যিহোবাকে ধন্যবাদ দিন ও আশীর্বাদ লাভ করুন
“সদাপ্রভুর স্তব কর [“ধন্যবাদ কর,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন], কেননা তিনি মঙ্গলময়।”—গীত. ১০৬:১.
১. কেন আমরা যিহোবাকে ধন্যবাদ দিই?
যিহোবা আমাদের “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর” প্রদান করেন। (যাকোব ১:১৭) তিনি হলেন আমাদের প্রেমময় পালক আর তিনি কোমলভাবে আমাদের সমস্ত চাহিদার যত্ন নেন। (গীত. ২৩:১-৩) সত্যিই, যিহোবা আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ লাভের যোগ্য। তিনি হলেন আমাদের “আশ্রয় ও বল,” বিশেষভাবে সেই সময়ে, যখন আমরা কষ্টভোগ করি। (গীত. ৪৬:১) আমরা সেই গীতরচকের মতো অনুভব করি, যিনি লিখেছিলেন: “সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর, কেননা তিনি মঙ্গলময়, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী।”—গীত. ১০৬:১.
২০১৫ সালের জন্য আমাদের বার্ষিক শাস্ত্রপদ: যিহোবার ধন্যবাদ কর, কেননা তিনি মঙ্গলময়।—গীতসংহিতা ১০৬:১.
২, ৩. (ক) আমরা যদি অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ি, তাহলে কোন কোন ঝুঁকি রয়েছে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো আলোচনা করব?
২ যিহোবার প্রতি কেন আমাদের কৃতজ্ঞতা দেখানো উচিত? কারণ ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, শেষকালে লোকেরা অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়েছে। (২ তীম. ৩:২) অনেক লোক, যিহোবা তাদের জন্য যে-সমস্ত উত্তম বিষয় করেছেন, সেগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখায় না। আমরা এমন এক বস্তুবাদী জগতে বাস করি, যে-জগৎ লক্ষ লক্ষ লোককে তাদের সত্যিই যা প্রয়োজন, তার চেয়ে আরও বেশি সামগ্রী কেনার জন্য উৎসাহিত করে। তাই অনেক লোক, তাদের কাছে ইতিমধ্যেই যা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে পরিতৃপ্ত নয়। প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের মতো, আমরাও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়তে পারি এবং আমাদের আশীর্বাদগুলোর প্রতি ও যিহোবার সঙ্গে আমাদের মূল্যবান সম্পর্কের প্রতি উপলব্ধি হারিয়ে ফেলতে পারি।—গীত. ১০৬:৭, ১১-১৩.
৩ আমরা যখন পরীক্ষা সহ্য করি, তখন কী ঘটতে পারে, সেই বিষয়টাও চিন্তা করুন। এইরকম সময়ে, আমরা হয়তো সমস্যার দ্বারা এতটাই জর্জরিত হয়ে পড়ি, যার ফলে আশীর্বাদের পরিবর্তে আমাদের সমস্যাগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি। (গীত. ১১৬:৩) তাহলে, কীভাবে আমরা কৃতজ্ঞতার মনোভাব বজায় রাখতে পারি? চরম পরীক্ষা সত্ত্বেও কীভাবে আমরা এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে পারি? আসুন আমরা তা দেখি।
যিহোবা, তোমার কাজ “গণনা করা যায় না”
৪. কীভাবে আমরা যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতার মনোভাব বজায় রাখতে পারি?
৪ যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞতার মনোভাব বজায় রাখার জন্য প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রথমে, যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের যে-সমস্ত উপায়ে আশীর্বাদ করেছেন, আমাদের সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে। তারপর, সেই আশীর্বাদগুলো কীভাবে আমাদের জন্য ঈশ্বরের অসীম দয়ার প্রমাণ দেয়, তা মনোযোগ সহকারে চিন্তা করতে হবে। গীতরচক যখন এই বিষয়গুলো করেছিলেন, তখন যিহোবা তার জন্য যে-সমস্ত চমৎকার কাজ করেছেন, সেগুলো দেখে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৪০:৫; ১০৭:৪৩.
৫. কৃতজ্ঞতার মনোভাব সম্বন্ধে প্রেরিত পৌলের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৫ যিহোবার প্রতি কীভাবে কৃতজ্ঞতা দেখানো যায়, তা আমরা প্রেরিত পৌলের উদাহরণ বিবেচনা করার মাধ্যমে শিখতে পারি। তিনি যে তার আশীর্বাদগুলো নিয়ে ধ্যান করেছিলেন সেটা আমরা বুঝতে পারি কারণ তিনি নিয়মিতভাবে প্রার্থনায় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। পৌল এটা স্বীকার করেছিলেন, তিনি আগে “ধর্ম্মনিন্দক, তাড়নাকারী ও অপমানকারী” ছিলেন। তার এইরকম অতীত সত্ত্বেও, ঈশ্বর ও খ্রিস্ট যে তার প্রতি করুণা দেখিয়েছেন এবং তাকে অন্যদের কাছে প্রচার করার বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন, সেজন্য তিনি কৃতজ্ঞ ছিলেন। (পড়ুন, ১ তীমথিয় ১:১২-১৪.) এ ছাড়া, পৌল তার খ্রিস্টান ভাই-বোনদের জন্যও অনেক কৃতজ্ঞ ছিলেন এবং তাদের উত্তম গুণাবলি ও বিশ্বস্ত সেবার জন্য তিনি প্রায়ই যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাতেন। (ফিলি. ১:৩-৫, ৭; ১ থিষল. ১:২, ৩) তিনি পরীক্ষা সহ্য করার সময়, তার ভাইয়েরা তার জন্য যা-কিছু করেছিলেন, সেগুলোর জন্য তিনি সঙ্গেসঙ্গে যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাতেন। (প্রেরিত ২৮:১৫; ২ করি. ৭:৫-৭) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পৌল খ্রিস্টানদের এভাবে উৎসাহিত করেছিলেন: ‘তোমরা কৃতজ্ঞ হও। গীত, স্ত্রোত্র ও আত্মিক সঙ্কীর্ত্তন দ্বারা পরস্পর চেতনা দান কর।’—কল. ৩:১৫-১৭.
ধ্যান ও প্রার্থনা আমাদের কৃতজ্ঞতার মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে
৬. কেন আপনি যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ?
৬ কীভাবে আমরা পৌলের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি? যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলো নিয়ে আমরা ধ্যান করতে পারি। (গীত. ১১৬:১২) আপনি সেই সময়ে কীভাবে উত্তর দেবেন, যখন কেউ আপনাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, “যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া কোন আশীর্বাদের জন্য আপনি কৃতজ্ঞ?” আপনি কি যিহোবার সঙ্গে আপনার মূল্যবান সম্পর্কের বিষয়ে বলবেন? না কি, খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের কারণে পাপের ক্ষমা লাভ করার বিষয়ে বলবেন? আপনি কি আপনার সেই খ্রিস্টান ভাই ও বোনদের কথা উল্লেখ করবেন, যারা কঠিন সময়ে আপনাকে সাহায্য করেছে? আপনার বিবাহসাথিকে অথবা সন্তানকে পেয়ে আপনি কতটা কৃতজ্ঞ, আপনি কি সেই বিষয়ে বলবেন? যিহোবা যে-অসংখ্য উপায়ে আপনাকে আশীর্বাদ করেছেন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় করে নিন। তা করার ফলে আপনি প্রতিদিন তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য অনুপ্রাণিত হবেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৯২:১, ২.a
৭. (ক) কেন প্রার্থনায় যিহোবাকে আমাদের ধন্যবাদ জানানো উচিত? (খ) প্রার্থনায় যিহোবাকে ধন্যবাদ জানানোর মাধ্যমে আপনি কীভাবে উপকৃত হবেন?
৭ আমরা যখন আমাদের সমস্ত আশীর্বাদ নিয়ে ধ্যান করব, তখন আমরা প্রার্থনায় যিহোবার ‘স্তব করিতে [“ধন্যবাদ দিতে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]’ চাইব। (গীত. ৯৫:২; ১০০:৪, ৫) কিছু লোক কেবল ঈশ্বরের কাছে বিভিন্ন বিষয় চাওয়ার জন্য প্রার্থনা করে। কিন্তু, আমরা যখন আমাদের কাছে ইতিমধ্যেই যা আছে, সেটার জন্য প্রার্থনায় যিহোবাকে ধন্যবাদ দিই, তখন তিনি খুশি হন। বাইবেলে আমরা ঈশ্বরের দাসদের অনেক উদাহরণ পাই, যারা প্রার্থনায় যিহোবাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন, যেমন হান্না এবং হিষ্কিয়। (১ শমূ. ২:১-১০; যিশা. ৩৮:৯-২০) তাই, তাদের কৃতজ্ঞতার মনোভাব অনুকরণ করুন এবং যিহোবা আপনার জন্য যা-কিছু করেছেন, সেজন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিন। (১ থিষল. ৫:১৭, ১৮) আপনি যখন তা করবেন, তখন আপনি সতেজ হবেন, ঈশ্বরের জন্য আপনার ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি তাঁর বন্ধু হয়ে উঠবেন ও সবসময় তাঁর বন্ধু হিসেবেই থাকবেন।—যাকোব ৪:৮.
৮. কোন কারণে আমরা অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়তে পারি?
৮ আমরা যদি সতর্ক না হই, তাহলে যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া উত্তম দানের জন্য আমাদের উপলব্ধি খুব সহজেই হারিয়ে যেতে পারে। কেন? কারণ আমরা অসিদ্ধ আর আমাদের আদি পিতা-মাতার কাছ থেকে আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে অকৃতজ্ঞ মনোভাব পেয়েছি। যিহোবা আদম ও হবাকে এক পরমদেশ গৃহ দিয়েছিলেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই জুগিয়ে দিয়েছিলেন। (আদি. ১:২৮) কিন্তু, তারা তাদের আশীর্বাদকে উপলব্ধি করেননি। তারা লোভ করেছিলেন এবং আরও বেশি চেয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত, তারা সব কিছুই হারিয়েছিলেন। (আদি. ৩:৬, ৭, ১৭-১৯) আমরা এক অকৃতজ্ঞ জগতে বাস করছি আর তাই আমরাও যিহোবা আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার মনোভাব হারিয়ে ফেলতে পারি। আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতি অথবা আমাদের বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজের অংশ হওয়ার বিশেষ সুযোগের প্রতি উপলব্ধি হারিয়ে ফেলতে পারি। আমরা জগতের বিভিন্ন বিষয়ের দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়তে পারি। (১ যোহন ২:১৫-১৭) সেই ফাঁদ এড়ানোর জন্য, আমরা যে-অসংখ্য আশীর্বাদ পেয়েছি, সেগুলো নিয়ে আমাদের ধ্যান করতে হবে এবং আমরা যে ঈশ্বরের লোক হওয়ার বিশেষ সুযোগ পেয়েছি, সেজন্য তাঁকে নিয়মিতভাবে ধন্যবাদ দিতে হবে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ২৭:৪.
পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করার সময়
৯. চরম পরীক্ষা সহ্য করার সময় কেন আমাদের বিভিন্ন আশীর্বাদ নিয়ে ধ্যান করতে হবে?
৯ কৃতজ্ঞতার মনোভাব আমাদের চরম পরীক্ষা সহ্য করতে সাহায্য করে। আমরা হয়তো এমন মারাত্মক পরিস্থিতির কারণে ভারগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারি, যেগুলো আমাদের জীবনকে হঠাৎ পরিবর্তন করে দেয়। যেমন, আমাদের বিবাহসাথির অবিশ্বস্ততা, গুরুতর অসুস্থতা, কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু অথবা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যিহোবার আশীর্বাদ নিয়ে ধ্যান করা আমাদের সান্ত্বনা দেবে এবং পরীক্ষা সহ্য করার জন্য শক্তিশালী করবে। নীচের অভিজ্ঞতাগুলো বিবেচনা করুন।
১০. ইরিনা তার আশীর্বাদ নিয়ে ধ্যান করে কীভাবে উপকৃত হয়েছিলেন?
১০ ইরিনাb নামে উত্তর আমেরিকার একজন নিয়মিত অগ্রগামীর স্বামী একজন প্রাচীন ছিলেন। কিন্তু, সেই স্বামী ইরিনার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েন এবং ইরিনা ও তার সন্তানদের ছেড়ে চলে যান। কোন বিষয়টা ইরিনাকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিহোবার সেবা করে যেতে সাহায্য করেছে? তিনি বলেন: “ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে যিহোবা আমার যত্ন নিয়েছেন, সেটার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। প্রতিদিন আমার জীবনের কোন আশীর্বাদের জন্য আমি কৃতজ্ঞ, তা বাছাই করার সময় আমি বুঝতে পারি, আমাদের সুরক্ষাকারী স্বর্গীয় পিতার জানা লোক হওয়া এবং তাঁর ভালোবাসা লাভ করা হল এক বিশেষ সুযোগ। আমি এটা জানি, তিনি কখনোই আমাকে পরিত্যাগ করবেন না।” যদিও ইরিনা তার জীবনে অনেক দুঃখজনক পরিস্থিতি সহ্য করেছেন, কিন্তু তার আনন্দপূর্ণ মনোভাব তাকে সেগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে এবং অন্যদের উৎসাহিত করতে সাহায্য করেছে।
১১. কোন বিষয়টা কিয়ুং-সুককে এক গুরুতর অসুস্থতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছে?
১১ এশিয়ায় বসবাসরত কিয়ুং-সুক, তার স্বামীর সঙ্গে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে অগ্রগামীর কাজ করেছেন। হঠাৎ, তার ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ে আর তাকে বলা হয়, তিনি আর তিন থেকে ছয় মাস বেঁচে থাকবেন। তিনি ও তার স্বামী যদিও এর আগে অনেক পরীক্ষা সহ্য করেছেন, কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য সবসময়ই ভালো ছিল। তিনি বলেন: “এই স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে আমি অনেক ভেঙে পড়েছিলাম—মনে হয়েছিল, আমার সব কিছু হারিয়ে গিয়েছে আর আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” কোন বিষয়টা কিয়ুং-সুককে এর সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছে? তিনি বলেন: “প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমি আমাদের বাড়ির ছাদে যাই আর সেই দিনের যে-পাঁচটা বিষয়ের জন্য আমি কৃতজ্ঞ, তা প্রার্থনায় জোরে জোরে বলি। তখন আমি সান্ত্বনা পাই এবং যিহোবার প্রতি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য অনুপ্রাণিত হই।” প্রতি রাতে করা এই প্রার্থনা থেকে কিয়ুং-সুক কীভাবে উপকৃত হয়েছেন? তিনি বলেন: “আমি বুঝতে পেরেছি, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যিহোবা আমাদের ধরে রাখেন এবং আমাদের জীবনে বিভিন্ন পরীক্ষার চেয়ে আশীর্বাদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।”
১২. জেসন তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর কীভাবে সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন?
১২ আফ্রিকার একটা শাখা অফিসে সেবারত জেসন ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে পূর্ণসময়ের সেবা করে এসেছেন। তিনি বলেন, “সাত বছর আগে, আমার স্ত্রী মারা যায় আর এটা কত কষ্টদায়ক, তা বলে বোঝানো যায় না। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার সময় সে যেরকম কষ্ট পেয়েছে, তা নিয়ে অনবরত চিন্তা করলে অনেক খারাপ লাগে।” কোন বিষয়টা জেসনকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে? তিনি বলেন: “এক পর্যায়ে গিয়ে আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কাটানো আনন্দদায়ক মুহূর্তের কথা স্মরণ করতে আর সেই স্মৃতির জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাতে শুরু করেছিলাম। তখন আমি কিছুটা স্বস্তি অনুভব করতে থাকি। এরপর থেকে আমি এইরকম আনন্দের মুহূর্তগুলোর জন্য নিয়মিতভাবে যিহোবাকে ধন্যবাদ দিই। কৃতজ্ঞতার মনোভাব আমার দৃষ্টিভঙ্গিকে যথেষ্ট পরিবর্তন করেছে। তাকে হারানোর কারণে আমি এখনও কষ্ট পাই ঠিকই, তবে আমি যিহোবাকে ধন্যবাদ দিই কারণ আমি এক উত্তম বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে পেরেছি ও সেইসঙ্গে এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে যিহোবার সেবা করার বিশেষ সুযোগ পেয়েছি, যে যিহোবাকে গভীরভাবে ভালোবাসত। এই বিষয়গুলো নিয়ে ধন্যবাদ দেওয়া আমার দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও ভালো করেছে।”
“যিহোবাকে আমার ঈশ্বর হিসেবে পেয়ে আমি অনেক কৃতজ্ঞ।”—শ্যারল
১৩. কোন বিষয়টা শ্যারলকে তার পরিবারের প্রায় সবাইকে হারানোর কষ্ট সহ্য করতে সাহায্য করেছে?
১৩ সুপার টাইফুন হাইয়ান যখন ২০১৩ সালের শেষের দিকে মধ্য ফিলিপিনসে আঘাত হানে, তখন শ্যারল, যার বয়স মাত্র ১৩ বছর, বলতে গেলে তার সব কিছুই হারায়। সে বলে: “আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি, আমার পরিবারের প্রায় সবাইকে হারিয়েছি।” জলোচ্ছ্বাসের কারণে তার বাবা, মা ও তিন ভাই-বোন মারা যায়। কোন বিষয়টা শ্যারলকে তিক্তবিরক্ত না হয়ে এই দুঃখজনক ঘটনা সহ্য করতে সাহায্য করেছে? শ্যারল এখনও যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ কারণ সে তার সমস্ত আশীর্বাদ নিয়ে ধ্যান করে। সে বলে: “যাদের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, তাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আসার ও তাদের উৎসাহিত করার জন্য ভাই-বোনেরা যা যা করেছেন, সেইসমস্তই আমি দেখেছি। আমি জানতাম, বিশ্বব্যাপী ভাই-বোনেরা আমার জন্য প্রার্থনা করছে।” সে আরও বলে: “যিহোবাকে আমার ঈশ্বর হিসেবে পেয়ে আমি অনেক কৃতজ্ঞ। তিনি সবসময় আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয় জুগিয়ে দেন।” হ্যাঁ, আমরা যখন আমাদের আশীর্বাদগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হই, তখন আমরা শোকের দ্বারা জর্জরিত হওয়া এড়াতে পারি। এটা আমাদেরকে যেকোনো কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হলে, তা সহ্য করতে সাহায্য করবে।—ইফি. ৫:২০; পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.
“আমি সদাপ্রভুতে আনন্দ করিব”
১৪. আমাদের কোন রোমাঞ্চকর প্রত্যাশা রয়েছে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১৪ ইতিহাসজুড়ে, যিহোবার লোকেরা তাদের আশীর্বাদের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এসেছে। ইস্রায়েলীয়রা যখন সূফসাগরে ফরৌণ ও তার সেনাবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল, তখন তারা আনন্দের সঙ্গে গান গেয়েছিল, যিহোবার প্রশংসা করেছিল ও তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল। (যাত্রা. ১৫:১-২১) বর্তমানে, আমাদের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান আশীর্বাদ হল এই বিষয়টা জানা যে, আর কোনো কষ্ট থাকবে না। (গীত. ৩৭:৯-১১; যিশা. ২৫:৮; ৩৩:২৪) যিহোবা যখন তাঁর সমস্ত শত্রুকে ধ্বংস করে দেবেন এবং আমাদেরকে এক শান্তিপূর্ণ ও ধার্মিক নতুন জগতে স্বাগত জানাবেন, তখন আমাদের কেমন লাগবে তা একটু কল্পনা করে দেখুন। সেই দিন আমরা যিহোবাকে কতই-না ধন্যবাদ জানাব!—প্রকা. ২০:১-৩; ২১:৩, ৪.
১৫. দু-হাজার পনেরো সালজুড়ে আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
১৫ দু-হাজার পনেরো সালে, যিহোবার কাছ থেকে আমরা অনেক আশীর্বাদ লাভ করার জন্য অপেক্ষা করে আছি। এটা ঠিক যে, আমাদের হয়তো কিছু-না-কিছু পরীক্ষা ভোগ করতে হবে। তবে যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা জানি, যিহোবা আমাদের কখনোই পরিত্যাগ করবেন না। (দ্বিতীয়. ৩১:৮; গীত. ৯:৯, ১০) বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করার জন্য আমাদের যা-কিছু প্রয়োজন, তিনি সবসময় সেগুলো জুগিয়ে দেবেন। আসুন, আমরা ভাববাদী হবক্কূকের মনোভাব অনুকরণ করি, যিনি বলেছিলেন: “যদিও ডুমুরবৃক্ষ পুষ্পিত হইবে না, দ্রাক্ষালতায় ফল ধরিবে না, জিতবৃক্ষ ফলদানে বঞ্চনা করিবে, ও ক্ষেত্রে খাদ্যদ্রব্য উৎপন্ন হইবে না, খোঁয়াড় হইতে মেষপাল উচ্ছিন্ন হইবে, গোষ্ঠে গোরু থাকিবে না; তথাপি আমি সদাপ্রভুতে আনন্দ করিব, আমার ত্রাণেশ্বরে উল্লাসিত হইব।” (হবক্. ৩:১৭, ১৮) এই বছরজুড়ে আসুন আমরা আমাদের সমস্ত আশীর্বাদ নিয়ে ধ্যান করি এবং আমাদের ২০১৫ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদের উপদেশ অনুসরণ করার জন্য উৎসাহিত হই, যেটা হল: যিহোবার ধন্যবাদ কর, কেননা তিনি মঙ্গলময়।—গীত. ১০৬:১.
a গীতসংহিতা ৯২:১-৩ (বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন): ‘হে সদাপ্রভু, মহান ঈশ্বর, তোমাকে ধন্যবাদ দেওয়া, তোমার প্রশংসা-গান করা, সকালে তোমার অটল ভালোবাসার কথা আর রাতে তোমার বিশ্বস্ততার কথা প্রচার করা কত না আনন্দের ব্যাপার!’
b এই প্রবন্ধে কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।