তিনি লোকেদের ভালোবেসেছিলেন
“মনুষ্য-সন্তানগণে আমার আনন্দ হইত।”—হিতো. ৮:৩১.
১, ২. কীভাবে যিশু মানবজাতির জন্য তাঁর গভীর ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছিলেন?
ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র হলেন যিহোবার অতুলনীয় প্রজ্ঞার সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ। তিনি তাঁর পিতার কাছে “কার্য্যকারী [“দক্ষ কর্মী,” ইজি-টু-রিড ভারশন]” হিসেবে ছিলেন। যিশুর পিতা যখন “আকাশমণ্ডল প্রস্তুত” এবং “পৃথিবীর মূল নিরূপণ” করেছিলেন, তখন যিশু কতটা আনন্দ ও পরিতৃপ্তি লাভ করেছিলেন, তা একটু কল্পনা করুন। তবে, তাঁর পিতার সৃষ্ট সমস্ত কিছুর মধ্যে “মনুষ্য-সন্তানগণে” যিশুর “আনন্দ হইত।” (হিতো. ৮:২২-৩১) হ্যাঁ, একেবারে শুরু থেকেই তিনি মানুষকে ভালোবেসেছিলেন।
২ পরবর্তী সময়ে, যিশু যখন স্বেচ্ছায় স্বর্গ থেকে একজন মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, তখন তিনি তাঁর পিতার প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছিলেন আর সেইসঙ্গে তিনি মানুষের প্রতিও তাঁর গভীর ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছিলেন। যিশু প্রেমবশত স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে এসেছিলেন, যেন তিনি “অনেকের পরিবর্ত্তে” নিজের জীবন “মুক্তির মূল্যরূপে” দিতে পারেন। (মথি ২০:২৮; ফিলি. ২:৫-৮) যিশু পৃথিবীতে থাকার সময়, ঈশ্বর তাঁকে অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। এই অলৌকিক কাজগুলো প্রকাশ করে, যিশু লোকেদের কতটা ভালোবাসেন এবং খুব শীঘ্র তিনি মানবজাতির জন্য কোন চমৎকার বিষয়গুলো সম্পাদন করবেন।
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?
৩ যিশু পৃথিবীতে থাকার সময় “ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার” প্রচার করেছিলেন। (লূক ৪:৪৩) তিনি জানতেন, এই রাজ্য তাঁর পিতার নামকে পবিত্রীকৃত করবে এবং মানবজাতির সমস্যাগুলো চিরকালের জন্য সমাধান করবে। প্রচার করার সময় যিশু অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। এই অলৌকিক কাজগুলো প্রকাশ করেছিল, সকল মানুষের জন্য তাঁর গভীর চিন্তা রয়েছে। এই বিষয়টা বিবেচনা করা কেন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? কারণ তাঁর কাজ আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আশা ও আস্থা প্রদান করে। তাই আসুন, আমরা এখন যিশুর চারটে অলৌকিক কাজ বিবেচনা করি।
তাঁর মধ্যে “শক্তি উপস্থিত ছিল, যেন তিনি সুস্থ করেন”
৪. একজন কুষ্ঠ রোগীর সঙ্গে যখন যিশুর দেখা হয়েছিল, তখন কী ঘটেছিল?
৪ যিশু প্রচার করার সময় গালীল নামে একটা এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে একটা নগরে এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল, যিনি মারাত্মক কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। (মার্ক ১:৩৯, ৪০) এই ব্যক্তি এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে, চিকিৎসক লূক তাকে “সর্ব্বাঙ্গকুষ্ঠ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (লূক ৫:১২) বাইবেল জানায়, যিশুকে দেখে সেই অসুস্থ ব্যক্তি “উবুড় হইয়া পড়িয়া বিনতিপূর্ব্বক বলিল, প্রভু, যদি আপনার ইচ্ছা হয়, তবে আমাকে শুচি করিতে পারেন।” সেই ব্যক্তি জানতেন, তাকে সুস্থ করার ক্ষমতা যিশুর রয়েছে। তবে যিশু তাকে সুস্থ করতে চান কি না, সেই বিষয়টা তার জানা প্রয়োজন ছিল। কেন? কারণ সেই ব্যক্তি ফরীশীদের আচরণের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন, যারা কুষ্ঠ রোগীদের ঘৃণার চোখে দেখত। কিন্তু, যিশু কী চিন্তা করেছিলেন? এই ব্যক্তি, যার শারীরিক গঠন সম্ভবত বিকৃত হয়ে গিয়েছিল, তার সঙ্গে যিশু কেমন আচরণ করেছিলেন? আপনি হলে কী করতেন?
৫. কেন যিশু একজন কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করতে চেয়েছিলেন?
৫ এটা স্পষ্ট যে, সেই ব্যক্তি “অশুচি, অশুচি” বলে চিৎকার করেননি, যেমনটা মোশির ব্যবস্থায় একজন কুষ্ঠ রোগীকে করতে বলা হয়েছিল। (লেবীয়. ১৩:৪৩-৪৬) কিন্তু, যিশু তার সঙ্গে রাগ হননি। এর পরিবর্তে, তিনি সেই ব্যক্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন এবং তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। যিশু ঠিক কী চিন্তা করেছিলেন, তা আমরা জানি না, তবে আমরা তাঁর অনুভূতি সম্বন্ধে জানতে পারি। সেই ব্যক্তিকে দেখে যিশুর অনেক কষ্ট লেগেছিল আর তাই তিনি একটা অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তিনি সেই ব্যক্তিকে স্পর্শ করেছিলেন, যা অন্যেরা করত না। যিশু সমবেদনা দেখিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন: “আমার ইচ্ছা, তুমি শুচীকৃত হও।” আর “তখনই তাহার কুষ্ঠ চলিয়া গেল।” (লূক ৫:১৩) স্পষ্টতই, যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত শক্তির মাধ্যমে যিশু এই মহৎ অলৌকিক কাজ করতে পেরেছিলেন আর সেইসঙ্গে তিনি যে লোকেদের কতটা ভালোবাসেন, তা প্রকাশ করতে পেরেছিলেন।—লূক ৫:১৭.
৬. যিশুর বিভিন্ন অলৌকিক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিকগুলো কী আর এগুলো আমাদের কাছে কী প্রকাশ করে?
৬ যিশু ঈশ্বরের শক্তিতে অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তিনি কেবল কুষ্ঠ রোগীদের সুস্থ করেননি। যিশু অন্যান্য অনেক ধরনের রোগ থেকে লোকেদের সুস্থ করেছিলেন। বাইবেল আমাদের জানায়, লোকেরা যখন দেখেছিল, “বোবারা কথা কহিতেছে, নুলারা সুস্থ হইতেছে, খঞ্জেরা চলিতেছে এবং অন্ধেরা দেখিতেছে,” তখন তারা অবাক হয়ে গিয়েছিল। (মথি ১৫:৩১) যিশু যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করেছিলেন, তখন অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে দান হিসেবে কোনো অঙ্গ নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। বরং, রোগীর দেহের আক্রান্ত অংশ সুস্থ করার ক্ষমতা যিশুর ছিল। আর তিনি সঙ্গেসঙ্গে লোকেদের সুস্থ করেছিলেন, যদিও কখনো কখনো লোকেরা তাঁর কাছ থেকে অনেক দূরে ছিল। (যোহন ৪:৪৬-৫৪) এই অসাধারণ উদাহরণগুলো কী প্রকাশ করে? এগুলো প্রকাশ করে, সমস্ত ধরনের অসুস্থতা চিরতরে দূর করার ক্ষমতা ও আকাঙ্ক্ষা আমাদের রাজা যিশু খ্রিস্টের রয়েছে। যিশু লোকেদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিলেন, তা জানার মাধ্যমে আমরা এই আস্থা লাভ করি, নতুন জগতে “তিনি দীনহীন ও দরিদ্রের প্রতি দয়া করিবেন।” (গীত. ৭২:১৩) যারা এখন কষ্টভোগ করছে, তাদের সকলকে যিশু সুস্থ করবেন, কারণ তিনি সত্যিই তা করতে চান।
“উঠ, তোমার খাট তুলিয়া লইয়া চলিয়া বেড়াও”
৭, ৮. বৈথেস্দায় একজন অসুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে যিশুর দেখা হওয়ার আগে যা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করুন।
৭ কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করার কয়েক মাস পর যিশু গালীল থেকে যিহূদিয়ায় গিয়েছিলেন আর সেখানে তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে চলেছিলেন। সেই সময়ে নিশ্চয়ই হাজার হাজার লোক যিশুর বার্তা শুনেছিল এবং তাঁর প্রেম তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। যিশু সত্যিই দরিদ্র ও নিপীড়িত লোকেদের সান্ত্বনা দিতে এবং আশা প্রদান করতে চেয়েছিলেন।—যিশা. ৬১:১, ২; লূক ৪:১৮-২১.
৮ যিশু নিশান মাসে নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করার জন্য যিরূশালেমে গিয়েছিলেন। সেই নগরটা তখন ব্যস্ত ছিল কারণ বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকেরা এই বিশেষ উৎসব পালন করার জন্য এসেছিল। মন্দিরের ঠিক উত্তরে বৈথেস্দা নামে পরিচিত একটা পুকুর ছিল আর সেখানে এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে যিশুর দেখা হয়েছিল, যিনি হাঁটতে পারতেন না।
৯, ১০. (ক) কেন লোকেরা বৈথেস্দার পুকুরে যেত? (খ) সেই পুকুরের কাছে যিশু কী করেছিলেন আর এই ঘটনা আমাদের কী শিক্ষা দেয়? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৯ অনেক অসুস্থ লোক বৈথেস্দায় আসত। কেন? কারণ তারা মনে করত, সেই পুকুরের জল কম্পিত হওয়ার সময় কোনো অসুস্থ ব্যক্তি যদি সেখানে নামে, তাহলে তার অসুস্থতা অলৌকিকভাবে দূর হয়ে যাবে। আরোগ্য লাভ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা আর সেইসঙ্গে উদ্বিগ্ন ও অসহায় লোকেদের ভিড়ের কারণে সেই জায়গায় কেমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতো, তা একটু কল্পনা করুন। যিশু সিদ্ধ ছিলেন আর নিশ্চিতভাবেই তাঁর সুস্থ হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। তাহলে, কেন তিনি সেখানে গিয়েছিলেন? লোকেদের জন্য ভালোবাসা তাঁকে সেখানে যেতে পরিচালিত করেছিল। আর সেখানেই এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে যিশুর দেখা হয়, যিনি যিশুর জন্মের আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন।—পড়ুন, যোহন ৫:৫-৯.
১০ যিশু সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি আবারও হাঁটতে চান কি না। সেই ব্যক্তি যিশুকে বলেছিলেন, তিনি সুস্থ হতে চান তবে তা সম্ভব হয় না, কারণ তাকে পুকুরে নামতে সাহায্য করার মতো কেউ নেই। এই কথাগুলো বলার সময় সেই ব্যক্তির কতটা কষ্ট লেগেছিল, তা একটু কল্পনা করে দেখুন। তখন যিশু তাকে একটা অসম্ভব কাজ করতে বলেছিলেন। যিশু তাকে তার খাট তুলে নিয়ে হাঁটতে বলেছিলেন। আর তখনই সেই ব্যক্তি তার খাট তুলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করেছিলেন! এই অলৌকিক কাজ, যিশু নতুন জগতে কী করবেন, সেটার এক চমৎকার প্রমাণ। এ ছাড়া, এই কাজ লোকেদের জন্য যিশুর গভীর ভালোবাসাকেও প্রকাশ করে। তিনি এমন লোকেদের খুঁজতেন, যাদের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। যিশুর উদাহরণ আমাদের উৎসাহিত করে, যেন আমরা আমাদের এলাকায় সেই লোকেদের খুঁজে বের করি, যারা এই জগতের ভয়ানক ঘটনাগুলোর কারণে হতাশ হয়ে পড়েছে।
“কে আমার বস্ত্র স্পর্শ করিল?”
১১. কীভাবে মার্ক ৫:২৫-৩৪ পদ দেখায়, অসুস্থ লোকেদের জন্য যিশুর ভালোবাসা ছিল?
১১ মার্ক ৫:২৫-৩৪ পদ পড়ুন। একজন মহিলা ১২ বছর ধরে এক অস্বস্তিকর রোগে ভুগছিলেন। তার অসুস্থতা তার জীবনের প্রতিটা দিকে প্রভাব ফেলেছিল আর এর মধ্যে তার উপাসনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি অনেক চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন আর সুস্থ হওয়ার চেষ্টায় সর্বস্ব ব্যয় করেছিলেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি, বরং তার অসুস্থতা আরও বেড়ে গিয়েছিল। একদিন সেই মহিলা সুস্থ হওয়ার জন্য একটা ভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন আর তাই তিনি লোকেদের ভিড়ের মধ্যে হেঁটে গিয়ে যিশুর বস্ত্র স্পর্শ করেছিলেন। (লেবীয়. ১৫:১৯, ২৫) যিশু যখন বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বের হয়ে গিয়েছে, তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, কে তাঁকে স্পর্শ করেছে। সেই মহিলা তখন “ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে . . . তাঁহার সম্মুখে আসিয়া প্রণিপাত করিল, আর সমস্ত সত্য বৃত্তান্ত তাঁহাকে কহিল।” যিশু জানতেন, যিহোবা সেই মহিলাকে সুস্থ করেছেন আর তাই তিনি সদয়ভাবে বলেছিলেন: “হে কন্যে তোমার বিশ্বাস তোমাকে রক্ষা করিল, শান্তিতে চলিয়া যাও, ও তোমার রোগ হইতে মুক্ত থাক।”
১২. (ক) এই পর্যন্ত আমরা যা জেনেছি, তা থেকে আপনি যিশু সম্বন্ধে কীভাবে বর্ণনা করবেন? (খ) যিশু আমাদের জন্য কোন উদাহরণস্থাপন করেছিলেন?
১২ যিশু লোকেদের প্রতি, বিশেষভাবে অসুস্থদের প্রতি যেভাবে প্রেম দেখিয়েছিলেন, তা দেখে আমাদের হৃদয় সত্যিই আনন্দিত হয়। যিশুর এই মনোভাব শয়তানের মনোভাব থেকে অনেক আলাদা, যে আমাদের দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করাতে চায়, আমরা অযোগ্য এবং কেউ আমাদের ভালোবাসে না। কিন্তু, যিশুর অলৌকিক কাজগুলো প্রমাণ দেয়, তিনি সত্যিই আমাদের জন্য ও আমাদের সমস্যার বিষয়ে চিন্তা করেন। আমরা এইরকম একজন প্রেমময় রাজা ও মহাযাজক পেয়ে কৃতজ্ঞ হতে পারি! (ইব্রীয় ৪:১৫) দীর্ঘসময় ধরে অসুস্থতায় ভুগছে এমন কারো অনুভূতি বোঝা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে, বিশেষভাবে আমাদের নিজেদের যদি সেইরকম কোনো অভিজ্ঞতা না থাকে। কিন্তু, যিশুর কথা চিন্তা করুন। যদিও যিশু নিজে কখনো অসুস্থ হননি, কিন্তু তিনি অসুস্থ লোকেদের সমবেদনা দেখিয়েছিলেন। তাই আসুন, আমরা তাঁর প্রেমের উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য যথাসাধ্য করি।—১ পিতর ৩:৮.
“যীশু কাঁদিলেন”
১৩. লাসারের পুনরুত্থান যিশু সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?
১৩ অন্য লোকেদের কষ্ট যিশুর হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তাঁর বন্ধু লাসার যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন যিশু লাসারের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কষ্ট দেখে ‘উত্তেজিত হইয়া উঠিয়াছিলেন’ এবং ‘উদ্বিগ্ন হইয়াছিলেন।’ (পড়ুন, যোহন ১১:৩৩-৩৬.) যদিও যিশু জানতেন, তিনি লাসারকে পুনরুত্থিত করতে যাচ্ছেন, কিন্তু তারপরও তিনি কেঁদেছিলেন। অন্যেরা তাঁর অনুভূতি দেখে ফেলবে, তিনি এমন ভয় পাননি। যিশু লাসার ও তার পরিবারকে এতটাই ভালোবাসতেন যে, লাসারের জীবন ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি ঈশ্বরের শক্তি ব্যবহার করেছিলেন!—যোহন ১১:৪৩, ৪৪.
১৪, ১৫. (ক) কোন বিষয়টা দেখায়, যিহোবা মানবজাতির দুঃখকষ্ট দূর করতে চান? (খ) ‘স্মরণিক কবর’ অভিব্যক্তি থেকে আমরা কী জানতে পারি?
১৪ বাইবেল জানায়, যিশু একেবারে তাঁর পিতা যিহোবার মতো। (কল. ১:১৫) তাই, যিশুর অলৌকিক কাজ প্রমাণ দেয়, যিহোবাও অসুস্থতা, কষ্ট ও মৃত্যু দূর করতে চান। শীঘ্রই যিহোবা এবং যিশু আরও অনেক ব্যক্তিকে জীবনে ফিরিয়ে আনবেন। যিশু বলেছিলেন, “এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ [“স্মরণিক কবরের,” NW] সকলে তাঁহার রব শুনিবে।”—যোহন ৫:২৮, ২৯.
১৫ যিশু ‘স্মরণিক কবর’ অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন, যা দেখায়, পুনরুত্থানের সঙ্গে ঈশ্বরের স্মৃতিশক্তি জড়িত। পুরো নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আমাদের মৃত প্রিয়জনদের প্রতিটা বিষয় আর সেইসঙ্গে তাদের ব্যক্তিত্ব স্মরণে রাখতে পারেন। (যিশা. ৪০:২৬) যিহোবা যে শুধু তাদের স্মরণে রাখতে পারেন, তা নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি তাদের স্মরণে রাখতে চান। বাইবেলে উল্লেখিত পুনরুত্থানের বিবরণগুলো, নতুন জগতে যে-বিষয়গুলো ঘটবে, সেটার অপূর্ব উদাহরণ।
যিশুর অলৌকিক কাজ থেকে আমরা যা শিখতে পারি
১৬. ঈশ্বরের অনেক দাস কোন সুযোগ লাভ করবে?
১৬ আমরা যদি বিশ্বস্ত থাকি, তাহলে আমরা হয়তো সর্বকালের সর্বমহৎ অলৌকিক কাজ অর্থাৎ মহাক্লেশের মধ্য থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়টা দেখার সুযোগ পাব! আরমাগিদোনের পরে শীঘ্রই আমরা আরও অনেক অলৌকিক কাজ দেখতে পাব। সেই সময়ে, সকল মানুষ নিখুঁত স্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। (যিশা. ৩৩:২৪; ৩৫:৫, ৬; প্রকা. ২১:৪) একটু কল্পনা করুন, আপনি এমন দৃশ্য দেখছেন, লোকেরা চশমা, ছড়ি, ক্রাচ, হুইলচেয়ার ও হিয়ারিং এইড (শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র) ফেলে দিচ্ছে। যিহোবা জানেন, যারা আরমাগিদোনের সময় রক্ষা পাবে, তাদের আরও শক্তিশালী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে কারণ তাদের জন্য প্রচুর কাজ থাকবে। আর তারাই এই অপূর্ব পৃথিবী গ্রহকে এক পরমদেশে পরিণত করবে।—গীত. ১১৫:১৬.
১৭, ১৮. (ক) কেন যিশু বিভিন্ন অলৌকিক কাজ করেছিলেন? (খ) নতুন জগতে থাকার জন্য যা-কিছু করা প্রয়োজন, তা আপনি কেন করবেন?
১৭ যিশু অতীতে যেভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের সুস্থ করেছিলেন, সেই বিবরণগুলো যখন বর্তমানে “বিস্তর লোক” পড়ে, তখন তারা উৎসাহ লাভ করে। (প্রকা. ৭:৯) এই অলৌকিক কাজগুলো, ভবিষ্যতে আমরা যে পুরোপুরি সুস্থ থাকব, আমাদের সেই চমৎকার আশাকে দৃঢ় করে। এ ছাড়া, এই কাজগুলো এও প্রকাশ করে, ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র মানবজাতিকে কতটা ভালোবাসেন। (যোহন ১০:১১; ১৫:১২, ১৩) যিশুর সমবেদনা দেখে আমরা বুঝতে পারি, যিহোবা তাঁর প্রত্যেক দাসের জন্য গভীর প্রেম অনুভব করেন।—যোহন ৫:১৯.
১৮ বর্তমান জগতে দুঃখকষ্ট এবং মৃত্যু ছেয়ে আছে। (রোমীয় ৮:২২) এই কারণে আমাদের জন্য ঈশ্বরের নতুন জগৎ প্রয়োজন। সেখানে সকল মানুষ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী নিখুঁত স্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। মালাখি ৪:২ পদ আমাদের এই আশা প্রদান করে, আমরা আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ‘পালের গোবৎসদের ন্যায় নাচিব’ কারণ আমরা আরোগ্য লাভ করব এবং অসিদ্ধতা থেকে মুক্ত হব। যিহোবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি বিশ্বাস যেন আমাদেরকে নতুন জগতে থাকার জন্য যা-কিছু করা প্রয়োজন, তা করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। যিশুর অলৌকিক কাজগুলো, শীঘ্রই মানবজাতি তাঁর শাসনের সময় যে-চিরস্থায়ী স্বস্তি লাভ করবে, সেটার পূর্বাভাস ছিল। আর এই বিষয়টা জানা আমাদের জন্য কতই-না উৎসাহজনক!