তাদের অন্ধকার থেকে আহ্বান করা হয়েছিল
“[ঈশ্বর] তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন।” —১ পিতর ২:৯.
১. যিরূশালেম নগর ধ্বংসের সময় কী ঘটেছিল?
খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালে, রাজা নবূখদ্নিৎসর ২য় ও তার বিরাট বাবিলীয় সেনাবাহিনী যিরূশালেম নগর আক্রমণ করেছিলেন। বাইবেল জানায়, রাজা খড়্গ দ্বারা যুবকদের হত্যা করেছিলেন। তিনি “যুবক কি যুবতী, বৃদ্ধ কি জরাজীর্ণ, কাহারও প্রতি দয়া করিলেন না।” সব শেষে, “তাঁহার লোকেরা ঈশ্বরের গৃহ পোড়াইয়া দিল, যিরূশালেমের প্রাচীর ভগ্ন করিল, এবং তথাকার অট্টালিকা সকল অগ্নিদ্বারা পোড়াইয়া দিল, তথাকার সমস্ত মনোরম পাত্র বিনষ্ট করিল।”—২ বংশা. ৩৬:১৭, ১৯.
২. যিহোবা কোন সতর্কবাণী দিয়েছিলেন আর যিহুদিদের প্রতি কী ঘটবে?
২ যিরূশালেমের ধ্বংস যিহুদিদের কাছে অবাক করার মতো কোনো বিষয় ছিল না। কারণ বহু বছর ধরে, ঈশ্বর তাঁর বিভিন্ন ভাববাদীকে পাঠিয়ে লোকেদের সতর্ক করেছিলেন, তারা যদি তাঁর অবাধ্য হতেই থাকে, তা হলে বাবিলীয়রা তাদের আক্রমণ করবে। অনেক যিহুদি খড়্গ দ্বারা নিহত হবে এবং যারা বেঁচে থাকবে, তারা বাবিলে নির্বাসিত হবে। (যির. ১৫:২) নির্বাসনে থাকার সময়টা কেমন ছিল? খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রেও কি এমন কিছু ঘটেছিল, যা বাবিলের বন্দিত্বে থাকার মতোই ছিল? যদি ঘটে থাকে, তা হলে কখন সেটা ঘটেছিল?
নির্বাসনে থাকাকালীন জীবন
৩. বাবিলে নির্বাসিত হিসেবে জীবনযাপন করা আর মিশরে দাস হিসেবে জীবনযাপন করা কীভাবে আলাদা ছিল?
৩ যিহোবা যিহুদিদের বলেছিলেন, তাদের যখন নির্বাসনে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন সেই পরিস্থিতির সঙ্গে তাদের মানিয়ে নিতে হবে ও সেখানেই জীবনযাপন করার জন্য যথাসাধ্য করতে হবে। যিরমিয়ের মাধ্যমে তিনি তাদের বলেছিলেন: “তোমরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া বাস কর, উপবন রোপণ করিয়া ফল ভোগ কর; আর আমি তোমাদিগকে যে নগরে বন্দি করিয়া আনিয়াছি, তথাকার শান্তি চেষ্টা কর, ও সেখানকার নিমিত্ত সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা কর; কেননা সেখানকার শান্তিতে তোমাদের শান্তি হইবে।” (যির. ২৯:৫, ৭) যে-যিহুদিরা যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করেছিল, তারা নির্বাসনে থাকাকালীন বলতে গেলে স্বাভাবিক জীবনযাপনই করেছিল। বাবিলীয়রা যিহুদিদের নিজস্ব বিষয়গুলো নিজেদেরই পরিচালনা করার এবং সেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বাধীনভাবে যাতায়াত করার অনুমতি দিয়েছিল। সেই সময়ে, বাবিল এক ব্যাবসায়িক কেন্দ্র ছিল। প্রাচীন দলিলপত্র থেকে জানা যায়, বন্দিত্বে থাকার সময় অনেক যিহুদি কীভাবে ক্রয়-বিক্রয় করতে হয় তা শিখেছিল ও দক্ষ কারিগর হয়ে উঠেছিল। এমনকী কোনো কোনো যিহুদি বেশ ধনী হয়ে উঠেছিল। নির্বাসনে থাকাকালীন তাদের জীবন সেই ইস্রায়েলীয়দের মতো খুব কঠিন ছিল না, যারা শত শত বছর আগে মিশরে দাস ছিল।—পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ২:২৩-২৫.
৪. অবিশ্বস্ত যিহুদিদের সঙ্গে কারা কষ্টভোগ করেছিল আর কেন তারা ব্যবস্থা অনুযায়ী সমস্ত কিছু করতে পারেনি?
৪ নির্বাসিত যিহুদিদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাস ছিল। যদিও তারা কোনো ভুল করেনি, কিন্তু বাকি জাতির সঙ্গে তাদেরও কষ্টভোগ করতে হয়েছিল। এটা ঠিক, যিহুদিদের কাছে প্রয়োজনীয় বস্তুগত বিষয় ছিল, কিন্তু তারা কীভাবে যিহোবার উপাসনা করতে পেরেছিল? মন্দির ও বেদি ইতিমধ্যে ধ্বংস করা হয়েছিল আর যাজকবর্গ সুসংগঠিত উপায়ে কাজ করতে পারেননি। তবে, বিশ্বস্ত যিহুদিরা ঈশ্বরের ব্যবস্থা অনুসরণ করার জন্য যথাসাধ্য করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, দানিয়েল, শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো সেইসমস্ত খাবার খেতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যেগুলো যিহুদিদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। আর বাইবেল বলে, দানিয়েল নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন। (দানি. ১:৮; ৬:১০) তা সত্ত্বেও, যিহুদিরা যেহেতু এক পৌত্তলিক জাতির অধীনে ছিল, তাই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের পক্ষে ব্যবস্থা অনুযায়ী সমস্ত কিছু করা কঠিন ছিল।
৫. যিহোবা তাঁর লোকেদের কোন আশা প্রদান করেছিলেন আর কেন সেই প্রতিজ্ঞা উল্লেখযোগ্য ছিল?
৫ ইস্রায়েলীয়রা কি আবারও পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য উপায়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারবে? তখন সেটা আশা করা অসম্ভব বলেই মনে হয়েছিল কারণ বাবিলীয়রা কখনো তাদের অধীনে থাকা বন্দিদের মুক্ত করত না। কিন্তু যিহোবা ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তাঁর লোকেরা স্বাধীন হবে আর শেষপর্যন্ত সেটাই হয়েছিল। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সবসময়ই পরিপূর্ণ হয়!—যিশা. ৫৫:১১.
খ্রিস্টানরা কি কখনো বাবিলের বন্দিত্বে চলে গিয়েছিল?
৬, ৭. কেন আমাদের বোধগম্যতা রদবদল করা প্রয়োজন?
৬ খ্রিস্টানদের কি কখনো এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যা বাবিলে বন্দিত্বে থাকার মতো ছিল? অনেক বছর ধরে প্রহরীদুর্গ পত্রিকা বলে এসেছে, বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা ১৯১৮ সালে বাবিলের বন্দিত্বে চলে গিয়েছিল এবং ১৯১৯ সালে বাবিলের কাছ থেকে স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু, এই প্রবন্ধ ও এর পরের প্রবন্ধ থেকে আমরা জানতে পারব, কেন আমাদের এই বোধগম্যতা রদবদল করা প্রয়োজন।
৭ এই বিষয়টা চিন্তা করুন: মহতী বাবিল হল মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য। আর ঈশ্বরের লোকেরা ১৯১৮ সালে মিথ্যা ধর্মের দাস হয়নি। এটা ঠিক, সেই সময়ে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তাড়নার শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের এই তাড়না, মিথ্যা ধর্মের কাছ থেকে নয় বরং সরকারের কাছ থেকে এসেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অনেক আগে থেকে, ঈশ্বরের অভিষিক্ত দাসেরা আসলে মিথ্যা ধর্ম থেকে নিজেদের পৃথক করতে শুরু করেছিলেন। তাই, ঈশ্বরের লোকেরা ১৯১৮ সালে মহতী বাবিলের বন্দিত্বে প্রবেশ করেছিল, এমনটা মনে হয় না।
কখন ঈশ্বরের লোকেরা বাবিলের বন্দিত্বে চলে গিয়েছিল?
৮. প্রেরিতদের মৃত্যুর পর কী ঘটেছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৮ তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন, হাজার হাজার নতুন খ্রিস্টান পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিলেন। তারা “মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ” হয়ে উঠেছিলেন। (পড়ুন, ১ পিতর ২:৯, ১০.) প্রেরিতরা যতদিন বেঁচেছিলেন, ততদিন তারা সতর্কতার সঙ্গে মণ্ডলীগুলোর দেখাশোনা করেছিলেন। কিন্তু, বিশেষভাবে প্রেরিতদের মৃত্যুর পর, মণ্ডলীর মধ্যে কেউ কেউ মিথ্যা ধারণা শিক্ষা দিতে শুরু করেছিলেন এবং শিষ্যদেরকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। এই ব্যক্তিরা এরিস্টটল ও প্লেটোর দর্শন ভালোবাসতেন এবং ঈশ্বরের বাক্যের সত্য শিক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে সেই দার্শনিকদের ধারণা শিক্ষা দিতে শুরু করেছিলেন। (প্রেরিত ২০:৩০; ২ থিষলনীকীয় ২:৬-৮) তাদের মধ্যে অনেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন এবং মণ্ডলীতে অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করতেন। তাই, যিশু যদিও তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন, “তোমরা সকলে ভ্রাতা,” কিন্তু একটা পাদরি শ্রেণি গঠিত হতে শুরু করেছিল।—মথি ২৩:৮.
৯. কীভাবে ধর্মভ্রষ্ট খ্রিস্ট ধর্ম রোমীয় সরকারের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেছিল আর এর ফল কী হয়েছিল, তা বর্ণনা করুন।
৯ সম্রাট কনস্ট্যানটিন ৩১৩ সালে পৌত্তলিক রোমীয় সাম্রাজ্যের উপর রাজত্ব করতে শুরু করেছিলেন আর তিনি সেই খ্রিস্ট ধর্মকে এক বৈধ ধর্ম হিসেবে অনুমোদন করেছিলেন, যা ধর্মভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এরপর, গির্জা রোমীয় সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে শুরু করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, কনস্ট্যানটিন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে একটা সভা করেছিলেন, যেটা নাইসিয়া পরিষদ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। সেই সভার পর, অ্যারাইয়াস নামে একজন যাজককে সম্রাট নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন কারণ সেই যাজক এই শিক্ষা বিশ্বাস করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যিশু হলেন ঈশ্বর। পরে থিওডোশিয়াস রোমের সম্রাট হন আর ক্যাথলিক গির্জা রোমীয় সাম্রাজ্যের প্রধান ধর্ম হয়ে ওঠে। ইতিহাসবিদরা বলেন, সম্রাট থিওডোশিয়াসের রাজত্বের সময় পৌত্তলিক রোম “খ্রিস্টান” সাম্রাজ্য হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সত্য বিষয়টা হল, সেই সময়ের মধ্যে ধর্মভ্রষ্ট খ্রিস্টানরা পৌত্তলিক শিক্ষাগুলো গ্রহণ করে নিয়েছিল আর তারা ইতিমধ্যে মহতী বাবিলের অংশ হয়ে উঠেছিল। তবে, তখনও অল্পসংখ্যক বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টান ছিলেন। তারা যিশুর দৃষ্টান্তে বলা গমের মতো ছিলেন। এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা যদিও ঈশ্বরের উপাসনা করার জন্য যথাসাধ্য করেছিলেন, কিন্তু তারা কী বলতে চেয়েছিলেন, সেটা খুব অল্প লোকই শুনেছিল। (পড়ুন, মথি ১৩:২৪, ২৫, ৩৭-৩৯.) তারা সত্যিই বাবিলের বন্দিত্বে চলে গিয়েছিলেন!
১০. কেন কেউ কেউ গির্জার শিক্ষা সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে শুরু করেছিলেন?
১০ যিশুর মৃত্যুর পর প্রথম কয়েক-শো বছর ধরে, অনেকে গ্রিক অথবা ল্যাটিন ভাষায় বাইবেল পড়তে পেরেছিল। তারা ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষার সঙ্গে গির্জার শিক্ষার তুলনা করতে পেরেছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ যখন বুঝতে পেরেছিল, গির্জার শিক্ষাগুলো মিথ্যা, তখন তারা সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু, অন্যদের কাছে তাদের মতামত প্রকাশ করা বিপদজনক ছিল আর তা করলে তাদের মৃত্যুও হতে পারত।
১১. কীভাবে গির্জা বাইবেলের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল?
১১ সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, গ্রিক অথবা ল্যাটিন ভাষায় কথা বলে এমন লোকের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। আর গির্জার নেতারা ঈশ্বরের বাক্যকে লোকেদের মধ্যে প্রচলিত ভাষাগুলোতে অনুবাদ করার অনুমতি দেননি। ফল স্বরূপ, শুধু পাদরি শ্রেণি ও সেইসঙ্গে কিছু শিক্ষিত ব্যক্তি বাইবেল পড়তে পারতেন, তবে পাদরিদের মধ্যে সকলে আবার ভালোমতো পড়তে বা লিখতে পারতেন না। যদি কেউ গির্জার শিক্ষার সঙ্গে একমত না হতেন, তা হলে সেই ব্যক্তিকে চরম শাস্তি দেওয়া হতো। বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের ছোটো ছোটো দলে মিলিত হতে হয়েছিল আর কেউ কেউ একেবারেই মিলিত হতে পারতেন না। বাবিলে নির্বাসনে থাকা যিহুদিদের মতো, অভিষিক্ত ‘রাজকীয় যাজকবর্গও’ সুসংগঠিত উপায়ে উপাসনা করতে পারতেন না। লোকেদের উপর মহতী বাবিলের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল!
আশার আলো দেখা গিয়েছিল
১২, ১৩. কোন দুটো কারণে সত্য খ্রিস্টানরা স্বাধীন হওয়ার বিষয়ে আশার আলো দেখতে পেয়েছিল? ব্যাখ্যা করুন।
১২ সত্য খ্রিস্টানরা কি আবার স্বাধীনভাবে ও গ্রহণযোগ্য উপায়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারবে? হ্যাঁ পারবে! দুটো গুরুত্বপূর্ণ কারণে আশার আলো দেখা গিয়েছিল। প্রথমটা ছিল মুদ্রণযন্ত্র উদ্ভাবন আর এই যন্ত্রের মুদ্রাক্ষরগুলো খোলা যেত। এই যন্ত্র ১৪৫০ সালের দিকে উদ্ভাবন করা হয়েছিল। এর আগে হাতে লিখে বাইবেলের প্রতিলিপি তৈরি করা হতো, যা সহজ কাজ ছিল না। বাইবেলের শুধু একটা প্রতিলিপি তৈরি করার জন্য একজন দক্ষ ব্যক্তির প্রায় দশ মাস সময় লাগত! এ ছাড়া, প্রতিলিপিকারীরা পার্চমেন্ট বা পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি পত্রের উপর লিখতেন। তাই, বাইবেলের খুব অল্পসংখ্যক প্রতিলিপি ছিল আর সেগুলো খুবই দামি ছিল। কিন্তু, মুদ্রণযন্ত্র ও কাগজের সাহায্যে একজন দক্ষ ব্যক্তি প্রতিদিন ১,৩০০-রও বেশি পৃষ্ঠা ছাপাতে পারতেন!
১৩ দ্বিতীয় কারণটা ছিল, বাইবেলের অনুবাদ। ১৫০০ সালের দিকে কয়েক জন সাহসী ব্যক্তি, লোকেদের মধ্যে প্রচলিত ভাষাগুলোতে ঈশ্বরের বাক্য অনুবাদ করেছিলেন। এর জন্য তাদের মৃত্যু হতে পারে তা জানা সত্ত্বেও, তারা এই কাজ করেছিলেন। গির্জার নেতারা তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। কেন? কারণ তারা ভয় পেয়েছিলেন, আন্তরিক পুরুষ ও নারীরা যখন নিজেদের ভাষায় বাইবেল পড়বে, তখন তারা হয়তো এইরকম প্রশ্ন করতে শুরু করবে: ‘বাইবেলে পুরগাতরির শিক্ষা কোথায়? বাইবেলের কোথায় লেখা আছে, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে মিশা করার জন্য একজন যাজককে টাকা দিতে হবে? বাইবেলের কোথায় পোপ এবং কার্ডিনালদের বিষয়ে বলা আছে?’ গির্জার অনেক মিথ্যা শিক্ষার ভিত্তি ছিল এরিস্টটল ও প্লেটোর দর্শন, যারা খ্রিস্টের জন্মের শত শত বছর আগে বেঁচেছিলেন। লোকেরা যখন গির্জার নেতাদের প্রশ্ন করেছিল, তখন তারা রেগে গিয়েছিলেন। তাদের শিক্ষা প্রত্যাখ্যান করেছিল এমন পুরুষ ও নারীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। গির্জার নেতারা চেয়েছিলেন, যেন লোকেরা বাইবেল পড়া ও প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকে আর অনেক ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছিল। কিন্তু, সাহসী ব্যক্তিদের একটা দল মহতী বাবিলের নিয়ন্ত্রণে থাকতে প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেই ব্যক্তিরা ঈশ্বরের বাক্য থেকে সত্য খুঁজে পেয়েছিলেন আর তারা আরও বেশি জানতে চেয়েছিলেন! মিথ্যা ধর্ম থেকে স্বাধীনতা খুব কাছেই ছিল।
১৪. (ক) যে-ব্যক্তিরা বাইবেল অধ্যয়ন করতে চেয়েছিল, তারা কী করেছিল? (খ) ভাই রাসেল যেভাবে সত্য অনুসন্ধান করেছিলেন, তা বর্ণনা করুন।
১৪ অনেক লোক বাইবেল পড়তে ও অধ্যয়ন করতে চেয়েছিল আর তারা যা জানতে পেরেছিল, তা নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিল। তারা এটা চায়নি, তাদের কী বিশ্বাস করা উচিত, সেটা গির্জার নেতারা বলে দেবেন। তাই, তারা এমন দেশগুলোতে পালিয়ে গিয়েছিল, যেখানে স্বাধীনভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করা যেত। এর মধ্যে একটা দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে চার্লস্ টেজ রাসেল ও আরও কয়েক জন ব্যক্তি ১৮৭০ সালের দিকে বাইবেল নিয়ে গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন। ভাই রাসেল প্রথমে খুঁজতে শুরু করেছিলেন, কোন ধর্ম সত্য শিক্ষা দিচ্ছে। তিনি সতর্কভাবে বাইবেলের শিক্ষার সঙ্গে তথাকথিত বিভিন্ন খ্রিস্ট ধর্মের শিক্ষার তুলনা করেছিলেন। তিনি এমনকী ন-খ্রিস্টীয় বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গেও সেগুলোর তুলনা করেছিলেন। শীঘ্রই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই ধর্মগুলোর মধ্যে কোনোটাই ঈশ্বরের বাক্যকে পুরোপুরিভাবে অনুসরণ করে না। একটা পর্যায়ে, তিনি স্থানীয় বিভিন্ন গির্জার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। ভাই রাসেল আশা করেছিলেন, তিনি ও তার দলের লোকেরা বাইবেল থেকে যে-সত্যগুলো খুঁজে পেয়েছেন, সেগুলো গির্জার নেতারা গ্রহণ করবেন এবং তাদের মণ্ডলীগুলোতে শিক্ষা দেবেন। কিন্তু, ধর্মীয় নেতারা সেই ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। বাইবেল ছাত্ররা শীঘ্রই বুঝতে পেরেছিল, তারা সেই লোকেদের সঙ্গে একত্রে ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারবে না, যারা মিথ্যা ধর্মের অংশ ছিল।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৬:১৪.
১৫. (ক) কখন সত্য খ্রিস্টানরা বাবিলের বন্দিত্বে চলে গিয়েছিল? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হবে?
১৫ এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পেরেছি, শেষ প্রেরিতের মৃত্যুর অল্পসময় পরেই সত্য খ্রিস্টানরা বাবিলের বন্দিত্বে চলে গিয়েছিল। কিন্তু, আমাদের এখনও এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা বাকি আছে: কীভাবে আমরা জানতে পারি, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা সত্যিই ১৯১৪ সালের আগে মহতী বাবিলের কাছ থেকে স্বাধীন হয়েছিলেন? এই বিষয়টা কি সত্য যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যিহোবার দাসেরা তাদের প্রচার কাজে ধীর হয়ে পড়েছিল বলে তাদের প্রতি যিহোবা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন? আমাদের কোনো কোনো ভাই কি সেই সময়ে তাদের খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল ও যিহোবার অনুগ্রহ হারিয়েছিল? সব শেষে, খ্রিস্টানরা যদি প্রেরিতদের মৃত্যুর পর মিথ্যা ধর্মের বন্দিত্বে চলে গিয়ে থাকে, তা হলে কখন তারা স্বাধীন হয়েছিল? এই প্রশ্নগুলো খুবই আগ্রহজনক আর পরের প্রবন্ধে এগুলোর উত্তর দেওয়া হবে।