মহতী বাবিলের’ ধর্মীয় নেতাদের বিলাসী জীবনযাপনের মধ্যে স্পষ্ট দেখা যায়, যেখানে কিনা অনেক লোক দারিদ্র্যপীড়িত জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। (প্রকা. ১৮:২, ৩) বর্তমানে প্রাচীনদের সেই দিকে ধাবিত হওয়ার যেকোনো প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার উত্তম কারণ রয়েছে।
১৫ পৌল খ্রিস্টান প্রাচীনদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন। যদিও তিনি একজন প্রেরিত ছিলেন এবং থিষলনীকীর খ্রিস্টানদের ওপর “ভারস্বরূপ” হতে পারতেন, কিন্তু তিনি “বিনামূল্যে কাহারও কাছে অন্ন ভোজন” করতেন না। এর পরিবর্তে, তিনি ‘পরিশ্রম ও আয়াস সহকারে রাত দিন কার্য্য করিয়াছিলেন।’ (২ থিষল. ৩:৮) বর্তমান দিনের অনেক প্রাচীন, যাদের মধ্যে ভ্রমণ কাজে রত প্রাচীনরাও রয়েছে, তারা এই বিষয়ে চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করে থাকে। তারা যদিও সহবিশ্বাসীদের কাছ থেকে আতিথেয়তা গ্রহণ করে থাকে, কিন্তু তারা কারো ওপর “ভারস্বরূপ” হন না।—১ থিষল. ২:৯.
১৬. “উৎসুকভাবে” পালকে পালন করার অর্থ কী?
১৬ প্রাচীনরা “উৎসুকভাবে” পালকে পালন করে থাকে। তাদের উৎসুক মনোভাব পালকে সাহায্য করার ব্যাপারে তাদের আত্মত্যাগমূলক মনোভাবের মধ্যে স্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে, তারা যিহোবার সেবা করার জন্য পালকে বাধ্য করে থাকে; কিংবা প্রেমময় প্রাচীনরা অন্যদেরকে জ্বালাতনের বা প্রতিযোগিতার মনোভাবের বশবর্তী হয়ে ঈশ্বরের সেবা করার জন্য উৎসাহিত করে না। (গালা. ৫:২৬) প্রাচীনরা এটা বুঝতে পারে যে, প্রতিটা মেষ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। তারা তাদের ভাইবোনদেরকে আনন্দ সহকারে যিহোবার সেবা করার জন্য সাহায্য করার ব্যাপারে উৎসুক।
পালের ওপর কর্তৃত্বকারী নয় বরং আদর্শ হওয়া
১৭, ১৮. (ক) কেন কখনো কখনো প্রেরিতদের পক্ষে নম্রতার ব্যাপারে যিশুর শিক্ষা বোঝা কঠিন ছিল? (খ) আমরাও হয়তো কোন একই পরিস্থিতিতে পরতে পারি?
১৭ আমরা যেমন আলোচনা করেছি, প্রাচীনদের মনে রাখা উচিত যে, তারা যে-পালের পালন করছে, তা তাদের নয় বরং ঈশ্বরের। তারা সতর্ক থাকে যেন তারা ‘ঈশ্বরের নিরূপিত অধিকারের ওপর কর্ত্তৃত্ব’ না করে। (পড়ুন, ১ পিতর ৫:২, ৩.) কখনো কখনো, যিশুর প্রেরিতরাও ভুল মনোভাব নিয়ে আকাঙ্ক্ষা করেছিল। যারা জাতিগণকে শাসন করছিল, তাদের মতো শিষ্যরাও বিশিষ্ট পদ লাভ করতে চেয়েছিল।—পড়ুন, মার্ক ১০:৪২-৪৫.
১৮ বর্তমানে যে-ভাইয়েরা “অধ্যক্ষপদের আকাঙ্ক্ষী” হয়, তারা কেন আকাঙ্ক্ষী, তা নিজেদের পরীক্ষা করে দেখা উচিত। (১ তীম. ৩:১) এখন যারা প্রাচীনের কাজ করে, তারা হয়তো নিজেদেরকে অকপটভাবে জিজ্ঞেস করতে পারে যে, তাদের কর্তৃত্ব বা প্রাধান্য লাভের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে কি না, যেমনটা কিছু প্রেরিতের ছিল। প্রেরিতদেরই যদি এই ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে প্রাচীনরা এটা বুঝতে পারে যে, তাদেরকে অন্যদের ওপর কর্তৃত্ব করার মতো জাগতিক প্রবণতা এড়িয়ে চলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে।
১৯. পালকে সুরক্ষা করার পদক্ষেপ নেওয়ার সময় প্রাচীনদের কী মনে রাখা উচিত?
১৯ এটা ঠিক যে, এমন সময় আসে যখন প্রাচীনদেরকে দৃঢ় থাকতে হয়, যেমন পালকে ‘দুরন্ত কেন্দুয়াদের’ কাছ থেকে সুরক্ষা করার সময়। (প্রেরিত ২০:২৮-৩০) পৌল তীতকে বলেছিলেন, যেন তিনি সর্বদা ‘সম্পূর্ণ ক্ষমতার সহিত উপদেশ দেন, ও অনুযোগ করেন।’ (তীত ২:১৫) তবে, এমনকী এই ধরনের কাজ করার সময়ও প্রাচীনরা এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরকে মর্যাদা প্রদান করার চেষ্টা করে থাকে। তারা উপলব্ধি করে যে, কঠোর সমালোচনার পরিবর্তে বরং মৃদুভাবে যুক্তি দিয়ে বোঝানো হৃদয়ে পৌঁছানোর এবং একজন ব্যক্তিকে সঠিক পথ অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করার ক্ষেত্রে সাধারণত আরও বেশি কার্যকারী।
২০. এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করার জন্য প্রাচীনরা কীভাবে যিশুকে অনুকরণ করতে পারে?
২০ খ্রিস্টের উত্তম উদাহরণ প্রাচীনদেরকে পালের প্রতি প্রেম দেখাতে অনুপ্রাণিত করে। (যোহন ১৩:১২-১৫) তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে কীভাবে শিক্ষা দিয়েছিলেন, তা যখন আমরা পড়ি, তখন আমাদের হৃদয় উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। তাঁর নম্রতার উদাহরণ তাঁর শিষ্যদের হৃদয় স্পর্শ করেছিল, তাদেরকে এমন এক পথ অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল, যেখানে ‘নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করে।’ (ফিলি. ২:৩) বর্তমানেও, প্রাচীনরা একইভাবে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত হয় আর এর ফলে তারা “পালের আদর্শ” হয়ে উঠতে চায়।
২১. প্রাচীনরা কোন পুরস্কারের জন্য প্রতীক্ষা করতে পারে?
২১ পিতর ভবিষ্যতের এক প্রতিজ্ঞার বিষয়ে উল্লেখ করে প্রাচীনবর্গকে উপদেশ দেওয়া শেষ করেন। (পড়ুন, ১ পিতর ৫:৪.) অভিষিক্ত অধ্যক্ষরা স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে “অম্লান প্রতাপমুকুট পাইবে।” ‘আরও মেষের’ অন্তর্ভুক্ত অধীনস্ত পালকরা ‘প্রধান পালকের’ শাসনাধীনে পৃথিবীতে ঈশ্বরের যে-পাল রয়েছে, তাদেরকে পালন করার বিশেষ সুযোগ লাভ করবে। (যোহন ১০:১৬) পরের প্রবন্ধে এমন উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে, যে-উপায়গুলোতে মণ্ডলীর সদস্যরা সেই ব্যক্তিদের সমর্থন করতে পারে, যাদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।
পুনরালোচনা
• পিতর যে সহপ্রাচীনদেরকে তাদের যত্নাধীন ঈশ্বরের পালকে পালন করার উপদেশ দিয়েছিলেন, তা কেন উপযুক্ত ছিল?
• আধ্যাত্মিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে প্রাচীনদের কীভাবে পালন করা উচিত?
• কী প্রাচীনদেরকে তাদের যত্নাধীন ঈশ্বরের পালকে পালন করার জন্য অনুপ্রাণিত করে?
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনকালের মেষপালকদের মতো, বর্তমানেও প্রাচীনদেরকে তাদের যত্নাধীন ‘মেষদের’ সুরক্ষা করতে হবে